→ ০০ : ভূমিকা

ভূমিকা

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে পৃথিবীতে স্থিতি দান করেছেন। তিনি তাদেরকে অসহায় ও লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেননি (মুমিনূন ২৩/১১৫)। বরং ‘প্রথম মানুষ’ আদমকে তাঁর বংশধরগণের হেদায়াতের জন্য ‘প্রথম নবী’ হিসাবে প্রেরণ করেন (বাক্বারাহ ২/৩৮-৩৯)। এভাবে আদম (আলাইহিস সালাম) হ’তে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত ৩১৫ জন রাসূল সহ এক লক্ষ চবিবশ হাযার পয়গম্বর প্রেরিত হন।[1] বহু নবীর নিকটে আল্লাহ পাক ‘ছহীফা’ বা পুস্তিকা প্রদান করেন এবং প্রত্যেক রাসূলকে দেন পৃথক পৃথক শরী‘আত বা জীবন বিধান। তবে চার জন শ্রেষ্ঠ রাসূলের নিকটে আল্লাহ প্রধান চারটি ‘কিতাব’ প্রদান করেন। যথাক্রমে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর উপরে ‘তাওরাত’, দাঊদ (আঃ)-এর উপরে ‘যবূর’, ঈসা (আঃ)-এর উপরে ‘ইনজীল’ এবং শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর উপরে ‘কুরআন’। প্রথমোক্ত তিনজন ছিলেন বনু ইস্রাঈলের নবী এবং তাদের নিকটে প্রদত্ত তিনটি কিতাব নাযিল হয়েছিল একত্রিত আকারে। কিন্তু শেষনবী প্রেরিত হয়েছিলেন ‘বিশ্বনবী’ হিসাবে বনু ইসমাঈলে এবং শেষ কিতাব ‘কুরআন’ নাযিল হয়েছিল বিশ্বমানবের জন্য সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উপরে দীর্ঘ ২৩ বছরের বিস্তৃত সময় ধরে মানুষের বাস্তব চাহিদার প্রেক্ষিতে খন্ডাকারে। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন ও শেষ কিতাব ‘কুরআন’ নাযিলের পর বিগত সকল নবুঅত ও সকল কিতাবের হুকুম রহিত হয়ে গেছে। এখন বিশ্বমানবতার পথপ্রদর্শক গ্রন্থ হিসাবে (বাক্বারাহ ২/২, ১৮৫) কেবলমাত্র শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আনীত সর্বশেষ এলাহীগ্রন্থ পবিত্র কুরআনই বাকী রয়েছে। নিঃসন্দেহে রাসূলের ছহীহ হাদীছ সমূহ আল্লাহর অহী (নাজম ৫৩/৩-৪) এবং কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা (ক্বিয়ামাহ ৭৫/১৯) ও জীবন মুকুর বৈ কিছুই নয়। যা মুমিন জীবনের চলার পথে ধ্রুবতারার ন্যায় সর্বদা পথ প্রদর্শন করে থাকে (হাশর ৫৯/৭)।

হাদীছে বর্ণিত উপরোক্ত বিরাট সংখ্যক নবীগণের মধ্যে পবিত্র কুরআনে মাত্র ২৫ জন নবীর নাম এসেছে। তন্মধ্যে একত্রে ১৭ জন নবীর নাম এসেছে সূরা আন‘আম ৮৩ হ’তে ৮৬ আয়াতে। বাকী নাম সমূহ এসেছে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে। কেবলমাত্র ইউসুফ (আঃ)-এর কাহিনী সূরা ইউসুফে একত্রে বর্ণিত হয়েছে। বাকী নবীগণের কাহিনী কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এসেছে। যেমন মূসা ও ফেরাঊনের ঘটনা কুরআনের ২৭টি সূরায় ৭৫টি স্থানে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলিকে একত্রিত করে কাহিনীর রূপ দেওয়া রীতিমত কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আল্লাহ বলেন, وَرُسُلاً قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلاً لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ. ‘আমরা আপনার পূর্বে এমন বহু রাসূল পাঠিয়েছি, যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শুনিয়েছি এবং এমন বহু রাসূল পাঠিয়েছি, যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শুনাইনি...’ (নিসা ৪/১৬৪, মুমিন ৪০/৭৮)।

আমরা বর্তমান আলোচনায় কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত ঘটনা ও বক্তব্য সমূহ একত্রিত করে কাহিনীর রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেই সাথে বিশ্বস্ত তাফসীর, হাদীছ ও ইতিহাস গ্রন্থ সমূহ থেকেও সামান্য কিছু উদ্ধৃত করেছি। চেষ্টা করেছি নবীদের কাহিনীর নামে প্রচলিত কেচ্ছা-কাহিনী ও ইস্রাঈলী উপকথা সমূহ হ’তে বিরত থাকতে। সীমিত পরিসর ও সীমিত সাধ্যের কারণে অনাকাংখিত ত্রুটি সমূহ থেকে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

উল্লেখ্য যে, পৃথিবীতে আগত সকল নবীই মূলতঃ চারটি বংশধারা থেকে এসেছেন। আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى آدَمَ وَنُوحًا وَآلَ إِبْرَاهِيْمَ وَآلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِيْنَ ، ذُرِّيَّةً بَعْضُهَا مِنْ بَعْضٍ. ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ আদম, নূহ, আলে ইব্রাহীম ও আলে ইমরানকে নির্বাচিত করেছেন। যারা একে অপরের বংশধর ছিল ...’ (আলে ইমরান ৩/৩৩-৩৪)। এখানে আলে ইবরাহীম বলতে ইসমাঈল ও ইসহাক এবং আলে ইমরান বলতে মূসা ও তাঁর বংশধরগণকে বুঝানো হয়েছে। ইবরাহীম-পুত্র ইসহাক তনয় ইয়াকূব-এর অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’ (অর্থ ‘আল্লাহর দাস’)। তাঁর পুত্র ‘লাভী’ থেকে ইমরান-পুত্র মূসা, দাঊদ ও ঈসা পর্যন্ত সবাই বনু ইস্রাঈলের নবী ছিলেন (আনকাবূত ২৯/২৭)। ইবরাহীমের জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈলের বংশে জন্মগ্রহণ করেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এজন্য ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে ‘আবুল আম্বিয়া’ বা নবীগণের পিতা বলা হয়। উল্লেখ্য যে, বিশ্বে মাত্র দু’জন নবীর একাধিক নাম ছিল। তন্মধ্যে ইয়াকূব (আঃ)-এর অপর নাম ‘ইস্রাঈল’ এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর অপর নাম ছিল ‘আহমাদ’ (ছফ ৬১/৬) এবং আরও কয়েকটি গুণবাচক নাম। আল্লাহ সকল নবীর উপরে শান্তি বর্ষণ করুন- আমীন!!

কাহিনী বর্ণনার উদ্দেশ্য:

প্রশ্ন হ’তে পারে, পবিত্র কুরআনে বিগত নবীগণের ও ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি সমূহের কাহিনী বর্ণনার উদ্দেশ্য কি? এর জবাব আল্লাহ দিয়েছেন, وَكُلاًّ نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاء الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ وَجَاءَكَ فِيْ هَذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَّذِكْرَى لِلْمُؤْمِنِيْنَ- ‘আমরা পয়গম্বরদের এসব কাহিনী আপনার কাছে বর্ণনা করি, যদ্বারা আমরা আপনার অন্তরকে সুদৃঢ় করি। আর এর মধ্যে এসেছে আপনার নিকটে সত্য, উপদেশ ও স্মরণীয় বস্ত্ত সমূহ বিশ্বাসীদের জন্য’ (হূদ ১১/১২০)। অর্থাৎ এর উদ্দেশ্য হ’ল, যাতে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নবুঅতের গুরু দায়িত্ব বহন করার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্ত্তত হয়ে যান এবং তাঁর উম্মত এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম