সত্যের সাক্ষ্য
আপনাদের উপর এই যে সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে এর অর্থ হচ্ছে এই যে, আপনাদের কাছে যে সত্য এসেছে, যে সত্য আপনাদের কাছে উদ্ভাসিত হয়েছে, সত্যতা ও যথার্থতা সম্পর্কে এবং তার সরল-সোজা পথ হওয়া সম্বন্ধে আপনারা দুনিয়ার সামনে সাক্ষ্য দান করবেন। এমনি সাক্ষ্য দিবেন যেন সত্যতা যথার্থরূপেই প্রতিপন্ন হয় এবং দুনিয়ার মানুষের সামনে আল্লাহর দীনের চুড়ান্ত প্রমাণও প্রকাশ হয়ে পড়ে। বস্তুত সত্যের এমনি সাক্ষ্য দানের জন্যেই যুগে যুগে নবীগণের আবির্ভাব হয়েছিল। আর এ দায়িত্ব পালন করা ছিল তাঁদের অপরিহার্য কর্তব্য। নবীদের অবর্তমানে এ দায়িত্ব এসে পড়েছে সম্মিলিতভাবে সমগ্র মুসলিমজাতির উপর।
সাক্ষ্য দানের গুরুত্ব
এ সাক্ষ্যদানের গুরুত্ব আপনারা এথেকে অনুধাবন করতে পারেন যে, এর ভিত্তিতেই আল্লাহ তাআলা মানুষের হিসাব - নিকাশ এবং পুরস্কার বা শাস্তিদানের ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ তাআলা মহাজ্ঞানী, মেহেরবান এবং ইনসাফের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর অগাধ জ্ঞান, অসীম অনুগ্রহ ও ন্যায় বিচারের কাছ থেকে এটা আশা করা যেতে পারে না যে, মানুষ তার ধর্মীয় কথা জানতে পারবে না অথচ তার বিপরীত পথে চলার অপরাধে তিনি তাকে পাকড়াও করবেন। মানুষ সরল- সোজা পথের কথা জানবে না অথচ সে পথে না চলার দরুন তাকে ধরে তিনি শাস্তি দেবেন। বস্তুত কোন বস্তুটি সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে, তা মানুষের অজ্ঞাত থাকবে আর তার কাছ থেকে সে সম্পর্কেই জবাব চাওয়া হবে, এটা কিছুতেই হতে পারে না। এ জন্যেই আল্লাহ তাআলা প্রথম মানুষকেই একজন নবীরূপে সৃষ্টি করেন। অতঃপর মানুষকে তাঁর মরযী ও দুনিয়ার জীবন যাপনের নির্ভুল পদ্ধতি শেখানোর জন্যে যুগে যুগে আরো অসংখ্য নবী পাঠিয়েছেন। তাঁরা মানুষকে এ শিক্ষা দিয়ে গেছেন যে, দেখো,এ পথে তোমরা প্রকৃত মালিকের সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে। আর এগুলো হচ্ছে বর্জনীয় এবং এসব জিনিস সম্পর্কে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে,ইত্যাদি।
চূড়ান্ত প্রচেষ্টা
আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীদের দ্বারা এসব সাক্ষ্যই দান করান। পবিত্র কুরআনে এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে-
رسلا مبشرين ومنذرين لئلا يكون للناس على الله حجة بعد الرسل ط وكان الله عزيزا حكيما .
অর্থাৎ “আল্লাহ তাআলা নবীদেরকে সুসংবাদ প্রদানকারী এবং পরিণতির ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে পাঠিয়েছেন, যাতে করে মানুষ তাঁর কাছে এরূপ বিতর্ক তোলার সুযোগ না পায় যে, আমরা তো বে-খবর ছিলাম। আর আল্লাহ সর্বাবস্থায়ই প্রবল পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আন নিসাঃ ১৬৫)
এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ককরণের দায়িত্ব নবীগণের উপর অর্পন করেন এবং তাঁরা এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের কাজে নিয়োজিত হন। আর তারা যথার্থরূপে সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব পালন করলে লোকেরা নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্যে নিজেরাই দায়ী হতে পারে। আর যদি তাদের পক্ষ থেকে সাক্ষ্য দানের দায়িত্ব পালনে ক্রটি হয়, তবে সাধারণ মানুষের গোমরাহীর জন্যে তাদেরকে পাকড়াও করা যেতে পারে। অন্য কথায় বলা যায়, নবীদের উপর অতি বিরাট ও সংকটপূর্ণ দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছিল। আর তা ছিল এই যে, হয় তাঁদেরকে যথার্থরূপে সত্যের সাক্ষ্য দান করে মানুষের কাছে সত্যকে চূড়ান্তরূপে প্রকাশ করতে হতো অথবা তাদেরকে সাধারণ মানুষের এ অভিযোগের সম্মুখীন হতে হতো যে, আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে যে তত্ত্বজ্ঞান দান করেছিলেন আপনারা তা আমাদের কাছে সরবরাহ করেননি। জীবন যাপনের যে সঠিক পদ্ধতি তিনি আপনাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন, আমাদেরকে তা শিখিয়ে দেননি। এ কারণেই নবীগণ এ দায়িত্বের গুরুত্ব তীব্রভাবে অনুভব করতেন। আর এ কারণেই তাঁরা সত্যের সাক্ষ্য দানের দায়িত্ব পালনে এবং মানুষের কাছে সত্যকে চুড়ান্তরূপে প্রমাণ করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে গেছেন।
জবাবদিহি
অতঃপর নবীদের মাধ্যমে যারা জ্ঞান ও হিদায়াতের পথ পেয়েছেন, তারাই একটি উম্মত বা জাতিতে পরিণত হয়েছে। নবীদের উপর সত্যের সাক্ষ্যদানের যে দায়েত্ব অর্পিত ছিল, তাঁদের অবর্তমানে তা উম্মতের উপর এসে পড়লো। তারাই এখন নবীদের উত্তরাধিকারীর মর্যাদায় অভিষিক্ত হলো। এখন যদি তারা সত্যের সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব যথাযথরূপে পালন করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ সত্যপন্থী না হয়, তবুও তারা পুরস্কৃত হবে এবং সাধারণ মানুষ আল্লাহর দরবারে অপরাধী সাব্যস্ত হবে। কিন্তু তারা যদি সত্যের সাক্ষ্যদানের কোনরূপ অবহেলা প্রদর্শন করে অথবা সত্যের পরিবর্তে অসত্যের বা বাতিলের সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায়, তবে লোকদের আগে তারাই ধরা পড়েবে। তারা নিজেদের কার্যাবলী সম্পর্কে তো জিজ্ঞাসিত হবেই তদুপরি সাক্ষ্যদানে তাদের অবহেলার অথবা মিথ্যা সাক্ষ্যদান করার দরুন যারা গোমারাহী, বিপর্যয় ও ভ্রান্তির পথে চলেছে, তাদের কার্যাবলী সম্পর্কেও তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
অধ্যায় ০২ : সাক্ষ্য দানের গুরুত্ব ও জবাবদিহি
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: