অধ্যায় ০১ : মালিকানা সমস্যা ও ইসলাম : মালিকানা সম্পর্কে দুইটি মত

অর্থ ও সম্পত্তির মালিকানা সম্পর্কে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। একটি ব্যক্তিগত মালিকানা এবং অপরটি সম্পত্তির জাতীয়করণ। ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকার ব্যক্তিকে পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা দান করিয়াছে। যে কোন উপায়ে হউক না কেন, সে যত সম্পদ এবং যত সম্পত্তিই উপার্জন কিরবে, তাহাকে সে একন্তভাবে নিজের মালিকানাধীন মনে করিতে পারিবে। উপার্জনের এই নিরুংকুশ স্বাধীনতা ব্যয়ের ব্যাপারেও তাহাকে পূর্ণ নিরুংকুশ ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী করিয়া তোলে। কাজেই তাহার উপার্জিত অর্থ ও সম্পত্তি যেভাবে যে পথে এবং যত পরিমাণেই সে ইচ্ছা করিবে, অনায়াসেই তাহা খরচ কিরতে পারিবে; কিংবা এক বিন্দু খরচ না করিয়া তিল-তিল করিয়া তাহা সঞ্চিত করিয়া রাখিলেও তাহাতে কাহারো আপত্তি করা চলিবে না। এক কথায়, ব্যয় করা বা সঞ্চয় করিবার ব্যাপারে এই মত ব্যক্তিকে পূর্ণ আজাদী দান করিয়াছে। বস্তুত ইহাকেই বলে ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকার। বর্তমান যুগের পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের নিশানবর্দারগণ এই মত সমর্থন করিয়া থাকে। আর সত্য বলিতে কি, অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই দৃষ্টিভঙ্গির মারাত্মক পরিণতি দীর্ঘকাল ধরিয়া সমগ্র দুনিয়াকে শোষিত নিষ্পোষিত এবং দু:খ ও দারিদ্রের দু:সহ জালায় জর্জরিত করিয়া রাখিয়াছে। ইহা মানুষকে অমানুষিক স্বার্থপরতা ও নির্মম অর্থপূজা শিক্ষা দিয়াছে। এই ব্যবস্থা পুঁজিপতি ও সম্পদশালীদের স্বাতন্ত্র্যবাদ ও শ্রেষ্ঠত্ব বোধে দীক্ষিত করিয়া বিশাল বিশ্ব-মানবতার ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরিয়াছে। দু:খিতের আহাজারী আর ব্যথিতের মর্মবিদারী ফরিয়াদ তাহাদের কর্ণকুহরে মাত্রই পৌঁছায় না। বিপন্ন ও ব্যথিত মানুষ যখন তাহাদের সম্মুখে এক বিন্দু করুণা লাভের আশায় হস্ত প্রসারিত করিয়া সাহায্য ও সহানুভূতি পাইবার জন্য করুণ নেত্রে তাহাদের প্রতি তাকায়, তখন তাহারা ইহাদের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করিতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ করে না। এই সব দরিদ্র, সর্বহারা ও মজলুম মানুষকে তাহারা হীন, নীচ ও মানবতার কুলাংগার বলিয়া মনে করে। অন্য কথায়, দরিদ্র আর সর্বহারা হইয়া যেন তাহারা মস্তবড় অপরাধ করিয়া বসিয়াছে। এই ধরনের লোক যখন কোন কারখানার মালিক হইয়া বসে, তখন মজুর-শ্রমিকদিগকে তাহাদের শোষণ ও নিষ্পেষণের অগ্নিজ্বালায় ভষ্ম করিতে থাকে। আবার ইহারা যখন জমিদার ও জোতদার হইয়া বসে, তখন প্রজা-কৃষকগণ তাহাদের নিকট নিরন্তর লাঞ্চিত ও নিপীড়িত হইতে থাকে। আর রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব যখন ইহারা লাভ করে, তখন নিন্মশ্রেণীর সরকারী কর্মচারী হইতে শুরু করিয়া দেশের কোটি কোটি বাসিন্দা খাদ্য-বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রভৃতি মানুষের বুনিয়াদী প্রয়োজন হইতে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হইয়া যায় এবং তাহাদের বঞ্চিত রেখে বিপুল জাতীয় সম্পদকে ইহারা ইহারা নিজেদের বিলাস-ব্যাসন, লোভ ও লালসা এবং নিরবচ্ছিন্ন সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের অগ্নি শিখায় আহুতি দেয়।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম