আজ আফগানিস্তানের দুইজন বীরের গল্প বলবো। একজন হলেন শহীদ আহমদ শাহ মাসউদ আরেকজন হলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট বুরহান উদ্দিন রব্বানী।
আহমদ শাহ মাসউদ ১৯৫৩ সালের ২রা জানুয়ারি পানশিরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা দোস্ত মুহাম্মদ খান আফগান রয়্যাল আর্মিতে কর্নেল ছিলেন। আহমদ শাহ কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন জামায়াতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন সয্মান-ই জোওয়ানান-ই মুসলমান (Organization of Muslim Youth)- এ যুক্ত হন। তখন জামায়াতে ইসলামির আমীর ছিলেন অধ্যাপক বুরহান উদ্দিন রব্বানি। ১৯৭৫ সালের দিকে জামায়াতে ইসলামি ও গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের নেতৃত্বাধীন হিয্বে ইসলামির মধ্যে বিরোধ শুরু। এ-সময় হিয্বে ইসলামির কর্মীরা আহমদ শাহকে হত্যা করার চেষ্টা করে। ১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল পিপলস্ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব আফগানিস্তান (মার্ক্সবাদী) এবং সেনাবাহিনীর একটি দল প্রেসিডেন্ট দাউদ খানকে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে।
তারা সমাজতন্ত্রের বিস্তার এবং সেভাবে নীতি নির্ধারণ করতে চাইলে দেশের ইসলামি দলগুলোর সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ-সময় সমাজতন্ত্রী সেনাদের হাতে সারাদেশ পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ মানুষ নিহত হয়। ১৯৭৯ সালে ২৪ টি প্রদেশে সংঘাত শুরু হয়। অর্ধেকের বেশি সৈনিক সেনাবাহিনীর থেকে পালিয়ে যায়। ৬ই জুলাই আহমদ শাহ মাসউদ পানশিরে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সম্মুখ যুদ্ধে সফল না হয়ে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। এ-বছরেই ২৪ শে ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগান সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্যে সেনা প্রেরণ করে। সরকারবিরোধীদের তারা নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে।
আহমদ শাহ সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন এবং প্রতিরোধ যুদ্ধের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেন। ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করে। তারপরও পিপলস্ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সরকার মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। আহমদ শাহ সরকারবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখেন। দেশে চরম দুরাবস্থা বিরাজমান রেখে ১৯৯২ সালে ১৭ই এপ্রিল এ-সরকার ক্ষমতা ত্যাগ করে। ২৪ শে এপ্রিল পেশোয়ারে সমাজতন্ত্রবিরোধী দলগুলোর মধ্যে শান্তি ও ক্ষমতাবন্টন চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ-চুক্তিতে বুরহান উদ্দিন রব্বানী প্রেসিডেন্ট, আহমদ শাহ মাসউদকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও গুল্বুদ্দিন হেকমতিয়ারকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। কিন্তু হেকমতিয়ার এ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন। পরে অবশ্য চালাকি করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং আংশিক সরকারী সুবিধা নিয়েই জামায়াতে ইসলামী তথা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন।
চরম গৃহযুদ্ধাবস্তায় তালিবানের উত্থান হয় বিদেশী শক্তির মদদে। ১৯৯৬ সালে ২৭শে সেপ্টেম্বর তালেবান ক্ষমতা দখল করে। হেকমতিয়ার এবং আহমদ শাহ মাসউদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। আহমদ শাহ মাসউদ তালিবান বিরোধী জোট গঠন করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন। আহমদ শাহ মাসউদ ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আন অফিসিয়াল সামরিক শাখা।
২০০১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর (টুইন টাওয়ারে হামলার মাত্র দুই দিন আগে) উত্তর আফগানিস্তানর তাখার প্রদেশে খাজা বাহাউদ্দিন এলাকায় আত্মঘাতি হামলায় আহমদ শাহ মাসউদ নিহত হন। এ হামলার জন্যে আল-কায়েদাকে অভিযুক্ত করা হয়। কারণ ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিলো। এর আগে বহুবার কেজিবি, আইএসআই আফগান কমিউনিস্ট কেএইচএডি, তালেবান ও আল-কায়েদা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করে । কিন্তু তাদের সেসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাঁর জন্মস্থান বাজারাকেই তাঁকে দাফন করা হয়।
কমিউনিস্টবিরোধী যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্যে তাঁকে ‘শেরে পানশির’ বা পানশিরের সিংহ নামে ডাকা হয়। তিনিই একমাত্র আফগান নেতা যিনি কখনো আফগানিস্তানের বাইরে থাকেন নি।
শহীদ বুরহান উদ্দিন রব্বানী চাইলে সমাজতন্ত্রীদের পতনের পর হেকমতিয়ারকে উড়িয়ে দিতে পারতেন। তাদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালাতে পারতেন রাষ্ট্রীয় শক্তি নিয়ে। কিন্তু এই মহান মানুষ কখনোই ভ্রাতৃঘাতি কার্যক্রমের পক্ষে ছিলেন না। তিনি সব মুসলিম ভাইকে নিয়ে আফগানিস্তানকে সাজাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হেকমতিয়ারের একগুঁয়েমির কারণে সব ভেস্তে যায়। তার অসদাচারনের জন্য বিদেশী শক্তি আসে আল কায়েদা ও তালিবানের নাম করে। তিনি তালিবানের বিপক্ষেও যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চাননি। কিন্তু পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রনে শেষ পর্যন্ত ছিল না।
২০১১ সালে তিনি কাবুল সরকার, তালিবান এবং পাকিস্তান সরকারের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি হয়ে উঠেন এই তিন বাহিনীর মধ্যস্থতাকারী। তিনি যুদ্ধ বন্ধ করতে চেয়েছেন। মুসলিম রক্ত নিয়ে মুসলিমরাই রক্ত উৎসব শুরু করেছিল। তিনি এটা বন্ধ করতে চেয়েছেন। এই উদ্যোগের জন্যই তালিবানরা তাকে হত্যা করে আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে।
- আহমদ আফগানী (লেখক)
দুই আফগান বীরের ইতিহাস! শহীদ বুরহান উদ্দিন রব্বানী ও শহীদ আহমদ শাহ মাসউদ
☼→
আফগানিস্তান,
ইতিহাস,
যাচ্ছেতাই
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: