আজকে আপনাদের এমন একজন ব্যক্তিত্বকে পরিচয় করিয়ে দিব যে পাশ্চত্যের চাকচিক্যময় পপ জগৎ ছেড়ে খৃস্ট ধর্ম বদলে শান্তির ধর্ম ইসলামের ছায়াতলে নিজের আশ্রয় খুজে নিয়েছেন। তাই প্রতিপদে তাকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানা প্রতিকূলতার। তবু তার জনপ্রিয়তা কমেনি একদমই। চালিয়ে যাচ্ছেন ইসলামের সৌন্দর্য প্রচারে নিরলস কর্মযজ্ঞ।
ধর্ম পালনের সাথে প্রগতি, প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা, জীবনে উন্নতি, নারী স্বাধীনতা ইত্যাদি সাংঘর্ষিক - এমন ভ্রান্ত ধারনা প্রায়ই শোনা যায়। কোন ধর্মই অশান্তির কথা বলে না। ধর্ম চায় মানুষ সামাজিক নিয়মের মধ্যে থেকে স্রষ্টাকে মেনে চলুক। কিন্তু নিজের এবং স্ব-গোষ্ঠীর হীন স্বার্থ পূরণের জন্য ধর্ম অপব্যবহার হয়ে আসছে, যুগে যুগে - এখনও। কলুষিত হচ্ছে ধর্ম। ইউসুফ ইসলামের জীবনী পর্যালোচনা করে দেখা যাবে, সঠিকভাবে ধর্ম-কর্ম পালন করেও সফল, পরোপকারী, আধুনিক মানুষ হিসাবে নিজেকে বদলে নেয়া যায়।
ইউসুফ ইসলাম (ক্যাট স্টিভেন্স):
■ জন্ম: একুশে জুলাই ১৯৪৮
■ জন্মস্থান: লন্ডন, ইংল্যান্ড
■ বাবা: Stavros Georgiou (গ্রিক)
■ মা: Ingrid Wickman (সুইডিস)
■ পূর্বের নাম: Stephen Demetre Georgiou
■ গানের জগতে Cat Stevens নামে পরিচিত
■ একাধারে মানবতাবাদী, শিক্ষাগুরু, গায়ক, গীতিকার, মাল্টি ইনস্ট্রুমেন্টালিস্টস।
■ ক্যাট স্টিভেনস:
পড়ালেখা শুরু রোমান ক্যাথলিক প্রাইমারি ইস্কুলে। ১৬ বছর বয়সে আর্টস থেকে 'এ' গ্রেড পেয়ে Hammersmith Art Colleges ভর্তি হন। সেটা ছিল ১৯৬৬ সালের ঘটনা। সেই বছরেই তার প্রথম একক গান রেকর্ড করা হয়। ১৯৭০ সালে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় আটটি 'Gold Albums' , ইংলান্ডে ১৪টি এবং আমেরিকায় ১০টি হিট সিঙ্গল বের হয়েছে। জনপ্রিয় এ্যালবাম Tea for the Tillerman, Teaser and the Firecats, Catch Bull at Four, and Buddah and the Chocolate Box. এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ মিলিয়ন কপির উপর এ্যালবাম বিক্রি হয়েছে।
অরিজিনাল ক্যাট স্টিভেন্স ভার্সন:
ক্যাট স্টিভেনস এর জনপ্রিয় কিছু গান (ডাউনলোড লিংক সহ):
■ "Sad Lisa", ইউটিউব
(রিজিউম সহ মিডিয়া ফায়ার ফাইল)
■ ধর্মান্তর:
১৯৭৬ সালের ছোট একটি দূর্ঘটনা বদলে দেয় তার সারাটা জীবন। ঘটনার দিন আমেরিকার ম্যালিবু বিচে সাতার কাটতে যেয়ে প্রায় ডুবতে বসেছিল। তখন সে মৃত্যু ভয়ে চিৎকার করে উঠে,
“Oh God! If you save me I will work for you.”
বলতে না বলতেই অপ্রত্যাশিত উল্টো একটি ঢেউ তাকে তীরে আছড়ে ফেল ! এই ঘটনার পর থেকে ক্যাট স্টিভেন্সের মনে আমূল পরিবর্তন আসে। পাশ্চাত্যের জড়বাদী জগতের পিছনে না দৌড়ে মনের শান্তি এবং আধ্যাত্মিক সত্যানুসন্ধানের দিকে ঝুঁকে পরেন। শুরুতে বৌদ্ধ ধর্ম, জেন, রাশিফল, অ্যাস্ট্রলজি, নিউমারলজি, টেরট কার্ড ইত্যাদি তুলনামুলক বোঝার চেষ্টা শুরু করেন। আবার স্টিভেন্সের ভাই ডেভিড গর্ডন জেরুজালেম ঘুরতে যেয়ে ভাইয়ের জন্য একটি পবিত্র কোরান নিয়ে আসেন। ধারনা করা হয় এই সময় থেকেই ক্যাট স্টিভেন্সের ইসলামকে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। এমন সময় ছুটিতে স্টিভেনস মরোক্কো ঘুরতে যেয়ে প্রথম আজানের ধ্বনি শুনতে পেয়ে অভিভূত হয়ে পরেন। জানতে চান, "এটা কিসের শব্দ?" উত্তরে জানতে পারেন, "এটা আজান, ঐশ্বরীয় বার্তা। যার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে মুসলমানদের মসজিদ মুখে আহ্বান করা হয়।" স্টিভেন্স ভাবেন, জীবনে টাকার জন্য গান করতে শুনেছি, গান হয়েছে খ্যাতির জন্য.. ক্ষমতা.. কিন্তু ঐশ্বরিক গান? জীবনেও শুনি নি! অসাধারন কনসেপ্ট! বলা যায় এই ভ্রমণটি ছিল ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার পথে তার শেষ পদক্ষেপ। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালের ক্যাট স্টিভেন্স তেইশ ডিসেম্বর খৃস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। নিজের নাম 'ক্যাট স্টিভেন্স' পরিবর্তন করে 'ইউসুফ ইসলাম' রাখেন। পবিত্র কোরান শরীফের ইউসুফ নবীর কাহিনী পড়ে এই নামটির প্রতি তার বিশেষ দুর্বলতা তৈরি হয়।
(রিজিউম সাপোর্ট সহ মিডিয়া ফায়ার ফাইল)
■ ইসলাম ধর্ম প্রচারে অবদান:
বর্তমানে ইংল্যান্ডে মুসলিম কমিউনিটিতে ইউসুফ ইসলাম জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। মূলত তিনটি মৌলিক ক্ষেত্রে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন:
১. শিশুদের ইসলাম শিক্ষা:
১৯৮৩ সালে মাত্র ৩ থেকে চার বছর বয়সের ১৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে লন্ডনে Islamia Primary School প্রতিষ্ঠা করেন। অসাধারন ব্যপার সে বছরেই অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর আবেদনের ভীড়ে অপেক্ষামান শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়!
১৯৮৯ Islamia Girls’ Secondary School প্রতিষ্ঠা করে অভূতপূর্ব সাফল্য পান। GCSE examination level এ এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গড় ফলাফল সবার চাইতে ভাল হয়। যা ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক নতুন ধারনা, মানদণ্ডের ভীত তৈরি করে।
ইউসুফ ইসলাম Brondesbury College নামের আর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। এখানে মূলত স্কলারশিপ নিয়ে ছাত্ররা ইসলামি শিক্ষার আলোকে পড়াশোনা করে থাকে। তাদের ঈর্ষণীয় রেজাল্ট দেখলে ধারনা করা যায় তাদের সাফল্য।
ইউসুফ ইসলাম United Kingdom Islamic Education Waqf (UKIEW) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এ প্রতিষ্ঠান মূলত ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে। তিনি "Association of Muslim Schools " এর ও চেয়ারম্যান। যারা সমগ্র ইংল্যান্ডে সকল ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ, তথ্য, শিক্ষা, ট্রেনিং ইত্যাদি দিয়ে থাকে।
১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডে তার তত্বাবধানে WAQF AL-BIRR EDUCATIONAL TRUST নামের একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান নথিভুক্ত হয়। এই প্রতিষ্ঠান ইসলাম প্রচারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠা এবং গবেষণার কাজও করে থাকেন তারা। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (মুসলিম/অমুসলিম) তারা International Board of Educational Research and Resources (IBERR) সাথে নিয়ে বিষয় ভিত্তিক ইসলামিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োগ, ট্রেনিং, শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করে থাকে।
২. ইসলামের দাওয়াত:
১৯৯৪ সালে ইউসুফ ইসলাম MOUNTAIN OF LIGHT প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটি মূলত ইসলাম ধর্ম বিষয়ক দাওয়াতি তথ্য উপকরণ, প্রচারের বিভিন্ন মাধ্যম তৈরি করে থাকে। যেমন, মাল্টিমিডিয়া অডিও-ভিডিও ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডি। এখান থেকে রিলিজ পায় ‘Life of the Last Prophet' । অ্যালবামটি ইন্সট্রুমেন্ট একদমই ব্যবহার হয়নি। এটা ২০ বছর মিউজিক ইন্ড্রাস্ট্রিস থেকে দূরে থাকার পর তার প্রথম অফিসিয়াল রিলিজ। তাদের নতুন রিলিজ A Is for Allah। ইসলাম শিক্ষা বিষয়ক ডাবল অ্যালবাম।
৩. বিশ্বের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে:
Muslim Aid একটি আর্ন্তজাতিক সাহায্য সংস্থা। ১৯৮৫ সালে ইউসুফ ইসলাম সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। পৃথিবীর অন্যান্ন মুসলিম সাহার্য সংস্থার সাথে মিলিতভাবে তারা তাদের কাজ করে যাচ্ছে।
সংস্থাটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যস্থ মানুষদের সাহায্য করে থাকে। এযাবৎ কালে প্রায় চার লক্ষ মানুষকে তারা প্রত্যক্ষ সাহার্য করেছে। এছাড়া এতিম শিশু এবং দুস্থ পরিবারদের বিভিন্ন সাহার্য দিয়ে থাকে। আফ্রিকা, ইরাক, ইন্দেনেশিয়া এবং কসোভোতে হাজার হাজার দুস্থ পরিবার এবং এতিম শিশুকে পুনর্বাসন করেছে। বাংলাদেশে অনেকদিন ধরে এই সংস্থাটি বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
'ক্যাট স্টিভেনস মিউজিক' হতে বছরে আয়কৃত প্রায় দেশ মিলিয়ন ডলার পুরোটা ইসলাম প্রচার প্রসার এবং বিভিন্ন ত্রাণ কার্যে দান করে থাকেন।
ইউসুফ ইসলাম FORUM AGAINST ISLAMOPHOBIA AND RACISM (FAIR) নামের ফোরামের হয়ে ইসলাম ভীতি এবং বর্ণবাদ (Islamophobia and Racism) এর বিরুদ্ধে সর্বদা একটি সোচ্চার গলা। ভিন্ন বর্ণ-ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া নানা বৈষম্যমূলক নীতি, আইনের বিরুদ্ধে তারা কাজ করে যাচ্ছে।
■ বাংলাদেশ ভ্রমণ:
UNICEF এর বিশেষ দূত হয়ে ক্যাট স্টিভেন্স যুদ্ধ বিধ্বস্থ বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, পটুয়াখালি, ভোলা, রংপুর ইত্যাদি স্থানে ঘুড়ে বেড়িয়েছেন। দেশের ধনী ও গরীব শ্রেনীর বৈষম্য এবং রাজনীতির দৈন্যতা তার ভালই চোখে পরেছে! তার সেই করুন মধুর অভিজ্ঞতা জানতে এই আর্টিক্যাল এ ক্লিক করুন।
■ ইসলাম এবং গান নিয়ে আত্ম দ্বন্দ:
ইউসুফ ইসলাম ১৯৭৭ সালে ধর্মান্তরিত হবার পর দীর্ঘ সাতাশ বছর গান থেকে দূরে থাকেন। যদিও লন্ডনের চীফ ইমাম-মুফতির কাছ থেকে ইউসুফ ইসলাম জানতে পারেন, "ধর্মের বিরুদ্ধ কোন বিষয়, অসামাজিক কার্যকলাপ, অশ্লীল শব্দ ব্যবহার না করে গান বাজনা করা নৈতিকভাবে গ্রহনযোগ্য।" তবে বাদ্য যন্ত্র ব্যবহার করা নিয়ে মতান্তর আছে।
সে ইসলাম ধর্মে নতুন এবং এ বিষয়ে জানতে শক্ত বিশ্বাস এবং তার বাড়তি সময়ের প্রয়োজন। অপর দিকে ইতিমধ্যে পাশ্চাত্যের নৈতিকতা বিহীন বোহেমিয়ান পপ কালচার বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। তার ভয় ছিল এগুলোর প্রভাবে হয়ত শান্তির পথ নষ্ট হতে পারে। আবার পবিত্র কোরআন এ কোথায় গান বাজনা করা যাবে না সেটা উল্লেখ নেই। তবু সে নিরাপদ পথ হিসাবে সিদ্ধন্ত নেন আপাতত হলেও গান বাজনা বন্ধ রাখবেন। তখন থেকে সে মদ্যপান বন্ধ করেন। পরিত্যাগ করেন সকল প্রকার নারী সঙ্গ।
১৯৮৫ সালে বিরতির পর অবার প্রথম প্রকাশ্যে ইথিওপিয়ায় দুর্ভিক্ষ পিরিত মানুষদের সাহায্যার্থে করা বিখ্যাত Live Aid concert এ গান করার উদ্যোগ নেন। তার জন্য The End নামের একটি গানও রচনা করেন। (ডাউনলোড লিংক) লিরিক।
যদিও কনসার্টে এলটন জনের অতিরিক্ত সময় গান গাওয়ার জন্য ইউসুফ ইসলামের সিডিউল বাদ দেয়া হয়। অনেকের ধারনা উদ্যোক্তা Bob Geldof এবং Harvey Goldsmith চায়নি The End গানটি গাওয়া হোক!
■ গান গাওয়া ও না গাওয়া নিয়ে ইউসুফ ইসলামের লেখা এই প্রবন্ধটি পড়ুন (পিডিএফ):
■ আমেরিকায় অনুপ্রবেশে বাধা:
২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে রেকর্ডিং এর কাজে লন্ডন থেকে ওয়াশিংটনে যাবার পথে তাকে আটক করা হয়। অভিযোগ আমেরিকার Border Protection (CBP) এ No Fly List এ তার নাম আছে। সে কারনে তাকে ইংল্যান্ডে ফিরে আসতে হয়।
এ বিষয়ে আমেরিকার Homeland Security এর এক মূখপাত্র দাবি করে,
"নানা ঘটনা বিষয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে তার দ্বারা সম্ভাব্য 'টেরোরিস্ট' সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে! তাই এই ব্যবস্থা।" ২০০০ সালে ইসরাইলী সরকারও তাকে ইসরাইলে ঢুকতে দেয়নি। অভিযোগ প্যালেস্টাইনী সংস্থা 'হামাস' কে সাহায্য করার। ইউসুফ ইসলাম সব সময়ই এই সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, আমার সবাই জানি পবিত্র নগরী প্যালেস্টাইনে কি হচ্ছে এবং তাদের সত্যি অনেক সাহায্য প্রয়োজন। যে কোন 'রাষ্ট্রকে অর্থ সাহায্য' করাকে অনেকেই রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে তাদের হীন স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করে। পরে ইউসুফ ইসলাম এই বিষয়টি নিয়ে Paul McCartney, Alison Krauss, Dolly Parton এবং Terry Sylvester সাথে নিয়ে Boots and Sand নামের একটি গান লিখেন।
■ যথারীতি পশ্চিমা মিডিয়ার আক্রমন:
২০০৪ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের নামকরা পত্রিকা 'The Sun' এবং 'The Sunday Times' তাদের বিভিন্ন রিপোর্টে বলতে থাকে ইউসুফ ইসলামকে আমেরিকা থেকে ফেরত পাঠানো সঠিক ছিল। এবং তারা দাবী করে ইউসুফ ইসলামের সাথে সন্ত্রাসী গ্রুপের যোগসাজস আছে। এ কারনে ইউসুফ ইসলাম পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করে দেন। এবং সফলতার সাথে কোর্ট এর বাহিরে সমঝোতার মাধ্যমে পত্রিকার কাছে থেকে অর্থ দন্ড পান এবং পত্রিকাগুলো তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। যদিও The Sun এর সম্পাদক দাবী তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে!
ইউসুফ ইসলামের ভাষ্য, "এখন বর্তমান বিশ্বে খুবই সহজেই যে কোন মুসলিমকে প্রমান ছাড়া হাস্যকর ভাবে দোষী বলা যায়! আমার বেলায় এইরকম মিথ্যা বানোয়াট খবর সরাসরি আমার পরিচালিত রিলিফ কার্য এবং আর্টিস্ট হিসাবে আমার সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। অনেক সময় এই রকম অসুস্থ আঘাতের ক্ষতিপূরুন হয় না। মিথ্যা একবার প্রচার হলে সবাইকে সত্যটা জানানো বেশ কঠিন।"
যাহোক, ক্ষতিপূরণ হিসাবে কোর্ট থেকে প্রাপ্ত সকল অর্থ সে সময়ে ভারত মহাসাগরের ঘটে যাওয়া সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যর্থে দান করে দেন।
■ সালমান রুশদি বিতর্ক:
সালমান রুশদির লেখা বিতর্কিত বই 'The Satanic Verses' নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে সে সময় ইউসুফ ইসলাম বিবিসির Hypotheticals নামের একটি অনুষ্ঠানে মডারেটর এবং অধ্যাপক, লেখক, আইনজীবি Geoffrey Robertson এর সাথে এই বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য অংশ:
রবিনসন: আপনি কি মনে করেন তার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া উচিৎ?
ইউসুফ ইসলাম: কে? সালমান রুশদি?
রবিনসন: হ্যাঁ।
ইউসুফ ইসলাম: হ্যাঁ, অবশ্যই!
রবিনসন: এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা কি আপনার দায়িত্বে পরে?
ইউসুফ ইসলাম: না, ঠিক তা নয়, যদি না আমরা কোন ইসলামিক আইন বলবৎ আছে এমন কোন দেশে না থাকি এবং সে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা/বিচারক তাদের আইন অনুযায়ী যদি রায় দেয়, তাহলে হয়ত ঠিক আছে!
(কিছুক্ষণ পর টিভিতে সালমান রুশদির কুশপুত্তিলিকা পোড়ানোর ভিডিও দেখানো হয়)
রবিনসন: আপনি কি এইরকম কোন প্রতিবাদের অংশ হতে চান? যেখানে প্রতিবাদকারীরা এইভাবে কুশপুত্তিলিকা পোড়াতে যাচ্ছে?
ইউসুফ ইসলাম: আশা করি সেটা (কুশপুত্তিলিকা) যেন আসল মানুষটিরই হয়!
যদিও পরবর্তীতে চাপের মুখে ইউসুফ ইসলাম তার বক্তব্যকে, "বোকামি এবং কিছুটা আক্রমনাত্মক কৌতুক" বলে মন্তব্য করেন। "যার ফলে শুধু তিক্ততাই জন্ম দিবে"।
■ হিজাব বিতর্ক:
জার্মানে The Echo music award অনুষ্ঠানে "life achievements as musician and ambassador between cultures" নিতে যেয়ে ইউসুফ ইসলামের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ ওঠে যে, সে নিজের স্ত্রী ছাড়া হিজাব না পরা অন্য কোন নারীর সাথে কোন প্রকার কথা/ভাব আদান প্রদান করেন না! সে কারনে ইউসুফ ইসলামের প্রতিনিধি নাকি আগেই জানিয়েছে, কোন নারী উপস্থাপিকা থাকলে ইউসুফ ইসলাম সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন না। World Entertainment News Network এর পক্ষে Contactmusic.com (প্রতি মাসে প্রায় বাইশ লক্ষ্য বার হিট) এ প্রকাশিত এক আর্টিক্যালে এই অভিযোগ জোরেসোরে ওঠে। এই মিথ্যা অভিযোগের কারনে ইউসুফ ইসলাম মামলা ঠুকে দেন। যথারীতি সত্যের জয় হয় এবং ক্ষতিপূরণ পান।
এবং ক্ষতিপূরণ থেকে প্রাপ্ত সমস্ত টাকা Small Kindness Charity তে দান করে দেন।
পরে এই বিষয়ে ইউসুফ ইসলাম বলেন, এটা সত্য যে আমার ম্যানেজার আগেই সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বলে রেখেছিল যেন উপস্থাপিকারা এমন কিছু না করে যাতে ইউসুফ ইসলাম কোন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেন। তার সাথে বিধর্মী কেও হিজাব পরবে বা না পরবে সেটা নিয়ে আমার কাছ থেকে আপত্তি আসবে কেন? নারী স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কোন মর্যাদাহানিকর দাবী এখানে ছিল না যা সবাই অপপ্রচার করছে। ইসলামে নারীদের সম্মান সব থেকে বেশি। তবে ইসলাম ধর্মে যে কোন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর সাথে দৈহিক সংস্পর্শ আসে এমন কোন মেলামেশা নিষেধ আছে।
আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার পর থেকে নারীর সম্মান বুঝতে শিখেছি। কারন আমার বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি পশ্চিমা কালচারে নারীদের শুধু চকচকে ভোগ্য পণ্য হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। সেখানে ইসলামের ন্যায় নারীর সম্মান বলতে কিছু নেই।
মুসলিম হবার পর পর মায়ের কাছে ফিরে আসি আমি এবং সাথে থেকে তাঁর দেখভাল শুরু করি। আমি আমার মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করি। ব্যাপারটা ছিল এই রকম, তাকে অনেকগুলো পাত্রীর ছবি দেখানো হলো। তাদের মধ্যে বউ হিসাবে একজনকে বেছে নিতে বলি। মা এভাবে আমার জীবন সঙ্গিনী বেছে দেন। অদ্ভুত ব্যপার তাঁর সিদ্ধান্ত ছিল শতভাগ সঠিক! আমি আমার স্ত্রীর সাথে সুখি জীবন যাপন করছি। পরের বছরই আমাদের কোল জুড়ে ফুটফুটে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। আল্লাহর রহমতে আমার এখন চার মেয়ে এক পুত্র সন্তান।
আমি সব সময়ই নারী শিক্ষা বিষয়ে জোড় দিয়ে থাকি। নারীদের শিক্ষা প্রসারে আমার প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠা গড়ে উঠেছে।
আমার চার কন্যা সন্তান উগ্রতা প্রকাশ পায় না এমন পোষাক ব্যাতিত সাধারন-স্বাভাবিক সব পোষাকই পরে এবং সেই সকল পোষাক অবশ্যই তাদের শরীর ঢাকা থাকে। তবে তারা তাদের মুখমণ্ডল ঢাকে না। আমার মেয়েরা সবাই এই জীবন ব্যবস্থা থেকেই উচ্চ শিক্ষিত হয়েছে। আমার বড় মেয়ে, হাসনা, দুবাইতে একটি রেকর্ড কোম্পানীর চালায়। তার পরের জন আসমা যোগ্যতাসম্পন্ন আইনজীবী এবং ছোট মেয়ে 'সু ডিজাইনার' বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তাদের জীবনে প্রতিষ্ঠা হতে হিজাব কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং হিজাবের কারনে তারা পশ্চিমা বিশ্বের আর দশজন নারীর ন্যায় জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা অযথা বিউটিফিকেশনে পেছনে ব্যয় না করে কনস্ট্রাকটিভ কাজে ব্যয় করতে পেরেছে বলে মনে করি।
■ আবার গান শুরু:
নব্বই দশকে ইউসুফ ইসলাম আবার গান করা শুরু করেন। তবে শুরুতে শুধু বিষয় ভিত্তিক 'ইসলাম' নিয়ে গান করতেন। সেখানে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র না থেকে হালকা পারকাশন ব্যবহার দেখা গেছে। নিজের বিনিয়োগ করা রেকর্ডিং স্টুডিও Mountain of Light Studios এতে বিভিন্ন মুসলিম গায়কদের গান রেকর্ড করার সুযোগ করে দেয়।
ইউসুফ ইসলাম সব সময় ইউরোপে অবস্থিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র Bosnia and Herzegovina এ সংঘটিত গণহত্যার (গণহত্যার ভয়ংকর ফ্যাক্ট/ছবি ১ , ২) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছিল। তার মতে এই বিংশ শতাব্দিতে এসে এইরকম মুসলিম বিদ্বেষী গণহত্যা চলতে পারে ভাবাই যায় না। সে সময় Bosnia এর পররাষ্ট্র মন্ত্রী Irfan Ljubijankic (চিকিৎসক, ধ্রুপদী সঙ্গীতজ্ঞ, রাজনীতিবিদ) গণহত্যা বন্ধের জন্য ভয়ংকরভাবে নিশ্চুপ আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করতে ইংল্যান্ড সফরে আসেন। সে সফরে ইরফান দেখা করেন ইউসুফ ইসলামের সাথে। সে সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং Irfan Ljubijankic তার নিজের লেখা একটি গান "I Have No Cannons That Roar " ইউসুফ ইসলামকে দেয়। এই সফরের ঠিক তিন মাস পর সার্বিয়ান বাহিনী ইরফানের বহনকৃত হেলিকপ্টারটিতে মর্টার ছুড়ে ভূপাতিত করে ইরফানকে হত্যা করে। পরে ইউসুফ ইসলাম সেই গানটি সহ I Have No Cannons That Roar (অ্যালবাম ডাউনলোড, মিডিয়াফায়ার) নামেই একটি অ্যালবাম রেকর্ড করেন। ১৯৯৭ সালে বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে সে কারনে দীর্ঘ বিরতির পর প্রথম কনসার্টে অংশ গ্রহন করেন। উদ্দেশ্য বসনিয়ায় গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং তাদের সাহায্য করা।
২০০০ সালে শিশুদের জন্য ইসলাম শিক্ষামূলক ডাবল এ্যালবাম "A Is for Allah" প্রকাশ করেন। টাইটেল সংটি ইউসুফ ইসলাম তার প্রথম সন্তানকে ইসলাম ধর্ম এবং আরবী বর্ণমালা পরিচয় করানোর জন্য লিখেছিলেন।
ইউসুফ ইসলাম Buddha and the Chocolate Box এ্যালবামে ফের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার শুরু করেন। ২০০১ সালে যা platinum status পায়।
তার সকল অ্যালবাম লিস্ট ।
Peace Train - Nobel Concert 2006 (ড. ইউনুসকে সামনাসামনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে শুরু)
এওয়ার্ড সম্মাননা:
শান্তি ও মানবতায় অবদানের জন্য সম্মাননা:
■ ২০০৩ সালে "World Social Award": মানবিক ত্রাণ কার্য এবং শিশু এবং যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্থদের সাহাযার্থ্যে।
■ 2004 সালে Man for Peace Award: শান্তি প্রতিষ্ঠায়।
■ 2005 সালে Honorary Doctorate by the University of Gloucestershire: শিক্ষা এবং মানবতা প্রতিষ্ঠার জন্য।
■ 2007 সালে The Mediterranean Prize for Peace: বিশ্বময় শান্তি এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য।
■ 2007 সালে honorary doctorate (LLD) by the
University of Exeter: মানবতা ও শান্তি প্রথিষ্ঠায় এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে সঠিক ইসলামকে পরিচয় করে দেবার অবদানে। ddin Ihsanoglu and guitarist Brian May.
■ 2009 সালে Special Achievement Award of the German Sustainability Award.
গানের জন্য সম্মাননা:
■ 2005 সালে The Rock and Roll Hall of Fame এ নমিনেটেড হন।
■ 2005 সালে ASGAP এর মনোনয়নে "The First Cut Is the Deepest" নামের গানের জন্য "Songwriter of the Year" এবং "Song of the Year" সম্মাননা পান।
■ 2006 সালে Paste magazine এর "100 Best Living Songwriters" লিস্টে ৪৯ তম স্থান দখল করে।
■ 2007 সালে জার্মানের ECHO "special award for life achievements as musician and ambassador between cultures" এওয়ার্ড পান।
■ যোগাযোগের ঠিকানা:
Yusuf Islam
2 Digswell St, London N7 8JX,
United Kingdom.
Tel: 171-6076655 Fax: 171-7000425
E-mail: risala@yusufislam.org
■ গুরুত্বপূর্ন ডাউনলোড লিংক:
৩. উইকিপিডিয়া
৪. বায়োগ্রাফ্রি
৫. ইউটিউব ভিডিও
৯. ইসলামিক গান
লেখক : কবির চৌধুরী
1 comments:
চমৎকার এক সাইট।