৪. যেদিন সরিয়া যাব + পৃথিবী রয়েছে ব্যস্ত + ঘুমায়ে পড়িব আমি

১০.
যেদিন সরিয়া যাব

যেদিন সরিয়া যাব তোমাদের কাছ থেকে- দূর কুয়াশায়
চ’লে যাব, সেদিন মরণ এসে অন্ধকারে আমার শরীর
ভিক্ষা ক’রে লয়ে যাবে;- সেদিন দু’দন্ড এই বাংলার তীর-
এই নীল বাংলার তীরে শুয়ে একা একা কি ভাবিব, হায়;-
সেদিন র’বে না কোনো ক্ষোভ মনে- এই সোঁদা ঘাসের ধূলায়
জীবন যে কাটিয়াছে বাংলায়- চারিদিকে বাঙালির ভিড়
বহু দিন কীর্তন ভাসান গান রূপকথা যাত্রা পাঁচালীর
নরম নিবিড় ছন্দে যারা আজো শ্রাবণের জীবন গোঙায়,

আমারে দিয়েছে তৃপ্তি; কোনো দিন রূপহীন প্রবাসের পথে
বাংলার মুখ ভুলে খাঁচার ভিতরে নষ্ট শুকের মতন
কাটাইনি কাটা হয়ে গেলে মাঠে মাঠে কত বার কুড়ালাম খড়,
বাধিঁলাম ঘর এই শ্যামা আর খঞ্জনার দেশ ভালোবেসে,
ভাসানের গান শুনে কত বার ঘর আর খড় গেল ভেসে
মাথুরের পালা বেঁধে কত বার ফাঁকা হ’ল খড় আর ঘর।

১১.
পৃথিবী রয়েছে ব্যস্ত

পৃথিবী রয়েছে ব্যস্ত কোন্‌খানে সফলতা শক্তির ভিতর,
কোন্‌খানে আকাশের গায়ে রূঢ় মনুমেন্ট উঠিতেছে জেগে,
কোথায় মাস’ল তুলে জাহাজের ভিড় সব লেগে আছে মেঘে,
জানি নাকো, আমি এই বাংলার পাড়াগাঁয়ে বাধিঁয়াছি ঘর:
সন্ধ্যায় যে দাঁড়কাক উড়ে যায় তালবনে- মুখে দুটো খড়
নিয়ে যায়-সকালে যে নিমপাখি উড়ে আসে কাতর আবেগে
নীল তেঁতুলের বনে- তেমনি করুণা এক বুকে আছে লেগে;
বইচির মনে আমি জোনাকির রূপ দেখে হয়েছি কাতর;
কদমের ডালে আমি শুনেছি যে লক্ষ্মীপেঁচা গেয়ে গেছে গান
নিশুতি জ্যোৎস্না রাতে, -টুপ টুপ টুপ টুপ্‌ সারারাত ঝরে
শুনেছি শিশিরগুলো –ম্লান মুখে গড় এসে করেছে আহ্বান
ভাঙা সোঁদা ইটগুলো,– তারি বুকে নদী এসে কি কথা মর্মরে;
কেউ নাই কোনোদিকে- তবু যদি জ্যোৎস্নায় পেতে থাক কান
শুনিবে বাতাসে শব্দ : ‘ঘোড়া চড়ে কই যাও হে রায়রায়ন –’

১২
ঘুমায়ে পড়িব আমি

ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন তোমাদের নক্ষত্রের রাতে
শিয়রে বৈশাখ মেঘ-শাদা-শাদা যেন কড়ি-শঙ্খের পাহাড়
নদীর ওপার থেকে চেয়ে রবে- কোনো এক শঙ্খবালিকার
ধূসর রূপের কথা মনে হবে-এই আম জামের ছায়াতে
কবে যেন তারে আমি দেখিয়াছি-কবে যেন রাখিয়াছে হাতে
তার হাতে- কবে যেন তারপর শ্মশান চিতায় তার হাড়
ঝরে গেছে, কবে যেন; এ জনমে নয় যেন-এই পাড়াগাঁর
পথে তবু তিন শো বছর আগে হয়তো বা- আমি তার সাথে
কাটায়েছি; পাঁচশো বছর আগে হয়তো বা — সাতশো বছর
কেটে গেছে তারপর তোমাদের আম জাম কাঁঠালের দেশে;
ধান কাটা হয়ে গেলে মাঠে-মাঠে কতোবার কুড়ালাম খড়;
বাঁধিলাম ঘর এই শ্যামা আর খঞ্জনার দেশ ভালোবেসে,
ভাসানের গান গুনে কত বার ঘর আর খড় গেল ভেসে
মাথুরের পালা বেঁধে কত বার ফাঁকা হল খর আর ঘর।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম