কুরআন হাদীসে সাহাবীদের মর্যাদা ও শিয়া বিভ্রান্তি

আসসালামু’আলায়কুম,
সুপ্রিয় মুসলিম ব্লগার ভাই ও বোনেরা, আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে একজন শিয়া ব্লগার বিভিন্নভাবে শিয়া মতবাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এই ব্লগে। তিনি তা করতেই পারেন। কিন্তু তিনি রসূলুল্লাহর [সালাওয়াতুল্লাহি সালামুহু আলায়হি] সঙ্গীদের [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] উপর মুনাফিকী ও কুফরীর অপবাদ আরোপ করেন। কুরআন এবং হাদীস থেকে অপ উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। শুধু তিনি নন আসলে বেশীরভাগ শিয়া এই কাজ করে থাকে। তারা বলে থাকে রসূলুল্লাহর [সঃ] পরে নাকি তাঁর অধিকাংশ সাহাবীই মুনাফিক হয়ে গিয়েছিল, অল্প ক’জন ছাড়া। আচ্ছা তাহলে তিনি কেমন নবী যে তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর ঘনিষ্ঠ সাথীরা সব মুনাফিক হয়ে গেলেন? তাহলে কি নবী, আদর্শ নেতা এবং শিক্ষক হিসেবে তিনি ব্যর্থ? তিনি কেমন বিপ্লব করে গেলেন যে তাঁর মৃত্যুর পর দু’জন মুনাফিক [আবূ বকর ও উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)] তাঁর আন্দোলনের হাল ধরেছে? ওয়াল-আইয়াজ়ু বিল্লাহ।

প্রিয় বন্ধুগণ, আসুন শিয়াদের প্রচারণার বিপরীতে আল্লাহ্‌ তাঁর কিতাবে তাঁর নবীর সাথীদের সম্পর্কে কী বলেছেন তা দেখি।
কুর’আনে সাহাবীদের মর্যাদাঃ
১। আল্লাহ তাঁর নবীর সাথী হবার জন্য এই লোকগুলোকে বাছাই করেছেন। তওরাত এবং ইঞ্জিলে এদের কথা তিনি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ
مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاء عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاء بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا [الفتح، 48:29]
মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সঙ্গীগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমণ্ডলে রয়েছে সিজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্দাহ সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন। [সূরা আল-ফাতহ্, ৪৮:২৯]

আল্লাহ বলেছেন এঁদেরকে দিয়ে তিনি কাফিরদের অন্তর্দাহ সৃষ্টি করেন। একাজ কি কোন মুনাফিককে দিয়ে সম্ভব?

২। আল্লাহ তা’আলা রসূলুল্লাহর [সঃ] সঙ্গীদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করেছেন, মুনাফিকদের জন্য নয়।
لَـٰكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ جَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۚ وَأُولَـٰئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿٨٨﴾ أَعَدَّ اللَّـهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
কিন্তু রসূল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সাথে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা। তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্রবণ। তারা তাতে বাস করবে অনন্তকাল। এটাই হল বিরাট কৃতকার্যতা। [৯ঃ৮৮-৮৯]

৩। আল্লাহ নিজে মুহাজির ও আনসারদের ঈমানের সাক্ষ্য দিয়েছেন; বলেছেন এরা হচ্ছে সত্যিকার বিশ্বাসী। তিনি তাঁদের জন্য ক্ষমা ও উত্তম পুরস্কারের ওয়াদা করেছেন
وَالَّذِينَ آمَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ آوَواْ وَّنَصَرُواْ أُولَـئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَّهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ [الأنفال، 8:74]
আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জিহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী।

৪। আল্লাহ ঘোষণা করেছেন তিনি মুহাজির ও আনসারদের উপর সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও [রাঃ] তাঁর উপর সন্তুষ্ট।
وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
আর যেসব মুহাজির ও আনসার [ঈমান আনয়নে] অগ্রবর্তী এবং প্রথম, আর যারা সরল অন্তরে তাঁদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। আল্লাহ তাঁদের জন্য এমন উদ্যান সমূহ তৈরী করে রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ সতত প্রবাহমান। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল বিরাট সফলতা। [আত-তাওবা, ৯:১০০]

لَقَد تَّابَ الله عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِن بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِّنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
আল্লাহ দয়াশীল নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা কঠিন মহূর্তে নবীর সঙ্গে ছিল, যখন তাদের এক দলের অন্তর ফিরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অতঃপর তিনি দয়াপরবশ হন তাদের প্রতি। নিঃসন্দেহে তিনি তাদের প্রতি দয়াশীল ও করুনাময়। [আত-তাওবা, ৯:১১৭]

৫। যারা হুদায়বিয়ায় রসূলের [সঃ] হাতে বাইয়াত করেছেন আল্লাহ তাঁদের উপরও সন্তুষ্ট হয়েছেন
لَّقَدْ رَضِيَ اللَّـهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا [48:18]
আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন। [আল-ফাতহ্‌, ৪৮:১৮]

৬। প্রথম দিকের মুহাজির ও আনসার ছাড়াও যারা পরে ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের উপরও অনুগ্রহ করেছেন এবং বলেছেন এঁরা পূর্ববর্তীদেরই দলভূক্ত।
وَالَّذِينَ آمَنُواْ مِن بَعْدُ وَهَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ مَعَكُمْ فَأُوْلَـئِكَ مِنكُمْ
আর যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং তোমাদের সাথে একত্রে জিহাদ করেছে তারাতো তোমাদেরই অন্তর্ভূক্ত। [আল-আনফাল, ৮:৭৫]

যারা আরও পরে এসেছে তাদেরকেও আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন।
وَالَّذِينَ تَبَوَّؤُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِن قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِّمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ. وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষাপোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। আর এই সম্পদ তাদের জন্যে, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে মাফ কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, তুমি দয়ালু, পরম করুণাময়। [সূরা আল-হাশর, ৫৯:৯-১০]

সাহাবীদের মর্যাদা সম্পর্কে হাদীসঃ
১।রসূলুল্লাহ্ [সালাওয়াতুল্লাহি ওয়া সালামুহু আলায়হি] বলেছেন যে তাঁর যুগ হচ্ছে সেরা যুগ। মানে এই উম্মতের সেরা মানুষ হচ্ছে তাঁর সময়ের মানুষেরা।
“সর্বোত্তম যুগ হছে আমার যুগ, তারপর তাদেরকে যারা অনুসরণ করেছে এবং তারপর যারা তাদের অনুসরণ করেছে।” [বুখারী ও মুসলিম আবূ হুয়ায়রা (রাঃ) থেকে]

২। যারা বদরে অংশগ্রহন করেছেন আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেনঃ
আলী ইবন আবি তালিব [রাদিয়াল্লাহু আনহু] বর্ণনা করেছেন, “রসূলুল্লাহ্ [সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম] আমি, আবু মারসাদ ও জ়ুবায়রকে [ইবনুল আওয়াম] রওদাতু খাখ যাবার আদেশ দিলেন। আর আমরা ছিলাম ঘোড় সওয়ার। তিনি বললেনঃ ‘সেখানে গিয়ে এক মুশরিক মহিলাকে দেখতে পাবে। তার কাছে মুক্কার মুশরিকদের কাছে লিখা হাতিব ইবন আবি-বালতাআর একটা চিঠি আছে।’ আমরা রসূলুল্লাহ [সঃ] যে স্থানের কথা বলেছিলেন সে স্থানে গিয়ে মহিলাকে ধরে ফেললাম যখন সে তার উটের পিঠে চড়ে চলছিল। আমরা বললাম, চিঠিটা দাও। সে বলল, কিসের চিঠি? আমরা তখন তার উট বসিয়ে তল্লাশী করলাম, কিন্তু কোন চিঠি পেলামনা। আমরা তখন বললামঃ রসূলুল্লাহর কথা মিথ্যা হতে পারেনা। সুতরাং চিঠিটা বের করে দাও; নচেৎ আমরা তোমাকে উলঙ্গ করে তল্লাশী চালাবো। আমাদের অনমনীয় মনোভাব দেখে মহিলাটি তার কোমরে পরা কাপড়ের ভেতরে আরেকটা কাপড়ের পুটলির ভেতর থেকে তা বের করে দিল। আমরা চিঠিটা নিয়ে রসূলুল্লাহর কাছে আসলাম। [সব দেখে শুনে] উমর বললেনঃ ‘হে আল্লাহর রসূল, এতো আল্লাহ, তাঁর রসূল ও ঈমানদারদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। আমাকে অনুমতি দিন যেন আমি তার [হাতিবের] গর্দান উড়িয়ে দেই।’ রসূলুল্লাহ [সঃ] [হাতিবকে ডেকে] বললেন, ‘তুমি এমন করলে কেন?’ হাতিব তখন বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি এ কাজ এজন্য করিনি যে আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উপর ঈমান পোষণ করিনা। আমিতো এটা এজন্য করেছিলাম যে [মক্কার শত্রু] কওমের প্রতি কিছুটা ইহসান করা যাতে করে আল্লাহর মেহেরবানীতে তাদের অনিষ্ট থেকে আমার মাল ও পরিবার রক্ষা পায়। আপনার সাহাবাদের সবারই মক্কায় কোন না কোন আত্মীয় আছেন। আল্লাহর মেহেরবানীতে তাদের মাধ্যমে এদের পরিজন ও সম্পদ রক্ষা পাবে। কিন্তু মক্কায় আমার কোন আত্মীয় স্বজন নেই।’ রসূলুল্লাহ [সঃ] বললেন, ‘সে সত্য কথাই বলেছে। সুতরাং তোমরা তার ব্যাপারে ভাল ছাড়া অন্য কোন কথা বলবেনা।’ উমর বললেনঃ ‘সে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুমিনদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সুতরাং আপনি আমাকে অনুমতি দিন, যেন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই।’ রসূলুল্লাহ্ [সঃ] উমরকে বললেন, “সে কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহন করেনি? আর নিশ্চয়ই আল্লাহ বদরে অংশগ্রহনকারীদের দেখে বলেছেনঃ তোমাদের যা ইচ্ছে কর। তোমাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গিয়েছে অথবা তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।” এতে উমরের দুচোখ অশ্রুতে ভরে উঠল আর তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই সবচেয়ে বেশী অবহিত।” [বুখারী কিতাবুল মাগাজ়ী – বদর যুদ্ধে অংশগ্রহনকারীদের মর্যাদা অনুচ্ছেদ]

আমি শুধু বদরে অংশগ্রহনকারীদের সম্পর্কিত এ হাদীসটি উদ্ধৃত করছি। কারণ এ লিখার কলেবর অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। শিয়ারা বদরী সাহাবীদেরকেও মুনাফিক মনে করে। আবূ বকর ও উমর [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] তো বদরীদের অন্যতম।

৩। আবূবকর ও আয়িশার সম্পর্কে হাদীস
রসূলুল্লাহ [সঃ] যাদের সাথে কথা বলতেন তাঁর [সঃ] সাহাবীদের মধ্যে তাঁরা মনে করতেন তিনি সম্ভবত তাঁর [সঃ] কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এজন্য আমর ইবন আল-আস [রাঃ] তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কে তাঁর [সঃ] সবচেয়ে প্রিয়।

আমর [রাঃ] বলেন, “রসূলুল্লাহ [সঃ] আমাকে জ়াতু-স-সালাসিল যুদ্ধে অধিনায়ক নিযুক্ত করলেন। আমি তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মানুষের মধ্যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় কে?’ তিনি [সঃ] বললেন, ‘আয়িশা।’ আমি বললাম, ‘পুরুষদের মধ্যে?’ তিনি [সঃ] বললেন, ‘আয়িশার পিতা।’ [বুখারী- মানাক্বিবুস-সাহাবাহ]

এ জাতীয় আরো অনেক হাদীস আছে। বুখারী ও মুসলিমের সাহাবিদের মর্যাদা সংক্রান্ত অধ্যায়গুলোতে এগুলো পাওয়া যাবে।

মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবে আনসার ও মুহাজিরদের ঈমানের সাক্ষ্য দানের পরেও যারা তাঁদের মুনাফিক মনে করে তারা নিজেরা কীভাবে ঈমানদার হতে পারে? যদি তারা ঈমানদার হতো তাহলে এঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার পরিবর্তে সুধারণা পোষণ করত ও দু'আ করত যেমন আগে উল্লিখিত একটা আয়াতে আল্লাহ বলেছেনঃ

وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে, “আমাদের রব্ব আমাদেরকে আমাদের ঈমানের ক্ষেত্রে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করে দাও। এবং ঈমানদারদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ সৃষ্টি করোনা। আমাদের রব্ব নিশ্চয়ই তুমি দয়ালু ও পরম করুণাময়।” [আল-হাশরঃ ১০]

বিঃদ্রঃ মুসলিম ঐক্যের জন্য নিবেদিত প্রাণ কিছু ভাই-বোনেরা আবার মনে করবেন না এর মাধ্যমে আমি বিভক্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছি। নিজেদেরকে এরকম সরলপ্রাণ ভাবলে কিন্তু শেষে ঈমান হারাতে হবে। শিয়ারা কৌশলে আপনাকে তাদের দলভূক্ত করবে আর আপনি শেষে সাহাবীদের বিরোধিতা করতে গিয়ে আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নতের বিরোধিতা করবেন।

আমাদের সহব্লগার নিজামুল৬৬ এর ব্লগে গেলেই দেখতে পাবেন তারা কীভাবে রসূলুল্লাহর সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। কেউ কেউ মনে করতে পারেন এগুলো নিজাম সাহেবের কথা, শিয়াদের কথা না। না, বরং ওগুলোই শিয়াদের আক্বীদা। তিনি যথাযথ শিয়া সোর্স থেকেই ওগুলো উল্লেখ করেছেন।

মুসলিম ঐক্য জরুরী। কিন্তু ঐক্যের ভিত্তি কী? নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নত। আল্লাহর কিতাবের বিরোধিতা করে কোন ঐক্য হয় না।
ধন্যবাদ সবাইকে।
লিখেছেন আবূসামীহা 






শিয়া-doctrine-এর প্রচারণার ফাঁদে পা দেবার আগে আমাদের জেনে নেয়া উচিত যে, শিয়ারা আমাদের দ্বীন সম্বন্ধে কি ভাবেন বা তাদের বিশ্বাসগুলো কি? বিস্তারিত লিখতে গেলে কেউ হয়তো এ নিয়ে হাজার পৃষ্ঠা লিখতে পারবেন। আমাদের দেশে যেমন দেওয়ানবাগী ইসলাম, আটরশী ইসলাম, চরমনাই ইসলাম, রাজারবাগী ইসলাম, আযানগাছী ইসলাম, হাক্কানী ইসলাম, তবলীগী ইসলাম, জামাতী ইসলাম, হিযবুত তাহরীরি ইসলাম, ১৯ ভিত্তিক ইসলাম – এমন বহু ব্র্যান্ডের ইসলাম রয়েছে এবং যাদের প্রায় সবাই নিজেদের “আহলে সুন্নাহ্ ওয়া আল জামা’আহ্” বলে দাবী করেন, শিয়াদের মাঝেও তেমন বহু বহু ফেরক্বা রয়েছে, যাদের কোন কোনটিকে স্পষ্টতই সর্বজনস্বীকৃতভাবে ইসলাম বহির্ভূত বলে মনে করা হয় – যেমন Alawisদের ইসলাম বহির্ভূত মনে করা হয়, কারণ তারা আলী (রা.)-কে অবতার মনে করেন অর্থাৎ আলীর মাঝে ঈশ্বর নিজেকে প্রকাশ করেছেন বলে মনে করেন। প্রাথমিকভাবে শিয়ারা Twelver ও Sevener এই দুই ভাগে বিভক্ত হলেও, এদের মাঝ থেকেই Babi, Bahai, Druze, Ismaili, Zaidi, Alawis, Khoja, Akhbari, Nizari ইত্যাদি নানা শাখা প্রশাখা বেরিয়ে এসেছে। যাহোক, আমরা মূলত Twelver শিয়াদের প্রচারণার সম্মুখীন – যারা ইরানের রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছেন এবং ইরানের জনসংখ্যার প্রায় ৯০% যাদের দ্বারা গঠিত। এরা ১২ জন নির্ভুল ইমামের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন। আমি এই পোস্টে শিয়াদের কেবল তিনটি বিশ্বাসের কথা আলোচনা করবো, যার সাথে কোন মূলধারার মুসলিম কিছুতেই একমত হতে পারেন না:

১)আমাদের কাছে যে কুর’আন রয়েছে তা অসম্পূর্ণ – অসৎ সাহাবীরা কুর’আনের অনেকাংশ সরিয়ে ফেলেছেন (নাউযুবিল্লাহ)! এই বিশ্বাস স্বয়ং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’লার নিম্নলিখিত ওয়াদা ও ঘোষণাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে:
We have, without doubt, sent down the Message; and We will assuredly guard it (from corruption). (Qur’an,15:9)
অর্থাৎ
"নিশ্চয় আমরা কুর'আন (যিকির) নাযিল করেছি, আর আমরাই তার হেফাযতকারী ৷" (কুর'আন, ১৫:৯)

২) আল্লাহর রাসূলের (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবীদের মিথ্যাচারী, আত্মসাৎকারী ও জাহান্নামী মনে করা। রাসূল (সা.) এক এক করে নাম ধরে ১০ জনের জান্নাত লাভের কথা বলেছেন, যাদেরকে আমরা “‘আশারা মুবাশশারা” বা “সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন” বলে থাকি:

”আবু বক্বর জান্নাতে থাকবেন, উমর জান্নাতে থাকবেন , ওসমান জান্নাতে থাকবেন, আলী জান্নাতে থাকবেন, তালহা জান্নাতে থাকবেন, আয্-যুবায়ের জান্নাতে থাকবেন, আব্দুর রহমান ইবন আউফ জান্নাতে থাকবেন, সা’আদ ইবন আবি ওয়াক্কাস জান্নাতে থাকবেন, সাঈদ ইবন যায়েদ জান্নাতে থাকবেন, আবু উবায়দা ইবন আল-যাররা জান্নাতে থাকবেন।” (সূনান আবি দাউদ, আলবানীর মতে সহীহ্)

শিয়ারা মনে করেন, এঁদের প্রথম তিনজনই মিথ্যাচারী, আত্মসাৎকারী ও জাহান্নামী। তাদের এই বিশ্বাস আল্লাহর কালামকেও মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, যেখানে আল্লাহ্ বলেছেন:

The vanguard (of Islam), the first of those who forsook (their homes) and of those who gave them aid, and (also) those who follow them in (all) good deeds, well-pleased is Allah with them, as are they with Him: for them Hath He prepared Gardens under which rivers flow, to dwell therein forever: that is the supreme Felicity. (Qur’an, 9:100)
অর্থাৎ,
"আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম ও অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্‌ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে৷ আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে৷ এটাই মহাসাফল্য ৷" (কুর'আন, ৯:১০০)

৩) তারা তাদের ইমামদের গায়েবের জ্ঞানের অধিকারী বলে মনে করেন – যা স্পষ্টতই ইমামদের নবী-রাসূলদের উপরে স্থান দেয়ার নামান্তর। এটা ইসলামী বিশ্বাসের পরিপন্থী। কুর’আনে বলা হয়েছে:

Say: “I have no power over any good or harm to myself except as Allah willeth. If I had knowledge of the unseen, I should have multiplied all good, and no evil should have touched me: I am but a warner, and a bringer of glad tidings to those who have faith.” (Qur’an, 7:188)
অর্থাৎ,
"বল, ‘আমি আমার নিজের কোন উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান ৷ আর আমি যদি গায়েব জানতাম, তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না ৷ আমিতো একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা এমন কওমের জন্য, যারা বিশ্বাস করে’৷" (কুর'আন, ৭:১৮৮)

আজ এখানেই শেষ করবো ইনশা’আল্লাহ্!

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

শিয়া-doctrine-এর প্রচারণার ফাঁদে পা দেবার আগে, নিজের দ্বীনকে একবার অন্তত সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করুন। আল্লাহ্ আমাদের সত্য জানার ও মানার তৌফিক্ব দান করুন। আমীন!!

ফি আমানিল্লাহ্!






0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম