বুয়েটিয়ান শহীদ রেহান আহসান

২০১৩ সালের ৫ মে। শাপলা চত্বরে ইসলামী শরীয়া ও নাস্তিকদের ফাসির দাবীতে উত্তাল জনতার দাবীকে বুলেট দিয়ে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিলো হাসিনা সরকার। লাখো জনতার এই সমাবেশে ঈমানের দাবীতে অটল থেকে আল্লাহর কাছে ধর্না দিতে বুয়েট থেকে রেহানও গিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর নির্বিচার গুলির মুখে শহীদ হয়ে যায় রেহান। সে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ছাত্র ও আহসানুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিল।


আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে রেহান বুঝি ব্যার্থ কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিকেই পবিত্র কুরআনে বলে দিয়েছেন, " যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় তাদের তোমরা মৃত বলো না বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। (সুরা বাকারা-১৫৪)। ইসলামী আন্দোলনের জন্য বুয়েট থেকে প্রথম শহীদ রেহান এই আন্দোলনের কর্মীদের জন্য অনুপ্রেরনার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন।

শহীদ হওয়ার পরে তার এক বন্ধুর স্ট্যাটাস থেকে তার ইসলাম সম্পর্কে ভালোবাসার কথা জানা যায়-

সবাইকে কাদিয়ে চলে গেলো আমাদের সবার প্রিয় রেহান আহসান । আমার বন্ধুদের মধ্যে সম্ভাব্য সব থেকে বেশী ব্রিলিয়ান্ট ও প্রতিভাবান ছেলে । ওর শিক্ষাজীবনে এমন কোনও শিক্ষক ও সহপাঠী নাই যারা ওকে না জানে । খুবই সাধারন ও নিরহংকার একটি ছেলে । ঢাকার বিখ্যাত গভঃ ল্যাবরেটরি স্কুলে ২০০৭ সালে গোল্ডেন A+ পায় । স্কুলে সর্বদা ওর রোল ২-৩ এর মধ্যে ছিল । এরপর সিটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে প্রথম অবস্থানে ছিল । এরপর বুয়েটে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয় । জীবনে কোনও দিন জামায়াত , শিবির কিংবা কোনও রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিল না । খুব ভালোবাসতো ইসলামকে এবং তাহাজ্জুদের নামাজও পড়তো । গত রাতে ও সেই ইসলামকে ভালবেসেই শহীদ হল । হেফাজতের সাথে কারো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানি না তবে এতটুকু সত্য ওদের দাবি গুলো একটাও অন্যায় দাবি নয় । আজ আমি আমার কিছু নাস্তিক বন্ধুদেরও দেখলাম ওর জন্য জানাজার নামায পরে কাঁদতে । জাতি কি এই হত্যাকাণ্ডে খুব লাভবান হবে ? আমার সারা জীবনেও এই উত্তর খুজে পাবো না ।

শহীদ রেহান আহসান নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ মহল্লার মামুন আহসানের একমাত্র ছেলে। লেভেল-4 এর ছাত্র থাকাকালীন শহীদ হন এই ভাই।


৫ মে সেই ভয়াল রাতে শহীদ হওয়া  রেহান আহসানকে নিয়ে তার বন্ধু Fahim Anjum লিখেছে,

"ওরা তো চারদিকথেকে আমাদেরকে ঘিরে ফেলছে ।আমি মনে হয় শহীদ হয়ে যাব ।তোকে যে টাকাগুলা দিছিলাম ওইগুলা কারো পাওনা থাকলে তাদেরদিয়ে দিস" .. এইকথাগুলো ছিল না রে তোর দোস্ত ? তোর মৃত্যু কোন দুর্ঘটনা কিংবা unfortunate accident না । এটা খুন। রাতের অন্ধকারে বাতি নিভিয়ে যারা তোকে যারা খুন করেছে তাদের আল্লাহ ক্ষমা করুক না করুক আমি জীবনেও ক্ষমা করবো না । তোকে প্রায়ই মিস করি জানিস দোস্ত ? ভাগ্যিস দেশে নাই । তাহলে আরো করতাম হয়তো । আমি আর কোনদিন মনে হ য়তোকে ছাড়া স্টারে লেগ রোস্ট নান পরোটা খাইতে পারবোনা রে। PS: যারা সরকারের সাফাই গাবেন কিংবা রেহানকে নিয়ে একটাও এদিক ওদিক কমেন্ট করবেন সোজা ব্লক করে দিবো। এবং সেটা শুধু ফেসবুক থেকেই না , বাস্তব জীবনের ফ্রেন্ড লিস্ট থেকেও । অসম্ভব মেধাবী এবং ধর্মভিরু এই ছেলে নিজের ঈমানের তাড়নায় শাপলা চত্ত্বরে গিয়েছিল। তার সাথে হেফাজতের কোন সংস্লিস্টতা ছিলনা। তারপরেও তাকে স্টেট কিলিংটন করা হয়েছে।


ব্লগ থেকে,

৫ এপ্রিলের দিন যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ভার্সিটিতে পরীক্ষা ছিল, থারমোডায়নামিক্স পরীক্ষা, যেতে পারি নি। দুর্ঘটনাতেও আর পরতে হয় নি। আমাদের মত সৌভাগ্যবান সবাই ছিল না। যেমন বুয়েটের ওই ছেলের কথা টাও বলা উচিৎ। বুয়েটের '০৯ ব্যাচের CSE ডিপার্টমেন্টের ছাত্র রেহান আহসান। ৫ মে রক্ষী বাহিনীর গুলিতে অন্যান্য অনেকের সাথে মৃত্যুবরণ করেন এই মেধাবী ছাত্রটি। হারিয়ে যায় পচা-গলা আর আবর্জনাময় এই পৃথিবী ছেড়ে। আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাতবাসী করুন। মজার ব্যাপার হল, যেই বুয়েটে প্রায় চার বছর কাটিয়েছিল এই ছেলেটি, সেই বুয়েট প্রশাসনই বুয়েট ক্যাম্পাসে তার জানাজার নামাজ পড়তে দেয় নি। যেই দেশে শহরের গুরুত্বপুর্ন রাস্তার মোড় বন্ধ করে নাস্তিকের নামাযে জানাজা পড়ানো হয়, সেই দেশেরই সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীর জানাজা পড়তে দেয় না সেই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের সম্মানিত(?) শিক্ষকগন। সত্যিই সেলুকাস এই দেশ। ছেলেটির বাবা DSW স্যারকে একটা প্রশ্ন করেছিল, যার উত্তর তিনি দিতে পারেননি। হয়তো কেউই পারবে না। প্রশ্নটি হল "স্যার! আপনি কি বলতে পারেন আমার ছেলে কি অপরাধ করেছিল? আমরা তো কখনও তাকে কোন অপরাধ করতে দেখিনি!"

রেহানের শাহাদাত সেইসব নাস্তিকদের গালে চপেটাঘাত, যারা বলে হেফাজতের আন্দোলন ছিলো কেবলমাত্র মাদ্রাসাবেইজড। কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের  যে নাস্তিকরা অবুঝ মনে করে, তাদের সামনে শহীদ রেহান সাক্ষ্য দেয়, বুয়েটের সর্বস্বীকৃত মেধাবী ছাত্ররাও সেদিন এই আন্দোলনে একাত্ম হয়েছিলো!!!


...তারা আরো বলে, হেফাজতের এই আন্দোলন নাকি সুবিধা বঞ্চিত মাদরাসার গরিব ছাত্রদের একটি শ্রেণী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। এসব মাও-মার্ক্সের প্রেতাত্বারা যদি জেগে না ঘুমাতো তাহলে তারা দেখতে পেতো যে বুয়েট এবং মেডিক্যাল কলেজ সহ তাদের ভাষায় এদেশের শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপীঠগুলো থেকে কেন এত ছাত্র রাজপথে বেরিয়েছে? কেনইবা তারা রক্ত দিয়েছে? আমার জানা মতে রেহান আহসান নামের বুয়েটের CSE তে পড়া একজন ছাত্রও সেদিন শাপলা চত্বরে শহিদ হন। আল্লাহ্‌ তার শাহাদাত কবুল করুন। আমিন। সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে তাকালেও আমরা দেখতে পাই, হেফাজতের পক্ষে মাদ্রাসার ছেলেরা যতোটুকু সোচ্চার তারচেয়ে হাজারগুণ বেশি সোচ্চার দেশের ইউনিভার্সিটি পড়ুয়ারা। কেন? যেহেতু আমার এই লেখা এসব গাধাদের যুক্তি খণ্ডনের জন্য নয় তাই এবিষয়ে আর বেশি কিছু লিখতে চাচ্ছি না।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম