বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ১৯৭৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েই দেশের তরুণ ছাত্রসমাজের মাঝে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ শুরু করে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামের সুমহান বাণী নিয়ে আগমন ঘটে ছাত্রশিবির নামক সদ্য গঠিত ইসলামী কাফেলাটির। তরুণ সমাজ ব্যাপকভাবে সাড়া দিতে থাকে ছাত্রশিবিরের ডাকে। ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলো ইসলামের অগ্রযাত্রায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই এই অগ্রযাত্রাকে নিস্তদ্ধ করে দেওয়ার জন্য শুরু থেকেই নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে থাকে।
সকল বাধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ছাত্রশিবির এগিয়ে যেতে থাকলে বিরোধীরা নবীন সংগঠনটিকে কুঁড়িতেই নিঃশেষ করার জন্য বৃহৎ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করার পরিকল্পনা করে ১৯৮২ সালের ১১ই মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১১ই মার্চ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত অধ্যায়। এই দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম বিরোধী শক্তির আঘাতে প্রাণ হারায় আমাদের প্রিয় ভাই শহীদ শাব্বির, হামিদ, আইয়ূব ও জব্বার। তাই এ দিনটিকে ছাত্রশিবির শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবেঃ
১৯৮২ সালের ১১ই মার্চ ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীণবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। এর জন্য ছাত্রশিবিরের দায়িত্বশীল ও কর্মীরা ১০ই মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নবীণবরণের প্রচার কার্য চালানোর সময় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা চালায় এতে কয়েকজন শিবির কর্মী আহত হয়। শিবির তাদের শত উস্কানি ধৈর্য্যরে সাথে মোকাবেলা করে।
ঘটনার দিনঃ
১১ মার্চ সকাল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইসলামী ছাত্রশিবিরের আহবানে নবাগত ছাত্র সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। চারদিক থেকে শত শত ছাত্রশিবির কর্মী গগনবিদারী স্লোগান দিতে দিতে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাও পার্শ্বের শহীদ মিনারে সমবেত হতে থাকে। তাদের হাতে ছিল হকিস্টিক, রামদা, বর্শা, ফালা, ছোরা, চাইনিজ কুড়াল ইত্যাদি ধারাল অস্ত্র। শিবিরের সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হলে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বারবার অনুষ্ঠান পন্ড করার জন্য উসকানিমূলক কর্মকান্ড চালাতে থাকে। শিবির নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত ধৈর্যের সাথেই সংঘর্ষ এড়িয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু তাদের টার্গেট তো ভিন্ন।
শিবিরকে স্তব্ধ করে দিতে আজকের অনুষ্ঠানে হামলা চালানো ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। তথাকথিত বাম চর্চার কেন্দ্রবিন্দু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের এ ধরনের বড় আয়োজন তারা কোনভাবেই সহ্য করতে পারেনি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরাও শহীদ মিনারে সমবেত হতে থাকে। এক পর্যায়ে নবাগত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চতুর্দিক থেকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে।
শিবির কর্মীরা পরিস্থিতি মুকাবিলা করতে সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সন্ত্রাসীরা আবারো সংগঠিত হয়ে হামলা চালায়। দীর্ঘ সময় ধরে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া চলতে থাকে। এ সময় শহর থেকে ট্রাক ভর্তি বহিরাগত অস্ত্রধারীরা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীদের সাথে যোগ দেয়। শুরু হয় আরো ব্যাপক আক্রমণ।
সন্ত্রাসীদের আক্রমণের প্রচ-তায় নিরস্ত্র শিবির কর্মীরা দিগি¦দিক ছুটাছুটি শুরু করে। আত্মরক্ষার জন্য শিবির কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঘঈঈ ভবন ও কেন্দ্রীয় মসজিদে আশ্রয় গ্রহণ করে। কিন্তু সেখানেও হায়েনাদের থাবা থেকে রেহাই পায়নি আমাদের ভাইয়েরা। সশস্ত্র দুর্বৃৃত্তরা মসজিদ ও BNCC ভবনে আশ্রয় নেয়া নিরীহ শিবির কর্মীদের ওপর তারা পাশবিক কায়দার হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। সন্ত্রাসীদের আঘাতে শহীদ শাব্বির আহম্মেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তার বুকের ওপর পা রেখে তার মাথার মধ্যে লোহার রড ঢুকিয়ে দেয় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে সমস্ত শরীর। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ আব্দুল হামিদ ভাইকে চরম নির্যাতনের সময় তিনি মাটিতে পড়ে গেলে সন্ত্রাসীরা একটি ইট মাথার নিচে দিয়ে আর একটি ইট দিয়ে মাথায় আঘাতের পর আঘাত করে তার মাথা ও মুখম-ল থেতলে দেয়; ফলে তার মাথার মগজ বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। রক্তাক্ত আব্দুল হামিদের মুখম-ল দেখে চেনার কোন উপায় ছিল না। ১২ মার্চ রাত ৯টায় তিনি শাহাদাতের অমিয় পেয়ালা পান করেন। শহীদ আইয়ুব ভাই শাহাদাত বরণ করেন ১২ মার্চ রাত ১০টা ৪০ মিনিটে। দীর্ঘ কষ্ট ভোগের পর ২৮ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নিজ বাড়িতে চিরবিদায় গ্রহণ করেন শহীদ আব্দুল জব্বার ভাই। তাদের এ নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা ভাষায় বর্ণনা করার মত নয়। শিবির কর্মীদের আর্তচিৎকার আর আহাজারিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠলেও কসাইদের পাষাণ হৃদয় এতটুকুও স্পর্শ করতে পারেনি। এ নরপশুরা দীর্ঘ সময় ধরে মৃত্যুর বিভীষিকা সৃষ্টি করলেও মাত্র কিছু দূরত্বে অবস্থানরত পুলিশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতেও এগিয়ে আসেনি। এমনকি আহত রক্তাক্ত মৃত্যু পথযাত্রী শিবির কর্মীদের উদ্ধার করতেও কোন ভূমিকা পালন করেনি।
বারবার অনুরোধের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর মোসলেম হুদার প্রশাসন দীর্ঘ সময় ধরে এ হত্যাযজ্ঞে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি নির্দেশ সেদিন ঘটনাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পারতো; হয়ত জীবন দিতে হতো না চারজন নিরপরাধ শিবির কর্মীকে; আহত হতে হতো না শত শত শিবির নেতা-কর্মীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনাসহ শিবির বিরোধী প্রতিটি ঘটনায় বাম ও রামপন্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভূমিকা ছিল ন্যক্কারজনক।
ঘটনার পরবর্তী ফলাফলঃ
১১ মার্চে হত্যাকা-ের মাধ্যমে ওরা শিবিরকে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে মরণ কামড় দিয়েছিল কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে তাদের ষড়যন্ত্র বুমেরাং হয়েছে। তারাই তাদের ষড়যন্ত্রের পাতানো ফাঁদে আটকে পড়ে। ওরা আমাদের উৎখাত করতে পারেনি বরং শহীদের রক্ত মতিহারের সবুজ চত্বরকে করেছে উর্বর, শহীদদের সাথীদের করেছে উজ্জীবিত। মতিহারে সবুজ চত্বর হয়েছে শিবিরের একক মজবুত ঘাঁটি। হত্যা, জুলুম নির্যাতন ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করে- তা নতুন করে প্রমাণিত হয়েছে। বাতিল যতই চেষ্টা করুক না কেন আল্লাহ তাঁর নূরকে প্রজ্জ্বলিত রাখবেনই, মহান রাব্বুল আলামীনের এ ঘোষণা আবারও প্রমাণিত হয়েছে- “তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।” (সূরা আস-সফ ৮)
১১ মার্চের শহীদদের রক্ত বৃথা যায়নি। সেদিনের নৃশংসতা, আহতদের আহাজারি আর আর্ত চিৎকার এবং আহত-শহীদের রক্ত প্রতিটি শিবির কর্মীর প্রাণে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। শিবিরকর্মীরা ভাই হারানোর বেদনায় মুষড়ে পড়েনি। তারা শোককে শক্তিতে পরিণত করেছে। তারা শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে প্রয়োজনে নিজেদের জীবনকেও অকাতরে বিলিয়ে দেবার দীপ্ত শপথ গ্রহণ করেছে।
সেদিন সদম্ভে শিবিরের সাংগঠনিক তৎপরতা তারা নিষিদ্ধ করেছিল। শিবির নেতৃবৃন্দ এতে ভড়কে যাননি। সংগঠনকে আরো মজবুত করার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নির্যাতিত নিপীড়িত ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পাষ-দের নৃশংসতা তুলে ধরে। তুলে ধরে শিবির কর্মীদের প্রকৃত অপরাধ ‘তারা আল্লাহর পথে কাজ করে’। তুলে ধরে মুসলমানদের বাংলাদেশে ইসলামের জন্য কাজ করার ব্যাপারে সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রেক্ষাপট। সংগঠনের আদর্শিক সৌন্দর্য ও নিজেদের উন্নত আচরণ, উন্নত নৈতিক চরিত্রের মাধ্যমে শিবির পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের হৃদয়ে নিজেদের অবস্থান করে নেয়; রচিত হয় শিবিরের প্রাথমিক শক্তিশালী ভিত্তি। ধীরে ধীরে এলাকার মানুষের কাছে সন্ত্রাসীরা ঘৃণিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিবির উৎখাত করার জন্য বহু ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কোন প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে শিবির বিচলিত হয়ে যায়নি; আপস করেনি। বাতিল চক্রান্তের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে কখনও শিবির পিছপাও হয়নি।
শিবির কর্মীরা ইচ্ছা করলে ৪ শহীদের খুনিদের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারতো। কিন্তু তা করেনি তারা। অথচ এ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীদের সীমাহীন বাড়াবাড়ি যে কাউকে ধৈর্যহীন আর বিক্ষুব্ধ না করে পারে না। ৪টি তরতাজা প্রাণ হত্যা করার পর হত্যাকারীদের পক্ষ থেকে মজলুমদের তৎপরতা নিষিদ্ধ করার যে ঘোষণা- তা স্বাভাবিকভাবে নেয়ার কথা নয়। কিন্তু চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে শিবির। শিবির কর্মীরা মজলুমের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করেছেন এ ক্যাম্পাসে। আর আল্লাহ যদি কারো সাহায্য করেন তাহলে আর কারো সাহায্যের দরকার হয় না।
মতিহারের সবুজ চত্বর ৪ জন শহীদের খুনকে ধারণ করার যে দুর্লভ সুযোগ লাভ করেছে তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে, এখানকার জনশক্তিকে করেছে মহিমান্বিত ও গৌরবের উত্তরাধিকারী। বাংলাদেশে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রথম ৪জন শহীদ হচ্ছেন ১১ মার্চের শহীদ শাব্বির, হামিদ, আইয়ূব ও জব্বার। এভাবেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরকর্মীরা ত্যাগ ও কুরবানির যে কঠিন নজরানা পেশ করেছে তা দেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতার হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা এ কাফেলার দিকে ধাবিত হয়েছে। সেদিন স্বাধীন বাংলাদেশে শাহাদাতের যে সূচনা হয়েছিল শাহাদাতের সেই মিছিল বড় হয়েই চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২০ জন নেতাকর্মী শাহাদাতের নজরানা পেশ করেছেন। শহীদদের মিছিল যতই বড় হয়েছে লক্ষ তরুণ প্রাণ শিবিরের আহবানে ততই সাড়া দিয়েছে। শিবির আজ বাংলাদেশের শক্তিশালী ও সুসংগঠিত একটি অপ্রতিরোধ্য কাফেলার নাম। আলহামদুল্লিাহ!
এ নির্মম ঘটনায় বাম ও রামপন্থীদের উগ্রতা, নৃশংসতা আর বর্বরতা জনসমক্ষে আরো বেশি দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। একটি সংগঠনকে আদর্শিকভাবে মুকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে পেশিশক্তি প্রয়োগে তারা কতটুকু নির্মম হতে পারে; ১১ মার্চের হত্যাযজ্ঞ তারই স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৮৫% মানুষের মূল্যবোধের পক্ষের একটি শক্তিকে উৎখাত করার এ প্রবণতা ভিন্নমতকে দলিত মথিত করার, গলা টিপে ধরার, বাক স্বাধীনতাকে হরণ করার ‘সমাজতান্ত্রিকÑধর্মনিরপেক্ষ’ নিষ্ঠুরতাকেই জানান দেয়।
সেদিন মর্মন্তুদ ঘটনার জন্য যদি কাউকে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করতে হয় তাহলে দায়িত্ব পালনে অবহেলা আর ব্যর্থতার দায়ে কুখ্যাত ভাইস চ্যান্সেলর মোসলেম হুদা ও প্রক্টর মনিরুজ্জামানকেই চিহ্নিত করতে হবে। সেদিন শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে ভিসিকে অনুরোধ করা হয়েছিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে হস্তক্ষেপের অনুমতি দিতে, কিন্তু তিনি দেননি। ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ নিয়ে গেটে অনুমতি প্রার্থনা করলেও পুলিশকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেননি তিনি। উল্টো দম্ভোক্তি করেছিলেন। কিন্তু তিনি কি চিরদিন ক্ষমতা আটকে রাখতে পেরেছেন? অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে দালালি আর তোষামোদ করে এবং সন্ত্রাসীদের কাছে মাথা নত করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না; পাপ বাপকেও ছেড়ে দেয় না। তৎকালীন কুখ্যাত ভাইস চ্যান্সেলর মুসলিম হুদা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
এ খুনের নামমাত্র বিচার হয়। কয়েকজন সন্ত্রাসীর যাবজ্জীবন কারাদ- হয়। স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন যাতে দানা বেঁধে উঠতে না পারে সেজন্য চলছিল ষড়যন্ত্র। আর তারই অংশ হিসেবে বামপন্থীদের সাথে আঁতাত করে এরশাদ খুনিদের রক্ষা করে মানবতার বিরুদ্ধে আরো একটি চরম অপরাধ করে বসে। কিন্তু এরশাদও বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। শাহাদাতের রক্তধোয়া চেতনায় এ দেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়েছিল। স্বৈরসাশক এরশাদের করুণ পরিণতি সকলে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে।
খুনিদেরকে হয়তো ক্ষমতার দাপটে মাফ করে দেয়া হয়েছে কিন্তু তারা কি প্রকৃতপক্ষে নিরাপদ? না তা নয়। তারা অনেকেই হয়তা আজ প্রতিষ্ঠিত কিন্তু সেটাই কি সবকিছু? না তাও নয়। যতদিন তারা বেঁচে থাকবে এ জঘন্য অপরাধ তাদেরকে তাড়া করে ফিরবে, ফিরছে। একজন মানুষকে হত্যা করাতো মানবতাকে হত্যা করার শামিল। তারা নৃশংসভাবে ৪ জনকে হত্যা করেছে, দুনিয়াতেই কেউ হয়ত শাস্তি পাচ্ছে, কেউ হয়ত পরে পাবে। এ কত বড় অপরাধ তা অনুধাবন দুনিয়াতে করতে না পারলেও পরকালে মহান রাব্বুল আলামিন অবশ্যই তার বিচার করবেন এবং যথার্থ শাস্তি দেবেন। যেখান থেকে পালানোর কোন সুযোগ করো থাকবে না।
যারা শহীদ কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত তাদের শাহাদাত কবুলিয়াতের জন্য আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করা হবে, আলোচনা সভা হবে, স্মরণ করবে সবাই। তাদের জীবন থেকে শিক্ষা নেবে; শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হবে-আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত হবে। শহীদরা চিরঞ্জীব। তারা হারিয়ে যাবে না কিন্তু খুনি ছানা, রানা, আজাদ গং ঘৃণিত হতে থাকবে, অভিশপ্ত হতে থাকবে চিরদিন। তারা হারিয়ে যাবে সময়ের অতল গহ্বরে। মানুষ, প্রকৃতি, আল্লাহর সৃষ্টি জগৎ তাদের বিরুদ্ধে লানত করবে।
১৯৮২ সালের ১১ই মার্চ শাহাদাতের যে মিছিল শুরু হয়েছিলো ২০১৫ সালে তার যাত্রী সংখ্যা ২২০ জন। শহীদি ঈদগাহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই আজ পর্যন্ত ২১জন ভাই শাহাদাৎ বরণ করেছে। হত্যা করে, জুলুম নির্যাতন করে, কারাগারে প্রেরণ করে ইসলামের শত্রুরা চেয়েছিল শহীদি কাফেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরকে চিরতরে নিঃশেষ করতে।
কিন্তু তাদের এ পদক্ষেপ বরং ইসলামী ছাত্রশিবিরের অগ্রযাত্রাকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করেছে। ১৯৮২ সালের ১১ই মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মত্যাগের যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয়েছিল আজ সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রান্তরে ইসলাম প্রিয় তরুণ সমাজ সেই ত্যাগের নজরানা পেশ করছে। লাখো লাখো তরুণ আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রাণপন চেষ্টায় লিপ্ত। বন্দুকের গুলি, রিমান্ডের নামে নির্যাতন, কারাগারে প্রেরণসহ শাসক গোষ্ঠীর সকল নিষ্পেষনের হাতিয়ারকে উপেক্ষা করে ইসলামী আন্দোলনকে তার কাঙ্খিত মঞ্জিলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আজ ইসলাম প্রিয় তরুণ ছাত্র সমাজ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পতাকাতলে আশ্রয় নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামী আন্দোলনের কাজ আল্লাহ তাআলার কাজ। তাই বাতিলের যতই বাধা আসুক না কেন, এ আন্দোলনকে থামাতে তো পারবেই না বরং তাদের বাধার পরিমাণ যত বাড়বে আন্দোলনের গতি তত তীব্র থেকে আরো তীব্রতর হবে। ইনশাআল্লাহ ॥
নাভিদ আনোয়ার
কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
শাহাদাতের সুধায় সিক্ত ঈমানদীপ্ত তরুণেরা- ১১ই মার্চ : শহীদ দিবস
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
- শহীদি প্রোফাইল সংকলণ
- তুরস্কে ব্যর্থ ক্যু: শ্বাসরুদ্ধকর একটি কালো রাত!
- বিরোধী জোটের ২০১৫ এর আন্দোলন চলাকালীন পেট্রোল বোমা হামলাকারীদের পরিচয়
- এদের চিনে রাখুন,একদিন এরাই আপনাকে ছিড়ে-খুঁড়ে খাবে
- প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও গাণিতিক বিষয় সম্পর্কিত ব্লগ সঙ্কলণ
- বিয়ে ► করণীয় ও বর্জনীয় ► (যে বিবাহে খরচ কম ও সহজ সে বিবাহই অধিক বরকতপূর্ণ)
- তুর্কি পাবলিক স্পেসে ইসলাম কীভাবে ফিরে আসছে?
- মুসলিম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হবে
- জ্বীন সম্পর্কে বিস্তারিত : মানুষের উপর জ্বীনের নিয়ন্ত্রন (আছর)- বিশ্বাসযোগ্যতা, কারণ, প্রতিকার ..ইত্যাদি ইত্যাদি...
- একজন শিবির কর্মীর কথা
- কুরআন তেলাওয়াত ডাউনলোড
- ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট কারা চালায়, কেন চালায়?
- কুরআনে বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক ইঙ্গিতসমূহ
- হেফাজতের ওপর গণহত্যার ভিডিও আর্কাইভ | VDO archive of Genocide on Hefajat
- আজ কুরআন দিবস (১১-মে-১৯৮৫) : কুরআনের মর্যাদা রক্ষায় শহীদ হবার দিন..
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
- নামায - aamzubair
- কিশোরকন্ঠ সমর্থক প্রতিবেদন ফরম - খালেদ হাসান রাফি
- Re: লিবিয়ার জনগণকে নিয়ে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখি খেলা - খালেদ হাসান রাফি
- Re: মিশরের ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুড: নতুন আঙ্গিকে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় - খালেদ হাসান রাফি
4345730
1 জন পাঠক অনলাইনে
0 comments: