শহীদ মুহিউদ্দিন সোহান (ঝিনাইদহ-২০.০৪.২০১৬)

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে গত ১০ এপ্রিল রোববার বিকেলে পুলিশ পরিচয়ে সোহানূর রহমানকে (১৬) তুলে নিয়ে গিয়েছে। সে শহরের শহীদ নূর আলী কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র। তার পিতার নাম মহসিন আলী। বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ইশ্বরবা গ্রামে। পুলিশ কর্তৃক অপহৃত হওয়ার ১০ দিন পর আজ ভোরে তার গুলিবিদ্ধ ও চোখ উপড়ানো লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের খাড়াগোদা গ্রামের একটি মাঠে পাওয়া যায়।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ১০ এপ্রিল রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের পাশে ঈশ্বরবা-জামতলা নামক স্থানে একটি দোকানে বসে ছিল সোহানূর। এ সময় কালীগঞ্জ শহর থেকে একটি ইজিবাইকে করে চারজন লোক এসে নিজেদের পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দেয় এবং অস্ত্রের মুখে সোহানূরকে তুলে কালীগঞ্জের দিকে চলে যায়। উপস্থিত লোকেরা বাধা দিতে গেলে তাদের অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে কয়েকজন কালিগঞ্জ থানার এস আই নীরব ও এ এস আই নাসিরকে চিনে ফেলে। তারাই মূলত সোহানকে অপহরণ করে।

সোহানূরের মা পারভীনা বেগম বলেন, তাঁর ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। কোনো মামলাও নেই তাঁর বিরুদ্ধে। সে শুধু পড়াশোনা করে। এই অপহরণের বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি বলে জানায় সোহানূরের পরিবার। সোহানূরের বাবা ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন।


কালিগঞ্জ থানায় পুলিশ কর্তৃক কলেজ ছাত্রদের অপহরণের সাথে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেনও জড়িত। সে একের পর এক মিথ্যাচার করেই চলছে। আগের ঘটনাগুলোতে সে কিছুই জানেনা বলে জানিয়েছে অথচ ভুক্তভোগী পরিবারগুলো যখন থানায় জিডি কিংবা মামলা করতে এসেছে সে জিডি এবং মামলা গ্রহণ করেনি। আবার যখন সাংবাদিকরা তার কাছে খবর সংগ্রহের জন্য এসেছে সে তখন বলেছে কেউ আমাদের কাছে কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি।




ঝিনাইদহে কি হচ্ছে? গোটা জেলা কি মৃত্যু উপত্যকায় পরিনত হলো??

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কুঠিদুর্গাপুর দাখিল মাদরাসার শিক্ষক, জামায়াত কর্মী আবু হুরাইরা মালিথাকে গত ২৩ জানুয়ারী আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে মাদরাসা থেকে তুলে নেয়ার ১ মাস ৬ দিন পর তার ক্ষত-বিক্ষত লাশ গত ২৯ ফেব্রুয়ারী সোমবার সকালে যশোর চৌগাছা সড়কের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।

ঝিনাইদহ জেলার গান্না থানা শিবিরের সভাপতি হাফেজ মো: জসিম উদ্দিন ,গত ১২/০২/১৬ তারিখ থেকে নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজের প্রায় ২ মাস পর গত ৪ এপ্রিল তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় ।

ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ পৌরসভা শিবিরের সভাপতি আবুজার গিফারি কে ১৮ই মার্চ ২০১৬ জুমার নামাজ থেকে বাড়ী ফেরার পথে তুলে নিয়ে যায়। গত ১৩ এপ্রিল তার লাশ পাওয়া যায় যশোর সদর উপজেলার লাউখালী গ্রামের শ্মশানে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিবির নেতা শামিম হোসেনকে গত ২৫ মার্চ তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী পুলিশেরা। ১৩ এপ্রিল যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের বহরামপুর সার্বজনীন শ্মশান ঘাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

গত পরশুদিন জেলার কোট চাঁদপুর থেকে ১৮ জন নারীকে আটক করে কারাগারে প্রেরন করা হয়।

আর সর্বশেষ আজ সকালে ঝিনাইদহের গুমকৃত কর্মী মুহিউদ্দিন সোহান এর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেল পার্শ্ববর্তী চুয়াডাংগা জেলায়। শহীদ সোহান ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ঈশ্বরবা গ্রামের অধিবাসী। গত ১০ এপ্রিল তিনি গুমের শিকার হন।

গোটা দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলের ঝিনাইদহ হত্যাকান্ড নিয়ে তৎপর হওয়া উচিত। প্রত্যেকের জায়গা থেকে প্রতিবাদ না অাসলে এই অন্যায়ের অবসান ঘটা সম্ভব নয়। আল্লাহ ঝিনাইদহকে সব ধরনের জুলুম থেকে রক্ষা করুন। যারা জীবন দিলেন প্রত্যেককে শহীদ হিসেবে কবুল করে নিন। আমীন।



ছবিতে মুচকি হাসি দেওয়া যে ছেলেটিকে দেখতে পাচ্ছেন, তার জন্ম ১৬ বছর আগে। ১৬ বছরে কয়মাস হয়? ১৯২ মাস! অনেক সময়। এই বয়সেই সে হয়ে ওঠেছে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, খুনী, এলাকার ত্রাস! তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে ঝিনাইদহ, তার কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বাংলাদেশের ৫৮০০০ হাজার বর্গমাইল জুড়ে!
.
অবশেষে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো বীরযোদ্ধা পুলিশবাহিনী। ধরতে সক্ষম হলো, এই ভয়ানক গডফাদারকে। এবং গুলি করে লাশও ফেলে গিয়েছে ফসলের মাঠে! অবশেষে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। ঝিনাইদহের মানুষ আজ বুকভরে নি:শ্বাস নিতে পারছে! ঝিনাইদহের মানুষের চোখেমুখে আনন্দের ছাপ!
.
অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? ভাবছেন, ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে এরকম হতে পারে? না, হতে পারে না। কিন্তু আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা কি কোনো ভুল কাজ করতে পারে? কক্ষনো না!
.
তার নাম সোহান। ১২ দিন আগে পুলিশ তাকে তুলে নেয়, স্থানীয় দোকান থেকে। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই অভিযোগও নেই। পুলিশ তাকে তুলে নেওয়ার খবর অস্বীকার করতে থাকে! মা কান্নাকাটি করে,সংবাদ সম্মেলন করেন। নাহ, ফলাফল শূন্য! গতকাল তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়!
.
শামীম ওসমানের চেয়েও বড় অপরাধী সে! শিবিরকর্মী যে!
....কাল থেকে ফেসবুকে খেয়াল রাখছিলাম। নাহ, শিবিরের ছেলেরা ছাড়া আর কাউকেই সোহান হত্যা নিয়ে কথা বলতে দেখি নি(প্রতিবাদের কথা বাদই দিলাম)!
জানি, বিচার হবে না।কে বিচার করবে? বিচারকই যে খুনী!
...কিন্তু সুস্থ বিবেকবান মানুষদের কাছ থেকে অন্তত প্রতিবাদ আশা করেছিলাম।
.......আমিও বোধহয় ভুল করেছি, আমার প্রায় ২০০০০ ফলোয়ার। এরা এখন থেকে আমাকে শিবির ভাবতে পারে। আমাকে আনফলো করতে পারে! আপনারাও দয়া করে পোস্টটা এভয়েড করে যান! সোহান নিয়ে কিছু লিখবেন না!....
.
যারা এই হত্যা নিয়ে চুপ আছে, এমনকি মনে মনেও ঘৃণা জানায়নি, আমরা তাদেরকে অভিশাপ দিচ্ছি না, সত্যিই অভিশাপ দিচ্ছি না। দোয়া করছি, আপনারা ভালো থাকুন। আপনাদের ছেলেরা ভাইয়েরা ভালো থাকুক।
তবে আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আপনি যেই দলই করুন না কেন, যতই "নিরপেক্ষ" হোন না কেন, একদিন এ বিপদ আপনার ঘরেও আসবে!
.
স্থানীয় এমপির কাছে গিয়েছিলো, সোহানের এলাকার তিন শতাধিক মানুষ। তারা কথা দিয়েছিলো, ভবিষ্যতে তারা সবাই আওয়ামিলিগ করবে, তবুও সোহানকে যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আহ, আকুতি!
এমপি জবাব দিয়েছেন, আওয়ামিলিগ করার লোকের অভাব নাই!

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম