DOI : ২ টি টেলিফোন , রাত ১২-১.০০ টা , শেখ মুজিবের ট্রু লাইস : মার্চ ২৬

স্বাধীনতার ঘোষনা বিতর্ক অবসানে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে সেখানে বিচারপতি খায়রুল হকের বিচারিক অভিমতই আমাকে এই পোস্ট টি নিয়ে চিন্তা করার উৎসাহ দিয়েছে।

সেখানে যেটা বলেছিলেন খায়রুল হক :

"এটি জিজ্ঞাস্য হতে পারে যে বিচারকরা ইতিহাস নির্ধারন করতে পারে কিনা । মূলত আমরা ইতিহাস নির্ধারনের দায়িত্ব নিতে পারিনা। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে মুজিব নগর সরকারের ঘোষনা মোতাবেক স্বাধীনতা দিবস ২৬ শে মার্চ এবং শেখ মুজিবর রহমান এই ঘোষনা দেন। এর ব্যতয় ঘটলে সংবিধান লংঘন হয় , সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্যই এই রায় ।"

সুতরাং বিষয়টা ইতিহাসের তথ্যের কাঁটাছেড়ায় নির্ভুল প্রমানিত কিনা সেটা এখনো পেন্ডিং রয়ে গেছে।


২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা দেশব্যপী ছড়িয়ে পড়েছিলো এটা নিরেট সত্য ইতিহাস ।কিন্তু সেই ঘোষনা গুলোর ভেতরে তারতম্য পাওয়া যায় বক্তব্যের দিক থেকে এবং সোর্সের দিক থেকেও।

তাই ধানমন্ডী ৩২ নং থেকে সেদিন এই মেসেজ গুলো কিভাবে বেরিয়ে এসেছিলো অর্থাৎ সেই রূদ্ধশ্বাস সময়টাতে শেখ মুজিব কিভাবে ধানমন্ডী ৩২ নং এর বাইরের লোকদের সাথে কমিউনিকেট করেছিলেন এবং মেসেজ গুলো প্রচারকারী ব্যক্তিদের হাতে পৌছেছিলো সেটার চুলচেরা বিশ্লেষন এখনো পাইনি।

মোটা দাগে বলে ফেলা হয় টেলেক্স , টেলিফোন , ওয়্যারলেসে মাধ্যমে মেসেজ পাঠানো হয়েছিলো।

কিন্তু তথ্যগুলোর কখনোই মাইক্রস্কোপিক ডায়াগনসিস হয়েছে বলে মনে হয়নি।

সেই উদ্দেশ্যেই এই .....

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং : DOI (Declaration of Independence).

প্রথমেই দেখা যাক ধানমন্ডী ৩২ নং এ মার্চ ২৫ কি ঘটেছিলো:

সন্ধ্যা ৬:০০ :

সুপরিচিত পাকিস্তানী সাংবাদিক তারিক আলীর পিতা মাজহার আলী এবং রেহমান সোবহান শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন এবং তাকে জানান মিলিটারী ক্র্যাকডাউন আসন্ন।

[ সূত্র: বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এবং একজন প্রতক্ষ্যদর্শীর ভাষ্য , রেহমান সোবহান , ভোরের কাগজ প্রকাশনী , ১৯৯৪ ]

শেখ মুজিব এরপর ইয়াহিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকেন।
এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১জন সংবাদবাহক স্থানীয় এবং বিদেশী সাংবাদিকদের মাঝে ১টি প্রেসনোট বিলি করেন যেটিতে উল্লেখ করা হয়:
"প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা চুড়ান্ত হয়েছে , ক্ষমতা হস্তান্তরের মতানৈক্য হয়েছে এবং আমি (বংগবন্ধু) আশা করি প্রেসিডেন্ট তা ঘোষনা করবেন"।
এবিষয়ে অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলেন:
"আমার দুঃখ হয় , এই নির্বুদ্ধিতা সম্পর্কে আমার কোন মন্তব্য নেই"

[ সূত্র: রেপ অব বাংলাদেশ , অ্যান্থনি মাসকারেনহাস , অনুবাদ মযহারুল ইসলাম , ১৯৭৩ , পৃষ্ঠা:১১৩ ]

২৫ শে মার্চ ইয়াহিয়া এবং ভুট্টোর ভেতর ৪৫ মিনিটের ১টি মীটিং হয়।
শেখ মুজিব পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী ২৫শে মার্চে ইয়াহিয়ার ভাষনের জন্য অপেক্ষা করেন।

সন্ধ্যা ৬:০০ টা পরবর্তী:

ইয়াহিয়া করাচীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার এই ঢাকা ডিপারচার এর প্রতক্ষ্যদর্শী ছিলেন ২ জন বাঙালী সামরিক কর্মকর্তা।

১.

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে এটি প্রতক্ষ্য করেন লে. কর্নেল এ. আর চৌধুরী।
২.

বিমানবন্দরে এটি প্রতক্ষ্য করেন এয়ারফোর্সের গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খোন্দকার।



ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের কলাম থেকে যেটা জানা যায়
ইয়াহিয়া বিকাল ৫: ৪৫ এ প্রেসিডেন্টস হাউজ থেকে বেরিয়ে সোজা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যান এবং সেখান থেকে গোপনে এয়ারপোর্ট যান।

ক্যাঃ রফিকের কলাম , ২৫ মার্চ , ২০১০ , ইত্তেফাক

শেখ মুজিব তখনো ১ টি ফোনকলের অপেক্ষায় ছিলেন।
এবং ডঃ কামাল হোসেন কে বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন কোন ফোন এসেছে কিনা।
প্রতিবারই ডঃ কামালের উত্তর ছিলো না সূচক।
ফোনটি আসার কথা ছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেঃ জেনাঃ পীরজাদার কাছ থেকে।
কারন ইয়াহিয়া বলেছিলো তার ভাষন প্রচারের আগে পীরজাদার সাথে শেখ মুজিবের ১টি ছোট বৈঠক হবে।
সেই ফোনকল আর আসেনি কোনদিন।শেখ মুজিবও বুঝতে পারেন সব আশা শেষ। ইয়াহিয়া ধোঁকা দিয়েছে।

[ সূত্র : বংগবন্ধু শেখ মুজিব , জীবন ও রাজনীতি , ১ম খন্ড , সম্পাদক মোনায়েম সরকার , বাংলা একাডেমী ২০০৮ , পৃষ্ঠা:৪৪৭ ]

সন্ধ্যা ৭:০০:

সিডনী শনবার্গের রিপোর্ট [ ২৯ মার্চ , নিউইয়র্ক টাইমস ] থেকে যেটা জানা যায় দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বাঙালী বিহারীর সংঘর্ষ হয় এবং শেখ মুজিব ১টি বিবৃতিতে এর নিন্দা জানান।



রাত ৮:০০ - ৮:৩০:

এরকম একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে এইচ এম কামরুজ্জামান , ক্যাপ্টেন মনসুর আলী , তাজউদ্দীন আহমদ এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে চলে যান।

শেখ ফজলুল হক মনি ২৫ শে মার্চ সন্ধ্যায়ই টুংগীপাড়া চলে যায় এবং শেখ কামাল রাত ৯টায় ধানমন্ডী ৩২নং ছেড়ে যান।

[ সূত্র : শেখ মুজিব , এস.এ. করিম, ইউপিএল, ২০০৫, পৃষ্ঠা ১৯৫ ]

রাত ৮:৩০ - ৯:০০:

শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে ধানমন্ডী ৩২ নাম্বার থেকে বেরিয়ে আসেন ঢাকা ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার সৈয়দ শাহজাহান।

মঈনুল আলমের কলাম , ২৫ মার্চ ২০১০ , ইত্তেফাক

রাত ৯:০০- ৯:৩০:

ডঃ কামাল হোসেন এবং ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম ৩২নং থেকে বিদায় নেন।



অজয় রায়ের স্বাধীনতার ঘোষনা বিষয়ক আর্টিকল থেকে যেটা জানা যায় রাত ৯ :০০ টায় সাইমন ড্রিং শেখ মুজিব কে ফোন করেছিলেন , সোর্স: ৩১ মার্চ ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ

এই তথ্যটির ১ টি ক্লু পাওয়া যায় সাইমন ড্রিং এর আরেকটি রিপোর্টে।

২৯ মার্চ , ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ :



রাত ৯:১০:

ঠিক এই সময়েই প্রথমবারের মত গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন জানান রেহমান সোবহান।

[ সূত্র : প্রাগুক্ত ]

রাত ১০:০০ - ১০:৩০:

ঠিক এই সময়টাতেই শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন নঈম গহর।
কেননা শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে তিনি এম.আর. সিদ্দীকীর সাথে ফোনে কথা বলেন এবং কথা বলা শেষ হলে দেখেন রাত প্রায় ১১: ০০

নঈম গহরের কলাম , ২৫ মার্চ , ২০১০ , দৈনিক সমকাল

রাত ১০:৩০:

ইস্ট পাকিস্তান শিপিং কর্পোরেশনের এম.ডি. ক্যাপ্টেন রহমান এবং ২ জন এক্স নেভাল অফিসার কমান্ডার ফারুক এবং লে. মতিউর রহমান শেখ মুজিবের সাথে দেখা করতে আসেন।
এ সময় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধান আব্দুর রাজ্জাক এর ১টি ফোন আসে শেখ মুজিবের কাছে এবং "ইপিআর কে ডিসার্মড করা হয়েছে" শেখ মুজিব কে এতটুকু বলতে না বলতে লাইন কেটে যায়।

[ সূত্র : শেখ মুজিবের বাসভবনে সে সময় অবস্থানরত পারিবারিক কর্মচারী মমিনুল হক খোকা , প্রাগুক্ত , পৃষ্ঠা - ৪৪৭-৪৮ ]

রাত ১১:০০:

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধান আব্দুর রাজ্জাক শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাত করে তাঁকে আত্মগোপন করার অনুরোধ জানালে, শেখ মুজিব তাকে জানান তিনি বাসা ছেড়ে যাবেননা , মরতে হলে সেখানেই মরবেন।

[ সূত্র : আর্চার ব্লাড, দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ, ইউপিএল, ২০০৬, পৃষ্ঠা ১৯৮]

যদিও শেখ মুজিবের এই মুখের গর্জন শেষ পর্যন্ত একেবারেই বর্ষায়নি
বাস্তবিকভাবে।

সাইমন ড্রিং এর [৩০ মার্চ , ডেইলী টেলিগ্রাফ] রিপোর্টে যেটা পাওয়া যায় রাত ১০:০০ - ১১:০০ টার মধ্যে শেখ মুজিবের সাথে তার ১ জন রাজনৈতিক শিষ্যের কথা হয়েছিলো ফোনে :

৩০ মার্চ , ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ :



এই সহকর্মীটি রাজ্জাক ভিন্ন অন্য কেউ বলেই মনে হচ্ছে । কারন রাজ্জাকের বেলায় লাইন কেটে গিয়েছিলো।

এখান থেকে এই তথ্যটিও বেরিয়ে আসে পাক আর্মি ব্যারাক থেকে বেরিয়ে আসে রাত ১০:০০ টার দিকে।

রাত ১১:০০ - ১১:৩০:

সিরাজুল আলম খান , আ.স.ম আব্দুর রব , শাহজাহান সিরাজের শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে ধানমন্ডী ৩২নং ত্যাগ করেন।
ওয়াজেদ মিয়ার বক্তব্য অনুসারে এটাই ছিলো শেখ মুজিবের সাথে কারো ঐ রাতে শেষ বৈঠক।

এই সময়টাতে শেখ মুজিবের বাসায় একটি ফোন কল আসে যেটির বর্ণনা দিয়েছেন হাজী গোলাম মোরশেদ :
"রাত ১১ টায় বলধা গার্ডেন থেকে ১টা ফোন এলো। বললো : রেডিও মেসেজ প্রচার হয়ে গেছে ।"

[ সূত্র : হাজী গোলাম মোর্শেদের বক্তব্য , দৈনিক পূর্বদেশ , স্বাধীনতা সংখ্যা , ১৯৯০]

১১:৩০:

ওয়াজেদ মিয়ার বক্তব্য অনুসারে ঝন্টু (জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা জাকারিয়া চৌধুরীরা ভাই) ধানমন্ডী ৩২নং এ আসেন। শেখ মুজিব কে ঝন্টু অপারেশন সার্চলাইট এবং নির্বিচার গোলাগুলির খবর জানান।
ঝন্টুর মাধ্যমে পরিস্থিতি অবগত হয়ে শেখ মুজিব হাসিনা , রেহানা এবং জেলীকে ১টি ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দেন আত্নগোপন করার জন্য।
শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্যদের আত্নগোপনের জন্য ঐ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়া হয়েছিলো।
ওয়াজেদ মিয়া নিজেও ১১:৩০ এর পর ধানমন্ডী ৩২নং ত্যাগ করেন।

[ সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ, ইউপিএল, ২০০০, পৃ ৮৪ ]

"সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেখ মুজিবের বাসায় ছিলো মানুষের ঢল।কিন্তু ইয়াহিয়ার ঢাকাত্যাগের খবর প্রকাশ হয়ে পড়ায় এবং সেনাবাহিনীর মতিগতি দেখে সন্ধ্যার পর থেকেই ঢাকার সর্বত্র বাড়তে থাকে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।
এ পরিস্থিতিতে শেখ মুজিব ১ বিবৃতিতে বিভিন্নস্থানে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষনের প্রতিবাদে হরতাল আহ্বান করেন।"

[ সূত্র : বংগবন্ধু শেখ মুজিব , জীবন ও রাজনীতি , ১ম খন্ড , সম্পাদক মোনায়েম সরকার , বাংলা একাডেমী ২০০৮ , পৃষ্ঠা:৪৪৭ ]

ইত্তেফাকের শিরোনাম: মার্চ ২৬ , ১৯৭১



পিপল'স ভিউ'র শিরোনাম: মার্চ ২৬ , ১৯৭১




রাত ১:০০:

রাত ১ টায় অপারেশন সার্চলাইট শুরু করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মত পাক আর্মির ১ম দলটি ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে ফার্মগেটের নিকট ব্যারিকেডের সম্মুখীন হয়।
রাত ৯:৩০ তেই সেনাবাহিনীর বহর কে বাধা দেয়ার জন্য রাস্তায় গাছ ফেলে অসংখ্য মানুষের জমায়েত হয় সেখানে। প্রতিরোধ তখনই শুরু হয়ে যায় পাক আর্মির বিরুদ্ধে।

[ সূ্ত্র : উইটনেস টু সারেন্ডার , সিদ্দিক সালিক , ইউপিএল , ১৯৭৭ , পৃষ্ঠা ৭৩]

রাত ১:১০ - ১: ৩০:

ঠিক এই সময়টাতেই শেখ মুজিব অস্বাভাবিক কাপুরোষিত ভাবে আত্নসমর্পন করেন।
এ বিষয়ে অপারেশন বিগবার্ডের ইনচার্জ জহিরুল আলম খান নিজেই বই লিখেছেন : দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ।
সেখানে যা লেখা রয়েছে:
এবার আসুনদেখি অপারেশন বিগবার্ড বিষয়ে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) জহিরুল আলম খানের বক্তব্য কি :
___________________________
" তল্লাশী চালানোর জন্য এরপর একটি দল ঢুকলো। প্রহরীদের একজনকে বলা হলো রাস্তা দেখাতে। কিছুদূর যাওয়ার পর তার পাশে থাকা সৈন্যকে দা দিয়ে আক্রমণ করতে গিয়েছিলো সে, কিন্তু জানতো না তার উপর নজর রাখা হচ্ছে। তাকে গুলি করে আহত করা হয়। এরপর সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠলো সার্চপার্টি। একের পর এক দরজা খুলে কাউকে পাওয়া গেলো না। একটা রুম ভেতর থেকে আটকানো ছিলো। ওপরে ওঠার পর কে যেন আমাকে বললো বদ্ধ ঘর থেকে কেমন অদ্ভুত শব্দ আসছে। মেজর বিল্লালকে বললাম দরজা ভাঙতে। আর আমি নীচে নামলাম ক্যাপ্টেন সাঈদের দল এলো কিনা দেখতে।
সাঈদের সঙ্গে কথা বলার সময় একটা গুলির শব্দ হলো। এরপর গ্রেনেড বিস্ফোরন ও তার সাথে সাব-মেশিনগানের ব্রাশ। ভাবলাম কেউ হয়তো শেখ মুজিবকে মেরে ফেলেছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি সেই বদ্ধ রুমের দরজায় দাড়িয়ে মুজিব। রীতিমতো সন্ত্রস্ত।

পরে জানতে পারলাম মেজর বিল্লালের লোকেরা যখন দরজা ভাঙার চেষ্টা করছিলো তখন কেউ একজন সেদিকে পিস্তলের গুলি ছোড়ে। ভাগ্যক্রমে কারো গায়ে তা লাগেনি। বাধা দেয়ার আগেই বারান্দার যেদিক থেকে গুলি এসেছিলো সেদিকে গ্রেনেড ছোড়ে একজন সৈনিক। এরপর সাবমেশিনগান চালায়। গ্রেনেডের প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির আওয়াজে বদ্ধ সে রুমের ভেতর থেকেচিৎকার করে সাড়া দেন শেখ মুজিব এবং বলেন তাকে না মারার প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি বেরিয়ে আসবেন। নিশ্চয়তা পেয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। বেরুনোর পর হাবিলদার মেজর খান ওয়াজির (পরে সুবেদার) তাকে শারীরিকভাবে অপদস্থ করেন।

শেখ মুজিবকে বললাম আমার সঙ্গে আসতে। উনি জানতে চাইলেন পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারবেন কিনা। আমি তাকে তা জলদি সারতে বললাম। এরপর গাড়ির দিকে হাটা ধরলাম। এরমধ্যে সদরে রেডিও বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছি যে আমরা শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করেছি। (বিগবার্ড ইন কেইজ)।
মুজিব এবার বললেন ভুলে পাইপ ফেলে এসেছেন তিনি। আমাকে নিয়ে পাইপ আনতে গেলেন আবার। এরমধ্যে মুজিব আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। টের পেয়ে গেছেন তার কোনো ক্ষতি করা হবে না।বললেন, তাকে ফোন করে বললে তিনি নিজেই চলে আসতেন।"
-বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জহিরুল আলম , ইনচার্জ - অপারেশন বিগবার্ড
________________________
[ সুত্র: দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ , কৃতজ্ঞতা স্বীকার : অপারেশন বিগবার্ড , ২৫ শে মার্চ , ১৯৭১ - অমি রহমান পিয়াল]

এই ঘটনার ব্যাপারে একটি অদ্ভুত তথ্য আছে টাইম ম্যাগাজিনের [ ৩ মে , ১৯৭১ ] রিপোর্টে :



পুরো বিষয়টির ভেরিফিকেশনের জন্য পড়ুন

অফেন্ডিং শেখ মুজিব-১

জহিরুল আলম খানের বক্তব্যের সাথে মিলে যায় এরকম আরো ২ টি নিউজ ক্লিপস পাওয়া যায়।

১.

এম. এফ . এইচ বেগ এর রিপোর্ট :

২৯ মার্চ , ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ :



এখানে জহিরুল আলম খানের বক্তব্য অনুযায়ী ১টি গুলি হয়েছিলো।
এই ক্লিপসে যেটা পাওয়া যায় মুজাম্মিল রিভলবার বের করার চেষ্টা করেছিলো।

২.

সায়মন ড্রিং এর রিপোর্ট :

৩০ মার্চ ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ :




শেখ মুজিব কে ফোন করে বললে তিনি নিজেই চলে আসতেন এই বক্তব্য এখানেও পাওয়া যায় এবং ১ জন বডিগার্ড কে গুরুতর আহত করা হয়েছিলো সেটাও পাওয়া যায়।

রাত ১:৩০ পর্যন্ত ধানমন্ডী ৩২ নাম্বারে যা যা ঘটেছে সম্ভাব্য সব সোর্স থেকে সব তথ্যগুলোকে অ্যাকুমুলেট করা হলো।

জানিয়ে রাখা ভালো : কিছু চমকে দেয়া তথ্য আমি স্কিপ করে গেছি আলোচনার ক্রম বিচার করে। সেগুলো একটু পরেই পাবেন।পড়তে থাকুন।

এবার দেখা যাক স্বাধীনতা পরবর্তী সময় গুলোতে শেখ মুজিব নিজে কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন বলে দাবী করেছেন

১. সিডনী শনবার্গের সাথে [ঢাকা , ১৬ জানুয়ারী , ১৯৭২] সাক্ষাৎকার [রিপোর্ট : ১৮ মার্চ , ১৯৭২ , নিউইয়র্ক টাইমস]:

এই সাক্ষাৎকারটির বিবরন পাওয়া যায় হাসান ফেরদৌসের প্রথম আলোতে ।

মুজিব কেন আত্নসমর্পণ করেছিলেন : হাসান ফেরদৌস , ৩০ মার্চ , ২০০৯ , প্রথম আলো





এখানে তিনি পরিষ্কার ভাবে জানিয়েছেন টেলিফোনে (তার যোগাযোগ / ওয়্যার কমিউনিকেশন) চট্রগ্রামের সিক্রেট হেড কোয়াটার এ মেসেজ পাঠিয়েছেন , সেটিই পরে গোপন বেতার থেকে ট্রান্সমিটেড হয়েছে।

২. জাতীয় গণপরিষদে স্বাধীনতার ঘোষনা বিষয়ে বিতর্ক :

বাংলাদেশ জাতীয় গনপরিষদে (বর্তমান জাতীয় সংসদ) এ ১০ এপ্রিল , ১৯৭২ এ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার ঘোষনা বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং নুরজাহান মুরশিদ প্রশ্ন উত্থাপন করেন।

এর জবাবে শেখ মুজিব বলেন ওয়্যারলেসে চট্টগ্রামে তিনি জানিয়েছেন এই ঘোষনা এবং এই প্রস্তাবটি যেহেতু ২৬ মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস ঘোষনা ও মুজিব নগর সরকারের ১০ এপ্রিলের ঘোষনার ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছিলো সেহেতু শেখ মুজিব ওয়্যারলেসে যে মেসেজ পাঠিয়েছেন দাবী করেছেন সেটা অবশ্যই ২৫ মার্চ রাত ১২ : ০০ পরে ।

সোর্সঃ সাপ্তাহিকে প্রকাশিত স্বাধীনতার ঘোষনা প্রস্তাব বিষয়ক জাতীয় গণ পরিষদ আলোচনা , ১০ এপ্রিল , ১৯৭২ , পিডিফটির পেজ ৪

আসুন এবার শেখ মুজিবের দাবীগুলোকে চেক করে দেখা যাক:

সিডনী শনবার্গের সাথে সাক্ষাৎকার:

১.

শেখ মুজিব হরতাল ডাকার কথা বেমালুম চেপে গেছেন যেটা ইনএভিটেবল ট্রুথ।

২.

শেখ হাসিনা নিজেও সেদিন রাত ১১:৩০ পর্যন্ত ধানমন্ডী ৩২ নাম্বারে ছিলেন। আজ পর্যন্ত শেখ হাসিনার মুখ থেকে মুজিবের চট্টগ্রামে টেলিফোন করা বিষয়ক কোন দাবী আসেনি ! জানিনা এটা জানার পর নতুন করে দাবী করে বসবেন কিনা !

৩.

শেখ হাসিনা , শেখ রেহানা এবং জেলীকে রাত ১১:৩০ এ ভাড়া বাসায় আত্নগোপনে পাঠানোর পর ওয়াজেদ মিয়া নিজেও ধানমন্ডী ৩২ নং ছেড়ে আসেন।
খোদ ওয়াজেদ মিয়া নিজেই "নিউ এজ" এর কলামে লিখেছেন শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি।
ওয়াজেদ মিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী রাত ১১:৩০ পর্যন্ত শেখ মুজিব কোন লিবার্টী মেসেজ পাঠাননি কোথাও।

৪.

বর্তমান জাদরেল আওয়ামী নেতা , সেসময়কার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক ১০:৩০ ফোন করেন এবং ১১:০০ স্বশরীরে দেখা করেন।
তাকেও কোন DOI মেসেজ দেননি শেখ মুজিব ।

৫.

সবচেয়ে গুরুতর তথ্য যেটি সিডনীর কাছে মুজিবের দেয়া তথ্যকে পুরোপুরি নকআউট করে সেটি হলো :
রাত ১০: ০০ - ১০:৩০ পর্যন্ত নঈম গহর ধানমন্ডী ৩২ নং এ ছিলেন এবং তার ভূমিকাটা ছিলো চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে শেখ মুজিবের কমিউনিকেশন তৈরী করা।

নঈম গহরের কলামের লিংকটি আবারো দিলাম প্রাসংগিক কারনে

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে DOI মেসেজ পাঠানোর এরকম একটি সূবর্ন সুযোগ পাওয়ার পরও শেখ মুজিব সেটি করেননি। টেলিফোন করার প্রশ্নতো অবান্তর।

বরন্চ্ঞ নঈম গহর কে কিছু রোমান্টিক বিপ্লবী বক্তব্য দিয়েছেন এবং নঈম গহর সেটাই এম.আর.সিদ্দীকিকে টেলিফোনে জানিয়েছেন।

সেখানে কোন প্রকার DOI মেসেজ নেই , থাকলে নঈম গহর ইতিহাসের অনেক বড় অংশ হতেন এবং সেটার দাবী জানাতে দেরী করতেননা।

বরন্চ্ঞ আমার যেটা ব্যক্তিগত অনুমান শেখ মুজিব জানেন যে তার কিছু ইন্সট্রাকশনাল মেসেজ নঈম গহর ১০ : ৩০ - ১১ : ০০ টার ভেতরে ইমিডিয়েটলী টেলিফোনে চট্টগ্রাম আওয়ামী নেতাদের জানাবেন এবং সিডনীর সাথে সাক্ষাৎকারে নঈম গহরের সেই টেলিফোন টিকে মুজিব নিজের করা টেলিফোন বলে চালিয়ে দিয়েছেন । একই সংগে তার ইন্সট্রাকশনাল মেসেজ গুলোকে DOI মেসেজ দাবী করেছেন।

এই অনুমানের আরেকটি শক্তিশালী ক্লু দেখুন:

সিডনীর সাথে সাক্ষাৎকারে মুজিব বলেছেন চট্টগ্রামে তিনি টেলিফোনটি করেছেন ১০:৩০ নাগাদ !
টাইমিং এর এই মিল মোটেই কাকতালীয় মনে হচ্ছেনা যেহেতু মুজিব জানতেন ১০:৩০ এর পর ইমিডিয়েটলী নঈম গহর চট্টগ্রামে তার ইন্সট্রাকশনাল মেসেজ জানিয়ে ফোন করবেন।

খুব পরিষ্কার ভাবেই শেখ মুজিব সিডনীর সাথে সাক্ষাৎকারে DOI মেসেজ বিষয়ক দাবীগুলোতে মোটেই ট্রুথফুল ছিলেননা।

বরন্চ্ঞ হাস্যকর বিষয়টা হলো শেখ মুজিব নিজেই আবার জাতীয় গনপরিষদে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনার প্রস্তাবে নিজের স্বপক্ষে বক্তব্য রেখেছেন!



২. ন্যাশনাল পার্লামেন্টে শেখ মুজিবের দাবী:

সেখানে শেখ মুজিব মোটাদাগে বলে গেছেন ওয়্যারলেস যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা চট্টগ্রামে পাঠান।
কিন্তু কিভাবে ?

এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশী প্রচলিত বক্তব্যটি যেটা শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষনার ব্যাপারে সন্দেহ মুক্ত ব্যক্তিসকল দাবী করে থাকে - সেটা হলো রাত ১২:২০ মিনিটে পর মুজিব টেলিফোনে সেন্ট্রাল টিএনটি অফিসের বিশ্বস্ত ১ জন কে DOI মেসেজ পাঠিয়ে দেন । সেখান থেকেই বাকি সব প্রচারের ইনিশিয়েশন হয়।

আতিউর রহমান তার জনকন্ঠে লিখিত কলামে দাবী করেছেন মুজিব DOI মেসেজ পাঠান রাত ১২:২০ মিনিটে।

দৈনিক জনকন্ঠে আতিউর রহমানের কলাম

সিরাজউদ্দীন হোসেনও তার ইত্তেফাকের স্বাধীনতার ঘোষনা বিষয়ক কলামে ১২:২০ মিনিটে মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষনার দাবী করেছেন।

দৈনিক ইত্তেফাকে সিরাজউদ্দীন হোসেনের কলাম

এই রাত ১২ : ২০ এর উল্লেখ আরো অনেক গবেষকের কাছে পাওয়া যায় যারা শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষনা করেছেন - এটা বিশ্বাস করেন।

অজয় রায় দাবী করেছেন রাত ১২:০০টার পরপরই এই টেলিফোনটি শেখ মুজিব করেন।

এক্ষেত্রে অজয় রায় টাইমিং এর ব্যাপারে একটু পিছলে গিয়ে রবার্ট পেইনের ম্যাসাকার বইটির উদাহরন টানেন যেখানে বলা হয়েছে২৫ মার্চ রাতে ঘোষনাটি জানানো হয় টিএনটি অফিসের এক বিশ্বস্ত ( আজও অজ্ঞাত !) এক স্টাফ কে।

কিন্তু এটি ৭১ পরবর্তী রবার্ট পেইনের ব্যক্তিগত সংগৃহীত তথ্যদিয়ে লেখা বই মাত্র ।

এই তথ্য যে রবার্ট পেইন সেই রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থান কালে পাননি এবং অন্যকোন রিপোর্টারের সরাসরি সূত্র থেকে আসেনি , বরং অন্যকোন আওয়ামী সোর্স থেকে থেকে পরবর্তী সময়ে সংগ্রহ করেছেন সেটার যুক্তিটাও দেখবেন এখন।

এরিমধ্যে নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন আতিউর রহমান আর রবার্ট পেইনের ভেতরে টুইস্ট হয়ে গেছে ঘোষনার ভাষায়।

আগেই বলেছি ধানমন্ডী ৩২ এর ২৫ মার্চের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে দুটো সারপ্রাইজিং তথ্য স্কিপ করেছি।

এই তথ্যগুলোই শেখ মুজিবের টেলিফোন বা অন্যযেকোন ভাবে হোক , DOI মেসেজের দাবী কে রীতিমত নকআউট করে।

দেখুন সেগুলো :

১. হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বিদেশী সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিব কে টেলিফোন , সময় রাত ১২:২০ :

সিডনী শনবার্গের [২৭ মার্চ নিউদিল্লী থেকে] রিপোর্টক্লিপটি দেখুন :

২৮ মার্চ , ১৯৭১ ,নিউইয়র্ক টাইমস :



সেখানে পরিষ্কার ভাবেই বলা হয়েছে রাত ১২:২০ মিনিটে শেখ মুজিবের বাসায় টেলিফোন করা হয় ! এবং ফোনটি রিসিভ করেন আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পরিচয়দানকারী কেউ একজন (হাজী গোলাম মোরশেদ অথবা তবিবুর রহমান)।

ফোন রিসিভারের বক্তব্য অনুযায়ী শেখ মুজিব তখন শোবার ঘরে ছিলেন এবং স্বাভাবিকভাবেই ফোনটি বিজি ছিলো পরবর্তী কিছু সময় এই কথোপকথনে।

যদি ১২:০০ - ১২:২০ এর মধ্যেও DOI মেসেজ শেখ মুজিব পাঠিয়ে থাকেন তাহলে সুবর্ন সুযোগ পেয়েও শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের কাছে তার DOI মেসেজ এর তথ্যটি জানাননি , ঐ আওয়ামী অফিসিয়ালের কাছ থেকেও স্বাধীনতা ঘোষনা বিষয়ে ঐ ফোনে কিছু জানানো হয়নি!

রাত ১২:২০ মিনিটে টেলিফোনে DOI মেসেজের তো প্রশ্নই আসেনা।

২. হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বিদেশী সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিব কে টেলিফোন , সময় রাত ১:০০ টা

দ্য এজ রিপোর্ট , অস্ট্রেলিয়া , ২৯ মার্চ , ১৯৭১:



এই একই তথ্যটি সায়মন ড্রিং এর রিপোর্টেপাওয়া যায়:

৩০ মার্চ , ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ :



এখানে যেটা বলা হয়েছে রাত ১:০০ টার সামান্য আগে শেখ মুজিবের সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং স্বয়ং শেখ মুজিব ফোন রিসিভ করেন।সেখানে শেখ মুজিব বলেছেন যে তিনি যেকোন মূহুর্তে আক্রমণ আশা করছেন এবং একজন ভৃত্য আর দেহরক্ষী ছাড়া বাকি সবাইকে নিরাপদস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

সেই চূড়ান্ত মূহুর্তে যখন শেখ মুজিব জেনে গেছেন কি ঘটতে যাচ্ছে নিশ্চিত ভাবে এবং এর সমাধান একটাই স্বাধীনতা - তখনো শেখ মুজিব DOI মেসেজ টি যারা এর সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম "আন্তর্জাতিক সংবাদকর্মী " তাদের কে জানাননি।

রাত ১২:২০- রাত ১:০০ টার মত ক্লাইম্যাক্স সময়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাথে যোগাযোগের চরম সুযোগ পেয়েও তাদের কাছে মুজিবের কোন DOI মেসেজ পৌছায়নি!

এ বিষয়ে সেসময়কার বিবিসি সাংবাদিক মার্ক টালীর একটি বক্তব্য এখানে প্রাসংগিক:
"খবর পাওয়া গেছে যে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন"

সোর্সঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিবিসি , বিসিডিজেসি , ২০০১।
আতিউর রহমানের কলাম থেকে সংগৃহীত


যেখানে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সাথেই শেখ মুজিবের রাত ১:০০ টার চূড়ান্ত সময়টাতে সরাসরি টেলিফোনে কথা হয়েছে সেখানে "খবর পাওয়ার" ভিত্তিতে কেন DOI মেসেজ রিপোর্ট করা হলো ?

প্রসংগক্রমে আরো ১টি তথ্য জানিয়ে দেই।
রাত ১২:৩০ এ সর্বশেষ যেই আওয়ামী লীগ কর্মী শেখ মুজিবের বাসায় টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি হলেন মওদুদ আহমেদ।
বিএনপিতে যোগদানের পূর্বে মওদুদ এ ঘটনাটির স্মৃতিচারন করেছিলেন এবং সেখানে তিনি কোন প্রকার DOI মেসেজ পাননি।

সোর্সঃ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ , মওদুদ আহমেদ , ১০ ডিসেম্বর , ১৯৯৫ , ইত্তেফাক , অজয় রায়ের আর্টিকল থেকে সংগৃহীত

১২:০০ - ১২:৩০ এর ভেতরে যদি মুজিব DOI মেসেজটি পাঠিয়েও থাকেন কোন এক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে , তাহলে সেই সময়ে তার বিশ্বস্ত দলীয় অনুগত কর্মী মওদুদকে টেলিফোনে পেয়েও সেটা জানাননি - এই নাটক কার্টুন প্রিয় শিশু ব্যতিত স্বাভাবিক চিন্তাশক্তির কারো পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব।


রাত ১:০০ - ১:১৫ , ধানমন্ডী ৩২ :

যেন তেন প্রকারেন "DOI মেসেজ" নামক তালগাছটিকে দখল করা এবং তালগাছটির চারপাশে রীতিমত বেড়া দিয়ে ফেলার আরেকটি প্রচেষ্টা হলো
জহিরুল আলম খানের "দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ" বই অনুসারে মুজিবকে গ্রেফতারের ঠিক আগ মূহুর্তে (আগে ১:১০- ১:১৫ এর মধ্যে ) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জহির একটি ঘর থেকে অদ্ভুত শব্দ শুনতে পান এবং আওয়ামী গবেষকদের কাছে মনে হয়েছে সেটি ট্রান্সমিটার অপারেট করার শব্দ , তবে সম্ভবত

যাইহোক , মুজিব অনেক নাটকীয় সুযোগ পেয়েও DOI মেসেজটি ঘোষনা না করলেও যদি শেষ মূহুর্তে সেই চেষ্টা করে থাকেন তাহলে -

ঠিক সেই সময়েই রাত ১:১০- ১:১৫ এর ভেতরে দৈনিক আজাদী তে টেলেক্স মেসেজটি কে পাঠালো ?
শেখ মুজিবের কাছে তো তখন টেলেক্সের মত ওয়্যার কমিউনিকেশন মেশিন ছিলোনা !


সবচেয়ে বড় কথা শেখ মুজিবের বাসায় তখন অপারেট যোগ্য ট্রান্সমিটারই ছিলোনা!

তৎকালীন বুয়েটের অধ্যাপক নুরুল্লাহ এবং বুয়েট ছাত্রনেতা রাশিদুল হাসান খান মিলে শেখ মুজিবের বাসার ছাদে ১ টি ট্রান্সমিটার বসান ঠিকই , কিন্তু সেটি ডিসফাংশনাল হয়ে যায় সেট করার পরই। শেখ মুজিবও জানতেন ট্রান্সমিটারটি কাজ করবেনা।
তাহলে ট্রান্সমিটার এ ঘোষনার সুযোগটা থাকে কোথায় ?

ঠিক এখানেই তালগাছ দখল করার জন্য সিরাজউদ্দীন হোসেন জোর করে ট্রান্সমিটারটিকে আবার ঠিক করে ফেলেছেন।
তার মতে শেখ মুজিবের অজ্ঞাতে অধ্যাপক নুরুল্লাহ ট্রান্সমিটারটি নিজে এসে আবার ঠিক করে গেছেন!

যদি সেটাই হয় তাহলে শেখ মুজিব জানতেন না যে ট্রান্সমিটারটি সচল করা হয়েছে আবার , তাহলে তার জানামতে অচল ট্রান্সমিটার দিয়ে ঘোষনা দিতে যাবেন কেন ?

সিরাজউদ্দিন হোসেনের বক্তব্য দেখুন ইত্তেফাকের কলামে

সিরাজউদ্দীন হোসেন সেখানেই থামেননি , এই কাল্পনিক ঘোষনাটিকে তিনি সেই রাত ১২ :২০ -১২:৩০ এ নিয়ে গেছেন , সেন্ট্রাল টিএনটি অফিসের কাল্পনিক টেলিফোনের পরিবর্তে যেটার ভিত্তিতে টিক্কা খান মুজিবকে গ্রেফতার করেন এবং সেই ঘোষনা টিক্কা নিজ কানে শুনেছেন!

যদি রাত ১২:২০ - ১২:৩০ না হয়ে যদি এই কাল্পনিক ঘোষনা রাত ১:১০ এ হয় তারমানে ১:১০ - ১:১৫ এর ভেতরে টিক্কা শেখ মুজিবকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা তৈরী করেন - সর্বোচ্চ হাস্যকর !

অথচ ইতিহাসের আসল সত্যিটা হলো :

নুরুল্লাহ নিজেই বলেছেন ট্রান্সমিটার বিকল হওয়ার পর তিনি আর সেটি ঠিক করেননি বা ট্রান্সমিটারটি কাজ করেনি এবং একই বিষয় অজয় রায়ও স্বীকার করেছেন তার আর্টিকলে।



এই কাল্পনিক ঘোষনার বিষয়টিকে শেষবারের মত নকআউট করছে সেই আগের টার্নিং ইনফো।

রাত ১:০০ টায় যখন মুজিব নিজেই টেলিফোনে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের বলেছেন তিনি যেকোন মুহুর্তে আক্রমন আশা করছেন , বাসার প্রায় সবাইকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছেন , তাহলে তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিলেন না কেন একটু পরই তিনি ট্রান্সমিটার দিয়ে DOI মেসেজ পাঠাবেন !

এইসব কাল্পনিক নাটকের স্ক্রিপ্ট কখনোই ইতিহাস হতে পারেনা ।

 লেখক : ব্লগার দাসত্ব

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম