ইসলামের সোনালী যুগে জাজিরাতুল আরবের সীমানা ছাড়িয়ে ইসলামী রাষ্ট্র বিস্তৃত হয়েছিল পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দেিণর সকল দিগন্তে। হযরত আলী (রা) এর ইন্তেকালের পর উমাইয়া খিলাফত শুরু হয়, তাদের সময় ব্যাপক সাম্রাজ্য বিস্তৃতি ঘটে এবং এসময়ে মুসলমানগণ জিব্রাল্টার পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বুকে স্পেন সাম্রাজ্যের প্রতাপশালী ও অত্যাচারী রডারিককে পরাজিত করেন। স্পেন হয়ে যায় ইউরোপের মুসলিম দেশ। সেটি অষ্টম শতকের কথা।
সময়ের ব্যবধানে অনেক কিছুই বদলে যায়। ইতিহাসের পালাবদলের হাত ধরে আবার ১৪৮২ সালে মুসলমানদের করুণ পরিণতি লাভ করতে হয় নিজ হাতে গড়ে তোলা জ্ঞান-গরিমা ও শৌর্য-বীর্যের প্রতীক, জ্ঞানের নগরী রাজধানী গ্রানাডাতে। প্রধানত: ১লা এপ্রিলকে গ্রানাডা-ট্র্যাজেডির দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
আজ হতে ৫২৬ বৎসর আগে সেই যে স্পেনের রাজধানীতে এক ট্র্যজেডির মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় মুসলমানদের পতন হয় তা কেবল একটি ঘটনামাত্র নয়, বরং হাজার ঘটনার জন্মদাতা। এরই পথ ধরে, মসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে বিদ্বেষী খ্রীষ্টন-ইহুদীগণ। পরপর তিনটি ক্রুসেড এর পর মুসলিম দুনিয়া মূলত: অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে ইউরোপের উপনিবেশিক শক্তির উপনিবেশে পরিণত হয়। ফলে যা হওয়ার তাই-হয়। পরাজিত মুসলমানগণ বিজয়ী ইউরোপের সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক গোলামে পরিণত হয়।
দীর্ঘ দুই, আড়াইশো বৎসর গোলামী শেষে আবার একে একে স্বাধীন হয়েছে মুসলিম দেশ সমূহ, যার সংখ্যা বর্তমানে ৫৭টি। ভূ-রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করলেও এসব দেশ সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গোলামীর জিঞ্জির ছিড়তে পারেনি। এ অবস্থায় ঘুরে ফিরে পশ্চিমের অনুসরণ-অনুবর্তন ও অণুকরনের এক নির্লজ্জ মহড়া চলছে।
১লা এপ্রিল এলেই পশ্চিমা বিশ্বের মতো আমাদের তরুণ-তরুণীরাও পালন করে এপ্রিল ফুল (অঢ়ৎরষ ভড়ড়ষং) দিবস। সম্ববত: আমাদের তরুনদের মন-মানসে চেপে বসা পশ্চিমা ভূত তাড়িয়ে তাদেরকে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সচেতন করার এটিই সময়। বমান প্রবন্ধ তারই একটি ুদ্র প্রয়াস।
স্পেনের সোনালী অধ্যায় ঃ
তারিকের স্পেন জয় ছিল এক বিস্ময়কর বিষয়।
স্পেনের প্রজা উৎপীড়ক রাজা রডারিক মতায় এসেছিলেন তার পূর্বসূরী শাসক ইউটিজাকে হত্যা করে। এ সময় সিউটা দ্বীপের শাসক ছিলেন কাউন্ট জুলিয়ান। জুলিয়ান তার কন্যা ফোরিন্ডাকে রাজকীয় আদব কায়দা শিখানোর জন্য রডারিকের কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু রডারিক ফোরিন্ডার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। উইটিজা ছিলেন জুলিয়ানের শ্বশুর। শ্বশুর হত্যা ও কন্যার অপমানের প্রতিশোধ নিতে জুলিয়ান মুসলিম বীর মুসাকে আমন্ত্রণ জানান স্পেন দখল করার জন্য।
স্পেনের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা যখন অত্যন্ত শোচনীয় তখন মুসাকে আহবান জানানো হয় তা আক্রমণের জন্য। সে সময় মুসলিম বিশ্বের শাসক ছিলেন ওয়ালিদ। মুসা তাঁর অনুমতি নিয়ে সেনাপতি তারিক-বিন-জিয়াদকে পাঠান স্পেন আক্রমনে। পরে মুসা এসে তার সাথে যোগ দেন।
সেনাপতি তারিক ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে রডারিকের ১ ল ২০ হাজার সৈন্যর মোকাবিলায় এগিয়ে আসেন। সৈন্য সংখ্যার ব্যবধান তাকে মোটেও ভাবিয়ে তোলেনি কারণ তিনি জানতেন তাদের আসল শক্তি লোকবল নয় বরং ঈমানের অফুরন্ত শক্তি।
ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে, স্পেনের মাটিতে পা রেখেই সমস্ত সৈন্যদের নামিয়ে আনলেন তারিক। জ্বালিয়ে দিলেন তাদেরকে বয়ে আনা জাহাজগুলো। তারপর সৈন্যদের ল্য করে বললেন- প্রিয় বন্ধুগন, এখন তোমাদের সামনে স্পেন, রডারিকের সেনাবাহিনী আর পিছনে ভূ-মধ্য সাগরের উত্তাল জলরাশি। তোমাদের সামনে দুটোপথ। হয় লড়তে লড়তে জয়ী হওয়া, শাহাদাতের মর্যাদাসিক্ত হওয়া কিংবা সাগরের উত্তাল তরঙ্গের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাপুরুষের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা। তার বক্তব্যে অনুপ্রাণিত সৈন্যগণ বিপুল বিক্রমে লড়াই করে সেদিন বিজয়ী হয় এবং রডারিক ওয়াডালেট নদীতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে।
স্পেনে মুসলিম সভ্যতার বিকাশ: ইউরোপের মানুষের নব জাগরণ:
মুসলিমগণ দীর্ঘ ৮০০ স্পেন শাসন করেন।
আসলেই তখন ছিলো ইউরোপীয় মানুষদের মধ্যযুগ। পুরো ইউরোপ জুড়ে তখন খ্রীষ্টীয় শাসন চলছিলো। গীর্জা ও রাষ্ট্রের যৌথ শাসন জনগণের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। বিজ্ঞানীদের ধর্ম-বিদ্বেষী চিহ্নিত করে তাদের প্রতি নির্যাতন চলছিল। মতার দ্বন্দ ছিলো সর্বত্র। ধর্মীয় বিধান সমূহ গীর্জার ও পুরোহিত শাসকদের ইচ্ছানুযায়ী পরিবর্তিত হচ্ছিল বারবার।
এমনি সময়ে স্পেনের বুকে ইসলামের বিজয় ছিলো স্পেনীয় সাধারণ মানুষের একটিবড় পাওনা। তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান-আদল-ইনসাফ, সাম্য-সৌভ্রাতৃত্ব, সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক নতুন সড়কে পা রাখলো মুসলিম শাসন ব্যবস্থার অধীনে। মুসলিম শাসনের সময় স্পেনের রাজধানী ছিলো গ্রানাডা এবং তার অপর প্রধান শহর ছিলো কর্ডোভা। গ্রানাডায় পড়ে ওঠে মুসলিম সভ্যতার একটি তীর্থস্থান। সেখানকার আলহামরা প্রাসাদ, গ্রান্ড মসজিদ আজো মানুষেরকাছে বিস্ময়কর স্থাপত্য। কর্ডোভায় গড়ে ওঠে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্র সমূহ। বাগদাদের নিজামিয়া বিশ্বদ্যিালয়ের চেয়েও বড় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে ওঠে কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়। সারা ইউরোপ থেকে দলে দলে শিার্থীরা এসে এখানে জড়ো হয় মুসলিম জগতের সহায়তায় গড়ে ওঠা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য। আজ যেমন হাভার্ড কিংবা অক্সফোর্ড যায় লোকেরা তখন তারা যেতো কর্ডোভায়। এই বাতিঘর থাকে আলোকিত হয়েই আধুনিক ইউরোপের উদ্দীপক ঘটনা শিল্প-বিল্পবের নায়কেরা নিজ নিজ দেশে শিল্প- গবেষনা ও উন্নয়নের রেনেসার সূচনা করেন।
মুসলিম শাসন আমলে স্পেনের ঘরে ঘরে ইসলামের বিস্তার ঘটে। প্রতিটি এলাকায় গড়ে ওঠে সুন্দর সুন্দর মসজিদ। সকাল-সন্ধ্যা। আজানের সুমধুর ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হতো। দুই সভ্যতার মিলনকেন্দ্র স্পেনে দীর্ঘ মুসলিম শাসনামল ছিলো শিক্ষা-সংস্কৃতি, সভ্যতার চরম উৎকর্ষের কাল, ধর্মীয় সহনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধের লালন ও বিকাশের সময়। এসময়ে স্পেনীয় মুসলমানগণ সমগ্র ইউরোপের সামনে সভ্যতা ও সংস্কৃতির মডেল হিসেবে চিহ্নিত হয়। এটিকে ইউরোপ স্বীকৃতি দিয়েছে ‘মরুসভ্যতা’ হিসেবে। এই দরোজা দিয়েই ইউরোপের মানুষের কাছে পৌছে যায় মসলিনসহ মুসলিম দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ পণ্য সমূহ। আজকের আমেরিকা তখনও অনাবিস্কৃত এক অজানা ভূখন্ড আর ইউরোপের বহু দেশের লোকেরা তখণও স্বাস্থ্যরার জন্য নিয়মিত গোসল করার বিষয়েও অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। অথচ মুসলিমানগণ রাস্তার মাঝে মাঝে গড়ে তুলেছিলেন হাম্মামখানা। সেখানে শুধু অজু-গোসলের ব্যবস্থাই থাকতোনা, থাকতো সুগন্ধি প্রসাধন ও বাসানের ব্যবস্থা।
ইউরোপের বাতিঘর গ্রানাডা ছিলো সকল মানুষের জন্য এক আকর্ষনীয় কেন্দ্র বিন্দু।
একে একে মুসলমানগণ সময়ের সাথে বদলে যেতে থাকলেন।
জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তির সন্ধানে কঠিন সাধনার পথ ছেড়ে তারা ধীরে ধীরে ভোগ- বিলাস আরাম-আয়েশে মত্তহতে শুরু করলো। ঐক্য সংহতি, শৌর্যের স্থলে তারা বিভক্তি, হানাহানি, ভীরুতা ও অদুরদর্শিতার পথে পা বাড়ালো। তাদের মাঝে শুরু হলো প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের খেলা, প্রজাসাধারণের স্বার্থের বদলে তারা ব্যক্তি ও গোষ্টির স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে শুরু করলো। প্রসাদে গড়ে উঠলো রং-মহল, তাদের হেরেমের নেতৃত্ব চলে গেলো-ইউরোপীয় রাজন্য বর্গের সুন্দরী আত্মীয়দের হাতে।
গ্রানাডা ট্র্যাজেডির ইতিকথা:
অন্য সকল এলাকার মতো ইউরোপের মুসলমানদের মাঝেও জন্ম নিল ভোগ-বিলাস, সম্পদের লোভ ও ব্যাতির লিন্সা। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের যখন বিজয় চলছিল, রোম-পারস্য সহ সমগ্র পরাশক্তি যখন মুসলিম শাসনের অধীনে চলে এলো ঠিক তখনি ইউরোপের খ্রীষ্টান স¤প্রদায় নতুনভাবে জেগে উঠলো ধর্মীয় চেতনায়। তারা সমস্ত খ্রীষ্টান রাজন্যবর্গের কাছে, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের কাছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যের ডাক দিলো। সে ডাকের একটিই কথা- মুসলমানদের পরাজিত করতে হবে, ইসলামকে ঠেকাতে হবে। এর নাম দেয় তারা ‘ক্রুসেড’ বা ‘ধর্মযুদ্ধ’। সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ক্রুসেডের আহ্বানে সাড়া দেয় খ্রীষ্টীয় ঐক্য শক্তি, নিজেদের বিভেদ ভুলে তারা মুসলিম শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ধর্মযুদ্ধ বলা হলেও এটি প্রকৃতপে ছিল জয়ের জন্য যুদ্ধ।
৬৩৮ খৃষ্টাব্দে খলিফা উমার (রা) বিনাযুদ্ধে, বিনা রক্ত ব্যয়ে জেরুজালেম দখল করে নেন। ১০৯৯ সালে মুসলমানদের দলাদলির সুযোগে পোপ দ্বিতীয় আরবান প্রেরিত ইউরোপীয় খৃষ্টান বাহিনী জেরুজালেম দখল করে ৪৬১ বছরের একটানা মুসলিম শাসনের অবসান ঘটায়। ক্রশের নামে শপথ গ্রহণ করা হতো বলে এ যুদ্ধের নাম হয় ক্রুসেড। ১০৯৫ সালে এ যুদ্ধের আহবান জানানো হয়। ১০৯৭ সালে পোপের মূল বাহিনী ফ্রান্স থেকে রওয়ানা হওয়ার কথা থাকলেও মাঝখানে পিটার নামক এক ভবঘুরে ১০৯৬ সালে তার বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয় ও পরাজিত হয়। ১০৯৭ সালে মূল ক্রুসেডারগণ জেরুজালেমের কাছে গেলে সুলতান সুলায়মান তাদেরকে খুব শক্তিশালী মনে করেননি। ফলে তারা সামনে এগিয়ে যায়।
এ সময় এশিয়া মাইনরের তুর্কী সুলতান, সিরিয়ায় আরব আর মিসরে ফাতিমীয় সুলতান পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হলে বিদেশী ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসেননি। ১০৯৭ তে ক্রুসেড বাহিনী এন্টিয়ক অবরোধ করে ৬০ জন বন্দী মুসলমানকে পুড়িয়ে হত্যা করে। খাদ্যভাবসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় তখন ক্রুসেড বাহিনী আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হচ্ছিল তখন ফিরোজ নামক এক পারসিক বিশ্বাসঘাতক শত্র“দেরকে দুর্গে ঢোকার গোপনপথ দেখিয়ে দেয়।
১০৯৯ সালের মে মাসে ক্রুসেডারগন জেরুজালেম অবরোধ করে। জেরুজালেম যেহেতু মিসরীয় সুলতানের দখলে সেহেতু সিরীয় মুসলিম বাহিনী নিস্ক্রিয় থাকে। হারতে হারতে জিতে গেলো ক্রুসেডারগণ। শান্তির দুত বলে দাবীদার ক্রুসেডারগণ নগরবাসীকে নিমর্মভাবে হত্যা করে এমনকি ‘মসজিদুল আকসা-র’ আশ্রয় নেয়া প্রতিটি মুসলমানকে তারা হত্যা করে। ফলে মসজিদে এক হাটু রক্ত জমে যায়।
এ ঘটনার পর ১১৪৪ সালে মসুলের সুলতান আতাবেগ জঙ্গী এডেসা দুর্গ ক্রুসেডারদের হাত থেকে দখল করে নেন। ১১৪৫ সারে পোপ তৃতীয় ইউজিনিয়াস ২য় ক্রুসেডের ডাক দেন। ১১৪৮ সুলতান নুরুদ্দিনের হাতে সম্মিলিত ক্রুসেডারদের পতন হয়। ১১৮৭ সালে সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেন এবং সেখানে জুমআর নামাজ আদায় করেন। এবং মজার বিষয় হলো ২য় বারের মতো জেরুজালেম দখল করতেও মুসলমানগণকোন রক্তপাত ঘটায়নি। ৮৬ বছর পূর্বে ক্রুসেডারগণ জেরুজালেমে যে নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছিলো মুসলমানগন এতদিন পর তার মধুর প্রতিশোধ নিলেন সব বন্দীকে মুক্ত করে দিয়ে।
এরপরও ক্রুসেড হয়েছে বারবার। ৬ষ্ঠ ক্রুসেডের সময় পর্যন্ত বারবার ধোঁকার আশ্রয় নেয় খ্রীষ্টান রাজন্যবর্গ ও ক্রুসেডারগন। ১০৯৫ থেকে দীর্ঘ ১৯৬ বৎসর পর্যন্ত এইসব ক্রুসেডের ফলে বহু নীরিহ মানুষ জীবন হারায়। চূড়ান্ত ভাবে ১২৪৪ সালে জেরুজালেম মুসলমানদের দখলে আসে। ১২৪৪ থেকে ১৯১৯ পর্যন্ত একটানা ৬৭৫ বছর জেরুজালেম মুসলিম শাসনে থাকে। ১৯১৯ সালে ইংরেজ জেনারেল এলেনবাই জেরুজালেম শহরে সদলবলে ঢুকে ঘোষনা করলেন এতদিনে ক্রুসেড শেষ হলো।
এই সব ঘটনা যখন চলছিল এরই মাঝে মুসলিম শাসকদের অদুরদর্শী নেতৃত্ব, জনগনের অসচেতনতা ও অনৈক্যের ফলে বিশ্বের নানা প্রান্তে মুসলিম জাতিকে দিতে হয়েছে বড় বড় মাশুল। এই মাশুলেরই একটি হচ্ছে গ্রানাডা ট্র্যাজেডি।
১৪৯২ সালে গ্রানাডা ট্যাজেডি সংঘটিত হয়।
স্পেন মুসলমানদের শাসক তখন বাদশাহ-হাসান। আবু আব্দুল্লাহ ছিলো সুলতান হাসানের ছেলে। খ্রীষ্টানগণ হাসানের বিরুদ্ধে তার পুত্র আবু আব্দুল্লাহকে দিয়ে বিদ্রোহ করালো একথা বলে যে যদি বাবাকে গদীচ্যুত করতে পারে তবে তাকে মতায় বসানো হবে। পিতার বিরুদ্ধে আবু আব্দুল্লাহ বিদ্রোহ করলে তিনি মতা ছেড়ে পালায়ন করেন। আবু আব্দুল্লাহ মতা গ্রহণ করার পর পরই শুরু হয় স্পেনের মুসলমানদের পতন। আবু আব্দুল্লাহর দুর্বল নেতৃত্ব, নৈতিক অবস্থান চিন্তা করে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও রানী ইসাবেলার যৌথ বাহিনী স্পেন আক্রমন করে বসে।
আবু আব্দুল্লাহ আক্রমণ নিয়ে আলোচনার জন্য দরবারে বিশেষ সভার আয়োজন করেন। ফার্ডিন্য্ন্ডা আবু আব্দুল্লাহকে আশ্বাস দিলো যে তারা যদি বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে তাদের জীবন রা করা হবে। দুর্বল রাজা ও তার সভাসদগণ অতীতের চুক্তিভঙ্গের রেকর্ড ভুলে গিয়ে ফার্ডিন্যান্ডের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনেক সাহসী সৈনিক আত্মসমর্পনের পরিবর্তে লড়াই করে শাহাদাতের অমীয় পান করলেও অন্য সকলে গ্লানিকর আত্মসমর্পনের পথে যায়।
ফলে সহজেই ফার্ডিন্যান্ড গ্রানাডার রাজপথ সহ সমগ্রশহর দখল করে নেয় ২৪শে নভেম্বর ১৪৯১ সালে। তারা শুরু করে নৃশংস ও বর্বর পন্থার হত্যাবজ্ঞ, লুন্ঠন ও ধর্ষন। এসব অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে উঠলে অনেক মুসলিম স্থানে স্থানে বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহী এসব লোকজনকে হত্যা করার পাশাপাশি এক পর্যায়ে ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার বাহিনী ঘোষনা করে যারা শান্তি চায় তারা যেনো সব মসজিদে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। সরল বিশ্বাসে, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় হাজার হাজার মুসলিম আবাল-বৃদ্ধ বনিতা নগরীর মসজিদ সমূহে গিয়ে আশ্রয়গ্রহণ করলো। তখনও এসব মানুষ জানতোনা কত নিষ্ঠুর এক খেলা অপো করছে তাদের জন্য! মসজিদ গুলোতে মুসলমান নর-নারী ও শিশুরা নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কাঁদছে তখন রাতের আঁধারে জ্বালিয়ে দেয়া হলো সমস্ত মসজিদ। দাউ দাউ করা আগুন, নারী-পুরুষের আর্ত চিৎকার আর ফার্ডিন্যান্ড-ইসাবেলার ক্রুর হাসি একাকার হয়ে গেলো।
এই হলো গ্রানাডা ট্র্যাজেডি।
কী এক নির্মম পরিহাস অদৃষ্টের! ঘটনাটি ঘটলো ১লা এপ্রিল ১৪৯২। এমনি ঘটেছিলো ইহুদীদের হাতে খ্রীষ্টানদের পরিণতি অন্য এক ১লা এপ্রিল। প্রতারণা, হাসি তামাশাচ্ছলে ১লা এপ্রিল উদযাপিত হলেও এটি মূলত: মুসলমানদের জন্য এক ট্র্যাজেডির দিন।
একদিন যে কর্ডোভা ও গ্রানাডার মসজিদ গুলো থেকে পাঁচওয়াক্ত আজান ধ্বনিত হতো, আন্দোলিত হতো স্পেনের মুসলমানদের হৃদয়, আজ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে সব গীর্জার স্তম্ভ। যে কোন নামাজী স্পেনের বিমান বন্দরে নামাজে দাঁড়ালে অন্যরা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে-কী করছে এই লোক? আহ্ কী অসহ্য দৃশ্য!
আল্লামা ইকবাল যখন কর্ডোভায় যান তখন তাঁর হৃদয়ের কষ্ট বেরিয়ে আসে সেখানে রচিত কবিতা ‘কর্ডোভার মসজিদ” এ:
“সকল কলা-শৈলী তোমা পুজে তোমার গর্ব বয়।
তোমার তরেই আন্দালুসের মাটি কাবার তুল্য হয়।
........................
সত্যসেবক হায়, কোথা সে আরব দেশের ঘোড়াসওয়ার
মহত্তম চরিত্রটি করত বহন ঈমান যার।
........................
চোখের তারায় জাগে আহা, তোমার দেশের দিগ¦লয়
কত বরষ ধরে হেথায় আজান বিহীন প্রভাত হয়।
....................
ইনকিলাবের ঢেউ নাচে না, জীবন সে নয়, মৃত্যু যে,
জাতির পরমাত্মা বাঁচে উপপ্লবের নৃত্যে হে।
....................
কালের হাতে সেই সে জাতি মুক্ত তরবারির প্রায়,
কর্মকৃতি, হিসাব যে গো, নিত্য করে সাঁঝের ছায়।
............................
আন্দালুস, স্পেন, গ্রানাডা কর্ডোভা আজ এক অতীত স্মৃতির নাম, এক নীল কষ্টের নাম, দুঃসহ দুর্ভার যন্ত্রনার নাম। আর সেই কষ্ট আমাদেরই স্বীয় কৃত কর্মের ফল, আপন হাতের কামাই।
ট্র্যাজেডির শেষ নেই:
গরংভড়ৎঃঁহব হবাবৎ পড়সবং ধষড়হব
দুঃখের রজনী শেষ হতে চায় না।
মুসলিম উম্মাহর েেত্রই যেনো একথাটি সবচেয়ে বেশী প্রযোজ্য।
ফার্ডিন্যান্ডের হাতে স্পেনের পতন, চেঙ্গিসের হাতে বোখারার পতন, হালাকু খাঁর হাতে বাগদাদের পতন, লর্ড কাইভের হাতে সিরাজের পতন আর বেলফোর ঘোষণার মধ্যে দিয়ে ইসরাইল নামক মধ্যপ্রচ্যের বিষফোড়ার জন্ম এ সবই যেনো একই সুতোয় গাঁথা। আর বর্তমান সময়ে ইরাক ও আফগানিস্তানে যা হচ্ছে, গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যা কিছু ঘটছে এগুলোও বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়।
সময়ের পার্থক্য ছাড়া এসব ঘটনার প্রকৃতি, ল্য-উদ্দেশ্য, পরিণতি প্রায় এক ও অভিন্ন। আমরা হয়তো একটি ঘটনা বিশ্লেষন করি, কষ্ট পাই, আহত হই, আবার সাহও খুঁজে পাই কিন্তু এড়িয়ে যাই অপর ঘটনা। অথচ এসবের মাঝে থোড়াই পার্থক্য।
আমাদের এই যে চেইন অব ট্র্যাজেডি, তার কী কোন শেষ নেই?
যে দিকে তাকাই সে দিকেই দেখতে পাই একই দৃশ্যপট, একই দৃশ্যকাব্য, আমরা আমাদের অনৈক্য ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত, অবিমৃষ্যকারিতার মাশুলও দিয়ে চলছি।
কারণ ও প্রতিকার:
প্রথমত: জাতি হিসেবে আমাদের আত্মপরিচয় বিস্মৃতিই এর প্রধান কারণ। “তোমাদের জাতির পিতার নাম ইবরাহিম (আ) আর তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন “মুসলিম বা আত্ম সমর্পিত জাতি।”
বিজয় পর্বে আমরা এ মুসিলম পরিচয় উর্দ্বে তুলে ধরতাম, আল্লাহতে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে চলতাম আর তখন আল্লাহর প থেকে আকাশ ও জমিনের সবগুলো দূয়ার খুলে আমাদের জন্য আসতো বিজয়, বরকত ও রহমতের ধারা।
যখনই আমরা এ মূল পরিচয় ভুলে গিয়ে অন্যদের তুষ্টির চেষ্টা করেছি। তখনই এসেছে আমাদের পতন।
আজ তাই মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ে ঘুরে দাঁড়াবার দিন।
দ্বিতীয়ত: দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে গাফলতি ও ঔদাসীন্য আমাদেরকে বারবার পরাজিত করেছে। তোমাদেরকে শ্রেষ্ট জাতি হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে মানবতার জন্য, যেনো তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও ও অসৎকাজের থেকে বিরত রাখো। যদ্দিন আমরা এ দায়িত্ব পালন করেছি পৃথিবী আমাদের কুর্ণিশ করেছে। আর যখন থেকে বেহুশ, গাফেল হয়ে, দায়িত্ব বিস্মৃত, গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যাওয়া তৃণখন্ডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছি তখণ থেকে আমাদের বিশাল সংখ্যা আমাদের ধোঁকায় ফেলেছে।
ব্যক্তি ও সামষ্টিক পর্যায়ে আবার সকলকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে। দুষ্টের দমন কিংবা শরীর পতন হওয়া চাই আমাদের প্রত্যয়।
তৃতীয়ত: জাতীয় অনৈক্য, বিভেদ ও আন্তর্জাতিক অসংহতি খেয়ে ফেলেছে গোটা মুসলিম দুনিয়াকে। গ্রানাডা, বাগদাদ, বোখারা, পলাশী, ফিলিস্তিন যেদিকেই তাকাইনা কেন, সে সময়কার ঘটনাই পর্যালোচনা করিনা কেন, হোক তা প্রাচীন কিংবা আধুনিক কালের কথা একই হতাশার চিত্র ভেসে ওঠে আমাদের চোখে। “ঈমান, ভ্রাতৃত্ব, আল্লাহ প্রেম আর তাকওয়ার স্থান দখল করেছে ুদ্র ব্যক্তি, গোষ্টি ও জাতীয় স্বার্থ, প্রতিহিংসা ও খোদাহীনতা।
সে সময় যেমন বিভন্ন রাষ্ট্রের মুসলিম শাসকগণ অনৈক্য ও বিভেদের কারণে জাতীয় (উম্মাহর) প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেননি, আজো পারছেন না। তা না হলে , গ্রানাডার ঘটনাও ঘটত্নোা, ঘটতোনা প্রথম ক্রুসেডের পতন, ফিলিস্তিনের অভ্যূদয় কিংবা বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের সকরুণ পরিণতি।
এখনও বিশ্বে ৫৭টি মুসলিম দেশ অস্তিস্ত নিয়ে টিকে আছে, অনৈক্য ভূলে ঐক্যবদ্ধ হতে দেরী করলে এ সবের অস্তিত্ব বিলীন হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার হোক তা ভৌগলিক বিলুপ্তি কিংবা সাংস্কৃতিক অদৃশ্যায়ন।
আল্লাহর একটাই আহবান “তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধারণ করো। আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।”
চতুর্থত: আল্লাহর নবীর (সা) উপস্থিতিতে যেমন ছিলো আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই, হযরত হোসাইনের সময় যেমন ছিরো ইয়াজিদ, গ্রানাডায় যেমন ছিলো আবু আব্দুল্লাহ, জেরুজালেমে যেমন ছিলো ফিরোজ, পলাশীতে যেমন ছিলো মীর জাফর তেমনি সকল যুগেই কিছু মুনাফিক, ঘরের শত্র“ বিভীষণ মুসলমানদের পতনের, পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অর্থগৃধনু, মতালিন্সু এ সমস্ত হীন চরিত্রের লোক শেষ পর্যন্ত নিজেও কোন কিছু ভোগ করতে পারেনি, তারপরও ইতিহাসে আমরা এর পুনরাবৃত্তি দেখতে পাই।
এ সবের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা ছাড়া বিশ্ব মুসলিমের নবশক্তিতে আবির্ভুত হওয়া সম্ভব নয়।
পঞ্চমত: গ্রানাডা ট্র্যাজেডি আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় ইসলামের শত্র“রা যখনই সুযোগ করতে পেরেছে মুসলমানদের সরল বিশ্বাসকে পুজি করে তাদের প্রতারিত ও পরাজিত করেছে। সুতরাং সন্ধি ও লড়াই দুই অবস্থার জন্যেই আমাদের প্রস্তুত থাকা উ”িত। যাতে, কোন কারণে দুশমন গাদ্দারী করলে তার উপযুক্ত সাজা দেয়া যায়। মুসলিম একটি শান্তি প্রিয় জাতি কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সে প্রয়োজনে লড়াই করতে জানবেনা। আল্লাহ এই আহবানই করেছেন আমাদের “তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, জীবন দেয় ও নেয়।” অকাতরে জীবন দেয়া এবং প্রয়োজনে অত্যাচারীর টুটি চেপে ধরার মতো সৎসাহস তার থাকা চাই।
ষষ্টত: গ্রানাডার পতনের সামরিক কারণের চাইতেও তার সাংস্কৃতিক কারণ অনেক বেশী। একটি জাতি ক্রমশ: সাংস্কৃতিক ভাবে কতটুকু দেওলিয়া হলে তার আটশত বৎসর শাসনকালের নাম নিশানা এক শতাব্দীর মধ্যে মুছে যেতে পারে তা অবশ্যই ভাবনার দাবী রাখে। মতাসীনদের ঘরে ঘরে ইউরোপীয় শাসকদের সুন্দরী আত্মীয়দের বরণ করে নেয়ারও একটি পরিণতি তারা ভোগ করেছে, যা করেছে মোঘল বাদশাগণ হেরেমে রাজপুতসহ অন্যরমনীদের স্থান করে দিয়ে।
সাংস্কৃতিক ভাবে মুসলমান হিসেবে গড়ে উঠার সমূহ আয়োজন ছাড়া দিনের বিপর্যয় থেকে বাঁচা সম্ভব নয়।
সপ্তমত: গ্রানাডা ট্র্যাজেডির ৫২৬তমবর্ষে একটি কথাই বারবার মনে পড়ছে। ফার্ডিন্যান্ড কিংবা ইসাবেলার ক্রুর হাসির গমকে যেদিন সেখানকার সব শিশু কিশোর যুবা বৃদ্ধকে একযোগে হত্যা করা হয়েছিল। সেদিন হয়তো ওরা ভেবেছিল মুসলিম জাতির কেউ আর ইউরোপে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। সময়ের পালাবদলে তাদের সে স্বপ্ন ধুলায় মিশে গেছে। মিশনারী জাতি মুসলিম, তার সদস্যগণ আজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সমগ্র ইউরোপ-আমেরিকাসহ সব কটি মহাদেশ। আজ ইউরোপের প্রতিটি দেশেই আবারগড়ে ওঠছে মসজিদ, মিনার, সেখানে সেজদার অবণত হচ্ছে অযুত নিবেদিত প্রাণ আল্লাহর বান্দা।
সুতরাং আমাদের হতাশার কিংবা ব্যথিত হওয়ার কিছুই নেই। আল্লাহ তার আলোকে প্রজ্জ্বলিত রাখবেনই। তা কাফেরদের কাছে যতই কষ্টকর হোকনা কেন। হান্টিংটন ও তার দোসরদের হাজার প্রপাগান্ডার পরেও আমরা বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারি, যদি হই আমরা সত্যিকারের মুমিন।
গ্রানাডা ট্র্যাজেডি থেকে শুরু করে আজ অবধি পশ্চিমের সমস্ত ইসলাম বৈরীতা মূলত: ক্রসেডেরই প্রতিচ্ছায়া। কেবল রুপান্তরিত হচ্ছে সামরিক, সাংস্কৃতিক ও আধিপত্যবাদী ‘ক্রুসেডে’।
সুধীজন,
“সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, মিথ্যার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।”
আসুন, এই মহান দিনে আত্মতৃপ্তি কিংবা হতাশায় না ভুগে আমরা নিজেদের অবস্থান উপলব্ধি করি, ঐক্যবদধ হই, দাওয়াতে নিষ্ঠাবান হই আর সকল ধরনের জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি হোক তা জবানের , কলমের কিংবা সামরিক। আল্লাহর সাহায্য মুজাহিদের জন্য, ভীরু ও কাপুরুষের জন্য নয়। পশ্চিমের ভয়ে ‘জিহাদ’ শব্দটিকে পরিহার করা আমাদেরকে অন্য এক ট্র্যাজেডির দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমরা আর কোন নতুন ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হতে চাই না।
তথ্য পঞ্জি:
১ আল-কোরআন, আল ইমরান-১০৪. ১১০. ১৩৯, বাকারা-৪৩, মা’আরিজ-২৫, আলহাজ্ব-৪১, তওবা-১১১.
২. ক্রুসেডের প্রতিছায়া, মুহাম্মদ আসাদ, মুহাম্মদ আসাদ: শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলী, দি পাইওনিয়ার, পৃষ্ঠা ১১৪. ১২০।
৩. ক্রুসেড ও মুসলিম বিশ্ব, ডা: মুহাম্মদ গোলাম মোয়াজ্জেম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, মুসলিম বিশ্ব সংখ্যা, ১৯৮৪, পৃষ্ঠা-৬৫২।
৪.রিচার্ভ - চেঙ্গিস, বেগিন, সামিউল আহমদ খান, ই.ফা. পত্রিকা. মুসলিম বিশ্ব সংখ্যা ১৯৮৪. পৃষ্ঠ: ৬৬৬
৫.‘কর্ডোভা মসজিদ’ - আল্লামা ইকবাল; বালে জীবরীল।
৬.‘উন্দুলস মে ছান্দ - আল্লামা তকী ওছমানী
৭.‘ক্রুসেডের ইতিবৃত্ত’ আসকার ইবনে শাইখ, মদীনা পাবলিকেশন্স।
আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ
1 comments:
আপনাদের এই কাজ কে আল্লাহ কবুল করুন। ইতিহাসের উপর আরও বই চাই......। বিশেষ করে মুসলিম সাসন এর পরিনতির কারন গুলোর উপর.........