ভূমিকা: মানুষের জীবন সব সময়ই একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে। শয়তান মানুষেল চারপাশ দিয়ে সবসময় আক্রমনের চেষ্টা করে। তাই মানুষের চরিত্র এমন হতে হবে যা সকল প্রকার অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে। উন্নত চরিত্রের অধিকারী হলেও চলবেনা। সেই চরিত্রকে কাজে লাগাতে হবে অর্থাৎ দেশ ও জাতিও যেন সেই চরিত্রের অনুযায়ী হয়।
- মানুষ দ্বীনি ব্যাপারে যত তৎপর হয় শয়তানের হস্তপেও সেখানে ব্যাপকতর হয়।
- পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ও পুজিবাদী সভ্যতা মানুষের নৈতিকতার পতন ঘটিয়েছে। সমাজতন্ত্রের ইসলামবিরোধী চিন্তার হামলা আমাদের ঈমান-আকীদার মধ্যে সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। এরফলে শয়তানের চ্যালেঞ্জের বাস্তব রুপ লাভ করেছে।
- অনেক বন্ধু দুনিয়ার ঝামেলা থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে সংসারের মধ্যে থেকে নিজের মুসলমানিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে অন্যকে উপদেশ দেয়।
- যে ঈমান, ইসলাম ও তাকওয়া চতুস্পার্শের পরিবেশকে আলোকিত করার জন্য কর্মেেত্র ঝাপিয়ে পরিবর্তে বিরোধী শক্তির ভয়ে মসজিদে আশ্রয় খুজে এটা গুরুত্বহীন।
- চরিত্রকে যখন মূলধন হিসেবে গড়ে তোলা যাবে তখন সে মূলধনকে অবশ্যই সঠিক পথে বিনিয়োগ করতে হবে।
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ তাদের চরিত্র ও ঈমানের পুজি বিনিয়োগের পর তাকে শুধু তির হাত থেকে রা করলেই হবে না। এ পুজি থেকে যেন দেশ-জাতি এবং আমরা, নিজেরাও যেন অধিকতর মুনাফা অর্জন করতে পারি যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ বইটিতে তিনটি বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে।
যথা -
(১) খোদার সাথে যথাযথ সম্পর্ক
- মৌলিক ইবাদত ও আত্ম বিচার
- কোরআন হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যায়ন
- নফল ইবাদত, নফল নামাজ ও রোজা
- সার্বনিক দোয়া ও জিকির
(২) সংগঠনের সাথে সম্পর্ক
- আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য
- অন্ধ আনুগত্য পরিহার
- ব্যক্তির পরিবর্তনে আনুগত্যের পরিবর্তন না করা
- দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
- দায়িত্বশীলের করণীয়
(৩) সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক।
(১) খোদার সাথে সম্পর্ক : খোদার সাথে যথাযথ সম্পর্ক স্থাপন হচ্ছে এ চ্যালেঞ্জিং অবস্থানের প্রথম ও প্রধান প্রয়োজন। এ সম্পর্ক যথাযথভাবে না থাকলে আমাদের সকল প্রচেষ্টা দুনিয়াদারির রঙে রঙিণ হবে এবং শয়তান আমাদের হৃদয় মনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে।
(ক) মৌলিক ইবাদত ও আত্ববিচার : খোদার সাথে সম্পর্কের েেত্র শুধুমাত্র ইবাদত করলেই হবেনা বরং এ ব্যাপারে পূর্ণ নিয়মাবলী জানা, খোদাভীতি থাকাম তার সম্মুখে নত হওয়ার গুনাবলী অর্জন করতে হবে। এর সাথে সাথে আতœবিচারের গুনও থাকতে হবে। আতœবিচারের মাধ্যমে ইবাদতের মধ্যে প্রাণসঞ্চার হয়। সবগুলো গুনাবলী যখন ইবাদতের সাথে সম্পৃক্ত হয় তখন পূর্ণতা লাভ করে।
(খ) কোরআন হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন: খোদার সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই কুরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে। জাহেলিয়াতের বিপদসংকুল পথ অতিক্রম করার জন্য সাহিত্য জ্ঞানের অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পথ চলতে হবে। প্রয়োজনীয় জ্ঞান না নিয়ে সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়লে মাঝপথে জাহেলিয়াতের অন্ধকারে আচ্ছাদিত হতে পারে। তাই কুরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য অবিরামভাবে অধ্যয়ন করে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
(গ) নফল ইবাদত, নফল নামাজ ও রোজা: খোদার সাথে সম্পর্ককে দৃঢ় করার জন্য নফল ইবাদত অত্যন্ত অপরিহার্য। এর মধ্যে নফল নামাজ অত্যন্ত উপকারী। বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ সংগ্রামী পথে অত্যন্ত কার্যকরী পথ। নফল নামাজের পরে নফল রোজাও গুরুত্বপুর্ণ। মাসে তিনটি রোজা রাখা একযুগ রোজা রাখার সমান। তাই রোজা রাখা উচিত। নফল ইবাদতের মধ্যে আর একটি হচ্ছে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা। দ্বীনের কাজের জন্য সাহাবাগণ যেভাবে নবী (সা:) কাছে অর্থব্যয় করার নজির উপস্থাপন করেছেন, আমাদের সেই পদ্ধতিকে অনুসরণ করতে হবে।
(ঘ) সার্বক্ষনিক জিকির ও দোয়া : খোদার সাথে সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে সারান আন্তরিকভাবে জিকির ও দোয়া করা। সংসার ত্যাগের পরিবর্তে হুজুর (সা:) আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন নানারকম জিকির এবং ছোট ছোট কথার দোয়া। সব জায়গাতেই জিকির ও দোয়া আছে। এটি আল্লাহর সাথে সম্পর্কের অত্যন্ত, উপযোগী উপায়। এগুলো হতে হবে সম্পুর্ণ আল্লাহর জন্য। প্রদর্শন করার জন্য জিকির করা বা দোয়া করা সম্পুর্ণ মূল্যহীন। প্রত্যেক কর্মীকেই জিকিরে অভ্যস্ত হতে হবে। প্রতিমুহুর্তে নিজের ঈমান, চরিত্র, ছবর তাওয়াকুল, সংযম ও নিয়মানুবর্তিতার দৃঢ়তা ও শক্তি বৃদ্ধির জন্য দোয়া করা উচিত।
(২) সংগঠনের সাথে সম্পর্ক : দ্বীনি পথে জীবনকে পরিচালনা করতে প্রতিটি মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনযাপন করা উচিত। জীবন হবে সুসংগঠিত এবং সংগঠন হবে সুশৃঙ্খল। সংগঠনের অবশ্যই যথাযথ নেতৃত্ব থাকবে এবং নেতৃত্বের প্রতি সকলের থাকবে আনুগত। যখনই এভাবে চলা যাবে তখনই সংগঠনের সাথে সম্পর্ক হবে। সংগঠনের সাথে সম্পর্কের উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হল।
(ক) আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য : আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য সংগঠনের মেরুদন্ড। আনুগত্য ছাড়া প্রকৃতপক্ষে মূল্যহীন। আল্লাহ নিজে কোরআনে ঘোষণা করেন, “আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসুলের আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর তোমাদের মধ্য থেকে কতৃত্বশীলদের” রাসূল (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করে এবং যে আমার নাফরমানী করে সে আল্লাহর নাফরমানী করে। আর যে আমার (রাসূল নিযুক্ত) আমীরের আনুগত্য করে সে আমার আনুগত্য করে এবং যে আমার আমীরের নাফরমানী করে, সে আমার নাফারমানী করে। আল্লাহ ও রাসূলের (সা:) কথা মোতাবেক আমাদের প্রত্যেকরই সংগঠনের দায়িত্বশীলের প্রতি আনুগত্যশীল থাকতে হবে।
(খ) অন্ধ আনুগত্য পরিহার: দায়িত্বশীলের সৎ কর্মের / সৎ উদ্দেশ্যের আনুগত্য করতে হবে ।
(গ) ব্যক্তির পরিবর্তনে আনুগত্যের পরিবর্তন না করা: ব্যক্তি যেই হোক না কোন দায়িত্বশীল হিসেবে তার কার্যক্রম যদি শরীআত ভিত্তিক হয় তাহলে অবশ্যই তার আনুগত্য করতে হবে। রাসূল (সা:) ভাষায় একজন নাক কাটা হাবশীকেও যদি ইমাম করা হয় তাহলে তার নিদের্শ শ্রবণ করতে হবে এবং পূর্ণ আনুগত্য করতে হবে। দায়িত্বশীলের পরিবর্তন পর্যায়ক্রমে চলে আসছে। রাসূল (সা:) এর পরে খেলাফতের দায়িত্ব নেন হযরত আবু বকর - উমর - উসমান - আলী (রা:)।
(ঘ) দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব ও কর্তব্য : কর্মীদের যেমনি দায়িত্বশীলদের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে তেমনি দায়িত্বশীলদেরও কর্মীদের প্রতি অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। দায়িত্বশীলকে অবশ্যই কোমল মেজাজের অধিকারী হতে হবে। মার গুন থাকতে হবে এবং সদস্যদের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
সংগঠনের আলোকে দায়িত্বশীল হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার উপায় নিম্নরুপ:-
- সংগঠনের প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতি মায়া, মমতা ও কোমল ব্যবহারের গুনাবলী থাকতে হবে।
- অত্যধিক ধৈর্যের সাথে সাথে মার গুন থাকতে হবে এবং ভুল শুধরানোর মতা থাকতে হবে।
- সংগঠনের কল্যাণার্থে যে ব্যাপারে যে সহযোগী সঠিক পরামর্শ দেবার যোগ্যতা রাখে, সে ব্যাপারে তার সাথে পরামর্শ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় পরামর্শের পর যখন কোন বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় তখন একাগ্রচিত্তে তার উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্টিত থাকতে হবে।
(ঙ) দায়িত্বশীলের করণীয় :
- দায়িত্বশীলের পক্ষ থেকে জারীকৃত সার্কুলার ও নির্দেশনামাকে বন্দেগীর প্রেরণা নিয়ে যথাসময়ে কার্যকরী করার জন্য নিজের সমগ্র শক্তি নিয়োগ করতে হবে।
- নিজ দায়িত্ব ও কতৃত্ব যথাযথভাবে এবং যথাসময়ে পালনের জন্য যে সকল পদ্ধতি বা সময় নির্ধারিত হয় তা মেনে চলার যোগ্যতা থাকতে হবে।
- দলীয় কোন কর্মকান্ডে ত্র“টি-বিচ্যুতি হলে আতœ-সমালোচনা এবং দায়িত্বশীলের কাছে ওজর পেশ ও মা চাইতে হবে।
- সংগঠনের প্রতি সহযোগীদের দায়িত্বানুভুতি থাকা একান্ত অপরিহার্য। সংগঠন শৃংখলা হচ্ছে আল্লাহ ও রাসূলের প থেকে একটি আমানত এবং তাকে এ আমানত রার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
(৩) সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক :-
- কোন খবর শুনে অনুসন্ধান না করে সাথে সাথে সিদ্ধান্ত না নেয়া।
- সকল প্রকার মনোমালিন্য ঝগড়া-বিবাদ দুর করে ভাত্ত্বৃ প্রতিষ্ঠা করা।
- কাউকে বিদ্রুপ না করা।
- কারো দোষ না খোজা।
- কারো অসম্মানজনক নাম ব্যবহার না করা।
- কারো সম্পর্কে পুরোপুরি না জেনে কু-ধারণা পোষণ না করা।
- অন্যের গোপন অবস্থা জানার জন্য গোয়েন্দাগিরি না করা
- কারোর গীবত না করা।
এই দাবীগুলোর প্রতি যত অধিক নজর রাখ হবে ততই আন্দোলনের ঐক্য ও সহযোগীদের ভাতৃত্ব শক্তিশালী হবে এবং কতৃত্ব ও আনুগত্য ব্যবস্থা যথাযথভাবে কাজ করতে সম হবে।
উপসংহার : যদি আমরা খোদার সাথে সম্পর্ক রার পরে দলীয় নীতি ও শৃংখলার আনুগত্য করি এবং উল্লেখিত নৈতিক গুনাবলী নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি করে ইসলামী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ি তাহলে আমরা সফল হবোই ইনশাআল্লাহ।
0 comments: