মিশরবিজয়ী ইখওয়ানের জীবিত আধ্যাত্মিক নেতা ইউসুফ আল কারজাভি সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত নানারকম কর্মকান্ড সম্পর্কে হুশিয়ারী জানিয়েছেন এই জীবন্ত কিংবদন্তি।
ভিডিও
আর যদি এ উম্মাহ কে ইসলামকে দূরে সরিয়ে নেয়া হয়, এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পথে চালানো হয়, যে মতবাদ ইসলামকে শরীয়াতনির্ভর জীবনব্যাবস্থা হিসেবে স্বীকার করেনা, মানবজীবনে ইসলামের প্রভাবকে স্বীকার করেনা, মানুষের চরিত্র বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকাকে স্বীকার করেনা, আইন প্রনয়ণে ইসলামের ভূমিকাকে স্বীকার করেনা, আমরা ঐ মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করি। ঐ সরকার একজন সম্মানিত ইসলামী ব্যাক্তিত্বকে কারাগারে বন্দী করেছে, অধ্যাপক গোলাম আযম, তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাবান ব্যাক্তিত্বদের একজন, এবং তার বয়স হয়েছে উননব্বই বছর, তিনি এখন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে মজবুর হয়ে পড়েছেন, অথচ তাকে তারা বন্দী করেছে, অথচ বন্দীজীবনের কাঠিন্য সহ্য করতে তিনি স্বাস্থ্যগতভাবে অক্ষম, একজন মানুষ হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন, নিয়মিত ঔষধ খেয়ে বেঁচে আছেন, ঐ লোকগুলো এই মানুষটার উপর জুলুম করছে, তাকে অন্যায়ভাবে বন্দী করেছে, তাকে কারাগারে নিয়ে গিয়েছে, তাঁর সাথে অসম্মানজনক আচরণ করেছে।
আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জানাই, আপনারা নাগরিকদের অধিকার প্রসঙ্গে আল্লাহকে ভয় করুন। যে দায়িত্ব আপনাদের উপর আমানত হিসেবে দেয়া হয়েছে তা পালন করতে গিয়ে আল্লাহকে ভয় করুন। এ বিশাল জাতির প্রতি দায়িত্ব পালনে আল্লাহকে ভয় করুন। মহান ধর্ম ইসলামের প্রতি সম্বোধনের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করুন। এই জাতির সন্তানদের অধিকার যথাযথভাবে আদায় করুন, এই মহান ব্যাক্তিত্ব গোলাম আযমকে মুক্ত করে দিন, আমরা দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে জানি তিনি সারাজীবন ইসলাম ও উম্মাহকে বাঁচানোর জন্য উত্তম চেষ্টা করেছেন, আপনারা তাকে অভিযুক্ত করছেন যে তিনি আলাদা দেশ গঠনের বিপক্ষে ছিলেন, অথচ প্রচুর বরং প্রায় সব মানুষই তখন পৃথক একটা দেশ গঠনের বিপক্ষে ছিলো, পাকিস্তানকে ভেঙ্গে আলাদা দেশ বানানোর উদ্দেশ্য মূলত কারোরই ছিলোনা প্রথমে।
আশ্চর্য, এই মানুষগুলোর কোন দায়িত্ববোধ নেই, কোন বিবেক নেই, কোন সুস্থবুদ্ধি নেই, আমরা তাদেরকে আহবান জানাই আল্লাহকে ভয় করার জন্য, তাদের জাতির মাঝে সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য, এই মানুষটি, প্রফেসর গোলাম আযমের প্রতি যথাযথ আচরণ করার জন্য, তাকে মুক্ত করে দেয়ার জন্য। যদি তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিচার করতে হয়, তাহলে ন্যায়বিচার করুন। ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে অন্যায় বিচারের প্রহসন করবেন না, ইচ্ছেমতো তুলে নিয়ে গিয়ে বন্দী করে তারপর হত্যা করবেন না। কেন আপনারা এ মানুষটিকে তিলে তিলে হত্যা করছেন? তিনি কাকে হত্যা করেছেন যে তাকে হত্যা করতে হবে? তিনি কি কাজ করেছেন যে তাকে অন্যায়ভাবে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে? আমরা আমাদের বাংলাদেশী মুসলিম ভাইদের জন্য এ দোয়াই করছি। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি যেন তিনি ঐ মানুষদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন, সত্য বুঝার সামর্থ্য দেন। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি।
সংযুক্তি
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইত্তেহাদুল উলামার আহবান
সকল বন্দি ইসলামী নেতাকে দ্রুত মুক্তি দিন
ইসলামিক স্কলারসদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইত্তেহাদুল উলামার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডঃ ইউসুফ আল কারযাবী ও সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর ডঃ আলী আল কুররাহ বন্দি ইসলামী নেতৃবৃন্দকে দ্রুত মুক্তি ও বাক-স্বাধীনতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের এহেন কর্মকান্ড প্রতিরোধের জন্য মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন।
বিশ্বের ৬০টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী এই সংগঠনের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দেয়া এক বিবৃতিতে তারা এ আহবান জানান। ইসলামিক স্কলারসদের আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক কালের কর্মকান্ডে অত্যন্ত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে, ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদকে এদেশের ওপর চাপিয়ে ইসলামপন্থীদের নিপীড়নের কঠোর সমালোচনা করছে। বর্তমান সরকারের সাথে একাত্বতা ঘোষণা না করে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে ইতোমধ্যে জামায়াতের ৮ জন শীর্ষ নেতাকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তারা হলেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দু'জন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা প্রমুখ। আশঙ্কা করা হচ্ছে হয়তো তাদের কয়েক জনকে মৃত্যুদন্ডের রায় দেয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে বলেন,
এক. (যুদ্ধাপরাধের নামে) এ মামলা ও বিচারকার্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ, এ ইস্যুটি চার দশক পর উত্থাপিত হয়েছে। অথচ অভিযুক্ত এসব ব্যক্তিগণের কেউ কেউ মন্ত্রীও ছিলেন। তখন তাদের নামে কোনো অভিযোগ আসেনি। বর্তমান সরকার আলেম-উলামাদের থেকে রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এখন অতীত ভুলে গিয়ে ইসলামী বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশ থেকে ইসলামী জাগরণ স্তব্ধ করে দিতে চায়। তারা চায় ইসলামী পরাশক্তি ও মিশনারী গ্রুপগুলো তাদের স্বার্থসিদ্ধ করুক। তারা বাঙ্গালী সমাজের স্বার্থের কথা ভাবে না।
দুই. আমরা বাংলাদেশ সরকারকে এহেন কর্মকান্ডের ব্যাপারে বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের নামে বিশেষ আইন সংশোধন করে আপিলের মেয়াদ ১ মাসে সীমাবদ্ধ করার ব্যাপরে সতর্ক করছি। সরকার বিচারের নামে এসব মহান ব্যক্তিগণের বিরুদ্ধে প্রহসন করলে বাংলাদেশ সরকার ও জাতি এক কঠিন ভয়াবহতার সম্মুখীন হবে। এটাই আল্লাহর নিয়ম যে, অত্যাচার ও নিপীড়নের ফল ভয়াবহতা ও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা বলেন, এরা ঐসব লোক, যারা দেশে দেশে বিদ্রোহ ও সীমা লঙ্ঘন করেছিল এবং সেখানে ব্যাপক ফাসাদ সৃষ্টি করেছিল। শেষে আপনার রব তাদের ওপর আযাবের চাবুক মেরেছিলেন। আসলে আপনার রব ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে আছেন। (সূরা আল্ ফাজর : ১১-১৪)
তিন. আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি আবারো বাংলাদেশ সরকারকে প্রফেসর গোলাম আযম ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দানের জন্য আহবান জানাচ্ছে। যাতে ভ্রাতৃপ্রতিম এ মুসলমান দেশে বন্দি ইস্যুটি রাজনৈতিক মতদ্বনদ্ব ও সামাজিক বিশৃক্মখলার রূপ না নেয়। আমরা বাংলাদেশে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনা করি। দেশ গঠন ও উন্নয়নে সকল শক্তি ও প্রচেষ্টা প্রয়োগ করা হোক এ ব্যাপারে আমরা একমত। আমরা দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত সকলের জন্য সহমর্মিতা প্রদর্শন ও তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য স্বীকৃতি প্রদান করছি। তবে আমরা চাই ন্যায়-বিচারের নামে যেনো কোনো নিরপরাধ মানুষকে অভিযুক্ত করা না হয়।
চার. এ সংস্থাটি সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা, স্বাধীন জাতি ও রাষ্ট্র এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে বাংলাদেশে চলমান জননিরাপত্তা হুমকি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, গ্রেফতার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বর্তমান সরকারকে চাপ প্রয়োগ করার জন্য আহবান জানাচ্ছে। বিশেষ করে হিউমান রাইটস ওয়াচ এবং এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করে।
সর্বশেষ তারা বলেন, আল্লাহর বিজয় সব বিষয়েই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। আল্লাহ-ই একমাত্র সাহায্যদাতা।
সংযুক্তি লিঙ্ক
1 comments:
I Like it