বাংলাদেশের সংবিধান


সংবিধান কি?

সংবিধান হলো কোন দেশের সর্বোচ্চ আইন। এটা লিখিত বা অলিখিত হতে পারে। লিখিত হলে তাকে দুষ্পরিবর্তণীয় সংবিধান বলে। কারণ, এখানে সংসদ সদস্যদের নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোটের দরকার পড়ে। অলিখিত হলে সেটি সুপরিবর্তণীয় সংবিধান। বাংলাদেশের সংবিধান লিখিত এবং এটি দুষ্পরিবর্তণীয়।

বাংলাদেশের সংবিধানঃ

বাংলাদেশের সংবিধানে ১১ টি বিভাগ ও ১৫৩ টি ধারা আছে। কিছু কিছু ধারার সাথে উপধারা যুক্ত আছে। সংবিধানের দ্বিতীয় বিভাগের নাম 'মূলনীতি'। পঞ্চম সংশোধনীতে এই বিভাগে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। যে ধারা সমূহে পরিবর্তন আনা হয় তা হলো, ৬, ৮, ৯, ১০, ১২, ২৫, ৩৮ ও ১৪২ নং ধারা। এছাড়া সংবিধানের প্রস্তাবনাতেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়। (প্রস্তাবনা হলো সংবিধানের ভূমিকা)



পরিবর্তন সমূহঃ

১) প্রস্তাবনায় আনীত পরিবর্তনঃ

-সংবিধানের শুরুতে ' বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম' কথাটা যুক্ত করা হয়।
-প্রস্তাবনায় 'মুক্তি সংগ্রাম' কথাটার স্থলে 'স্বাধীনতা যুদ্ধ' শব্দদ্বয় যোগ করা হয়।

২) ধারাসমূহে আনীত পরিবর্তনঃ

- ৬ নং ধারাঃ ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুসারে বাংলাদেশের জনগণ 'বাঙালি' নামে পরিচিত হবে। আর সংশোধনীতে বলা হয় যে বাংলাদেশের জনগণ 'বাংলাদেশী' হিসেবে পরিচিত হবে।

- ৮ নং ধারাঃ ১৯৭২ সালের সংবিধানে লেখা ছিলো, বাংলাদেশের চারটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে- ক) ধর্মনিরপেক্ষতা খ) সমাজতন্ত্র গ) জাতীয়তাবাদ ঘ) গণতন্ত্র।

পঞ্চম সংশোধনীতে ধর্মরিরপেক্ষতার স্থলে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সন্নিবেশিত হয়। সমাজতন্ত্রের স্থলে 'অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র' যুক্ত করা হয়। এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্থলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ যুক্ত করা হয়। এছাড়া ১(ক) উপধারা যুক্ত করে 'আল্লাহ্‌র উপর পূর্ন আস্থা ও বিশ্বাসই হবে সকল কার্যাবলির ভিত্তি কথাটা যুক্ত করা হয়।

- ৯ নং ধারায় পরিবর্তন এনে লিখা হয়, " রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিগণ সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্টান সমূহে উৎসাহ দান করবেন এবং এই সকল প্রতিষ্ঠান সমূহে কৃষোক শ্রমিক এবং মহিলাদিগকে যাথাসম্ভব প্রতিনিধিত্ব দেয়া হবে"

-১০ নং ধারায় পরিবর্তন এনে লিখা হয় যে, "রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহন নিশ্চিত ক্লরা হবে।

-২৫ নং ধারায় নতুন একটা উপধারা যুক্ত করা হয়, তা হলো, ''রাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলবে"

- ৩৮ নং ধারা থেকে ধর্মিভিত্তিক রাজনীতি থাকবে না অংশটুকু বিলুপ্ত করা হয়।

-১৪২ নং ধারায় পরিবর্তন করে সংবিধানের ৮, ৪৮ ও ৫৬ নং ধারা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দুই তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থনের পাশাপাশি গণভোটের বিধান করা হয়। [ ৪৮ নং ধারায় বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির বিধান রাখা আছে এবং ৫৬ নং ধারায় প্রধানমন্ত্রীর বিধান রাখা আছে।]

শেষ পর্যায়ঃ

২০০৫ সালে মুন সিনামা হল নিয়ে মামলার এক পর্যায়ে হাইকোর্ট পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেন। পরে আপিলের মাধ্যমে এ আদেশ স্থগিত করে তৎকালীন বিএনপি সরকার। পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের বিপক্ষে করা লিভ টু আপিল ২০০৯ সালের ৩ জানুয়ারী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তা বাতিল করে দেয়। কিন্তু ৬ নং ধারায় আনীত সংশোধনী বহাল রাখার আদেশ দেয়া হয়। এবং ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল আনীত পঞ্চম সংশোধনী পূর্বাবস্থায় নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হয়।


ডাউনলোড করুন → বাংলাদেশের সংবিধান

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম