কুরআন পাক মানব জাতির সঠিক হেদায়াতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে। তাই এর নাম কিতাবুল্লাহ বা আল্লাহর কিতাব। এ কিতাব শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠতম রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের
কাছে ওহী যোগে নাযিল করা হয়েছে। এ কিতাব শুদ্ধভাবে পড়ে শুনানো এবং এর সঠিক অর্থ বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্বও রাসূলের উপরই দেয়া হয়েছিল।
আল্লাহ তায়ালা এ কিতাব রচয়িতা এবং রাসূল (সাঃ)- এর ব্যাখ্যাদাতা। মানব জাতির পার্থিব শান্তি ও পরকালীন মুক্তি এ কিতাবের শিক্ষার উপরই নির্ভরশীল। তাই এ কিতাব সব মানুষের পক্ষেই পারা সম্ভব। অবশ্য সবাই এ থেকে উপদেশ গ্রহণ করার যোগ্য না-ও হতে পারে। আল্লাহ পাক কুরআন সম্পর্কে বলেছেন,
"এটা মানুষের জন্য এক বিবৃতি এবং মুত্তাকিদের জন্য হেদায়াত ও উপদেশ।"- আল ইমরানঃ ১৩৮
কুরআন থেকে হেদায়াত পাওয়ার জন্য কুরআনকে বুঝতে পারাই হলো পয়লা শর্ত। বুঝবার সাথে সাথে তাকওয়ার শর্তও থাকতে হবে। কুরআন যা মানতে বলে তা মানতে রাজী হওয়া এবং যা ছাড়তে বলে তা ছাড়তে প্রস্তুত থাকাই হলো তাকওয়া। কিন্তু যে কুরআন বুঝে না সে কি করে তাকওয়ার পথে চলবে? তাই সবাইকেই পয়লা কুরআন বুঝতে হবে।
অবশ্য কুরআন বুঝবার মান সবার এক হতে পারে না। যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী মান ভিন্ন ভিন্ন হবেই। আল্লাহ পাক কারো কাছে থেকেই তার যোগ্যতার অতিরিক্ত দাবী করেন না। কিন্তু দুনিয়ার জীবনে প্রত্যেককেই যে সব দায়িত্ব পালন করতে হয় তা কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী হতে হবে। যারা পড়তে জানে না তারা কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিতদের কাছ থেকে জেনে নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করবে।
কিন্তু যারা পার্থিব জীবনের সামান্য ৫০/৬০ বছরের মধ্যে ২০/৩০ বছর শুধু রুজি রোজগারের জন্যই বিভিন্ন শিক্ষায় খরচ করে, তারা যদি কুরআনকে ভালভাবে বুঝবার চেষ্টা না করে তাহলে আখিরাতে আল্লাহর কাছে কী কৈফিয়ৎ দেবে? দুনিয়াতে এত বিদ্যা শিখেও কুরআন সম্পর্কে জাহেল থাকা সত্যিই চরম লজ্জার বিষয়।
যারা কিছু লেখাপড়া জানে তাদের পক্ষে কুরআন বুঝা সম্ভব এবং একটু মনোযোগ দিলে এটা সহজও বটে। আরবী ভাষা যারা মোটামুটি বুঝে তারা কুরআন বুঝতে যে বেশি তৃপ্তি বোধ করে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু কুরআন বুঝবার জন্য আরবী জানা শর্ত নয়। অন্যকে কুরআন বুঝাতে হলে আরবী অবশ্যই জানতে হবে। কিন্তু আরবী না জানলেও কুরআনের বক্তব্য বুঝা সম্ভব।
যারা আরবী না জানা সত্ত্বেও কুরআন বুঝবার চেষ্টা করতে চান তাদের জন্য এ পুস্তিকায় 'সিনপসিস'(সংক্ষিপ্ত ইংগিত) আকারে প্রয়োজনীয় গাইড লাইন দেবার চেষ্টা করেছি। আরবী ভাষা জানা লোকদের জন্যও এ পুস্তিকাটি সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস। এ পুস্তিকার মূল চিন্তা ধারা এ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তানায়ক সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী (রঃ) "তাফহীমুল কুরআন" নামক বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীরের ভুমিকা থেকে নিয়েছি। তাছাড়া এ পুস্তিকায় আরও কিছু তথ্য আছে যা বিভিন্ন বই থেকে সংগ্রহ করেছি।
মগবাজারস্থ কাজী অফিস লেন মসজিদে 'কুরআন বুঝবার সহজ উপায়' সম্পর্কে ১৯৭৯ সালে একটানা কয়েকমাস সাপ্তাহিক আলোচনা চলে। ঐ বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের জন্য 'সিনপসিস' আকারে যে নোট দিয়েছিলাম তা ১৯৮০ সালে 'শতাব্দী প্রকাশনী ' পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করে এবং এর উপকারিতা প্রমাণ করে। সে পুস্তিকাটি মাত্র ১৪ পৃষ্ঠা ছিল।
১৯৮১ ও ৮২ সালে কুরআন স্টাডী সার্কেলের মাধ্যমে আল্লাহর কিতাবকে বুঝবার জন্য আমার সহকর্মী কিছু লোককে নিয়ে যেটুকু চেষ্টা করেছি তাতে আমার বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে যে যারা মোটামুটি কিছু লেখাপড়া জানেন তারা চেষ্টা করলে কুরআন বুঝতে পারবেন। তাই উপরোক্ত 'সিনপসিস' কে ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় অনেক কথা শামিল করে বর্ধিত আকারে নতুন নামে এ বইটি প্রকাশ করা হচ্চ্ছে।
পঞ্চম সংস্করণে 'কুরআনের' আন্দোলনমুখী তাফসীর, 'আন্দোলনের দৃষ্টিতে অধ্যয়ন' ও 'নবী কাহিনীর উদ্দেশ্য'- এ তিনটি নতুন পরিচ্ছেদ যোগ করা হয়েছে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে সত্যি কুরআন বুঝা সহজ। বুঝবার টেকনিক না জানলে সহজ বিষয়ও কঠিন মনে হয়। কিন্তু সঠিক কায়দা কানুন জানলে কঠিন কাজও সহজ হয়। আল্লাহ পাক এ পুস্তিকাটিকে কুরআন অধ্যয়নে আগ্রহীদের জন্য সহায়ক হিসাবে কবুল করুন- এ দোয়াই করছি।
অন্যান্য অধ্যায় :
- কুরআন বুঝা সহজ - ১ (গোটা কুরআনের পটভূমি)
- কুরআন বুঝা সহজ - ২ (রাসূল সাঃ-এর আন্দোলনের বিভিন্ন যুগ ও স্তর)
- কুরআন বুঝা সহজ - ৩ (মাক্কী-মাদানী সুরা ও পরিসংখ্যান)
- কুরআন বুঝা সহজ - ৪ (কুরআনের আলোচ্য বিষয় ও কৌশল)
- কুরআন বুঝা সহজ - ৫ (নবী কাহিনী ও অন্যান্য)
(বইটি ইসলাম.নেট.বিডি ওয়েব থেকে নেয়া হয়েছে)
0 comments: