সুরা আনফাল (২৬ থেকে ৩১) : স্মরণ করো সেই সময়ের কথা-লোকেরা ভেবেছিলো তোমাদেরকে খতম-ই করে দেবে !!!

 http://a6.sphotos.ak.fbcdn.net/hphotos-ak-snc6/8120_157926382132_7762532_n.jpg
২৬) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন তোমরা ছিলে সামান্য কয়েকজন৷ পৃথিবীর বুকে তোমাদের দুর্বল মনে করা হতো৷ লোকেরা তোমাদের খতম করেই দেয় নাকি, এ ভয়ে তোমরা কাঁপতে৷ তারপর আল্লাহ তোমাদের আশ্রয়স্থল যোগার করে দিলেন, নিজের সাহায্য দিয়ে তোমাদের শক্তিশালী করলেন এবং তোমাদের ভাল ও পবিত্র জীবিকা দান করলেন, হয়তো তোমরা শোকরগুজার হবে৷ ২১

________________________________

২১ . এখানে শোকগুজার শব্দটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ৷ ওপরের ধারাবাহিক বক্তব্যগুলো সামনে রাখলে একটা কথা পরিস্কার হয়ে যায়৷ আল্লাহ মুসলমানদের দুর্বলতার অব্স্থা থেকে বের করে এনেছেন এবং মক্কার বিপদসংকুল জীবন থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে এমন শান্তি ও নিরাপত্তার ভূমিতে আশ্রয় দিয়েছিলেন যেখানে তারা উত্তম রিযিক লাভ করছে, শুধুমাত্র এতটুকু কথা মেনে নেয়াই শুকরগুজারী অর্থ প্রকাশের জন্যে যথেষ্ট নয়৷ বরং সেই সাথে একথাও অনুধাবন করা শোকরগুজারীর অন্তরভুক্ত যে, যে মহান আল্লাহ মুসলমানদের প্রতি এত সব অনুগ্রহ করেছেন সেই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করা তাদের কর্তব্য৷ আর রসূল যে আন্দোলনের সূচনা করেছেন, তাকে সফল করার সধানায় তাদেরকে আন্তরিকতা ও উৎসর্গিত মনোভাব নিয়ে আত্মনিয়োগ করতে হবে৷ এ কাজে যেসব
বাধা-বিপত্তি,বিপদ-আপদ , ও ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভবনা দেখা দেবে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তারা সাহসের সাথে তার মোকাবিলা করে যাবে৷ কারণ এ আল্লাহই ইতিপূর্বে বিপদ আপদ থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে এনেছিলেন৷ তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস রাখবে যখন তারা আন্তরিকতার সহকারে আল্লাহর কাজ করবে তখন আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদের পক্ষ সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা করবেন- এসবই শোকরগুজারীর অর্থে অন্তরভুক্ত৷ কাজেই শুধুমাত্র মুখে স্বীকৃতি দান পর্যায়ের শোকরগুজারী এখানে উদ্দেশ্য নয়৷ বরং এ শোকরগুজারী বাস্তবে কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে৷ অনুগ্রহের কথা স্বীকার করা সত্ত্বেও অনুগ্রহকারীর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে প্রচেষ্টা না চালানো, তার খিদমত করার ব্যাপারে আন্তরিক না হওয়া এবং না জানি আগামীতেও তিনি অনুগ্রহ করবেন কিনা এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা - এসব কোন ক্রমেই শোকরগুজারী নয় বরং উলটো অকৃতজ্ঞতারই আলামত৷


________________________________


২৭) হে ঈমানদরগণ! জেনে বুঝে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না, নিজেদের আমানতসমূহের ২২ খেয়ানত করো না৷
২২ . নিজেদের 'আমানতসমূহ' মানে কারোর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করে যেসব দায়িত্ব তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়৷ তার আনুগত্য করা ও অংগীকর পালনের দায়িত্বও হতে পারে৷ অথচ কোন সামাজিক চুক্তি পালন, দলের গোপনীয়তা রক্ষা করা বা ব্যক্তিগত ও দলীয় সম্পত্তি রক্ষা করার কিংবা এমন কোন পদের অংগীকারও হতে পারে যা কোন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে দল তার হাতে সোপর্দ করে দেয়৷(আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্যে দেখুন সূরা আন নিসার ৮৮ টীকা)৷


.
________________________________


২৮) এবং জেনে রেখো, তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্তুতি আসলে পরীক্ষার সামগ্রী ৷ ২৩ আর আল্লাহর কাছে প্রতিদান দেবার জন্য অনেক কিছুই আছে৷

________________________________


২৩ . যে জিনিসটি সাধারণত মানুষের ঈমানী চেতনায় এবং নিষ্ঠা ও আন্তরিকাতায় বিশৃংখলা সৃষ্টি করে এবং যে জন্যে মানুষ প্রায়ই মুনাফেকী, বিশ্বাসঘাতকতা ও খেয়ানত লিপ্ত হয় সেটি হচ্ছে, তার অর্থনৈতিক স্বার্থ ও সন্তান -সন্ততির স্বার্থের প্রতি সীমাতিরিক্ত আগ্রহ৷ এ কারণে বলা হয়েছে এ অর্থ -সম্পদ ও সন্তান -সন্ততির মোহে অন্ধ হয়ে তোমরা সাধারণত সত্য-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাও৷অথচ এগুলো তো আসলে দুনিয়ার পরীক্ষাগৃহে তোমাদের জন্যে পরীক্ষার সমগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়৷ যাকে তোমরা পুত্র বা কন্যা বলে জানো প্রকৃতপক্ষে সে তো পরীক্ষার একটি বিষয় ৷ আর যাকে তোমরা সম্পত্তি বা ব্যবসায় বলে থাকে সেও প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষার আর একটি বিষয় মাত্র৷ এ জিনিসগুলো তোমাদের হাতে সোপর্দ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তোমরা অধিকার ও দায়-দায়িত্বের প্রতি কতদূর লক্ষ রেখে কাজ করো, দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে আবেগ তাড়িত হয়েও কতদূর সত্য ও সঠিক পথে চলা অব্যাহত রাখো, এবং পার্থিব বস্তুর প্রেমাসক্ত নফসকে কতদূর নিয়ন্ত্রণে রেখে পুরোপুরি আল্লাহর বান্দায় পরিণত হও এবং আল্লাহ তাদের যতটুকু অধিকার নির্ধারণ করেছেন ততটুকু আদায় ও করতে থাকো, এগুলোর মাধ্যমে তা যাচাই করে দেখা হবে৷
.
________________________________


২৯) হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করার পথ অবলম্বন করো তাহলে আল্লাহ তোমাদের কষ্টিপাথর দান করবেন ২৪ এবং তোমাদের পাপগুলো তোমাদের থেকে দূর করে দেবেন এবং তোমাদের ত্রুটি -বিচ্যুতি ক্ষমা করবেন৷ আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল৷

________________________________


২৪ . কষ্টিপাথর এমন একটি জিনিসকে বলা হয় যা খাঁটি ও ভেজালের মধ্যকার পার্থক্যকে সুষ্পষ্ট করে তুলে ধরে৷ এটিই ফুরকান-এর অর্থ৷এ জন্যেই আমি ফুরকানের অনুবাদ করেছি কষ্টিপাথর শব্দ দিয়ে৷ এখানে আল্লাহর বানীর অর্থ হচ্ছে যদি তোমরা দুনিয়ায় আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো এবং আন্তরিকতাভাবে আল্লাহর ইচ্ছা বিরোধী কোন কাজের করতে প্রস্তুত না হয়ে থাকো, তাহলে মহান আল্লাহ তোমাদের মধ্যে এমন পার্থ্ক্যকারী শক্তি সৃষ্টি করে দেবেন যার ফলে প্রতি পদে পদে তোমরা জানতে পারবে কোন কর্মনীতিটা ভুল ও কোনটা নির্ভুল এবং কোন কর্মনীতি অবলম্বন করলে আল্লাহর সন্তোষ লাভ করা যায়৷ এবং কিসে তিনি অসন্তুষ্ট হন৷ জীবন পথের প্রতি বাঁকে প্রতিটি চৌরাস্তায় এবং প্রতিটি চড়াই উতরাইয়ে তোমাদের অন্তরদৃষ্টি বলে দেবে কোন দিকে চলা উচিত এবং কোন দিকে চলা উচিত নয়৷ কোনটি সেই নিরেট সত্যের পথ যা আল্লাহর দিকে নিয়ে যায় এবং কোনটি মিথ্যা ও অসত্যের পথ, যা শয়তানের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়৷
.
________________________________


৩০) সেই সময়ের কথাও স্মরণ করার মত যখন সত্য অস্বীকারকারীরা তোমার বিরুদ্ধে নানান রকমের চক্রান্ত আঁটছিল৷ তারা চাচ্ছিল তোমাকে বন্দী করতে৷ হত্যা করতে বা দেশ ছাড়া করতে৷ ২৫ তারা নিজেদের কূট -কৌশল প্রয়োগ করে চলছিল, অন্যদিকে আল্লাহ ও তাঁর কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন আর আল্লাহ সবচেয়ে ভাল কৌশল, অবলম্বনকারী৷

________________________________

২৫ . এটা এমন সময়ের কথা যখন কুরাইশদের এ যাবতকার আশংকা নিশ্চিত বিশ্বাসের পরিণত হয়ে গিয়েছিল, তখন তরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো,এ ব্যক্তি মক্কা থেকে বের হয়ে গেলে বিপদ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে৷ কাজেই তারা তাঁর ব্যাপারে একা চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছার জন্যে দারুন নদওয়ায় জাতীয় নেতৃবৃন্দের একটি সভা দলের মত ছিল, এ ব্যক্তির হাতে পায়ে লোহার বেড়ি পরিয়ে এক জায়গায় বন্দী করে রাখা হোক৷ মৃত্যুর পূর্বে আর তাকে মুক্তি দেবার প্রয়োজন নেই৷ কিন্তু এ মত গ্রহীত হলো না ৷ কারণ তারা বললো, আমরা তাকে বন্দী করে রাখলেও তার যেসব সাথী কারাগারের বাইরে থাকবে তারা বরাবর নিজেদের কাজ করে যেতে থাকবে এবং সামান্য একটু শক্তি অর্জন করতে পারলেই তাকে মুক্ত করার জন্যে প্রাণ উৎসর্গ করে দিতে কুন্ঠাবোধ করবে না৷ দ্বিতীয় দলের মত ছিল একে আমাদের এখান থেকে বের করে দাও৷ তারপর যখন সে আমাদের মধ্যে থাকবে না তখন সে কোথায় থাকে ও কি করে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাবার কি আছে? মোটকথা এভাবে তার অস্তিত্ব আমাদের জীবন ব্যবস্থায় যে বিশৃংখলা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তা বন্ধ হয়ে যাবে৷ কিন্তু এ মতটিকেও এই বলে রদ করে দেয়া হলো যে, এ ব্যক্তি হচ্ছে কথার যাদুকর৷ কথার মাধ্যেমে মানুষের মন গলিয়ে ফেলার ব্যাপারে এর জুড়ি নেই৷ সে এখান থেকে বের হয়ে গেলে না জানি আরবের কোন কোন উপজাতি ও গোত্রকে নিজের অনুসারী বানিয়ে নেবে! তারপর না জানি কী পরিমাণ ক্ষমতা অর্জন করে আরবের কেন্দ্রস্থল নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে তোমাদের ওপর আক্রমণ করে বসবে! সব শেষ আবু জেহেল মত প্রকাশ করলো যে, আমাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে উচ্চ বংশীয় অসি চালনায় পারদর্শী যুবক বাছাই করে নিতে হবে ৷ তারা সবাই মিলে একই সংগে মুহাম্মাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং তাকে হত্যা করবে৷ এভাবে মুহাম্মাদকে হত্যা করার দায়টি সমস্ত গোত্রের ওপর ভাগাভাগি হয়ে যাবে৷ আর সবার সংগে লড়াই করা বনু আবদে মান্নাফের জন্যে অসম্ভব হয়ে পড়বে৷কাজেই বাধ্য হয়ে তারা রক্তমূল্য গ্রহণ করতে রাজী হয়ে যাবে৷ এ মতই সবাই পছন্দ করলো৷ হত্যা করার জন্যে লোকদের নাম স্থিরিকৃত হলো৷ হত্যা করার সময়ও নির্ধারিত হলো৷ এমনকি যে রাতটি হত্যার জন্যে নির্ধারিত করা হয়েছিল সে রাত ঠিক সময়ে হত্যাকারীরাও যথা স্থানে নিজেদের মতলব হাসিল করার উদ্দেশ্যে পৌছে গিয়েছিল৷কিন্তু তাদের হাত উঠাবার আগেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের চোখে ধুলো দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিলেন৷ ফলে একেবারে শেষ সময়ে তাদের পরিকল্পিত কৌশল বানচাল হয়ে গেলো৷
.
________________________________


৩১) যখন তাদেরকে আমার আয়াত শুনানো হতো, তারা বলতো ,হ্যাঁ আমরা শুনেছি, আমরা চাইলে এমন কথা আমরাও শুনাতে পারি৷ এতো সেই সব পুরানো কাহিনী, যা আগে থেকে লোকেরা বলে আসছে৷

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম