কারাগারে লেখা কামারুজ্জামানের চিঠি


শীর্ষ নিউজ ডটকম, ঢাকা: যাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন লোকদের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। তিনি একাধিক বিকল্পের মধ্যে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নামও বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ সময়ের দাবি’ শিরোনামে চার বছর আগে দলের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে কামারুজ্জামান এসব প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এতে কামারুজ্জামান নিজেসহ জামায়াতের আটক নেতাদের মৃত্যুদ-ের আশঙ্কা এবং যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে জামায়াতের করুণ পরিণতি সম্পর্কে পূর্বাভাসও ছিল। তবে চিঠিতে পাকিস্তানের কারণে জামায়াতের গায়ে কাদা লেগেছে বললেও নিজেদের একাত্তর সালের কর্মকা-ের বিষয়ে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি।



একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই গ্রেপ্তার হন কামারুজ্জামান। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৭ নম্বর সেল (বকুল) থেকে গোপনে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন তিনি। দলের উদ্দেশে লেখা ওই চিঠিতে কামারুজ্জামান মূলত জামায়াতের টিকে থাকার কৌশল হিসেবে তিনটি বিকল্প উল্লেখ করে দ্বিতীয়টি গ্রহণের প্রস্তাব করেন। তিন বিকল্প হলো-

এক. ‘যা হবার হবে। আমরা যেমন আছি তেমনি থাকব।’

দুই. ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে পেছন থেকে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তুলবে। এই সংগঠন প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তার সঙ্গে ধর্মহীন শক্তির মোকাবিলা করবে।’

তিন. ‘আমাদের যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে, তাঁরা জামায়াতের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াব এবং সম্পূর্ণ নতুন লোকদের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেব। অর্থাৎ, একটা নিউ জেনারেশন জামায়াত হবে এটি।’

দ্বিতীয় প্রস্তাবের পক্ষে একটি বিস্তারিত রূপরেখাও দিয়েছিলেন কামারুজ্জামান। তাতে ‘সাংবাদিক তৈরি করে বিভিন্ন পত্রিকায় ও টেলিভিশন চ্যানেলে ঢোকানো’ এবং কৌশলের অংশ হিসেবে যুব ও ছাত্রদের সহায়তায় ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি দল, প্রয়োজনে ক্লাব গঠন করার কথাও বলেছিলেন।

কামারুজ্জামানের এই চিঠি নিয়ে দলে তখন কিছুটা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। চিঠিতে লেখা সতর্কবাণী নিয়ে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী এবং দলের শুভাকাক্সক্ষীদের একটি অংশ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে দলের নীতিনির্ধারকদের সম্পর্কে সে সময় নানা মন্তব্য করে।

জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, কামারুজ্জামানের ওই চিঠি নিয়ে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। এ বিষয়ে ২০১১ সালের ফেব্র“য়ারিতে জামায়াতের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজাহারুল ইসলামের (পরে গ্রেপ্তার ও কারাবন্দী) সঙ্গে কথা বলে চিঠির বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তখন তিনি বলেছিলেন, ‘কারাগারে যাঁরা আছেন, তাঁরা দল পরিচালনার জন্য বাইরের নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। কেউ যদি এমন কিছু করার চেষ্টা করেন, তা হবে দল ভাঙার ষড়যন্ত্র।’ তখন তিনি এ প্রশ্নও তুলেছিলেন, ‘এত বড় চিঠি কারাগার থেকে এল কী করে?’

নিজের তিন বিকল্পের ব্যাখ্যায় কামারুজ্জামান চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায়, উপরোক্ত তিন অবস্থার প্রথমটা হচ্ছে নেতৃত্ব আঁকড়ে থাকা, হতবুদ্ধিতা এবং হতাশাবাদিতা। একটি গতিশীল আন্দোলন এ ধরনের পশ্চাৎমুখী অবস্থান গ্রহণ করতে পারে না।’

এ বিষয়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী ও জামায়াতের মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি শামসুন্নাহার নিজামী ২০১১ সালের ১১ ও ২৫ মার্চ সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় দুই কিস্তিতে একটি নিবন্ধ লেখেন। ‘বিবেচনায় আনতে হবে সবকিছু’—এ শিরোনামে লেখা ওই নিবন্ধে তিনি কামারুজ্জামানের চিঠির কিছু জবাব দেন।

শামসুন্নাহার নিজামী লেখেন, জামায়াত মনে করে, যেকোনো পরিস্থিতিতে বা পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কোনো কর্মকৌশল নয়, বরং শাশ্বত কর্মকৌশলই অবলম্বন করতে হবে। পরিস্থিতি যতই নাজুক হোক, চ্যালেঞ্জ যত কঠিনই হোক; শর্টকাট কোনো পথ নেই।

কামারুজ্জামান কারাগারে আটক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘নির্মোহ এবং নিরপেক্ষভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। নিজেকে সম্পৃক্ত করে চিন্তা করলে সমস্যার সমাধান হবে না।’ তিনি আরও লেখেন, ‘দ্বিতীয় যে বিকল্পটির কথা উল্লেখ করেছি, সবাই মিলে তা সামনে রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই হবে কাক্সিক্ষত এবং যুক্তিযুক্ত। এ ধরনের একটি অবস্থান গ্রহণ করলে সাময়িকভাবে আমাদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অবমাননাকর মনে হলেও শেষ পর্যন্ত মহত্ত্বের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থী শিক্ষক ও সিনেট সদস্য তানভীর মুহাম্মদ হায়দার ‘আইএমবিডিডটব্লগডটকম’-এ কামারুজ্জামানের চিঠির সমর্থনে লেখেন, ‘কোনো লাভ নেই। যাঁরা তখন বুঝেননি, তাঁদের একে একে বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে। আর যাঁরা বাকি থাকবেন, তাঁরা বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত বুঝবেন না। বাধ্য হয়ে বুঝার পর আবারও নিজ গুণগানে ব্যস্ত হয়ে উঠবেন।’

চিঠিতে কামারুজ্জামান দেশের গণমাধ্যমকে দোষারোপ করে লেখেন, ‘মিডিয়া জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধীদের দল বানিয়ে ফেলেছে। যদি সরকারের বর্তমান ঘোষণা অনুযায়ী বিচারকার্য চলে, তাহলে জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে দেশে-বিদেশে চিহ্নিত হয়ে যাবে। ফলে জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে।’

চিঠিতে কামারুজ্জামান দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি খেদও প্রকাশ করে লেখেন, ‘জামায়াতের ওপর এবং জামায়াতের নেতা হিসেবে আমাদের ওপর সুস্পষ্ট জুলুম হচ্ছে। এ জন্য অনেকে দুঃখ প্রকাশ বা নিন্দা করলেও দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কার্যকরভাবে আমাদের তথা জামায়াতের পক্ষ অবলম্বন করবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিচারকাজের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মৌখিক সৌজন্য প্রকাশ করলেও একটি ইসলামি দলের নেতাদের শাস্তি হলে ভেতরে-ভেতরে তারা অখুশি হবে না।’

এখন দলটির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার বছর আগে কামারুজ্জামান যা লিখেছিলেন, এখন তার অনেকটাই ফলে গেছে। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব তা আমলে তো নেনইনি, কেউ কেউ এর বিরুদ্ধাচরণও করেছেন।

গত বছরের নভেম্বরে এই চিঠির বিষয়ে কামারুজ্জামানের স্ত্রী নুরুন্নাহারের সঙ্গে কথা হয় । তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আমরা দেখেছি, দলের জন্য তিনি (কামারুজ্জামান) যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তার অনেকগুলো বাস্তবে ফলে গেছে।’

কামারুজ্জামান চিঠিতে বলেছিলেন, ‘জামায়াতের অনেকে মনে করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার বিষয়টি একসময় মিটমাট হয়ে যাবে।...যেহেতু বিষয়টি আমরা মিটমাট করতে পারিনি অথবা এই রাজনৈতিক বিরোধটি মীমাংসা করতে পারিনি, যেহেতু আমরা অনেকেই মনে করেছিলাম এটা একসময়ে এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে, যেহেতু আমাদের অনেকের চিন্তার গ-ি অতিক্রম করে এটা একটা জ্বলন্ত ইস্যু হিসেবে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, যেহেতু সরকারও এ বিষয়ে অবশ্যই একটা কিছু করতে বদ্ধপরিকর এবং যেহেতু কিছু না হলেও দল ও নেতৃত্বের ভাবমর্যাদা ধুলায় লুণ্ঠিত হয়েছে এবং জনমনে একধরনের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু সামগ্রিক বিবেচনায় নতুন কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ করা সময়ের অনিবার্য দাবি।’

নতুনভাবে সংগঠনের রূপরেখা: পরিস্থিতি বিবেচনায় জামায়াতকে পেছন থেকে সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করে নতুন প্ল্যাটফর্মে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কৌশল গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছিলেন কামারুজ্জামান। তাঁর মতে, সেই প্ল্যাটফর্মকে রাজনৈতিকভাবে কেউ সরাসরি আক্রমণ করতে পারবে না। আপাতদৃষ্টিতে জামায়াতে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে এমনটি মনে হলেও ক্ষতির কিছু নেই।

কামারুজ্জামান প্রস্তাব করেছিলেন, বাংলাদেশের সংবিধান সামনে রেখে যে ধরনের সংগঠন হলে কোনো প্রশ্ন থাকবে না, সে ধরনের সংগঠন করতে হবে। ছায়া মন্ত্রিসভার ধারণা গ্রহণ করতে হবে। তিনবারের বেশি কেউ কেন্দ্রীয় সভাপতি বা জেলা সভাপতি থাকতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সব পেশার লোকদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। নির্বাচনে প্রথমে স্থানীয় সরকারব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। যুব ও ছাত্রদের সহায়তায় ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি দল, প্রয়োজনে ক্লাব গঠন করতে হবে। সাংবাদিক তৈরি করে বিভিন্ন পত্রিকায় ও টেলিভিশন চ্যানেলে ঢোকাতে হবে।
-





কারাগার থেকে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান চিঠিটি কালের কন্ঠে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এর সত্যতা খুঁজার চেষ্টা করছিলাম।যদিও এরকম একটি চিঠি অপ্রত্যাশিত নয় তার কাছ থেকে।কেননা জামায়াতের শুরাতে চিন্তাভাবনা করে যে কয়জন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম,যাকে অনেকেই জামায়াতের বুদ্ধিজীবি বলে চিনেন। যাক অবশেষে জামায়াতের আরেক বুদ্ধিজীবি জনাব শাহ আব্দুল হান্নান এর মন্তব্যে নিশ্চিত হওয়া গেল। শাহ আবদুল হান্নান লিখেছেন : Qamruzzaman has given his views in a private letter. Those who have circulated to others have done wrong. I feel that Jamaat is doing well now. The present leadership is quite efficient. Change in Jamaat is a matter for the party.They can accept some part of Mr Qamruzzaman's view or may not.It is the privilege of the party and its' Shura. Enemies will try to capitalize on this letter but Jamaat can hardly be harmed in this manner.Jamaat should not feel any worry on this. Shah Abdul Hannan (সোনার বাংলাদেশ ব্লগ, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১১; রাত ০৮:৩৫)

জনাব কামারুজ্জামানের একটি কথাও ফেলনা নয়।তার চিঠি নিয়ে বিভিন্ন মহলে অনেক হিসেব-নিকেশ শুরু হয়েছে। কিন্তু যতই হিসেব নিকাশ হউকনা কেন এর কোন ইফেক্ট কি পরবে দেশের সবচেয়ে পুরাতন এই দলটির কর্মসুচী,কর্মপদ্ধতি ও কর্মকৌশলে? না,সুচক উত্তর মনে নিয়েই এই লেখার সুত্রপাত। সংগঠনবাদীদের উদ্ধত্যপূর্ণ কথাই বলে দেয় কোন পর্যালোচনাই তারা কেয়ার করেন না। আজহারুল ইসলাম বলেন, 'কারাগারে যাঁরা আছেন, তাঁরা দল পরিচালনার জন্য বাইরের নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। কেউ যদি এমন কিছু করার চেষ্টা করেন তা হবে দল ভাঙার ষড়যন্ত্র।'।

জামায়াতের জন্য এটা এক ধরনের বিল্ডিং ব্লক।যে বা যারাই প্রচলিত ধারার বাহিরে কথা বলেছে তাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে এবং বের হয়ে যেতে হয়েছে,এমনকি সেটা আমীর(দলীয় প্রধান) হয়েও!! কামারুজ্জামান জেলে যাওয়ার অনেক আগে থেকেই দলের রিফর্মের জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। তখনি তাকে সুযোগ সন্ধানী বলা হয়েছে, সেখানে ষড়যন্ত্রকারী বলা আর নতুন কিসের? এতেও আশ্চার্য্য হবার কিছু থাকবেনা যদি তাকে সাংগঠনিকভাবে বহিষ্কার করা হয় কারন জামায়াতের ইতিহাসে এরকম ঘটনা নতুন নয়। এটাকে অনেকে অবশ্য
জামায়াতের সাংগঠনিক স্ট্রেন্থই মনে করেন।হয়তবা,কিন্তু এই স্ট্রেন্থ বাংলাদেশে জামায়াতকে পাওয়ার পলিটিকস এ দাবার ঘুটি'র মত ব্যবহার হওয়া ছাড়া বেশি কিছু দিয়েছে বলে পলিটিকাল এনালিষ্টদের চোখে ধরা পরেনি আজও।
যাই হউক,সে দিকে না গিয়ে চিঠির বিষয় নিয়েই আজকের আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকুক,সীমাবদ্ধ থাকুক চিঠিতে জামায়াতের জন্য কামারুজ্জামানের রিফর্মের বিষয়গুলো প্রয়োজনীয়তা যাচাই বাছাইয়ের মধ্যে।

জনাব কামারুজ্জামান এর কথাগুলোকে একটু ক্রস চেক করা,এক্সামিন করা দরকার,ফলে তার সত্যতা ও উপযোগিতা বুঝা সহজ হবে।

"বদলে যাচ্ছে জামায়াতের নাম" শিরোনামে ১৩ মে ২০১০,বৃহস্পতিবার দৈনিক প্রতিদিন পত্রিকায় আরিফুর রহমান এর একটি এক্সক্লুসিভ লেখা ছাপা হয়।এই নিউজটাকে বলা যেতে পারে একটি রুদ্ধধার বৈঠকের লিক হওয়া খবর। সেখানে জামায়াতের রিফর্মের উদ্দেশ্যে পুরানা পল্টনে একটি গোলটেবিল বৈঠকের কথা বলা হয় যেখানে মীর কাশেম আলী,মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক বেশ কয়েকজন সভাপতি উপস্থিত ছিলেন।

রিফর্মের সুত্রপাত

২০১০ সালের ৯ জুন ঢাকার একটি বেসরকারি 'থিঙ্ক ট্যাঙ্ক' ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যালোচনা করে একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ দাঁড় করায়। এতে তারা জামায়াত সম্পর্কে মন্তব্য করে এই বলে যে, 'জামায়াত বর্তমানে ইমেজ সংকটে ভুগছে। ভবিষ্যতে এই অবস্থার আরো অবনতি ঘটতে পারে।

উক্ত বৈঠকের কথা আমীরে জামায়াত জনাব মতিউর রহমান নিজামীকে জানানো হলে তিনি শিবিরের সাবেক সভাপতি ও জামায়াতের তরুন নেতৃত্বকে এই বলে বোঝান যে, মীর কাশেম আলী ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সুযোগ-সন্ধানী। তাদের কথায় কান না দেয়ার পরামর্শও দেন তিনি।যদিও তরুন নেতাদের পাল্টা প্রশ্নের(সুযোগ সন্ধানী হলে দলে রেখেছেন কেন?) কোন জাবাব তিনি দিতে পারেননি বলে জানা যায়। ব্যাক্তিগত সুত্রে আরো জানা যায়, আমীরে জামায়াত তখন সাবেক আমীর গোলাম আযমের কাছে এই বিষয়ে দারস্থ হলে তিনি মীর কাশেম আলীকে ডেকে এইসব থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন।

ঐ গোল টেবিল বৈঠকে পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করে জামায়াতে বেশ কয়েকটি সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয় :

এক, একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করায় জামায়াতের প্রথম সারির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রচারণা থাকায় সর্বজনগ্রাহ্য জাতীয়ভিত্তিক ইমেজ তৈরি তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রায় চার দশক জামায়াতের বিরুদ্ধে এই প্রচারণা বন্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা আবার শুরু হয়েছে। এতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জামায়াতের ব্যাপারে একটি বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী বিষয়টি সামনে চলে আসায় এটি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। এমতাবস্থায় জামায়াতের রাজনৈতিক ইমেজ পুনরুদ্ধার বা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত কঠিন হবে।

দুই, দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে রয়েছে দুর্বলতা। তাদের কেউ কেউ বৃদ্ধ ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নতুন উদ্যমে দলকে এগিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই।

তিন, জামায়াতের পরিবেশ রুদ্ধদ্বার (রেজিমেন্টেড) ধরনের। এ জন্য ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন উদারনৈতিক ব্যক্তিরা এই দলে প্রবেশ করতে পারে না। দলটিতে সৎ মানুষের অভাব না হলেও দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উপযুক্ত ও দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। জামায়াতের বাইরে যেসব সৎ ও দক্ষ লোক রয়েছে, তারা যে কোনো পর্যায়ে জামায়াতে যোগ দিতে উৎসাহবোধ করে না।

চার, জামায়াতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা বর্তমানে আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এতে ভোটারের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

পাঁচ, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে আধুনিক ধ্যান-ধারণার অভাব রয়েছে। সমস্যাসংকুল বাংলাদেশের বেশকিছু মৌলিক সমস্যা রয়েছে। সব দলই এসব বিষয়ে কোনো না কোনো বক্তব্য দিয়ে থাকে। এসব সমস্যার অগ্রাধিকার নির্ণয় করে জামায়াত উত্তম বিকল্প কোনো সমাধানের দিকনির্দেশনা জাতির সামনে পেশ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অসৎ নেতৃত্বের বিকল্প হিসেবে জামায়াতের নেতারা তাদের দলকে জাতির সামনে তুলে ধরতে পারেননি।

ছয়, ভোটের রাজনীতিতে বর্তমানে যে কৌশল নেওয়া হয়, তা নিতে জামায়াতের বেশ সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

সাত, জামায়াত নতুন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনার আলোকে নিজেদের উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে নিজেদের কর্মসূচি উপস্থাপনের জন্য যে ধরনের আধুনিক পরিভাষা ব্যবহার করা প্রয়োজন, তা ব্যবহারে জামায়াতের ব্যর্থতা রয়েছে।

আট, নীতি ও আদর্শের সঙ্গে আপস না করেও কৌশলগত কারণে উদারনীতি অনুসরণ করে সমর্থনের পরিধি বৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি জামায়াতের নেই।

নয়, বর্তমানে বিএনপির ভঙ্গুর অবস্থার কারণে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির ঐক্য ভবিষ্যতে কতটা কার্যকর হবে তা বলা কঠিন।এমনি এক পরিস্থিতিতে বিকল্প রাজনীতির সন্ধানের জন্য মত প্রকাশ করা হয় পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায়।

উপরোক্ত সীমাবদ্ধতাগুলোর সাথে নুনতম জ্ঞান সমৃদ্ধ জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মিরা একমত হবেন বলে আমার বিশ্বাস।সেই বৈঠকে উপস্থিত কামারুজ্জামান সাহেব তার সাম্প্রতিক চিঠিতে পুরাতন কথারই প্রতিধ্বনি করেছেন।তিনি ৩টি অপশন এর কথা উল্লেখ করেছেন;

এক. যা হবার হবে। আমরা যেমন আছি তেমনি থাকব। (বর্তমানে এই কৌশলই অবলম্বন করা হয়েছে।)

দুই. পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে পেছনে থেকে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তুলবে। এই সংগঠন প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তার সঙ্গে ধর্মহীন শক্তির মোকাবিলা করবে।

তিন. আমাদের যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে, তারা জামায়াতের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াব এবং সম্পূর্ণ নতুন লোকদের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেব। অর্থাৎ একটা নিউ জেনারেশন জামায়াত হবে এটি।'

তিনি অবশেষে দ্বিতীয় যে বিকল্পটির কথা উল্লেখ করেছেন তার পক্ষে মত দিয়েছেন এবং বলেছেন এটি সামনে রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই হবে কাঙ্ক্ষিত এবং যুক্তিযুক্ত।' তিনি উল্লেখ করেন, 'এ ধরনের একটি অবস্থান গ্রহণ করলে সাময়িকভাবে আমাদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অবমাননাকর মনে হলেও শেষ পর্যন্ত মহত্ত্বের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।'

অবশেষে Realisation

অনেক আগে থেকেই দলের ভেতরে রিফর্মের গুন্জন চলছিল।ইশারা-ইংগিতে বিভিন্নজন বর্তমান নেতৃত্বের প্রথম সারির যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ(হয়তবা সেগুলো মিথ্যা) রয়েছে তাদের নিজ দায়িত্বে সড়ে যাওয়ার জন্য আওয়াজ তুলছিলেন। যুক্তি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের ভূমিকার কারনে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলার চেষ্টা করেছেন অনেকেই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইস্যু নিয়ে যখনি প্রশ্ন তোলা হত,এটাকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের থিওরি দিয়ে replace করা হত।

কামারুজ্জামান নিজেই অবশেষে স্বীকার করেছেন; জামায়াতের অনেকে মনে করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার বিষয়টি একসময় মিটমাট হয়ে যাবে। আমরা অনেকেই মনে করেছিলাম এটা একসময় এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। আমাদের অনেকের চিন্তার গণ্ডি অতিক্রম করে এটা একটা জ্বলন্ত ইস্যু হিসেবে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু না হলেও দল ও নেতৃত্বের ভাবমর্যাদা ধুলায় লুণ্ঠিত হয়েছে এবং জনমনে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছে।

কয়েক বছর আগে লন্ডনে বলা ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাকের কথারই প্রতিধ্বনিই শুনতে পাই কামারুজ্জামানের কথায়; 'পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনে বিরোধিতা করার মতো অতি স্পর্শকাতর কোনো অভিযোগ নেই। ব্যারিষ্টার রাজ্জাক আরো বলেন; "পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোন নজির নেই যে, স্বাধীনতার বিরোধীদের সে দেশের মানুষ ক্ষমতায় নির্বাচিত করেছে" কামারুজ্জামান আরো লিখেছেন, এটা স্বীকার করতেই হবে যে, বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন খুবই সম্ভাবনাময় আন্দোলন হওয়া সত্ত্বেও এই দুর্ভাগ্যজনক ও স্পর্শকাতর অভিযোগ আন্দোলনের রাজনৈতিক সাফল্য ও গ্রহণযোগ্যতার পথে বড় বাধার সৃষ্টি করে আছে।'

The Fact
সামগ্রিক বিবেচনায় নতুন কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ করা সময়ের অনিবার্য দাবি। আমরা যদি নতুন কর্মকৌশল গ্রহণে ব্যর্থ হই, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না বলেছেন জামায়াতের পরিক্ষীত এই নেতা।

রিফর্মের ইশতিহার

কামারুজ্জামান কি ধরেনর রিফর্ম হতে পারে তার কিছুটা বর্ণনা দিয়েছেন।তাঁর মতে;

১। বাংলাদেশের সংবিধান সামনে রেখে যে ধরনের সংগঠন হলে কোনো প্রশ্ন থাকবে না, সে ধরনের সংগঠন করতে হবে।

২। ছায়া মন্ত্রিসভা কনসেপ্ট গ্রহণ করতে হবে( বৃটিশ কনসেপ্ট)।

৩। বিশিষ্ট নাগরিক, প্রবীণ আলেম ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের নিয়ে দলের একটি অভিভাবক পরিষদ থাকবে।

৪। তিনবারের বেশি কেউ কেন্দ্রীয় সভাপতি বা জেলা সভাপতি থাকতে পারবে না।

৫। সব পদের ব্যবহার বাংলা পরিভাষায় হবে। (যেমন আমীরের জায়গায় সভাপতি হবে)

৬। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সব পেশার লোকদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।

৭। নির্বাচনে প্রথমে স্থানীয় সরকারব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।

৮। সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে গতিশীল করতে হবে।

৯। যুব ও ছাত্রদের সহায়তায় ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি দল, প্রয়োজনে ক্লাব গঠন করতে হবে।

১০। অমুসলিমদের সঙ্গে সামাজিক ও ওয়ার্কিং রিলেশন গড়ে তুলতে হবে।


The Challenge

লন্ডনস্থ সাপ্তাহিক The Muslim Post পত্রিকার Editor আলতাফ হোসেন জামায়তের রিফর্মে অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে বলেন; বাবা যেমন ছেলে বড় হলেও তাকে খোকা বলেই মনে করে,জামায়াতের নেতাদেরও এমনটি দেখা যায়।তারা আন্তরিকতার সাথেই মনে করেন; আমরা যদি চলে যাই জামায়াতের কি হবে?এই জামায়াতের অপেক্ষাকৃত যুব নেতৃত্ব সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে পারবেনা।

এটা সত্য, "বিতর্কিত"নেতাদের ত্যাগ তীতিক্ষার কারনে জামায়াত আজ এত দুরে এসেছে কিন্তু পরিবর্তন সময়ের দাবী।জামায়াতকে লিড করার মত অনেক চৌকুস নেতৃত্ব আজ তৈরি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন যাদের বিরুদ্ধে অন্তত স্বাধীনতা বিষয়ক বিতর্ক নেই। যে বিষয়টা কামারজ্জামান সাহেব বুঝেছেন অন্যদেরও বুঝার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন, তার ভাষায়; 'আমাদের অনেকের তো বয়সও হয়েছে। সরাসরি আন্দোলনে থাকলেই বা আমরা আর কতটা অবদান রাখতে পারব?

তারপরেও যে চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে হবে,কামারুজ্জামান তার লেখায় কিছুটা উল্লেখ করেছেন;

১। চিঠির এক জায়গায় কারাগারে আটক নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে কামারুজ্জামান বলেন, 'নির্মোহ ও নিরপেক্ষভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে।

২। নিজেকে সম্পৃক্ত করে চিন্তা করলে সমস্যার সমাধান হবে না।'

রিফর্ম করতে এই চ্যালেন্জগুলো মোকাবেলা করতেই হবে। অন্যথায় উনার চিঠিতে উল্লেখ করা প্রথম অপশন যা হবার হবে। আমরা যেমন আছি তেমনি থাকব। (বর্তমানে এই কৌশলই অবলম্বন করা হয়েছে।) যদি আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয় তাহলে তিনি নিজেই মন্তব্য করছেন, '"আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় প্রথমটা হচ্ছে নেতৃত্ব আঁকড়ে থাকা, হতবুদ্ধিতা এবং হতাশাবাদিতা। একটি গতিশীল আন্দোলন এ ধরনের পশ্চাৎমুখী অবস্থান গ্রহণ করতে পারে না।"

সর্বশেষ, কয়েকটি প্রশ্ন করে শেষ করতে চাই। জামায়াতের জটিল স্ট্রাকসার কি এই পরিবর্তন মেনে নিবে? পুরাতনকে পরিবর্তন করে সম্পূর্ন নতুন ব্রান্ডে জামায়াতের পথ চলা শুরু হলেও কি তারা জনগনের আস্থা ফিরে পাবে? নাকি দেশের মানুষ শত কষ্ট সহ্য করে হলেও পরিবারতান্ত্রিক,দুর্নিতীবাজদের দল ট্রেডিশনাল(৫বছর অন্তর
"দেখিনা এবার কি করে") আওয়ামীলিগ ও বিএনপি'র মাঝেই দেশের উন্নয়নে তাদের আশার প্রতিফলন দেখার স্বপ্ন দেখে যাবে? 














0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম