সুরা আনফাল (১৭ থেকে ২৫) : সুরা আনফাল (১৭ থেকে ২৫) : বিবেক বুদ্ধি যারা কাজে লাগায় না, আল্লাহর কাছে তারা সবচেয়ে অপছন্দনীয়



১৭) কাজেই সত্য বলতে কি, তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন৷ আর তোমরা নিক্ষেপ করনি বরং আল্লাহ নিক্ষেপ করেছেন৷ ১৪* (আর এ কাজে মুমিনদের হাত ব্যবহার করা হয়েছিল) এ জন্য যে আল্লাহ মুমিনদেরকে একটি চমৎকার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সফলতার সাথে পার করে দেবেন৷ অবশ্যি আল্লাহ সবকিছু শুনেনে ও জানেন৷
........................................

১৪* . বদরের যুদ্ধে যখন মুসলমান ও কাফেরদের সেনাদল ময়দানে পরষ্পরের মুখোমুখি হলো এবং আঘাত -পাল্টা আঘাতের সময় এসে গোলো তখন নবী (সা) এক মুঠো বালি হাতে নিয়ে -----(শত্রুদলের চেহারাগুলো বিগড়ে যাক) বলে কাফেরদের দিকে ছুড়ে দিলেন৷ এই সংগে তার ইঙ্গিতে মুসলমারা অকস্মাত কাফেদের ওপর আক্রমণ করলো৷ এখানে এ ঘটনাটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে৷
.
........................................

১৮) এ ব্যাপারটি তো তোমাদের সাথে! আর কাফেরদের সাথে যে আচরণ করা হবে তা হচ্ছে আল্লাহ তাদের কৌশলগুলো দুর্বল করে দেবেন৷
.



১৯) (এ কাফেরদের বলে দাও) যদি তোমরা ফায়সালা চেয়ে থাকো, তাহলে এই নাও ফায়সালা তোমাদের সামনে এসে গেছে৷ ১৫* এখন যদি ক্ষান্ত হও, তাহলে তো তোমাদের জন্যই ভাল হবে৷ নয়তো যদি ফিরে আবার সেই বোকামির পুনরাবৃত্তি করো তাহলে আমিও সেই শাস্তির পুনরাবৃত্তি করবো এবং তোমাদের দলবল যত বেশীই হোক না কেন, তা তোমাদের কোন কাজে আসবে না৷ আল্লাহ অবশ্যি মুমিনদের সাথে রয়েছেন৷

........................................

১৫* . মক্কা থেকে রওয়ানা হবার সময় মুশরিকরা কাবা শরীফের পরদা দুহাতে আঁকড়ে ধরে দোয়া করেছিল, হে আল্লাহ! উভয় দলের মধ্যে যে দলটি ভাল তাকে বিজয় দান করো৷ আর আবু জেহেল বিশেষ করে বলেছিল ,হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যে দলটি সত্য পথে আছে তাকে বিজয় দান করোএবং যে দলটি জুলুমের পথে অবলম্বন করেছে তাকে লাঞ্চিত করো৷ বস্তুত আল্লাহ তাদের নিজ মুখে উচ্চারিত আবদার অক্ষরে অক্ষারে পূর্ণ করলেন এবং দুই দলের মধ্যে কোনটি ভাল ও সত্যপন্থী তার মীমাংসা করে দিলেন৷
.
........................................

২০) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো এবং হুকুম শোনার পর তা অমান্য করো না৷
.

২১) তাদের মতো হয়ে যেয়ো না, যারা বললো, আমরা শুনেছি অথচ তারা শোনে না৷ ১৬ *

........................................

১৬* . এখানে শোনা বলতে এমন শোনা বুঝায় যা মেনে নেয়া ও গ্রহণ করা অর্থ প্রকাশ করে৷ যেসব মুনাফীক ঈমানের কথা মুখে বলতো কিন্তু আল্লাহর হুকুম মেনে চলতো না এবং তার আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতো তাদের দিকেই এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে৷

........................................

২২) অবশ্যি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ধরনের জানোয়ার হচ্ছে সেই সব বধির ও বোবা লোক ১৭* যারা -বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগায় না৷

১৭* . অর্থাৎ যারা সত্য কথা শোনেও না৷ সত্য কথা বলেও না ৷যাদের কান ও মুখ সত্যের ব্যাপারে বধির ও বোবা৷
.
........................................

২৩) যদি আল্লাহ জানতেন এদের মধ্যে সামান্য পরিমানও কল্যাণ আছে তাহলে নিশ্চয়ই তিনি তাদেরকে শুনতে উদ্ধুদ্ধ করতেন৷ (কিন্তু কল্যাণ ছাড়া) যদি তিনি তাদের শুনাতেন তাহলে তারা নির্লিপ্ততার সাথে মুখ ফিরিয়ে নিতো৷ ১৮*

........................................

১৮* . অর্থাৎ যখন তাদের মধ্যে সত্যপ্রিয়তা ও সত্যের জন্য কাজ করার আবেগ ও প্রেরণা নেই তখন তাদের যদি আদেশ পালন করার জন্যে যুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করাও হতো তাহলেও তারা এ আসন্ন বিপদ দেখেই অবলীলাক্রমে পালিয়ে যেতো৷ এ অবস্থায় তাদের সংগ তোমাদের জন্যে কল্যাণকর হবার পরিবর্তে ক্ষতিকর প্রমানিত হতো৷


........................................

২৪) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ডাকে সাড়া দাও, যখন রসূল তোমাদের এমন জিনিসের দিকে ডাকেন যা জীবন দান করবে৷ আর জেনে রাখো আল্লাহ মানুষ ও তার দিলের মাঝখানে আড়াল হয়ে আছেন এবং তোমাদের তাঁর দিকেই সমবেত করা হবে৷ ১৯ *
........................................

১৯* . মানুষের মুনাফেকী আচরণ থেকে বাঁচবার জন্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী পদ্ধতি যেটি হতে পারে, তা হলো তার মনে দুটো বিশ্বাস বদ্ধমূল করে দেয়া৷ এক, যাবতীয় কর্মকাণ্ড সেই আল্লাহর সাথে জড়িত যিনি মনের অবস্থাও জানেন৷ মানুষ তার মনে মনে যে সংকল্প পোষণ করে এবং মনের মধ্যে যেসব ইচ্ছা, আশা, আকাংখা, উদ্দেশ্য, লক্ষ ও চিন্তা-ভাবনা লুকিয়ে রাখে তার যাবতীয় গোপন তথ্য তার কাছে দিনের আলোর মতো সুষ্পস্ট৷ দুই, একদিন আল্লাহর সামনে যেতেই হবে৷ তাঁর হাত থেকে বের হয়ে কেউ কোথাও পালিয়ে বাঁচতে পারবে না৷ এ দুটি বিশ্বাস যত বেশী শক্তিশালী ও পাকাপোক্ত হবে ততই মানুষ মুনাফিকি আচরণ থেকে দূরে থাকবে৷ এ জন্য মুনাফিকী আচরণের বিরুদ্ধে উপদেশ দান প্রসংগে কুরআন এ বিশ্বাস দুটির উল্লেখ করেছে বারবার৷


........................................


২৫) আর সেই ফিতনা থেকে দূরে থাকো, যার অনিষ্টকারিতা শুধুমাত্র তোমাদের গোনাহগারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না৷ ২০* জেনে রাখো, আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা৷

........................................

২০* . এখানে ফিতনা দ্বারা একটি সর্বব্যাপী সামাজিক অনাচার বুঝানো হয়েছে৷ এ অনাচার মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ে মানুষের জীবন দুর্ভাগ্য ও ধ্বংস ডেকে আনে৷ শুধুমাত্র যারা গোনাহ করে তারই এ দুর্ভাগ্য ও ধ্বংসের শিকার হয় না বরং এর শিকার তারাও হয় যারা এ পাপাচারে জর্জরিত সমাজে বসবাস করা বরদাশত করে নেয়৷
উদাহরণস্বরূপ ধরে নেয়া যেতে পারে, যখন কোন শহরে ময়লা আবর্জনা এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে জমে থাকে তখন তার প্রভাব ও থাকে সীমাবদ্ধ৷ এ অবস্থায় শুধুমাত্র যেসব লোক নিজেদের শরীরে ও ঘরোয়া পরিবেশে ময়লা আবর্জনা ভরে রেখেছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ কিন্তু যখন সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তুপ ব্যাপকভাবে জমে উঠতে থাকে এবং সারা শহরে ময়লা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যে প্রচেষ্টা চালাবার মতো একটি দলও থাকে না তখন মাটি, পানি ও বাতাসের সর্বত্রই বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে৷ এর ফলে যে মহামারী দেখা দেয় তাতে যারা ময়লা আবর্জনা ছড়ায় যারা নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন থাকে এবং যারা ময়ল ও আবর্জনার বসবাস করে তারা সবাই আক্রান্ত হয়৷ নৈতিক ময়লা ও আবর্জনার বেলায়ও ঠিক একই ব্যাপার ঘটে৷ যদি তা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু ব্যক্তির মধ্যে থাকে এবং সৎ ও সত্যনিষ্ঠ সমাজের প্রতিপত্তির চাপে কোণঠাসা ও নিস্তেজ অবস্থায় থাকে তাহলে তার ক্ষতিকর প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকে৷ কিন্তু যখন সমাজের সামষ্টিক বিবেক দুর্বল হয়ে পড়ে , নৈতিক অনিষ্টগুলোকে দমিয়ে রাখার ক্ষমতা তার থাকে না, সামাজ অংগনে অসৎ, নির্লজ্জ ও দুশ্চরিত্র লোকেরা নিজেদের ভেতরের ময়লাগুলো প্রকাশ্যে উৎক্ষিপ্ত করতে ও ছড়াতে থাকে, সৎলোকেরা নিষ্কর্মা হয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত সততা ও সদগুণাবলী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেএবং সামাজিক ও সামাষ্টিক দুষ্কৃতির ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করে তখন সামগ্রিকভাবে গোটা সামাজের ওপর দুর্ভোগ নেমে আসে৷ এ সময় এমন ব্যাপক দুর্যোগের সৃষ্টি হয় যার ফলে বড় -ছোট, সবল -দুর্বল, সবাই সমানভাবে বিপর্যয় ও বিধ্বস্ত হয়৷

কাজেই আল্লাহর বক্তব্যের মর্ম হচ্ছে, রসূর যে সংস্কার ও হেদায়াতের কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নেমেছেন এবং যে কাজে অংশগ্রহন করার জন্যে তোমাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন তার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় দিক দিয়ে তোমাদের জন্যে যথার্থ জীবনের গ্যারান্টি৷ যদি সাচ্চা দিলে আন্তরিকতা সহকারে তাতে অংশ না নাও এবং সমাজের বুজে যেসব দুস্কৃতি ছড়িয়ে রয়েছে সেগুলোকে বরদাশত করতে থাকো তাহলে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেবে৷ যদিও তোমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক থেকে থাকে যারা কার্যত দুস্কৃতির লিপ্ত হয় না এবং দুস্কৃতি ছাড়াবার জন্যে তাদেরকে দায়ীও করা যায় না বরং নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে তারা সুকৃতির অধিকারী হয়ে থাকে তবুও এ ব্যাপক বিপদ তোমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলবে৷ সূরা আরাফের ১৬৩-১৬৬ আয়াতে শনিবারওয়ালাদের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত পেশ করতে গিয়ে এ এক কথাই বলা হয়েছে ৷ এ দৃষ্টিভংগীকেই ইসলামের ব্যক্তি চরিত্র ও সমাজ সংস্কারমূলক কার্য়ক্রমের মৌলিক দৃষ্টিকোণ বলা যেতে পারে৷

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম