শহীদ মাহমুদ রামাদান (Mahmoud Ramadan) -মিশর (ইখওয়ান)

গত ৫ মার্চ ২০১৫ ভোরে মাহমুদ রমাদান নামক মুরসী সমর্থক ফাঁসি কার্যকর করা হলো। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি মুরসীকে অপসারণ করা হলে, মুরসীর সমর্থনে ও সীসীর বিপক্ষে মিছিলে বেরিয়ে আসেন।

আলেকজান্দ্রিয়ার প্রধান সড়কে যখন মিছিল চলছিলো মাহমুদ এবং কয়েকজন তখন এক বিল্ডিং এ উঠে সেখান থেকে একজন ছোট ছেলে কে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেন।

কিন্তু মাহমূদের স্ত্রী ডঃ লীন বলেনঃ এই অভিযোগ ছিলো চরম মিথ্যা। আমার স্বামী ইতিহাসের সবচেয়ে চরম মিডীয়া সন্ত্রাসের শিকার। মুরসীর সমর্থ হওয়ায় এবং মুখের লম্বা দাড়ি থাকায় তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখানোর জন্যই বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে।

ব্যাপারটা আসলে ছিলো, মাহমুদ যখন মিছিল করে যাচ্ছিলেন দেখতে পান পাশের বিল্ডিং থেকে একদল লোক তাদের উপর বৃষ্টির মত ইটের টুকরা আর পটকা ছুড়ে মারছিলো। তিনি এবং কয়েকজন সেখানে উঠে যান এবং সীসী পন্থী ও তাদের মধ্যে বচসা এবং তার পর ধাক্কা ধাক্কি শুরু হয়। এর পরে মাহমুদ সেখান থেকে এসে মিছিলে যোগ দেন। অথচ সংবাদ মাধ্যম দেখাচ্ছে এখানে তিনি একটা ছেলে কে বিল্ডিং এর উপরে অবস্থিত পানির ট্যাঙ্কির উপর থেকে ছুড়ে মেরে ফেলেন।




এই ঘটনায় মাহমুদ যে হত্যা কারী ছিলো তার কোন চাক্ষুস প্রমান পাওয়া যায়নি। বরং স্থানীয় এক সংবাদ সংস্থার বানানো ভিডিও হলো এই কেইসের একমাত্র এভিডেন্স যার উপর ভিত্তি করে তাকে  বিচারের নামে হত্যা করা হলো।

এই ভিডিওতে একজন লম্বা দাড়ি ওয়ালা যুবক কে দেখানো হয়েছে বিল্ডিং এ উঠছে, তার পেছনে লাগানো আছে কালিমাহ তায়্যিবাহ খচিত কালো পতাকা। বিল্ডিং এর ছাদে যারা ইট পাথর ছুড়ছিলো তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন কে দেখা গেলো পানির ট্যাংকির উপরে। এরা কিভাবে উঠলো সেখানে তা এক বড় প্রশ্ন। এর পর দেখা যাচ্ছে একজন যুবককে ওখান থেকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। এবং যুবক টি মারা যাচ্ছে। এই দাড়ি ওয়ালা মানুষ টিকে নিচে পানির ট্যাঙ্কির নিচে দেখা গেল কয়েকবার। এতেই বলা হচ্ছে এই দাড়ি ওয়ালা মানুষটিই মাহমুদ রামাদান এবং সে ই ঐ যুবককে হত্যাকারী।

ডঃ লীন কেঁদে কেঁদে সাংবাদিক দের বলেনঃ ভিডিও তে দেখানো হচ্ছে মাহমুদ বিল্ডিং এ উঠেছে, এবং উপর তলায় গেছে। সেখানে কেও দেখতে পেলো না কয়েক জন ছেলে কিভাবে পানির ট্যাঙ্কির উপরে গেলো। দেখা গেলো না মাহমুদ ছেলেটাকে ছুড়ে ফেলছে। বরং দেখা গেলো কয়েকজন মিলে ছেলে টাকে উপর থেকে ছুড়ে ফেলছে, এবং পড়ে যাওয়া ছেলেটির পাশে যেয়ে মাহমুদ দাঁড়ায়েছে। অথচ বলা হচ্ছে মাহমুদ তাকে ছুড়ে ফেলেছে।

ডঃ লীন অভিযোগ করে বলেনঃ আমরা সন্ত্রাসী না, আমার স্বামী মাহমুদ খুব নামকরা এক তেল কোম্পানির খ্যাতনামা একাউন্টেন্ট। তারা বাবা একজন নামকরা ইঞ্জিনিয়ার। আমি একজন ডাক্তার। আমারদের পরিবার রাস্তার লোকদের মত নয়।




তিনি আরো বলেনঃ তাকে পুলিশ অবর্ণনীয় নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। অথচ কোর্টে তিনি বলেছেন তিনি হত্যা তো দূরে থাক, এই ঘটনার সাথে মোটেই জড়িত নন। যে ভিডিও দেখানো হয়েছে তা এডিটেড ভার্সন। আমাদের আইনজীবিরা অত্যান্ত সার্থকতার সাথে প্রমান করতে পেরেছেন এই ভিডিও কিভাবে এডিট করা হয়েছে। আলজাযীরাতেও কয়েকবার ডকুমেন্টারির মাধ্যমে প্রমান করা হয়েছে মাহমুদ কোন ভাবেই এই হত্যা কান্ডে জড়িত ছিলেন না।

VIDEO-1



কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা এই ফাঁসি বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন। তারা বলেছেনঃ যে ভিডিওর ভিত্তিতে তাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে তা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য এবং এভিডেন্স হওয়ার উপযুক্ত নয়। এটা একটা এডিটেড ভিডিও। কারণ পানির ট্যাঙ্কির উপর থেকে যে সবুজ গেঞ্জি পরিহিত মানুষকে ফেলে দেয়া হচ্ছে তাকে দেখতে পূর্ণ বয়স্ক মনে হচ্ছে, অথচ মৃত কে দেখা গেলো একজন বালক। তাছাড়া এই ভিডিওর আরেকটা ভার্সন অনলাইনে দেখা যাচ্ছে, যেখানে পানির ট্যাঙ্কির উপর থেকে একটা মানুষকে ফেলে দেয়ার সময় দাড়ি ওয়ালা এক যুবক (যাকে মাহমুদ বলা হচ্ছে) নিচে দেখা যাচ্ছে এবং ফেলায়ে দেয়া যুবক কে দেখাশুনা করছে। তাহলে ভিডিওর কোন ভার্সনই তো মাহমুদ কে হত্যাকারি দেখাচ্ছেনা।

ইউনাইটেড আফ্রিকার সংস্থা আফ্রিকান কমিটি ফর হিউম্যান রাইটস প্রেসেডেন্ট সীসীকে এই ফাঁসির রায় কার্যকর করতে বাঁধা দিতে অনুরোধ করেছে, কিন্তু ফাঁসি হয়েই গেলো।


 VIDEO-1

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম