১.
যে স্মৃতি ভোলার নয়, শুধুই বেদনার, বাহিরের রক্ত ক্ষরণ সবাই দেখতে পাই, কিন্তু হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কেউ দেখতে পায়না, যার হয় সেই-ই শুধু বোঝে তার যন্ত্রনা কত ভয়াবহ ,কত কঠিন, আজও সেই যন্ত্রনা আমায় খুড়ে খুড়ে খায় আর নিরবে চোঁখের অশ্রু ঝরায়।
২৭এপ্রিল'১৪ স্বাভাবিক একটি দিনের মত মহানগরীর সাথী এ গ্রুপের পাঠচক্র শেষে নাস্তা করে পূর্বনির্ধারিত কেন্দ্রের নির্দেশে দু-দিনের (শহর-১দিন,জেলা-১দিন) সফরে সাতক্ষিরার উদ্দেশ্যে সকাল ৮.৩০ এ সফরসংগী আকতারকে নিেয় মটরসাইকেলযোগে রওনা হয়েছিলাম ৯.৪৫মিঃ, আমতলা পৌছানোর পর তালেব ভাই আমাকে একটা প্রোগ্রামে নিয়ে গেলো আর আকতারকে অন্যত্র নিয়ে গেলো । প্রোগ্রামস্থলে গিয়ে তালেব ভাইকে বললাম, আমিনুর ভাই কোথায়? দেখছি যে? - বলল আর এক জায়গার প্রোগ্রামে আছে, এটা শেষ করে ওখানে আপনাকে নিয়ে যাব। যথারীতি প্রোগ্রাম শেষে প্রায় ৪-৫কিঃ দুরে নিয়ে মটরসাইকেল থামালো, আমি মটরসাইকেল থেকে নেমে কিছু দুর এগুতেই হাসি মাখা মুখে দেখলাম আমিনুর ভাইকে, সালাম দিয়েই বললেন, ভাই কেমন আছেন, অনেক দিন পর সাতক্ষিরা আসলেন, চেয়ার এগিয়ে বলল, ভাই বসেন, দ্রুত এক গ্লাস শরবত এনে আমাকে বলল, ভাই ,আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে, শরবতটা খেয়ে নেন।
২.
আমি বললাম, আমি ক্লান্ত নই। খুলনা থেকে মটর সাইকেল চালিয়ে আসছিতো- তাই ওরকম দেখাচ্ছে, তাছাড়া আগের প্রোগ্রাম শেষে ওরা অনেক নাস্তা করিয়েছে, তাই এসব এখন লাগবেনা।
আমার কথায় কর্নপাত না করে শরবতের গ্লাসটা আমার মুখের সামনে ধরে না খাওয়া পর্যন্ত আমাকে ছাড়লোনা, এরপর আপেল আংগুর আম তরমুজ এনে নাছোড়বান্দার মত বলল, এগুসব খেয়ে নেন তারপর প্রোগাম শুরু করবেন। দীর্ঘ ২ ঘন্টা আমার পাশে শান্ত হয়ে বসে থাকল, সাথী শপথ শেষে সবাই মিলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ইসলামী আন্দোলনের জন্য কবুল কর, সাতক্ষিরার জনপদকে কবুল কর, সাতক্ষিরাসহ সারা বাংলাদেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে দাও,আমাদের রক্তের বিনিময়ে হলেও আমাদের নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দাও,আমাদেরকে তুমি শহীদ হিসাবে কবুল কর......
এসকল কথা যখনই আমি মুনাজাতে বলতে লাগলাম, আর আমার পাশেই বসে জোরেজোরে আমিন আমিন বলতে লাগল আমিনুর ভাই।
আবেদন পত্র-প্রশ্নপত্রের contact নিলাম, পাশে শান্তহয়ে বসে আছে আর বলছে আমি এত পড়ালাম আর তোমরা এখন পারছনা, বলে মনটা খারাপ দেখাল আমিনুর ভাইয়ের। এরপর contact শেষ। আমি ২টা আবেদন পত্র ও ৩টা প্রশ্নপত্রে সই করলাম। তখন আমিনুর ভাইয়ের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এরপর তালেব ভাই এসে আমাকে প্রায় ৫ কি:মি দুরে একটি বাসাতে নিয়ে গেল আর বলল, এখানে ৩০-৪০মিঃ থাকব, খাওয়া শেষ করে ৪টার প্রোগ্রামে যাবো। ইনফরমেশনে লোক দেওয়া আছে। আমি বললাম, আমিনুর ভাই কই ? তালেব ভাই বলল, আমাদের জন্য টিফিনবাটিতে খাবারমনিয়ে আসতেছে। আমরা একসাথে খাব। আপনি ফ্রেশ হয়ে নামাজপড়ে নেন...
৩.
আসহাবে রাসুল স: এর জীবনী থেকে সাহাবীদের উপর অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনা পড়েছি, মিশরেরর ইখওয়ানুল মুসলিমিনের উপর চরম নির্যাতনের ঘটনা পড়েছি, যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের উপর কঠিনতর নির্যাতনের চিত্র ইতিহাস থেকে জেনেছি, আওয়ামি দু:শাসনের এই পাঁচ বছরে শত শত জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীকে শহীদ করার দৃশ্য, রিমান্ডের নামে শত শত ভাইদের পংগুত্ব বরন করার ঘটনা, হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের কারাগারে মানবেতর জীবন যাপনের দৃশ্য, এসকলকিছু পড়ে, শুনে ওদেখে বারবার কষ্ঠ পেয়ে,কতইনা চোঁখেরপাঁনি ঝরিয়েছি,রাজপথে কর্মসুচী বাস্তবায়ন করেছি আর আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছি এসকলকিছু থেকে পরিত্রানের জন্য। কিন্তু একই বাসার একই ছাদের নিচে, দ্বীনি আন্দোলনের ভাইদের সাথে ঘাতকের বুলেটের আঘাত, যন্ত্রনার যে আর্তচিৎকার, তার মধ্য থেকে একজন ভাইয়ের শাহাদাতের ঘটনা যে কত বড় যন্ত্রনার, কত যে বেদনা বিধুর, তা লিখে বা বলে কাউকে বোঝানো যাবে না!
৪.
পরিচয় হল ইমরান, আ: গফুর, সবুর ও নুর মুহাম্মাদের সাথে। কিছুক্ষন পর আমিনুর ভাই মাহাবুবকে সাথে করে টিফিনবাটি ভর্তি খাবার নিয়ে বাসায় প্রেবেশ করলো আনুমানিক ৩.১০ এর দিকে। খাবার রেডি করা হলে তালেব ভাই বলল, আমিনুর ভাই দায়িত্বশীলদের খাওয়ানোর পরই সে খায়। আমি বললাম, তা হবে না, আমার সাথে বসে খেতে হবে। আমিনুর ভাই রাজি হচ্ছিলোনা, আমি একটু চাপ দিতেই আমার সামনে প্লেট নিয়ে বসলো। প্রথমে আমিনুর ভাই আমাদের প্লেটে খাবার তুলে দিল। তারপর আমি আমিনুর ভাইয়ের প্লেটে খাবার তুলে দিলাম। চিংড়ি মাছ, গরুর কলিজা ভালো দেখে কয়েক টুকরো গোশত তুলে দিলাম। আমিনুর ভাই তৃপ্তিসহ খেতে লাগল আর বলতে লাগল, আজকের রান্নাটাতো খুবই চমৎকার হয়েছে, তাইনা ভাই? আমি বললাম অনেক দিন পর সাতক্ষিরার খাবার খাচ্ছিতো! তাই আমার কাছেও খুবই ভালো লাগছে, -বলে হাসা হাসি করতে লাগলাম। তালেব ভাই আমাকে বলেছিলো, আমিনুর ভাইকে এরকম তৃপ্তি সহ দায়িত্বশীলদের সাথে খাবার খেতে এর আগে আমি আর কোনদিন দেখিনি ।
হায়! আল্লাহ আমাদের প্রতি তোমার এ কেমন পরিক্ষা! কে-ইবা জানতো, আমাদের সাথে থাকা আমিনুর ভাইয়ের, আজ দুপুরের খাবার-ই হচ্ছে দুনিয়াতে শেষ খাবার। আর কিছুক্ষন পরই তিনি চিরতরে বিদায় নিবেন এ দুনিয়া থেকে। আফসোসআমরা যদি জানতাম, আমিনুর ভাই আর কিছুক্ষন পর আমাদের ছেড়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চিরদিনের জন্য চলে যাবে, তাহলে হয়তো আমরা আরো কিছু খাবার আমিনুর ভাইকে তৃপ্তিসহ খাইয়ে দিতে পারতাম....
৫.
আনুমানিক ৩.৩০দিকে আমরা খাওয়া শেষ করে ১৫ মিনিট পর বের হবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম,আমি বিছানায় শুয়ে ফোনে কথা বলছি, তখনও বাড়ীর এলাকার পরিবেশ খুবই শান্ত ছিল। হঠাৎ করে যে এই বাসার ভিতরে হায়নাদের ছোবল পড়বে, ভয়ংকর কালবৈশাখী ঝড় বইবে, কিছুক্ষন পর ফ্লোর গুলি রক্তে লাল হয়ে উঠবে, কে-ইবা তা জানতো। আমার ফোনে কথা বলা শেষ হতে না হতে আমার জানালার পাশ দিয়ে ঝড়ের বেগে কে যেন দৌড়াচ্ছে আর পেছন থেকে একজন বলছে, দাড়া নাহয় গুলি করবো। এমন সময় একজন ডিবি অফিসার জানালা থেকে আমার দিকে পিস্তল তাক করে বলল, নড়াচড়া করবিনা, নাহলে গুলি করে দেব। তখন বুঝলাম আমাদের বাসা এখন ডিবি ঘিরে ফেলেছে। ১০-১২জন ডিবি বাসায় ঢুকেই বাকি সবাইকে আমার রুমে আনলো, আর অয়েরলেসে বলছে , স্যার, সবাইকে পেয়েছি। দ্রুত ফোর্স পাঠান, এখানে ওরা গোপন মিটিং করছিলো। যখন আমরা এক রুমে তখন আমি সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগলাম। তালেব ভাইয়ের চোঁখে মুখে চরম হতাশা, আমিনুর ভাই আমার ডানপাশে- মুখে বিষন্নতার ছাপ, বাকি সবাই দাড়িয়ে আছে...
৬.
একজন ডিবি অফিসার বলল, খুলনা থেকে দুজন আসছে, তারা কই?
আমি বললাম, আমি।।
উনি আমার সামনে আসলো এবং কোন কথা না বলে গায়ের জোরে পরপর আমারমুখে তিনটা চড় দিল,আমি যেন পাথরের মত দাড়িয়ে রইলাম আর পরিচয় জানতে চাইলে এড়িয়ে গেলাম। সে বলল, আমি তোর সকল পরিচয় জানি।
তারকথা শুনে তালেব ভাইসহ সবাই ভয় পেয়ে গেল,তারা সবাই যেন আমাকে নিয়ে চিন্তিত । মুহুর্তের মধ্যে এক থেকে দেড়শোর মত পুলিশ বাড়ির চারপাশে আর বাহির থেকে গুলির আওয়াজ কানে ভেসে আসেছ, একজন সিনিয়ার অফিসার এসে আমার দিকে আংগুল তুলে বলল ওর পরিচয় বের কর, সাথে সাথে আগের অফিসারটি বলল, স্যার ওর পরিচয় নেওয়া হয়েছে, ও শিবিরের সাবেক সদস্য, এখানে বেড়াতে আসছে।
তারপর আমিনুর ভাইকে বলল, তোর পরিচয় দে। মিথ্যা বলবিনা। বলে পিস্তল দিয়ে আমিনুর ভাইয়ের বুকে আঘাত করলো।
আমিনুর ভাই বলল, আমি আমিনু্র, শহর সেক্রেটারী।
একথা বলার সাথে সাথে অফিসার বলল, তোর কাছে তো সবসময় পিস্তল থাকে, তুইতো অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করিস, তোর অস্ত্র কোথায়?
আমিনুর ভাই বলল, কোথায় অস্ত্র? আমার কাছে কোন অস্ত্র থাকেনা। আপনি তল্লাসী করে দেখেন।
একথা বলা শেষ না হতে আমার পাশ থেকে আমিনুর ভাইকে ধরে রুম থেকে বাহিরে নিয়ে গেলো। আমার পাশ থেকে আমিনুর ভাইয়ের এই যাওয়াটাই যে চিরদিনের জন্য যাওয়া একথা ভাবতেই এখন অবাক লাগে।
তালেব ভাইকে বলল, তুই সভাপতি না? কয়দিন আগে জেল থেকে বের হলি?
একথা বলেই তালেব ভাইকে বাহিরে নিয়ে গেলো, তারপর ইমরানকে বাহিরে নিয়ে গেলো, এদিকে বাহির থেকে মুহুরমুহু গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আর মনে হচ্ছিলো বাহিরে কোন যুদ্ধ বেধে গেছে। পুলিশেরা আমাদের বলতে লাগলো, তোদের লোকেরা গুলি করে কেন? তোদের কাছে তো ভালই অস্ত্র আছে, বিচ্ছিরি ভাষায় গালি দিচ্ছে আর বলছে লাইফটা শেষ করলি।
হঠাৎ একজন বলল, ওদের চোঁখ বেঁধে ফেলো। বলতে না বলতেই আমাকে গামছা দিয়ে পিছমোড়া করে বাধলো এবং ডানহাতের সাথে গফুর আর বামহাতের সাথে আক্তারের হ্যান্ডকাপ লাগিেয় দিল, তারপর আমাদের সবার চোঁখ কাপর দিয়ে বেধে দিল, তখন আমরা নিশ্চিত যে আমরা সবাই ক্রসফায়ারে যাচ্ছি...
৭.
আমি তখন মনেমনে আল্লাহর কাছে শেষ বারের মত ক্ষমা চাইতে লাগলাম, সবাইকে মানসিক ভাবে শক্ত থাকতে বললাম, পিঠমোড়া দিয়ে বাধার কারনে আমার প্রচন্ড কষ্ঠ হচ্ছিলো, হঠাৎ সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোওয়ার ভাইকে নির্যাতন করার কথা মনে আসতেই সকল কস্ট ম্লান হয়ে গেলো, আমরা ওদের কথায় বুঝতে পারছি যে কিছুক্ষনের মধ্যে আমাদের গুলি করা হবে, এদিকে বাহির থেকে বারবার গুলির আওয়াজ আসতে লাগলো, তখন মনটা আমার অস্থির হয়ে উঠলো তালেব, আমিনুর, ইমরান ওদের বাহিরে কি অবস্থা, হায় আল্লাহ তুমি আমাদের হেফাজাত কর।
একজন অফিসার বলল, এদেরকে কে গুলি কর।
সংগে সংগে আমার বামপাশে আক্তারকে প্রথম গুলি করলো, ও চিৎকারদিয়ে উঠলো।
এরপর আমার পালা, ভাবতে না ভাবতেই ওরা আমার ডানপায়ে গুলি করে দিলো..তারপর গফুর, সবুর ও নুর মুহাম্মদকে। সে যে কি হৃদয়বিদারক ঘটনা । আহতদের গুলির যন্ত্রনার আর্তচিৎকারে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিলো, ভাবছিলাম ওরা কি মানুষ, আমাদের বিনা অপরাধে এভাবে ওরা গুলি করে ফেলে রাখছে আবার বিচ্ছিরি ভাষায় গালি গালাজ করছে, কিছুক্ষন পর বুঝলাম ওরা গুলি করে রুম থেকে চলে গেছে, আমি কাউকে দেখতে পারছিনা,আমাদের সবাইকে বললাম, চিৎকার করনা, আল্লাহর উপর ভরসা কর, ধৈর্যধারন কর, তারকাছে সাহায্য চাও। আমরা তো এখনও বেচেঁ আছি, তালেব, আমিনুর ভাইদের কি অবস্থা আল্লাহ ভালো জানেন। তাদের জন্য দোয়া কর।
হঠাৎ একজন পুলিশ আমার কানের কাছে এসে বলল, ভা্ ই, চিল্লান, চিল্লান, তা না হলে আবার এসে গুলি করবে। কিছুক্ষন পর দু-তিন জন পুলিশ এসে আমাদের চোঁখের বাধন, হ্যান্ডকাপ ও পিঠমোড়া বাধন খুলে দিল , চোঁখ খুলতে আমরা পাঁচজন একে অপরকে দেখে নিলাম...
৮.
তখন আমাদের লুংগী ও ফ্লোর রক্তে লাল হয়ে গেছে, আমার হাত ও পা দুটোই যেন অবশ, আমরা বাহিরে থাকা তালেব ভাই, আমিনুর, ইমরানের কথা ভাবতে লাগলাম, ওদের নিয়ে চিন্তায়পড়ে গেলাম, কেউ কেউ বলে উঠল ভাইদের মেরে ফেলল নাতো, সত্যিকথা বলতে আমিও ভাবতে ছিলাম ওদের যেহেতু বাহিরে নিয়েগেছে- সেহেতু এরকম ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারে।
এমন চিন্তায় নিজেদের যন্ত্রনার কথাওআমরা ভূলে গেলাম এবং ওদের জন্য কাদঁতে লাগলাম, কিছুক্ষন পর পুলিশ আমাদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য নিতে আসলো, আমাকে দুজন কাধে করে নিচ্ছে আর আমার চোখ একটি বার ওদের তিনজনকে দেখার জন্য চাতকপাখির মত রুম, বারান্দা ও উঠানের দিকে তাকাতে লাগলাম, কিন্তু কাউকে দেখতে না পেয়ে চোঁখ দিেয় নিরবে পানি ঝরতে লাগলো।
-Azizul Islam Farazee
0 comments: