ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী

১২০৪ সালের মার্চ মাসে বাংলায় কায়েম হয় মুসলিম শাসন। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী সতেরজন ঘোড়সওয়ার সৈনিক নিয়ে আসেন বাংলায়। অত্যাচারী শাসক লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করেন। মুসলমানগণ প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর এ দেশ শাসন করেন। শান্তি, সৌহার্দ, উন্নয়ন-অগ্রগতি ও আদর্শের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা সমাজে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য রচিত হয় শান্তির নীড়। বিশ্ব দরবারে বাংলার পরিচিতি ও সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ‘জান্নাতুল বালাদ’ ‘প্রাচ্যের স্বর্গ’ ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত হয় এ ভূখণ্ডটি। মুসলিম শাসনের প্রথম কয়েক শতাব্দী কাটে মোটামুটি নির্বিঘ ও স্বচ্ছন্দে। পর্যায়ক্রমে মুসলিম রাজা-বাদশাদের হেয়ালীপনা ও আয়েশী জীবনের ঘোরে ডুবে যাবার ফলে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জালের বুনন শুরু হয়। সে সময়ের সাহসী আলেম নূর কুতবুল আলমের প্রতিরোধের মুখে রাজা গণেশের চক্রান্তও বেশিদিন টিকেনি। ১৫০৬ সালে শ্রী চৈতন্যও মুসলিম শাসন ধ্বংসের জন্য হিন্দুদেরকে ক্ষেপিয়ে তোলার যথেষ্ট চেষ্টা চালায়। কিন্তু মুসলিম শাহ এর দূরদর্শিতা এবং তৎকালীন সময়ের দেশপ্রেমিক সচেতন আলেমসমাজের ভূমিকার কারণে সব চক্রান্তই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

১৬৩৪ সালে ইউরোপীয় বণিকরা সর্বপ্রথম বাংলায় বাণিজ্য করার অনুমতি পায়। ১৬৫১ সালে তারা হুগলীতে কুঠি স্থাপন করে মুসলমানদের সঙ্গে শত্র“তার ঠিকাদারী নিয়েই এই ক্রুসেডার গোষ্ঠী ভারতবর্ষে পা রাখে। তখন তাদের এক হাতে ছিল বাইবেল আর অন্য হাতে তরবারী। এদেশে এসেই তারা বর্ণ হিন্দুদের সঙ্গে গড়ে তোলে তাদের বন্ধুত্ব। ভারতবর্ষের বর্ণিল ইতিহাসে বাক্ষ্মণ্যবাদীদের কূটচাল ও ক্ষমতা দখলের ঘৃণ্য অভিলিপ্সা একটি ট্রাজেডিক বাস্তবতা। বিদেশী প্রভুদের মন যুগিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে এদেশের হিন্দু জমিদার ও বর্ণ হিন্দুরা সবসময়ই আস্থার পরিচয় দিয়েছে। পরাধীনতার শৃঙ্খল দীর্ঘ হওয়ার এটাও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল। উড়ে এসে জুড়ে বসা বৃটিশ বেনিয়া গোষ্ঠী এদেশে পা রেখেই বর্ণ হিন্দুদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। প্রতিটি চক্রান্তই বাস্তবায়ন করে তাদের দ্বারা। ১৬৯০ সালের ২৪ আগস্ট জেমস চার্নক নামক একজন ইংরেজ সুতানুটির ঘাটে এসে নামে। তখন থেকেই এই স্যাঁতস্যাতে জলাকীর্ণ গ্রামকে কেন্দ্র করে মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে শুরু হয় ষড়যন্ত্রের খেলা। ইংরেজরা কলকাতা ও কাশিমবাজারে যাদেরকে কর্মচারী নিযুক্ত করে, তারা সবাই ছিল হিন্দু। ইংরেজ ও বর্ণ হিন্দুদের মধ্যে ষড়যন্ত্রমূলক মৈত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন গড়ে ওঠে। ১৭৫৩ সালে ইংরেজরা কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম নামে একটি দূর্গ তৈরি করে। এ সময়ের মধ্যে ইংরেজ ও হিন্দুদের মিলিত ষড়যন্ত্র আরো শক্তিশালী হয়। উর্মিচাঁদ, জগতশেঠ, রাজা কৃঞ্চচন্দ্র, গোপাল ভাঁড়, রাণী ভবানী, রাম প্রাসাদ আজু গোঁসাই ছিল এ ষড়যন্ত্রের প্রধান ব্যক্তি।


0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম