মিশরের বিপ্লবে আসমা মাহফুজ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্হার ভূমিকা

পটভুমি :
দৈনিক নয়াদিগন্ত , ২৩ সেপ্টেম্ববর ২০১২, ২ য় পৃষ্ঠা ৭ম কলাম -এ এই খবরটি দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো । না ! পরে ভাবলাম মন খারাপের কিছু নেই । কারণ খবরটির ভেতর দেওয়া মেয়েদের মধ্যেই বাংলাদেশের কোন আসমা মাহফুজ থাকতে পারে ।






সূচনা :
পশ্চিমা গণমাধ্যমে মুসলিম দেশের নারীদের অধিকার সম্পর্কে অনেক লেখালেখি হয়েছে । নারী মুক্তির জন্য পশ্চিমা শক্তি আফগানিস্তানের মতো মুসলিম দেশে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে ।

পশ্চিমা বিশ্বের নারীবাদী আন্দোলনের আলোচনা :


পশ্চিমা বিশ্বের নারীবাদী আন্দোলন পরিচালনাকারী সংগঠণগুলোর মধ্যে মিশরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে নারীদের জোড়ালো অংশগ্রহণের ব্যাপারটি আলোচনা হচ্ছে না । উপরন্তু মিডিয়াগুলো এ বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়ায় অনেকেই হয়ত জানেন না মিশরের গনতান্ত্রিক অন্দোলনে ২৬ বছর বয়সী, মিশরীয় আপু আসমা মাহফুজ সহ মেয়েদের অবদান কি ছিল ?




আসমা মাহফুজ ও মিশরের বিপ্লব :

এপ্রিল ৬ মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে আসমা মাহফুজের ভুমিকা ছিল অনেক বেশী।

২০০৮ সালের বসন্তে ফেইসবুকে গ্রুপ তৈরী করে শুরু করেন আন্দোলন । আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল কায়রো শহরের উত্তরে অবস্থিত আল মাহাল্লাহ আল কোবরা শিল্প নগরের শ্রমিকদের সাহায্য করা ,যারা সেখানে ৬ই এপ্রিল শ্রমিক ধর্মঘটের আয়োজন করেছিলো ।

যেভাবে আসমা মাহফুজ ক্যারিয়ার গঠণ করলেন :
আসমা মাহফুজ ২০০৮ সালে বিজনেস এডমিনেষ্ট্রনে উপর কায়রোর আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেন ।

তারপর সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটগুলোতে একজন একটভিষ্ট হিসেবে নিজেকে জনপ্রিয় করে তোলেন । সেজন্য আসমা ও তার পরিবারকে মিশরীয় নিরাপত্তাবাহিনীর বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়।

অবশেষে রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও শ্রমিক বিক্ষোভে অংশগ্রহনের কারণে তার কর্মস্থল আল সাইমা এক্সপোর্ট কোম্পানী থেকে বরখাস্ত হন।



যেভাবে মিসরে আসমা মাহফুজ বিপ্লব করলেন :

জানুয়ারি, ২০১১ -তে হওয়া মিশরের গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনের আন্দোলনের প্রতীক হিসাবে তাকে গণ্য করা হয়।

ফেসবুক, টুইটার ও জানুয়ারী ১৮,২০১১তারিখে ইউটিওবে তার ভিডিও করা বক্তৃতা হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিতে উদ্ভুদ্ধ করে ।


তিনি যেভাবে বক্তৃতা শুরু করলেন :


ক্ষুধা,দারিদ্র, অবিচার ও অত্যাচারের বিরোদ্ধে চারজন মিশরীয় নিজেদেরকে আগুনে আত্মহূতি দিয়ে প্রতিবাদ জানালো । তাদের এ আত্মত্যাগ তিউনিসিয়ার মত মিশরীরেও ন্যায় বিচার, নাগরিক অধিকার ও মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে এবং গনআন্দোলন সংগঠিত করতে মিশরীয় জনগণ এগিয়ে আসবে - এ আশাতেই তারা আত্মত্যাগ করেছেন ।


ভিডিওতে আসমা আরো বলেন, "তাদের এই আত্মত্যাগে তারা মৃত্যুকে ভয় করেননি আর আমরা নিরাপত্তাবাহিনীর ভয়ে কাতর ! কল্পনা করতে পারেন ? আপনি কি সে রকম ?

হাঁ, আমি আমার নিজের শরীর আগুন দিয়ে পুড়াবো না । যদি নিরাপত্তা বাহিনীর লোকরা আমাকে আগুনে পুড়াতে চায় তাদেরকে তা করতে দেন। আপনারা নিজেদেরকে যদি পুরুষ হিসেবে দাবী করেন তাহলে আমার সঙ্গে জানুয়ারীর ২৫ তারিখে আসুন তাহরীর স্কোয়ারে ।



যারা বলেন, মেয়েদেরকে বিক্ষাভ করতে যাওয়া উচিত নয় । কেননা পুলিশ প্রহার করতে পারে । তাহলে আমাকে ও অন্যান্য মেয়েদেরকে সেখানে পুলিশের প্রহার থেকে রক্ষা করতে আপনি এগিয়ে আসুন । যদি আপনার আত্মসম্মান ও মর্যাদাবোধ থেকে থাকে এবং আপনার উচিৎ আমার সঙ্গে ২৫ জানুয়ারী তাহরীর স্কয়ারের বিক্ষোভে যোগ দেয়া।

আর যারা মনে করেন এর কোন গুরুত্ব নাই কেননা সামান্য কিছু লোকের সমাগম হবে , তারাই আসলে সমস্যার কারন। আমি তাদেরকে বলতে চাই আপনারাও প্রেসিডেন্টের মত বিশ্বাসঘাতক হিসাবে পরিচিত হবেন। আমাদের সঙ্গে আপনার উপস্থিতি অবশ্যই পার্থক্য বয়ে আনবে।



আপনার প্রতিবেশী,বন্ধুবান্ধব,সহকর্মী, আত্মীয়স্বজন সবার সঙ্গে আলাপ করুন এবং তাদেরকে নিয়ে সে দিন তাহরির স্কয়ারে আসুন। ঘরে বসে থাকলে আমাদের অবমাননা চলতে থাকবে। আপনার সম্মান ও মর্যাদা থাকলে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্য মেয়েদের সহ আমাকে রক্ষা করতে আসুন। ঘরে বসে থাকলে আজ যা কিছু অন্যায় অবিচার চলে আসছে তা আপনাদের উপর চালু থাকবে ।

যদি আপনারা বিক্ষোভ সমাবেশে না আসেন তাহলে জাতির ও জনতার কাছে আপনি । অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত হবেন ।“




৩০ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের বিরোদ্ধে কীভাবে মানুষ সাহসী হলো আর বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিলো এবং স্বৈরাচারী শাসকের সমর্থকদের
বিরোদ্ধে প্রতিরোদ গড়ে তুল্লো ?

এর পিছনে আসমা মাহফুজের মত মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না।

আমার পর্যবেক্ষণ :

আমি ৩০ জন মেয়েকে মাইস্পেস ও ফেসবুকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্হায় যোগ দিতে বলেছিলাম । কারণ তারা খুব ভাল মেয়ে । এসব মেয়েকে আরো ভাল মেয়ে হওয়ার জন্য এসব ভাল মেয়েদের সাথে যুক্ত হতে বলে ছিলাম - এই আর কি ! সবাই এক বাক্যে না করেছে ।



আর দুইটা মেয়ে যারা আমার খালামনি আমাকে ধরে দিলো মার । আর মার দেওয়ার সময় বলেছিলো : "তুই আমাকে লজ্জায় মুখ ঢাকা বোরকাওয়ালী হতে বলছিস্ । তোকে তোর মা-র হাতে মার খাওয়াবো না । যা মার দেওয়ার মার আমরাই দিয়ে দিচ্ছি । কয় দিন ধরে মোল্লা হয়েছিস । এই মোল্লাগিরি থাকবে না । দুই দিনের মোল্লায় কয় বোরকা পড়তে আর নামাজ পড়তে । "দিল মিল গায়ি" না দেখতে । "কুচ কুচ হোতা হ্যায়" না দেখতে ।



তবে তিনটা মেয়েকে আমি কুরিয়ার সার্ভিসে করে ওড়না এবং আমার ওড়না বিষয়ক লেখা পাঠিয়েছিলাম । এই মেয়েগুলো ওড়না ঠিকভাবে পড়তো না । তারা ওড়না ঠিক ভাবে পড়া শুরু করেছিল এবং ফুল হাতা কামিজ ও শেলোয়ার পড়া শুরু করেছিলো । আমি তাদের এই ওড়না গিফট শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলাম ।

এই মেয়েগুলোর অভিমত : আমার প্রদর্শিত ইসলামী কাজগুলো খুবই সহজ । কারণ :



১. মেয়েদের শুধুমাত্র ফুলহাতা কামিজ, শেলোয়ার আর ওড়না পড়লেই বাহিরে যাওয়া যাচ্ছে ।

২. আর পাড়ার ছেলেদের সাথে চায়ের দোকানে বসে চা খাওয়া যাচ্ছে । আর ইসলামী ফাউন্ডেশনের ছোটদের ইসলামী সাধারণ জ্ঞান বই পড়া যাচ্ছে ।

৩. প্রতি দিন মাত্র একটা কুরআনের আয়াত, একটা হাদিস এবং কম্পিউটারে আহমদ দিতাত আর জাকির নায়েকের লেকচার পনের মিনিট শুনলেই যথেষ্ঠ হচ্ছে ।

৪. স্টার জলসা, স্টার প্লাস না দেখে ইসলামীক টিভি আর কম্পিউটারে মাল্টিমিডিয়া পিসির সিডি আর ইরানী ছবিগুলো দেখা যথেষ্ট হচ্ছে ।



৫. প্রতি দিন ফেসবুকে ৫ মিনিট অমুসলিম মেয়েদের কাছে অমুসলিম মেয়েদের কেন ইসলাম গ্রহণ করা উচিত শীর্ষক আহবান পৌছালেই যথেষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে ।

৬. পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেলেই যথেষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে ।

৭. চোখে কাজল বা মাসকারা না দিয়ে আর আর সাজগোজের জিনিস কম কিনে বা সাজগোজ কম করে টাকা জমিয়ে ক্যারিয়ার গঠণমূলক বই কিনলেই যথেষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে ।


কিন্তু বাংলাদেশের ইসলামী মেয়েদের পোষাকের ধরণ দেখে সাধারণ মহিলারা ইসলামী সংগঠণে আসা তো দুরে থাক ইসলাম মানার বিষয়টাকে কঠিন মনে করে ।

যাক আমাকে খালা মনিরা ছয় বছর আগে মার দিলেও মারের কষ্টটা ভুলে গেলাম আসমা মাহফুজের উপর নিবন্ধ লেখার চেষ্টা করে আর ছাত্রী সংস্হা নামক মেয়েদের খবরটা পড়ে ।

আজ তিনটা আপুকে স্মরণ করছি আর বলছি , মান্যবর আপুবৃন্দ । আমার সাথে খুব শীঘ্রই দেখা করুন এবং আমাকে মেইল করুন ।



উপসংহার :


বাংলাদেশে আসমা মাহফুজের মত মহিলাদের আজ বড় বেশি দরকার।

বাংলাদেশের ইসলামপন্থী মা-বোনেরা স্কুল-কলেজ-শপিং সব জায়গাতেই শালীনভাবে অংশ নিচ্ছেন।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা তাদেরকে জাতীয় ইস্যুতে কথা বলতে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেখছি না । অথবা তারা অদ্ভুত সব যুক্তি প্রদর্শন করে বিরত থাকছেন । তারা পুরোপুরি নিষিদ্ধ মসজিদের মত পবিত্র তথা নৈতিক শিক্ষার স্থানগুলো থেকেও। কিন্তু তারা এবিষয়ে নিরব ।

তারপরও আশা করি, অদুর ভবিষ্যতে আসমা মাহফুজ হয়ে বাংলাদেশের সেবা করার জন্য এবং ইসলামের প্রসার ও প্রসারের স্বার্থে আলোচিত আপু ও খালাম্মাবৃন্দ আমার পর্যবেক্ষণ গভীরভাবে চিন্তা ও গবেষণা করবেন ।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :

১. http://en.wikipedia.org/wiki/Asmaa_Mahfouz

২. দৈনিক নয়াদিগন্ত : ২৩ সেপ্টেম্ববর ২০১২, ২ য় পৃষ্ঠা ৭ম কলাম ।

৩. নিকাবী আপু ও খালাম্মাবৃন্দ যাদের কারণে এই নিবন্ধ লিখতে বাধ্য হলাম ।

কপি ফ্রম : ব্লগার মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম