শহীদ রফিকুল ইসলাম (চুয়াডাঙ্গা-১০.১১.২০১৩)


কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকালে দর্শনা রেলবাজার এলাকা থেকে ছাত্রশিবির একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি কিছুদূর যাওয়ার পর মিছিলের পেছন থেকে পুলিশ হামলা চালায়। এ সময় শিবিরকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টার সময় পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই রফিকুল ইসলাম নিহত হয়।

চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ থেকে এফ এ আলমগীর : চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পুলিশের নির্মম গুলীতে নিহত ইসলামী ছাত্রশিবির কর্মী শহীদ রফিকুল ইসলামকে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টায় সরোজগঞ্জ ফুটবল মাঠে জানাযা শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে বেদনাবিধূর পরিবেশে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় দামুড়হুদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবিবকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। শিবিরের ৩ দিনের কর্মসূচির ১ম দিন গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামায শেষে মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।


উলে¬খ্য, গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিবিরের উদ্যোগে বিকাল ৩টায় দর্শনায় আয়োজিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশের অতর্কিত গুলীবর্ষণে শিবিরের সাথী চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষে মেধাবী ছাত্র রফিকুল ইসলাম (১৮) নিহত হয়। নিহত রফিকুলের লাশ গতকাল শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে সরোজগঞ্জ ফুটবল মাঠে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযাপূর্ব বিশাল সমাবেশে বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা শামিম রেজা ডালিম, জেলা জামায়াতের আমীর আনোয়ারুল হক মালিক, কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি এম জিনারুল ইসলাম, ওলামা পরিষদের আহ্বায়ক মাওলানা আবুজ্বার ফারুকী, জামায়াত নেতা ডাঃ আহমদ জালাল, জেলা বিএনপির নেতা ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, মেহেরপুর জেলা শিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ঝিনাইদহ জেলা শিবির সভাপতি শেখ শাহজাহান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সেক্রেটারি আসাদুল্লাহ, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা আমীর আব্দুর রউফ, শিবিরের কেন্দ্রীয় মাদরাসা বিষয়ক সম্পাদক মহিউদ্দীন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মতিন শেখ, শহীদ রফিকের পিতা মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ছোট ভাই রানা, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি রুহুল আমিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা ক্ষমতাসীন দলের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার এর পৃষ্ঠপোষকতায় জনগণের অর্থে পালিত পুলিশ বাহিনী এখন পুলিশ লীগে পরিণত হয়েছে। যে কারণে গতকাল দর্শনায় শান্তিপূর্ণ মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে কোনো প্রকার উস্কানি ছাড়ায় অর্ধ কিলোমিটার পথ তেড়ে এনে পাখির মতো গুলী করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জেলা আমীর আনোয়ারুল হক মালিক বলেন-বর্তমান পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ আমাদের সাথে কথা বলতে বিব্রতবোধ করেন। ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার এসপিকে জনগণের টাকার বেতন না নিয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে আহ্বান জানান। শহীদের গর্বিত পিতা দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্য সমবেত জনতার কাছে প্রশ্ন করেন তার একমাত্র আশার প্রদীপটি কোন অপরাধে শহীদ করা হলো? এ সময় সমবেত জনতা ঢুকরে কেঁদে ওঠে। তিনি তার পুত্র ও পরিবারের জন্য সকলের দোয়া চান। পরে জামায়াতের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মতিন শহীদ পরিবারের দায়িত্ব নেবার ঘোষণা দেন। এ সময় শহীদের একমাত্র ভাই রানা বারবার চিৎকার করে মূর্ছা যাচ্ছিল। জানাযা শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে রফিকুলের লাশ তার গ্রামের বাড়ি বোয়ালিয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে বেদনাবিধূর পরিবেশে দাফন করা হয়। এ সময় শহীদের মা ও নিকটজনদের কান্নায় বাতাস ভাফর হয়ে ওঠে।

গতকালের এ ঘটনায় দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আহসান হাবিবকে প্রত্যাহার করা হয়েছে । এ ব্যাপারে ওসির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাকে ঐদিন সকালেই চুয়াডাঙ্গা কোর্টে বদলি করা হয়েছে।

এ দিকে রফিকের হত্যাকা-ের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি, তবে পুলিশ এবং পরিবার উভয়ের পক্ষ থেকে একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছিল।

শহীদ রফিকের পরিচয় : চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সরোজগঞ্জ বোয়ালিয়া গ্রামের দরিদ্র ভ্যান চালক দোলোয়ার হোসেনের ২ পুত্র সন্তানের মধ্যে শহীদ রফিক ছিল বড়। সংসারের দরিদ্রতার কারণে ছোট ভাই রানা লেখা পড়া করতে না পেরে টাইলস্ মিস্ত্রির কাজ করে ও পিতা ভ্যান চালিয়ে সংসার ও রফিকের পড়ার খরচ চালাত। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অর্থনীতির ছাত্র রফিক এলাকায় অত্যন্ত ভদ্র ও পরোপকারী হিসেবে পরিচিত ছিল। পুলিশের গুলীতে দরিদ্র পিতার একমাত্র আশার প্রদীপ সন্তানকে হারিয়ে পিতা তাই বারবার ঢুকরে কেঁদে উঠছিলেন।


দর্শনা হল্টস্টেশনের অদূরে তার মাথার পেছন থেকে গুলি লাগে। গুলিতে খুলি উপড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। লাল রক্তে ঘটনাস্থল লাল হয়ে ওঠে।


মিছিলটি যখন ফিরে যাচ্ছিলো তখন পেছন থেকে পুলিশ গুলি ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ছাত্রশিবিরকর্মী রফিকুল ইসলাম। সে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সরোজগঞ্জ বোয়ালিয়ার দেলোয়ার শেখের ছেলে। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলো সে। রফিকুলসহ তার এলাকার আরও বেশ কয়েকজন গতকাল দুপুরের পর দর্শনার উদ্দেশে রওনা হয়। মিছিলে যোগ দেয়। মিছিল করে তার আর বাড়ি ফেরা হলো না।


ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের মুক্তির দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ছিলো বিক্ষোভ মিছিল। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেল তিনটার দিকে দর্শনা রেলবাজার এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছুলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় শিবিরের নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়াপাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দর্শনা হল্টস্টেশন এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে শিবিরকর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। বেশ কিছু সময় ধরে পুলিশের ওপর ইটপাটখেল ছোড়ার এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম ঘটে। এ সময় শিবিরকর্মীদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলিবর্ষণ করতে থাকে। শিবিরকর্মীদের ওপর পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। হল্টস্টেশনের রেলগেটে গুলিবিদ্ধ হয় মিছিলকারী ছাত্রশিবিরকর্মী রফিকুল নিহত হয়।


বৃহস্পতিবার কেদারগঞ্জ জেলা বিএনপি একাংশের কার্যালয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে জেলা বিএনপির জরুরিসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দর্শনায় ইসলামী ছাত্র শিবিরের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণে তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সভা থেকে আগামী রোববার শিবির কর্তৃক আহুত হরতালে পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপি একাংশের সভাপতি মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম