শহীদ শেরআলী গাজীর এই শতকের উত্তরসূরী শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ঘুমিয়ে আছেন শেরপুরের কুমরী বাজিতখিলায় তাঁর নিজের গড়া এতিমখানার পাশের মাটির বিছানায়। বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে গত ১১ এপ্রিল রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে ফাঁসির মঞ্চে হাসি মুখে শাহাদাতের মুত্যৃকে বরণ করেছেন ইসলামী আন্দোলনের এই বীর সেনানী। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর শহীদকে দাফনের জন্য কঠোর নিরাপত্তা তৈরি করে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকা থেকে শেরপুরের পথে রওনা দিলে গাড়ির বহরের সাথে মিডিয়া কর্মীরাও সামিল হয়েছিলেন।
কিন্তু সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে শেরপুরের প্রবেশ পথেই আটকে দিয়েছিলো। সরকারের বাড়াবাড়ির কারণে প্রিয়নেতাকে শেষবিদায় জানাতে পারেননি লাখো লাখো ভক্ত। ভক্তি-শ্রদ্ধা আর ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে শহীদের নামাজে জানাজায় শরীক হতে শেরপুরের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও গ্রাম এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ হাজির হয়েছিলেন শেরপুরে। কিন্তু তাদের আবেগকে গুলি, লাঠি আর জেল-জুলুমের রাষ্ট্রীয়ত্রাসের পদতলে পিষে ফেলা হয়েছে। তাদেরকে জানাজা নামাজের আশে-পাশে ভিড়তে দেয়া হয়নি। নিরীহ জনগণ পুলিশ বেষ্টনীর বাইরে রাতের আঁধারে যে যেখানে পারেন অবস্থান নিয়ে দূর থেকে শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন। সকালের সূর্যালোক দেখা দেয়ার সাথে সাথে পিপিলিকার মতো দলে দলে চারদিক থেকে ছুটে আসে বাঁধ ভাঙা মানুষ। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে বাজিতখিলার আকাশ-বাতাস। পরদিন বিবিসিসহ দেশ-বিদেশের অনেক মিডিয়ায় এ খবর প্রচারিত হয়।
এই প্রতিবেদক ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর গত ১ মে রাজধানীর কয়েকটি মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরির জন্য বাজিতখিলায় উপস্থিত হলে এলাকার এবং দূর-দূরান্ত থেকে কবর জিয়ারত করতে আসা মানুষ তুলে ধরেন তাদের দুঃখগাঁথা। সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের মধ্যে এ প্রতিবেদক ছাড়াও আরো যারা ছিলেন তারা হলেন, সাপ্তাহিক সোনার বাংলার বার্তা সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া, দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একটি জাতীয় অন লাইন নিউজ পোর্টালের চিফ রিপোর্টার সৈয়দ সাইফুল ইসলাম, জাতীয় পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার সামছুল আরেফীন। অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন আবদুল খালেক, কামরুল হাসান, মোস্তফা কামাল, ড্রাইভার সুলতান।
শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান শুধু একজন রাজনীতিবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদ ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন বড়মাপের সাংবাদিকও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি অবিভক্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচিত নির্বাহী সদস্য, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও বাংলা একাডেমির সদস্য ছিলেন। স্বাভাবিক কারণেই জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিক ও দেশের প্রথম কাতারের লেখক বুদ্ধিজীবীদের ছিলো তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ উষ্ণ সম্পর্ক। ১১ এপ্রিল কুমরী বাজিতখিলা গ্রামে মিডিয়া কর্মীদের প্রবেশ নিষেধ ছিলো। শুধু মিডিয়া কর্মী নয় শহীদের অসংখ্য আত্মীয়-স্বজনকেও জানাজায় শরীক হতে দেয়নি। এতে তাদের মনের মাঝে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, যেখান থেকে অনবরত যে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে সেই যন্ত্রণার উপশমের জন্যই প্রতিদিন তারা হাজির হচ্ছেন শহীদের কবরের পাশে। অশ্রুসিক্ত চোখে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করছেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের শাহাদাত কবুল করার জন্য। তাঁর রক্তের বিনিময়ে নিজের জন্য তারা কিছুই চান না। তাদের প্রাণের আকুতি স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ। ইসলামী আদর্শের বিজয়। মানুষের গোলামী মুক্ত হয়ে তারা শুধু একমাত্র মালিক মহান আল্লাহতায়ালার গোলামী করার মতো শাসন ব্যবস্থা চায়। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর কবর ঘিরে মানুষের ঢল নামে। জুমার নামাজ শেষে এমন একজন মানুষের দেখাও এই প্রতিবেদক পেলেন না যিনি কবর জিয়ারত না করে চলেন গেলেন। দলমত নির্বিশেষে সবাই একবাক্যে স্বীকার করলেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ছিলেন তাদের গর্ব।
পাশের উপজেলা নকলা থেকে এসেছেন আবদুস সুবহান (৬৫)। তিনি জানান, আমি কামারুজ্জামানের দলের কেউ না। তবে তাঁর বক্তৃতা আমার খুব ভালো লাগতো। শেরপুরের বিভিন্ন জনসভায় তাঁর বক্তৃতা শুনেছি। অনেক কষ্ট করে তাঁর জানাজা পড়তে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ কাছে আসতে দেয়নি। শেরপুরের পুলিশরা বুঝিয়ে বলেলও, ঢাকা থেকে যারা এসেছিলো তাদের আচরণে মনে হয়েছে ওরা মানুষ না। ওদের মনে কোনো দয়া-মায়া নেই। জানাজায় শরীক না হওয়ার কথা ভুলতেই আমি যখনই সময় পাই কবর জিয়ারত করতে আসি। চেষ্টা করি প্রতি শুক্রবারে জুমার নামাজ বাজিতখিলা এসে পড়তে। নামাজ শেষে কবর জিয়ারত করে বাড়ি যাই।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান প্রতিষ্ঠিত কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানা ও মাদরাসার প্রাক্তন ছাত্র ২৮ বছরের যুবক আলমগীর হোসাইন। তিনি এসেছেন ঝিনাইগাতি থেকে। আলমগীর জানান, আমি ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি। তারপর ঠাঁই হয়েছিলো এই এতিমখানায়। এতিমখানায় বাবা-মার স্নেহবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের মুহাম্মদ কামারুজ্জামান নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। আলমগীর হোসাইন জানান, আমি তাঁকে বাবার মতো শ্রদ্ধা করতাম। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। কিন্তু কামারুজ্জামানের এতিমখানায় ভর্তি হওয়ার পর তাঁর কাছ থেকেই বাবার আদর-স্নেহ পেয়েছি। তাঁর সাহায্য সহযোগিতায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিতে পেরেছি। আলমগীর জানান, তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিসে প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এসবই সম্ভব হয়েছে শহীদ কামারুজ্জামানের সহযোগিতা আর উৎসাহে।
আলমগীর হোসাইন আরো জানান, বর্তমানে এই এতিমখানায় ৩৬ জন এতিম শিশু আছে। মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফন ও জানাজা নামাজে তাদের কাউকে শরীক হতে দেয়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ সকালেই এতিমখানা খালি করে তাদেরকে বের করে দিয়েছিলো। দূরে দাঁড়িয়ে এতিম শিশুরা তাদের পিতাসম শ্রদ্ধেয় শহীদ কামারুজ্জামানের জন্য কেঁদে বুক ভাসিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে তিনি নিজেকে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সন্তান পরিচয় দিয়ে কফিনের কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কবর নামানোর আগে তিনি শহীদের মুখ দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, শহীদের মুখে রক্ত লেগেছিলো। আমি শহীদের রক্তের ঘ্রাণ পেয়েছি। তাঁর মুখে নূরের ঝলকানি দেখেছি। দূর থেকে এক যুবক মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মুখ দেখতে পেয়ে আবেগে জামার বোতাম খুলে চিৎকার করে বলেছে,‘ গুলি করো আমিও শহীদ হবো। আমার নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সাথে এক কবরে আমাকেও দাফন কর।’
শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের শেষ বিদায়ের এমন হাজারো স্মৃতি বুকে ধারণ করে আছেন তাঁর স্নেহধন্য মো. আলমগীর হোসাইন।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের চেয়ে ৯ মাসের ছোট আবদুস সালাম ( ৬২) এ প্রতিবেদককে জানান, ঢাকা থেকে বাজিতখিলায় এসেই কামারুজ্জামান তাঁর সাথে দেখা করতেন। তাঁর খোঁজ খবর নিতেন। আবদুস সালামের কাছে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এক সাথে বড় হয়েছি। তাঁকে আমি ছোট বেলা থেকে চিনি ও জানি। তাঁর বিরুদ্ধে সরকার যে অভিযোগ করছে সব মিথ্যা। তাঁর অপরাধ একটাই তিনি ছোটবেলা থেকেই ইসলামকে অনুসরণ করেছেন। মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। সবার ভালো চাইতেন। তাঁর সাধ্য সামর্থ্য অনুসারে মানুষকে সাহায্য করেছেন। মানুষকে হত্যা করা তো দূরের কথা তিনি কাউকে গালি দিয়েছেন, এমন ঘটনাও আমার মনে পড়ে না।
কেমন আছেন শহীদের শেরপুরের স্বজনরা
শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে তাঁর ভক্ত-অনুরক্ত বন্ধু-স্বজন। কামারুজ্জামানের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনজন বসবাস করেন শেরপুরে। শহীদ কামারুজ্জামান ছিলেন ভাইদের মধ্যে চতুর্থ। তিনি ছাড়া বাকী চার ভাই সবাই বেঁচে আছেন। বড় ভাই আমজাদ আলী (৭০) অসুস্থ। ছোট ভাইয়ের মৃত্যু শোকে তিনি বাকরুদ্ধ। মেজো ভাইয়ের নাম আলমাছ উদ্দিন (৬৫), তৃতীয় কফিল উদ্দিন, পঞ্চম নাজিরুজ্জামান (৬০)। ছোট ভাই নাজিরুজ্জামান ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এছাড়া শহীদ কামারুজ্জামানের ২ বোন আছেন। শেরপুরের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাদের বিয়ে হয়েছে। ভাই-বোনদের ছেলে-মেয়েরা প্রায় সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
কামারুজ্জামানের ভাইয়েরা জানান, সরকার তাঁকে (মুহাম্মদ কামারজ্জামানকে ) হত্যা করার মাধ্যমে শুধু আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি। শেরপুরের জনগণকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। শেরপুরের মানুষ তাঁকে কতটা ভালোবাসতো তাঁর প্রমাণ সর্বশেষ ২০০১ ও ২০০৮ সালের দুটি সাধারণ নির্বাচন। তিনি খুব অল্প ভোটের ব্যাবধানে হেরে গেলেও ধারণা করা হয় তিনিই প্রকৃত বিজয়ী। কারণ ঐ দুই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার ভোট কেন্দ্রগুলো দখল করে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। প্রশাসন নির্বিকার থাকার কারণে এর কোনো প্রতিকারও সম্ভব হয়নি। এত কিছুর পরও ২০০১ এর নির্বাচনে কামারুজ্জামান ৬৫,৪৯০ ভোট ( বিজয়ী আওয়ামী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৮৬,১০১)এবং ২০০৮ এর ডিজিটাল নির্বাচনে ১,১০,০৭০ ভোট পান (বিজয়ী আওয়ামী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১,৩৬,১২৭)। শেরপুরের মানুষ আজ শোকে স্তদ্ধ। সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ত্রাসের সৃষ্টি করে তাদেরকে দাবিয়ে রেখেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় গৌরবময় ভূমিকা পালনকারী পরিবারের মেয়েজামাই মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্বা সংসদের নির্বাচিত বর্তমান জেলা কমান্ডার-অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এ জি এম ’৭১ এর রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম হিরুর ছোট বোন মিসেস নুরুন্নাহার জনাব কামারুজ্জামানের সহধর্মিণী। আনোয়ার হোসেন মন্জু (সম্বন্ধী) স্বনামধন্য অনুবাদক, বাসসের সাবেক চিফ রিপোর্টার, সাবেক বার্তা সম্পাদক : দৈনিক বাংলার বাণী (শেখ ফজলুল হক মনি প্রতিষ্ঠিত ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম এম পি সম্পাদিত-এক সময়ে আওয়ামী লীগের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত), বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। আবুল কালাম আযাদ (শ্যালক) ২ বারের ইউ পি চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ছোট শ্যালক মনোয়ার হোসেন বাবুল একজন কৃষিবিদ ও সফল ব্যবসায়ী। শ্বশুর জনাব আজিজুর রহমান ১৯৭১ সালে কৃষি অধিদপ্তরে চাকরি করতেন, যুদ্ধের সময় অনেক মুক্তিযোদ্বাদের আশ্রয় দিতেন, খাবার দিতেন, সবরকমের সহযোগিতা করতেন। শেরপুরের সাধারণ মানুষের প্রশ্ন কামারুজ্জামান যদি সত্যি সত্যি মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুতর অপরাধে অপরাধী হতেন তাহলে কি ১৯৭৮ সালে এমন একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে বিয়ে করতে পারতেন।
কেমন আছেন সাক্ষীরা
কামারুজ্জামানের কবর জিয়ারত করতে সোহাগপুর থেকে এসেছিলেন জনৈক মাহমুদ। তিনি জানান, যাদের মিথ্যা সাক্ষীতে কামারুজ্জামানের ফাঁসি হয়েছে, তারা কেউ ভালো নেই। মিথ্যে আতঙ্ক সবসময় তাদেরকে তাড়া করছে। হাছেনা বানু বৃদ্ধ বয়সেও অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। থাকেনও অন্যের বাড়িতে। তিনি একা একা পথ চলতে গেলে বা একা ঘরে ঘুমাতে গেলে মনের অজান্তে চিৎকার করে ওঠেন। সব সময় আতঙ্কে থাকেন। একটি মিথ্যে ভয় সব সময় থাকে তাড়া করে। তার সবসময় মনে হয় কে যেন তাকে মারতে তেড়ে আসছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাত নম্বর সাক্ষী ছিলেন জালাল উদ্দিন। তিনিও শেরপুর জেলার আলোচিত বিধবাপল্লী সোহাগপুরের বাসিন্দা। জালাল উদ্দিন সম্পর্কে স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানান, জালাল তাকে বলেছেন, ‘জীবিকা অর্জনের জন্য মাঠে কাজ করতে যাব, সেটাতেও ভয়। আবার খাবার কিনতে বাজারে যাব, সেখানেও শঙ্কা থাকে- ওরা সুযোগ পেলেই হামলা করবে। এখন আমাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।’ এমন অজানা ভয় সব সময় তাকে তাড়া করে ফিরছে। প্রকৃত ঘটনা জানতে চাইলে ঐ সাংবাদিক বলেন, ‘কেউ তাদেরকে হুমকি দেয় না, বিরক্তও করে না, জামান সাহেবের সমর্থকরা বিচার আল্লাহর কাছে দিয়ে রেখেছে। হয় তো বিবেকের দংশনে অথবা মিথ্যে আতঙ্কে তারা আতঙ্কিত।
কবর জিয়ারত করতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অন্যতম সাক্ষী মোহন মুন্সী। মোহন মুন্সি ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা ও শ্বাসকষ্টসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে সব সময় মরণকে আহবান করছে। সে মাঝে মাঝেই চিৎকার করে বলে,‘আল্লাহ আমাকে নেয় না কেন?’ মোহন মুন্সীর শরীরে পচন ধরেছে। মোহন মুন্সির আপন ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে আজিজুর রহমান রন্জু নামের জনৈক ব্যক্তি বলেন, তার কাছ কিছুদিন আগে সে প্রাকৃতিক কাজ সারতে গিয়ে পা পিছলে কাঁচা পায়খানায় পড়ে গিয়েছিলো। তার প্রায় গলা পর্যন্ত ডুবে গিয়েছিলো। সমস্ত শরীরে ইনফেকশন হয়েছে সেখান থেকে পচাঁ পূজ বের হচ্ছে। দুর্গন্ধে কাছে যাওয়া যায় না।
জান্নাতি সুগন্ধের আঙিনা ছেড়ে
কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পাশে ঘুমিয়ে আছেন শহীদ কামারুজ্জামান। জান্নাতি এই আঙিনা ছেড়ে আমরা ঢাকার পথে রওনা দিয়েছি। এর কিছুক্ষণ পর ডা. তফাজ্জল হোসেনের কলে বেজে উঠলো বার্তা সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ ভূইয়ার মোবাইল। কান্না ভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, আপনারা তো জান্নাতের সুবাস নিয়ে আসছেন। শুধু ডা. তফাজ্জল নয়, শহীদ কামারুজ্জামানের লাখো ভক্তদের মতো আমরাও বিশ্বাস করি, শহীদরা মরে না। তারা জান্নাতের বুকে উড়ে বেড়ায় সবুজ রঙের পাখি হয়ে।
(হারুন ইবনে শাহাদাত, শেরপুর থেকে ফিরে, লেখক সাংবাদিক, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা)
0 comments: