১. বাংলাদেশকে মরুভূমি বানাবার স্বপ্নদ্রষ্টা মাস্টারমাইন্ড
এ, পি. জে. আব্দুল কালাম এক মহা কাজ করেছিলেন উনার জীবদ্দশায়, সেটা হচ্ছে মেগা রিভার প্রোজেক্ট। তার মানে বাংলাদেশের নদীগুলো থেকে পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা উনার মস্তিস্কপ্রসুত , যাকে বলা যেতে পারে ব্রেন চাইল্ড। ভারতের রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ে এই প্রকল্পের আদর্শিক ভিত্তি দেয়ার জন্য তিনি বিরামহীন প্রচারণাও চালিয়ে গেছেন।
ব্যক্তি হিসেবে তিনি অসাধারণ ছিলেন কিন্তু তিনি তার সেই ব্যক্তিত্বকে ব্যয় করেছেন ভারতীয় পুঁজির দাসত্বে। এখানেই এ, পি. জে. আবুল কালাম মহাকালের কাছে হেরে যাবেন।
বাঙালিরা তাঁর মৃত্যুতে যতই অশ্রুপাত করুক, বাঙলার শুকনো নদীগুলো চিরকাল তাদের হন্তারককে অভিশাপ দিয়ে যাবে।
মিসাইল এবং পারমাণবিক প্রকল্প ছাড়া ভারতের সদ্য পরোলোকগত সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের খুব প্রিয় একটা প্রকল্প ছিল আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প।সেই ২০০২ সালে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে দেয়া এক বক্তৃতায় তিনি এ ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলেছিলেন। সাম্প্রতিক কালেও নরেন্দ্র মোদী সরকার এই প্রকল্পের পেছনে ১০০ কোটি রুপি বরাদ্দ দেয়ায় তিনি ব্যাপক প্রশংসা করেছিলেন।
interlinking of Indian Rivers: By Radha Kant Bharati page 29 |
যাই হোক, সেই নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ভারত ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। মোট ৩০টি সংযোগ খালের মধ্যে ৪ টি চূড়ান্ত অনুমোদন পর্যায়ে আছে। ৫ নম্বরটির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও সম্প্রতি দিয়ে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সানোয়ার লাল জাঠ গত ১৩ জুলাই। এটি হলো ভারতের আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর হিসেবে বিবেচিত মানস-সংকোশ-তিস্তা-গঙ্গা সংযোগ খাল। প্রকল্প শুরু করার আগে আসাম-বিহার-পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনা করার কথা বলা হলেও, সম্ভাব্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সাথে আলোচনার কোন কথা বলা হয় নি ভারতের পক্ষ থেকে, যদিও নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের যৌথ ঘোষণার ২১ নং দফায় বলা হয়েছিল: "হিমালয় অঞ্চলের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে না নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।“
আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ভারতের হিমালয় অঞ্চল থেকে ভারতের দক্ষিণে স্থানান্তরের জন্য নির্ধারিত মোট ১৪১.৩ বিলিয়ন কিউবিক মিটার(বিসিএম) পানির মধ্যে ৪৩ বিসিএম পানি নিয়ে যাওয়া হবে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা থেকে- যে নদীটি শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের ৮০% পানির উৎস। এ কাজেই ব্যাবহার করা হবে ৪৫৭ কিমি দীর্ঘ মানস-সংকোশ-তিস্তা-গঙ্গা সংযোগ খাল। এই খালের মাধ্যমে পানি মানস ও সাংকোশ নদী থেকে ব্রহ্মপুত্রে পৌছানোর আগেই তিস্তা হয়ে গঙ্গায় পাঠিয়ে দেয়া হবে(১ম মানচিত্র দ্রষ্টব্য)।
এরপর গঙ্গা থেকে পানি গঙ্গা-দামোদর-সুবর্ণরেখা সংযোগ খালের মাধ্যমে সুবর্ণরেখা নদীতে এবং সুরর্ণরেখা নদী থেকে সুরর্ণরেখা-মহানদী সংযোগ খালের মাধ্যমে পানি মহানদীতে স্থানান্তর করা হবে। মহানদী থেকে এরপর দক্ষিনাঞ্চলের আরো কতগুলো নদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের কাবেরী নদী অববাহিকা অঞ্চলে স্থানান্তরিত হবে(২য় মানচিত্র দ্রষ্টব্য)।
গঙ্গা ও তিস্তার উজানে ভারতীয় ব্যারেজের ফলে এমনিতেই বাংলাদেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকায় মরুকরণ ঘটেছে, ছোট বড় অনেক নদী মরে গেছে, লবণাক্ততা বেড়েছে, কৃষি ও মৎস সম্পদের বিপর্যয় ঘটেছে।সেই সাথে আছে মেঘনার উজানে টিপাইমুখ বাধ ও ফুলের তল ব্যারেজের হুমকী। বাকি ছিল ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা। এখন ব্রহ্মপুত্রের পানি আন্ত:নদী সংযোগ খালের মাধ্যমে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেয়ার মানে হলো অবশিষ্ট পানি প্রবাহটুকু থেকেও বাংলাদেশের বঞ্চিত হওয়া এবং গোটা বাংলাদেশেরই মরুকরণ ও লবণাক্ততার ঝুকিতে পড়া। সময় থাকতেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে সুষ্পষ্ট অবস্থান নিতে বাধ্য করতে হবে বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীকে এবং সেই সাথে জনগণের পক্ষ থেকে খোদ ভারতেই এই আগ্রাসী প্রকল্পের বিরুদ্ধে ফুসে উঠা জনগোষ্ঠীর সংগ্রামের সাথে আন্ত:সংযোগ স্থাপন করে রুখে দিতে হবে এই আগ্রাসী নদী সংযোগ প্রকল্পকে।
- (কালেক্টেড ফ্রমঃ Kallol Mustafa ও পিনাকি ভট্টাচার্য)
২. আব্দুল কালাম কিভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন?
মারা গেছে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম।
অনেকের মনেই এপিজেকে নিয়ে নানান প্রশ্ন এসেছে, কেউবা বলছে, ‘ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, তাই সেখানে নিয়োগ পেয়েছে একজন মুসলিম রাষ্ট্রপতি।’
এ লেখাটি তাদের জন্য, যাদের মন্যে প্রশ্ন জেগেছে, “আসলেই কি ভারতে মুসলিমদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়া হয় ? নিয়োগ দেওয়ার কারণটাই বা কি ?’’
এপিজে আব্দুল কালাম প্রেসিডেন্ট হয় ২০০২ সালে ২৫ জুলাই। বিজেপির অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় এপিজে আব্দুল কালামকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। এখানে লক্ষ্যনীয়, ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত ভারতের গুজরাট রাজ্যে চলে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা। আর এরপর ২৫ জুলাই নিয়োগ পায় আব্দুল কালাম। যার কারণে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, আব্দুল কালামকে বিজেপি সাপোর্ট দেওয়ার মানেই হচ্ছে, মুসলিম জনগোষ্ঠীর মনে এই বলে সান্ত্বনা দেয়া ‘দেখো, আমরা মুসলিম দরদি, তাই একজন মুসলিমকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে’।
‘এপিজে আব্দুল কালাম’ নামক অস্ত্র বিজেপি বার বার সফলতার সাথে ব্যবহার করতো। এটা স্মরণীয় গুজরাট দাঙ্গার পরে ঐ অঞ্চলের মুসলমানদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে এই এপিজেকেই পাঠানো হয়েছিলো । সুচতুর এপিজে আব্দুল কালাম দাঙ্গা পরবর্তী গুজরাটে যাওয়ার সময় বলেছিলো: “My mission was not to look at what had happened, not to look at what was happening, but to focus on what should be done”.
এপিজে আব্দুল কালাম বিজেপির কাছে এতটাই পছন্দনীয় ব্যক্তিত্ব ছিলো যে ২০০৭ সালে পুনরায় এপিজেকে রাষ্ট্রপতি করতে সমর্থন দিয়েছিলো বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেসের সমর্থন না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। একইভাবে ২০১২ সালেও একই ভাবে এপিজেকে রাষ্ট্রপতি চায় বিজেপি, কিন্তু সেবারও কংগ্রেসের সমর্থন মেলেনি।
বলাবাহুল্য, বিজেপি’র রাজনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ, সেখানে একজন মূল ধারার মুসলমানকে সেই বিজেপি বার বার রাষ্ট্রপতি চাইছে, বিষয়টি নিয়ে সত্যি গোলমাল স্পষ্ট। নিরামিষভোজন, গিতাপাঠ, কৃষ্ণের ভক্ত হওয়া, পূজায় অংশগ্রহণ এবং সূর্যপূজা তথা অগ্নিপূজা ছিলো এপিজের নিয়মিত অনুসঙ্গ, এ জন্যই হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস বলতো, “এপিজে হচ্ছে রিয়েল হিন্দু” (http://goo.gl/ZVfA4w)।
আসলে বিজেপি তার সভায় যদি কোন মুসলমানকে সংযুক্ত করে, তবে ঐ ব্যক্তির ধর্মীয় অবস্থান নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হয়। যেমন এবার বিজেপি তার মন্ত্রী সভায় দু’জন মুসলিমকে সুযোগ দিয়েছে। প্রথমজন সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী নাজমা হেপতুল্লাহ, যে মহিলা ক্ষমতায় এসেই বলেছে-“ভারতের মুসলমানরা সংখ্যালঘু নয়, পার্সিরা সংখ্যালঘু। তাই সংখ্যালঘুর সুযোগ-সুবিধা মুসলিমরা পাওয়ার যোগ্য নয়” (http://goo.gl/MBhTQ2)।
আরেকজন মুসলিম মন্ত্রী হচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি। সেও ক্ষমতা পেয়ে বলেছে, “কোন মুসলমানের যদি গরুর মাংশ খেতে ইচ্ছে করে তবে সে যে ভারত ছেড়ে পাকিস্তান কিংবা আরব চলে যায়।” (http://goo.gl/wXluAd)।
আসলে ভারতে যে কোন টার্মেই সংখ্যালঘু নাম নিয়ে যাদের কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনা হয়, তারা কখনই মূল ধারার মুসলিম হয় না, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকে।
যেমন:
---ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি জাকির হুসাইন এবং ফখরুদ্দিন আলী দু’জনই ছিলো জহরলাল নেহেরু’র অনুসারী সমাজতন্ত্রপন্থী নাস্তিক।
--বর্তমান বিজেপি সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে হামিদ আনসারিকে। সেও একজন কট্টর কমিউনিস্ট ও ধর্ম বিরাগী।
--এছাড়া ভারতে প্রধান বিচারক পদে নিয়োগকৃত আজিজ মুবাশশির আহমদ ও আলতামাশ কবির- দু’জনেই ছিলো শিয়া।
তাই ভারতের ক্ষমতায় মুসলিম নামধারী কাউকে দেখলে মুসলমানদের উল্লাস করার কিছু নেই, কারণ তাদের মধ্যে গোলমালের কারণেই তারা ঐ উচ্চপদগুলোতে সুযোগ পেয়েছে।
সবাইকে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
- (নয়ন চ্যাটার্জি)
৩. এপিজে কালামের পরমানু অস্ত্রের টার্গেট কারা?
কোটেড ফ্রম RSS পেজঃ ভারতের সবচেয়ে লং রেঞ্জ নিউক্লিয়ার মিসাইলের রেঞ্জ ৫৫০০ কিমি(অগ্নি-৫ এর)।ভারত বিভিন্ন মোবাইল বেইজ বা মোবাইল নিক্লিয়ার ইউনিট থেকে সর্ব পশ্চিমে গুজরাট বা পাঞ্জাব বা উত্তরে কাশ্মীরের প্রদেশ থেকে পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিমে এই মিসাইল ছুড়লে সেটা পাকিস্তান,আফগানিস্তান,ইরান,তুর্কমেনিস্তান,উযবেকিস্তান,তাজিকিস্তান ও কিরগিযস্তান এই ৭ টি মুসলিম দেশে আঘাত হানতে পারবে।
পূর্বে পশ্চিম বঙ্গ বা সেভেন সিস্টার থেকে পুরা বাংলাদেশ এই বোমা এর রেঞ্জে থাকবে। দক্ষিনে কেরালা থেকে মালদ্বীপ আর দক্ষিণ পূর্বে আন্দামান থেকে মালেয়শিয়া ও ইন্দো নেশিয়া এই তিনটা মুসলিম দেশে এই বোমা আঘাত হানতে পারবে। অর্থ্যাৎ কালামজী ভারতের উপর হুমকিস্বরূপ ১১ টা মুসলিম দেশের প্রায় ৬০ কোটি এর অধিক মুসলিম জীহাদিকে নিয়ন্ত্রনের আওতায় নিয়েএসেছেন।
৪. পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালাম এবং পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদের খান
গতকাল মারা গেছে ভারতের পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালাম। এ পরমাণু বিজ্ঞানীকে ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে বেশ সম্মান দিয়েছে। সে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলো ছিলো বেশ কয়েকবছর। তার মৃত্যুর পর ভারত ৭ দিনের শোক ঘোষণা করেছে। মিডিয়ায় পজিটিভ প্রচারের কারণে সারা বিশ্বে সকলেই তাকে ভালো হিসেবেই চিনে এবং পজিটিভ প্রচারের কারণে সম্মানও পেয়ে থাকে। এবার আমি বলবো, ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ মানে পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খানের কথা। একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন, এপিজে আব্দুল কালামকে যেখানে ভারতসহ সারা বিশ্বে সম্মানিত করা হয়েছে, সেখানে পাকিস্তানের পরমাণু প্রযুক্তির জনক আব্দুল কাদির খানকে সবাই কঠিনভাবে নিগৃহিত করছে, সবাই তাকে নিকৃষ্ট চোখে দেখছে। তাকে জেল খাটতে হচ্ছে, গৃহবন্দি থাকতে হচ্ছে। এটাই কিন্তু সম্রাজ্যবাদী মিডিয়ার কূট-সফলতা। আমেরিকার চোখে যে ভালো, মিডিয়ার চোখে সেই ভালো। আর আমেরিকার চোখে যে খারাপ মিডিয়ার চোখে সেই কিন্তু খারাপ। বলাবাহুল্য সাধারণ পাবলিকের মনমগজ কন্ট্রোল করে ঐ মিডিয়াই।
আমি বলবো, পৃথিবী শ্রেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান কখনই তার যথাযোগ্য মর্যাদা পাননি। চীনে চৌকশ হ্যাকার ধরা পড়লে সরকার তাকে মোটা বেতন দিয়ে নিজ গৃহে সম্মানের সাথে রেখে দেয় আর বাংলাদেশে চৌকশ হ্যাকার ধরা পড়লে তাকে জেলের ঘানি টানতে হয়। কারণ চীন বুঝে প্রযুক্তি উন্নতি করতে হলে তাকে প্রযুক্তি ট্যালেন্টদের সম্মান দিতে হবে, আর বাংলাদেশ সেটা বুঝে না। আর এ কারণেই প্রযুক্তি গ্রহণে বাংলাদেশকে চীনের মুখাপেক্ষী থাকতে হচ্ছে।
পৃথিবী শ্রেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনককে দেয়া হয় জেল, মামলা, নিগ্রহ, অপবাদ আর গৃহবন্দিত্ব।
আমি দেখেছি প্রায় সব মুসলমান ভারতের এপিজে আব্দুল কালামের নাম জানে, কিন্তু আব্দুল কাদির খানের নাম কয় জন জানে ? উল্টো আব্দুল কাদির খানকে চেনে সন্ত্রাসী হিসেবে। কারণ আব্দুল কাদির খান নিজ মুখেই বলেছিলো:
১) “আমি চেয়েছিলাম সকল মুসলিম দেশ পরমাণু প্রযুক্তি সমৃদ্ধ হোক। তাই ইরান ও লিবিয়াকে আমি পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহ করেছিলাম”। ---আব্দুল কাদির খান
২) “লিবিয়ার গাদ্দাফি এবং ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের মতো নেতাদের হাতে যদি পরমাণু বোমা থাকত, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা যে তাণ্ডব চালাচ্ছে তা চালানোর সাহস পেত না।” ---আব্দুল কাদির খান
শুধু তাই নয়, কৌশলী এ পরমাণু বিজ্ঞানী আমেরিকাকে দমাতে উত্তর কোরিয়াকেও পরমাণু প্রযুক্তি দিয়েছিলো। বর্তমানে খুব গরীব হয়েও যারা আমেরিকার মত দেশকে প্রায়শয়ই হুমকি ধামকি দেয় তার মধ্যে উত্তর কোরিয়াই প্রধান এবং সেটাও তাদের সেই পরমাণু প্রযুক্তির বলে বলিয়ান হয়ে।
আর এ কারণেই বর্তমানে আমেরিকার চোখে এক নম্বর সন্ত্রাসী হচ্ছে সেই আব্দুল কাদির খান, মোসাদের গুপ্ত ঘাতকদের কিলিং লিস্টে শীর্ষে আব্দুল কাদিরের নাম। পাকিস্তান সরকার আব্দুল কাদির খানকে জেল থেকে মুক্তি দিলে ফ্রান্সসহ তাবৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন হৈ-হুল্লা শুরু করে দেয়।
সবার শেষে বলতে হয়, ভারতীয় পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালাম ছিলো নিরামিষ ভোজী, নিয়মিত গীতা পাঠকারী, কৃষ্ণের একনিষ্ঠ ভক্ত একজন অগ্নি উপাসক। তার পরমাণু আবিষ্কারগুলো ছিলো শুধু হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র ভারতের জন্য। তার বিশ্বাসগত আচরণ এবং কর্ম হিন্দুদের অনুকূল ছিলো বলেই আজ ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের কাছে কাছে এপিজে আব্দুল কালাম হিরোর মর্যাদা পেয়েছে।
অন্যদিকে, আব্দুল কাদির খান চেয়েছিলো মুসলিম জাতিকে শক্তিশালী করতে। সে পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, লিবিয়াসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলো মধ্যে পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পেরেছিলো বলেই বিশ্ব মিডিয়ার চোখে সে একজন ভিলেন, একজন জেলখাটা আসামী, চিরজীবনের জন্য গৃহব্ন্দী এবং একই সাথে অবুঝ মুসলিম জাতির কাছে নিগৃহিত ও অপমানিত, কারণ মুসলিম জাতি কখনই জানে না প্রাপ্যকে উপযুক্ত সম্মান দিতে।
এপিজে আব্দুল কালাম এবং আব্দুল কাদির খানের মধ্যে পার্থক্য শুধু এখানেই।
৫. এপিজের ধর্মবিশ্বাস
তার বাবা ছিলেন মসজিদের ইমাম, মা ধার্মিক নারী। ভারতের এই মহান পরমানু বিজ্ঞানী আজীবন নিরামিষভোজী , প্রমক্রুশ সোয়ামীজি এবং শিনগিরি জাগা গুরুর ভক্ত ছিলেন তিনি ।
২০১১ সালের ১ জুলাই ; দিল্লীর স্বামীনারায়ণ অক্ষরধামে ‘Hinduism, An Introduction’ নামে বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বলেন, “ হিন্দু ধর্ম যথার্থ অর্থেই একটি স্বাভাবিক ধর্ম। এর সহনশীলতা এবং নৈতিকতার জন্য আজ এক সভ্য সমাজ হিন্দু ধর্ম গড়তে পেরেছে। বইটি যখন আমি পড়লাম তখন আমি দেখলাম হিন্দু ধর্ম একটি নদীর মত যা এক বড় নদীর মত আপনধারায় প্রবাহমান।আমি নিজে কৃষ্ণ ভক্ত প্রতিদিন সকালে গীতা পাঠ করি !!"
উনি দার্শনিক ছিলেন; উনার অনেক মূল্যবান বানী ফেসবুকে ঘুরে বেড়ায়, বাংলাদেশকে পানিশূন্য করার জন্য উনার সেই মেগা রিভার প্রজেক্টের/আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প অনেকাংশে দায়ী।
মিসাইলম্যান খ্যাত ভারতের এই সাবেক রাষ্ট্রপতি আজ আর আমাদের মাঝে নেই! ফেসবুকে বাঙ্গালীদের আবেগ আহাজারী দেখে মনে হচ্ছে তিনি বাংলাদেশেরও প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
ভারতীয় মোল্লারা তো বটেই সাথে প্রচন্ড ভারত বিরোধী বাংলাদেশি এবং পাকি মোল্লারাও এপিজে কালামকে নিজেদের সম্পদ বলে জাহির করা শুরু করেছে!
তার মৃত্যুতে মোল্লারা আজ ইন্না ইল্লা.... বলছে!
৬. উপসংহার ও সারমর্ম
এপিজে আব্দুল কালাম পরিনত বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন কাজের মধ্যে। তিনি জ্ঞানী ছিলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তার কাছে থেকে শুধু নয় , পৃথিবীর সকল জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষার বিষয় আছে।
কিন্তু ফেসবুকে আহাজারী দেখে মনে হচ্ছে তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
তিনি নাকি আমাদের তরুন প্রজন্মকে ইন্সপায়ার করেছেন।
১. তিনি গরীব ছিলেন, গরীব থেকে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন । বিজ্ঞানী হয়েছেন। সফল হয়েছেন। এটাই তো এরকম গরীব দেশের স্বাভাবিক ঘটনা। বরং উল্টোটা হলেই তো অস্বাভাবিক হতো। ভারতে দলিত , হরিজন সম্প্রদায় থেকেও তো প্রেসিডেন্ট হয়েছে।
২. তিনি মুসলমান(?) ছিলেন। ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতিও মুসলমান ছিলেন।
৩. তিনি মিসাইল বানিয়েছিলেন। যেন মিসাইল একটি খুব প্রয়োজনীয় বস্তু। এটা না বানালে গরীব দেশের মানুষ ভাত পায় না।
৪. তিনি কিছু বানী দিয়ে গেছেন , যার ৫ টি, ১০ টি বা ১৫ টি জানলে আপনার জীবন বদলে যেতে বাধ্য।
৫. এখন যে যাই বলুক, তাকে ২০০০ সালের আগে বাংলাদেশের মানুষ চিনতেন কিনা সন্দেহ। আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি , ২০০০ সালের আগে তার নাম কোনদিন বাংলাদেশের কোন পত্রিকাতে গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয় নাই।
তিনি বাংলাদেশের জন্য মিসাইল , রকেট, বানান নাই, বাংলাদেশের নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখে ভারতের জীববৈচিত্র বিপন্ন করে , বাংলাদেশে নদীর আন্তসংযোগ বানিয়ে অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ আটকে রাখার ভারতকে শুষ্ক মরুভুমি বানানোর পরিকল্পনার জোরালো সমর্থক ছিলেন না।
ভারতের জন্য মিসাইল বানানোর ফলে এই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ভারতে এখনো বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়ে গেছে।
পরে অবশ্য সবাই বলেছে যে এর ফলে ভারত এর মহাশুণ্য গবেষণা বেগবান হয়েছে। ইতিহাস বলে, মহাশূণ্য গবেষণা বেগবান করার নামে চিরকালই মিসাইল ও ওয়ারহেড ডেলিভারী সিস্টেমকে হালাল করা হয়েছে।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিন্তু মহাকাশযানে খাবার গরম করার জন্য বানানো হয়েছিল। এর আবিষ্কারকদের আপনার আমার জীবনে যে অবদান সেটা এই মিসাইলের চেয়ে কম না বেশী, সেটা চিন্তা করা দরকার।
ভারতের নদীর পানি সব আটকে রেখে সুজলা সুফলা ভারত গড়ার জন্য ভাটির দেশ বাংলাদেশকে পানিশুণ্য শুষ্ক করে ফেলার যে প্রক্রিয়া , সেটির যিনি তীব্র সমর্থক ছিলেন তিনি আমার জীবনের আদর্শ হতে পারেন না।
তিনি কাজের মধ্যে মারা গেছেন। তিনি মানুষ হিসেবে অবশ্যই বড় মানুষ ছিলেন। কিন্তু বাঙ্গালী জাতিকে অনুপ্রাণিত নয়, তিনি ভারতীয়দের অনুপ্রাণিত করেছেন,এবং সেটাই তার বিরাট কৃতিত্ব।
বাংলাদেশের পানি আটকে রাখার পরিকল্পনাকারীদের একজন, মিসাইল বানিয়ে ভারতের আঞ্চলিক ও বিশ্ব পরাশক্তি হবার স্বপ্ন সফলকারীদের একজন হিসেবে ভারতের ইতিহাসে তার নাম অমর অক্ষয় হবে।
আমি দুঃখিত। আমার এই মানবিক দেশপ্রেমীয়, ক্ষুদ্রতার জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন।
- Abdun Noor Tushar
0 comments: