সেয়ানা বিপ্লবী তাহের আর ৭ ই নভেম্বরের ছায়া নায়কদের অস্পষ্ট কায়া (ব্লগার দাসত্ব)

এ বছর মার্চে বাংলাদেশে জাতীয় এবং আন্তর্জাতীয় সংদের ভং ভনিতায় একটি যাত্রা পালা হয়ে গেলো হাইকোর্টের চত্বরে.........
এই যাত্রাটির নাম : জিয়া খারাপ - তাহের ভালো..........

বলাই বাহুল্য :
প্রযোজক সংস্থা : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ......
পরিচালক : শামসুদ্দীন অ্যান্ড গোবিন্দ কোং.....
পান্ডুলিপি : বাংলাদেশ দা আনফিনিশড রেভ্যুলেশন
পরিবেশক সংস্থা : প্রথম হলুদ , কলিকাল , কাকের কন্ঠ দালাল গং......



তো এই যাত্রা পালা মন্চ্ঞস্থ করতে গিয়ে উন্মাদ প্রায় আওয়ামী হিস্টিরিয়াগ্রস্ত পরিচালক মশায় তথা শামসুদ্দীন সাহেব বলে বসেছেন :

তাহের জিয়ার ক্ষমতা দখল ঠেকাতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন.......
তাহের নিজে কি করতে চেয়েছিলেন তাহলে ?
ললিপপ চুষতে চেয়েছিলেন ?

তাহলে একটু খোঁজাখুজি করে দেখা যাক স্বাদে গন্ধে রঙে চঙে কেমন ছিলো সেই স্বপ্ন অ্যান্ড বিপ্লব ফ্যাক্টরীর ললিপপ...........
আসলে তাহের এবং তৎকালীন জাসদ নেতৃবৃন্দ জিয়াকে সামনে রেখে , জিয়ার মুক্তিযুদ্ধকালীন ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে সুচতুরভাবে ক্ষমতা দখলের প্রয়াস নেন ৭ ই নভেম্বরের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে.......কিন্তু এত কিছুর পরও চেইন অফ কমান্ড এবং সেনাপ্রধান পদের অন্তর্নিহিত শক্তি ও আনুগত্যের কাছে তারা পরাজিত হন....... তাহেরকে এর জন্য চরম মূল্যও দিতে হয়.........

বোল্ডেড কোটেশনটা আমার না........
এই কথাগুলো বংগবন্ধু ভক্ত বীরবিক্রম শাফায়াত জামিলের..........
ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর / পাতা ১৪৯ / মধ্যাংশ :



ইতিহাস নিয়ে সদা সংশয়বাদী মনকে সামাল দিতে এর উপর আরেক প্রস্থ জানুন.........
সেনাদের ভেতর জিয়ার ইমেজ ঈর্ষনীয় পর্যায়ে ছিলো। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়ার ভারী গলায় ঘোষনা সেনাসহ সর্বস্তরের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো , ফলে তার একটা আলাদা ইমেজ ছিলো।কর্ণেল আবু তাহের সেইসুযোগ আগ বাড়িয়ে গ্রহন করেন......জিয়াকে গৃহবন্দী থেকে উদ্ধার করতে হবে - এই দাবী সামনে নিয়ে এসে ক্যান্টনমেন্টে সেনা এবং সিভিল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে একত্র করেন তিনি। সংগে রাখেন সৈনিকদের ১২ দফা দাবী..............

বক্তব্যের বক্তা কে সেটা জানার নিশ্চয়ই একটা কৌতুহল কাজ করছে......
কৌতুহলটা মেটান এখানে / ছবিটির একেবারে বামদিকের জন 

চিনতে পেরেছেন ?
জ্বী , অকৃত্রিম আওয়ামী বন্ধু বীরবিক্রম মেজর জেনারেল আমিন আহমেদ চৌধুরীই কথা গুলো বলেছেন.......
প্রশ্ন : কবে কোথায় বলেছেন / নভেম্বর ৭ / ২০১০ / প্রথম আলোতে.......

এ বিষয়ে আরেকটি ভাষ্য পাওয়া সেসময়কার সব ঘটনার স্বাক্ষি কর্ণেল হামিদের কাছেঃ
জাসদের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক শ্রেনীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা , যদিও কর্ণেল তাহেরের লক্ষ্য ছিল অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল। তাহের সৈনিকদের ১২ দফা দবি প্রণয়ন করে........তাহেরের মতে , জিয়ার সাথে তার আগেই এসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল। তাহেরের ভেবেছিল সে-ই অধিক বুদ্ধিমান । জিয়াকে ব্যবহার করে সে ক্ষমতায় আরোহন করবে ! কিন্তু তার সেই ক্যাল্কুলেশন ভুল হয়েছিল........

ব্লগের শুরুটা তাহেরের বিপ্লবের নেপথ্য অভিলাষের প্রতি প্রশ্নের ল্যাসো ছুড়ে দিয়ে হলেও এই প্রশ্নরজ্জুটি অনেক উপপ্রশ্নের লতায় লতায় জড়ানো প্যাচানো - সোজা ইংরেজিতে টুইস্টেড.........

সেখান থেকেই একটি উপপ্রশ্ন আনটুইস্ট করে নিলাম উত্তর সরলীকরনের স্বার্থে............

প্রশ্নটি হলোঃ তাহের কি জিয়ার জীবন রক্ষক ছিলো ? 

মুলত বাংলাদেশের ইতিহাস পাড়ায় প্রায়ই আওয়ামী বাম ইতিহাস ঢুলিরা একটি ঢেড়া পেটায় , অনেকটা ঢাকাই সিনেমার রিকশা ক্যানভাসিং এর মতঃ
জিয়ার জীবন রক্ষক তাহের , জিয়ার প্রানভিক্ষাদান কারী তাহের............
৭৬ এ ঠিক বাংলাদেশে যেমন , তেমনি ৭৭ এ ভারতের আভ্যন্তরীন চরকায় তেল দিতে গিয়ে হাসিনার ২য় মাতা ইন্দিরা গান্ধির কানমলা খেয়ে ভারত বিতাড়িত মার্কিন সাংঘাতিক লরেঞ্জ লিফশুলজ মশায় এই তাহের ম্যাগ্নিফাইং বাক্যটি রচনা করেছেন...............

তাই অনুসন্ধানী ভাবনায় প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন রাখলামঃ
জিয়ার জীবন কি বিপন্ন ছিলো ?
যদি বিপন্ন হয়েই থাকে তবে কার হাতে বিপন্ন হয়েছিলো ? 

এই প্রশ্নের উত্তরে সেই সব ইতিহাস ঢুলীরা ঢোল ঝোলায় পুরে বাশীতে মিহি সুর তোলেঃ
খালেদ মোশাররফের হাতে.........

আসলেই কি তাই ?

৭ ই নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লবের ইমপালসে মুক্তি পাওয়ার পর জিয়া তার বন্দিত্বের মুল কুশলী শাফায়াত জামিলকে ফোন করে বলেছিলেনঃ 
ফরগিভ অ্যান্ড ফরগেট / লেটস ইউনাইট দা আর্মি...............
জবাবে শাফায়াত জামিল রুক্ষ রূঢ় ভাবে জিয়ার সেই উদার আহ্বান ছুড়ে ফেলেন............

অথচ প্রাণ নিয়ে পালানোর সময় ভাঙ্গা পা নিয়ে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে নারায়নগঞ্জ থানা থেকে টু ফিল্ড রেজিমেন্টে জিয়ার কাছেই তাকে উদ্ধারের জন্য ফোন করলেন শাফায়াত জামিল............
জিয়াও তাকে উদ্ধার করে এনে সিএমএইচে ভর্তি করেন............

১ / পাতা ১৪৫ – ১৪৬ /ইমেজ লিংক ১ /ইমেজ লিংক ২ 

যার কাছে জিয়ার এবং তার পরিবারের জীবন বিপন্ন ছিলো বলে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে তাকেই জিয়ার এমন উদারতা প্রদর্শন কেবল সাম্প্রতিক প্রচারিত ইতিহাসের সাথে বেমানানই নয় , মোটা দাগের ব্ল্যাক আউট অব ট্রুথ............... 

ঠিক এই জায়গাটাতেই আলো ফেলেছেন কর্ণেল শাফায়াত জামিল নিজেইঃ 

ইতিমধ্যে দুপুর দুটোর মধ্যে জিয়া তার পদত্যাগ পত্র জমা দেন। তিনি আমাকে একবার তার সাথে দেখা করার জন্য খবর পাঠান ; কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমার জন্য সেটা হতো কিছুটা বিব্রতকর। জিয়ার সাথে আমার একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিলো । একাত্তরে এক সংগে যুদ্ধ করেছি আমরা ............তবে জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার ভার আমার উপর ছিলো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম , নিজেদের ক্ষমতা সংহত করার পর জিয়াকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ি প্রতিনিধি করে পাঠিয়ে দেবো........ 
১ / পাতা ১৩৬ / ইমেজ লিংক

হ্যা , এটাই সত্য............
৭১ 'র যুদ্ধদিনের বন্ধু শাফায়াত জামিল তথা খালেদ মোশাররফ গং সেকেন্ড ইন কমান্ড এর হাতে জিয়ার জীবন বিপন্নই ছিলোনা...............
ছিলো প্রোটেক্টিভ কাস্টডীতে ! 
ছবি : চিলমারী / সেপ্টেম্বর ১৯৭১ , অপারেশন শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে জেড ফোর্স অধিনায়ক জিয়া , ডানপাশে শাফায়াত জামিল 
ফুল রেসোলিউশন ইমেজ

বিষয়টা শাফায়াত জামিলের আত্নপক্ষ সমর্থন ধরে যদি স্কেপ্টিক কারো ভ্রুকুটি হয় তাহলে সে সন্দেহ দূর করতে পারেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সর্বাধিক গ্রন্থপ্রণেতা মেজর রফিকুল ইসলামঃ

জেনারেল জিয়া কখনোই চাননি খালেদকে হত্যা করা হোক , খালেদ ও জিয়াকে হত্যা করতে চান নি........জেনারেল জিয়া খালেদ কে হত্যা করতে নিষেধ করেছিলেন , নিহত হওয়ার সংবাদে মর্মাহত হয়েছিলেন.......... 
২ / পাতা ৯০ / ইমেজ

ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের কাছ থেকে যেটা জানা যায় টু ফিল্ড আর্টিলারি থেকে জিয়া বংগভবনে ফোন করেছিলেন মূলত খালেদের সাথেই কথা বলার জন্য............
কিন্তু জিয়া জানতেন না যে খালেদ সেখানে নেই , তাই ফোন রিসিভ করেন শাফায়াত জামিল......
এ কারনে এটাও পরিস্কার ' ফরগেট অ্যান্ড ফরগিভ / লেটস ইউনাইট দা আর্মি ' কথাটি জিয়া খালেদকেই বলতে চেয়েছেন............
৩ / পাতা ১০৭ / ইমেজ

সুতরাং তাহের জিয়ার জীবন রক্ষক বাক্যটি একটি খারিজ মামলা যার শেষ রায়টি দিয়েছেন স্বয়ং কর্ণেল তাহের নিজেই: 

আমি সেনাবাহিনী প্রধানকে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করেছি............... 
কালের কন্ঠ / ২১শে জুলাই ২০১০ / তাহেরের জবানবন্দি

তাহেরের দাবি থেকেই ঘটনার চরকা সামনের দিকে ঘোরাই..........
তাহের জিয়ার জীবন রক্ষক বাক্যটি গরল মিথ্যা হলেও তাহের জিয়ার বন্দীদশা মুক্তির নায়ক এই বাক্যটিও একেবারে সরল সত্য নয়.....

পরীক্ষন কাচের প্রতিসরনাংককে ফাকি দিতে না পারায় “জিয়ার বন্দিদশা মুক্তির নায়ক তাহের” বাক্যটুকুও বেশ বড় একটা বাক নেয়..........
পরিস্কার ধরা পড়ে সত্য বিচ্যুতি............

প্রশ্ন উঠতেই পারে কেন বললাম এমনটা...............
কারন নিজ স্বার্থে জিয়াকে বন্দী দশা থেকে মুক্ত করা তাহের জিয়া এবং খালেদদেরকে মনে করতেন কেউটে সাপ...............
অথচ মুখে মধু মনে বিষ নিয়ে জিয়ার সাথেই টু ফিল্ড আর্টিলারিতে সবার সামনে আলিংগন করেছেন বিপ্লবের ছক্কা দিয়ে ক্ষমতার সাপলুডু খেলোয়াড় তাহের.........

জিয়াকে খালেদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে তাহের চেয়েছিলো নিজের বন্দিশালায় আটকাতে.........

৬ নং মঈনুল রোডের বাসা থেকে ধরে এনে তাহেরের বড় ভাই সার্জেন্ট আবু ইউসুফের এলিফ্যান্ট রোডের ৩৩৬ নাম্বার বাড়িতে নিয়ে এসে কব্জা করতে........

খালেদ যেমন জিয়াকে বন্দি করে জোর করে পদত্যাগ পত্রে জিয়ার স্বাক্ষর নিয়েছিলো , ঠিক তেমনি তাহেরও চেয়েছিলো হাতের মুঠোয় নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের জনপ্রিয়তম সেনাপিতা জিয়াকে দিয়ে তার স্বার্থ হাসিল করতে............
ছলেবলে কৌশলে জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে নিয়ে এসে তাহেরের খুনি খেপাটে বিপ্লবী গণবাহিনীর খাচায় পুরতে............... 

কিন্তু তাহেরের ভৃত্য হাবিলদার আব্দুল হাই মজুমদার জিয়াকে রেস্কিউ করে নিজেদের কব্জায় নেয়ার আগেই টু ফিল্ড আর্টিলারির সৈনিকরা তাদের প্রিয় সেনাপিতা জেনারেল জিয়াকে টু ফিল্ড আর্টিলারি অফিসে নিয়ে আসে.........

আর তাতেই তাহের বলে বসেনঃ 
তোমরা তো নিজের পায়ে কুড়াল মারলা । খেলা তো হাতের বাইরে চলে গেলো 
আমাদের সময় / নভেম্বর ৬ /২০১০/ হাসানুল হক ইনুর সাক্ষাতকার/ পিডিএফ 

এই আমাদের সময়ের নভেম্বর ৭ , ২০১০ এ হাসানুল হক ইনু জানিয়েছেন তাদের পরিকল্পনা কি ছিলো জিয়া এবং খালেদকে নিয়েঃ

কর্ণেল তাহের জিয়া সম্পর্কে বলেছিলেন, এরা কেউটে সাপের মত উচ্চাভিলাষি ক্ষমতালোভি অফিসার। ৬ ই নভেম্বর রাতে মেজর জিয়াউদ্দিন ঢাকায় থাকলে খেলা ঘুরিয়ে দেয়া যেতো........... সেরাতের পরিকল্পনা ছিলো এরকম............(৪) হাবিলদার হাই জিয়াকে মুক্ত করে তাহেরের কাছে নিয়ে যাবে (৫) সারোয়ার ও নায়েক সিদ্দিক খালেদকে গ্রেফতার করবে। অভ্যুত্থান রাত ১২ টার বদলে রাত ১ টায় শুরু হওয়ায় দিনটি ৭ নভেম্বর হয়ে যায়। জিয়াকে মুক্ত করলেও তাহেরের নিয়ন্ত্রনে নেয়া হয়নি....... 
আমাদের সময় / নভেম্বর ৭ , ২০১০ / হাসানুল হক ইনুর সাক্ষাতকার/ পিডিএফ

তাহলে সাধারন পাঠকরাই বিচার করুন............
তাহের যা করতে চেয়েছিলো তাতে কি জিয়ার সত্যিকার বন্দিত্ব মুক্তি ঘটতো না কি বন্দি জিয়ার খাচাটাই কেবল বদল হতো ? 





মঈনুল রোডের খাচার বদলে এলিফ্যান্ট রোডের খাচা ! 

শিরোনামের পুরোটা এখনো পরিব্যপ্ত হয়নি ব্লগে.............

কারন অনালোচিত রয়ে গেছেন নায়কোচিত অনেকেই...............
৭ ই নভেম্বরের ইতিহাসের প্রজেক্টরে যাদের কেবল ছায়াটাই পড়েছে , কায়া হয়নি স্পষ্ট............ 

৪ ই বেংগল রেজিমেন্ট কমান্ডিং অফিসার কর্ণেল আমিনুল হক বীরবিক্রম...........
৪ ই বেংগল রেজিমেন্ট অ্যাডজুটেন্ট মেজর মুনীর.........
২ ফিল্ড আর্টিলারীর সুবেদার মেজর আনিস প্রমুখ......... 

এ পর্যায়ে এসে ফেলে আসা প্রশ্নটি আবারো তুলতে হচ্ছেঃ
জিয়ার জীবন কি বিপন্ন ছিলো ?

ভেতরে জিয়াকে নিয়ে কুট চাল মার খাওয়ার ঘায়ে আহত আর ক্ষমতার খেলায় ক্রেইজী হয়ে ওঠা তাহেরের হাতেই জিয়ার জীবন বিপন্ন হয়েছিলো........
এ যেন অনেকটা খালেদের তপ্ত কড়াই থেকে তাহেরের জ্বলন্ত উনুনে পড়েছিলেন জিয়া.......
৭ থেকে ১১ নভেম্বরের সেই শংকুল সময়ে দফায় দফায় জিয়ার বিপন্ন জীবন রক্ষা করে ছিলেন কর্ণেল আমিন , মেজর মুনীর , সুবেদার মেজর আনিসরা তার চারপাশে ডিফেন্স পেরিমিটার তৈরী করে......

বিপদের শুরুটা হয় ৭ ই নভেম্বর দিবাগত রাত ২-৩০ থেকে যখন তাহের জিয়াকে রেডিও স্টেশনে নিতে জোরাজুরি করেন.........
এ সময় জিয়ার মনস্তত্ব দোলাচলে ছিলো , পুরো আধঘন্টা ধরে তাহের জিয়ার সাথে ২ ফিল্ড আর্টিলারী অফিসের বাথরুমের প্যাসেজে বসে উত্তেজিত স্বরে কথা বলছিলো এবং একপর্যায়ে 
তাহের সেখানে উপস্থিত কর্ণেল আমিনুল হক , মেজর মুনীর , সুবেদার মেজর আনিসদের সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে..........

সেসময় টিকে বর্ণনা করেছেন মেজর জেনারেল মঈনুল হোসেন বীরবীক্রমঃ
এসেই তিনি জিয়াকে রেডিও স্টেশনে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমরা জিয়াকে রেডিও স্টেশনে যেতে বারন করি । এ সময় লেঃ কর্ণেল আমিনুল হক এবং তাহেরের সঙ্গে ঝগড়া বেধে যায়। এক পর্যায়ে আমিনুল হক তাহেরকে বলে বসেন আপনারাতো (জাসদ) ভারতের বি টিম। ফলে তাহের রাগান্বিত হয়ে সেখান থেকে চলে যান.........৪ / পাতা ৯৩ / ইমেজ 

মুলত কর্ণেল আমিনুল হকই সেদিন রাতে জিয়াকে যাতে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সুরক্ষিত রাখা যায় সেটা নিয়ে সজাগ ছিলেন............
জিয়া-তাহের লম্বা আলোচনা চলার সময় কর্ণেল আমিন ব্রিগেডিয়ার মীর শওকতকে ডেকে নিয়ে যান আলাদা ভাবে এবং তাকে বলেন জিয়া যেন রেডিও স্টেশনে যেতে তাহেরের মিষ্টি কথার দুষ্ট অনুরোধ না গেলে............

মীর শওকত জিয়াকে তাহেরের সাথে আলাপ চলার মাঝেই ডেকে নিয়ে সাবধান করেন কর্ণেল আমিনের আশংকা মোতাবেক এবং সবার সামনেই বলেনঃ

জিয়া তুমি জাসদের সাথে যাবেনা [ইনুর ভাষ্য মত]............
জিয়া হেড কোয়াটারের বাইরে গেলে আমাদের জীবনের ঝুকি আছে........
তাহের এ সময় মীর শওকতকে বলেনঃ শাট আপ [ইনুর ভাষ্যমত].........
জবাবে মীর শওকত বলেনঃ ইউ গেট লস্ট...........
মীর শওকত আরো বলেনঃ আমিনুল হকের বুদ্ধিমত্তায় সেদিন জিয়া বেচে যান......... 
আমাদের সময় / নভেম্বর ৪ , ২০১০ / মীর শওকত এর সাক্ষাতকার / পিডিএফ

আমাদের সময়ের নভেম্বর ৬ , ২০১০ এর সাক্ষাতকারে ইনু একটি জ্বলজ্বলে সত্য চেপে গিয়েছেন........
ইনুর ভাষ্যমতে তাহের জিয়াকে বলেছিলেন ৭ নভেম্বর সকাল ১০ টায় সোহরাওয়ার্দি ময়দানে সৈনিক জনতার জনসভা হবে , সেখানে জিয়া ভাষন দেবেন , এখন কিছু বলার দরকার নাই ।

কিন্তু যে সত্যটি চেপে গিয়েছেন ইনু সেটি হলঃ 
জিয়া যখন রাজী হননি জনসভায় যেতে তখন তাহের নতুন চাল চালেন জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে নিয়ে আসার জন্য.........
সেটি হল রেডিও স্টেশনে ভাষন দেয়ার অজুহাতে জিয়াকে কব্জা করা কারন রেডিও স্টেশন তাহেরের বিপ্লবি গণবাহিনীর দখলে ছিল আগে থেকেই.........
 


কেবল মইনুল , রফিক , হামিদ আর মীর শওকতের বক্তব্যেই নয়.......
৭ ই নভেম্বর বেলা ২টায় তাহের তার প্রতিবেশী মিটিদের এলিফ্যান্ট রোড ৩৪৬ নং বাসা থেকে যেভাবে টেপ রেকর্ডারের স্পুলে ভাষন রেকর্ড করে দৌড়ঝাপ করছিলেন তাতে সেটা স্পষ্ট.......... তাহেরের প্রতিবেশি নাজমুল আহসানের বক্তব্য 

ঘটনাটির আরও বিস্তারিত জানিয়েছেন কর্ণেল এম এ হামিদঃ
তাহের জিয়াকে টু ফিল্ড থেকে বের করে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যেতে চাইছিলো। রেডিও স্টেশনে তার লোকজন উপস্থিত ছিলো.........উপস্থিত কর্ণেল আমিন , মুনির , সুবেদার মেজর আনিস তারা জিয়ার পাশে থেকে বলেন রেডিওতে ভাষন দিতে হলে রেকর্ডিং যন্ত্র এখানে আনা হবে। তাকে এখন বাইরে যেতে দেয়া যাবেনা । ভেস্তে যায় তাহেরের প্ল্যান......... 

সুবেদার মেজর আনিস কর্ণেল তাহেরকে বললেন , আপনি এখন দয়া করে আসুন। তাহের কটমট করে তার দিকে তাকালো । বলল , আমাকে চেনেন ? আনিস বললো জ্বি স্যার আপনাকে চিনি , তবে আপনি এখন আমার সাথে আসুন। 

এভাবেই ব্যর্থ হয় তাহেরের ২য় দফা জিয়াকে ইনুর ভাষায় নিয়ন্ত্রনে নেয়ার চেষ্টা যেটি ছিলো আসলে জিয়াকে ২য় বার বন্দী করার কুটিল পরিকল্পনা ।

ভাবতেই অবাক লাগে ২০১০ সমসাময়িক গণমাধ্যম তাহেরকে কিভাবে মাহাত্ব্য দিয়েছে !
তাহের টু ফিল্ডে জনপ্রিয় জিয়াকে নিজস্বার্থে বলছিলেন “ আপনি সেনাপতি , আসুন ,জাতি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে “ , আর ইনুকে এলিফ্যান্ট রোডে বলছিলেন জিয়া খালেদ এরা কেউটে সাপ ! 

সুস্পষ্টভাবে মুখে মধু আর মনে বিষ...... 
অথচ আয়নায় তাকালে তাহের নিজের ভেতরেই একটা জ্বলজ্ব্যান্ত মোনাফেক কেউটে দেখতে পেতো............

যাইহোক ২ ফিল্ডে বসেই জিয়ার ভাষন রেকর্ড করা হলো । আর সেখানেই তাহেরের খেলার ৩য় দফা ' হান্ট জিয়া মিশন ' শুরু হয় যেটিকে কর্ণেল হামিদ বলেছেনঃ 

সুবেদার মেজর আনিস বললো আমাদের উপস্থিত সবাইকে ছেড়ে তাহেরের সাথে জিয়া সাহেবের এত লম্বা গরম আলোচনা দেখে আমার নিজেরই মাথা গুলিয়ে যায়...............সাধারন সৈনিকদের ধারনা ছিল জিয়াকে মুক্ত করার পরই সেপাই বিদ্রোহ শেষ হয়ে যাবে........... 
৫ / পাতা ১০৫ – ১০৬/ পিডিএফ

৭ই নভেম্বর সকাল বেলা থেকে শুরু করছি............
ইতোমধ্যে রেডিওতে প্রচারিত হয় জিয়ার জাতি উদ্দীপক ভাষন............
নিউইয়র্ক টাইমস / নভেম্বর ৭ , ১৯৭৫/ উইলিয়াম বর্ডারের প্রতিবেদন /ইমেজ লিংক ১ / ইমেজ লিংক ২
সকাল ৮ টার দিকে তাহের আসেন টু ফিল্ড আর্টিলারীতে..........
৩ বাহিনী চিফ , জেনারেল ওসমানি, মেঃ জেঃ খলিলুর রহমান এবং তাহের সহ সবাই মিটিং এ বসেন কে হবেন প্রেসিডেন্ট , কে হবেন সি এম এল এ তা ঠিক করতে............
ওসমানি চেয়েছিলেন খোন্দকার মোশতাক কে প্রেসিডেন্ট রাখতে........
জিয়া চেয়েছিলেন নিজে সি এম এল এ হতে.........
কিন্তু মেঃ জেঃ খলিল এবং তাহেরের আপত্তির কারনে দুটোর কোনটাই হয়নি.......
সিদ্ধান্ত হয় সায়েমই হবেন প্রেসিডেন্ট এবং সি এম এল এ , আর ৩ বাহিনী চিফ হবেন ডেপুটি সি এম এল এ.......
৮ই নভেম্বর , ১৯৭৫ / নিউইয়র্ক টাইমস / ইমেজ লিংক

এতদুর পর্যন্ত তাহের শান্ত রূপে ছিলেন.........
কিন্তু সেই মিটিং এ তাহেরের ১২ দফা কারো সমর্থন পেলোনা.........
তারই রেশ ধরে আসল রূপে দেখা দিলেন তাহের ৭ই নভেম্বর বিকাল থেকে............
সেদিন বিকাল ৪ টায় তাহেরের সাথে টু ফিল্ডে দেখাহয় কর্নেল হামিদের............
তাহেরের গম্ভীর চেহারা দেখে হামিদ জানতে চান কি হয়েছে , জবাবে তাহের জানান জিয়ার কথা না রাখায় অসন্তোষ............

এসময় হামিদ কর্নেল আমিনের কাছ থেকে জানতে পারেন কাল রাতে যেসব সেনাদের ইউনিফর্ম গায়ে চাপানো , কিন্তু হাবেভাবে সেনা নয় লোকজনকে হামিদ দেখেছেন এরা স্রেফ তাহেরের গণবাহিনীর বিপ্লবি..................
অশনি টের পেয়ে হামিদ আমিনুল হককে বলেন ৪ই বেঙ্গল কে দিয়ে জিয়ার চারপাশে ডিফেন্স পেরিমিটার তৈরি করতে............
তারই প্রমান পাওয়া যায় ৭ ই নভেম্বর সন্ধায় যখন জিয়া রেডিও স্টেশনে যান ৪ই বেংগলের সেনা পরিবেষ্টিত হয়ে........... 
সেখানেই জিয়াকে তাহেরের লোকজন চেপে ধরে ১২ দফার জন্য............
জিয়া ঠেলায় পড়ে দাবিনামা স্বাক্ষরও করেন , কিন্তু রেডিও ভাষনে জিয়া ১২ দফা কিছু বলেননি............ 

তখন থেকেই ৭ ই নভেম্বরের সিপাহি জনতার বিপ্লব খুনের রক্তে কলুষিত হয় তাহেরের প্ররোচনায়............

তাহের বন্ধুত্বের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে জিয়াকে ছোবল দিতে ফণা তোলেন.........
৭ ই নভেম্বর সকালে ক্যান্টনমেন্টে যে পরিবেশ বিদ্যমান ছিল বিকালে তা সম্পুর্ন ভিন্ন আকার ধারন করলো । অফিসাররা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লো । তারা ধীরেধীরে সরে পড়তে লাগল । মনে হল যে কোন মুহুর্তে তাহেরের জিয়া উতখাত প্ল্যান শুরু হয়ে যেতে পারে............কর্নেল হামিদ , ৫ / পাতা ১১৫ 

সন্ধ্যা থেকে অফিসাররা রিকশা করে, গাড়িতে করে যার যার পরিবারকে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছিলো............
বিডিআর বিদ্রোহের মতই অবিকল একই রক্তহিম করা মৃত্যু আতঙ্কের ৩৮ ঘণ্টা কাটিয়েছেন নিরপরাধ সেনা অফিসাররা............
সন্ধ্যার মধ্যেই COD ভেঙ্গে পুরো ক্যান্টনমেন্ট অস্ত্রে অস্ত্রে সয়লাব , তবে সবার হাতে সে অস্ত্র পৌঁছায়নি............
অফিসাররা নিরস্ত্র , তাহেরের খ্যাপাটে বিপ্লবিরা সশস্ত্র...............কর্নেল হামিদ নিজেই খুনের নেশায় পাগল হওয়া সেপাইদের বন্দুকের মুখে পড়েছিলেন, বাঁচিয়েছিল তার ব্যাটম্যান সমুজ আলি আর আরো ৪ জন অনুগত সেপাই...............
সেরাতে বেঘোরে প্রান হারালেন ডেন্টাল সার্জন মেজর করিম, মিসেস মুজিব, মিসেস ওসমান [সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরীর স্ত্রী] , মেজর আজিম.........

জিয়াউর রহমান তখন অসীম সাহসের সাথে নিরস্ত্র অবস্থায় সশস্ত্র সৈনিকদের প্রতিশ্রুতি দেন তাদের ১২ দফার ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেয়ার.........
অনেক সৈনিক তখন অস্ত্র জমা দেয়ার ওয়াদা করে যারা তাহেরের বিপ্লবি সৈনিক সংস্থার সাথে জড়িত ছিলোনা
সেটির একটি ধারনা পাওয়া যায় ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াতের কাছেঃ
৩ /পাতা ১১৪ / ইমেজ.........
৩ /পাতা ১১৫ / ইমেজ.........

কর্নেল হামিদের কাছেও একই বিবরণ পাওয়া যায়ঃ
আমি জিয়াকে খুজছিলাম। সে তখন পাগলের মত এখানে ওখানে ঘুরছিল।.........জিয়া বলল আগে তোমরা অস্ত্র জমা দাও , আমি সব দাবি মানবো......তাহেরের ইঙ্গিতে বিপ্লবিরা একেবারেই উল্টে গেছে । বিপ্লবিরা জিয়াকেও হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে ।

সেসময় জিয়ার তুলনা বিরল সাহস আর ঘটনার সত্যতা যাচাই করুন ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত এবং কর্নেল হামিদের ভেতরেঃ
৫/ পাতা ১২২ : 

ফুল রেসোলিউশন ইমেজ.........
তাহেরের বাধ্য আর জিয়ার অবাধ্য বিপ্লবি সৈনিকরা সেদিন সন্ধ্যায় অর্ডিন্যান্স মেসে বিনাকারনে ৩ জন তরুণ অফিসারকে মেরে ফেলে.........

এদের মধ্যে ছিল মেজর মহিউদ্দিন যে টুঙ্গি পাড়ায় বংগবন্ধুর লাশ দাফন করেছিলো.........
অন্য ২ জন হলেন ক্যাপ্টেন খালেক এবং লেঃ সিকান্দার............
হকি খেলতে এসে ক্যাপ্টেন আনোয়ার এবং লেফটেন্যান্ট মুস্তাফিজ সেপাইদের গুলিতে মারা যান স্টেডিয়ামের পাশে......
অর্ডিন্যান্স স্টেটে ১০ জন নিরপরাধ অফিসারকে লাইন আপ করা হয় মারার জন্য.........
১ জনকে মারার পর বাকিরা অনুনয় বিনয় করলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়............
লেডি ডক্টর হামিদাকে বিনাকারনে মেরে ফেলা হয়.........
মেডিকেল কোরের ব্রিগেডিয়ার খুরশিদকে চোখ বেঁধে মাত্র গুলি করবে এমন সময় উর্ধশ্বাসে দৌড়ে পালান তিনি......
কর্নেল হামিদের নিচতলার বাসিন্দা সিগনাল রেজিমেন্টের কর্নেল শামসের বাসায় অকথ্য গালাগালি করতে করতে দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে তাহেরের আদেশপ্রাপ্ত বিপ্লবিরা , কর্নেল শামস পরিবার সহ পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান......
বিপ্লবিরা ক্ষোভে খালি বাসাতেই গুলি করে ঝাঁঝরা করে ফেলে.....
মেজর নাসির আর লেঃ কঃ গাফফার ৪ই বেংগলে এসে লুকান.......
ল্যান্সারের খুনে সেপাইদের হাত থেকে তাদের বাচান কর্নেল আমিন আর মেজর মুনির......

১২ জন অফিসার মারা পড়লেন ঐ রাতে............বিপ্লবি সৈনিকরা সত্যি সত্যিই অফিসারদের রক্ত নেশায় পাগল হয়ে উঠলো............ভাগ্যিস অধিকাংশ অফিসার ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে সন্ধ্যার আগেই শহরে তাদের নাগালের বাইরে চলে যান............ ভোর হতে না হতেই সারা ক্যান্টনমেন্টে অফিসারদের ভেতরে গভীর আতঙ্কের ছায়া............যে যেদিকে পারছে শহরে ছুটে পালাচ্ছে আশ্রয়ের খোঁজে.........ঐদিন সকাল ৮ টায় সময়ও কয়েকজন অফিসারের উপর গুলিবর্ষন করা হল............অরাজকতার মধ্যে কে কাকে ধরছে, মারছে, লাঞ্চিত করছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা...............মহান সেপাই বিপ্লব ৮ নভেম্বর সম্পুর্ন ভিন্ন আকার ধারন করল.........অফিসার দেখলেই সেপাইরা তাড়া করছে.........অফিসে আমার সুবেদার সাহেব বল্লেনঃ স্যার , আপনাকে আমরা সবাই শ্রদ্ধা করি , কিন্তু দয়া করে অফিসের বাইরে গেলে কাঁধে আপনার কর্নেলের র‍্যাংক নামিয়ে যাবেন । চারদিকে মহাবিপদ । সব অফিসাররা তাই করছে......... 
কর্নেল হামিদের বর্ননা থেকে ৫ / পাতা ১২১ ......... 

প্রাসঙ্গিক ভাবে জানাতে হয় সেদিন জিয়ার শ্যালক সাঈদ ইস্কান্দারও ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালান......
হামিদের স্টাফ অফিসার মেজর আলাউদ্দিনকে তারই অধিনস্থ হাবিলদার সিদ্দিক বোরখা পরিয়ে ক্যান্টনমেন্ট পার করে দেয়.........
হামিদ নিজেও একজন অফিসারের সাথে রাস্তায় কথা বলেন যে বোরখা পরে পালিয়ে যাচ্ছিল......
বনানিতে আরেকজন সিনিয়র গোয়েন্দা অফিসার শাড়ি পরে পালানোর সময় সেপাইদের হাতে ধরা পরে যাকে নিয়ে ঐ সেপাইদের হাসি থামছিলোনা....... 

সে রূদ্ধশ্বাস সময়টুকুতে জিয়া কি করেছিলো , তাহের কি করতে চেয়েছিল আর প্রানভীত নিরপরাধ অফিসারদের নাইট মেয়ার তুল্য অভিজ্ঞতার পুরোটা উঠে আসে হামিদের বইয়ের পাতা ১১৩-১২৫ এ......পিডিএফ 

ইনু আমাদের সময়ে তার সাক্ষাতকারে বলেছেন বিপ্লবি সেনাদের হাতে অফিসারদের মৃত্যু বিচ্ছিন্ন ঘটনা.........
কর্ণেল হামিদের কাছ থেকে এরই মধ্যে জেনেছেন জিয়া আর অফিসারদের বিরুদ্ধে তাহেরের জিঘাংসা আর বিদ্বেষপূর্ণ লিফলেট ছড়ানোর খবর.... 

এ বিষয়ে মেজর রফিক কি বলেছেন দেখুন:
৯ই নভেম্বর জিয়া গ্যারিসন সিনেমা হলে সমবেত সৈনিকদের উদ্দেশ্যে এক জ্বালাময়ী বক্তৃতায় বলেন যে , কোন অফিসারকে হত্যা করার আগে তাকে প্রথমে হত্যা করতে হবে...... 





পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন জিয়া জাসদের রব জলিলদের কে ৮ তারিখে মুক্তি দিয়েছিল , অথচ এরাই সৈনিকদের অস্ত্র জমা দিতে নিষেধ করে....
সুতরাং ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে ৮ তারিখ রাত পর্যন্ত অফিসার খুনের প্ররোচনা কে দিয়েছিল আর সেসব খুনের দায়ভার কার উপর বর্তায় সেটা নিজ দায়িত্বে বুঝে নিন.........
যদি তাও বুঝতে অসুবিধা হয় তো ২৫ ফেব্রুয়ারি / ২০০৯ পিলখানা হত্যাকান্ডের স্মৃতিচারন করুন......

তাহের , ইনু , রব , জলিলরা স্রেফ ডিএডি তৌহিদ , সুবেদার গোফরান , কোয়াটার গার্ড শাহজাহান মাতব্বরদের দর্পন বিম্ব / মিরর ইমেজ......
তাহলে কি ভবিষ্যতের দিনগুলোতে তৌহিদও বিপ্লবির মর্তবা পাবে কোন এক মতলববাজ মিডিয়ায় ?
আগস্ট ২৭ , ২০১০ / ইত্তেফাকে লুতফা তাহের বলেছেনঃ জিয়া যে এত নিষ্ঠুর ছিল তা জানতাম না............
কিন্তু লুতফা তাহের , জিয়াও জানতো না যে ক্রাচে ভর দিয়ে একজন মানুষ এত বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে............

সেদিন রাতের সেই রক্তারক্তি বিভীষিকার স্মৃতি যেসব সেনা অফিসার আর তাদের পরিবারের মাঝে বেঁচে আছে তারা কোনদিনও আপনার স্বামির সদ্যলদ্ধ মাহাত্ন্যকে পরোয়া করবেনা.........

বিপ্লবের মোড়ক প্যাঁচানো ক্ষমতার আফিমে নেশাগ্রস্ত হওয়া তাহেরের প্রতি সেসব পরিবার যতটুকু মাত্রার শাস্তি চেয়েছিল জিয়া কেবল তার আজ্ঞাবাহকই ছিল..................

প্রমান চান ?
তাহলে দেখুন সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী কি বলেছেন ৭ নভেম্বর / ২০১০ তারিখে প্রথম আলোতেঃ
ওইদিন জওয়ানদের বলা হয়েছিলো সব অফিসারদের হত্যা করো । থাকবে শুধু জিয়া আর তাহের । একারনে জওয়ানেরা অফিসারদের হত্যা শুরু করে । অনেক অফিসার সেদিন বোরখা পরে পালিয়ে গিয়েছিলেন............ 
৭ নভেম্বর , ২০১০ / প্রথম আলো / ইমেজ লিংক
অবিকল কর্নেল হামিদের প্রতিধ্বনি , কারন এটাই যে তাহের ভক্তদের জন্য শ্রুতিবিষ কিন্তু অমোচনীয় সত্য 

ইনু নিজেই নভেম্বর ৭ / ২০১০ আমাদের সময়ে দেয়া সাক্ষাতকারে স্বীকার করেছেন যে জিয়া একা তাহের এবং তার সহযোগীদের বিচার চূড়ান্ত করেননিঃ

৭৬ সালের জুলাইয়ে সামরিক আদালতে ট্রায়াল শুরু হলে জিয়া একদিন মিলিটারি ফরমেশন কমান্ডারদের বৈঠক ডাকলেন । বৈঠকে মতামত এলো জলিল , রব , ইউসুফ , জিয়াউদ্দিন , ইনু ও তাহের বিপদজনক লোক । এদের ফাঁসিতে ঝুলানো যায়......এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত এলো তাহেরের ফাঁসি , জলিলের যাবজ্জীবন , বাকিদের ১২ বছর করে কারাদণ্ড.......

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের মতে এই মিটিং এ মোট ৪৯ জন সেনা অফিসার অংশ গ্রহণ করেন এবং সে সময়কার অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মঈনুল হোসেন বীরবিক্রম জানান তিনিই জিয়াকে ৭/৮ নভেম্বরের খুনোখুনির বিচারের ব্যবস্থা নিতে বলেন.........৪ / পাতা ৯৭ / ইমেজ

মুলত সামরিক আদালতের বিচারে নিজেকে দোষী বলে স্বীকার করলে অনুকম্পা বা লঘু শাস্তির একটি সুযোগ থাকে যেটি হালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের অনেক অভিযুক্তও পাচ্ছেন.........
সে সুযোগ তাহেরের ও ছিলো..........
কিন্তু তাহের সে সুযোগ নেবেনা বলে একরোখা আচরণ করে যেটি মীর শওকত জানিয়েছেন আমাদের সময়কে নভেম্বর ৫ / ২০১০ তারিখেঃ

জিয়া বলেনঃ তাহের তো মার্সি পিটিশন দেয়নি......... 
বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্বয়ং লুৎফা তাহের : দৈনিক ইত্তেফাক / আগস্ট ২৭ , ২০১০/ পিডিএফ
এভাবেই ৭ / ৮ ই নভেম্বরের “আলটেরিয়র” গুলো ধামাচাপা পড়ে গেছে বাম মিডিয়ায় প্রচার ভেল্কিতে...........
কিন্তু সত্য তার প্রমান রেখে যায়.........
জীবিত তাহের কেবল জিয়ার মৃত্যুই নয় , বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মৃত্যুও ঘটাতো........ 
এমনটাই বলেছেন ব্রি: সাখাওয়াত , মে: জে: আমিনরা..........

যাইহোক ব্লগটি শেষ করার আগে ২ টি প্রশ্নের আপেক্ষিকতায় পাঠকদেরকে রেখে যেতে চাই.........

[১] কর্নেল তাহেরের ১২ দফার বেশ কয়েকটি জিয়াউর রহমান মেনে নিয়েছিলেন। ব্যাটম্যান প্রথা বাতিল করেছিলেন , সৈনিকদের বেতন ভাতা-সুবিধাদি বাড়িয়েছিলেন , জাসদের রাজবন্দীদেরকে ৮ ই নভেম্বর মুক্তি দিয়েছিলেন.........
কিন্তু যেটি মেনে নেননি তাহেরের খ্যাপাটে বিপ্লবিদের বন্দুকের মুখেও সেটি হলঃ

বিপ্লবি সৈনিক সংস্থা সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারনি সংস্থা হিসেবে কাজ করবে , মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সশস্ত্র বাহিনী সংক্রান্ত যেকোন সিদ্ধান্ত এই সংস্থার সাথে আলোচনা করে গ্রহণ করবেন...............
কর্নেল তাহেরের ১২ দফা , ২ / পাতা ৯৫ – ৯৬ / পিডিএফ
প্রশ্নটা হলঃ 
জিয়ার জায়গায় যদি আপনি থাকতেন আপনি কি এই দাবি মেনে নিতেন ? 

[২] কর্নেল তাহের নভেম্বর ২৪ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের হাউস টিউটরের বাসা থেকে গ্রেফতার হবার পর তাহেরের ২ ভাই নভেম্বর ২৬ তারিখে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেনকে অপহরণের চেষ্টা চালায় এবং দুতাবাসের নিরাপত্তা রক্ষিদের গুলিতে ৪ জন মারা যায় 

আমার প্রশ্নটা হলঃ
কেন বেলাল আর বাহার সমর সেনকে ই অপহরণ করতে চাইলো ?
অনেকেই হয়ত ধরে ফেলেছেন আমি কি বলতে চাইছি......
যারা ধরতে পারেননি তাদের জন্য সম্পূরক প্রশ্ন রাখছিঃ
তাহেরের মুক্তির জন্য পণ হিসেবে ভারত ভিন্ন অন্য কোন দেশের রাষ্ট্রদুতকে কে বাহার – বেলাল টার্গেট করলো না কেন ? 

উত্তরটা খালি চোখেই বোঝা যায় – তাহেরের ভাইরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকেই মুলত ভাই এর মুক্তির জন্য পন হিসেবে নিয়েছিল.........

সমর সেনকে যদি অপহরণ করা হতো , এবং তার সুত্র ধরে যদি কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড বাংলাদেশে অভিযান চালাত - পরপর ২ টি ক্যুতে বেসামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনি সে ধকল নিতে পারতোনা............
আর এই হুজ্জত হাঙ্গামার ডামাডোলে গণবাহিনীর স্বশস্ত্র বিপ্লবিদের দ্বারা জেলমুক্তি ঘটত তাহেরের...........

তেমনটাই টের পাওয়া যায় মার্কিন বিশ্বসংবাদ সাময়িকী ফ্যাক্টস অন ফাইলের ডিসেম্বর ৬ / ১৯৭৫ সংখ্যায় /ইমেজ 
তারও আগেরটা বুঝে নিতে পারেন ফ্যাক্টস অন ফাইলের নভেম্বর ২৯ / ১৯৭৫ সংখ্যায় / ইমেজ 

তাহেরের বেপরোয়া নেতৃত্বে ঢাকায় ১২ জন সহ সারাদেশে ৪০ জন সেনা অফিসার নিহত হওয়াই বিপদের শেষ নয় , ওয়াশিংটন পোস্ট নভেম্বর ১৫ / ১৯৭৫ এর খবর অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশ সেনাবাহিনির এ ত্রাহি সময়ে বর্ডার আউটপোস্ট গুলোতে আক্রমন চালাচ্ছিলো যেটি ভারত ১৭ নভেম্বর অস্বীকার করে....

তাহলে পাঠকরাই বলুন........
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে যারা ব্ল্যাকমেইল করে নিজেদের নেতা মুক্তির স্বার্থে তাদের মুখে কি 'স্বদেশ দীর্ঘজীবি হোক' স্লোগান মানায়? 



ব্লগার দাসত্ব এর ব্লগ থেকে কপি (লিঙ্ক)

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম