সুরা নিসার ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- “তোমরা স্ত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার কর।কোন কারণে যদি তাদের কিছু তোমাদের কাছে ভাল নাও লাগে, তাহলে তোমরা হয়ত এমন একটি বস্তুকে খারাপ মনে করছ যার মধ্যে আল্লাহ তোমাদের জন্য মহাকল্যাণ নিহিত রেখেছেন।”
"Treat them with kindness; for even if you dislike them, it may well be that you dislike something which God has invested with abundant goodness." (19)
এখানে দেখা যাচ্ছে স্ত্রীর কিছু দিক স্বামীর পছন্দ না হলেও স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে স্বামীকে স্পষ্ট নির্দেশ করা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে স্ত্রীর কোন দোষ চোখে পড়লে শুধু সেটার কারণেই তাকে অপছন্দ না করে বরং তার ভাল দিকগুলো সামনে রেখে তাকে বিচার করতে হবে। একই কথা একজন স্ত্রীর জন্যও সমভাবে প্রযোজ্য।
অনেক সময় এমনটা দেখা যায় যে, একজন ব্যক্তি খুবই ধার্মিক, দানশীল, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রতি যতœশীল কিন্তু স্ত্রীর প্রতি নির্দয়, কঠিন, রু এবং তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেনা। এটি খুবই দুঃখজনক। অনেকে এজন্য স্ত্রীকেই দোষারোপ করে এবং স্বামীর এরূপ ব্যবহারের জন্য স্ত্রীকেই দায়ী করে। অভিযোগটা এরকম যে, “লোকটি খারাপ হলে সবার সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করত। নিশ্চয়ই স্ত্রী ভাল না বলেই সে শুধু স্ত্রীর সঙ্গে এরূপ ব্যবহার করে।” এরূপ অজুহাতে স্বামীর খারাপ ব্যবহারকে সমর্থন দেয়া ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা দেখেছি সুরা নিসায় (১৯) আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন, স্ত্রীদের কিছু ব্যাপার অপছন্দ হলেও স্বামীকে ভাল ব্যবহার করতে হবে। এটা নির্দেশ আকারে এসেছে।
সুরা বাকারায় (২৩১) বলা হয়েছে- “তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দাও, ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী রেখে দাও অথবা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে ভালভাবে মুক্ত করে দাও। তাদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্য এবং জুলুম করার উদ্দেশ্যে আটকিয়ে রেখ না।” (বাকারা ২৩১)
আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, Believers with the most excellent faith are those with the best manners and those who are kindest to their wives.ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন, The best among you are those who are kindest towards their wives and I am the kindest among you towards mine. (তিরমিযি)(The thematic commentary on the Qur'an, Shaykh Muhammad al-Ghazali, p. 58)কাজেই দেখা যাচ্ছে ইসলামে স্পষ্ট নির্দেশ হল স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা। সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ইসলামে গ্রহণযোগ্য আচরণ নয়। এরূপ ব্যক্তিকে আপাত দৃষ্টিতে ধার্মিক মনে হলেও প্রকৃতপে তার আচরণ ইসলাম সমর্থিত নয়। হাদিসে এসেছে আদদিনু মুআ'মিলা।
এবং স্বামী বা স্ত্রীই প্রকৃতপে একজন মানুষের সত্যিকার আচরণ ও ব্যবহার দেখতে পায়। ঘরের বাইরে মানুষ যতটুকু সময় থাকে ততণ নিজেকে ঘষেমেজে ভদ্রভাবে উপস্থাপন করাটা খুবই স্বাভাবিক। মূলত: ঘরে ফিরেই মানুষ তার সত্যিকার আচরণটা প্রকাশ করে এবং ইসলাম মানুষের সেই সত্যিকার ভেতরকার আচরণকেই সুন্দর করতে চায়। ভেতরটা যাচ্ছেতাই রেখে উপরে সুন্দর একটা প্রলেপ দেয়া ইসলামের উদ্দেশ্য নয়।
স্বামী বা স্ত্রীর পারস্পরিক সমালোচনা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। আলোচনা করেছি সমালোচনার বাক্য গঠন নিয়ে। এ সম্পর্কিত আরও কিছু নীচে দেয়া হল-১.সাধারণ কথার সময় আমরা Active Voice (কর্তৃবাচ্য) ব্যবহার করি। সমালোচনার সময়PassiveVoice ব্যবহার করলে (কর্মবাচ্য) শ্রোতা মনে আঘাত পায় না। কারণPassiveVoice এ কাজটাকে গুরুত্ব দেয়া হয়, যে কাজটা করেছে তাকে (কর্তৃvকে) নয়।যেমন-তুমি ঘর পরিষ্কার করনি। (এখানে ব্যক্তিকে দায়ী করা হচ্ছে)ঘরটা পরিষ্কার নয়। (এখানে কাউকে দায়ী করা হয়নি)কাজেই ‘তুমি ঘর পরিষ্কার করনি' না বলে ‘ঘরটা পরিষ্কার না' বলা উচিত।২. নেগেটিভ কথাগুলো পজিটিভ করে বলা। মানুষ নেগেটিভ কথা শুনতে পছন্দ করে না। তাইপ্রতিটি নেগেটিভ কথাকে পজিটিভে রূপান্তর করে বলুন।যেমন- তুমি অলস, একটুও পরীশ্রম কর না। এর পরিবর্তে বলুন- তোমার একটু বেশী পরীশ্রম করা দরকার। নীচে আরও কিছু উদাহরণ দেয়া হল-নেগেটিভ কথাপজিটিভ কথাক. তুমি ঠিক বলনি। ক. আমি ভিন্নমত পোষণ করি।খ. তুমি কাপড়টা ভাল কেননি। খ. কাপড়টার রঙ নীল হলে বেশি ভাল হত।গ. তুমি আজকে শফিকের বাসায় যেতে পারবে না। গ. আজ বাসায় থেকে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে সময় দেয়া জরুরী।ঘ. তুমি টমেটো কিনেছো কেন? ঘ. টমেটোর বদলে আলু কিনলে খরচ অনেক কম হত ইত্যাদি।৩. ‘আমরা' শব্দের ব্যবহার বাড়ানো। নীচের বাক্যগুলো খেয়াল করুন-
ক.তুমি আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাও না। ক.আমরা অনেকদিন বেড়াতে যাচ্ছি না।খ. তুমি বেশি খরচ করছো।খ. আমরা এখন থেকে বাজেট করে খরচ করবো। এতে আমরা প্রতিমাসে কিছু সঞ্চয় করতে পারবো।এভাবে সচেতনতার সাথে বাক্য গঠন করলে অন্যকে আঘাত না করেও তাকে শুধরানো সম্ভব।সমালোচনার বাক্যে যদি ঐ ব্যক্তিকে দায়ী করা হয় তবে তার মনে আপনার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। তখন সে আপনার সমালোচনা গ্রহণের পরিবর্তে ঘৃণাভরে বর্জন করে। ফলে সে শুধরাবে তো নয়ই বরং আপনার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। (চলবে)
লেখিকা - কানিজ ফাতিমা
পেইজ ভিউ
1 comments:
খুব ভালো লেখাটি। খুবই সুন্দর। আরো ভালো হত যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নানাদিক লেখাটিতে চলে আসতো।
লেখাটি পড়ে আমার মনে হলো, একচেটিয়াভাবে পৃথীবির সব স্বামীরাই মূলত জালিম, আর আমাদের ভগ্নী-প্রেয়সী সবাই নিরীহ, চিরনির্দোষ মাজলূম। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? আমি তো আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, অন্তত আমাদের দেশের ৯০% পুরুষ আলোচনার তুলনায় অনেকটাই নির্দোষ। আমরা কি জানি, নারী-নির্যাতনকারী স্বামীর তুলনায় পুরুষ-নির্যাতনকারী স্ত্রীর সংখ্যা বহুগুণে বেশী? নারী-নির্যাতনের ব্যপারে উচ্চ আদালতে মামলার ব্যবস্থাও আছে, পক্ষান্তরে কি পুরুষ-নির্যাতনের কোন মামলা আছে? শুধু তাই না, বরং প্রতিদিন বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে স্ত্রীদেরকে স্বামীর সামান্য কথার উপরও মামলা করার জন্য উসকে দেওয়া হচ্ছে। আচ্ছা, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বলুন তো, স্ত্রীকে স্বামী যতই কটু কথা বলুক তার চেয়েও কি মামলার চ্যালেঞ্জ বেশী কঠিন নয়? পারিবারিকভাবে অনেক কিছু হতেই পারে, তার নিষ্পত্তি পারিবারিকভাবেই হওয়া উচিত। নতুবা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কমাধুর্য আসবে কোত্থেকে? হাইকোর্ট ঘুরে আসা স্বামী আর সারা জীবেনও সেই মামলাকারী স্ত্রীর সাথে সংসার করতে চায়না। এরপরও পরবর্তী মামলার ভয়ে মুখবুঁজে সব সয়ে নেয় আর নির্জনে চোখের পানি ফেলে। বলুন তো, এহেন পরিস্থিতি আমাদের দেশের কতগুলো ঘরে বিরাজমান? অন্তত ৭০-৮০-% ঘরে। তাহলে কত ভাগ পুরুষ আর কতভাগ নারী নির্যাতনকারী?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, স্বামীর পদতলে স্ত্রীর জান্নাত। অন্যত্র ইরশাদ করেন, আমি যদি কোন মানুষকে সেজদা করার হুকুম দিতাম তাহলে সব স্ত্রীদেরকে নির্দেশ দিতাম তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে সেজদা করে। আরো ইরশাদ করেন, স্বামীর সন্তুষ্টিই আল্লাহর সন্তুষ্টি। ইত্যাদী। এখুন বলুনতো, নিজ অধিকার সম্বন্ধে অধিক সচেতন এই সব স্ত্রীদের আখিরাতে কী হবে?
২য় কথা হলো, আপনার লেখায় উল্লিখিত হাদীসগুলো কি রাসূল ইংলিশে বলেছিলেন? লক্ষণীয় হলো, লেখাগুলো হয়ত সরাসরি আরবী নয়তো মাতৃভাষা বাংলায় হওয়াই অধিক যুক্তিসঙ্গত।
সমাধান, স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই উভয়ের হক সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। বিশেষ করে স্বামীকে সতর্ক করার চেয়ে স্ত্রীকে সতর্ক করাই বেশী বাঞ্চণীয়। কারণ, রাসূল বলেন, নারীজাতি পুরুষের পাঁজড়ের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্ট। বাঁকা হাঁড় স্বাভাবিক করা বেশী কঠিন, তাই তার আলোচনাও বেশী হওয়া প্রয়োজন। এবং বর্তমান কুপ্রচারণার ফাঁদে পড়ে কোন স্ত্রী যেন বাজারের সস্তা পণ্যে পরিণত না হয় এজন্য সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখাও দরকার। আল্লাহ আমাদের সকলকে সত্য বুঝার এবং মানার তাউফীক দান করুন। আমীন।