ব্যক্তি জীবনে যেমন মানুষের উত্থান-পতন আসে, সমাজ জীবনেও তেমনি উত্থান-পতন দেখা দেয়। পার্থক্য এই যে, একটির শুভ কিংবা অশুভ পরিণতি থাকে সীমিত অপরটির পরিণতি অসংখ্য মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। পৃথিবীর কোন না কোন দেশ বা সমাজে সব সময়ই উত্থান-পতন চলছে। কোন জাতি দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আবার কোন জাতিকে নিজের স্বকিয়তা হারিয়ে অবনতির অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হতেও দেখা যায়। এ অবনতি ও অগ্রগতির পেছনে কতকগুলো কার্যকরণ থাকে। সে সকল কার্যকরণ সম্পর্কে অবগতি একান্ত জরুরী। কেননা, যে জাতি অতীতের ব্যর্থতা-সফলতার ইতিহাসকে সামনে না রেখে, সে কিছুতেই নিজের চলার পথে সার্বিক দিশা পায় না। তবে এ সকল কার্যকরণ সময় মতো যথারীতি চিহ্নিত করা ও জাতির সামনে উপস্থাপিত হৃদয়-কন্দরে এর লব্ধ জ্ঞানের শুভ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে জাতির পুনর্জাগরণের ভিত্তি রচনা করেছেন, তারা জাতির দিকপাল হয়ে ইতিহাসে চিরদিন অমর হয়েই কেবল থাকেন না তাঁদের থেকে অনাগত দিনের মানুষও সকল সময় অনুপ্রেরণা পায়।
এ উপমহাদেশে মুসলিম আধিপত্যের অবসানের পর মুসলমানদের মধ্যে নৈরাশ্য, লক্ষ্যহীনতা ও জাতীয় স্থবিরতা দেখা দেয়। সে সময় মুসলমানদের জাতীয় পুনর্জাগরণের পটভূমি রচনা করেন শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী। উপমহাদেশে মুসলিম পুনর্জাগরণে অন্যান্যেরও দান রয়েছে। কিন্তু স্থায়িত্ব, ব্যাপকতা ও গভীরতার দিক থেকে তাঁর অবদানই শ্রেষ্ঠ। তবে এ মহাপুরুষের অবদান সম্পর্কে বাংলা ভাষায় তাঁর জীবনী, শিক্ষা ও আদর্শের যেরূপ ব্যাপক আলোচনা, প্রচার ও প্রসার ঘটার দরকার ছিল তা হয়নি। মুষ্টিমেয় অনুসন্ধিৎসু শিক্ষিত ব্যক্তি তাঁর সম্পর্কে কিছুটা জানলেও সাধারণভাবে তাঁর জীবিনী ও দর্শনে এখানে আলোচিত হয়নি। আবার অনেক আধুনিক শিক্ষিত লেখককে তাঁর কার্যাবলী সম্পর্কে সম্যক অবগতির অভাবে তাঁর সম্পর্কে ভ্রান্ত তথ্য পরিবেশন করতেও দেখা যায়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ডের একটি ইতিহাস পুস্তকের কতিপয় তত্ত্ব ও তথ্যগত ভ্রান্তি আমার লেখা আযাদী আন্দোলনে আলেমদের সংগ্রামী ভূমিকা। (১ম সংস্করণ) পুস্তকের ৮-১১ পৃষ্ঠায় সপ্রমাণ উল্লেখ করেছি।
বহু পরিশ্রমের পর বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলিম লেখক বহু গ্রন্থ প্রণেতা সাহিত্যিক সাংবাদিক মরহুম মাওলানা নূর মুহাম্মাদ আজমী ও মাওলানা আবদুর রহীম সাহেব তাঁর বিশ্ববিক্ষাত হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগার অনুবাদ করেছেন শুনেছি। স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান তাঁদের দ্বারা এর অনুবাদ করালেও পরবর্তী অপর কোন পরিচালকের অবহেলায় বা অন্য কারণে তা আজও প্রকাশিত হয়নি। অবশ্য এদেশের আলিম সমাজের মধ্যে শাহ ওয়ালিউল্লাহর নাম ও তাঁর প্রতি সম্মানের কোন অভাব নেই। একজন আধ্যাত্মিক আলিম ও ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী ইমাম হিসেবে আলিম সমাজে তাঁর যথেষ্ট মর্যাদা ও খ্যাতি আছে। উপমহাদেশে হাদীস শিক্ষার প্রসার ও ব্যাপকতা দানে তাঁর ও তাঁর পরিবারের লোকজনদের প্রশংসা বহু শোনা যায়। কিন্তু তিনি যে একজন শ্রেষ্ঠ ইসলামী দার্শনিক চিন্তানায়ক ও উপমহাদেশে হুকুমতে ইলাহীয়া প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের বীজ বপনকারী আধুনিক সমাজের কাছে ইসলামী অনুশাসনসমূহের ব্যাখ্যাদানে তাঁর যুক্তিদর্শন বিশেষ উপযোগী তাঁর জীবনের সেই দিকটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়নি।
বইটিতে এ মহাপুরুষের জীবনী ও শিক্ষা আদর্শ সম্পর্কে আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে এ উপমহাদেশ শেষ মোগল শাসকদের আমলে মুসলিম আধিপত্যের অবসান ঘটার পর ইংরেজ প্রভুত্ব ও বিভিন্ন কুসংস্কার, ভ্রান্ত চিন্তাধারা ও মুসলিম সমাজের শোচনীয় অবস্থার মধ্যেও কি করে তাঁর চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করে ইসলামী পুনর্জাগরণের সূত্রপাত হয় সেদিকটিই বিশেষত আলোচিত হয়েছে। এদেশে ইসলামী জাতীয়তাবোধ ও ইসলামী কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে অক্ষুন্ন রাখার ব্যাপারে বইটি পাঠকমহলে অনুপ্রেরণার কাজ করুক এটাই কামনা রইল।
- সপ্তম অধ্যায় : ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের পটভূমি
- ষষ্ঠ অধ্যায় : ওয়ালিউল্লাহ আন্দোলন
- পঞ্চম অধ্যায় : গ্রন্থাবলী
- চতুর্থ অধ্যায় : বাংলাদেশে শাহ ওয়ালিউল্লাহর চিন্তাধারার প্রভাব
- তৃতীয় অধ্যায় : ইংরেজ বিরোধী বিপ্লবী ফতওয়া
- দ্বিতীয় অধ্যায় : ইংরেজ বিরোধী বিপ্লবী ফতওয়া
- প্রথম অধ্যায় : উপমহাদেশের অবস্থা
0 comments: