সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় বাঙালীদের যেমন উৎসাহিত করেছিল, তেমনি পাকিস্তানী শাসক-শোষক গোষ্ঠিকে করে তুলেছিল ভীত-সন্ত্রস্ত। পশ্চিম পাকিস্তানের জুলফিকার আল ভুট্টোর ‘পিপল্স পার্টি’ এবং পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজীবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে প্রকৃত পক্ষে পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় অঞ্চলের জনগণই যে স্পষ্ট রায়টি দিয়েছিল তা ছিল আর এক রাষ্ট্র নয়, আমরা দুটি ভিন্ন রাষ্ট্র আমাদের আশা-আকাংখা, স্বপ্নসাধ এবং চাহিদা ভিন্নতর। উভয় দেশের জনগণের রায়ই যেন দুই দেশের জন্য দুটি ভিন্ন পতাকা রচনার সিদ্ধান্ত দিয়ে দিল। আর তাই তো মিঃ ভুট্টো পূর্ব পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ অধিবেশনে যোগদান করতে সরাসরিই অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলেন। শুধু তাই-ই নয়, তার পিপলস পার্টির কোন সদস্য যদি সেই সংসদ অধিবেশনে যোগদানের লক্ষ্যে ঢাকায় আসে, তাহলে সে সকল সংসদ-সদস্যদের পা ভেঙে দেয়া হবে বলেও হুমকি প্রদান করলেন। এদিকে তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান বার বার সংসদ অধিবেশনের বৈঠক আহবান করেও অধিবেশন বসাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন। বেশ কয়েক বার বৈঠকের তারিখ পরিবর্তনকরা সত্ত্বেও সংসদ অধিবেশন হলো না। ঢাকা থেকে লাহোর গমনের এক পর্যয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকা এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে বিজয়ী নেতা শেখ মুজিবের সংগে করমর্দন করতে করতেই শেখ মুজীবকে পাকিস্তানের ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও উল্লেখ করে ফেলেছিলেন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হলো ৭০-এর ডিসেম্বরেই, কিন্তু এদিকে ফেব্রুয়ারী মাস অতিবাহিত হয়ে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ চলছে। মার্চের নির্ধারতি সংসদ অধিবেশন বসল না। ঢাকা সহ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে চরম উত্তেজনা বৃদ্ধি পেল। ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় বাঙালী বিহারী সংঘর্ষের সূত্রপাত দেখা দিল। বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনয় গোটা জাতি হয়ে উঠল বলিষ্ঠ থেকে বলিষ্ঠতর এবং প্রচন্ডভাবে উদ্দীপ্ত। শেখ মুজীবের জনপ্রিয়তার ছাপ দেশের আনাচে-কানাচে, আকাশে-বাতাসে বিদ্যমান হয়ে উঠল। সর্বস্তরের জনগণের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে লাগল একটি প্রিয় নাম ‘মুজীব’। বাউলের এক তারায় শুনেছি তার নাম, মাঝির গাওয়া ভাটিয়ালীতে শুনেছি তার নাম, বস্তাটানা কুলী-মজুরের কন্ঠে শুনেছি তার নাম, কিষাণের ভাওয়াইয়ায় ফুটে উঠেছে তার নাম। সেকি এলোড়ন সারা দেশব্যাপী, সে কি হিন্দোল। এ যেন ছিল মহাসাগরেরই উত্থানের মত দিকে দিকে ভরপুর সে। এক নেতা, এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, শ্লোগানটি যেন তৎকালীন বাস্তবতার সাথে অঙ্গীভূত হয়ে পড়ল। ‘মুজীব’ জাতীয় চেতনার কেন্দ্রবিন্দু এবং ‘একমাত্র প্রতীক’- এ পরিণত হলেন। এই প্রতীকটিই’ বাঙালীর সশস্ত্র গণবিষ্ফোরণের প্রথম উপাদান হিসেবে পরিণত হয়ে গেল। মুজীবের কন্ঠই তখন যে কোন সশস্ত্র শক্তির তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী হয়ে পড়ল। তার নির্দেশে জাতি তখন যে কোন শক্তির মোকাবেলা করার মত মানসিকতা অর্জন করল। এখানেই মুজীবের নেতৃত্বে পরিচালিত গণ- আন্দোলনের চরম সার্থকতা। একটি কন্ঠই যখন যখন সমগ্র জাতিকে সশস্ত্ররূপে সজ্জিত হওয়ার সাহস জোগায় সে জাতি পরাভূত করার শক্তি তখন আর কারোর থাকে না। ১৯৭১ সনের ৭ই মার্চ ঢাকা রেস কোর্সে দেশ ও জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবের সেই জাদুকরী কন্ঠে যে ভাষণ প্রচারিত হলো, তার মধ্য দিয়েই মূলত পূর্ব পাকিস্তানের সমাধি রচনা এবং আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা লগ্ন ঘোষিত হয়ে যায়। ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের এবারে সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রম’- তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়-ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল’।
উপরোক্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়েই বস্তুতপক্ষে বাঙালীদের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়ে গেছে। আমি যদি বলি উপরোক্ত বক্তব্য প্রদানের মধ্য দিয়েই শেখ মুজীব একজন জাতীয়তাবাদী নেতার আশা-আকাংখা ও স্বপ্নের চূড়ান্তরূপ ঘোষণা করে দিয়ে তার শেষ দায়িত্ব সার্থকভাবেই সমাপ্ত করেছেন, তাহলে মোটেও ভুল হবে না। বস্তুত তাই একজন প্রকৃতজাতীয়তাবাদী নেতার চরম পাওয়াই হচ্ছে তার জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের মানসিকতা দিয়ে সজ্জিত করা। সেদিক থেকে মুজীব অনেকাংশেই সফল ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র নির্দিষ্ট রূপ যে ছিল না তা নয়, তবে সে চেতনা সীমাবদ্ধ ছিল একটা বিশেষ মহলের মধ্যে এবং তারা হচ্ছে তৎকালীন ছাত্র সমাজের সর্বাধিক সচেতন মহলেরও একট ক্ষুদ্র অংশ বিশেষ-বিশেষ করে বাংলাশ ছাত্র লীগের সেই অংশটি যার নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্র নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, কাজী আরিফ প্রমুখ। এই অংশটির চিন্তা-চেতনায় সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানী চক্র থেকে মুক্ত করে এই অঞ্চলকে বাঙালীর জন্য একটি স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল। এর বাইরে যারা এই অঞ্চলকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্ত করে স্বাধীন-সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন, তারা হচ্ছেন কমিউনিস্ট পার্টি (মণিসিং), ন্যাপ(মোজাফফর), ন্যাপ ভাসানীর একটা অংশ, মরহুম সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি এবং আগরতলা ষড়য্ন্ত্র মামলার অভিযুক্ত কমান্ডার মোয়াজ্জাম সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ। এর বাইরে যে ছাত্র সমাজ বা রাজনৈতিক সংগঠন ছিল তাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ছিল গতানুগতিক দেশ প্রেমিকদের দায়িত্বস্বরূপ, মুক্তিযুদ্ধের উপরোক্ত নিদিষ্ট চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নয়।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ, ই,পি,আর, আনসার, অন্যান্য চাকরীজীবী, ব্যবসায়ী ইত্যাদি মহলের ক্ষেত্রেও এ কথাই প্রযোজ্য। এদের মধ্যে আবার অনেকেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে নিতান্তই বাধ্য হয়ে-প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে, কেউ কেউ করেছে সুবিধা অর্জনের লোভ-লালসায়, কেউ করেছে পদ-যশ অর্জনের সুযোগ হিসেবে, কেউ করেছে ‘এডভ্যানচার ইজম’-এর বশে। এসকল ক্ষেত্রে দেশপ্রেম, নিষ্ঠা এবং সততারও তীব্র তারতম্য ছিল, কারণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও যারা যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় এবং যুদ্ধোত্তর কালে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ করেছে, অপর বাঙালীর সম্পদ লোপাট করেছে, বিভিন্নরূপ প্রতারণা করেছে, ব্যক্তি শত্রুতার প্রতিশোধ নিয়েছে, তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সেই নির্দিষ্ট চেতন যে সম্পূর্ণভাবেই অজানা ছিল তাতে সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই। তবে তাদের মধ্যে মুজীবপ্রীতি ছিল,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিম্বা আদর্শবোধ ছিলনা। ৭১-এর মু্ক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এ ধরনের লোকদের সংখ্যাই ছিল অধিক। যাদের কাছে কেবল শেখ মুজিবই ছিল চেতানা ও আদর্শের বিকল্প, তারা মুক্তিযুদ্ধের সেই সুনির্দিষ্ট চেতনার অভাবে মুক্তযুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধের পরে অন্ধ আবেগের বশে বিভিন্নভাবে বাড়াবাড়ি করেছে এবং আজ পর্যন্ত করে চলেছে।
মু্ক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় মু্ক্তিযু্দ্ধের সেই সুনির্দিষ্ট চেতনার ধারাবাহিক বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়নি বলেই অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাই জানত না তারা কোন লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে ঐ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ ছিল। মুক্তিযুদ্ধারা কেবল একটা কথাই জানত-পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীসহ সকল অবাংগালীকেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে তাড়িয়ে দেশকে মুক্ত করতে হবে পনরায় বাপ-দাদার ভিটায় স্বাধীনভাবে ফিরে যেতে হবে। এর অধিকার তারা আর কিছু্ই জানত না বা বুঝত না। তারা এ কথাটি জানতে না বা বুঝত না যে, কেবল অস্থানীয় শোষক গোষ্ঠী বিতাড়িত হলেই দেশ ও জাতি শোষণ হীন বা স্বাধীন হয় না। অস্থানীয় শোষকের স্থানটি যে স্থানীয় শোষক এবং সম্পদলোভীদের দ্বারা অতি দ্রুত পূরণ হয়ে যাবে এ বিষয়টি সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের জ্ঞান বা বোধশক্তির বোধশক্তির বাইরেই ছিল। এ সত্যটি কেবল তারা তখনই অনুধাবন করল, যখন সদ্য স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তন করে সরাসরি প্রত্যক্ষ করল শাসক আওয়ামী লীগ এবং তাদের অণ্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে ক্ষমতা এবং সম্পদ ভাগাভাগি এবং লুটপাটের দৃশ্য ও মহড়া। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের সেই সেই সুনির্দিষ্ট চেতনায় যারা সমৃদ্ধ ছিল, তার যুদ্ধ চলাকালীণ অবস্থায়ই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল আওয়ামী লীগের আচার-আচরণ দেশে ফিরে কি হবে।
সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের ঐ চেতনাধারী সামাজিক এবং রাজনৈতিক শক্তিসমূহ স্বাধীনতা-উত্তরকালে আর আওয়ামী লীগের সহযোগিতা করে চলতে তো পারেইনি বরং স্বার্থপর এবং ভোগী আওয়ামী লীগের বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর যারা মুক্তিযুদ্ধের ঐ চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিল না বা হতেও পারেনি, তারা মুক্তিযুদ্ধের পরে চরম ভাবে আশাহত হয়েই বাধ্য হয়েছে যার যার পুরানো সামাজিক অবস্থানে ফিরে দিয়ে অতৃপ্ত আত্মার কেবল পরিতাপই ভোগ করে চলতে। সংখ্যায় তারাই অধিক এবং তাদের সাথে রয়েছে সমস্ত জনগোষ্ঠী, যারা পরোক্ষ কিম্বা প্রত্যক্ষভাবে মু্ক্তিযুদ্ধের হয় সমর্থক ছিল, না হয় ছিল মুক্তিযুদ্ধের সুফল লাভের বুকভরা আশায় অপেক্ষমাণ।
এই বিশাল আশাহত জনগোষ্ঠীর কাছে স্বাধীনতার ১৭ বছর পরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ হওয়ার আবেদন-নিবেদন জানানোর ব্যাপারটি কি সম্পূর্ণই অর্থহীন এবং এক ধরনের প্রতারণা নয়? এই বিশাল জনগোষ্ঠী মু্ক্তিযুদ্ধের ১৭ বছর পরে পুনরায় সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্জনের কোন প্রয়োজনবোধ করছে না, কারণ মু্ক্তিযুদ্ধে তারা তাদের সন্তান হরিয়েছে, পিতা হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে, মা, বোন, কন্যা এবং স্ত্রী হারিয়েছে, ঘর-বাড়ী এবং সম্পদ হরিয়েছে, হারিয়েছে আরো অনেক কিছু। তাদের মধ্যে মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা তখনও ছিল না, তাদের মধ্যে ছিল শেখ মুজীবের প্রতি ভাল বাসা, বিশ্বাস এবং স্বাধীণতা লাভের পর স্বাধীনতা ভোগের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা এবং অফুরন্ত আশা। তারা যখন প্রত্যক্ষ করল স্বাধীনতা কেবল শাসক আওয়ামী লীগের লোকজনের জন্যই ভোগ এনেছে, তাদের জন্য নয়, তখন তারা রাতারাতিই আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, কারণ যেখানেই প্রত্যাশা, সেখানেই হতাশা। এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় যারা আওয়ামী লীগের ঘোর সমর্থক ছিল, তারা দেশে প্রত্যাবর্তন করে যখন দেখল আওয়ামী লীগই তাদের ভিটে-ভূমি ‘শত্রু সম্পত্তি’র নাম দিয়ে দখল করে নিচ্ছে, তখনই আওয়ামী লীগ সম্পর্কে তাদের মোহভঙ্গ হতে শুরু করে।
বেকার ছাত্র-যুবক যখন দেখল স্বাধীনতা তাদের যোগ্য স্থান কিম্বা কর্মসংস্থান করতে ব্যর্থ হচ্ছে, শিক্ষক যখন দেখল স্বাধীনতা তার মান-মর্যাদা রক্ষা করতে সমর্থ হচ্ছেনা, বুদ্ধিজীবীরা যখন দেখল সমাজে তাদের মূল্য নেই, সেনাবাহিনী যখন দেখল স্বাধীনতা তাদের গৌরব অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হচ্ছে না, তখনই কেবল তারা নিজ নিজ মানসিকতা দিয়ে মু্ক্তিযুদ্ধের ব্যাখ্যা প্রদান করা শুরু করল। এ দোষ বা ব্যর্থতা তাদের নয়, এ ব্যর্থতার জন্য দায়ী সমাজের সেই সচেতন অংশই, যারা যুদ্ধের সময় ব্যাপক জনগোষ্ঠী এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ঐ চেতানা উপস্থাপন করতে অপারগ হয়েছে।
তাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন, সমর্থন কিম্বা সহযোগিতা করলেই কেবল মুক্তিযুদ্ধা হওয়া যায় না। মু্ক্তিযুদ্ধা প্রকৃতপক্ষে তারাই কেবল হতে পারে,যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিপুষ্ট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা পরিপুষ্ট ছিল, তাদের মধ্যে হতাশা নেই, তাদের মধ্যে রয়েছে নবতর সংগ্রামের তীব্র যাতনা-দাহ।
মুক্তিযুদ্ধের জনক হিসেবে পরিচিত মরহুম জনাব শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে অবগত থাকলেও সেই চেতনায় তিনি পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাসী ছিলেন না বলেই ক্ষমতালাভের পরে তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে মারাত্মক দ্বন্দ এবং অস্থিরতা, যার ফলে তিনি কখনো হয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবার কখনো বা দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধান মন্ত্রীত্বের। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যেও তদ্রুপ পরিলক্ষিত হয়েছে দোদুল্যমানতা এবং সীমাহীন ক্ষমতা-সম্পদ লাভের মোহ। তারা সকলেই কেবল ক্ষমতার সখ মিটিয়েছে কারণ মুক্তিযুদ্ধ তাদের কাছে ছিল কেবল ক্ষমতা লাভের হাতিয়ার মাত্র, চেতনার উৎস নয়।
এর বাইরে রয়েছে জনগোষ্ঠীরই আর একটি বিরাট অংশ যারা আদর্শগতভাবে পাকিস্তানের পক্ষে থেকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান করেছে। এদেরে কাছে সেই ৭১-এও যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন মূল্য ছিল না, আজও তেমনি নেই। এরা বরং মু্ক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে কথিত শাসক গোষ্ঠীর ব্যর্থতা অবলোকনের পরে নিজস্ব যু্ক্তি, আদর্শ অবস্থানের দিক দিয়ে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী শক্তিশালী অবস্থানে বিরাজ করছে বর্তমানে। এমতাবস্থায় সমাজের সর্বাধিক সচেতন গোষ্ঠির কাছ থেকেও যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান হয়, তাতেও দেশের বঞ্চিত জনগণের সাড়া পাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়টি এখন আর গবেষণারও বস্তু নয়। যে মুক্তর জাগরণ মানুষকে নিরাশ করেছে, সে মুক্তির আহবানে নতুন করে সাড়া না দেয়াটাই স্বাভাবিক। মুক্তির নতুন আহবান কেবল নতুন চেতনা জাগরণের মাধ্যমেই সম্ভব। সমাজের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি অংশের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সীমাবদ্ধ রেখে সেই চেতনাকে মুক্তিযুদ্ধে জনগণের চেতনা হিসাবে আরোপিত করার প্রবণতা কএক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতারই শামিল। এধরনের প্রবণতা ন উক্ত চেতনাকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম, না সক্ষম সেই চেতনার পুনঃবিকাশ ঘটাতে। জনগনের অতি ক্ষুদ্র একটা অংশের খেয়ালী এবং রোমান্টিক চেতনা কোনদিনই বাস্তবতাকে মুছে দিয়ে জাতীয় চেতনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয় না।
তৃতীয় অধ্যায় : সশস্ত্র গণ বিষ্ফোরণ, শেখ মুজীব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: