ঐ ক্ষেপেছে পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্ সে সামাল-সামাল তাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
( হাবিলদার মেজর মার্চ্চের হুকুম করিল,----কুইক মার্চ্চ ! )
. লেফ্ ট্! রাইট্ ! লেফ্ ট্ !!
. লেফ্ ট্! রাইট্ ! লেফ্ ট্ !!
( সৈন্যগণ গাহিতে গাহিতে মার্চ্চ করিতে লাগিল )
ঐ ক্ষেপেছে পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্ সে সামাল সামাল তাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
( হাবিলদার মেজর ----- লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! )
সাব্বাস্ ভাই ! সাব্বাস্ দিই, সাব্বাস্ তোর শম্ শেরে |
পাঠিয়ে দিলি দুষ্ মনে সব যম-ঘর একদম্-সে রে !
. বল্ দেখি ভাই, বল হাঁ রে,
দুনিয়ায় কে ডর্ করে না তুর্কীর তেজ্ তলোয়ারে ?
( লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ ! )
. খুব কিয়া ভাই খুব কিয়া !
বুজ্ দিল ঐ দুশ্ মন্ সব বলকুল্ সাফ হো গিয়া !
. খুব কিয়া ভাই খুব কিয়া,
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো হো !
দস্যুগুলোয় সামলাতে যে এমনি দামাল কামাল চাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
( হাবিলদার মেজর : ----- সাবাস্ সিপাই ! লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ ! )
শির হতে পাঁওতক্ ভাই লাল-লালে-লাল খুন মেখে
. রণ-ভীতুদের শান্তি-বাণী শুন্ বে কে ?
. পিন্ডারীদের খুন-রঙীন
. নোখ-ভাঙা এই নীল সঙীন
. তৈয়ার হেয়্ হর্দ্দম ভাই ফার্ তে যিগর্ শত্রুদের!
. হিংশুক-দল ! জোর তুলেছি শোধ্ তোদের !
. সাবাস্ জোয়ান্ ! সাবাস্ !
. ক্ষীণ-জীবি ঐ জীবগুলোকে পায়ের তলেই দাবাস্-----
. এম্ নি ক’রে রে-----
. এম্ নি জোরে রে------
. ক্ষীণ-জীবি ঐ জীবগুলোকে পায়ের তলেই দাবাস্ !------
. ঐ চেয়ে দ্যাখ্ আস্ মানে আজ রক্ত-রবির আভাস |-----
. সাবাস্ জোয়ান্ ! সাবাস্ !!
( লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ ! )
. হিংশুটে’ ঐ জীবগুলো ভাই নাম ডুবালে সৈনিকের,
তারা তারা আজ নেস্ত-নাবুদ, আমরা মোটেই হই নি জের !
. পরের মুলুক লুট ক’রে খায় ডাকাত তারা ডাকাত !
তাই তাদের তরে বরাদ্দ ভাই আঘাত শুধু আঘাত !
. কি বল ভাই শ্যাঙাত ?
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো হো !!
দনুজ দলে দ’ল্ তে দাদা এম্ নি দামাল কামাল চাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
( হাবিলদার মেজর : ----রাইট্ হুইল্ ! লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ !
সৈন্যগণ ডানদিকে মোড় ফিরিল | )
আজাদ মানুষ বন্দী ক’রে , অধীন ক’রে স্বাধীন দেশ,
কুল্ মুলুকের কুষ্টি ক’রে জোর দেখালে ক’দিন বেশ,
মোদের হাতে তুর্কী নাচন নাচ্ লে তাধিন্ তাধিন্ শেষ !
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো হো !!
বদ্--নসিবের বরাত খারাব বরাদ্দ তাই ক’রলে কি না আল্লায়,
পিশাচগুলো প’ড়্ ল এসে পেল্লায় এই পাগলাদেরই পাল্লায় !
. এই পাগলাদেরই পাল্লায় !!
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো---------
ওদের কল্লা দেখে আল্লা ডরায়, হল্লা শুধু হল্লা,
. ওদের হল্লা শুধু হল্লা,
এক মুর্গির জোর গায়ে নেই, ধ’র্ তে আসেন তুর্কী--তাজী,
. মর্দ্দ গাজী মোল্লা !------
. হাঃ ! হাঃ ! হাঃ !
. হেসে নাড়ীই ছেঁড়ে বা !
. হা হা হাঃ! হাঃ ! হাঃ !
. (হাবিলদার-মেজরঃ--- সাবাস্ সিপাই ! লেফট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ !
সাবাস্ সিপাই ! ফের বল ভাই | )
ঐ ক্ষেপেছে পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্ সে সামাল সামাল তাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
( হাবিলদার--মেজর ----লেফ্ ট্ হুইল ! য়্যাজয়ু ওয়্যার্ | ---- রাইট্ হুইল !-----
লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ ! )
( সৈন্যদের আঁখির সামনে অস্ত-রবির আশ্চর্য রঙের খেলা ভাসিয়া উঠিল | )
. দেখ্ চ কি দোস্ত্ অমন ক’রে ? হৌ হৌ হৌ !
সত্যি তো ভাই ! সন্ধ্যেটা আজ দেখতে যেন সৈনিকেরই বৌ |
. শহীদ সেনার টুক্ টুকে বৌ লাল-পিরাহাণ- পরা,
. স্বামীর খুনের ছোপ-দেওয়া, তায় ডগ্ ডগে আন্ কোরা !------
. না না না,---- কল্ জে’ যেন টুকরো-ক’রে কাটা
. হাজার তরুণ শহীদ বীরের, ----শিউরে উঠে গা’টা !
. আস্ মানের ঐ সিং-দরজায় টাঙিয়েছে কোন্ কসাই !
দেখতে পেলে এক্ষুণি গ্যে এই ছোরাটা কল্ জেতে তার বসাই !
. মুন্ডুটা তার খসাই !
গোস্বাতে আর পাই নে ভেবে কি যে করি দশাই !
( হাবিলদার মেজরঃ ----সাবাস্ সিপাই ! লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ট্ ! )
[ ঢালু পার্ব্বত্য পথ, সৈন্যগণ বুকের পিঠের নিহত ও আহত সৈন্যদের ধরিয়া
সন্তর্পণে নামিল ! ]
. আহা কচি ভাইরা আমার রে !
এমন কাঁচা জানগুলো, খান্ খান্ ক’রেছে কোন্ সে চামার রে ?
. আহা কচি ভাইগুলো আমার রে !!
[ সামনে উপত্যকা ! হাবিলদার--মেজর : ---- লেফ্ ট্ ফর্ম্ম্ |
সৈন্য-বাহিনীর মুখ হঠাৎ বামদিকে ফিরিয়া গেল !
হাবিলদার-মেজর : ---ফরওয়ার্ড ! লেফ্ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ ! ]
. আস্ মানের ঐ আঙ্ রাখা
. খুন-খারাবীর রং-মাখা
. কি খুবসুরৎ বাঃ রে বা !
. জোর বাজা ভাই কাহার্ বা !
. হোক্ না ভাই এ কার্ বালা ময়দান----
. আমরা যে গাই সাচ্চারই জয় গান !
. হোক্ না এ তোর কারবালা ময়দান !!
. হুর্ রো হো
. হুর্ রো-------
[ সাম্ নে পার্ব্বত্য পথ----হঠাৎ যেন পথ হারাইয়া ফেলিয়াছে | হাবিলদার-মেজর
পথ খুঁজতে লাগিল | হুকুম দিয়া গেল----“ মার্ক টাইম”! সৈন্যগণ এক স্থানেই
দাঁড়াইয়া পা আছড়াইতে লাগিল----]
. দ্রাম্ ! দ্রাম ! দ্রাম !
. লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ !
. দ্রাম্ ! দ্রাম্ ! দ্রাম্ !
আস্ মানে ঐ ভাসমান যে মস্ত দুটো রং-এর তাল,
একটা নিবিড় নীল-সিয়া আর একটা খুবই গভীর লাল,-----
. বুঝলে ভাই ! ঐ নীল সিয়াটা শত্রুদের !
. দেখ্ তে নারে কারুর ভালো,
তাইতো কালো রক্ত-ধারার বইছে শিরায় স্রোত ওদের |
. হিংস্র ওরা হিংস্র পশুর দল!
. গৃধ্নু ওরা, লুব্ধ ওদের লক্ষ্য অসুর বল-----
. হিংস্র ওরা হিংস্র পশুর দল !
. জালিম ওরা অত্যাচারী !
. সার জেনেছে সত্য যাহা হত্যা তারই !
. জালিম ওরা অত্যাচারী !
. সৈনিকের এই গৈরিকে ভাই-----
. জোর অপমান ক’রলে ওরাই,
তাই তো ওদের মুখ কালো আজ, খুন যেন নীল জল !-------
. ওরা হিংস্র পশুর দল !
. ওরা হিংস্র পশুর দল !!
[ হাবিলদার-মেজর পথ খুঁজিয়া ফিরিয়া অর্ডার দিল | -----ফরওয়ার্ড !
লেফ্ ট্ হুইল---সৈন্যগণ আবার চলিতে লাগিল-----
লেফ্ ট্ ! রাইট্ লেফ্ ট্ ! ]
. সাচ্চা ছিল সৈন্য যারা শহীদ হ’ল মরে !
. তোদের মতন পিঠ ফেরে নি প্রাণটা হাতে ক’রে,------
. ওরা শহীদ হ’ল ম’রে !
. পিট্ নি খেয়ে পিঠ যে তোদের টিট্ হ’য়েছে ! কেমন !
. পৃষ্টে তোদের বর্শা বেঁধা, বীর সে তোরা এমন !
. মুর্দ্দারা সব যুদ্ধে আসিস্ ! যা যা !
খুন দেখেছিস্ বীরের ? হা দেখ্ টক্ টকে লাল কেমন গরম তাজা !
. মুর্দ্দারা সব যা যা !!
[বলিয়াই কটিদেশ হইতে ছোরা খুলিয়া হাতের রক্ত লইয়া দেখাইল ]
. এঁরাই বলেন হবেন রাজা !
. আরে যা যা ! উচিত সাজা
. তাই দিয়েছে শক্ত ছেলে কামাল ভাই !
[ হাবিলদার-মেজর : ---- সাবাস সিপাই ! ]
. এই ত চাই ! এই ত চাই !
থাকলে স্বাধীন সবাই আছি, নেই ত নাই, নেই ত নাই !
. এই ত চাই !!
[ কতকগুলি লোক অশ্রু পূর্ণ নয়নে এই দৃশ্য দেখিবার জন্য ছুটিয়া আসিতে
ছিল, তাহাদের দেখিয়া সৈন্যগণ আরও উত্তেজিত হইয়া উঠিল ! ]
.
. মার দিয়া ভাই মার্ দিয়া !
. দুশ্ মন্ সব হার্ গিয়া !
. কিল্লা ফতে হো গিয়া !
পর্ ওয়া নেহি , যা’নে দো ভাই যো গিয়া !
. কিল্লা ফতে হো গিয়া !
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো হো !
[হাবিলদার-মেজর : ------সাবাস্ জোয়ান ! লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! ]
. জোর্’সে চলো পা মিলিয়ে,
. গা হেলিয়ে,
. এম্ নি ক’রে হাত দুলিয়ে !
. দাদ্ রা তালে ‘এক দুই তিন’ পা মিলিয়ে
. ঢেউ-এর মতন যাই !
আজ স্বাধীন এ দেশ ! আজাদ মোরা বেহেশ্ তও না চাই !
. আর বেহেশ্ তও না চাই !!
[ হাবিলদার--মেজর :--- সাবাস্ সিপাই !! ফের বল ভাই ! ]
ঐ ক্ষেপেছে পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্ সে সামাল সামাল তাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
[ সৈন্যদল এক নগরের পার্শ্ব দিয়া চলিতে লাগিল | নগর-বাসিনীরা ঝরকা হইতে মুখ বাড়াইয়া
এই মহান দৃশ্য দেখিতেছিল ; তাহাদের চোখ-মুখ আনন্দাশ্রুতে আপ্লুত | আজ বধুর মুখের
বোর্ কা খুলিয়া পড়িয়াছে | ফুল ছড়াইয়া হাত দুলাইয়া তাহারা বিজয়ী বীরদের অভ্যর্থনা
করিতেছিল | সৈন্যগণ চীত্কার করিয়া উঠিল | ]
. ঐ শুনেছিস্ ? ঝর্ কাতে সব বল্ ছে ডেকে বৌ-দলে,
. “কে বীর তুমি ? কে চলেছ চৌদলে?”
চিনিস্ নে কি ? এমন বোকা বোনগুলি সব !----কামাল এ যে কামাল !!
. পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে ! ভাই যে তোদের !
. তা না হ’লে কার হবে আর রৌশন এমন জামাল ?
. কামাল এ যে কামাল !
. উড়িয়ে দেবো পুড়িয়ে দেবো ঘর-বাড়ী সব সামাল !!
. ঘর-বাড়ী সব সামাল !!
. আজ আমাদের খুন ছুটেছে, হোশ ঠুটেছে |
. ডগ্ মগিয়ে জোশ উঠেছে |
. সামনে থেকে পালাও !
. শোবহরত দাও নওরাতি আজ ! হর্ ঘরে দীপ জ্বালাও !
. সাম্ নে থেকে পালাও !
. যাও ঘরে দীপ জ্বালাও !!
[ হাবিলদার-মেজর : ------ লেফ্ ট ফর্ম্ম ! লেফ্ ট্ রাইট্ ! লেফ্ ট্ !------
ফরোয়ার্ড !------
বাহিনীর মুখ হঠাৎ বামদিকে ফিরিয়া গেল | পার্শ্বেই পরিখার সারি | পরিখা-ভর্তি নিহত সৈন্যের
দল পচিতেছে এবং কতকগুলি অ-সামরিক নগরবাসী তাহা ডিঙ্গাইয়া ডিঙ্গাইয়া চলিতেছে ! ]
. ইস্ ! দেখেছিস্ ! ঐ কা’রা ভাই সামলে চলেন পা,
. ফ’স্ কে মরা আধ-মরাদের মাড়িয়ে ফেলেন বা !
. ও তাই শিউরে ওঠে গা !
. হাঃ হাঃ হাঃ !
. ম’রলো যে সে ম’রেই গেছে,
. বাঁচ্ লো যারা রইল বেঁচে !
. এই ত জানি সোজা হিসাব ! দুঃখ কি তার আঁ ?
. মরায় দেখে ডরায় এরা ! ভয় কি মরায় ? বাঃ !
. হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ !
[ সন্মুখে সঙ্কীর্ণ ভগ্ন সেতু | হাবিলদার মেজর অর্ডার দিলেন-----“ফর্ম্ম ইনটু সিঙ্গল লাইন !”
এক এক জন করিয়া বুকের পিঠের নিহত ও আহতদের চাপিয়া ধরিয়া অতি সন্তর্পনে
“শ্লো মার্চ্চ” করিয়া পার হইতে লাগিল | ]
. সত্যি কিন্তু ভাই !
যখন মোদের বক্ষে বাঁধা ভাইগুলির এই মুখের পানে চাই-----
. কেমন সে এক ব্যথায় তখন প্রাণটা কাঁদে যে সে !
. কে যেন দুই বজ্র-হাতে চেপে ধরে কল্ জেখানা পেশে !
নিজের হাজার ঘায়েল জখম ভুলে’ তখন ডুক্ রে কেন কেঁদেও ফেলি
. শেষে !
. কে যেন ভাই কল্ জে খানা পেশে !!
. ঘুমোও পিঠে, ঘুমোও বুকে, ভাইটি আমার, আহা !!
. অস্ত-পারের দেশ পারায়ে বহুৎ সে দূর তোদের ঘরের রাহা !
. ঘুমোও এখন ঘুমোও ঘুমোও ভাইটি ছোট আহা !
. মরণ-বধূর লাল রাঙা বর ! ঘুমো !
. আহা, এমন চাঁদমুখে তোর কেউ দিল না চুমো !
. হতভাগা রে !
. ম’রেও যে তুই দিয়ে গেলি বহুৎ দাগা রে !
. না জানি কোন্ ফুট্ তে-চাওয়া মানুষ-কুড়ির হিয়ায় !
তরুণ জীবন এম্ নি গেল, একটি রাতও পেলিনে রে বুকে কোনো প্রিয়ায়
. তরুণ খুনের তরুণ শহীদ ! হতভাগা রে !
. ম’রেও যে তুই দিয়ে গেলি বহুৎ দাগা রে !
তাই যত আজ লিখ্ নে-ওয়ালা তোদের মরণ, ফূর্ত্তি--সে জোর লেখে
. এক লাইনে দশ হাজারের মৃত্যু কথা ! হাসি রকম দেখে !
. ম’রলে কুকুর ওদের, ওরা শহীদ-গাথার বই লেখে !
. খবর বেরোয় দৈনিকে,
. আর একটি খথায় দুঃখ জানান, “ জোর ম’রেছে দশটা হাজার
. সৈনিকে!”
. আঁখির পাতা ভিজলো কি না কোনো কালো চোখের,
. জান্ লো না হায় এ-জীবনে ঐ সে তরুণ দশটি হাজার লোকের !
. প’চে মরিস্ পরিখাতে , মা-বোনেরাও শুনে বলে ‘বাহা’ !
. সৈনিকেরই সত্যিকারের ব্যথায় ব্যথী কেউ কি রে নেই ? আহা !-----
. আয় ভাই তোর বৌ এলো ঐ সন্ধ্যা মেয়ে রক্ত চেলী পরে,
. আঁধার-শাড়ী প’রবে এখন প’শ্ বে যে তোর গোরের বাসর--ঘরে !----
. ভাব্ তে নারি, গোরের মাটি ক’রবে মাটি এ মুখ কেমন ক’রে------
. সোনা মানিক ভাইটি আমার ওরে !
. বিদায়-বেলায় আরেকটিবার দিয়ে যা ভাই চুমো !
. অনাদরের ভাইটি আমার ! মাটীর মায়ের কোলে এবার ঘুমো !!
[ নিহত সৈন্যদের নামাইয়া রাখিয়া দিয়া সেতু পার হইয়া আবার জোর মার্চ্চ করিতে করিতে
তাহাদের রক্ত গরম হইয়া উঠিল | ]
. ঠিক ব’লেছ দোস্ত তুমি !
. চোস্ত কথা ! আয় দেখি তোর হস্ত চুমি !
. মৃত্যু এরা জয় ক’রেছে কান্না কিসের ?
. আব্-জম্-জম্ আন্ লে এরা, আপনি পিয়ে কল্ সী বিষের !
. কে ম’রেছে ? কান্না কিসের ?
. বেশ ক’রেছে !!
. দেশ বাঁচাতে আপ্ নারি জান শেষ ক’রেছে !!
. বেশ করেছে !!
. শহীদ ওরাই শহীদ !
. বীরের মতন প্রাণ দিয়েছে খুন ওদেরি লোহিত !
. শহীদ ওরাই শহীদ !!
[ এইবার তাহাদের তাম্বু দেখা গেল | মহাবীর আনোয়ার পাশা বহু সৈন্য সামন্ত ও সৈনিকের
আত্মীয়-স্বজন লইয়া বিজয়ী বীরদের অভ্যর্থনা করিতে আসিতেছেন দেখিয়া সৈন্যগণ আনন্দে
আত্মহারা হইয়া “ডবল মার্চ্চ” করিতে লাগিল | ]
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো হো !!
. ভাই-বেরাদর পালাও এখন ! দূর্ রহো ! দূর রহো !!
. হুর্ রো হো ! হুর্ রো হো !
[ কামাল পাশাকে কোলে লইয়া নাচিতে লাগিল | ]
. হৌ হৌ হৌ ! কামাল জিতা রও !
. কামাল জিতা রও !
. ওকে আসে ? আনোয়ার ভাই ?-----
. আনোয়ার ভাই ! জানোয়ার সব সাফ্ !!
. জোর নাচো ভাই! হর্দ্দম্ দাও লাফ্ !
. আজ জানোয়ার সব সাফ্ !
. হুর্ রো হো ! হুর্ রো হো !!
সব-কিছ্ আব্ দূর্ রহো ! -------হুর্ রো হো ! হুর্ রো হো !!
রণ জিতে জোর মন মেতেছে !---- সালাম সবায় সালাম !-----
. নাচ্ না থামা রে !
জখ্ মী ঘায়েল ভাইকে আগে আস্তে নামা রে !
. নাচ্ না থামা রে !
[ আহতদের নামাইতে নামাইতে ]
. কে ভাই ? হাঁ, হাঁ, সালাম !
-----ঐ শোন্ শোন্ সিপাহ্-সালার কামাল-ভাই-এর কালাম !
. [ সেনাপতির অর্ডার আসিল ]
. “সাবাস্ ! থামো ! হো হো !
. সাবাস্ ! হল্ট্! এক ! দো !!”
[এক নিমেষে সমস্ত কলরোল নিস্তব্ধ হইয়া গেল ! তখনো কিন্তু তারায় তারায় যেন ঐ বিজয়-
গীতির হারা-সুর বাজিয়া বাজিয়া ক্রমে ক্ষীণ হইতে ক্ষীণ তর হইয়া মিলিয়া গেল-----]
ঐ ক্ষেপেছে পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই !
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্ সে সামাল সামাল তাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
. হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্ সে সামাল-সামাল তাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
( হাবিলদার মেজর মার্চ্চের হুকুম করিল,----কুইক মার্চ্চ ! )
. লেফ্ ট্! রাইট্ ! লেফ্ ট্ !!
. লেফ্ ট্! রাইট্ ! লেফ্ ট্ !!
( সৈন্যগণ গাহিতে গাহিতে মার্চ্চ করিতে লাগিল )
ঐ ক্ষেপেছে পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্ সে সামাল সামাল তাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
( হাবিলদার মেজর ----- লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! )
সাব্বাস্ ভাই ! সাব্বাস্ দিই, সাব্বাস্ তোর শম্ শেরে |
পাঠিয়ে দিলি দুষ্ মনে সব যম-ঘর একদম্-সে রে !
. বল্ দেখি ভাই, বল হাঁ রে,
দুনিয়ায় কে ডর্ করে না তুর্কীর তেজ্ তলোয়ারে ?
( লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ ! )
. খুব কিয়া ভাই খুব কিয়া !
বুজ্ দিল ঐ দুশ্ মন্ সব বলকুল্ সাফ হো গিয়া !
. খুব কিয়া ভাই খুব কিয়া,
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো হো !
দস্যুগুলোয় সামলাতে যে এমনি দামাল কামাল চাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
( হাবিলদার মেজর : ----- সাবাস্ সিপাই ! লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ ! )
শির হতে পাঁওতক্ ভাই লাল-লালে-লাল খুন মেখে
. রণ-ভীতুদের শান্তি-বাণী শুন্ বে কে ?
. পিন্ডারীদের খুন-রঙীন
. নোখ-ভাঙা এই নীল সঙীন
. তৈয়ার হেয়্ হর্দ্দম ভাই ফার্ তে যিগর্ শত্রুদের!
. হিংশুক-দল ! জোর তুলেছি শোধ্ তোদের !
. সাবাস্ জোয়ান্ ! সাবাস্ !
. ক্ষীণ-জীবি ঐ জীবগুলোকে পায়ের তলেই দাবাস্-----
. এম্ নি ক’রে রে-----
. এম্ নি জোরে রে------
. ক্ষীণ-জীবি ঐ জীবগুলোকে পায়ের তলেই দাবাস্ !------
. ঐ চেয়ে দ্যাখ্ আস্ মানে আজ রক্ত-রবির আভাস |-----
. সাবাস্ জোয়ান্ ! সাবাস্ !!
( লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ ! )
. হিংশুটে’ ঐ জীবগুলো ভাই নাম ডুবালে সৈনিকের,
তারা তারা আজ নেস্ত-নাবুদ, আমরা মোটেই হই নি জের !
. পরের মুলুক লুট ক’রে খায় ডাকাত তারা ডাকাত !
তাই তাদের তরে বরাদ্দ ভাই আঘাত শুধু আঘাত !
. কি বল ভাই শ্যাঙাত ?
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো হো !!
দনুজ দলে দ’ল্ তে দাদা এম্ নি দামাল কামাল চাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
( হাবিলদার মেজর : ----রাইট্ হুইল্ ! লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ !
সৈন্যগণ ডানদিকে মোড় ফিরিল | )
আজাদ মানুষ বন্দী ক’রে , অধীন ক’রে স্বাধীন দেশ,
কুল্ মুলুকের কুষ্টি ক’রে জোর দেখালে ক’দিন বেশ,
মোদের হাতে তুর্কী নাচন নাচ্ লে তাধিন্ তাধিন্ শেষ !
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো হো !!
বদ্--নসিবের বরাত খারাব বরাদ্দ তাই ক’রলে কি না আল্লায়,
পিশাচগুলো প’ড়্ ল এসে পেল্লায় এই পাগলাদেরই পাল্লায় !
. এই পাগলাদেরই পাল্লায় !!
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো---------
ওদের কল্লা দেখে আল্লা ডরায়, হল্লা শুধু হল্লা,
. ওদের হল্লা শুধু হল্লা,
এক মুর্গির জোর গায়ে নেই, ধ’র্ তে আসেন তুর্কী--তাজী,
. মর্দ্দ গাজী মোল্লা !------
. হাঃ ! হাঃ ! হাঃ !
. হেসে নাড়ীই ছেঁড়ে বা !
. হা হা হাঃ! হাঃ ! হাঃ !
. (হাবিলদার-মেজরঃ--- সাবাস্ সিপাই ! লেফট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ !
সাবাস্ সিপাই ! ফের বল ভাই | )
ঐ ক্ষেপেছে পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্ সে সামাল সামাল তাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
( হাবিলদার--মেজর ----লেফ্ ট্ হুইল ! য়্যাজয়ু ওয়্যার্ | ---- রাইট্ হুইল !-----
লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ ! )
( সৈন্যদের আঁখির সামনে অস্ত-রবির আশ্চর্য রঙের খেলা ভাসিয়া উঠিল | )
. দেখ্ চ কি দোস্ত্ অমন ক’রে ? হৌ হৌ হৌ !
সত্যি তো ভাই ! সন্ধ্যেটা আজ দেখতে যেন সৈনিকেরই বৌ |
. শহীদ সেনার টুক্ টুকে বৌ লাল-পিরাহাণ- পরা,
. স্বামীর খুনের ছোপ-দেওয়া, তায় ডগ্ ডগে আন্ কোরা !------
. না না না,---- কল্ জে’ যেন টুকরো-ক’রে কাটা
. হাজার তরুণ শহীদ বীরের, ----শিউরে উঠে গা’টা !
. আস্ মানের ঐ সিং-দরজায় টাঙিয়েছে কোন্ কসাই !
দেখতে পেলে এক্ষুণি গ্যে এই ছোরাটা কল্ জেতে তার বসাই !
. মুন্ডুটা তার খসাই !
গোস্বাতে আর পাই নে ভেবে কি যে করি দশাই !
( হাবিলদার মেজরঃ ----সাবাস্ সিপাই ! লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ট্ ! )
[ ঢালু পার্ব্বত্য পথ, সৈন্যগণ বুকের পিঠের নিহত ও আহত সৈন্যদের ধরিয়া
সন্তর্পণে নামিল ! ]
. আহা কচি ভাইরা আমার রে !
এমন কাঁচা জানগুলো, খান্ খান্ ক’রেছে কোন্ সে চামার রে ?
. আহা কচি ভাইগুলো আমার রে !!
[ সামনে উপত্যকা ! হাবিলদার--মেজর : ---- লেফ্ ট্ ফর্ম্ম্ |
সৈন্য-বাহিনীর মুখ হঠাৎ বামদিকে ফিরিয়া গেল !
হাবিলদার-মেজর : ---ফরওয়ার্ড ! লেফ্ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ ! ]
. আস্ মানের ঐ আঙ্ রাখা
. খুন-খারাবীর রং-মাখা
. কি খুবসুরৎ বাঃ রে বা !
. জোর বাজা ভাই কাহার্ বা !
. হোক্ না ভাই এ কার্ বালা ময়দান----
. আমরা যে গাই সাচ্চারই জয় গান !
. হোক্ না এ তোর কারবালা ময়দান !!
. হুর্ রো হো
. হুর্ রো-------
[ সাম্ নে পার্ব্বত্য পথ----হঠাৎ যেন পথ হারাইয়া ফেলিয়াছে | হাবিলদার-মেজর
পথ খুঁজতে লাগিল | হুকুম দিয়া গেল----“ মার্ক টাইম”! সৈন্যগণ এক স্থানেই
দাঁড়াইয়া পা আছড়াইতে লাগিল----]
. দ্রাম্ ! দ্রাম ! দ্রাম !
. লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! লেফ্ ট্ !
. দ্রাম্ ! দ্রাম্ ! দ্রাম্ !
আস্ মানে ঐ ভাসমান যে মস্ত দুটো রং-এর তাল,
একটা নিবিড় নীল-সিয়া আর একটা খুবই গভীর লাল,-----
. বুঝলে ভাই ! ঐ নীল সিয়াটা শত্রুদের !
. দেখ্ তে নারে কারুর ভালো,
তাইতো কালো রক্ত-ধারার বইছে শিরায় স্রোত ওদের |
. হিংস্র ওরা হিংস্র পশুর দল!
. গৃধ্নু ওরা, লুব্ধ ওদের লক্ষ্য অসুর বল-----
. হিংস্র ওরা হিংস্র পশুর দল !
. জালিম ওরা অত্যাচারী !
. সার জেনেছে সত্য যাহা হত্যা তারই !
. জালিম ওরা অত্যাচারী !
. সৈনিকের এই গৈরিকে ভাই-----
. জোর অপমান ক’রলে ওরাই,
তাই তো ওদের মুখ কালো আজ, খুন যেন নীল জল !-------
. ওরা হিংস্র পশুর দল !
. ওরা হিংস্র পশুর দল !!
[ হাবিলদার-মেজর পথ খুঁজিয়া ফিরিয়া অর্ডার দিল | -----ফরওয়ার্ড !
লেফ্ ট্ হুইল---সৈন্যগণ আবার চলিতে লাগিল-----
লেফ্ ট্ ! রাইট্ লেফ্ ট্ ! ]
. সাচ্চা ছিল সৈন্য যারা শহীদ হ’ল মরে !
. তোদের মতন পিঠ ফেরে নি প্রাণটা হাতে ক’রে,------
. ওরা শহীদ হ’ল ম’রে !
. পিট্ নি খেয়ে পিঠ যে তোদের টিট্ হ’য়েছে ! কেমন !
. পৃষ্টে তোদের বর্শা বেঁধা, বীর সে তোরা এমন !
. মুর্দ্দারা সব যুদ্ধে আসিস্ ! যা যা !
খুন দেখেছিস্ বীরের ? হা দেখ্ টক্ টকে লাল কেমন গরম তাজা !
. মুর্দ্দারা সব যা যা !!
[বলিয়াই কটিদেশ হইতে ছোরা খুলিয়া হাতের রক্ত লইয়া দেখাইল ]
. এঁরাই বলেন হবেন রাজা !
. আরে যা যা ! উচিত সাজা
. তাই দিয়েছে শক্ত ছেলে কামাল ভাই !
[ হাবিলদার-মেজর : ---- সাবাস সিপাই ! ]
. এই ত চাই ! এই ত চাই !
থাকলে স্বাধীন সবাই আছি, নেই ত নাই, নেই ত নাই !
. এই ত চাই !!
[ কতকগুলি লোক অশ্রু পূর্ণ নয়নে এই দৃশ্য দেখিবার জন্য ছুটিয়া আসিতে
ছিল, তাহাদের দেখিয়া সৈন্যগণ আরও উত্তেজিত হইয়া উঠিল ! ]
.
. মার দিয়া ভাই মার্ দিয়া !
. দুশ্ মন্ সব হার্ গিয়া !
. কিল্লা ফতে হো গিয়া !
পর্ ওয়া নেহি , যা’নে দো ভাই যো গিয়া !
. কিল্লা ফতে হো গিয়া !
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো হো !
[হাবিলদার-মেজর : ------সাবাস্ জোয়ান ! লেফ্ ট্ ! রাইট্ ! ]
. জোর্’সে চলো পা মিলিয়ে,
. গা হেলিয়ে,
. এম্ নি ক’রে হাত দুলিয়ে !
. দাদ্ রা তালে ‘এক দুই তিন’ পা মিলিয়ে
. ঢেউ-এর মতন যাই !
আজ স্বাধীন এ দেশ ! আজাদ মোরা বেহেশ্ তও না চাই !
. আর বেহেশ্ তও না চাই !!
[ হাবিলদার--মেজর :--- সাবাস্ সিপাই !! ফের বল ভাই ! ]
ঐ ক্ষেপেছে পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্ সে সামাল সামাল তাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
[ সৈন্যদল এক নগরের পার্শ্ব দিয়া চলিতে লাগিল | নগর-বাসিনীরা ঝরকা হইতে মুখ বাড়াইয়া
এই মহান দৃশ্য দেখিতেছিল ; তাহাদের চোখ-মুখ আনন্দাশ্রুতে আপ্লুত | আজ বধুর মুখের
বোর্ কা খুলিয়া পড়িয়াছে | ফুল ছড়াইয়া হাত দুলাইয়া তাহারা বিজয়ী বীরদের অভ্যর্থনা
করিতেছিল | সৈন্যগণ চীত্কার করিয়া উঠিল | ]
. ঐ শুনেছিস্ ? ঝর্ কাতে সব বল্ ছে ডেকে বৌ-দলে,
. “কে বীর তুমি ? কে চলেছ চৌদলে?”
চিনিস্ নে কি ? এমন বোকা বোনগুলি সব !----কামাল এ যে কামাল !!
. পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে ! ভাই যে তোদের !
. তা না হ’লে কার হবে আর রৌশন এমন জামাল ?
. কামাল এ যে কামাল !
. উড়িয়ে দেবো পুড়িয়ে দেবো ঘর-বাড়ী সব সামাল !!
. ঘর-বাড়ী সব সামাল !!
. আজ আমাদের খুন ছুটেছে, হোশ ঠুটেছে |
. ডগ্ মগিয়ে জোশ উঠেছে |
. সামনে থেকে পালাও !
. শোবহরত দাও নওরাতি আজ ! হর্ ঘরে দীপ জ্বালাও !
. সাম্ নে থেকে পালাও !
. যাও ঘরে দীপ জ্বালাও !!
[ হাবিলদার-মেজর : ------ লেফ্ ট ফর্ম্ম ! লেফ্ ট্ রাইট্ ! লেফ্ ট্ !------
ফরোয়ার্ড !------
বাহিনীর মুখ হঠাৎ বামদিকে ফিরিয়া গেল | পার্শ্বেই পরিখার সারি | পরিখা-ভর্তি নিহত সৈন্যের
দল পচিতেছে এবং কতকগুলি অ-সামরিক নগরবাসী তাহা ডিঙ্গাইয়া ডিঙ্গাইয়া চলিতেছে ! ]
. ইস্ ! দেখেছিস্ ! ঐ কা’রা ভাই সামলে চলেন পা,
. ফ’স্ কে মরা আধ-মরাদের মাড়িয়ে ফেলেন বা !
. ও তাই শিউরে ওঠে গা !
. হাঃ হাঃ হাঃ !
. ম’রলো যে সে ম’রেই গেছে,
. বাঁচ্ লো যারা রইল বেঁচে !
. এই ত জানি সোজা হিসাব ! দুঃখ কি তার আঁ ?
. মরায় দেখে ডরায় এরা ! ভয় কি মরায় ? বাঃ !
. হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ !
[ সন্মুখে সঙ্কীর্ণ ভগ্ন সেতু | হাবিলদার মেজর অর্ডার দিলেন-----“ফর্ম্ম ইনটু সিঙ্গল লাইন !”
এক এক জন করিয়া বুকের পিঠের নিহত ও আহতদের চাপিয়া ধরিয়া অতি সন্তর্পনে
“শ্লো মার্চ্চ” করিয়া পার হইতে লাগিল | ]
. সত্যি কিন্তু ভাই !
যখন মোদের বক্ষে বাঁধা ভাইগুলির এই মুখের পানে চাই-----
. কেমন সে এক ব্যথায় তখন প্রাণটা কাঁদে যে সে !
. কে যেন দুই বজ্র-হাতে চেপে ধরে কল্ জেখানা পেশে !
নিজের হাজার ঘায়েল জখম ভুলে’ তখন ডুক্ রে কেন কেঁদেও ফেলি
. শেষে !
. কে যেন ভাই কল্ জে খানা পেশে !!
. ঘুমোও পিঠে, ঘুমোও বুকে, ভাইটি আমার, আহা !!
. অস্ত-পারের দেশ পারায়ে বহুৎ সে দূর তোদের ঘরের রাহা !
. ঘুমোও এখন ঘুমোও ঘুমোও ভাইটি ছোট আহা !
. মরণ-বধূর লাল রাঙা বর ! ঘুমো !
. আহা, এমন চাঁদমুখে তোর কেউ দিল না চুমো !
. হতভাগা রে !
. ম’রেও যে তুই দিয়ে গেলি বহুৎ দাগা রে !
. না জানি কোন্ ফুট্ তে-চাওয়া মানুষ-কুড়ির হিয়ায় !
তরুণ জীবন এম্ নি গেল, একটি রাতও পেলিনে রে বুকে কোনো প্রিয়ায়
. তরুণ খুনের তরুণ শহীদ ! হতভাগা রে !
. ম’রেও যে তুই দিয়ে গেলি বহুৎ দাগা রে !
তাই যত আজ লিখ্ নে-ওয়ালা তোদের মরণ, ফূর্ত্তি--সে জোর লেখে
. এক লাইনে দশ হাজারের মৃত্যু কথা ! হাসি রকম দেখে !
. ম’রলে কুকুর ওদের, ওরা শহীদ-গাথার বই লেখে !
. খবর বেরোয় দৈনিকে,
. আর একটি খথায় দুঃখ জানান, “ জোর ম’রেছে দশটা হাজার
. সৈনিকে!”
. আঁখির পাতা ভিজলো কি না কোনো কালো চোখের,
. জান্ লো না হায় এ-জীবনে ঐ সে তরুণ দশটি হাজার লোকের !
. প’চে মরিস্ পরিখাতে , মা-বোনেরাও শুনে বলে ‘বাহা’ !
. সৈনিকেরই সত্যিকারের ব্যথায় ব্যথী কেউ কি রে নেই ? আহা !-----
. আয় ভাই তোর বৌ এলো ঐ সন্ধ্যা মেয়ে রক্ত চেলী পরে,
. আঁধার-শাড়ী প’রবে এখন প’শ্ বে যে তোর গোরের বাসর--ঘরে !----
. ভাব্ তে নারি, গোরের মাটি ক’রবে মাটি এ মুখ কেমন ক’রে------
. সোনা মানিক ভাইটি আমার ওরে !
. বিদায়-বেলায় আরেকটিবার দিয়ে যা ভাই চুমো !
. অনাদরের ভাইটি আমার ! মাটীর মায়ের কোলে এবার ঘুমো !!
[ নিহত সৈন্যদের নামাইয়া রাখিয়া দিয়া সেতু পার হইয়া আবার জোর মার্চ্চ করিতে করিতে
তাহাদের রক্ত গরম হইয়া উঠিল | ]
. ঠিক ব’লেছ দোস্ত তুমি !
. চোস্ত কথা ! আয় দেখি তোর হস্ত চুমি !
. মৃত্যু এরা জয় ক’রেছে কান্না কিসের ?
. আব্-জম্-জম্ আন্ লে এরা, আপনি পিয়ে কল্ সী বিষের !
. কে ম’রেছে ? কান্না কিসের ?
. বেশ ক’রেছে !!
. দেশ বাঁচাতে আপ্ নারি জান শেষ ক’রেছে !!
. বেশ করেছে !!
. শহীদ ওরাই শহীদ !
. বীরের মতন প্রাণ দিয়েছে খুন ওদেরি লোহিত !
. শহীদ ওরাই শহীদ !!
[ এইবার তাহাদের তাম্বু দেখা গেল | মহাবীর আনোয়ার পাশা বহু সৈন্য সামন্ত ও সৈনিকের
আত্মীয়-স্বজন লইয়া বিজয়ী বীরদের অভ্যর্থনা করিতে আসিতেছেন দেখিয়া সৈন্যগণ আনন্দে
আত্মহারা হইয়া “ডবল মার্চ্চ” করিতে লাগিল | ]
. হুর্ রো হো !
. হুর্ রো হো !!
. ভাই-বেরাদর পালাও এখন ! দূর্ রহো ! দূর রহো !!
. হুর্ রো হো ! হুর্ রো হো !
[ কামাল পাশাকে কোলে লইয়া নাচিতে লাগিল | ]
. হৌ হৌ হৌ ! কামাল জিতা রও !
. কামাল জিতা রও !
. ওকে আসে ? আনোয়ার ভাই ?-----
. আনোয়ার ভাই ! জানোয়ার সব সাফ্ !!
. জোর নাচো ভাই! হর্দ্দম্ দাও লাফ্ !
. আজ জানোয়ার সব সাফ্ !
. হুর্ রো হো ! হুর্ রো হো !!
সব-কিছ্ আব্ দূর্ রহো ! -------হুর্ রো হো ! হুর্ রো হো !!
রণ জিতে জোর মন মেতেছে !---- সালাম সবায় সালাম !-----
. নাচ্ না থামা রে !
জখ্ মী ঘায়েল ভাইকে আগে আস্তে নামা রে !
. নাচ্ না থামা রে !
[ আহতদের নামাইতে নামাইতে ]
. কে ভাই ? হাঁ, হাঁ, সালাম !
-----ঐ শোন্ শোন্ সিপাহ্-সালার কামাল-ভাই-এর কালাম !
. [ সেনাপতির অর্ডার আসিল ]
. “সাবাস্ ! থামো ! হো হো !
. সাবাস্ ! হল্ট্! এক ! দো !!”
[এক নিমেষে সমস্ত কলরোল নিস্তব্ধ হইয়া গেল ! তখনো কিন্তু তারায় তারায় যেন ঐ বিজয়-
গীতির হারা-সুর বাজিয়া বাজিয়া ক্রমে ক্ষীণ হইতে ক্ষীণ তর হইয়া মিলিয়া গেল-----]
ঐ ক্ষেপেছে পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই !
অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্ সে সামাল সামাল তাই !
. কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
. হো হো কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
অগ্নিবীণা , কাজী নজরুল ইসলাম
0 comments: