সুরা আনফাল (৯ থেকে ১৬) : বদর যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ইসলামের যুদ্ধনীতি (পৃষ্ঠ প্রদর্শনকারীর অবস্থান জাহান্নামে)

http://photos-b.ak.fbcdn.net/hphotos-ak-snc6/7418_134242542132_5636517_a.jpg
9) আর সেই সময়ের কথা স্মরণ করো যখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে ফরিয়াদ করছিলে৷ জবাবে তিনি বললেন , তোমাদের সাহায্য করার জন্য আমি একের পর এক, এক হাজার ফেরেশতা পাঠাচ্ছি৷


10) একথা আল্লাহ তোমাদের শুধুমাত্র এ জন্য জানিয়ে দিলেন যাতে তোমরা সুখবর পাও এবং তোমাদের হৃদয় নিশ্চিন্ততা অনুভব করে৷ নয়তো সাহায্য যখনই আসে আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে৷ অবশ্যই আল্লাহ মহাপরাক্রমশীল ও মহাজ্ঞানী৷
________________________________________

11) আর সেই সময়, যখন আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তন্দ্রার আকারে তোমাদের জন্য নিশ্চিন্ততা ও নির্ভীকতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন৷ ৮ এবং আকাশ থেকে তোমাদের ওপর পানি বর্ষণ করেছিলেন, যাতে তোমাদের পাক -পবিত্র করা যায়, শয়তান তোমাদের ওপর যে নাপাকী ফেলে দিয়েছিল তা তোমাদের থেকে দুর করা যায়, তোমাদের সাহস যোগানো যায় এবং তার মাধ্যমে তোমাদেরকে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়৷ ৯
________________________________________

৮ . অহোদ যুদ্ধেও মুসলমানদের এ একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ সূরা আলে ইমরানের ১১ রুকূতে একথা আলোচিত হয়েছে৷ উভয় জায়গায় কারণ একটি ছিল৷ অর্থাৎ যখনই প্রচণ্ড ভীতি ও আতংক দেখা দিয়েছে তখনই আল্লাহ মুসলমানদের দিল বিপুল নিশ্চিন্ততায় ভরে দিয়েছেন৷ এর ফলে তার তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল৷

৯ . যে রাতটি পোহাবার পরের দিন সকালে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, এটি ছিল সেই রাতের ঘটনা৷ এ বৃষ্টির সুফল ছিল তিনটি৷ এক, মুসলমানরা বিপুল পরিমাণ পানি পেয়ে গিয়েছিল৷ তারা সংগে সংগেই জলাধার তৈরী করে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল৷ দুই, মুসলমানরা উপত্যকার ওপরের দিকে অবস্থান করছিল৷ কাজেই বৃষ্টির ফলে বালি জমাট বেঁধে যথেষ্ট শক্ত হয়ে গিয়েছিল৷ তার ওপর দিয়ে মুসলমানদের বলিষ্ঠভাবে চলাফেরা করা সহজ হয়েছিল৷ তিন, কাফেরদের সেনা দল ছিল নীচের দিকে ৷ বৃষ্টির পানি সেখানে জমে গিয়ে কাদা হয়ে গিয়েছিল৷ ফলে সেখানে হাটতে গেলেই পা দেবে যাচ্ছিল৷

মুসলমানদের মধ্যে প্রথম দিকে যে ভীতির অবস্থা বিরাজমান ছিল তাকেই শয়তানের ছুঁড়ে দেয়া নাপাকী বলা হয়েছে৷

________________________________________



12) আর সেই সময়, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে ইঙ্গিত করেছিলেন, এই বলেঃ আমি তোমাদের সাথে আছি , তোমরা ঈমানদারদেরকে অবিচল রাখো, আমি এখনই এ কাফেরদের মনে আতংক সৃষ্টি করে দিচ্ছি৷ কাজেই তোমরা তাদের ঘাড়ে আঘাত করো এবং প্রতিটি জোড়ে ও গ্রন্থী -সন্ধিতে ঘা মারো৷ ১০
________________________________________

১০ . কুরআন থেকে আমরা যে নীতিগত কথাগুলো জানতে পারি তার ভিত্তিতে আমরা মনে করি, যুদ্ধ ক্ষেত্রে ফেরেশতারা হয়তো প্রত্যক্ষভাবে লড়াই করেননি এবং তরবারি হাতে নিয়ে সরাসরি মারামারি কাটাকাটিতে অংশও নেননি৷ সম্ভবত তারা এভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল যে, কাফেরদের ওপর মুসলমানরা যে আঘাত হানছিল তা ফেরেশতাদের সহযোগিতায় সঠিক জায়গায় পড়ছিল এবং প্রতিটি আঘাত হচ্ছিল , চুড়ান্ত ও মারাত্মাক৷ অবশ্যি সঠিক ব্যাপার আল্লাহই ভাল জানেন৷
________________________________________


13) এটা করার কারণ , তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিদ্রোহ পোষণ করেছে৷ আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিদ্রোহ করে আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন৷ আর আল্লাহর পাকড়াও বড়ই কঠিন৷ ১১
________________________________________

১১ . এ পর্যন্ত এক এক করে বদর যুদ্ধের যে ঘটনাবলী স্মরণ করিয়ে দেয়া হলো, আনফাল শব্দের অন্তরনিহিত তত্ব উদঘাটন করাই ছিল এর উদ্দেশ্য৷ শুরুতে বলা হয়েছিল, কেমন করে তোমরা এ গনীমতের মালকে নিজেদের প্রচেষ্টা ও মেহনতের ফল মনে করে এর মালিক বনে যেতে চাচ্ছো? এতো আসলে আল্লাহর দান৷ দাতা নিজেই তার সম্পদের পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী৷ এর স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে এ ঘটনাগুলো শুনিয়ে দেয়া হয়েছে৷ এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই হিসাব লাগিয়ে দেখে নাও ,এ ব্যাপারে তোমাদের নিজেদের প্রচেষ্টা , মেহনত ও সাহসিকতার অংশ কি পরিমাণ ছিল এবং আল্লাহর দান ও অনুগ্রহের অংশ ছিল কি পরিমাণ?
________________________________________

14) -এটা ১২ হচ্ছে তোমাদের শাস্তি, এখন এ মজা উপভোগ কর৷ আর তোমাদের জানা উচিত, সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব৷
________________________________________

১২ . এখান থেকে হঠাৎ কাফেরদেরকে সমম্বোধন করা শুরু হয়েছে৷ যাদেরকে একটু আগে শাস্তি লাভের যোগ্য বলা হয়েছিল৷
.
________________________________________

15) হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা একটি সেনাবাহিনীর আকারে কাফেরদের মুখোমুখি হও তখন তাদের মোকাবিলায় পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না৷
.
________________________________________

16) যে ব্যক্তি এ অব্স্থায় পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে সে আল্লাহর গযবে ঘেরাও হয়ে যাবে৷ তার আবাস হবে জাহান্নাম এবং ফিরে যাবার জন্যে তা বড়ই খারাপ জায়গা৷ ১৩ তবে হাঁ যুদ্ধের কৌশল হিসেবে এমনটি করে থাকলে অথবা অন্য কোন সেনাদলের সাথে যোগ দেবার জন্য করে থাকলে তা ভিন্ন কথা৷
________________________________________

১৩ . শত্রুর প্রবল চাপের মুখে নিজেদের পেছনের কেন্দ্রে ফিরে আসা অথবা নিজেদেরই সেনাদলের অন্য কোন অংশের সাথে যোগ দেবার জন্য সুপরিকল্পিত পশ্চাদপসরণ (Orderly Retreat) নাজায়েয নয়৷ তবে যুদ্ধের উদ্দেশ্য নিয়ে নয় রবং নিছক কাপুরুষতা ও পরাজিত মানসিকতার কারণে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ছত্রভংগ হয়ে পালানো (Rout) হারাম৷ কারণ এ ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ও লক্ষের তুলনায় মানুষের প্রাণটাই তার কাছে বেশী প্রিয় হয়ে উঠে৷ এ পালানোকে কবীরা গুনাহের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে৷তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিনটি গুনাহ এমন যে, তার সাথে কোন নেকী সংযুক্ত হলে কোন লাভ নেই৷ এক, শিরক৷ দুই, বাপ-মায়ের অধিকার নষ্ট করা৷তিন, আল্লাহর পথে লড়াই এর ময়দান থেকে পালানো৷ এভাবে তিনি আর একটি হাদীসে এমন সাতটি বড় বড় গুনাহের কথা বর্ণনা করেছেন যা মানুষের জন্যে ধ্বসংসকর এবং পরকালেও তাকে ভয়াবহ পরিণামের মুখোমুখি করবে৷এর মধ্যে একটি গুনাহ হচ্ছে, কুফর ও ইসলামের যুদ্ধ কাফেরদের সামনে থেকে পালানো৷ এটা একটা কাপুরুষোচিত কাজ বলেই যে, একে এতবড় গুনাহ গণ্য করা হয়েছে তা নয়৷ বরং এর কারণ হচ্ছে, একজন সৈনিকের ছুটাছুটি , দৌড়াদৌড়ি এবং ছত্রভংগ হয়ে বেরিয়ে যাওয়া অনেক সময় পুরো একটি বাহিনীকে ভীত সন্ত্রস্ত ও দিশেহারা করে দেয় এবং পালাতে উদ্বুদ্ধ করে ৷ আর একবার যখন একটি সেনাদলের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি ও পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, তখন তাদের বিপর্যয় ও ধ্বংস যে কতদূর গিয়ে ঠেকাবে তা বলা যায় না৷ এ ধরনের ছুটাছুটি ও পলায়নপরতা শুধু সেনাদলের জন্যেই ধ্বংসকর নয় বরং যে দেশের সেনাদল এ ধরনের পরাজয় বরণ করে তার জন্যেও বিপর্যয়কর৷

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম