শেরপুরের কান্না দেখেছি- মজিবুর রহমান মন্জু

শেরপুরের মাটি তোমায় কতই না ভালোবাসে! অবহেলা-অযত্নে সংকীর্ণ কাঠের কফিনে ওরা তোমাকে তাচ্ছিল্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু মজলুমের অশ্রুসাগরে ভালোবাসার প্লাবন তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করেছে। আজ স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হল অন্যরকম এক শেরপুর, আলহামদুলিল্লাহ!


সবুজ ধানক্ষেত লাগোয়া একটি সতেজ কবর। ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ১৭ এপ্রিল-শুক্রবার সকাল বেলা উপস্থিত হয়েছিলাম সেই কবরে। শেরপুর সদরের কুমরি বাজিতখিলা গ্রামের এতিমখানা সংলগ্ন রাস্তা, যার পাশে শুয়ে আছেন আমার প্রিয় দায়িত্বশীল শহীদ কামারুজ্জামান। আস্সালামুয়ালাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর।



শহীদ কামারুজ্জামানের প্রিয়তমা জীবন সঙ্গীনি, তার স্নেহময়ী সন্তান ওয়ামী, ওয়াফী, শাফী ও আতিয়া নূর ঢাকা থেকে জনপ্রিয় লেখক ও সংগঠক আহসান হাবীব ইমরোজ, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার সুযোগ্য উত্তরসূরী হাসান জামিল, দুই শহীদের শ্রদ্ধাভাজন সহযোদ্ধা আলী আহসান মু: মুজাহিদের পুত্র তাহকিক ও মাবরুর, জামান ভাইয়ের অন্যতম স্নেহভাজন সুহৃদ আনোয়ারুল ইসলাম রাজু , আমার একান্ত আপনজন তরুণ ব্যবসায়ী মেজবাহ উদ্দিন সাঈদ এবং আমি ছিলাম সহযাত্রী। আমরা গিয়েছিলাম চারটি আলাদা গাড়ীতে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই পৃথক ভাবে একটু আগে-পরে আমরা ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর সদরের বাজিতখিলায় পৌঁছাই।

নানা আশংকার কারণে এ যাত্রার খবর আগাম কাউকে জানানো হয়নি। কিন্তু শহীদ কামারুজ্জামান এর স্ত্রী ও সন্তানদের আগমণের খবর বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। এমনিতেই প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে মানুষের আনা-গোনা লেগেই ছিল, কিন্তু আজ যেন বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার! মুহুর্তেই চতুর্দিক থেকে গ্রামবাসী নারী-পুরুষের অভাবনীয় ভীড়। সকলের চোখে কান্নার ঢেউ আছড়ে পড়ে তাঁর সন্তানদের দেখে। কে কাকে সান্তনা দেবে? নারীদের বিলাপ ধ্বনিতে ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। সন্তানরা বাবার জানাজা পড়তে পারেনি, পারেনি শহীদ বাবার কফিন ধরাধরি করে কবরে নামাতে, প্রিয়তম বাবার নিথর কপালে চুমু খেয়ে চোখের জলে শেষ বিদায় দেয়া হয়নি। স্ত্রী পারেনি শেষ সম্ভাষন- বন্ধু বিদায়’ বলতে। আজ তাই নীরব কবরের পাশে দাঁড়িয়ে শত-সহস্র দিনের স্মৃতি বোবা কান্নায় উথলে উঠছে বারবার। শহীদ পরিবারের সাথে হাজারো মানুষের হাত তোলা আহাজারী- হে আল্রাহ তুমি বিচার কর। এই জুলুমের সবচেয়ে বড় স্বাক্ষী তুমি………।

চারিদিক থেকে মানুষের স্রোত ক্রমেই বাড়ছে দেখে শংকিত হলেন কেউ কেউ। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ এসে সৃষ্টি করবে ত্রাস। যেমন করেছিল সেদিন ভোর রাতে। তাই বাবার কবরের পাশে, গ্রামবাসী আপনজনদের সাথে থাকা হয়নি বেশীক্ষণ। আমাদের পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল বলে শহীদের বড় ভাই কফিল সাহেবের বাড়ীতে আমরা জামান ভাবী, ওয়ামী, ওয়াফী, শাফী এবং আতিয়াকে বিদায় জানাই। কিছুক্ষণ সকল নিকটাত্মীয়দের সাথে কথাবার্তা বলে তারা আবার রওয়ানা হন ঢাকার দিকে।

শহীদ পরিবার চলে যাওয়ার পর আমরা ভাবলাম, এবার মানুষের ভীড় কিছুটা কমবে। কিন্তু স্বল্প সময়েই ভুল ভাঙ্গলো আমাদের। মানুষ আসছে তো আসছেই। ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেন সোহেল এবং আমাদের আরেক সফরসঙ্গী লিটু ভাই সর্বক্ষণ জামান ভাইয়ের নানান স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন।

শহীদ পরিবার কে বিদায় দিয়ে জনতার ভীড় ঠেলে আমরা শহীদ কামারুজ্জামানের প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা প্রাঙ্গনে গিয়ে দাঁড়াই। সে রাতে কেমন করে তাঁর কফিন আনা হয়েছিল, কিভাবে তার জানাজা এবং দাফন সম্পন্ন হয়েছিল, সবিস্তারে জানালেন মাদ্রাসার সুপার মাঝ বয়েসী ভদ্রলোক। তার কাছে পুলিশ ও প্রশাসনের নির্দয় আচরনের বয়ান শুনে অবাক হলাম। একজন মৃত মানুষ ও তার নিরীহ গ্রামবাসীর প্রতি এত অমানবিক আচরণ হতে পারে তা অবিশ্বাস্য! একজন শিক্ষক জানালেন ফাঁসি কার্যকরের একদিন আগে পুলিশ এসে ১ ঘন্টার নোটিশে এতিমখানা খালি করে তালা মেরে দিতে বলে। এই অসহায় এতিমরা হঠাৎ করে কোথায় যাবে! কিছুই পুলিশ বিবেচনায় নেয়নি। তাঁরা কয়েকজন অবস্থান করতে চাইলে পুলিশ সেটারও অনুমতি দেয়নি। পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও তিনি সহ কয়েকজন আশ-পাশে ঘুরাফিরা করে বহু কষ্টে সারারাত অবস্থান করেন। শত শত পুলিশের কড়া বেরিকেডের বাইরে হাজার হাজার গ্রামবাসী সাধারণ নারী-পুরুষ রাত জেগে বিভিন্ন দিকে অবস্থান নেয়। তাদের কান্না, আহাজারী, কাকুতি-মিনতি কোন কিছুই পুলিশের মন গলাতে পারেনি। পুলিশ কাউকেই জানাজা স্থলের কাছে ঘেষতে দেয়নি। বার বার লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দিয়েছে। রাইফেল তাক করে গুলী করার হুমকি দিয়েছে। এক পর্যায়ে গ্রামের শোকার্ত যুবকেরা বুক পেতে দিয়ে পুলিশকে গুলী করার আহবান জানায়। বৃষ্টিস্নাত রাতের আধারে সে এক হৃদয়-বিদারক দৃশ্য। বলতে বলতে ভদ্রলোকের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে। চোখ ছল ছল করে ওঠে আমাদেরও। কল্পনায় নিজেকে আমার সেই যুবকদের একজন ভাবতে ইচ্ছে করে……।

ভীড়ের মাঝে এক কিশোরের দিকে আমার চোখ আটকে যায়। সে আমাদের সামনে এসে বুক চিতিয়ে দাড়িয়ে বলে স্যার, পুলিশ আমাকে বহুবার তাড়িয়েছে। আমি এদিক দিয়ে গিয়ে ওদিক দিয়ে আবার লুকিয়ে লুকিয়ে অন্ধকারে ফিরে এসেছি। শেষ পর্যন্ত আমার সৌভাগ্য হয়েছে জানাজায় হাজির থাকার। ছেলেটার উজ্বল চোখগুলো চিক্ চিক্ করছিল। সে আরও জানালো পুলিশ কফিল চাচাকে (শহীদ কামারুজ্জামানের বড় ভাই) বলেছে মাত্র ২০ জনের তালিকা করার জন্য, উপরের নির্দেশ ২০ জনের বেশী একজনও যেন জানাজায় না থাকে। কফিল চাচা রাগ করে বলেছেন ঠিক আছে আপনারা পুলিশেরাই জানাজা পড়েন, দাফন করেন আমি-আমরা কেউ থাকবোনা। ক্ষোভে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন আমার নিরপরাধ ভাইকে তো আর পাবোনা, আপনারা যা খুশী তা করেন। শহীদের বড় ভাইয়ের এমন দৃঢ় মনোভাবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ উপস্থিত ১০০-১৫০ জনকে জানাজা পড়তে লাইন ধরতে বলে। প্রথমে কয়েকজনকে লাশ দেখার জন্য সুযোগ দিলেও পরক্ষণেই কফিনের বাক্স ঢেকে দেয়। সবার পকেট চেক করে মোবাইল বন্ধ করা নিশ্চত করে কোন ছবি তোলা বা ভয়েজ রেকর্ড করা যাবেনা বলে হুশিয়ারী দেয়। সে জানায় পুলিশ বেষ্টনীতে দুরে আটকে থাকা হাজারো জনতা আমাদের পাশাপাশি ৩টি পৃথক জানাজা পড়ে। তাদের গগণবিদারী কান্না ও তাকবীর ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় আকাশ-বাতাস।

এতিমখানার দেয়ালে কয়েকটি রক্তাক্ত হাতের ছাপ আমাদের চোখে পড়লো। জানতে পারলাম শহীদ কামারুজ্জামানের কফিন আনার পর তার বুকের উপর তরতাজা খুন ছড়িয়ে ছিল। কফিনের বাক্স খোলার পর কোন এক তরুণ ছাত্র আবেগ প্রবণ হয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কাঁদতে কাঁদতে রক্তাক্ত কফিন জড়িয়ে ধরে। তার হাতে শহীদের যে তপ্ত খুন লেগেছিল এগুলো তারই স্মৃতিচিহ্ন।


শহীদ কামারুজ্জামানের রক্তাক্ত কফিন যারা জড়িয়ে ধরেছিলেন, তাদের একজনের হাতের ছাপ।

ইতোমধ্যে বহু মানুষ আমাদের চারপাশে এসে অবস্থান নিয়েছে। একজন একপাশে একটি টেবিলের উপর একটি শোকবই দেখিয়ে বললো, আসুন এখানে কিছু লিখুন। কি লিখবো! আমি যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, “আমার প্রিয় দায়িত্বশীল, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম ভাই মুহাম্মদ কামারুজ্জামান… এতটুকু লিখে আমার দুচোখ অঝোর ধারায় কান্নার জলে ভরে গেল। কলম আমার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেল। এরপর যা লিখলাম সব এলোমেলো । শুধু এতটুকু মনে আছে শেষে লিখেছি, ‘আমরা অঙ্গীকার করছি শহীদ কামারুজ্জামানের স্বপ্ন এবং নির্দেশিকা ইনশাআল্রাহ আমরা বাস্তবায়ন করবো’। এতিমখানার এককোণে শহীদ কামারুজ্জামানকে বহন করা কাঠের বাক্সটি দেখলাম। দেখে শিউরে উঠলাম, কত সরু বাক্স এটি! জামান ভাইয়ের শরীর এতে সংকুলান হবার কথা নয়, জেল কর্তৃপক্ষ এরকম একটি সংকীর্ণ দূর্বল বাক্সে তার লাশ কিভাবে ঢুকালো! একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানালেন অনেকটা ঠাশাঠাসি করে মৃতদেহ ঢোকানো ছিল আমরা দেখতে পেয়েছি। হায়রে প্রতিহিংসা! এই নির্মমতার ফল একদিন অবশ্যই তারা ভোগ করবে।



কেউ একজন কানে কানে এসে বললো সিভিলে ডি.বি পুলিশের একটি টীম এসেছে, তারা সম্ভবত: এত মানুষ দেখে বিচলিত। এরই মধ্যে আরেক পশলা জনতার ঢল লক্ষ করলাম, জানতে পারলাম টাঙ্গাইল থেকে কয়েকশত মানুষ বাস বোঝাই করে এসেছেন। কবরের পাশে চললো আরেকদফা আর্তনাদ, আরশের পানে চেয়ে সে কি আকুতি। আমি শুধু ভাবছি শহীদেরা কতইনা সৌভাগ্যবান! নাড়ীর সম্পর্কিত না হয়েও নেতার জন্য, ভাইয়ের জন্য কেউ কি এভাবে আবেগে আত্মহারা হতে পারে? টাঙ্গাইল থেকে যারা এসেছে তাদের মাঝে বেশ পরিচিত কয়েকজন কে পেলাম। শহীদ জোবায়েরের বড় সহোদর জাকির ভাই এসে আছড়ে পড়লো আমার বুকে। দু’ভাই জড়াজড়ি করে কাঁদলাম অনেক্ষণ। এক শহীদের কবরগাহে আরেক শহীদের স্মৃতি উপলব্ধি করতে করতেই গাড়ীর হর্ণ কানে এলো। আমরা সহ সবাই অপেক্ষা করছিলাম হাসান জামিল, তাহকিক, মাবরুর ও রাজু ভাইয়ের জন্য, বুঝলাম ওরাও এসে গেছে। তারা এসে নামতেই অন্যমাত্রার আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হলো। গ্রামবাসীর আরেকদফা আবেগ-উত্তেজনা! তাদের মোনাজাতে কান্নার রোল হৃদয় ছুয়েছে সবার। মোনাজাত শেষে শহীদ কাদের মোল্রা ও মুজাহিদ ভাইয়ের সন্তানদের সাথে হাত ও বুক মেলাবেন সবাই। শুনতে চান তাদের মুখ থেকে কিছু কথা। শেষ পর্যন্ত জনতার দাবীর মুখে তাহকিক ও হাসান জামিল একটি টেবিলের উপর দাড়িয়ে বললেন, "আমরা বিচলিত নই, আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। সত্য একদিন প্রতিষ্ঠিত হবেই ইনশাআল্রাহ"। একজন বয়স্ক মুরুব্বী ইমরোজ ভাই, মেজবাহ ভাই সহ আমাদের কে শহীদ কামারুজ্জামান প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা ঘুরিয়ে দেখালেন। এতিমদের নিয়ে কামারুজ্জামান ভাই যে স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তিনি যেভাবে এ প্রতিষ্ঠানের জন্য নিবেদিত ছিলেন তা বিশদ বর্ণনা করলেন। আমরা তাদের কে আশ্বস্থ করলাম, ইনশাআল্রাহ যে জমিনে শহীদ কামারুজ্জামান শুয়ে আছেন সে জমিন ও প্রতিষ্ঠান একদিন বিশ্ব মুসলমানের জ্ঞান সাম্রাজ্যের বড় কমপ্লেক্স হবে।

ক্রমে যেভাবে মানুষের চাপ বাড়ছে আমরা অনুভব করলাম, এবার আমাদের ফেরা উচিত। তাছাড়া শেরপুরে কামারুজ্জামান ভাইয়ের দুই স্নেহধন্য সহযোগী সিদ্দিক ভাই ও সরওয়ার ভাই জোর করে ধরলেন যাবার সময় কামারুজ্জামান ভাইয়ের স্মৃতি বিজড়িত তাদের (শ্বশুরালয়) বাসায় একটু যেতে হবে। ময়মনসিংহ থেকে সরওয়ার ভাই, ভাবী এবং তার আদুরে দুই রাজপুত্র আমাদের পথ দেখিয়ে শেরপুর নিয়ে যান। আর সিদ্দিক ভাইয়ের যা গল্প শুনেছি তাতে আরও কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গ পাওয়ার লোভ সামলাতে পারছিলাম না।

সাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে উঠার জন্য যেই পা বাড়াবো অমনি বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো, জামান ভাইকে রেখে চলে যাবো!

কবরের সাথে লাগানো সবুজ ধানক্ষেতের পাতাগুলো বাতাসে দুলছে। নীল পলিথিনে ঢাকা বালিমাটির কবরখানা যেন আমার ডাকছে। আমি ছুটে গেলাম আবার কবরের পাশে, হু হু করে বুকভেঙ্গে কান্না নেমে এলো। মাথা নীচু করে মহান রাব্বুল আ’লামীনের কাছে কিছু বলতে ইচ্ছে করলো। বিড় বিড় করে বললাম, হে আল্রাহ জামান ভাইকে রেখে যাচ্ছি, আবার কখন আসবো জানিনা। তোমার প্রিয় শহীদ কে তুমি বুঝে নাও, ফেরত দিও আবার বেহেশতের বাগানে। -(মজিবুর রহমান মন্জু)








Class এ যাচ্ছি বাসায় থেকে লাভ নেই। আমাদের driver চাচা কাঁদছে আর বলে যাচ্ছে কীভাবে কামারজ্জামান চাচা আর চাচী তার মেয়ের বিয়েতে তাদেরকে সহযোগীতা করেছিল। নিজ বাসায় এনে রেখেছিল দুই দিন ! সে কি মায়া ....কি আদর ....... 

শেখ হাসিনা ! সে কী নিজের একজন কাজের লোকের নামও বলতে পারবে !
হে আল্লাহ দেখ কে কাকে ফাঁসি দেয় ....দেখছো তো ......!!!

- (তাহেরা তাসনিম -(১/০৪/২০১৫)










গতকাল , হ্যা গতকালই শুনলাম কামারুজ্জামানের সাবেক এক ড্রাইভারের কাছ থেকে।
তার এটি নবম চাকুরী, মানে ড্রাইভারের......। তার প্রথম দিনের ডিউটি শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের সাথে।

ড্রাইভারের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলেন। ব্যাক্তিগত খুজ খবর নিলেন। আমার পূর্ণাঙ্গ নাম এত মধুর ভাবে ডাকলেন যে আমার মা বাবা ও এত সুন্দর এবং মায়া ভরে আমার নাম ডাকলেন বলে বলে আমার জানা নেই।

তারপর উনাকে সাথে নিয়ে ড্রাইভ করে উনার বাসার নিচে পৌঁছলাম। উনি আমাকে বললেন এটি আমার বাসা , আমি দুতলায় থাকি তুমি গাড়ী পার্ক করে দু তলায় আস।

ড্রাইভার পড়ে যায় গভীর ভাবনায় এ কি মানুষ? আমায় কি বলে?? বুঝে উঠতে না পারায় সে বাড়ীর সামনে গাড়ী পার্ক করে গাড়ীতেই বসে রইল। একটু পর শহীদ কামারুজ্জামান ভাই নিচে আসলেন। গাড়ী পার্ক করতে ডিরেকশন দিয়ে ড্রাইভারকে সহযোগিতা করলেন। তারপর সাথে করে উপরে উঠালেন নিজের ড্রয়িং রুমে। পাশাপাশি সোফায় বসলেন ।

ভিতর হতে দরজার কাঁচে টুকা পড়ল অতপঃর উনি উঠে গিয়ে নিজেই নিয়ে আসলেন খাবারের ট্রে, এবং একসাথে বসে খেলেন। ড্রাইভারের মন বিশ্বাস করে না , একি স্বপ্ন? নবম চাকুরী আমার কেউ কোনদিন ডাকল না এত মধুর ভাবে? কেউ আমায় পাশে বসিয়ে একসাথে খেল না? তাই সে ইতস্তত করে প্রশ্নই করে বসল, স্যার একটা প্রশ্ন করতে পারি??
হ্যা হ্যা কর।

স্যার আপনার বাসায় কি কোন কাজের লোক নেই? কামারুজ্জামান ভাই বললেন কেন বল তো?
এই যে আপনি নিজে গিয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে আসলেন। গাড়ী পার্ক করতে সহযোগিতা করলেন , নিজে খাবার নিয়ে আসলেন ও সার্ব করলেন? তিনি বললেন এটিই ইসলামের শিক্ষা।
একটা ছেলে আছে কাজ করার।

এমন মানবতা বাদী ভাইটাকে কিনা, মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসী দিল???
এ জাতীর ভবিষ্যৎ কোথায়????? -(লেখকঃ অজ্ঞাত- ১৫/০৪/২০১৫)









কাঁদছে মানুষ, কাঁদছে আকাশ-বাতাস - মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক

সুদূর ঢাকা থেকে একজন মানুষ এসে কবরের কাছে এসে কাঁদছেন । খুব সরল আর সহজ সেই লোকটি ঢাকায় কোন এক গাড়ীর হেলপার ছিলেন। সে একবার পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে ঢাকাস্থ কারাগারে যান। তার গায়ে কালিমাখা আর নোংড়া পোশাক ছিল যেমনটি একজন হেলপারের থাকার কথা। তাকে জেলখানায় একজন দেখে বললেন তোমার গায়ে এত কালি, তো হাতমুখ ধুয়ে নাও। বলল সাবান নেই। সেই লোকটি তাকে কয়েকটি সাবান এনে দিয়ে বললেন নাও হাত-মুখ ধুবে।

সেদিন শেষ পরদিন আবার সেই লোকটির সাথে দেখা সেই বাস হেলপারের। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন- খেয়েছ? সেই হেলপার বলল- খেয়েছি কিন্তু পেট ভরে নাই, ক্ষুধা আছে। ১টি মাত্র রুটি দিয়ে কি আর পেট ভরে। সেই লোকটি একটু চুপ করে থাকলেন এবং চলে গেলেন।

পরদিন আবার সেই মহৎ লোকটির সাথে জেলখানায় দেখা তিনি যথারীতি হেলপার কে জিজ্ঞাস করলেন খেয়েছ? হেলপার বললেন হ্যা আজ তো পেট ভরে খেয়েছি ৬টি রুটি, ডিম এবং আরও কিছু দিয়েছে। নিজে খেয়ে অন্যকেও দিয়েছি। তখন মহৎ লোকটি বললেন, এখন থেকে আর খাবার সমস্যা হবে না।




এরপর হেলপার কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল জনাব আপনি কে? মহৎ লোকটি বলল আমাকে চেননা? হেলপার বলল না। সেই লোক বলল ছোট থেকে ঢাকায় থাকি আর কাজ করি, কি করে চিনব আপনাকে। তিনি বললেন- আমি "কামারুজ্জামান"। সেই হেলপার ভাই অশ্রুসজল চোখে তার হাত ধরে কাঁন্না থামাতে পারলেন না। তার পা ধরতে গেলেন। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান তাকে বুকে টেনে নিলেন। আর সেই হেলপার কামারুজ্জামানের ফাঁসির খবর পেয়ে তার পরিবার পরিজন নিয়ে সুদূর ঢাকা থেকে শহীদ কামারুজ্জামানের কবর জিয়ারত করতে এসে আকাশ কাঁপানো চিৎকার করে কান্নায় অশ্রুসজল কণ্ঠে দুহাত তুলে দোয়া করছেন শহীদ কামারুজ্জামান সাহেবের জন্য। তিনি বলেছেন আমার সাথে এমন ভাল ব্যবহার, এত দরদময় আচরণ আর কোন লোক করে নাই। এই হল মুহম্মদ কামারুজ্জামান।

কথা গুলো গল্পের মত শুনালেও বাস্তব। । এমন অনেক লোক আজ তার কবরের পাশে এসে কাঁদছেন প্রতিদিন আর দোয়া করছেন প্রতিনিয়ত। বিশ্বাস না হলে ঘুরে আসুন কামারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ী শেরপুর জেলার সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়েনর মুদিপাড়া গ্রাম।

-M R Mustak


মঞ্জু ভাই



ঘুরে এলাম শহীদ কামারুজ্জামানের শেরপুর....(Ali Ahmad Mabrur )

সকাল বেলায় বের হলাম। উদ্দেশ্য শহীদ কামারুজ্জামানের কবর জিয়ারত। কোন দিন ভাবিনি, ছোটবেলা থেকে খুব কাছ থেকে দেখে আসা এই মানুষগুলো মারা যাবেন, শহীদ হবেন, আর আমরা তাদের জানাজায় অংশ নিতে পারবোনা। মন তাই অস্থির ছিল শহীদ কামারুজ্জামান চাচার কবরের কাছে যাওয়ার জন্য। সংগে আমার মেঝ ভাই, আমার খালু আর শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল। বেশ ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা হওয়ায় যেতে কষ্ট হয়নি একটুও।

শেরপুর শহরে গিয়ে দেখলাম অনেক মানুষ বাজিতখেলামুখী। ওখানেই চাচার প্রতিষ্ঠিত ইয়াতীমখানার পাশেই তাকে দাফন করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে পৌছতেই দেখি, শুধু মানুষ আর মানুষ। দলে দলে লোক আসছে চাচার কবর জিয়ারত করার জন্য। শুধু তাই নয়, ইয়াতীমখানা সড়কের শুরুতেই দেখি অনেকগুলো বাস দাঁড়ানো। বাসের পর বাস রিজার্ভ করে মানুষ এই শহীদের কবরে আসছেন। নতুন এক দল যাচ্ছে আর পুরনো এক দল ফিরছে।

কবরের কাছে গিয়ে সবচেয়ে ভাল লাগলো, দাফনের স্থানটিকে দেখে। খুব কম মানুষ এত সুন্দর জায়গায় স্থায়ী ঠিকানা গড়তে পারে। ইয়াতীমখানা আর মসজিদের পাশে সবুজ ধানক্ষেতের মাঝখানে শুয়ে আছেন শহীদ কামারুজ্জামান। মেইন রোড থেকেও খুব কাছে। জায়গাটিতে গেলেই মনটা ভাল হয়ে যায়।

আমরা সেখানে চাচার জন্য দোয়া করলাম। দেখি অনেক মানুষ আমাদের সাথে দোয়ায় দাঁড়িয়ে গিয়েছে আর আমীন আমীন বলছেন। মানুষের কান্না আর হাহাজারি এখনো থামেনি। সকলেই অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার দৃপ্ত শপথ নিলো আরো একবার। আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, কবরের কাছে অনেক ভীড় হওয়ায় তার খুব নিকটে যেতে না পারলেও একটু দূরে থেকে, অথবা ইয়াতীমখানার অফিসের ভেতরে দাঁড়িয়ে, কিংবা রাস্তার দুই ধারে অসংখ্য মহিলাকে কাঁদতে দেখলাম। তাদের চোখের পানি দেখে জানলাম, কতটা ভাল মানুষ ছিলেন শহীদ কামারুজ্জামান।

ফিরে আসলাম এক সুন্দর অনুভুতি নিয়ে। মানুষ তো মারা যাবেই। কিন্তু সেই মরনেও বিজয়ী হয়, এমন সৌভাগ্যের মরন কয়জনের কপালে হয়। শহীদ কামারুজ্জামান শাহাদাতের নজরানার মাধ্যমে মানুষের মনে স্থায়ী আসন গড়ে নিলেন। আল্লাহ যেন এই নেতার সর্বোচ্চ আত্নত্যাগকে কবুল করেন। পরম করুনাময় যেন আমাদেরকেও এই সম্মানের অংশীদার হওয়ার তাওফিক দেন। আমীন...

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম