শহীদ এমদাদ উল্লাহ (মীরপুর-০১.০২.২০১৫ )



বিদ্যুতের শক খেলাম এইমাত্র! এই এমদাদ কি সেই ‪এমদাদ‬?   এমদাদ নামের এক শিবিরকর্মীকে পুলিশ ক্রশফায়ারে শহীদ করে ফেলেছে, প্রথম যখন ফেসবুক টাইমলাইনে খবরটা দেখছিলাম, Hide Story ক্লিক করে মুছে ফেলেছিলাম, সহ্য হয়না, শাহাদাতের খবর নিয়মিত দেখতেদেখতে অভ্যস্থ হয়ে গেলেও এখনও প্রায়ই এই কান্ড করতে হয়। তারপর গত দুদিন ধরে শহীদ এমদাদের চরম ইনোসেন্ট মিষ্টি ছবিটা গোটা অনলাইন দখল করে ফেললো, নির্মম অক্ষম বাস্তবতাকে মানিয়ে নিলাম। কিছুক্ষণ আগে একটা স্টাটাস আমাকে চমকে দিয়েছে, আমি কি এই শহীদকে চিনতাম??



এমদাদ সাইকেল চালাতো! মীরপুর থেকে সুদুর মগবাজারতক সাইকেল চালিয়ে যেতো কোচিং করতে!!! সত্যি???? এমদাদ??? তুমি সেই এমদাদ???? তুমিই শহীদ হয়ে গেছো????? আমার খুবই ইচ্ছে ছিলো, একদিন তোমাকে ফোন করে বলবো, এমদাদ-সাইকেলটা আমাকে এক সপ্তাহের জন্য দিতে পারবা? এক সপ্তাহ, অথবা তিন দিন শুধু, অনেকদিন ‪সাইকেল‬ চালাইনা, মন চাচ্ছে সাইকেলটা একটু চালাতে!

আমি একদিনই এমদাদকে ফোন দিয়েছিলাম, দিন তারিখ সময় কিছুই মনে নেই! প্রথম পরিচয়ের অন্তত দেড় বছর পরে হবে! বাসা কোথায় এখন? সাইকেল এখনো চালাও? সাইকেলটা ঠিকঠাক আছে? এতোদূর সাইকেলে যেতে কষ্ট হয়না? - হা, চালাই ভাইয়া! কোচিংএ আরো দুতিনজন একসাথে সাইকেল চালিয়ে যাই। মীরপুরে থাকি।

-সাইকেলটা কি তুমি কিনবা? এই প্রশ্ন করেছিলাম সেই প্রথম দিন! -......হাজার টাকা দিতে হবে! ...সাইকেলটা নতুন অবস্থায় ......হাজার ছিলো দাম, এরপরে টায়ার-টিউব-সীটসহ অনেকগুলো পার্টস পালটানো হয়েছিলো! প্রায় ৭-৮ মাসের পুরোনো, কিছুতেই ......... হাজার দাম হয়না, বলেছি, কারন ইচ্ছে ছিলোনা এটা কাউকে দেবার! মন খারাপ করে এমদাদ নামের ছেলেটা তিনতলা থেকে ওদের নিচতলায় চলে যায়।

বিগত এক যুগের ঢাকাস্থঃ জীবনে এই সাইকেলটা একটা জ্বলজ্বলে স্মৃতি। সাইকেলকালীন সময়টা বিশেষভাবে মনে রাখার মত অনেক-অনেক-অনেকগুলো ঘটনার স্বাক্ষী! কোন এক শুক্রবারে পুরানা ঢাকা থেকে কেনা, শুক্রবার মার্কেট বন্ধ-জানতাম না। ঠকলাম। দুদিন পরেপরে টিউব লিক হয়, চেইন পড়ে যায়। অনেক ঘষামাজা করে পার্টস পালটে চালিয়ে যেতে লাগলাম। বাসযাত্রা ছিলো আমার কাছে নরকযাত্রার সমান, মুক্তি পেলাম বাস ও যানজট থেকে- অদ্ভূত স্বাধীনতা। প্রথম চাকরী, দ্বিতীয় চাকরী, তৃতীয় চাকরী - তিনটাতেই সাইকেলের যাত্রী ছিলাম! একই সাথে সন্ধ্যারপর থেকে দশটাকা বাসভাড়ার দূরত্বে সাঙ্গঠনিক অফিস- কখনো সারারাত সেখানেই কাটিয়ে ফজরের পরে সাইকেল নিয়ে স্বাধীনভাবে বাসায় ফেরা! রাত বারোটায় মুষল্ধারা ঝুম বৃষ্টি মাথায় করে বাসায় ফেরার এডভেঞ্চার! বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিজয়ের পর ঢাকাজুড়ে মিছিল দেখা সাইকেল চেপে! ব্যাক্তিজীবনে দাগ কেটে রাখা অনেক মানুষের সাথে এই সাইকেলে চেপেই দেখা করা!!! ফেলানী ইস্যুর আন্দোলন আমরাই অনলাইন থেকে রাস্তায় আনছিলাম, প্রেসক্লাবের সেই প্রোগ্রামে এই সাইকেল চেপেই ছিলাম, মিশরের ইখওয়ানের সাথে একাত্মতার প্রোগ্রামে, এই সাইকেলেই...শেষ করা যাবেনা বলে। সাইকেলটা তাই বড় আদরের ছিলো! এটা কাউকে দিয়ে দেবো, এমন ভাবনাই কখনো করতে পারিনাই!
সাইকেলটা কেনার আগে দেয়া ব্লগপোষ্ট

বাসার নিচতলার সামনে লোহার শিকের সাথে তালামেরে রাখতাম। কিছু একটা পার্টস নষ্ট হয়েছিলো, বেশ কিছুদিন চালানো হয়নাই। এরপরে হয়তো বাড়ি গিয়েছিলাম, এসে সাইকেলটা না দেখে একটা ধাক্কা খেলাম, ঢাকা কলেজের মেস নিচতলায়। খোজঁ নিয়ে জানলাম, অনেকদিন ধরে অচল পরে থাকায় ওখানকার কোন এক দায়িত্বশীল কাকে নাকি চালাতে দিয়েছে! দেখা করতে বলে তিনতলায় চলে গেছি। সন্ধ্যার পরে একটা ছেলে এসে পরিচয় দিলো, এমদাদ নাম। কোন একজন দায়িত্বশীলের নাম বল্লো, সে চালাতে বলছে, কোচিং করে অনেকদূরে - ! অনেকদিন সাইকেলটা পরে আছে, মালিককেও খুজে পাওয়া যায়নাই! ঠিকঠাক করে নিয়েছে। বিনীত কণ্ঠে জানালো, ভাইয়া, আপনি ব্যাবহার করলে আমি দিয়ে দিচ্ছি। বা আপনি যদি বিক্রি করতে চান... আমি ঝোঁকের মাথায় বলে ফেললাম, সাইকেলটা কি তুমি কিনবা? .........হাজার টাকা দিতে হবে! (মনে তখন কাঁটার খোঁচা, না আবার রাজী হয়ে যায়!) মন খারাপ করলো এমদাদ, এতোটা দাম হয়না। নীচে চলে গেলো।

নিজেও বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলাম, এক ধরনের কষ্ট! ছেলেটাকে কষ্ট দেবার কষ্ট, প্রিয় সাইকেলটা (যদিও প্রায় অচল...) হাতছাড়া হবার কষ্ট! পরামর্শ করলাম আমার তার সাথে। সেইদিনই রাতে অথবা পরদিন ভোরে এমদাদকে ডেকে নিলাম ওর রুম থেকে, তুমি সাইকেলটা চালাও, আমি ওটা বিক্রির কথা ভুলে বলেছি, সাইকেলটা আমার অনেক প্রিয়, অনেক স্মৃতি আমার এটার সাথে , এটা বেঁচতে পারিনা আমি। যত্ন করে রাইখো! ... সম্ভবত, "থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া" শব্দদুটা বলেছিলো এমদাদ!

এমদাদের চেহারা আমার মনে নেই। ফেসবুকজুড়ে ছড়ানো ছবির শহীদ এমদাদকে আমি চিনিনা, শিবিরের আরো অন্য শহীদদের মত কলিজা মোচরানো ব্যাথার অনুভব ছাড়া বিশেষ কিছু ভাবিনাই এই দুদিন।শহীদ এমদাদ সাইকেল চালাতো, মীরপুর থাকতো, কোচিঙে সাইকেলে যেতো - তথ্যগুলো চোখে পড়ার পর বিদ্যুতের শক খেয়ে মোবাইল হাতে নিয়েছি, কম্পন সারা শরীর-মনজুড়ে! আমার সেই সীম চালু নাই বহুদিন। সীম লাগিয়ে সার্চ করে নামটা পেলাম, J Emdad Cycle নামে সেভ করা!  জিমেইল একাউন্টে সার্চ করে সাইকেলটারও একটা ছবি পেলাম! আমার এমদাদই কি শহীদ এমদাদ??? আল্লাহগো!!

এমদাদের সাথে আমার পার্থিব সম্পর্ক অনেক দূরবর্তী! কিন্তু এরপরেও অনুভব করতেছি, শাহাদাতের খোশবু বেশ কাছ ঘেঁষে চলে গেছে, অথবা চলে এসেছে! মৃত্যু তো আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই সুনিদৃষ্ট করে লিখে রেখেছেন! এখন চলছে শাহাদাতের মৌসুম, সৌভাগ্যবানেরা লুফে নিচ্ছে সুযোগ! আল্লাহ, আপনি কবুল করুন শহীদদেরকে। আল্লাহ আপনি নিরাপত্তা দান করুন আপনার আন্দোলনের কর্মীদেরকে! আল্লাহ, আপনি জালেমকে অতিশীঘ্র ধ্বংস করুন।

- সিদ্ধঃ কাঠপেনসিল




জামালপুরের বানারের পাড় গ্রামে এমদাদ উল্লাহর জানাযা নামাযে সহস্রাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান উপস্থিত হন। গত শনিবার রাতে এমদাদ উল্লাহকে আটক করে মিরপুর থানা পুলিশ। পরে তাকে  রূপনগর বেড়িবাঁধ এলাকায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলিতে হত্যা করে পুলিশ। এমদাদ উল্লাহ ঢাকা মহানগরী(পশ্চিম) শাহআলী থানার ৯৩নং ওয়ার্ড ছাত্র শিবিরের সভাপতি এবং ঢাকা কলেজের অনার্স পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল।



নামঃ মোঃ এমদাদ উল্লাহ।
পিতাঃ মোঃ জামাল উদ্দিন।
মাতাঃ আনোয়ারা বেগম।
গ্রামঃ বানিয়ারপাড়।
পোস্ট অফিসঃ জামালপুর।
থানাঃ জামালপুর।
জেলাঃ জামালপুর।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ ঢাকা কলেজ অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ পরিসংখ্যান
বয়স : ২৩ বছর
তিন ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে ৬ষ্ঠ
সাংগঠনিক মান : সদস্য প্রার্থী
দায়িত্ব : ৯৩ নং ওয়ার্ড সভাপতি, শাহআলী থানা, ঢাকা মহানগরী পশ্চিম।



ক্যাম্পাসে পা দিতেই অনেকগুলো দেয়াল লিখনী চোখে পড়ে,ওগুলো প্রায় সবাই দেখেও চোখ ফিরিয়ে নেয়.. শুধু শুধু সময় নষ্ট করার কি দরকার?(।)

প্রায় পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই রাজনৈতিক ব্যানার ফেষ্টুনে ভরা। তবে কিছু কিছু ব্যানার আছে,যেগুলো দেখে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে থাকতে হয়। যেগুলো মূলত টাঙানোই হয় কারো চিরবিদায় উপলক্ষ্যে। কালো হরফে লিখা থাকে সড়ক দূর্ঘটনায় বা কোন একটা রোগে মেধাবীর অকাল মৃত্যু। কালো ব্যানারের হাস্যজ্বল ছবিটা দেখে কোনমতেই বোঝার উপায় থাকেনা,এই ছেলেটা পৃথিবীতে নেই।

...এমন অবেলায় প্রায় প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেই কেউ না কেউ সবাইকে কাঁদিয়ে উপারে পাড়ি জমিয়েছে।

আমাদের ঢাকা কলেজ পরিসংখ্যান ডিপার্টমেন্টেটা সবার চেয়ে আলাদা। পুরো ক্যাম্পাসের একমাত্র এই ডিপার্টমেন্টটাই পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রুলসে চলে। আমাদের ডিপার্টমেন্টে ঢুকতে বা আশে পাশে কোন রাজনৈতিক বা কারো উপারে চলে যাওয়া উপলক্ষ্যে শোকপ্রকাশের কোন ব্যানার নেই। তবে হয়তো দুই একের মধ্যে একটি ব্যানার সংযুক্ত হতে যাচ্ছে।

ভাবছি,ব্যানারটায় কি লিখা থাকবে?

.. একটা বন্ধুর গল্প বলি।। ছেলেটার নাম এমাদুল্লাহ,এই ছেলেটার সাথে সর্বশেষ কথা হয় প্রভাবিলিটি (ইনকোর্স) পরীক্ষার দিন। হালকা দাড়ি ছিল ছেলেটার। ঠিক যতটা রাখা সুন্নাত। সেদিন সবার আগে সিট রেখে ডিপার্টমেন্টের সিড়িতে বসে ফেবু চালাচ্ছিলাম।

এমাদুল্লাহ জিজ্ঞাসা করল,বন্ধু কিচ্ছু পারিনারে ..পেছনের সিট খালি আছে? আজকে কপি করার দিন pacman emoticon ..

বললাম,...তুই শিবির নেতা।। তুই উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তোরে আল্লাহ পাড়াইয়া দিব,ডরাস ক্যান? সে মুচকি হেসেছিলো। বলতেছিলো,তোর দাড়িটা অনেক সুন্দর দোস্ত,রাইখ্যা দিস।

সিড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছিল,বলতেছিলো দূয়া করিস আল্লাহর পরীক্ষায় আমার সিট যেন সবার আগে পরে। মনে মনে বলতেছিলাম তুই এইডা কি কইলি! কথাটা মনে দাগ কেটে গেল ....!!

গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের Dhaka College SNIPERS-13/14 গ্রুপে বন্ধুরা পোষ্ট দিছে এমদাদ নাকি মারা গেসে?

আমি একটুও বিশ্বাস করিনি,কয়েকদিন আগেও এই ছেলেটাকে নিয়ে গ্রুপে কয়েকজন মজা করেছে। সেখানে তার নিখোঁজ হওয়াটাকে ফান ভাবা হয়েছে।

গ্রুপে ক্লাস ক্যাপ্টেন মাসুমের দেয়া নিউজ পেইজের লিংকে ঢুকে কনফার্ম হলাম,বেড়িবাধে আমাদের এমদাদকে পুলিশ দ্বারা নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।

ভাবতেছি,তোকে নিয়ে ডিপার্টমেন্টে কালো হরফের কোন ব্যানার টাঙানো হবে কি?
আচ্ছা কি লিখা থাকবে ওখানে?

নিউজ পেপার বা ফেসবুক পেইজগুলায় তুই বন্দুকযুদ্ধে নিহত বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ হাইলাইট করছে তুই পুলিশের সাথে গুলাগুলি করছিস। জানিস? এসব শুনে হাসি পায় বড্ড! দেশবাসী অতো মূর্খ না,তারা জানে বন্দুকযুদ্ধ কারা করে। কারা অস্র মজুদ রাখে। কাদের কে মেরে ক্রসফায়ার বলে চালানো হয়।

তুই নোংরা রাজনীতির শিকার। ফেবুতে দেয়া তোর লাষ্ট স্টাটাসটা মনে পড়েরে..

.."তোমরা জ্ঞান অর্জন করতে এসে নিজের জীবন এর চাওয়াটাকে মিথ্যায় পরিনিত করছ। বন্ধু! সংগী সবার জীবনেই আছে,নিজেকে প্রতিষ্ঠিত কর আগে"

তুই নিজেকে মনমত পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করতে পারছিস বন্ধু?

-কখনো জিজ্ঞাসা করা হয়নি তোর বাসা কোথায় বন্ধু?
-আমি তোর ঠিকানা জেনে গেসিরে এমদাদ।

তুই গাফফারের আরশের নিচে পারমানেন্ট ভাবে এড্রেস গড়ে নিছিস ।আমার বন্ধুদের মধ্যে তুইই সবার আগে সিটটা কনফার্ম করলি -[Misbah Ahmed]



0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম