কষ্টে শুকিয়ে যাওয়া এক সাগর
কত কষ্টে একটি সাগর শুকিয়ে যায় ?
প্রবাদ আছে – “ অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়” ।
বিশ্বজুড়ে স্বার্থপর মানুষদের কল্যানে প্রবাদটি একটু পাল্টে বলতে হচ্ছে – “ অপরিনামদর্শীরা যেদিকে চায়, সাগরও শুকিয়ে যায়” । আর আমরা অভাগাকুল তার শাস্তি ভোগ করি প্রতিবাদহীন ।শুধু রুষে ওঠে প্রকৃতি ।
১৯৮৫ সালের উড়াল সাগর, আকাশ থেকে তোলা ।
আকাশ থেকে ১৯৯৭ সালের দৃশ্য
হাকাশ থেকে তোলা ২০০৯ সালের উড়াল সাগর ।
কত দুঃখ নিয়ে একটি সাগর শুকিয়ে যায় ?
পৃথিবী নামের এই গ্রহটির পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়ঙ্কর একটি ট্রাজিক সত্য এটি ।
অরাল নামের সাগর এক । আমরা ডেকেছি “উড়াল সাগর” বলে । এককালের সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজাখাস্তান আর উজবেকিস্তানের মাঝখানে টলটলে পানিতে ভরা একটি লেক ।এতো বিশাল যে সাগর নামেই তাকে ডাকার যোগ্য সে । তার “অরাল” নামটির অর্থ “দ্বীপের সাগর” (Sea of Islands) । আসলেই মুক্তোর মালার মতো ১৫৩৪ টি দ্বীপ ছিলো এর বুকে একদিন । আজ জল-স্থল সব একাকার ।
আটষট্টি হাযার বর্গকিলোমিটার (২৬,৩০০ বর্গমাইল) এলাকা নিয়ে একদিন অরাল ছিলো পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম লেক । “আমু-দরিয়া” আর “সির-দরিয়া” নদীর বয়ে আনা পানিতে তৈরী হয়েছিলো তার টলটলে শরীর । বসতি ছিলো তীরে , ছিলো জেলেদের হৈ-হৈ । শিশুদের হুড়োহুড়ি । বাতাসে ছিলো মাছের আঁশটে গন্ধ ।বন্দরে বন্দরে ছিলো মাছ ধরা জাহাজের আনাগোনা ।
আজ নেই – আজ তার বুকে শুধু ধূঁ-ধূঁ বালুচর । রূপোলী জলে আর চিকচিক করে ওঠেনা মাছেদের বুক । ভাসেনা পাল তোলা নাও ।
উড়াল সাগরের বুকে হাহাকার নিয়ে পড়ে থাকা কালের স্বাক্ষী । কাজাখাস্তান ।
আমু-দরিয়া আর সির-দরিয়া’র ভালোবাসা থেকে লোভী মানুষেরা তাকে বঞ্ছিত করে রেখেছে । প্রিয়া অদর্শনের কষ্টে শুকিয়ে গেছে সে । এখোন সেখানে কেবল মৃত্যুই খেলা করে যায় । বাতাস তার ভারী হয়ে আছে দূর্গন্ধে । একদিন তার নরোম বুক চিরে , ঢেউ তুলে যে জলযান সাঁতরে বেড়াতো এ বন্দর থেকে সে বন্দরে আজ তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ধুঁ-ধুঁ বালুর বুকে এক রিক্ত হাহাকার নিয়ে ।কালের স্বাক্ষী, মানুষের অপরিনামর্দীতার স্বাক্ষী হয়ে ।
১৯৬০ সাল থেকে উড়াল সাগরের ধুঁকে ধুঁকে মরার শুরু । মাছেদের আঁশটে গন্ধে আসা ঝকঝকে “রুবল” নয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের যে চাই কড়কড়ে “ডলার” । সাদা সোনা চাই তাদের, হোয়াইট গোল্ড । হোয়াইট গোল্ড তুলো চাই তাদের, তুলো । বিশ্বজুড়ে এর চাহিদার শেষ নেই । তাই সোভিয়েত মাটিতে ফলাতে হবে তুলোর গাছ ।লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমি জুড়ে যে তুলোর চাষ শুরু করেছে সরকার সেই ১৯৪০ সাল থেকে তাকে তো টিকিয়ে রাখতে জোগাতে হবে জীবন-ধারিনী পানি । তাই আমু-দরিয়া আর সির-দরিয়া’র পানি বইলো অন্যখাতে ।
[পাঠক, আমাদের সর্বনাশ – ফারাক্কা, টিপাইমুখ ইত্যাদির কথা একবার ভাবুন !]
তাদের স্রোত ধারা ঠেলে দেয়া হলো উজবেকিস্তানের উষর মরুভূমিতে গড়ে তোলা “কটন ফিল্ডে”র জন্যে সেচ প্রকল্পে । সোভিয়েত সরকার বললেন, উজবেকিস্তানের মরুভূমিতে আমরা ফসল ফলাবো – ফলাবো ধান, শষ্য, তরমুজ আর তুলো । যা সোভিয়েত মানুষকে খাদ্য যোগাবে, যোগান দেবে ডলার নামের সোনার হরিন । সোভিয়েত প্রভুরা খুশি । কিন্তু প্রকৃতি হেসেছিলো সেদিন অজান্তে ।
নদীর স্রোত আর গড়ালো না উড়াল সাগরের বুকে । ভালোবাসার উষ্ণ জলের পথ চেয়ে চেয়ে সাগরের বুক গেল শুকিয়ে । পানিতে টান ধরায় লবনের ঘনত্ব গেলো বেড়ে । ২০০৭ সালে এসে উড়াল সাগর শুকিয়ে তার আয়তনের ১০ শতাংশে এসে দাঁড়ালো । একদা সাগরের বুকে গড়ে উঠলো আর এক মরুভূমি । যেটুকু পানি একদা সাগরের পরিচয় ধরে রেখেছিলো তাদের লবনাক্ততা বেড়ে গেলো ভয়ঙ্কর ভাবে। প্রতি লিটারে তার পরিমান গিয়ে দাঁড়ালো ১০০ গ্রামে যেখানে সাধারন সাগরের পানিতে এর পরিমান ৩৫ গ্রামের কম । যেটুকু ছিলো মৎস সম্পদ তা ও শেষ হয়ে গেল । জনস্বাস্থ্যের হুমকি হয়ে দাঁড়ালো আবহাওয়া । গ্রীষ্মকালের গরম উঠলো চরমে, শীত হলো আরো প্রলম্বিত – আরো তীব্র ।মানুষ ভুগতে থাকলো মরুভুমিতে সৃষ্ট বালুঝড়ে । শ্বাসকষ্ট বাড়লো তাদের, বিশেষ ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হলো মানুষ । শিশু মৃত্যুর হার বাড়লো । ফসল গেলো ধংশ হয়ে আবহাওয়া আর জমির অতিরিক্ত লবনক্ততার কারনে । ৪০ হাযারের মতো জেলে বেকার হয়ে গেলো । বন্ধ হয়ে গেলো মাসকারাত ( এক ধরনের উভচর রডেন্ট ) থেকে আহরিত “ফার” শিল্প । সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমান দাঁড়ালো ৮০০ মিলিয়ন পাউন্ডে (তৎকালীন হিসাব)।
এর মধ্যেই বিশাল লেকটি শুকিয়ে শুকিয়ে মরুভূমি জেগে উঠলো আর ভাগ হয়ে গেল চারটি ছোট্ট ছোট্ট পানির ধারায় – উত্তর উড়াল সাগর , দক্ষিন উড়াল সাগরের পূর্ব এবং পশ্চিম বেসিন এবং এর উত্তর আর দক্ষিনের মাঝখানে আরো ক্ষুদ্র একটি জলাশয় হিসেবে । ২০০৯ সালে দক্ষিন উড়াল সাগরের পূব অংশটি মুছে গেলো পৃথিবীর মানচিত্র থেকে আর পশ্চিম অংশটি সরু একটি নালী হয়ে কোনও মতে টিকিয়ে রাখলো দক্ষিন উড়াল সাগরের নাম । আর বেঁচে থাকা উত্তর উড়াল সাগরের সর্বোচ্চ্ গভীরতা ঠেকলো গিয়ে মাত্র ১৩৮ ফুটে ।
হ্যা, আজ উজবেকিস্তান বিশ্বের প্রথম সারির তুলা রফতানীকারক একটি দেশ ।তুলোর তৈরী সুতোয় হয়তো মানুষের আব্রু ঢেকেছে কিন্তু প্রকৃতি যে উলঙ্গ হয়ে গেলো তার খোঁজ কে রাখে !
তুলা চাষের জন্যে সোভিয়েত সরকারকে সেই ১৯৪০ সাল থেকেই সেচ ব্যবস্থার কথা ভাবতে হয়েছিলো । কিন্তু সেচের খালগুলি ছিলো খুব অপরিপক্ষ ভাবে নির্মিত । এ থেকে পানি শুষে নিত মাটি, রোদের তাপে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যেতো । এই সেচ প্রকল্পের অর্ন্তভূক্ত মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম কারাকোরাম ক্যানালের ৩০ থেকে ৭৫% পানিই এভাবে অপচয় হয়ে যেতো । এইসব কারনেই সোভিয়েত কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হয়েছিলো বিকল্প কিছু । তাই ১৯৬০ সালে গৃহীত হয় নতুন ইরিগেশান প্রোজেক্ট যাতে আমু-দরিয়া আর সির-দরিয়ার পানিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সেচের খালগুলিতে ।
প্রতি বছর ২০ থেকে ৬০ ঘন কিলোমিটার পানি উড়াল সাগরের পরিবর্তে গিয়ে পড়লো সেচের খালগুলিতে । ফলে হতভাগী উড়াল সাগরের পানির উচ্চতা হ্রাসের পরিমান বেড়ে যেতে থাকলো হু হু করে । প্রতি বছর এখোন এই উচ্চতা হ্রাসের হার ৩১ থেকে ৩৫ ইঞ্চি । কেবলমাত্র ১৯৮০ সালের মধ্যেই উড়াল সাগর থেকে যে পানি হারিয়ে গেলো তার পরিমান লেক “ইরি” আর লেক “অন্টারিও” তে যতো পানি আছে তাদের সমান ।
হয়তো প্রয়োজনেই সোভিয়েত কর্তৃপক্ষকে প্রকৃতির বিরূদ্ধে যেতে হয়েছিলো কিন্তু তার জন্যে তাকে খেসারত দিতে হয়নি কম । আবহাওয়া চরমপন্থী হয়ে গেছে সেখানে । উজবেকিস্তানে আজ কেবল ১২% সেচের খাল ঠিকমতো পানি বয়ে নিতে পারে মাত্র ।
আর তাই মানুষ সৃষ্ট পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিবেশ বিপর্যয়ের উদাহরন এটি ।
১৯৬৪ সালে তাই হয়তো সোভিয়েত হাইড্রোপ্রোজেক্ট ইনিস্টিটিউট এর আলেক্সান্দর আসারীন আঙ্গুল তুলে দেখিয়েছেন - "It was part of the five-year plans, approved by the council of ministers and the Politburo. Nobody on a lower level would dare to say a word contradicting those plans, even if it was the fate of the Aral Sea.”
পরিবেশ বিপর্যয়ের এই পরিনতি জানতেন সোভিয়েত কর্তৃপক্ষও । সাফাই গাইতে কিছু কিছু সোভিয়েত বিশেষজ্ঞরা বলে বসলেন “ অরাল সী ইজ আ ন্যাচারাল এরর ।”
কেউ একজন আগ বাড়িয়ে বললেন , “it is obvious to everyone that the evaporation of the Aral Sea is inevitable.”
তার পরেও অবশ্য সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ উড়াল সাগরকে জীবিত রাখতে তাদের পাঁচশালা সেচ পরিকল্পনায় একে “রি-ফিল” করার প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছিলেন । কিন্তু রাশান মূল ভুখন্ডের মানুষদের বিরোধীতা আর খরচের কথা বিবেচনা করে এই প্রোজেক্ট ১৯৮৬ সালে বাতিল করে দেয়া হয় ।
পরের ইতিহাস - ১৯৯১ সালে উজবেকিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে । ২০০২ সালে উজবেকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের ( ইউকে) রাষ্ট্রদুত ক্রেইগ ম্যূরে সমস্ত ব্যাপারটিকে বর্ননা করেছেন এভাবে, উজবেকিস্তানের প্রধান নিয়ন্ত্রক ইসলাম কারিমভ জমিকে শোষন করার সোভিয়েত ষ্টাইলের অর্থনীতি এবং দর্শন থেকে দূরে সরে থাকতে পারতেন স্বাধীনতার সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে কিন্তু তিনি তা না করে সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছেন কেবলমাত্র নিজের ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করতে ।
উড়াল সাগর শুকিয়ে যাওয়ার জন্যে তিনি দায়ী করেছেন কারিমভের “কটন পলিসি”কে । বলেছেন, সরকার যে সেচের জন্যে এতো বিশাল পরিকল্পনা নিয়েছে তা বিশাল একটি অপচয়, কারন সে জল তুলো চাষের জমিতে পৌঁছানোর আগেই বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে । এখানে কোনও “ক্রপ রোটেশান” এর ব্যবস্থা নেই । এইসব পতিত জমিতে তুলো চাষের জন্যে যে পরিমান রাসায়নিক সার আর কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে তা ধুঁয়ে গিয়ে পড়ছে শুকিয়ে যাওয়া উড়াল সাগরে ।এতে নষ্ট হয়ে গেছে পানি, হচ্ছে পরিবেশ দূষন আর জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি । গণযুদ্ধের পূর্ববর্তী যুক্তরাষ্ট্রের দাস-প্রথার সাথে তুলনা করে তিনি আরো বলেছেন, এখানে জবরদস্তি শ্রম ব্যবহৃত হয়েছে অথচ সমুদয় লাভের টাকা পাচার হয়েছে ক্ষমতাধারীদের দ্বারা ।জনগণ যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেছে আজেো ।
আর অন্যদিকে কাজাখাস্তানে তুলো চাষটি ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে ।
দিন দিন শুকিয়েছে উড়াল সাগরটি । সব হিসেব নিকেশ শেষে টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের । কাজাখাস্তানের দিক থেকে বাঁধ তৈরী করে উত্তর উড়াল সাগরটিকে কিছুটা হলেও জলবতী করা গেছে ।২০০৫ সালে শেষ হওয়া এই বাঁধের কল্যানে ২০০৮ সালের মধ্যে এতে পানির উচ্চতা বেড়েছে ৭৯ ফুট । কমেছে লবনাক্ততা । দেখা যাচ্ছে মাছেদের রূপোলী ঝিলিক ।
উজবেকিস্তানের টনক নড়েনি । তাই শুকিয়ে যাওয়া দক্ষিন উড়াল সাগরটি তার অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলে তার বুকে জন্ম দিয়েছে এক বিশাল হাহাকার – “অরালকুম মরুভূমি” ।
যদিও বুকের নীচে তিরতির করে বয়ে চলা “গ্রাউন্ড ওয়াটার” তার তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি । তেমন করে ভেজাতে পারেনি তার শুকিয়ে যাওয়া বুক ।পামির মালভুমি আর তিয়ানশান পর্বতমালায় জন্ম নেয়া এই ভূগর্ভস্থ জল সারাটা পথ বেয়ে গোপনে গোপনে তার বুকের তলদেশে খানিকটা অশ্রূ জমা করে রেখেছে শুধু । এইটুকু সম্বল নিয়ে বেঁচে আছে সে আজো এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ নিয়ে।
প্রকৃতি যে নিঠুর প্রতিশোধ নিতে পারে উড়াল সাগরের উদাহরন তাই ই । এটাকে বলা হয় "one of the planet's worst environmental disasters" । মানুষ বুঝেছে কি করেছে তারা ।
নিজেদের প্রয়োজনেই মানুষকে আবার ভাবতে হয়েছে । স্বার্থ জড়িত, তাই ১৯৯৪ সালে কাজাখাস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান আর কিরঘিজিস্তান এক বৈঠকে সম্মত হলেন যে তারা তাদের বাজেটের ১% ব্যয় করবেন সাগরটিকে ফিরিয়ে আনার খাতে । ২০০০ সালের মার্চে হেগ এ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ার্ল্ড ওয়াটার ফোরাম এ ইউনেষ্কো উপস্থাপন করলেন তাদের " Water-related vision for the Aral Sea basin for the year 2025 " এ দলিলটি । কাজের কাজ কিছু হলোনা । সমালোচনা হলো এই বলে , এটি একটি অবাস্তব কিছু এবং এতে লেকের কাছাকাছি জনগণের বিশেষ করে উজবেক এলাকার জনগণের স্বার্থের দিকে সুনজর দেয়া হয়নি ।
তবুও ২০০৬ সালের মধ্যে বিশ্ব-ব্যাংকের সহায়তায় চলা “রেস্টোরেশান প্রজেক্ট” এর সুবাদে উত্তর উড়াল সাগর অনেকটা সামলে উঠতে পেরেছে । যা হওয়ার কথা ছিলো তা হয়নি । কারন এলাকা ভিত্তিক জলবন্ঠনের হিস্যা আলাদা করে দিয়েছে তাদের । বাঁধের জলে গড়ে তোলা হাইড্রো-ইলেক্ট্রিক এনার্জী নিয়ে আঞ্চলিক টানাটানি হয়েছে কম নয় । তাই ভেস্তে গেছে সব । কথা উঠেছে, কেবল শাসক শ্রেনীই এই প্রোজেক্টের নকশা প্রনয়নকারী যেখানে ভুক্তভোগী জনগণের মতামত নেই কোথাও ।
রূদ্র আবহাওয়ার কারনে মমিতে পরিনত কার্প। ২০০৫ এর আগষ্টে তোলা ।
এর পরেও আছে আরো কিছু । নিজেদের ঘাড়ে জোয়াল পড়লে তখন টানতেই হয় । তার আগে নড়েচড়ে বসেনা কেউ ।
২০১০ সালের জুলাইয়ের শেষ হপ্তায় স্মরনকালের বৃহৎ বন্যায় যখোন ভাসলো পাকিস্তান তখন আরো নড়েচড়ে বসলো পাকিস্তানের ইসলামাবা ভিত্তিক Sustainable Development Policy Institute (SPDI) নামের থিঙ্ক ট্যাংকের লোকজন । আগে থেকেই তারা মধ্য এশিয়াতে বৈরী আবহাওয়ার কারনে সৃষ্ট সমস্যাগুলি যেমন জলবন্ঠন, আবহাওয়া, অর্থনীতি আর জ্বালানী ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করছিলেন ।উড়াল সাগরের শুকিয়ে যাওয়াতে এই এলাকাতে অর্থনৈতিক আর আবহাওয়াগত যে বৈষম্য তৈরী হয়েছে তা খতিয়ে দেখছিলেন তারা ।তারা দেখলেন, উড়াল সাগর উড়ে যাওয়াতে যে বৈরী আবহাওয়া তৈরী হয়ে গেছে তা কোনও রাজনৈতিক সীমানা মানেনি । তার করাল থাবা পড়েছে মধ্য এশিয়াতেও ।এর উদাহরন টেনে আন্তর্জাতিক আইন আর সুস্থ্য চিন্তার আলোকে তারা ইস্যু তুললেন, এ এলাকার জল সম্পদের সুষম বন্টনের ।তারা বোঝালেন , উড়াল সাগরকে আবার জলবতী করা ছাড়া মধ্য এশিয়াতে শান্তি আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবেনা । তারা নিজের দেশ পাকিস্তানের কথা মাথায় রেখেই এতোদিন বলে এসেছিলেন কথাগুলো । বন্যার কারনে তা আরো সোচ্চার হয়েছে মাত্র । মাত্রা পেয়েছে ভিন্ন । দক্ষিন উড়াল সাগরকে “রি-ফীল” করার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন তারা ।
কে জানে, কবে আবার শুকিয়ে যাওয়া উড়ালের বুক চিরে ভাসবে জেলেদের নাও । উড়ন্ত পাখীরা ছুঁয়ে যাবে উড়ালের জল ।
লেখক :আহমেদ জী এস
0 comments: