শ্রমিক-মালিক মানব সমাজের এক সুপ্রাচীন সমস্যা। যুগ যুগ ধরিয়া এই সমস্যাটি মানব সমাজকে নানাভাবে আলোড়িত করিয়াছে, অনাকাক্ষিতভাবে মেহনতী মানুষের রক্ত ঝরাইয়াছে। এমনকি, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কে ভারসাম্য রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) নামে একটি বিশ্বসংস্থা পর্যন্ত গঠন করা হইয়াছে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও শ্রমিক-মালিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত হইয়াছে, একথা কোনক্রমেই দাবি করা চলেনা। বরং এখনও দেশে দেশে শ্রমিক-মালিক সমস্যা একটি প্রকট সমস্যা রূপে বিরাজ করিতেছে, শ্রমজীবি মানুষের রক্তে অহরহ রাজপথ রঞ্জিত হইতেছে। বলাবাহুল্য যে, বাংলাদেশেও কম-বেশি একই পরিস্থিতি বিরাজ করিতেছে।
মূলত শ্রমিক-মালিক সমস্যাটিকে অধূনা বিবেচনা করা হইতেছে নেহায়েত একটি শ্রেণীগত সমস্যা হিসাবে, এখানে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে মোটেই গুরুত্ব দেওয়া হইতেছে না। ফলে শ্রমিক-মালিক উভয় পক্ষই বিষয়টিকে বিবেচনা করিতেছে নেহায়েত শ্রেণীস্বার্থের দৃষ্টিতে। কিন্তু আল্লাহর মনোনীত জীবন-বিধান ইসলাম সমগ্র বিষয়টিকে বিবেচনা করিয়াছে মানবিক ও ন্যায়নুগ দৃষ্টিতে। শ্রমিক ও মালিক কোন পক্ষকেই সে বড় কিংবা ছোট করিয়া দেখে নাই; বরং উভয় পক্ষের স্বার্থকেই সে রক্ষা করিয়াছে পরিপূর্ণ ন্যায়পরতার দৃষ্টিতে। প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক হযরত মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) এই বিষয়টিকেই অত্যন্ত চমৎকার রূপে তুলিয়া ধরিয়াছেন ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার নামক বর্তমান পুস্তিকায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই পুস্তিকাটি রচিত হইয়াছে দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে। তৎকালীন দুনিয়ার সামাজিক রাজনৈতিক ও অথনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে। তারপর দুনিয়ার উপর দিয়া অনেক পানি গড়াইয়া গিয়াছে; কমিউনিস্ট বিশ্বের মানচিত্রে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। উপমহাদেশে পাকিস্তান ভাঙিয়া বাংলাদেশ হইয়াছে। ইহার ফলে দুনিয়ার শ্রমিক আন্দোলনেও কিছু কিছু পরিবর্তনের ছাপ পড়িয়াচে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও বর্তমান শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোন পরিবর্তন সূচিত হয় নাই। এই কারণেই বর্তমান পুস্তিকার সংশ্লিষ্ট অংশে আমরা কোন মৌলিক পরিবর্তন সাধনের প্রয়োজন বোধ করি নাই।
পুস্তিকার নিবন্ধসমূহ প্রথম প্রকাশিত হইয়াছিল পঞ্চাশের দশকের প্রথম ভাগে তৎকালীন দৈনিক আজাদসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এবং প্রায় একই সময়ে তাহা পুস্তকাকারেও আত্মপ্রকাশ করে। বিগত বৎসরগুলিতে ইহার অনেকগুলি সংস্করণ প্রকাশিত হয় এবং পাঠক সমাজেও তাহা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। পুস্তকটির বর্তমান সংস্করণও পাঠকদের নিকট ব্যাপকভাবে সমাদৃত হইবে বলিয়া আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
মহান আল্লাহ পুস্তকটির লেখককে যথোচিত প্রতিফল দান করুন, ইহাই আমাদের সানুনয় প্রার্থনা
মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান
চেয়ারম্যান
মওলানা আবদুর রহীম ফাউন্ডেশন
ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি, ২০০৩
গ্রন্থকারের কথা
শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক সমস্যা মানব সমাজের এক প্রাচীনতম ও জটিলতার সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানের জন্য মানুষের চেষ্টার অন্ত নাই-এই উদ্দেশ্যে রচিত মতবাদেরও কোন অভাব নেই। কিন্তু কার্যত এই সমস্যার সুষ্ঠ সমাধানের জন্য কোন নির্ভূল নীতি আজ পর্যন্ত নির্ধারণ করা সম্ভব হয় নাই। মানুষ যত চেষ্টাই করিতেছে, সমস্যা ততই তীব্রতর ও জটিল হইয়া উঠিতেছে।ইসলাম মানুষের জন্য আল্লাহর দেওয়া এক পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইহাতে মানুষের সকল প্রকার সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের মূলনীতি বর্তমান রহিয়াছে। দুনিয়ার সকল মানুষের-বিশেষত মুসলমানদের বাস্তব জীবনে তা অনুসরণ করা একান্তই কর্তব্য।
এই ভূখন্ডে শ্রমিক-মালিক দীর্ঘকাল হইতেই বিরাজ করিতেছে এবং ক্রমশই উহা জটিলতার হইয়া উঠিয়াছে। ইহার সুস্থু ও সমাঞ্জস্যপূর্ণ সমাধান একমাত্র ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী সম্ভব। এই সম্পর্কে ইসলামের সমাধান জনগণের সম্মুখে পেশ করার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা বোধ হওয়ায় এই পুস্তিকা প্রকাশ করা হইল। বিষয়টি বিশদভাবে আলোচনা সাপেক্ষ, তাহাতে সন্দেহ নাই। সে পথের দিকে ইঙ্গিত করাই এই পুস্তিকা লেখার উদ্দেশ্য।
শিক্ষিত সমাজ এই দিকে উৎসাহিত হইলে এবং দেশের মজুর-শ্রমিকগণ ইসলামের মূলনীতির ভিত্তিতে শ্রমিক সমস্যার সমাধানে যত্নবান হইলেই লেখকের শ্রম সার্থক হইবে।
------গ্রন্থাকার
- অধ্যায় ০১ : মালিকানা সমস্যা ও ইসলাম : মালিকানা সম্পর্কে দুইটি মত
- অধ্যায় ০২ : অস্বাভাবিক মালিকানা নীতির পরিণাম
- অধ্যায় ০৩ : সম্পত্তির জাতীয়করণ
- অধ্যায় ০৪ : মালিকানা স্বত্ব ও ইসলাম
- অধ্যায় ০৫ : পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক সমাজে মজুরদের অবস্থা
- অধ্যায় ০৬ : ইসলামে মজুরদের অধিকার
- অধ্যায় ০৭ : ইসলামী সমাজে মজুরদের মর্যাদা ও অধিকার
- অধ্যায় ০৮ : নবতর শ্রমিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও ভিত্তি
- অধ্যায় ০৯ : বাংলাদেশে শ্রমিক আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার (প্রথম পাতা)
0 comments: