জাদুর পাখি


পাহাড়ি ময়না পোষা আবিরের অনেক দিনের শখ। ঢাকা শহরে তা পাবে কোথায়? অনেক বৈশাখী মেলায় হানা দিয়ে পায়নি। শহরের মেলায় কিছু চেনা পাখি পাওয়া যায়। শালিক, কবুতর, টিয়া ইত্যাদি। পাহাড়ি ময়নার নামও শুনেনি অনেকে। তাই আবিরের শখ অপূর্ণই থেকে গেছে।
এবার বাড়ি যাবার যখন কথা উঠে, ছোট চাচু এসেছিলেন। আবির ছোট চাচুকে বাড়ি গেলে পাহাড়ি ময়না দিতে হবে শর্ত দিয়েছিল। ছোট চাচুও রাজি।

আবিরদের বাড়ি সিলেট। এ জেলায় পাহাড়ি পরিবেশ আছে। ঠিক পাহাড় না হলেও ওদের বাড়ির কাছে আছে টিলা। টিলা হচ্ছে ছোট ছোট পাহাড়। এসব টিলায় চাষ করা হয় চা-পাতার। টিলা মানেই চা-বাগান। আবিরদের দাদা বাড়ি টিলার ওপর। বাড়িতে এলে আবিরের মনে হয় নিজেকে পাহাড়ি। অবশ্য এ অঞ্চলে বনেদি লোকেরাই শুধু টিলার ওপর বসবাস করে।
আবিরদের দাদাবাড়ি এমন এক পরিবেশে যা খুবই মনোহর। এক দিকে রয়েছে নদীÑ কুশিয়ারা। দক্ষিণ দিকে বিশাল বিল ও হাওর। হাওর মানে দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি। আর আছে দূর পাহাড় থেকে নেমে আসা নূপুর পায়ে ঝুমুর ঝুমুর শব্দে ঝর্ণাধারা। সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলে গেছে দূরে বহু দূরে। স্থানীয় ভাষায় একে ‘ছড়া’ বলে।
শীতকালে এ অঞ্চলে প্রচুর অতিথি পাখি আসে বেড়াতে। সুদূর সাইবেরীয় অঞ্চল থেকে আসে এসব পাখি। গোটা হাওর বিলজুড়ে বিদেশী পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। বিদেশী পাখিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আসে দেশী পাখিরাও। দেখা যায় দোয়েল, শ্যামা, শালিক, কালো দোয়েল, ফিঙে, বক, কিংস্টর্ক আরও কত কী!
এ অঞ্চলে এতোসব পাখির মধ্যে ময়নাকেও দেখা যায়। তবে পাহাড়ি ময়না থাকে একটু উঁচু স্থানে। মানে পাহাড় টিলা জঙ্গলে।
আবিরের আবদার পাহাড়ি ময়না। ছোট চাচু তা দেবে বলেছেন। তাই, আবিরের মনে অনেক আনন্দ। আবির ছোট চাচুকে বলেছে ময়না পেলে সে কথা শেখাবে। অবাক করার মত সব কথা। কুরআন পাঠও শেখাবে ময়নাকে। আজানও শেখাবে।
ছোট চাচুর মস্ত বড় গুণ হলো যা বলবে তা শত ভাগ করে দেখাবে। আবিরের সঙ্গে ছোট চাচুর জমে ভালো। বন্ধুর মতো সম্পর্ক। বাড়িতে এলে তার সময় কাটে ছোট চাচুর সঙ্গেই বেশি। মাছ মারতে যাওয়া। মানে ছিপ নিয়ে ছড়ায় বসে টেংরা-পুঁটির অপেক্ষা করা। মাঠের ধান, ক্ষেতের অবস্থা, কামলাদের কাজ পরখ করে দাদাজানকে জানানো এসব কাজে ছোট চাচুর সঙ্গে আবির আছেই।
আবির তখন গাঁয়ের ছেলে বনে যায়। বাঁধনহারা অবাধ বিচরণ তার ভালই লাগে। আর এ স্বাধীনতা পায় আব্বুর উদারতায়। আব্বুর মত- গাঁয়ের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়া ভাল। আমরা সবাই গাঁয়েরই সন্তান। তাই সেই গাঁয়ের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে মানুষ বড় হয়ে শিকড়হীন হয়ে যায়। দেশকে ভালবাসতে পারে না।
আবির এসব বোঝে না। বোঝে গাঁয়ের সব কিছু তার ভাল লাগে। গাঁয়ে অবাধ চলাফেরায় এক আনন্দ আছে। এখানে গাড়ি চাপায় মরার ভয় নেই। বনের পাখিরা যেভাবে বনে ইচ্ছে মত বিচরণ করে। গান গায় মনের সুখে। নাচে। স্ফূর্তি করে। কেউ কিছু বলে না। সে রকম মনে হয় নিজেকে। আবিরও পাখি হয়ে যায়।
আবিরের চাচুদের মধ্যে ছোট চাচু মীরাজের লেখাপড়া কম। মাথায় বুদ্ধির নাকি ঘাটতি আছে। দাদা বলেন, মাথায় গোবর। মানুষের মাথায় কি গোবর থাকে? ছোট চাচুর ব্রেন কম এটা সত্য কথা। তিনি তিনবার ম্যাট্রিক দিয়ে তবেই পাস। কলেজের গেট পর্যন্ত ঢোকার সাহস তার হয়নি। দাদা বলেন, ওকে দিয়ে লেখাপড়া হবে না। ছোট চাচুও লেখাপড়ার মতো এতো কঠিন কাজে শ্রম দিতে নারাজ। তার চেয়ে মাঠ-ঘাটের, হাট-বাজারের কাজ তার কাছে ঢের সহজ মনে হয়। তাছাড়া বাড়ির এসব কাজের জন্য তো একজন লোক চাই।
সেই লোকটা হয়ে উঠল ছোট চাচু মীরাজ।
আবিরের খুব পছন্দ ছোট চাচুকে। সহজ সরল মনের মানুষ। ভালবাসা আর স্নেহভরা চাচুর বুক। উপকারী মন। কারো উপকার করতে এক পায়ে খাড়া। যতো কষ্ট হোক উপকার করার জন্য ছোট চাচু সবার আগে হাজির। দরাজ দিলের মানুষ। যখন যা পায় অন্যকে দিয়ে দেয়। নিজের বলতে কিছু তার নেই। ছোট চাচুর আরও একটা গুণ আছে। গলায় সুর আছে। মধুমাখা সুর। উদাস বাউলের সুর। যখন গলায় হাছন রাজা, আরকুম শাহ, পাগলা কানাইয়ের গান ধরে তখন মুগ্ধ হয়ে সবাই শুনে। একটা দোতারা তার মহা সম্পদ। সুযোগ পেলেই রাতে একাকী পুকুরঘাটে বসে বসে বাজায়। গান গায়। গাঁয়ে আসর হলে ডাক পড়ে মীরাজের। কখনো যায়, কখনো দাদার বারণ থাকলে না বলে দেয়।
এই হচ্ছে ছোট চাচু মীরাজের পরিচয়। দেখতে অন্য চাচুদের চেয়ে ভিন্ন। অন্য চাচুদের গায়ের রঙ ফর্সা কিন্তু মীরাজ কালো। ফুফুরাও ফর্সা। চাচুরা সবাই বেশ লম্বা। ছোট চাচু বেঁটে। তবে খুব না। দাদী বলেন, মীরাজ মাটির মানুষ।
আবিরের মনে এখন একটাই বিষয়Ñ পাহাড়ি ময়না। আগে এ অঞ্চলে সহজলভ্য ছিল। কিন্তু এখন ততোটা সহজলভ্য নয়। গাছগাছালি কমে গেছে বলে পাখিরাও হারিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু আবিরকে পাহাড়ি ময়না পেতেই হবে। সন্ধ্যায় পূর্ণিমার আলোয় শান বাঁধানো ঘাটে বসে শলা পরামর্শ চলে ছোট চাচুর সঙ্গে।
‘আমরার গাঁও থাকি সাত-আট মাইল উত্তরে। মদনপুরার বড় হাট বয় জুমাবার, ঐ হাটে পক্ষীর মেলা বয়। এ হাটে মিলতে পারে।’ মীরাজ বলল।
‘তাহলে আমরা ঐ হাটে যাবো চাচু ময়না কিনতে’Ñ আবিরের তর যেন সইছে না। জবাব দেয় সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে। ঠিক হয়ে গেল আগামীকাল জুমাবার ঐ হাটে যাবে দু’জন। দু’জনের প্রোগ্রাম ঠিক হলেও সামনে আছে অনেক বাধা। আব্বু-আম্মুর অনুমতি। দাদা-দাদুরও। তাছাড়া কুশিয়ারা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা হাট তো এখানে নয় বেশ দূর। বিশাল সে হাটে পাওয়া যায় সব কিছুই। বাঘের দুধও নাকি মেলে। তাই, পাহাড়ি ময়না তো কোথাকার নস্যি!
প্রশ্ন হচ্ছে, এ অঞ্চল মানেই দুর্গম। পাহাড়ি পথ-ঘাট। টিলার পাশ দিয়ে চড়াই-উতরাই অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয়। আবির পারবে কি না এ পথে হাঁটতে আর যেতে পারমিশনটা মিলবে কি না।
‘কুচ পরওয়া নেহি, দাদী আছেন, দাদীকে পটাতে পারলেই হলো, ওটা পারবো।’ আবির ছোট চাচুকে আশ্বস্ত করে।
বাড়ির রুটিন মোতাবেক সপ্তাহের বাজার হিসেবে মদনপুরার হাটে কনর আলীকে এমনিতেই দাদী পাঠাবেন এটা আবিরের জানা। আবিররা আছে তাই বড় মাছ কিংবা অন্য কিছুর জন্য। আর কনরের সঙ্গে মাঝে মাঝে মীরাজও সঙ্গী হতে পারে। কিন্তু আবিরের যাওয়াটা একেবারে অনিশ্চিত। এসব আগেই ভেবে আবির দাদীর কাছে ধরনা দেয় হাটে যাবার জন্য। ঘ্যানর ঘ্যানর করে আদায় করে দাদীর মত। রইলো বাকি দাদা। দাদার ওপর কারো খবরদারি চলে না।
আবির সারারাত ভেবেছে কী করা যায়। আব্বু-আম্মু দাদার ওপর কিছু বলার সাহস রাখে না। তাই দাদা রাজি তো কেল্লা ফতেহ।
আবির যেভাবে হোক মদনপুরা হাটে গিয়ে পাহাড়ি ময়না কিনবে। টাকাটা বহুদিন ধরে সঞ্চয় করে জমানো। এখন সেই সুযোগ তার সামনে।
দুই.
দাদীই শেষ পর্যন্ত সকল মুশকিল আছান করে দিলেন। দাদীর কথা দাদা ফেলতে পারলেন না। আবিরের হাটে যাওয়ার পক্ষে মত দিলেন আব্বু-আম্মুও। ঠিক হলো জুমার নামাজের পর দুপুরের খাবার খেয়ে ওরা রওনা দেবে। সঙ্গে যথারীতি কনর আলীকেও দেয়া হল। এমনি এমনি নয়, বাজার-সদাইয়ের জন্য। মীরাজের ওপর দায়িত্ব থাকল কেনাকাটার। বহন করে আনবে কনর আলী। মীরাজ অনেকটা নারাজ হয়েই বাজারের ফর্দটা নেয় মায়ের হাত থেকে। ইচ্ছে ছিল ভাতিজা আবিরকে নিয়ে ইচ্ছে মত ঘুরবে। পাহাড়ি ময়না কিনবে। কিন্তু এতোসব কেনাকাটা করতে গেলে যাবে বেলা বয়ে পুরোটাই। ঘুরাঘুরি হবে না।
এমনিতে মীরাজ চাচুর সঙ্গে আবিরের ঘুরাঘুরির ইতিহাস কম না। টিলায় টিলায় পাহাড়ি ময়নার সন্ধান দু’জন কম করেনি। ছিপ নিয়ে মাছ মারতে যাওয়াও তো কম হয়নি। এঁকে বেঁকে চলে ছড়ায় ছিপ নিয়ে পুঁটি-টেংরা মেরে বদনা ভরে বাড়ি ফিরেছে কতো! বর্ষাকালে ছড়ার সঙ্গে মিতালি হয়ে যায়। সেচের জন্যও ছড়া কেটে  ক্ষেতে পানি প্রবেশ করায় কেউ কেউ। ফলে এসব ছড়ায় ছোট ছোট মাছ পাওয়া যায় দেদার। বিশেষ যেখানে ছড়া বাঁক নেয় তার কোলে টেংরা-পুঁটি খলসে, রানীমাছ গিজ গিজ করে। আবির ছোট চাচুকে নিয়ে এসব ছড়ায় বহুবার মাছ মারতে এসেছে। গাঁয়ের দুষ্টুমির গল্প ঢাকার বন্ধুদের শুনিয়ে আবির হয়েছে জনপ্রিয় গল্পকার।
হাটে পৌঁছতে তাদের হয়ে যায় প্রায় বিকেল। সূর্য পশ্চিমে অনেকটাই হেলে পড়েছে। শীতের বেলা এমনিতেই যায় দ্রুত চলে। আবিরের অভ্যাস নেই এসব দুর্গম পথে চলার। তাই পথে পথে থেমে জিরোতে হয়েছে তাদের। পথে মসজিদে আসরের নামাজ পড়া এবং একটু বসেও তাদের সময় গেছে।
হাটে প্রবেশ করেই আবিরের চোখ ছানাবড়া। বিশাল হাট। যেদিকে চোখ যায় খালি মানুষের মাথা। পসরা সাজিয়ে বসেছে দুই লাইন ধরে সারি সারি। সবই আছে দেখা যায়। শাক-সবজি তরিতরকারি, মাছ-গোশত, চাল-ডাল, আটা-ময়দা চিঁড়া-বাতাসা, গুড়, লাটিম-নাটাই, গরু-ছাগল, মোরগ-মুরগি, পিড়ি-মাটির বাসন, বদনা-গামলা, সানকি-জলচৌকি ইত্যাদি।
এসব নানা জিনিসের পসরা দেখে আবিরের চোখে যতোই তাক লাগুক সে খুঁজছে একটাইÑ ময়না পাখি। ছোট চাচুকে সেদিকে যেতে অনুরোধ করেছে আগেভাগেই। কিন্তু বললে কী হবে মানুষের ভিড়ে পা বাড়ানোই মুশকিল। গাঁয়ের মানুষ চলাফেরায় উদ্দাম শক্তি বেশি। ওদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে পারে নাকি? তাই সুযোগ বুঝে ধীরে ধীরেই এগোতে হয়। আর আবিরকে রাখা হয় মীরাজ ও কনরের মাঝামাঝি। ধাক্কা থেকে বাঁচানো উদ্দেশ্য।
বিশাল হাট। কোথায় কী বসেছে তা মীরাজ ঠিক জানে না। তবে কনর আলী হাটের অনেক কিছু জানে। তাই কনর আলীর কথা মতোই মীরাজ ফর্দ মিলিয়ে এটা সেটা কিনছে।
কিন্তু কেনাকাটা আবিরের পছন্দ হচ্ছিল না।
‘ছোট চাচু! রাখ তো তোমার এসব কেনাকাটাÑ আগে চল পাখির বাজারেÑ ময়না কিনে তারপর এসবÑ’ আবির অনেকটা অভিমানী স্বরে বলল।
‘অয় আমরা পক্ষীর বাজারে যাইবামÑ পথে ইতা না কিনলে পরে পাইতাম নায়Ñ’ মীরাজ বলল।
শীতকাল হলেও গত রাতে এক পশলা বৃষ্টি নামে। তার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে হাটেও। কোথাও কোথাও কাদা হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টি হওয়া মানে শীতের মাত্রা আরো বাড়বে। একটু একটু টের পাওয়া যাচ্ছে এখনই। তবে এ অঞ্চলে বালু মাটির দেখা পাওয়া যায় বেশি। লালচে বালু মাটিতে কচুমুখির চাষ হয় ভালো। আবিরের প্রিয় সবজি কচুমুখি। যদি তা হয় ইলিশ মাছে রান্না।
আবির বেশ উৎসাহ নিয়ে হাঁটছিল। যদিও হাঁটতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু ময়না পাওয়ার আশা তার কষ্ট ভুলিয়ে দিচ্ছিল। পথের কান্তি এখন কোন বিষয় নয় তার কাছে। তার চায় পাহাড়ি ময়না। বহু দিনের শখ তার।
অবশেষে তারা চলে এলো একটা খোলা ময়দানে। যাকে বনে পাখির হাট। পাখির সঙ্গে আছে চার পায়ের জানোয়ারÑ গরু, ছাগল, মহিষও। হাটে আর কোথাও কিছুর স্থান নির্দিষ্ট না থাকলেও পশু-পাখির হাট সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আবিররা গরু, ছাগল, মহিষের রাজ্য রেখে আরেকটু এগিয়ে পাখির রাজ্যে প্রবেশ করে। কালো শালিক দেখে ময়নাই ঠাহর করেছিল আবির। পেয়ে গেছি। বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে সে। কিন্তু কাছে এগোতেই ভুল বুঝতে পারে। কবুতর, বুলবুলি, টিয়া, কাকাতুয়া, বক, বেলে হাঁস, ময়ূর, তিতির, ধনেশ সব আছে, নেই ময়না। পাহাড়ি ময়না। আবিরের দুই চোখে কান্তি। পা দুটো অবশ হয়ে আসে আর বুক ফেটে বের হয়ে আসে কান্না।
‘ছোট চাচু, এখন কী হবে? পাহাড়ি ময়না নেই তো!’ আবির কাঁদো কণ্ঠে বলল।
তবু হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে একটা সাদা কাকাতুয়ার কাছে এসে আবিরের চোখ আটকে যায়। যেমন সুন্দর তার ঝুটি তেমন টুকটুকে লাল ঠোঁট আর যে খাঁচায় সে লাফালাফি করছিল তাও খুব সুন্দর। তাহলে কি সে ময়নার পরিবর্তে কাকাতুয়া কিনবে? এত কষ্ট করে যখন এসেছে! কিন্তু সে তো ময়না কিনতে এসেছে পাহাড়ি ময়না।
মীরাজ অনেক দুুঃখ দুঃখ চোখে ভাতিজার দিকে তাকায়। আবিরের চোখে তখন পানি আসি আসি ভাব। ঠিক বৃষ্টি আসার আগের অন্ধকার করা আকাশ।
‘কী চাচু মন খারাপ লাগেনি?’ মীরাজ আবিরকে হাত দিয়ে বুকের কাছে টেনে নেয়।
‘মন খারাপ করিও না, এ তিল দম লও, পাহাড়ি ময়না আমি তোমার লাগি জোগাড় করিয়া আনমুÑ বেলা হউক আগামী সোমবার আরেকটা বড় হাট আছে গিলাছড়ায়। প্রয়োজনে ঐ হাটে আমি যাইমুÑ’ মীরাজ আবিরকে সান্ত্বনা দেয়। আদর করে হাত দিয়ে।
আবিরের এসব ভাল লাগছিল না। কান্তিটা এখন টের পাচ্ছে। পায়ের বল নেই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। আবার ফিরে যেতে হবে বাড়ি। পায়ে হেঁটে। ভাবতেই কান্না চলে আসছিল তার। জোর করে কান্না থামিয়ে রাখে।
কিছু দূর এসে আবির থামে। আবিরের সঙ্গে সঙ্গে ওরাও থামে। বাজার থেকে বের হয়নি তখনো।
‘চাচু! ঐ সাদা কাকাতুয়াটার দাম কতো?’ আবির অনেকটা অন্যমনস্কভাবে বলল।
‘কেন ঐটা তোমার পছন্দ অইছে নি?’ মীরাজ মনে মনে খুশি হয়ে আবিরকে জিজ্ঞাসা করে।
‘না, একেবারে খালি হাতে ফিরব, তাইÑ’
‘চল, দেহি দাম কত চায় বেটায়Ñ’ মীরাজ হাত দিয়ে পুনরায় বাজারের দিকে হাঁটতে নির্দেশ করে।
‘না থাক, চাচ্চু, কাকাতুয়া নেবো না, ময়নাই চাই আমারÑ’
পাখির বাজার থেকে ওরা বের হয়ে বসে সুধীর মিষ্টিঘর নামে মিষ্টির দোকানে। এই বাজারে সুধীরের মিষ্টির বেশ নামডাক আছে। ভাতিজাকে সেই মিষ্টি খাইয়ে মন চাঙ্গা করা মীরারেজ উদ্দেশ্য।
দোকানে পাতা বেঞ্চিতে বসে জিজ্ঞেস করেÑ ‘চাচ্চু! কিতা মিষ্টি খাইতায় কও!’
আবির আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় উনুনে ভাজা হচ্ছিল জিলাপির দিকে।
‘জিলাপি খাইতায়? ঐ পোয়া অবায় হুনো, আমরারে তিন প্লেটে জিলাপি দেÑ’ অনতিদূরে দাঁড়িয়ে থাকা দোকানের বালক কর্মচারীর উদ্দেশে মীরাজ বলল।
একটু পর গরম জিলাপি টেবিলে এলো। কিন্তু আবিরের মন জিলাপির দিকে নয়। তাই একটা জিলাপি খেয়েই বলল, ‘বেশি মিষ্টি, খাওয়া যায় না- খাবো নাÑ’
‘চল তাহলে আবার পাখির বাজারে যাই।’ আবির বলল।
জিলাপির দাম পঁচিশ টাকা পরিশোধ করে আবার চলে এলো পাখির বাজারে। দেখল, কাকাতুয়াটার দামদর চলছে। দাম হেঁকেছে তিন হাজার টাকা পাখিওয়ালা। পাশে বুড়ো এক ক্রেতা দু’জাহাজার পর্যন্ত বলে দাঁড়িয়ে।
আবির এমন অবস্থা দেখে নিশ্চিত কাকতুয়াটাও বুঝি হাতছাড়া হয়ে যায়। পাখিওয়ালার কাছে এসে বলে,  ‘কত হলে কাকাতুয়া ছাড়বেন?’
ব্যস! বুড়ো ক্রেতা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে- ‘ভাতিজা! দেখবায়নি আমি দামদর করবাম!’
বুড়োর ধমকে আবির ভয়ে সরে আসে। মীরাজও সরে আসে। আঙুলের ইশারায় আবিরকে চুপ থাকতে বলে। আবির চুপ থেকে ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। বুড়োটা বীরের মতো তিন হাজার টাকায় কাকাতুয়াটা নিয়ে হাঁটা দিলো। একটু থেমে আবিরের কাছে এসে বলল, ‘অলা এক কাকাতুয়ার শখ আমার বহু দিনেরÑ’
‘আমি পাহাড়ি ময়না খুঁজছি বহুদিন ধরে।’ আবির বলল।
‘ময়না, পাহাড়ি ময়না, এ হাটে দেখালাম জানিÑ’ নাটকীয় ভাব করে পরে বললÑ ‘ও মনে পড়ছে রশিদের ভুসিমালের দোকানের উত্তর দিকে যাওÑ’
বুড়ো গট গট করে হেঁটে চলে গেলো।
সন্দেহ নেই বুড়ো রগচটা এবং পাগলাটে। তার কথার কোন দাম দিয়ে লাভ নেই। মীরাজ মনে মনে ভাবে।
‘চাচ্চু! বুড়ো কী যেন বললÑ’ আবির জানতে চাইল মীরাজের কাছে বুড়োর দেয়া তথ্য সত্য কি না।
‘বুড়ার কথার ওপর ভরসা করতায়নি?’ মীরাজ কিছুটা ভাবে।
‘চল না চাচ্চু, দেখি গিয়ে।’
আবিরের আগ্রহের কাছে মীরাজ অবশেষে ময়নার খোঁজে হাঁটতে থাকে। সঙ্গে আবির ও কনর আলী। দক্ষিণ দিক থেকে আবার উত্তর দিকে। তার মানে জনস্রোতের উজানে যেতে হবে। হাটুরেরা উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে এসে বের হচ্ছে হাট থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে।
মীরাজ তবু হাল ছাড়তে নারাজ। আবির ও কনরকে নিয়ে এসে হাজির হয় সেই বুড়োর কথা মতো ভুসিমালের দোকানে। এসে দেখে দোকানের সামনে একটা খাঁচায় ঠিক ময়না। চঞ্চলমতি ময়না ছুটোছুটি করছে। তার মানে খাঁচায় পুরা হয়েছে এইমাত্র বুঝি। যাক বাবা ময়না পাওয়া গেল। মীরাজ মনে মনে খুশি।
‘ময়না বিকি অইবোনি?’ মীরাজ জিজ্ঞেস করে বুড়ো দোকানিকে। দোকানির গলায় রদ্রাযরের মালা। সাদা লুঙ্গি আর সাদা ফতুয়া।
‘অয় বিকি অইবোÑ পক্ষীর মালিক নাই।’ দোকানি আরেক দিকে তাকিয়ে দায়সারা জবাব দেয়।
‘মালিক কই?’ মীরাজ পুনরায় জিজ্ঞেস করে।
‘হাটে। আপনে লইতানি?’ বলেই দোকানি এবার হাসিতে তেঁতুলের বিচির দাঁতগুলো বের করে দেয়। তার মানে মীরাজকে ক্রেতা হিসেবে আমলে নিতে চায় না।
‘জিয়োয়।’ জোর দিয়ে বলে মীরাজ।
‘লউকা। দাম কইয়া গেছইন মালিকে সাড়ে তিন হাজার টাকাÑ কমে বেচতা না।’ দোকানি বলল।
‘সাড়ে তিন হাজার টাকাÑ’ মীরাজ টেনে টেনে উচ্চারণ করল।
মীরাজ দাম শুনে কিছুটা হতাশ। তবে খাঁচাটা বেশ সুন্দর এবং মজবুত। খাঁচা এবং পাখি দুটো মিলিয়ে দুই হাজার হলে ঠিক হতো। মীরাজ মনে মনে ভাবে।
মীরাজ আবিরের চোখাচোখি হয়। আবিরের চোখ বলছে যত টাকা লাগুক নিতে।
‘দাম বড় বেশি চায়রাÑ’ মীরাজ বলল।
‘কিতা করতাম যার মাল তাইন কইয়া গেছুইন ঐ-ঐ-ঐ পক্ষীর মালিক আয়রা। আপনারা তান লগে মাতিয়া লউকাগিÑ’ দোকানি আঙুল দিয়ে আগত একজনকে দেখায়।
আঙুলের নির্দেশ মতো চোখ ঘুরিয়ে দেখা গেল একজন সাধু সন্ন্যাসীর মতো লোক এগিয়ে আসছে। কিছুক্ষণ তার আগমনের দিকে তাকিয়ে থাকে ওরা।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে দোকানের সামনে এসে পাখির মালিক দু’হাত তুলে নমস্কার গোছের কী যেন দিলো। হাতে একটা মোটা লাঠি যা নানা রঙের পেরেক ঠুকে সজ্জিত করা। লম্বা দাড়ি এবং চুল। গায়ে সাদা রঙের ফতুয়া। শামা লুঙ্গি পরিহিত। গলায় নানা রঙের পাথরের মালা, গায়ের রঙটা বাদামি।
‘এই যে বর্মণ দা আপনার পাখি লইতা তারা মাতউখাÑ’ দোকানি সন্ন্যাসীর সঙ্গে মামুলি পরিচয় করিয়ে দেয়।
‘আপনে পাখির মালিক নি?’
‘মালিক ওপরওয়ালা আমি জিম্মাদার।’
‘পাখি বেচতা নি?’ মীরাজ আবার জিজ্ঞেস করে।
‘অয়। দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা।’ সাধু বাবা খাঁচার কাছে গিয়ে একটা ঝোলা থেকে পাখিকে খাবার দেয়।
একটু আগে যে পাখিটা অস্থির ও চঞ্চল ছিল এখন বেশ শান্ত।
‘দাম একটু বেশি অই যায়Ñ কমাইয়া কউখাÑ’ মীরাজ বলল। কিন্তু সাধু বাবা কোন জবাব দিলো না।
মীরাজ ভাবে সাধু বুঝতে পেরেছে আমাদের মনের কথা। তাই দাম কমাবে না।
মীরাজ পকেট থেকে কড় কড়ে পাঁচশ টাকার সাতটি নোট তুলে দিলো সাধু বাবার হাতে।
সাধু বাবা একবার পাখির দিকে আরেক বার মীরাজের দিকে তাকিয়ে নোটগুলো হাতে নিলো। টাকাগুলো যতœ করে বুকে ঝুলানো একটা কাপড়ের থলির মধ্যে রেখে চেইন টেনে দিলো।
পাখির খাঁচাটা মীরাজের হাতে তুলে দিলো। বলল, ‘খুউব সাবধান! পাহাড় থাকি আনছি আমার বাবার কাছ থাকি।’
মীরাজ পাখির খাঁচাটা নিয়ে বলল, ‘চাচ্চু, চল বাড়ি যাই।’
আবির ছোট চাচুর হাত থেকে খাঁচাটা নেয়। কিন্তু খাঁচাটা বেশ ভারী। ফিরিয়ে দেয় চাচুর হাতে।
এবার আবির, মীরাজ ও কনর আলী পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। সন্ধ্যা তখন ঘনিয়ে এসেছে।
তিন.
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও খোলা পরিবেশ হওয়ায় বেশ আলো আছে চারদিকে। গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে হাঁটতে এমন আলো যথেষ্ট। অবশ্য অমাবস্যার রাত হলে ভিন্ন কথা। এ পথ কোথাও ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায় না। তবে টিলার ভেতর দিয়ে যে পথ গেছে সেটা অন্ধকার হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে গাঁয়ের লোকেরা মশাল জ্বালিয়ে পাড়ি দেয় সে পথ। পাহাড়ি পথ-ঘাট এমনিতে বন্ধুর। তারপর আছে পাহাড়ি সাপ-খোপ। জোঁকও আছে বেশুমার। পাহাড়ি জোঁক একবার ধরতে পারলে জীবন নিয়ে টানাটানি। মানে বড় বড় এসব জোঁক নুন ছাড়া আলাদা করা যায় না। এ জন্য এ অঞ্চলের লোকেরা চলাফেরায় এক পুঁটলি নুন সঙ্গে রাখে। হাঁটতে হাঁটতে কখন যে জোঁক পায়ে উঠে বসে টের পাওয়া যায় না। যখন টের পাওয়া যায় তখন কম্ম সাবাড়। মানে রক্ত চুষে খেয়ে ঢোল।
এসব আবিরের অজানা। মীরাজের জীবনের স্বাভাবিক ঘটনা। এমনকি মীরাজের আব্বুর অজানা। কারণ লেখাপড়ার জন্য গাঁয়ের বাইরে ছিলেন বেশি। আর এখন মাঝে মাঝে গাঁয়ে এলেও পাহাড়ি পথঘাটে চলাফেরার সুযোগ কম ঘটে। ভয় হচ্ছিল আবিরকে নিয়েই। আরো একটা বিষয় নিয়ে ভয় পাচ্ছিল মীরাজ তা হলো বাঘের। মদনপুরা হাট থেকে আড়াআড়ি পথে গেলে বেশ কিছুটা সময় বাঁচে। তবে পার হতে হয় নূরপুর টি এস্টেট। টিলার ধার দিয়ে যেতে হয়। শুনেছে গত পরশু একটা গরু মারা পড়েছে। বাঘের উপস্থিতি বলে দেয় এই মরা গরু। তার মানে চিতাবাঘের আস্তানা ঐ টিলার আশপাশেই হবে। অবশ্য এসব চিতা সাইজে খুব বড় নয়। আসে ভারতের খাসিয়া পাহাড় থেকে। খাদ্যের সন্ধানে। মীরাজকে এসব ভাবতে হচ্ছে সঙ্গে ভাতিজা আবিরের জন্য। তা না হলে এ রকম পথে জীবনে বহুবার সে যাতায়াত করেছে।
টিলায় চিতা আছে জেনেও টিলার পাশ দিয়ে হেঁটে চলে এসেছে। এমনকি বুককাঁপা উ-উ-স্ আওয়াজ শুনেও। হাতে একটা বাঁশের লাঠি আর লণ্ঠনের ওপর ভরসা করে। অবশ্য চিতা কদাচিৎ রাতে শিকার করে। খুব বেশি ুধার্ত হলেই মানুষের ওপর হামলে পড়তে পারে। নচেৎ দিনের বেলায় মাঠে কিংবা টিলায় চড়ে বেড়ানো ছাগল গরু দিয়ে ভোজন শেষ করে।
মীরাজ মনে মনে একটু আশ্বস্ত হয় তার ভাতিজাকে এসব নিয়ে গল্প বলা হয়নি। তাই পরিস্থিতি সম্পর্কে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
‘চাচ্চু, জোর পায়ে হাঁটতে অইবো, পারবা না?’ বাজার থেকে বের হয়ে মেঠোপথ ধরে খানিকটা এগিয়ে মীরাজ বলল।
‘ও ছোড ভাইজান! রাইত বাড়ার আগে আগে বাড়িতে যাইতে অইবোÑ ঐ যে টিল্লার পথ দিয়া আমরা যাইমু, ঐ টিল্লায় বাঘ আছইন বইয়াÑ হা: হা: হা: …’ কনর প্রচুর হাসতে থাকে। উদ্দেশ্য আবিরকে চিন্তার মধ্যে ফেলা।
মীরাজ যে ভয়টা করছিল কনরকে দিয়ে সেই কম্মটাই করে বসল। হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলো। এখন আবিরকে নিয়ে আড়াআড়ি পথে টিলার রাস্তায় যাওয়া যাবে না।
‘আমরা আড়াআড়ি যাইতাম নায়Ñ পূর্বেদি হাজাস বাড়ির সামনেদি যাইমুÑ’ মীরাজ জবাব দিল।
চিতা বাঘের কথা উঠায় আবিরের চোখ গোল গোল হয়ে ওঠে। মুখ দিয়ে ফিস ফিস স্বরে বলে, ‘চিতা বাঘ! এখানে আসে!’
মীরাজ আবিরের ভয় দূর করার জন্য ঘুরিয়ে বলল, ‘এখন আর আসে না। আগে যখন এসব গভীর জঙ্গল আছিল তখন আসত। আমরার দাদার আমলে।’
আবির যেন একটু সাহস পেলো ছোট চাচুর কথায়। সে জানে ছোট চাচু মিথ্যা বলে না। কনর আলী যে কথাকে ভয় দেয়ার জন্য ওসব বলেছে তাও বুঝতে পারে সে।
‘চাচু ভয় করছে?’ মীরাজ জানতে চায়।
‘না, চাচু ভয় করছে না তো! আমি জোর পায়ে হাঁটতে পারি। দেখো দেখো।’
আবির জোর পায়ে হাঁটতে লেগে যায়। হাঁটা তো নয় দৌড়ানো। মীরাজ কনরও তার সঙ্গে দৌড়াতে থাকে। তবুও আবির সামনে এগিয়ে যায়। প্রমাণ দেয় সে সবার চেয়ে দ্রুতগামী।
‘চাচু! অতো জোরে হাঁটলে হেরান অইয়া যাইবাÑ আমরার লগে হঁটো…’ মীরাজ বলল।
ততক্ষণে আবির সত্যিই কান্ত হয়ে পড়ে। ছোট চাচুর কথায় সে তার গতি স্বাভাবিক করে।
মীরাজ জানে এসব মেঠোপথে হাঁটা এমনিতে কঠিন। উঁচু-নিচু আছে। তারপর যদি জোরে হাঁটে তবে পথ ফুরোবার আগেই দম ফুরিয়ে যাবে।
মীরাজ এমনিতে আবিরকে নিয়ে চিন্তিতÑ যদি বলে ফেলে হাঁটতে পারছি না তবেই হয়েছে বিপদ। আশপাশে তেমন কোন জনবসতি নেই যে রাতে আশ্রয় নেয়া যাবে। মীরাজের হাতে ময়নাসহ খাঁচা। লোহার খাঁচা প্রচণ্ড ভারী। ওটা বইতে গিয়ে তার দফারদা। যদি আবির বলে উঠে হাঁটতে পারছি না, তখন ওকে ঘাড়ে তুলবেটা কে! কনর আলীর ঘাড়ে দুই ঝুড়ি মালামাল। বাঙ দিয়ে বহন করছে। বেচারাও অনেক কষ্ট করছে।
‘চাচু! ময়নাটা চুপচাপ কেন্Ñ ক্ষিধে পেয়েছে বুঝি?’ আবির বলল।
‘না, ময়নার ক্ষিধা পায় নাই, পাইছে তোমারÑ খাইতায়নি, বাতাসা দিতামনি চাচু?’ মীরাজ জানতে চায়।
‘দাও, গুড়ের বাতাসা দিয়োÑ’ আবির বলল।
‘কনর বাইসাপ! উবাওÑ’ মীরাজ ডাকে।
কনর আলী মীরাজের ডাকে থামে। মীরাজ তার ঝুড়ি থেকে কিছু বের করতে চাইলে কনর বাধা দেয়।
‘ইতা কিতা কররা মীরাজ বাইসাপ!’
মীরাজ বুঝতে পারে কনর কেন তাকে বাধা দিচ্ছে। এভাবে রাতে উন্মুক্ত স্থানে খাওয়া বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাদ্য নিষেধ করেন মুরব্বিরা।
‘থাক্ চাচু আমি এখন কিছু খাবো নাÑ বাড়িতে গিয়ে খাবোÑ’ আবির বলল।
আবির মীরাজ আবার চলতে শুরু করে। কনর আলী ঘাড়ে বাঙ তুলে আগের ছন্দে হাঁটতে থাকে সবার আগে। আকাশে তারারা জ্বল জ্বল করছে। পাহারা দিচ্ছে এই তিন পথিককে। চাঁদও তাদের সঙ্গে আছে। তাই ভয় কিসের! মনে মনে মীরাজ এভাবে সাহস সঞ্চয় করে।
চার.
উম্-ম্ …
বন কাঁপানো সে শব্দ শুনে সবার বুক কেঁপে ওঠে। মীরাজ ভেবেছিল আড়াআড়ি পথে যাবে। যাতে বাড়ি পৌঁছতে সময় বাঁচে। এখন দেখছে সময় বাঁচাতে গেলে জীবন বাঁচানো কঠিন হবে। কনর আলী আগেই বলেছিল। তখন সে কথা উড়িয়ে দেয়। এখন দেখছে মহাবিপদ!
‘মীরাজ বাইসাপ! চলউখা হাওরে দি যাইÑ’ কনর আলী চলা থামিয়ে বলল।
‘অয় ঠিক না টিল্লার গালাদি যাওয়াÑ হাওরি পথে চলোÑ’ মীরাজ বলল।
আবির ভয়মিশ্রিত দৃষ্টিতে দু’জনের দিকে তাকায়। কিন্তু মুখে কিছু না বলে ময়নার দিকে আরেকবার তাকায়। এই ময়না কিনতে এসেই তাঁরা বিপদে পড়েছে। দোষ তারই। কনর আলী টিল্লার পাশ দিয়ে যাওয়ার রাস্তা থেকে ঘুরে ভিন্ন পথ ধরল। কনর আলীর পেছন পেছন ওরা হাঁটতে থাকে। এবার কনর আলীর প্রতি পদক্ষেপ ধরে ওদের হাঁটতে হবে। মীরাজের এ পথ সম্পর্কে ধারণা অল্প। তাছাড়া হাওরের কোথাও পানি, কোথাও কাদা আবার কোথাও শুকিয়ে রাস্তা হয়ে গেছে। মানুষের চলাচলের জন্য। কনর আলী তা জানে। কারণ প্রায় প্রতিদিনই তার এ পথে যাওয়া-আসা করতে হয়।
কনর আলী বাঁশের বাঙ্ কাঁধে নিয়ে হেলে দুলে হাঁটছে। এ হাঁটার মধ্যে একটা তাল আছে। আবির লক্ষ করে।
মীরাজ ও আবির কনরের পেছন পেছন হাঁটছে। খানিকটা দূরত্ব রেখেই ওরা হাঁটছে। এমনিতেই কনরের হাঁটার গতি ওদের চেয়ে বেশি। তাই পেছনে পড়ে যাচ্ছে। কখনো দূরত্ব বেশি হলে দৌড়ে কাছাকাছি হচ্ছে।
হাওর বলে চারদিক খোলা। চাঁদের আলোয় সব পরিষ্কার দেখাচ্ছে। চারদিক বেশ নীরব। তবে অনতিদূরে জেলে পাড়া থেকে শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে। মীরাজ আন্দাজ করে ‘মাইমাল পাড়া’ থেকেই শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে। জেলে পাড়াকে স্থানীয় ভাষায় ‘মাইমাল পাড়া’ বলে। এ পাড়াটা বেশ বড়। পুরো গ্রামটা জুড়েই মাইমালের বসবাস।
‘চাচু! শেয়ালগুলো কোথা থেকে ডাকছে?’ অনেকক্ষণ পর আবির মুখ খুলল। এতক্ষণ বাঘের ভয়ে বুঝি আড়ষ্ট হয়ে ছিল।
‘ঐ যে দক্ষিণ দিকে দু-একটা মশাল জ্বলেÑ ঐ যে…’ মীরাজ আঙুল দিয়ে দেখায়। মীরাজের নির্দেশিত দিকে আবির তাকায়। দেখতে পায় মশাল জ্বলছে।
‘জি চাচু দেখা যাচ্ছেÑ’ আবির বলল।
‘ঐ মশালগুলো মাইমাল পাড়ার। রাত্রে ওরা মশাল জ্বালাইয়া রাখইন। যেন মানুষে চিনতে পারে ঐটা মাইমাল পাড়াÑ’ মীরাজ বলল।
এতক্ষণ ওরা দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছিল। জিরিয়ে নেয়ার জন্য। কনর আলী যথারীতি বাঙ কাঁধে তুলে নিয়ে শুরু করল হাঁটা। ওর সঙ্গে মীরাজ ও আবিরও।
আবির লক্ষ করল ময়নাটা সেই চুপচাপ। কোন ডাকাডাকি ঝাঁপাঝাঁপি নেই। এতে ওদের সুবিধে হয়েছে। এই কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার সময় যদি ময়নার জ্বালাতন সহ্য করা লাগত তবে হতো সেটা ওদের জন্য আরও কষ্টকর।
কনর আলী বাঙ ঘাড়ে আগের মত এগিয়ে চলেছে। দেখে শুনে হাঁটছে। মাটি কোথাও বেশ নরম। পা দেবে যেতে পারে। আর পা দেবে গিয়ে বিপদও ঘটতে পারে।
মীরাজের হাত ব্যথা করছে। পাখির খাঁচা বহন করতে গিয়ে। লোহার খাঁচা বলে বেশ ওজন। হাত বদল করে এতোটা পথ এসেছে। এখন উভয় হাতই ব্যথা করছে। কিন্তু কাকে বলবে এই কষ্টের কথা। কে সাহায্য করবে তাকে। আবির ছোট মানুষ। ওর পক্ষে এভাবে পায়ে হেঁটে চলা কঠিন। তারপরও চুপ আছে। কষ্টের কথা মুখ ফুটে বলছে না। এটাই বেশি। যদি একবার বলে ফেলেÑ চাচু, আর পারছি না, তখন কী উপায় হবে! তাই হাতের ব্যথা, মনের ব্যথা সব ভুলে কনর আলীর পিছু পিছু হাঁটছে তো হাঁটছেই।
কনর আলী হেঁটেই চলেছে। হাওরের কিনার দিয়ে।
পৌষ মাস বলে হাওর শুকিয়ে এখন ফিতের মত সরু হয়ে গেছে। তবে কোথাও কোথাও পানি আছে বেশ। একটা মানুষ তলিয়ে যাওয়ার মত।
যেসব স্থানে পানি দিনের বেলা ছোট ডিঙি নৌকা চলে। এখন কোন ডিঙি নৌকা নেই। পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকো একটা আছে। সেই সাঁকোটার অস্তিত্ব যে কোথায় তা মালুম হচ্ছে না।
কনর আলীর গতি মন্থর। সে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। খুঁজছে সাঁকো। এই হাওরের সঙ্গে তার পরিচয় গোটা জীবনের। তাই ভুল হওয়ার কথা নয়। পথও চির পরিচিত। অথচ আজ সে খুঁজে পাচ্ছে না সাঁকো। যতোবার ঘুরে ফিরে এগিয়ে গেছে দেখেছে হাওরের পানি। মীরাজ বুঝতে পারে কনর আলী পথ হারিয়েছে। কিন্তু মুখ ফুটে বলছে না। মুখ ফুটে মীরাজও জিজ্ঞেস করছে না আবির ভয় পাবে বলে।
‘ছোড ভাইজান!’ বাঁশের সাঁকোটা কোন দিকে কইতায় পারবা নি?’ কনর আলী কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
‘আমার তো যাওয়া কম, তুমি তো হপ্তায় দু-একবার এই পথে যাওÑ’ মীরাজ থেমে থেমে বলল।
প্রকৃতপক্ষে এ হাওর সম্পর্কে মীরাজের ধারণা সামান্যই। বর্ষাকালে পানি থৈ থৈ করে। সাগরের মত লাগে। আবার বেশ কয়েকটা বিল মিশে গিয়ে কূলকিনারা থাকে না এই হাওরের। কিন্তু শীতকালে শুকিয়ে যায়। বিলগুলো হয় আলাদা। হাওর পড়ে থেকে মরার মত নিজ স্থানে। এখন হাওর মরা। মরা হলেও এর দৈর্ঘ্য বিশাল। তির তির পানি বয়ে গেছে বহু দূর পর্যন্ত। মাঝে মাঝে শুকিয়ে বিচ্ছিন্ন। কনর আলীর মনে ভয় বাসা বাঁধে। শৈশব থেকে শুনে এসেছে এসব হাওরে ‘জিন-ভূত থাকাইন’। রাত্রে যারা হাওর পার হতে আসে তাদের পথ ভুলিয়ে চোখে ধাঁধা লাগিয়ে হাওরের পানিতে চুবিয়ে মারে। তাই কনরের পা অবশ হয়ে আসতে থাকে। ঘেমে নেয়ে উঠেছে। কী করবে ভেবে আকুল।
‘ও ছোড ভাইজান! সাঁকো পাইরাম নাÑ’ কনরের কণ্ঠে সুস্পষ্ট হতাশা।
দাঁড়িয়ে যায় পুরো দলটি। কনর মীরাজ মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। আবির বুঝতে পারে বিপদে পড়েছে ওরা। আবিরের মুখে রা নেই।
‘অখন কিতা করবা কনর বাইসাপ!’ মীরাজ কানে কানে জিজ্ঞেস করে।
‘সামনে দি আউগাইÑ’ বলে কনর বাঙ তুলে নেয় কাঁধে। যথারীতি চলতে শুরু করে। ওর সঙ্গে তাল রেখে মীরাজ এবং আবিরও।
‘ও চাচু! ‘কুলহু’ পড়তে থাকোÑ ইনশাআল্লাহ মুসিবত কাটিয়া যাইবোÑ’
এমন সময় দূর থেকে মানুষের কণ্ঠ শোনা গেল। বিশেষ ধরনের শব্দ। ও… ও … ও… ঐ…ঐ… ওঐ… আবার। ও… ও… ও… ঐ… ঐ… ঐ… ও ঐ…
কনর জবাব দেয়- ‘ও… ও …. ও … ঐ… ঐ…ঐ…’ এটা হচ্ছে অন্ধকারে একে অপরকে দূর থেকে ডাকাডাকির নিয়ম। এই আওয়াজ করা মানে জানান দেয়া কার উপস্থিতি।
‘ছোট ঠাকুর!’ বাড়ি থাকি মানুষ পাঠাইছুনÑ’ কনর বলল।
‘মাইয়ে মানুষ পাঠাইছুন।’ মীরাজ জবাব দিলো।
‘ও… ও… ও… ও …ঐ…ঐ…ওঐ…’ আবার সেই আওয়াজ। এবার বেশ স্পষ্ট। একটা আলোও দেখা যায়। মনে হয় কেউ লণ্ঠন নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।
‘ও… ও… ও… ও… ঐ… ঐ… ঐ… ও ঐ…’ কনর আলী পুনরায় জবাব দেয়।
কিছুক্ষণ পর স্পষ্ট হয়ে উঠে একটা মানুষ হাতে লণ্ঠন এগিয়ে আসছে।
‘ও… ও…. ও… কনর … আ…লী…’ এবার স্পষ্ট শোনা যায় কনর আলীর নাম ধরে ডাকতে।
‘ও… ও… ঐ… ঐ… ঐ…’ কনর আলী জবাব দেয়।
ধীরে ধীরে এগিয়ে আসা মানুষ স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। কাছে এলে দেখা যায় লণ্ঠন হাতে আর কেউ নয় মীরাজদের বাড়িতে টুক টাক কাজ করে ফমু মিস্ত্রি।
লণ্ঠন হাতে ফমু মিস্ত্রি।
সাঁকো পার হয়ে যখন আসছিল তখন মীরাজ কনর আলী দেখতে পেলো সাঁকোটা ওদের একটু সামনেই। তাহলে ওরা কেন দেখতে পায়নি এতক্ষণ। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই সাঁকোর আশপাশ দিয়ে কতো খোঁজাখুঁজি করল তারা। তার মানে মীরাজ-কনর আলী বুঝতে পারলেও মুখ ফুটে কিছু বলল না।
‘ফমু বাইসাপ! আপনেরে যদি মাইয়ে না পাঠাইতা তাইলে কিতা যে অইলোনে আইজ Ñ’ মীরাজ বলল।
‘মাইঝিয়ে কইনা, আমার নাতিরে জলদি গিয়া আনÑ না জানি হাওরে কোন জায়গায় পড়ি থাকছেÑ’ ফমু মিস্ত্রি বলল।
সাঁকো পেরিয়ে ওদের বাড়ির দূরত্ব অল্পই।
পাঁচ.
গ্রামের বাড়িতে বেশ ক’টা দিন হইচই করে কাটাল আবিররা। ফিরে এসেছে ঢাকার বাসায়। এবার আবিরকে খালি হাতে ফিরতে হয়নি। অনেক দিনের শখ পাহাড়ি ময়না নিয়ে ফিরেছে। বন্ধুদের পাহাড়ি ময়না পাওয়ার গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে কান পচিয়ে ফেলেছ। তবে সবাই বেশ উপভোগ করেছে। গল্পটা বেশ মজার এবং থ্রিল আছে। অনেকে এসেছে ময়নাটা দেখার জন্য বাসায়।
ময়নাটার স্থান হয়েছে আবিরদের ঘরের সামনা সামনি বারান্দায়। এ বারান্দার সামনে এক চিলতে বাগান। আবিরের আব্বু বাড়িটা দোতলার বেশি বাড়াননি। বাগানবিলাসী মানুষ। মাটির কাছাকাছি থাকতে চান। ছোট্ট একটা বাগান তিনি গড়ে তুলেছেন ধীরে ধীরে। নানা ধরনের ফুল ওষধি, পাতাবাহার, গাছ-গাছড়া- লতাগুল্ম দিয়ে সুচারুভাবে সাজানো বাগান। আশপাশ লোকেরা এ বাসাকে ‘বাগানবাড়ি’ বলে।
ময়নাটা দক্ষিণ দিকের ঘরের বারান্দায়। উদ্দেশ্য ময়না যাতে অন্য পাখিদের কাছে পায়। বাগানে অনেক ধরনের পাখির আসা-যাওয়া ঘটে। তাতে ময়নাটা বনে আছে ভাববে। আবিরের চিন্তা।
আবিরদের বাসার বৈশিষ্ট্য গাছের যেমন প্রচুর সমাবেশ, তেমনি রয়েছে পাখি, কীট পতঙ্গের আনাগোনা। কান টানলে মাথা আসবেই। বাগান থাকলে পাখি, প্রজাপতি, ফড়িং, মধুপোকা ইত্যাদি আসবেই। ছোট ডালিম গাছে বুলবুলির অস্থির ছুটোছুটি, পেয়ারা গাছে শালিক পাখির ডাকাডাকি। দুপুরে দোয়েল পাখির শিস, কাকের কা-কা ডাক আবিরকে মুগ্ধ করে রাখে। ময়না তাই এখানে নিঃসঙ্গ নয়। পার্থক্য হচ্ছে ময়না বন্দিখাঁচায়Ñ অন্যরা মুক্ত।
আবিরের প্রিয় স্থান ময়নাকে রাখা বারান্দা। ময়নাকে আধার দেয়া, পানি দেয়াÑ এসব কাজে মেতে থাকে সে। এ জন্য আম্মুর কাছ থেকে বকাও জোটে। কিন্তু আবির এই বারান্দা ছাড়ে না। এখানে বেতের ইজি চেয়ারে বসে সময় কাটে তার।
স্কুলে যাবার আগে একবার এসে দেখে যায় ময়নার কী প্রয়োজন। আবার এসে স্কুলব্যাগ রেখেই চলে আসে ময়নার কাছে কী দরকার দেখার জন্য। ময়নার কী দরকার তা নিয়ে আবিরের চিন্তার কোন শেষ নেই। এসব আম্মু একদম পছন্দ করছেন না। নালিশ চলে গেছে আব্বুর কাছেও। আব্বু এক নালিশে শাসন করেন না। তার মানে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে এরপর লাল কার্ড পেলেই খেলার মাঠ থেকে আউট। ফুটবল খেলার নিয়মের মতো। তাই আবির এখন খুব সাবধান।
বিকেল বেলা ছাড়া বারান্দায় এসে সময় কাটায় না আবির। সেভাবে আজও বিকেলে বারান্দায় বসে ময়নার সঙ্গে মনের কথা বলছে। ও ময়না ও ময়না! লাগবে নাকি গয়না? কী গয়না দেবো বল না! বাজারে যাবি চল না!
এসব নানা কথা ছড়া কেটে আবির মেতে ছিল ময়নাকে নিয়ে।
এমন সময় আম্মুর কণ্ঠÑ আবির! আবির!…
‘জি আম্মু!’ গলা ছেড়ে আবিরের উত্তর। কিছু একটা ঘটেছে আন্দাজ করে। উঠে পড়ে ইজি চেয়ার থেকে। ধীর পায়ে আম্মুর ঘরের পাশে এসে দাঁড়ায়। হুট করে ঢোকার অনুমতি নেই।
‘তোমার টিচার ড্রয়িং রুমে বসেÑ শিগগির যাও!’
‘এ সময় টিচার ক্যানÑ’ কাঁদো কণ্ঠে আবির বলতে যাচ্ছিল।
‘বিকেলে আর কেউ পড়ে নাÑ দু’দিন বাদে পরীক্ষা, যাও শিগগির যাওÑ’
আম্মুর বজ্রকণ্ঠ। আবির চুপচাপ ঐ স্থান ত্যাগ করে সোজা ড্রয়িং রুমে।
‘বুঝেছি ময়নাকে শাওনদের বাসায় পাঠাতে হবেÑ’ বলতে বলতে আম্মু রান্না ঘরের দিকে গেলেন। আবির শুনতে পেল।
আবির মনে মনে ভাবে ময়নাকে শাওনদের বাসায় পাঠানো মানে সেই ময়না ছাড়া হয়ে যাওয়া। তা সে কিভাবে সহ্য করবে।
আবিরের ছোট খালু আবার পাখিপ্রেমিক। শাওন সেই খালুর ছেলে। ওর খালাতো ভাই। ভীষণ ভাগ্যবান।
পাখিপ্রেমিক আব্বু বলে ওদের বাসায় রয়েছে বেশ কয়েক জাতের পাখি। দেশী-বিদেশী মিলিয়ে শ’খানেক পাখির এক রাজ্য ওর খালুর। মোতালেব খালুর রাজ্যে নেই শুধু ময়না। ময়নাকে পাঠিয়ে দেয়া মানে খালুর অভাব পূরণ। আর আবির ময়না হারা হওয়া। আর আম্মুর যা রাগ সেটা সম্ভব।
সে দিন ছিল ছুটির দিন। সবাই বাসায়। শাওনের আব্বু মোতালেব খালু এলেন আবিরদের বাসায়। হন্তদন্ত হয়ে। ময়না পাখি এনেছে আবির শুনে দেখতে। আবিরকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে এলেন ময়না যে বারান্দায় থাকে সেই বারান্দায়। পাখি বিশারদ মানুষ মোতালেব। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখলেন তিনি। মন্তব্য করলেন, ‘একদম খাঁটি পাহাড়ি ময়নাÑ সাইজেও খাসা!’
আবিরের মন খুশিতে ভরে গেল। ছোট খালু যখন বলেছেন- খাসা, একদম খাসা। ময়নাকে নিয়ে আবিরের দিনগুলি বেশ কাটছিল। হঠাৎ ময়নার কাণ্ড-কারখানা নিয়ে তুলকালাম। চিন্তায় পড়ে যায় আবির। এমনিতে ময়নার মত শিস দেয়। কিন্তু যখন কেউ থাকে না তখন অদ্ভুত শব্দ করে। ভূতের মত দাঁত কটমট করা, হাড় চিবিয়ে খাওয়া, ভয়ঙ্কর ধরনের শব্দ নাকি ময়না করে। প্রথম প্রথম অন্য কিছু ভাবলেও এখন মোটামুটি জানা ঐ সব ভীতিকর শব্দের উৎস ময়না। রাতেই বেশি করে। ভয়টা তাই বেড়ে যায় আরও।
বিষয়টা এখন একান ওকান হয়ে পাড়ার অনেক কানে চলে গেছে। রাতের ‘খট খট্টাস খট খট্টাস’ করা শব্দ অনেক দূর অবধি পৌঁছে। শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে বারান্দায় এসে দেখা যায় ময়নাটা অস্থির পদচারণা করছে। খাঁচাও দুলছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে খাঁচার দরোজা খোলা। তালা রিংয়ের সঙ্গে ঝুলানো। ভেবেছে ভুল করে খাঁচার দরোজা খোলা রেখেই তালা দিয়েছে হয়তো। কিন্তু এ কাণ্ডটা প্রায়ই হতে থাকে। গতরাতেও এমনটা হয়েছে।
আবিরের আব্বুই সাধারণত রাতে শোবার আগে বাইরের দরোজা ঠিক ঠাক লাগানো আছে কি না দেখে থাকেন। তাঁর চোখেই বিষয়টি ধরা পড়ে। সকালে জানতে চেয়ে বুঝতে পারে ঘটনাটা ভৌতিক। আবির জানায়, ‘আব্বু আমিতো আধার দেবার সময় একবার খাঁচার দরোজা খুলিÑ সতর্কতার সঙ্গে তালা দিয়ে থাকি।’ বিকেলে যখন বারান্দায় বসে ময়নার সঙ্গে কথা বলছিল ও তখন খাঁচার দরোজায় তালা দেখেছে। এসব নিয়ে আবির নিজেও খুব চিন্তিত। তাই কথা বাড়ায় না। চুপচাপ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এসব প্রকাশ হয়ে পড়লে ময়নার ভাগ্যে যে কী আছে! আবির ভাবে। ইতোমধ্যে আম্মু শাওনদের বাসায় পাঠানোর হুমকি দিয়ে রেখেছেন। আব্বুর গাছের প্রতি আগ্রহ আছে, পখির প্রতি মায়া নেই। তাই আব্বুর সাপোর্ট পাওয়া যাবে না।
*     *     *
গত রাতের ভীতিকর ঘটনাটা নিয়ে সকালে নাশতার টেবিলে কথা চলছিল। আবির শ্রোতা। অন্যরাও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিল ময়নার কাণ্ড। আবির এখন নিজেও খানিকটা ভীত। কিছু বলার মতো ভাষা তার নেই।
‘রাতে কী দেখলে আবিরের আব্বু?’ রুটিতে জেলি লাগাতে লাগাতে ফস করে প্রশ্ন করে বসলেন আবিরের আম্মু। রেশমার প্রশ্ন শুনে আবিরের আব্বু মুখে রুটির লোকমা পুরতে গিয়ে থেমে যান। চোখ গোল গোল করে তাকান। আবিরের দিকে কয়েক সেকেন্ড।
‘কী বলবো, আমার চোখে সে দৃশ্য এখনও ভাসছেÑ’
এ পর্যন্ত বলে মোজাম্মেল আবার খেতে লেগে যায়।
‘কী দেখলে বলবে তো?’ রেশমার কণ্ঠে ঝাঁজ। রেশমার সব কিছুতেই ব্যস্ততা। তাছাড়া সুযোগ পেলেই আবিরের আব্বুকে তাড়া লাগানো তার স্বভাব। সবার সঙ্গে বেশ স্বাভাবিক আচরণ করলেও মোজাম্মেলের সঙ্গে কথা বলতে গেলেই ঝাঁজ থাকে। আবিরও দেখেছে দৃশ্যের খানিকটা।
কিন্তু বলতে সাহস পাচ্ছে না। এত শখ করে আনা ময়না নিয়ে এভাবে বিপদে পড়তে হবে তা কস্মিনকালেও ভাবেনি। আবিরের চোখে ভাসছিল ময়নার মালিকের চেহারা। বড় বড় পাথর দিয়ে বানানো মালা দু-গাছা গলায়। লম্বা লম্বা চুল কাঁধজুড়ে। চোখ দুটো লালাভ। সাধু-সন্ন্যাসীর বেশ। তাহলে পাখির মালিক কোন জাদুকর কিংবা অন্য কিছু?
‘শোন বলছি, তখন রাত আনুমানিক পৌনে তিনটে। বারান্দায় কাচের জিনিস ভাঙার ঝনাৎ শব্দ শুনতে পাই। ঘুম থেকে জেগে যাই। শোয়া থেকে উঠে বসি। ভাবতে থাকি শব্দটা কোন দিক থেকে এলো। আন্দাজ করলাম পাখির বারান্দা থেকে। ভাবলাম আবির রাতে উঠে ময়নাকে পানি দিতে গিয়ে হাত থেকে পড়ে গ্লাস ভেঙেছে বোধ হয়।
প্রথমে আবিরের ঘরে এলাম। আবিরও উঠে বসেছে। আমাকে দেখে ভীত কণ্ঠে বললÑ ‘আব্বু, বারান্দা থেকেÑ’
আমি বললাম, চলো দরোজা খুলে দেখি। ও বলল, আব্বু, থাক দরোজা খুলে কাজ নেই। সকালে দেখা যাবে কী ঘটেছে।
আমি বললাম, ‘না, এখনই দেখতে হবেÑ প্রকৃত ঘটনা জানতে হলে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অকুস্থলে হাজির হতে হয়।’
বারান্দার লাইটের সুইচ ঘরের ভেতর তা অন করলাম। লাইট জ্বললো না। তার মানে বাল্ব ফিউজ হয়ে গেছে। চার্জার লাইট সঙ্গে নিলাম।
‘এতো লম্বা বর্ণনা কে চাচ্ছে, ও তুমি পুলিশকে দিয়ো। কী দেখলে তা বলো!’ রেশমা বলল।
মোজাম্মেল একটু খেই হারিয়ে ফেলে রেশমার তাড়া খেয়ে। মোজাম্মেলের নাকি এটা পুরনো অভ্যাস যে কোন ঘটনা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার।
‘আচ্ছা বলছি, দেখলাম বারান্দার লাইট ভেঙে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ময়নাটা খাঁচায় নেই।’
‘মানে কী ময়না তো খাঁচায়Ñ’ রেশমা অবাক হয়ে বলল।
‘আহাহা রাতের ঘটনা বলছিÑ তখন ছিল না।’
‘তাহলে তুমি ঘুম জড়ানো চোখে ভুল দেখেছোÑ’ রেশমা জোর দিয়ে বলল।
‘আম্মু, ছিল না খাঁচায়Ñ’ আবির বলল ঢোক গিলতে গিলতে।
‘তাহলে আবার এলো কোত্থকে? আমি আজই এ আপদ বিদায় করবোÑ মোতালেবকে বলব নিয়ে যেতে।’
রেশমা হন হন করে চেয়ার ছেড়ে উঠে হ্যান্ড সেট আনতে যায়।
ছয়.
এতো কষ্ট করে আনা ময়নাকে নিয়ে এতো সব কাণ্ড ঘটবে আবির তা ভাবতে পারেনি।
পড়ার টেবিলে বসে ভাবছিল অনেক কিছু। গালে হাত দিয়ে। পড়ায় মন বসছিল না মোটেই।
পাখিটা স্বাভাবিক পাখি নয় এটা বোঝা যাচ্ছে। রাতে যে ঘটনা ঘটে গেল তা চোখের দেখা। ভুল দেখা নয়।
আব্বু না হয় ভুল দেখেছে, নিজে কী ভুল দেখেছে? না, ভুল দেখেনি। যা হোক পাখিটা মোতালেব খালুর বাসায় থাকুক কিছুদিন।
আম্মুর সিদ্ধান্ত সঠিক।
পড়ার টেবিলে বসে আবির অনেক কথা ভাবছিল। পাখিটার চেহারা চোখের সামনে ভাসছে। শিস দেয়া শব্দ কানে শুনতে পাচ্ছিল। পড়ায় মন বসাতে পারছিল না। বিকেলে স্যার এসেছিলেন যথারীতি। পড়েছে নিয়ম মত। কিন্তু মন ছিল উদাস। স্যার বলেছিলেন, কি আবির পাখির জন্য মন খারাপ? জবাব না দিয়ে চুপ থেকেছে।
‘আবির, আবির, আবিরÑ’
আম্মুর ডাক। আম্মুর ডাক শুনে আবির কান খাড়া করে। আম্মুর ডাকের মাঝে আবিরের জন্য ভয় লুকিয়ে থাকে।
‘জি আম্মুÑ’ জবাব দেয়। তবে যতোটা জোরে জবাব দেয়া উচিত ছিল, সেভাবে দিলো না। ইচ্ছে করল না। চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে। এমন সময় রেশমা আবিরের ঘরে ঢোকেন। মুখোমুখি হন আবিরের।
‘এই যে আবির, ড্রয়িং রুমে তোমার খালু বসে, যাও শুনে আস তোমার ময়নার কাণ্ডÑ ময়না না ওটা ভূত।’
রেশমা অনেকটা ব্যঙ্গ করে কথাগুলো বললেন।
‘জি আম্মু যাচ্ছিÑ’
আবির অনেকটা ইচ্ছের বিরুদ্ধে ড্রয়িং রুমে আসে। ময়না নিয়ে আর তার ভাল লাগছে না।
‘আবির… আবির… আবির…’
এবার আব্বুর কণ্ঠ। আবির তখন ড্রয়িং রুমে ঢুকেই পড়েছে।
‘এসো এসো আবির, বসোÑ’ মোতালেব খালু বললেন।
‘আসসালামু আলাইকুম!’ আবির সালাম জানায়।
আবির একটু দূরত্ব রেখে একটা মোড়ায় বসতে যাচ্ছিল, বাধা দেন ছোট খালুÑ ‘না না তুমি এই সোফায় বসোÑ তোমার সঙ্গে কথা আছে।’
আবির খালুর পাশের সোফায় বসল। আব্বু বসেছেন খালুর মুখোমুখি।
‘এই আবির শুনোÑ তোমার ময়নার কাণ্ডÑ’ এ পর্যন্ত বলে ছোট খালু চুপ মেরে যান।
আবির দেখল ছোট খালু আজ এসেছে অনেকটা উদভ্রান্তের মত। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। দু-একদিন সেভ না করলে যা হয়। কয়েকদিন ধরে শীতটা জেঁকে বসেছে। খালু তাই কাশ্মিরী শাল গায়ে দিয়ে এসেছেন। গবেষক মানুষ খালু। পাঞ্জাবির সঙ্গে ঘিয়ে রঙের শাল চোখে গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা ভাল মানায়।
‘আবির হা: হা: হা:…’ মোতালেব ছাদ ফাটানো হাসতে থাকেন।
হা: হা: হা: হা: …
হা: হা: হা: হা: …
মোতালেবের হাসিতে যোগ দেন মোজাম্মেল। আবিরও বেয়াদবি হবে ভেবে হাসিতে যোগ দেয়।
কয়েক সেকেন্ড হাসি চলল। আবির হতভম্ব। কী কারণে হাসি তা বোঝা যাচ্ছে না। হাসি নাকি দুই কারণেআসেÑ সুখে ও অধিক দুঃখে।
‘শোনো, তোমার ময়নার কাণ্ডÑ আজ সকালে দেখি আমার সাদা কাকাতুয়া পাখিটা মেরে ফেলেছে। কিভাবে বুঝলাম ময়নার কাণ্ড? অন্য পাখিরা সাক্ষী দিয়েছে। তা আবার কিভাবে বুঝলামÑ পাখি নিয়ে আমার কারবার পঁচিশ বছর। ওদের ভাষা আমি বুঝি।’
‘খালু, অন্য কিছুও মারতে পারেÑ পারে না?’ আবির মৃদুস্বরে বলল।
‘পাখিরা কথা বলতে পারে না, মানুষের মত কিন্তু ওদের ভাষা আছেÑ ঐ ভাষা বোঝার ক্ষমতা সবার নেই।’
মোতালেব কথাগুলো বলে চুপ।
রেশমা ট্রলিতে করে খাবার নিয়ে হাজির। খাবার দেখেই বুঝি খালুর মুখ বন্ধ হলো।
ট্রলিটা সেন্টার টেবিলের পাশে রেখে রেশমা প্রস্থান করলেন।
মিনিটখানেক পর রেশমা আবার ফিরে এলেন।
‘তোমাদের তুলে দিতে হবে?’ রেশমা বললেন।
‘আপু, বসুন তো! কিছ্ইু তুলে দিতে হবে না। আমরা নিজেরা তুলে নেবো।’
মোতালেব এগিয়ে একটা স্যান্ডউইচ তুলে নেন প্লেটে। একটু সস। কাটা চামচ ও ছুরি দিয়ে খেতে লেগে যান।
মোজাম্মেলও একই কাজে নিয়োজিত হন। আবিরও হাতে তুলে নেয়। সেই সঙ্গে রেশমাও যোগ দেন খাওয়ার সম্মিলিত অনুষ্ঠানে।
‘শোন আবির! ব্যাপারটা গুরুতরÑ আমি হাসির মাধ্যমে হালকা করতে চাইলাম। এতে সন্দেহ নেই ময়নাটাই আমার কাকাতুয়া বধ করেছে।’ মোতালেব এ পর্যন্ত বলে খেতে মনোযোগ দেন।
‘তোমার সেই সাদা কাকাতুয়াটা যেটা অনেক দামে ইন্ডিয়া থেকে এনেছিলে?’ নীরবতা ভাঙলেন আবিরের আব্বু।
‘হ্যাঁ দুলাভাই! আজমীর থেকে আনা। নগদ পাঁচ হাজার রুপি দিয়ে কেনা। বর্ডারে বেশ ঝামেলায় পড়েছিলাম। যখন জানল আমি পাখিবিষয়ক গবেষকÑ ইন্ডিয়ান সার্টিফিকেট দেখল, ছেড়ে দিলো।’
‘ময়নাটা তাহলে এমন কাজ করল!’ রেশমা বলল।
‘এক কাজ করা যায় না, ময়নাটা ছেড়ে দাওÑ’ মোজাম্মেল বললেন।
‘কিন্তু দুলাভাই ময়নাটা আসলে কী না জেনে ছেড়ে দেবো?’
‘আসলে কী বলে মনে হয় তোমার?’ রেশমার প্রশ্ন।
‘আমার মনে হয় জাদুর পাখিÑ আসল পাখি নয়।’
‘কী পাখি!’ মোজাম্মেল অবাক হন যেন।
‘জাদুর পাখি হয় নাকি?’ রেশমা বললেন।
‘তার চেয়ে ভায়া, তুমি ওটাকে ছেড়ে দাও। কি আবির, ছেড়ে দিক ওটাÑ আমরা আরেকটা ময়না আনবো-’ মোজাম্মেল বললেন।
‘ছেড়ে দেবো? আচ্ছা একটু ভেবে দেখি।’
‘আচ্ছা আমি একটু ময়নাটা দেখে আসি।’ বলে মোজাম্মেল উঠে দাঁড়ালেন। মোতালেবের পাখির খাঁচার কাছে গিয়ে দেখেন ময়না নেই। খাঁচা আছে যথারীতি।
সে কথা এসে বলতেই মোতালেবও উঠে দৌড় দেন।
আবিরও এবার উঠে গেল। হ্যাঁ, সত্যিই ময়নাটা খাঁচায় নেই।
সময় নিয়ে চেপে রাখা একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ও। তারপর আরেকটি ময়না পাখির প্রত্যাশা করতে লাগল। কবে পাবে ও সেই ময়না? তা ও নিজেও জানে না। তবে সেটা হতে হবে সত্যিকার ময়না, কোনো জাদুর ময়না নয়।


0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম