বলধা গার্ডেন থেকে যে ১টি DOI মেসেজ প্রচারিত হওয়ার বিবরন রয়েছে সেটিকে ইগনোর করছিনা।
তবে যা বলা হয় ঘটনাটি সম্পর্কে তা পুরোপুরি মেনেও নিতে পারছিনা।
কেন ?
সেটি দেখুন:
১.
হাজী গোলাম মোরশেদের নিজের বয়ানেই যেটা জানা যায় রাত ১১:০০ তে একটি অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোন এসেছিলো এবং তাকে জানিয়েছিলো "রেডিও মেসেজ প্রচার হয়ে গেছে"।
২.
অন্যদিকে সিদ্দিক সালিক এবং টিক্কা খানও এই মেসেজ শুনেছেন বলে দাবী করেছেন এবং ২ জনই ধারনা করেছেন কন্ঠটি শেখ মুজিবের ছিলো।
সিদ্দিক সালিক বলেছেন ক্ষীনকন্ঠস্বর ছিলো সেটি।
সিদ্দিক সালিক এবং টিক্কা খানের বক্তব্য অজয় রায়ের আর্টিকল থেকে
এখানে সিদ্দিক সালিক বলেছেন তার কাছে মনে হয়েছে মেসেজটি আগে টেপ রেডর্ডেড।
৩.
আবার অজয় রায়ের আর্টিকল থেকেই জানা যায় সেসময়কার নোয়াখালীর ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট মন্জ্ঞুরুল করিম ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই এই রকম একটি ঘোষনা শুনেছেন। তারমানে রাত ১২:০০ টার পরে !
আসুন বিভ্রান্তি গুলো দুর করি:
১.
ঘটনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত স্বাক্ষী হাজী গোলাম মোর্শেদ নিজেই বলেছেন তিনি ফোন রিসিভ করেছিলেন রাত ১১:০০ টার সময় ।
অথচ মন্জ্ঞুরুল করিম বলছেন তিনি নাকি রাত ১২:০০ টার পর সেই ঘোষনা শুনেছেন!
মন্জ্ঞুরুল করিম কেই নাকচ করা সমীচিন হবে।
২.
সিদ্দিক সালিক দাবী করেছেন সেই ঘোষনা মুজিব আগে থেকেই টেপ রেকর্ড করে রেখেছিলেন ।
কিন্তু সেটি শেখ মুজিবের কন্ঠস্বর ছিলো কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
কারন জানতে মঈদুল হাসানের পিডিএফটি আবার পড়ুন মনোযোগ দিয়ে।
মঈদুল হাসানের বক্তব্য , মুক্তিযুদ্ধ ও তার পূর্বাপর , প্রথমা প্রকাশনী ,প্রথম আলোর কনসার্ন
তাজউদ্দীন আহমেদ নিজেই টেপ রেকর্ডার নিয়ে গিয়েছিলেন ধানমন্ডী ৩২ এ যাতে করে মুজিবের স্বকন্ঠে একটি DOI মেসেজ রেকর্ড করে রাখা যায় । শেখ মুজিব রাজী হননি এবং তাজউদ্দীনের সাথে তার মতানৈক্য হয়েছিলো এটা নিশ্চিত সত্য।
তাজউদ্দীনকে উপেক্ষা করে অন্য কোন বিশ্বস্ত (!) কে স্বকন্ঠে রেকর্ড করা মেসেজ দিয়েছেন মুজিব এটা কিভাবে মেনে নেয়া সম্ভব ?
৩.
সিদ্দিক সালিককে খুব রিলায়েবল সোর্স যারা ভাবছেন তাদের জানানো প্রয়োজন ৭১ এর পর বাঙালী দরদী এবং মুজিব ভক্ত বনে যাওয়া সিদ্দিক সালিকের ৭১ এ ভূমিকার নমুনা।
সিডনী শনবার্গ সহ অন্যসব আন্তর্জাতিক সাংবাদিককে সিদ্দিক সালিক ১০ মার্চ চড়া গলায় কি বলেছিলেন যেটি ২৯ মার্চ নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়:
অপরাধী বিজিতের স্বভাবটাই হলো বিজয়ীকে দেবতা তুল্য প্রশংসা করে পাপ লঘু করা।
সিদ্দিক সালিক কেও তারচেয়ে বেশী কিছু ভাবা যায় কিনা সেটা পাঠকরা বিচার করবেন।
৪.
টিক্কা একটি জ্বলজ্যান্ত মিথ্যা কথা বলেছে । টিক্কার মতে ঐ ঘোষনা শুনেই নাকি তারা শেখ মুজিবকে আটক করেছে।
অথচ কে না জানে অপারেশন সার্চলাইট , অপারেশন বিগবার্ড এগুলোর পরিকল্পনা অনেক আগেই করা হয়েছিলো।
পড়ুন ক্যাপ্টেন রফিকের কলাম, ইত্তেফাক
৫.
টিক্কার মিথ্যার পরবর্তী প্রমান - ঘটনাটি ঘটেছে রাত ১০:৪৫ -১১:০০ এর মধ্যে।
পাকিস্তান রেডিও শেখ মুজিবকে আটকের কারন হিসেবে বলেছে রাত ১:৩০ টার ঘন্টাখানেক আগে তারা একটি DOI মেসেজ পেয়েছে।
সুনিশ্চিতভাবেই সেটি শেখ মুজিবের স্বকন্ঠে উচ্চারিত কোন Audible মেসেজ ছিলোনা।
সম্ভাব্য যেটি হতে পারে ঢাকা EPR থেকে সুবেদার মেজর শওকত আলী ও অন্য সহকর্মীরা গ্রেফতার হওয়ার আগ মুহুর্তে DOI মেসেজ গুলো শেখ মুজিবের নামে ট্রান্সমিট করছিলো সেগুলো।
কারন ঢাকা EPR থেকে DOI মেসেজ ট্রান্সমিট হওয়ার আনুমানিক সময় রাত ১২:০০-১২:২০ মিনিট।
৬.
সবচেয়ে চমকে দেয়া ১ টি বিষয় হলো :
যেই টিক্কা খান ঘটনার প্রায় ১৭ বছর পর ১৯৮৮ সালে ঢাকায় বসে নিজের কুখ্যাত জেনোসাইড ৭১ কে জায়েজ করার জন্য শেখ মুজিবের DOI মেসেজ শুনেছেন বলে দাবী করেছেন , সেই টিক্কা খান নিজেই ২৬ মার্চ , ১৯৭১ এ অপারেশন সার্চলাইট , বিগবার্ড এবং মিলিটারী ক্র্যাকডাউনকে জায়েজ করার জন্য রেডিও পাকিস্তানে প্রথম অফিসিয়াল ঘোষনা দিয়েছিলেন এবং সেখানে এই ঘটনার কোন উল্লেখই টিক্কা খান করেনি , অথচ মাত্র ৯- ১০ ঘন্টা আগেই নাকি এই লোক নিজ কানে শেখ মুজিবের কন্ঠস্বর শুনেছে!
সায়মন ড্রিং এর রিপোর্ট [২৮ মার্চ ,সানডে টেলিগ্রাফ]
একই রিপোর্ট সায়মন ড্রিং আবার করেছিলেন ডেইলী টেলিগ্রাফের জন্য
রিপোর্ট [২৯ মার্চ , ডেইলী টেলিগ্রাফ]:
দুটোর কোনটাতেই শেখ মুজিবের স্বকন্ঠে DOI মেসেজ টিক্কা নিজে শুনেছেন বলে কিছু পাওয়া যায়নি , অথচ এটি মাত্র ১০ ঘন্টা বা তারও কম সময় আগে ঘটেছে।
টিক্কা নিজেই বলেননি।
১৭ বছর পর মুসা সাদিকের কাছে মিথ্যা কথার পল্টি খাওয়াটা কি তাহলে সিদ্দিক সালিকের মতই হয়ে গেলোনা।
সালিক - টিক্কা , ৭১ এর গুরু শিষ্য একই পথেই হেটেঁছেন সম্ভবত।
৭ .
তাহলে সেই মেসেজটি যদি কার কন্ঠে প্রচারিত হলো।
সম্ভাব্য উত্তর :
ইতিহাসের অজ্ঞাত কোন চরিত্র নিজেকে "মুজিব " দাবী করে নকল ভয়েসে মেসেজটি পড়েছিলো।
সিদ্দিক সালিকের বক্তব্যেই দেখুন : তিনি মেসেজটি শুনেছিলেন ক্ষীনকন্ঠে।
এই প্রজেকশনটির ভিত্তি কি হতে পারে ?
হতে পারে নীচের বিষয়গুলো।
২৬ মার্চের সেই হতচকিত সময়টাতে "মুজিব" দাবী করে আরো অনেক ফলস মুজিব রেডিওতে বক্তব্য রেখেছেন।
দেখুন সেগুলো :
ক.
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট ২৮ মার্চ , ১৯৭১ দেখুন:
সেখানে কেউ একজন নিজেকে মুজিব দাবী করে বলছেন: "আমি মুক্ত এবং সবকিছু ঠিক আছে"
খ.
এবার এই পেপার ক্লিপটি দেখুন :
দ্য এজ , অস্ট্রেলিয়া , ২৮ মার্চ ১৯৭১ এর রিপোর্ট :
এখানেও একই ধরনের বক্তব্য।
কেউ একজন নিজেকে "মুজিব" দাবী করে বলেছেন: "আমি মুক্ত এবং স্বাধীন চট্রগ্রামে"
গ.
সবচে চমকে দেয়া একটি বিষয় দেখুন :
সানডে টেলিগ্রাফ , ডেভিড লোশাকের রিপোর্ট , ২৮ মার্চ ১৯৭১ :
রেডিও পাকিস্তানে যেখানে শেখ মুজিবকে আটক করার কথা বলা হয়েছে যেটা সত্য সেখানে নিজেকে শেখ মুজিব দাবী কারী একজন "ফলস মুজিব " বলেছেন :
"দেশও এখনো মুক্ত , আমিও এখনো মুক্ত।
২-১ দিনের ভেতরেই দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে।
তোমরা আত্নগোপন করো , সংগঠিত হও এবং হানাদারদের কে মোকাবেলা করো।"
এই "ফলস মুজিব" গোপন বেতার কেন্দ্র (স্বা.বা.বে.কে.) থেকে এটাও দাবী করেছেন :
"আমি আমার হেডকোয়ার্টার চট্রগ্রাম বন্দরে স্থাপন করেছি"
অন্য ফলস মুজিব গুলোকে চিনতে না পারলেও এই ফলস মুজিবটি কে ছিলেন সেটার একটা সুস্পষ্ট ধারনা পাবেন বেলাল মোহাম্মদের কাছে :
কমপক্ষে ১০ জায়গায় জিয়া পটিয়া থেকে কালুরঘাট আসার পথে বলেছেন:
"২/১ দিনের মধ্যে দেশ স্বাধীন হবে , পান্জ্ঞাবীদের কে আমরা খতম করে দেবো এবং উর্দুভাষায় যারা কথা বলবে তাদের কে শেষ করে দেন ! "
চট্রগ্রামে হেডকোয়ার্টার স্থাপনের ফিরিস্তিটাও জানুন:
ক্যাপ্টেন রফিক ২৩ মার্চ রাতে ডাঃ জাফরকে সংগে নিয়ে এম . আর . সিদ্দিকীর সাথে দেখা করেন এবং এম.আর. সিদ্দীকীকে অনুরোধ করেন শেখ মুজিবকে জানাতে যাতে শেখ মুজিবের হেড কোয়াটার চট্টগ্রামে স্থাপন করে।
ক্যাপ্টেন রফিকের কলাম , ইত্তেফাক
অন্যদিকে অজয় রায়ের আর্টিকলের ভায়ায় বেলাল মোহাম্মদের "স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র" , অনুপম প্রকাশনী , ১৯৯৩ , পৃ ৩৩ থেকে যেটা জানা যায় ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ মিনিটে যখন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে আবুল কাশেম স্বন্দীপ যখন অন এয়ার তখন স্টুডিওর বাইরে দাড়িয়ে ছিলেন ডাঃ জাফর !
অজয় রায়ের আর্টিকল ডাঃ জাফর বিষয়ে
যেই ডাঃ জাফরকে সংগে নিয়ে ক্যাপ্টেন রফিক শেখ মুজিবের হেড কোয়াটার চিটাগাং এ সেট করতে বলেছিলেন সেই ডাঃ জাফর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথেই ছিলেন যেখান থেকে ফলস মুজিব ( অতি সম্ভবত ৭১ 'র কিংবদন্তী মেজর জিয়া ) বলেছিলেন দেশ ২ /১ দিনের ভেতরে স্বাধীন হয়ে যাবে এবং হেড কোয়াটার চট্টগ্রামে !
শেষ করার আগে আরেক বার বলে নেই -
মেসেজটি যদি প্রচার হয়ে থাকে সেটা হয়েছিলো রাত ১০: ৪৫ - ১১:০০ এর ভেতরে ,
মুজিব নিজেই এই ব্যাপার নিয়ে চুপ ছিলেন ,
তাজউদ্দীন কে টেপ রেকর্ডেড কোন মেসেজ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ,
সিদ্দিক সালিক আর তার গুরু টিক্কার ভুয়ামী ,
সেই জরূরী সময়ে অনেক গুলো ফলস মুজিবের আবির্ভাব
........... সব মিলিয়ে পাঠকরা কি বুঝলেন ?
কন্ঠ কি মুজিবের ছিলো ?
তবে যা বলা হয় ঘটনাটি সম্পর্কে তা পুরোপুরি মেনেও নিতে পারছিনা।
কেন ?
সেটি দেখুন:
১.
হাজী গোলাম মোরশেদের নিজের বয়ানেই যেটা জানা যায় রাত ১১:০০ তে একটি অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোন এসেছিলো এবং তাকে জানিয়েছিলো "রেডিও মেসেজ প্রচার হয়ে গেছে"।
২.
অন্যদিকে সিদ্দিক সালিক এবং টিক্কা খানও এই মেসেজ শুনেছেন বলে দাবী করেছেন এবং ২ জনই ধারনা করেছেন কন্ঠটি শেখ মুজিবের ছিলো।
সিদ্দিক সালিক বলেছেন ক্ষীনকন্ঠস্বর ছিলো সেটি।
সিদ্দিক সালিক এবং টিক্কা খানের বক্তব্য অজয় রায়ের আর্টিকল থেকে
এখানে সিদ্দিক সালিক বলেছেন তার কাছে মনে হয়েছে মেসেজটি আগে টেপ রেডর্ডেড।
৩.
আবার অজয় রায়ের আর্টিকল থেকেই জানা যায় সেসময়কার নোয়াখালীর ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট মন্জ্ঞুরুল করিম ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই এই রকম একটি ঘোষনা শুনেছেন। তারমানে রাত ১২:০০ টার পরে !
আসুন বিভ্রান্তি গুলো দুর করি:
১.
ঘটনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত স্বাক্ষী হাজী গোলাম মোর্শেদ নিজেই বলেছেন তিনি ফোন রিসিভ করেছিলেন রাত ১১:০০ টার সময় ।
অথচ মন্জ্ঞুরুল করিম বলছেন তিনি নাকি রাত ১২:০০ টার পর সেই ঘোষনা শুনেছেন!
মন্জ্ঞুরুল করিম কেই নাকচ করা সমীচিন হবে।
২.
সিদ্দিক সালিক দাবী করেছেন সেই ঘোষনা মুজিব আগে থেকেই টেপ রেকর্ড করে রেখেছিলেন ।
কিন্তু সেটি শেখ মুজিবের কন্ঠস্বর ছিলো কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
কারন জানতে মঈদুল হাসানের পিডিএফটি আবার পড়ুন মনোযোগ দিয়ে।
মঈদুল হাসানের বক্তব্য , মুক্তিযুদ্ধ ও তার পূর্বাপর , প্রথমা প্রকাশনী ,প্রথম আলোর কনসার্ন
তাজউদ্দীন আহমেদ নিজেই টেপ রেকর্ডার নিয়ে গিয়েছিলেন ধানমন্ডী ৩২ এ যাতে করে মুজিবের স্বকন্ঠে একটি DOI মেসেজ রেকর্ড করে রাখা যায় । শেখ মুজিব রাজী হননি এবং তাজউদ্দীনের সাথে তার মতানৈক্য হয়েছিলো এটা নিশ্চিত সত্য।
তাজউদ্দীনকে উপেক্ষা করে অন্য কোন বিশ্বস্ত (!) কে স্বকন্ঠে রেকর্ড করা মেসেজ দিয়েছেন মুজিব এটা কিভাবে মেনে নেয়া সম্ভব ?
৩.
সিদ্দিক সালিককে খুব রিলায়েবল সোর্স যারা ভাবছেন তাদের জানানো প্রয়োজন ৭১ এর পর বাঙালী দরদী এবং মুজিব ভক্ত বনে যাওয়া সিদ্দিক সালিকের ৭১ এ ভূমিকার নমুনা।
সিডনী শনবার্গ সহ অন্যসব আন্তর্জাতিক সাংবাদিককে সিদ্দিক সালিক ১০ মার্চ চড়া গলায় কি বলেছিলেন যেটি ২৯ মার্চ নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়:
অপরাধী বিজিতের স্বভাবটাই হলো বিজয়ীকে দেবতা তুল্য প্রশংসা করে পাপ লঘু করা।
সিদ্দিক সালিক কেও তারচেয়ে বেশী কিছু ভাবা যায় কিনা সেটা পাঠকরা বিচার করবেন।
৪.
টিক্কা একটি জ্বলজ্যান্ত মিথ্যা কথা বলেছে । টিক্কার মতে ঐ ঘোষনা শুনেই নাকি তারা শেখ মুজিবকে আটক করেছে।
অথচ কে না জানে অপারেশন সার্চলাইট , অপারেশন বিগবার্ড এগুলোর পরিকল্পনা অনেক আগেই করা হয়েছিলো।
পড়ুন ক্যাপ্টেন রফিকের কলাম, ইত্তেফাক
৫.
টিক্কার মিথ্যার পরবর্তী প্রমান - ঘটনাটি ঘটেছে রাত ১০:৪৫ -১১:০০ এর মধ্যে।
পাকিস্তান রেডিও শেখ মুজিবকে আটকের কারন হিসেবে বলেছে রাত ১:৩০ টার ঘন্টাখানেক আগে তারা একটি DOI মেসেজ পেয়েছে।
সুনিশ্চিতভাবেই সেটি শেখ মুজিবের স্বকন্ঠে উচ্চারিত কোন Audible মেসেজ ছিলোনা।
সম্ভাব্য যেটি হতে পারে ঢাকা EPR থেকে সুবেদার মেজর শওকত আলী ও অন্য সহকর্মীরা গ্রেফতার হওয়ার আগ মুহুর্তে DOI মেসেজ গুলো শেখ মুজিবের নামে ট্রান্সমিট করছিলো সেগুলো।
কারন ঢাকা EPR থেকে DOI মেসেজ ট্রান্সমিট হওয়ার আনুমানিক সময় রাত ১২:০০-১২:২০ মিনিট।
৬.
সবচেয়ে চমকে দেয়া ১ টি বিষয় হলো :
যেই টিক্কা খান ঘটনার প্রায় ১৭ বছর পর ১৯৮৮ সালে ঢাকায় বসে নিজের কুখ্যাত জেনোসাইড ৭১ কে জায়েজ করার জন্য শেখ মুজিবের DOI মেসেজ শুনেছেন বলে দাবী করেছেন , সেই টিক্কা খান নিজেই ২৬ মার্চ , ১৯৭১ এ অপারেশন সার্চলাইট , বিগবার্ড এবং মিলিটারী ক্র্যাকডাউনকে জায়েজ করার জন্য রেডিও পাকিস্তানে প্রথম অফিসিয়াল ঘোষনা দিয়েছিলেন এবং সেখানে এই ঘটনার কোন উল্লেখই টিক্কা খান করেনি , অথচ মাত্র ৯- ১০ ঘন্টা আগেই নাকি এই লোক নিজ কানে শেখ মুজিবের কন্ঠস্বর শুনেছে!
সায়মন ড্রিং এর রিপোর্ট [২৮ মার্চ ,সানডে টেলিগ্রাফ]
একই রিপোর্ট সায়মন ড্রিং আবার করেছিলেন ডেইলী টেলিগ্রাফের জন্য
রিপোর্ট [২৯ মার্চ , ডেইলী টেলিগ্রাফ]:
দুটোর কোনটাতেই শেখ মুজিবের স্বকন্ঠে DOI মেসেজ টিক্কা নিজে শুনেছেন বলে কিছু পাওয়া যায়নি , অথচ এটি মাত্র ১০ ঘন্টা বা তারও কম সময় আগে ঘটেছে।
টিক্কা নিজেই বলেননি।
১৭ বছর পর মুসা সাদিকের কাছে মিথ্যা কথার পল্টি খাওয়াটা কি তাহলে সিদ্দিক সালিকের মতই হয়ে গেলোনা।
সালিক - টিক্কা , ৭১ এর গুরু শিষ্য একই পথেই হেটেঁছেন সম্ভবত।
৭ .
তাহলে সেই মেসেজটি যদি কার কন্ঠে প্রচারিত হলো।
সম্ভাব্য উত্তর :
ইতিহাসের অজ্ঞাত কোন চরিত্র নিজেকে "মুজিব " দাবী করে নকল ভয়েসে মেসেজটি পড়েছিলো।
সিদ্দিক সালিকের বক্তব্যেই দেখুন : তিনি মেসেজটি শুনেছিলেন ক্ষীনকন্ঠে।
এই প্রজেকশনটির ভিত্তি কি হতে পারে ?
হতে পারে নীচের বিষয়গুলো।
২৬ মার্চের সেই হতচকিত সময়টাতে "মুজিব" দাবী করে আরো অনেক ফলস মুজিব রেডিওতে বক্তব্য রেখেছেন।
দেখুন সেগুলো :
ক.
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট ২৮ মার্চ , ১৯৭১ দেখুন:
সেখানে কেউ একজন নিজেকে মুজিব দাবী করে বলছেন: "আমি মুক্ত এবং সবকিছু ঠিক আছে"
খ.
এবার এই পেপার ক্লিপটি দেখুন :
দ্য এজ , অস্ট্রেলিয়া , ২৮ মার্চ ১৯৭১ এর রিপোর্ট :
এখানেও একই ধরনের বক্তব্য।
কেউ একজন নিজেকে "মুজিব" দাবী করে বলেছেন: "আমি মুক্ত এবং স্বাধীন চট্রগ্রামে"
গ.
সবচে চমকে দেয়া একটি বিষয় দেখুন :
সানডে টেলিগ্রাফ , ডেভিড লোশাকের রিপোর্ট , ২৮ মার্চ ১৯৭১ :
রেডিও পাকিস্তানে যেখানে শেখ মুজিবকে আটক করার কথা বলা হয়েছে যেটা সত্য সেখানে নিজেকে শেখ মুজিব দাবী কারী একজন "ফলস মুজিব " বলেছেন :
"দেশও এখনো মুক্ত , আমিও এখনো মুক্ত।
২-১ দিনের ভেতরেই দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে।
তোমরা আত্নগোপন করো , সংগঠিত হও এবং হানাদারদের কে মোকাবেলা করো।"
এই "ফলস মুজিব" গোপন বেতার কেন্দ্র (স্বা.বা.বে.কে.) থেকে এটাও দাবী করেছেন :
"আমি আমার হেডকোয়ার্টার চট্রগ্রাম বন্দরে স্থাপন করেছি"
অন্য ফলস মুজিব গুলোকে চিনতে না পারলেও এই ফলস মুজিবটি কে ছিলেন সেটার একটা সুস্পষ্ট ধারনা পাবেন বেলাল মোহাম্মদের কাছে :
কমপক্ষে ১০ জায়গায় জিয়া পটিয়া থেকে কালুরঘাট আসার পথে বলেছেন:
"২/১ দিনের মধ্যে দেশ স্বাধীন হবে , পান্জ্ঞাবীদের কে আমরা খতম করে দেবো এবং উর্দুভাষায় যারা কথা বলবে তাদের কে শেষ করে দেন ! "
চট্রগ্রামে হেডকোয়ার্টার স্থাপনের ফিরিস্তিটাও জানুন:
ক্যাপ্টেন রফিক ২৩ মার্চ রাতে ডাঃ জাফরকে সংগে নিয়ে এম . আর . সিদ্দিকীর সাথে দেখা করেন এবং এম.আর. সিদ্দীকীকে অনুরোধ করেন শেখ মুজিবকে জানাতে যাতে শেখ মুজিবের হেড কোয়াটার চট্টগ্রামে স্থাপন করে।
ক্যাপ্টেন রফিকের কলাম , ইত্তেফাক
অন্যদিকে অজয় রায়ের আর্টিকলের ভায়ায় বেলাল মোহাম্মদের "স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র" , অনুপম প্রকাশনী , ১৯৯৩ , পৃ ৩৩ থেকে যেটা জানা যায় ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ মিনিটে যখন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে আবুল কাশেম স্বন্দীপ যখন অন এয়ার তখন স্টুডিওর বাইরে দাড়িয়ে ছিলেন ডাঃ জাফর !
অজয় রায়ের আর্টিকল ডাঃ জাফর বিষয়ে
যেই ডাঃ জাফরকে সংগে নিয়ে ক্যাপ্টেন রফিক শেখ মুজিবের হেড কোয়াটার চিটাগাং এ সেট করতে বলেছিলেন সেই ডাঃ জাফর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথেই ছিলেন যেখান থেকে ফলস মুজিব ( অতি সম্ভবত ৭১ 'র কিংবদন্তী মেজর জিয়া ) বলেছিলেন দেশ ২ /১ দিনের ভেতরে স্বাধীন হয়ে যাবে এবং হেড কোয়াটার চট্টগ্রামে !
শেষ করার আগে আরেক বার বলে নেই -
মেসেজটি যদি প্রচার হয়ে থাকে সেটা হয়েছিলো রাত ১০: ৪৫ - ১১:০০ এর ভেতরে ,
মুজিব নিজেই এই ব্যাপার নিয়ে চুপ ছিলেন ,
তাজউদ্দীন কে টেপ রেকর্ডেড কোন মেসেজ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ,
সিদ্দিক সালিক আর তার গুরু টিক্কার ভুয়ামী ,
সেই জরূরী সময়ে অনেক গুলো ফলস মুজিবের আবির্ভাব
........... সব মিলিয়ে পাঠকরা কি বুঝলেন ?
কন্ঠ কি মুজিবের ছিলো ?
লেখক : ব্লগার দাসত্ব
0 comments: