আজ সকাল থেকেই পরিবেশ টা কেমন যেন গুমোট লাগছে!!!! আকাশটাও যেন কাঁদছে, কেমম যেন মন খারাপ করা পরিবেশ!!!! বুঝতে পারছিলাম না কেন এমন লাগছে!!!! ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ পড়তেই বুঝতে পারলাম আজ ১৭ ই আগষ্ট, যায়েদ ভাইয়ার ১৭ তম শাহাদাত বার্ষিকী!!!!! বুঝ হওয়ার পর থেকেই দেখছি প্রতিটা বছর ঠিক এই দিনে বৃষ্টি হবে নাহয় কেমন যেন একটা মন খারাপ করা পরিবেশ সৃষ্টি হয়!!!!!! ১৯৯৯ সালের এই দিনটিতে শুধুমাত্র ইসলামের দিকে মানুষকে আহবান করার অপরাধে এবং ইসলামি পরিবারের সন্তান হওয়ার অপরাধে নির্মম ভাবে পিটিয়ে ও গুলি করে মাত্র দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া আমার ভাইয়াকে শহীদ করে ইসলামের শত্রুরা!!!!
আল্লাহ তার শাহাদাতকে কবুল করে তার ও অন্যান্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই লক্ষীপুরের মাটিতে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করুন!!!!! তবেই শহীদের রক্ত দেয়া সফল হবে, আর সফল হবে তাদের স্মরণ করা!!!!!(ফেসবুক থেকে)
শাহাদাতের ঘটনা
১৭ আগস্ট ১৯৯৯ সাল। তৎকালীন শহর সভাপতি সামছুল ইসলাম ভাইসহ কয়েকজন ভাইয়ের উপর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা নৃশংস হামলা করে (দুই দিন আগে) গুরুতর আহত করে। প্রতিবাদে জেলা সভাপতি ওমর ফারুক ভাইয়ের নেতৃত্বে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে (জেলার ১৭০ জন বাছাইকৃত কর্মী নিয়ে) শহীদ আহমাদ যায়েদকে একটি ইসলামী সংগীত পরিবেশনের জন্য বলা হয়। কিন্তু তিনি কিছুণ নীরব থেকে কী যেন ভাবলেন। এর পরই মিষ্টি স্বরে আবেগময় কণ্ঠে গেয়ে উঠলেন; ‘আল্লাহর পথে যারা দিয়েছে জীবন তাদেরকে তোমরা মৃত বলোনা-বলোনা মৃত...। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ লক্ষীপুরকে বাতিলের হাত থেকে মুক্ত করতে এবং সন্ত্রাসীদের কবল থেকে লক্ষীপুর বাসীকে উদ্ধার করতে এক কঠিন জেহাদের শপথ নেয়ার আহবান জানান। শাহাদাতের প্রেরণায় উজ্জীবিত ছাত্র জনতা যথানিয়মে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি তমিজ মার্কেট হয়ে থানা রোড ঘুরে আবার একাডেমিতে এসে সমাপ্ত হয়। ইতোমধ্যে তাহের বাহিনীর সকল সন্ত্রাসীরা আমাদের অফিস আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে লক্ষীপুর সরকারী কলেজে একত্রিত হওয়ার সংবাদ পাই।
এর কিছুক্ষণ পর সন্ত্রাসীরা গো হাটা রোডে আমাদের আক্রমণের জন্য মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলি ও বোমাবাজি করতে করতে এগিয়ে আসছে। আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে আমাদের সকল নেতাকর্মীদেরকে ডাকলাম। নারায়ে তাকবীর শ্লোগান দিয়ে সকলে সামনের দিয়ে এগিয়ে গেলে তার পিছু হটলো। সবুজ ভাই, সাজ্জাদ , ওয়াদুদসহ প্রায় ২০/২৫ জন তাদের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হলো। আহতদের চিকিৎসার জন্য নেয়া হলো। জেলা সেক্রেটারী নূর নবী ভাইর নেতৃত্বে জাকারিয়া ভাইসহ ৩০/৩৫ জন কর্মী নিয়ে প্রায় এক ঘন্টা ধরে গো-হাটা মোড়ে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কিছুক্ষণ পরেই তারা পুণরায় সংঘবদ্ধ হয়ে গোলাবারুদ ও অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সাথে নিয়ে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রিয় ভাই আহমাদ যাযেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। লুটিয়ে পড়া অবস্থায় হাতুড়ি, লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে পুরো শরীর থেতলিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। এখানেই শেষ হয়নি হাযেনাদের হিংস্র ছোবল। খন্দকার মিজান ভাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন, পথরোধ করে রিক্সা থেকে নামিয়ে চাইনিজ কুড়াল ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে মাথার মগজ বের করে দেয় মাত্র দশম শ্রেনীর ছাত্র নিষ্পাপ এই ছোট্ট বালকটির। মাথার মগজ বের হয়ে যায় তৎকালীন চন্দ্রগঞ্জ সাথী শাখার সভাপতি নুর নবী ভাইয়ের, চোখ নষ্ট হয়ে যায় নাছির, আলমগীর ও জাহাঙ্গীরের। মারাত্মক আহত হলেন যোবায়ের ভাই (শহীদের বড় ভাই), জাকারিয়া ভাই, মনিরুল ইসলাম মিলন ভাই, মোরশেদ ভাই সহ আরো অনেকে। পুনঃহামলার আশংকা থাকায় আহতদেরকে সদর হাসপাতালে না নিয়ে ভাল চিকিৎসার জন্য ডা. ফয়েজ আহমদ সাহেব দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তার তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। পরবর্তিতে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘ ২ বৎসর যাবৎ চিকিৎসা করার পরও মূল্যবান চোখ ফিরে পাননি প্রিয় ভাই নাছির, আলমগীর, ও জাহাঙ্গীর। দীর্ঘ সময় জাকারিয়া ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, কে আবার কাকে খুঁজবে, সবাইতো আহত। মনে হচ্ছে এ যেন এক ময়দানে কারবালা। ঐদিন বিকেলেই আমরা শুনতে পাই আমাদের প্রিয় ভাই আহমাদ যায়েদ মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে জান্নাতে পাড়ি জমালেন। যার মন সব সময় ছিল শাহাদাতের জন্য ব্যাকুল। মুহুর্তের মধ্যে খবর চড়াতেই পড়ে গেল কান্নার রোল ।
এর কিছুক্ষণ পর সন্ত্রাসীরা গো হাটা রোডে আমাদের আক্রমণের জন্য মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলি ও বোমাবাজি করতে করতে এগিয়ে আসছে। আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে আমাদের সকল নেতাকর্মীদেরকে ডাকলাম। নারায়ে তাকবীর শ্লোগান দিয়ে সকলে সামনের দিয়ে এগিয়ে গেলে তার পিছু হটলো। সবুজ ভাই, সাজ্জাদ , ওয়াদুদসহ প্রায় ২০/২৫ জন তাদের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হলো। আহতদের চিকিৎসার জন্য নেয়া হলো। জেলা সেক্রেটারী নূর নবী ভাইর নেতৃত্বে জাকারিয়া ভাইসহ ৩০/৩৫ জন কর্মী নিয়ে প্রায় এক ঘন্টা ধরে গো-হাটা মোড়ে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কিছুক্ষণ পরেই তারা পুণরায় সংঘবদ্ধ হয়ে গোলাবারুদ ও অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সাথে নিয়ে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রিয় ভাই আহমাদ যাযেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। লুটিয়ে পড়া অবস্থায় হাতুড়ি, লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে পুরো শরীর থেতলিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। এখানেই শেষ হয়নি হাযেনাদের হিংস্র ছোবল। খন্দকার মিজান ভাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন, পথরোধ করে রিক্সা থেকে নামিয়ে চাইনিজ কুড়াল ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে মাথার মগজ বের করে দেয় মাত্র দশম শ্রেনীর ছাত্র নিষ্পাপ এই ছোট্ট বালকটির। মাথার মগজ বের হয়ে যায় তৎকালীন চন্দ্রগঞ্জ সাথী শাখার সভাপতি নুর নবী ভাইয়ের, চোখ নষ্ট হয়ে যায় নাছির, আলমগীর ও জাহাঙ্গীরের। মারাত্মক আহত হলেন যোবায়ের ভাই (শহীদের বড় ভাই), জাকারিয়া ভাই, মনিরুল ইসলাম মিলন ভাই, মোরশেদ ভাই সহ আরো অনেকে। পুনঃহামলার আশংকা থাকায় আহতদেরকে সদর হাসপাতালে না নিয়ে ভাল চিকিৎসার জন্য ডা. ফয়েজ আহমদ সাহেব দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তার তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। পরবর্তিতে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘ ২ বৎসর যাবৎ চিকিৎসা করার পরও মূল্যবান চোখ ফিরে পাননি প্রিয় ভাই নাছির, আলমগীর, ও জাহাঙ্গীর। দীর্ঘ সময় জাকারিয়া ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, কে আবার কাকে খুঁজবে, সবাইতো আহত। মনে হচ্ছে এ যেন এক ময়দানে কারবালা। ঐদিন বিকেলেই আমরা শুনতে পাই আমাদের প্রিয় ভাই আহমাদ যায়েদ মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে জান্নাতে পাড়ি জমালেন। যার মন সব সময় ছিল শাহাদাতের জন্য ব্যাকুল। মুহুর্তের মধ্যে খবর চড়াতেই পড়ে গেল কান্নার রোল ।
আকাশ বাতাস যেন ভারি হয়ে ধ্বনিত হচ্ছে এক বেদনার আর্তনাদ। চতুর্দিকে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ১৮ আগস্ট দুপুরে চক চত্ত্বরে জানাযার আয়োজন। সকলেই প্রস্তুত জানাযার জন্য, কিন্তু সন্ত্রাসীরা প্রস্তুত আরো লাশের জন্য। তারা গুলি করতে থাকে জানাযায় আগত মুসল্লীদের উপর। সাবেক জেলা সভাপতি আ ন ম আবুল খায়ের ভাই সহ আহত হলেন অনেকেই। ওরা সম্পন্ন করতে দিল না শহীদের জানাযা। সকলেই হয়ে পড়লো ছত্রভঙ্গ। আর উপায় না দেখে সন্ত্রাসের নিকট জিম্মি লক্ষীপুর বাসী শহীদ আহমাদ যায়েদের জানাযা পড়তে পারেনি চক বাজারে। সকলেই ক্ষুব্ধ কিন্তু কী আর করা, পরে দারুল আমান একাডেমীতে সংক্ষিপ্ত জানাযার মাধ্যমে এ মহান শহীদকে তার পারিবারিক কবরস্থানে তার পূর্ব পুরুষ ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসেনানীদের সাথে শায়িত করা হয়।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
১. ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে আলীপুরে উদ্ভূত এ কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে আমরা বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব মাস্টার শফিক উল্লাহ সাহেব ও প্রাক্তন জেলা আমীর মাস্টার হাছানুজ্জামান স্যার এর সাথে পরামর্শ করছিলাম। আলোচনার মাঝ পথেই শুনতে পেলাম আমাদের পার্শ্ববর্তী গো-হাটার মোড়ে সন্ত্রাসীরা আমাদের প্রিয় শফিক ভাইকে (তৎকালীন পৌর জামায়াতের সেক্রেটারী) গুলি করে মারাত্মক ভাবে আহত করেছে, তার মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে অথচ তাকে চিকিৎসা করার জন্য কেউ যেতে পারছেনা, আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লাম।
২. সামাদ স্কুলের মোড় থেকে কয়েকজন ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী আমাদের সামাদ স্কুলের সভাপতি আব্দুস শহীদ ও জামাল ভাইয়ের পথ রোধ করে তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তৎকালীন শহর সভাপতি হিসেবে আমি ও সেক্রেটারী শামসুল ইসলাম ভাইয়ের উপর থানায় অভিযোগ করে সাইকেল উদ্ধারের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এর পূর্বে জেলা সেক্রেটারী ফারুক হুসাইন, নুর নবী ভাই ও জাকির হোসেন সবুজ ভাই এ ব্যাপারে বিপ্লবের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমাদের কোন পাত্তাই দেয়নি বরং উল্টো আমাদের সাথে বিভিন্ন দুর্ব্যবহার করে, সে বলেছে তোমাদের সাহস কী তোমরা আমার নিকট আবার সাইকেল চাইতে এসেছ? এই সাইকেল তোমাদের ... দিয়ে ঢুকিয়ে দেব, আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই একজন নেতার মুখ থেকে এরকম বিশ্রি গালি কীভাবে বের হয়। যাই হোক আমরা অভিযোগ নিয়ে থানার তৎকালীন ওসি নুরুল আফসার এর সাথে দেখা করি। ওসি সাহেব টিএসআইকে দায়িত্ব দেন। সে অনুযায়ী টিএসআই সাহেব আমাদেরকে তার সাথে সরকারি কলেজের পাশে সন্ত্রাসী লিটনদের বাড়ি নিয়ে যান এবং সাইকেল নেয়ার সত্যতা যাচাই করে তিনি চলে আসেন। তার বাবা আমাদেরকে বলেছেন আগামীকাল ১২টার মধ্যে আমরা আমাদের সাইকেল পেয়ে যাব। আমি, শামছু ভাই ও আবুল কাশেম বাহার ভাই একই রিক্সায় করে আসতে থাকি, আমরা কলেজ হোস্টেলের পাশে আসলেই ২/৩ জন সন্ত্রাসী আমাদেরকে জোরপূর্বক তাদের ঘাঁটি নামে পরিচিত কলেজ হোস্টেলে ঢুকিয়ে ফেলে এবং দীর্ঘ আমাদেরকে সেখানে আটকে রেখে অপরাপর সন্ত্রাসীদের খবর দেয়, কিছুণের মধ্যেই দেখি তিনটি মোটর সাইকেলে করে কিছু সন্ত্রাসী চলে আসে।
তারা এসেই আমাদের উপর নির্যাতন শুরু করে, এক পর্যায়ে তারা হাত পা বেঁধে তাদের হোন্ডার মাঝখানে বসিয়ে নিয়ে যায় জাইল্লা টোলায় মুজিব তাহেরের পুরনো বাড়ির সামনে। অন্ধকারের মধ্যে রাস্তার এক পাশে নিয়ে আমাদের উপর উপর্যুপরি হামলা চালানো হয়। আমাদের সাথে থাকা বাহার ভাইকে গাড়িতে করে নিয়ে যায় এক অপরিচিত স্থানে এবং সেখানে তার উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। শামছু ভাইকে মাটিতে ফেলে পায়ে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক মারার মত করে মারাত্মক আঘাত করছে এবং তাকে চিৎকার করতেও দিচ্ছে না। আমার হাতের কবজি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত করে বাড়িতে গিয়ে দা খুঁজে পায়নি। অতঃপর আমাকে একটু দূরে নিয়ে কিল ঘুষি দিয়ে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করে এবং অতিশীঘ্রই লক্ষীপুর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলে। এদিকে পুলিশ খবর পেয়ে বাহার ভাইকে তাদের কবল থেকে উদ্ধার করে এবং আমাদেরকে খুঁজতে থাকে। এদিকে আমি শামছু ভাইকে নিয়ে বহুকষ্টে সদর হাসপাতালে চলে আসি। ডাক্তাররা রোগীর অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে চিকিৎসা শুরু করে। কিন্তু এখানে বেশিক্ষণ থাকা সমীচীন নয় ভেবে তাড়াতাড়ি পুলিশ পাহারায় শামছু ভাইকে নিয়ে দারুল আমান একাডেমীতে চলে যাই। যেখানে উপস্থিত সকলের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে গেল। জরুরী পরামর্শ বৈঠকে প্রতিবাদ মিছিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
যেমন ছিলেন শহীদ যায়েদ
আমার মনে পড়ে ১৯৯৫ সাল থেকে একাডেমী মসজিদে নামায পড়তে গিয়ে প্রতিদিনই এশার নামাযের দ্বিতীয় কাতারে যায়েদকে দেখতাম এবং প্রতিটি নামাযে সে সবার আগে হাজির থাকতো। দেখা হলেই মিষ্টি স্বরে সালাম দিয়ে বলে উঠত ভাইয়া কেমন আছেন? সে ছিল একজন সুমধুর কণ্ঠ শিল্পী, যার গান না শুনলে যেন কোন প্রোগামই প্রাণবন্ত হতোনা।
অপরদিকে সে একজন ভালো ক্রিকেটার হিসেবেও সকলের মাঝে পরিচিত ছিল। ছিল একজন নম্র ভদ্র অমায়িক ও অনুপম সুন্দর চরিত্রের অধিকারী আল্লারহর দ্বীনের এক অকুতোভয় সৈনিক। তাকে সব সময় দেখতাম একজন আনুগত্য পরায়ন, নির্ভীক ও শাহাদাতের জন্য পাগলপারা একজন মুজাহিদ হিসেবে। আমি তখন লক্ষীপুর শহর শাখার সভাপতি এবং যায়েদ আমার অধীনে সামাদ স্কুল শাখার শাখার কর্মী। একদিন তার বাবা আমাকে বললেন যায়েদতো ইদানীং নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে না। আমি তার বাবার সামনেই তাকে জিজ্ঞেস করলাম। সে জবাব দিল স্কুলে গিয়ে কী লাভ হবে? দুনিয়াতে আর কয়দিন বাঁচবো? সন্ত্রাসীরা যেভাবে বেড়ে উঠেছে, তারা আমাকে স্কুলে মারতে আসে, আমাকে রাজাকার বলে গালি দেয়, আমাকে নানা অপমান অপদস্থ করছে। আপনার কেউতো কিছু বলছেন না, সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় কোন প্রতিবাদও করছেন না। কিন্তু আমি মনে করি এই অশান্ত লক্ষীপুরকে শান্ত করতে প্রয়োজন শহীদের। আর আমি সেই শাহাদাতের জন্য প্রস্তুত। আমরা তার কথায় আশ্চর্য হয়ে যাই। দু’জনেই যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লাম। তাকে আর কিছুই বলতে পারলাম না। তার কথাই এক পর্যায়ে বাস্তবে রূপ নিলো, শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে শামিল হলেন জান্নাতি সেই মিছিলে।
এক নজরে শহীদ আহমাদ যায়েদ
নাম : আহমাদ যায়েদ
পিতার নাম : মাস্টার মনির আহমদ
মাতার নামঃ কুলসুম নুর মারিয়ম
কুলসুম নুর মারিয়ম
সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
সাংগঠনিক মান : কর্মী
অন্যান্য কৃতিত্ব : কণ্ঠ শিল্পী
জীবনের লক্ষ্য কী ছিল : ডাক্তার
আহত হওয়ার স্থান : গো-হাটা এরশাদ ভিলা মসজিদের সামনে, লক্ষীপুর
শহীদ হওয়ার স্থান : লক্ষীপুর থেকে নোয়াখালী যাওয়ার পথে
আঘাতের ধরন : গুলি
যাদের আঘাতে নিহত : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৭.০৮.১৯৯৯
যে শাখার শহীদ : লক্ষীপুর শহর
স্থায়ী ঠিকানা : দারুল আমান একাডেমী, গোডাউন রোড, সদর , লক্ষীপুর
শহীদ আহমদ যায়েদ স্মরণে (নিজাম উদ্দিন মাহমুদ)
ফুটফুটে চেহারা তার অমায়িক আচরণ
মিষ্টি সুরে গান আর সুন্দর একটা মন,
সেই সুবাদে যায়েদ হয়ে ওঠে
সকলের প্রিয়, সবার আদরের ধন।
হঠাৎ যখন লক্ষ্মীপুর
হিংস্রতায় ভরে যায়,
মানবতা বারবার,
হায়েনার কাছে হেরে যায়।
বারুদের গন্ধে নাক ডিবে আসে
বোমার আওয়াজে কান,
রক্ত দেখে চোখ বুজে আসে
কেঁদে ওঠে প্রাণ।
রক্তপিচ্ছিল পথে পালাবে কোথায়
চুপিসারেও ভীত
কেউ থাকছে চাঁদা দিয়ে
কেউবা হয়ে নত।
লাঞ্ছিত মানবতাকে বাঁচাতে
প্রয়োজন যদি হয়,
রক্ত দেবো, জীবন দেব তবু
মানবো না পরাজয়।
এমন শপথ নিয়ে যায়েদ এগিয়ে যায়
সাহস নিয়ে বুকে,
হয়তো বিজয় নয় শাহাদাত
স্বপ্ন দেখে চোখে।
হায়েনার দল ঘিরেছে তাকে
আঘাত হেনেছে মাথায়,
হাতুড়ির আঘাতে লুটিয়ে পড়ে
কঁকিয়ে উঠে ব্যথায়।
বুকের ওপর লাফিয়ে ওরা
ভেঙে দিয়েছে ঘাড়,
থেঁতলে দিয়েছে সারাটা দেহ
চূর্ণ করেছে হাড়।
রক্ত জোয়ার বয়ে চলেছে
বেরিয়ে গেছে মগজ,
হিংস্রতায় উল্লাস করা
পশুদের কাছেই সহজ।
অবশেষে মিলিত হবার প্রস্তুতি নেয়
প্রিয় মালিকের সাথে,
শাহাদাতের সুধা পান করে
নরপিশাচের হাতে।
যায়েদের সেই স্মৃতি থাকবে
অম্লান চিরকাল,
তারিখটা সতেরই আগস্ট
ঊনিশ’শত নিরানব্বই সাল।
৮ আগস্ট ২০০৪
যে অতীত প্রেরনার
আহম্মদ সালমান (শহীদের ভাই এবং শিবিরের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক)
ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততা ছোটবেলা থেকেই বুজতে শিখেছি। শহীদ আহমদ যায়েদকে আমার বাবা মার পরে আমিই সবচেয়ে কাছ থেকে দেখার সুযোগ বেশী পেয়েছি। কিলাশের সময় ছাড়া বাকী সময়টুকু এক সাথেই কাটাতাম। আমাদের বয়সের ব্যবধান দেড় থেকে দুই বছর হলেও অনেকেই মনে করতেন যমজ ভাই অথবা বন্দু। সময় গুলো বেশ ভালই কেটে যাচ্ছিল। ১৯৯৫ সালে শহীদ ফজলে এলাহীর শাহাদাতের মধ্যদিয়ে লক্ষ্মীপুরে ইসলামী অগ্রযাত্রা এবং শাহাদাতের ধারাবাহিকতা সূচনা হয়।তখন আমি পঞ্চম শ্রেনী এবং শহীদ আহমদ জায়েদ ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র।শহীদ ফজলে এলাহীর শাহাদাত আমাদের মত আরো অসংখ কিশোর এর মনে ইসলামী আন্দোলনের লে পরিনত হয়। তার পর থেকে সকল মিছিল মিটিং এ সক্রিয় অংশ গ্রহন করি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর তাদের একমাত্র লবস্তুতে পরিনত হয় ইসলামী ছাত্রশিবির। লক্ষ্মীপুর জেলায় ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লক্ষ্মীপুর শহর একমৃত্যু পুরীতে পরিনত হয়। দীর্ঘ ৩ বছরের অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৯৯ সালের ১৫ই আগষ্ঠ দিবাগত রাত ৩.০০ টা লক্ষ্মীপুর শহর সভাপতি, শামছুল ইসলাম ভাই, মিজানুর রহমান মোল্লা ভাই এবং বাহার ভাইকে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীক অপহরনের পর আহত করে এক কবরস্থানে ফেলে রেখে যায়। এই ঘটনার পর সকল কর্মীর প্রানের দাবী ছিল ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করার ।
১৬ই আগষ্ঠ আমি শহীদ যায়েদ, জাকির, মিঠু ভাই, খোকন ভাই, ফরহাদ সহ স্কুল পর্যায়ের বেশ কিছু কর্মী মহিন ভাইয়ের দোকানে বিকাল বেলা চা খাচ্ছিলাম। এক দায়িত্বশীল এসে খবর দিলেন, আগামীকাল লক্ষ্মীপুর শহরে ছাত্রলীগ এবং তাহের বাহীনির সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিক্ষভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সাথে সাথে আমরা সকলে দাড়িয়ে দায়িত্বশীলের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি । তার পর মাগরিবের নামাজ আমরা সকলেই একসাথে আদায় করি । মাগরিবের নামাজের পর শহীদ যায়েদ আমাকে ডেকে বলেন, আমি মিছিলের দাওয়াতী কাজ করার জন্য শহরে যাচ্ছি, তুই বাসায় চলে যায়। বাসায় ফেরার পর লেখা পড়ায় মন বসছিনা । যায়েদ ভাইয়া রাত ৯.৩০ মিনিটে বাসায় ফিরেছেন । পরের দিন আমরা চার ভাই ফজরের নামাজ আদায় করে বাসায় ফিরে গোসল করে মিছিলে যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ করি ।
সকাল ৭.৩০ মিনিট দারুল আমান একাডেমী মসজিদে মিছিল পূর্ব সমাবেশে সকলে একত্রিত হই। আমার নানা মরহুম সফিক উল্লাহ আবেগময়ী বক্তব্য রাখেন। জেলা সভাপতি মিছিলে তিনটি গ্রুপের নাম ঘোষনা করেন। কোন গ্রুপেই স্কুল কর্মীদের নাম ঘোষনা করা হয়নি। এবং সর্বশেষ স্কুল কর্মীদেরকে মিছিলে না নেওয়ার ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানান। তার পর আমরা স্কুল পর্যায়ের সকল কর্মীদের একত্রিত করে সিদ্ধান্ত নিই,আমরা যে ভাবেই হোক মিছিলে অংশ গ্রহন করবো।
আমাদের সাথে স্টেশনের সোহেল ভাই , কবির মামা এবং সওদাগর বাড়ীর জোবায়ের মামা সহ আরো অনেকেই অংশ গ্রহন করেন।
আমাদের আলাপ চারিতার এক পর্যায়ে শহীদ আহমদ জায়েদ কোন সংকোচ ছাড়াই বললেন , আমাদের মধ্য থেকে যদি অন্তত একজনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শহীদ হিসেবে কবুল করতেরন, তাহলে কতইনা ভাল হত। তার এই কথাটি তখন আমরা অনেকেই গুরুত্ব দিয়ে শুনিনি।তার পরের ঘটনা সকলেরই জানা। তাহের বাহিনীর নির্মম,নিষ্ঠুর ,পৈশাচিকতার শিকারে পরিনত হন শহীদ আহমদ জায়েদ । সবচেয়ে দুঃখ জনক ঘটনা হল , তার জানাযার নামাজটিকে ও তারা পন্ড করার জন্য হামলা চালায়। যা লক্ষ্মীপুরের সর্ব স্তরের মানুষকে হতবাক করেছে।
শহীদ আহমদ জায়েদের শাহাদাতের পর দুইটি ঘটনা আমার এখন ও মনে পড়ে। ১৯৯৯ সালে মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে আমাদের ডাইনিং রুমে এক জরুরী সভা বসে । সেখানে লক্ষ্মীপুরের সাবেক জেলা সভাপতি আ.ন.ম.আবুল খায়ের ভাই, নুর নবী ফারুক ভাই, মিজানুর রহমান মোল্লা ভাই সহ আরও কিছু দায়িত্বশীল ছিলেন। যাদের কথায় এক পর্যায়ে একজন ভাই বললেন, লক্ষ্মীপুরের স্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য আমাদের দুই থেকে তিনজন ভাইকে হারাতে হতে পারে। সেদিন আমি আর জায়েদ ভাইয়া একসাথে বসেই পর্দার আড়াল থেকে কথাটি শুনেছিলাম। কিন্তু এই কথাটি আমার মধ্যে কোন পরিবর্তন আনতে না পারলেও শহীদ জায়েদের মধ্যে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়। আমার মনে হয় তখন থেকেই শহীদি মিছিলে নিজের নাম লেখাবার জন্য সে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তার এই তীব্র আকাঙ্খা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করেছেন।
আমি মাঝে মাঝে অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দেখি; যা পরবর্তীতে বাস্তবতায় রূপ নেয়। ১৯৯৭ সালে রমজান মাসে সেহরীর পর আমি একটি স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন ছিল বাতিলের সাথে সংঘর্ষে জায়েদ ভাইয়া নিহত হয়েছেন। তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং আমি শুয়ে শুয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছি। আমার এই স্বপ্নটি ১৯৯৯ সালে ১৭ই আগষ্ট যে ভাবে বাস্তবে রূপ নিবে এটি আমি চিন্তা অথবা প্রত্যাশা কোনটিই করিনি।
আসহাবে রাসুল(সঃ) এবং ইসলামী আন্দোলনের সকল শহীদদের মাঝে একটি চমৎকার মিল খুজে পেয়েছি। আর তা হল, ইসলামী আন্দোলনের কাজকে জীবনের সকল কাজের উপর প্রাধান্য দেয়া, পৃথিবীর আর কোন শক্তি থামাতে পারেনি।
অগুছালোভাবে অনেকগুলো কথা লিখেছি। এর পূর্বে আমার লেখার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। সর্বশেষ যেটা বলতে চাই, লক্ষ্মীপুরের সবুজ প্রান্তরকে রঙ্গিন করেছে। আমাদের চারজন শহীদের রক্ত। এই রক্ত কখনই বৃথা যাবে না। এই রক্ত লক্ষ্মীপুরের জমিনকে উর্বর করেছে। ইসলামী আন্দোলনের পিচ্ছিল পথকে করেছে কোমল। এই শহীদ ভায়েরা আমাদের অনেক দায়বদ্ধতার মধ্যে ফেলেছেন। আমরা যদি শাহাদাতের তামান্না নিয়ে এই ময়দানে সাহসীকতার সাথে ভূমিকা পালন করতে পারি, তাহলে শহীদের রক্তের প্রতিটি ফোটা একদিন কথা বলবে। বাংলাদেশের ইসলামী বিপ্লবের সূচনা এই লক্ষ্মীপুর থেকে শুরু হবে। লাল সবুজের পতাকার পাশে কালেমার পতাকা একদিন উড়বেই ইনশাআল্লাহ।
১৭ই আগষ্ট এর ব্যাপারে বক্তব্য বা লেখা লেখির ব্যাপারে আমি কখনই আগ্রহী ছিলাম না। এই আবেগ জড়িত ঘটনাটিকে বার বার এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছি। তার পরও নিজের অজান্তে একদিন খাতা কলম নিয়ে বসে কিছু লেখার চেষ্টা করলাম। উদ্দেশ্য একটাই শহীদের জীবনের কোন অংশ যদি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অনুপ্রানিত করে এই প্রত্যাশায়।
ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততা ছোটবেলা থেকেই বুজতে শিখেছি। শহীদ আহমদ যায়েদকে আমার বাবা মার পরে আমিই সবচেয়ে কাছ থেকে দেখার সুযোগ বেশী পেয়েছি। কিলাশের সময় ছাড়া বাকী সময়টুকু এক সাথেই কাটাতাম। আমাদের বয়সের ব্যবধান দেড় থেকে দুই বছর হলেও অনেকেই মনে করতেন যমজ ভাই অথবা বন্দু। সময় গুলো বেশ ভালই কেটে যাচ্ছিল। ১৯৯৫ সালে শহীদ ফজলে এলাহীর শাহাদাতের মধ্যদিয়ে লক্ষ্মীপুরে ইসলামী অগ্রযাত্রা এবং শাহাদাতের ধারাবাহিকতা সূচনা হয়।তখন আমি পঞ্চম শ্রেনী এবং শহীদ আহমদ জায়েদ ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র।শহীদ ফজলে এলাহীর শাহাদাত আমাদের মত আরো অসংখ কিশোর এর মনে ইসলামী আন্দোলনের লে পরিনত হয়। তার পর থেকে সকল মিছিল মিটিং এ সক্রিয় অংশ গ্রহন করি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর তাদের একমাত্র লবস্তুতে পরিনত হয় ইসলামী ছাত্রশিবির। লক্ষ্মীপুর জেলায় ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লক্ষ্মীপুর শহর একমৃত্যু পুরীতে পরিনত হয়। দীর্ঘ ৩ বছরের অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৯৯ সালের ১৫ই আগষ্ঠ দিবাগত রাত ৩.০০ টা লক্ষ্মীপুর শহর সভাপতি, শামছুল ইসলাম ভাই, মিজানুর রহমান মোল্লা ভাই এবং বাহার ভাইকে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীক অপহরনের পর আহত করে এক কবরস্থানে ফেলে রেখে যায়। এই ঘটনার পর সকল কর্মীর প্রানের দাবী ছিল ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করার ।
১৬ই আগষ্ঠ আমি শহীদ যায়েদ, জাকির, মিঠু ভাই, খোকন ভাই, ফরহাদ সহ স্কুল পর্যায়ের বেশ কিছু কর্মী মহিন ভাইয়ের দোকানে বিকাল বেলা চা খাচ্ছিলাম। এক দায়িত্বশীল এসে খবর দিলেন, আগামীকাল লক্ষ্মীপুর শহরে ছাত্রলীগ এবং তাহের বাহীনির সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিক্ষভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সাথে সাথে আমরা সকলে দাড়িয়ে দায়িত্বশীলের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি । তার পর মাগরিবের নামাজ আমরা সকলেই একসাথে আদায় করি । মাগরিবের নামাজের পর শহীদ যায়েদ আমাকে ডেকে বলেন, আমি মিছিলের দাওয়াতী কাজ করার জন্য শহরে যাচ্ছি, তুই বাসায় চলে যায়। বাসায় ফেরার পর লেখা পড়ায় মন বসছিনা । যায়েদ ভাইয়া রাত ৯.৩০ মিনিটে বাসায় ফিরেছেন । পরের দিন আমরা চার ভাই ফজরের নামাজ আদায় করে বাসায় ফিরে গোসল করে মিছিলে যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ করি ।
সকাল ৭.৩০ মিনিট দারুল আমান একাডেমী মসজিদে মিছিল পূর্ব সমাবেশে সকলে একত্রিত হই। আমার নানা মরহুম সফিক উল্লাহ আবেগময়ী বক্তব্য রাখেন। জেলা সভাপতি মিছিলে তিনটি গ্রুপের নাম ঘোষনা করেন। কোন গ্রুপেই স্কুল কর্মীদের নাম ঘোষনা করা হয়নি। এবং সর্বশেষ স্কুল কর্মীদেরকে মিছিলে না নেওয়ার ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানান। তার পর আমরা স্কুল পর্যায়ের সকল কর্মীদের একত্রিত করে সিদ্ধান্ত নিই,আমরা যে ভাবেই হোক মিছিলে অংশ গ্রহন করবো।
আমাদের সাথে স্টেশনের সোহেল ভাই , কবির মামা এবং সওদাগর বাড়ীর জোবায়ের মামা সহ আরো অনেকেই অংশ গ্রহন করেন।
আমাদের আলাপ চারিতার এক পর্যায়ে শহীদ আহমদ জায়েদ কোন সংকোচ ছাড়াই বললেন , আমাদের মধ্য থেকে যদি অন্তত একজনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শহীদ হিসেবে কবুল করতেরন, তাহলে কতইনা ভাল হত। তার এই কথাটি তখন আমরা অনেকেই গুরুত্ব দিয়ে শুনিনি।তার পরের ঘটনা সকলেরই জানা। তাহের বাহিনীর নির্মম,নিষ্ঠুর ,পৈশাচিকতার শিকারে পরিনত হন শহীদ আহমদ জায়েদ । সবচেয়ে দুঃখ জনক ঘটনা হল , তার জানাযার নামাজটিকে ও তারা পন্ড করার জন্য হামলা চালায়। যা লক্ষ্মীপুরের সর্ব স্তরের মানুষকে হতবাক করেছে।
শহীদ আহমদ জায়েদের শাহাদাতের পর দুইটি ঘটনা আমার এখন ও মনে পড়ে। ১৯৯৯ সালে মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে আমাদের ডাইনিং রুমে এক জরুরী সভা বসে । সেখানে লক্ষ্মীপুরের সাবেক জেলা সভাপতি আ.ন.ম.আবুল খায়ের ভাই, নুর নবী ফারুক ভাই, মিজানুর রহমান মোল্লা ভাই সহ আরও কিছু দায়িত্বশীল ছিলেন। যাদের কথায় এক পর্যায়ে একজন ভাই বললেন, লক্ষ্মীপুরের স্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য আমাদের দুই থেকে তিনজন ভাইকে হারাতে হতে পারে। সেদিন আমি আর জায়েদ ভাইয়া একসাথে বসেই পর্দার আড়াল থেকে কথাটি শুনেছিলাম। কিন্তু এই কথাটি আমার মধ্যে কোন পরিবর্তন আনতে না পারলেও শহীদ জায়েদের মধ্যে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়। আমার মনে হয় তখন থেকেই শহীদি মিছিলে নিজের নাম লেখাবার জন্য সে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তার এই তীব্র আকাঙ্খা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করেছেন।
আমি মাঝে মাঝে অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দেখি; যা পরবর্তীতে বাস্তবতায় রূপ নেয়। ১৯৯৭ সালে রমজান মাসে সেহরীর পর আমি একটি স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন ছিল বাতিলের সাথে সংঘর্ষে জায়েদ ভাইয়া নিহত হয়েছেন। তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং আমি শুয়ে শুয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছি। আমার এই স্বপ্নটি ১৯৯৯ সালে ১৭ই আগষ্ট যে ভাবে বাস্তবে রূপ নিবে এটি আমি চিন্তা অথবা প্রত্যাশা কোনটিই করিনি।
আসহাবে রাসুল(সঃ) এবং ইসলামী আন্দোলনের সকল শহীদদের মাঝে একটি চমৎকার মিল খুজে পেয়েছি। আর তা হল, ইসলামী আন্দোলনের কাজকে জীবনের সকল কাজের উপর প্রাধান্য দেয়া, পৃথিবীর আর কোন শক্তি থামাতে পারেনি।
অগুছালোভাবে অনেকগুলো কথা লিখেছি। এর পূর্বে আমার লেখার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। সর্বশেষ যেটা বলতে চাই, লক্ষ্মীপুরের সবুজ প্রান্তরকে রঙ্গিন করেছে। আমাদের চারজন শহীদের রক্ত। এই রক্ত কখনই বৃথা যাবে না। এই রক্ত লক্ষ্মীপুরের জমিনকে উর্বর করেছে। ইসলামী আন্দোলনের পিচ্ছিল পথকে করেছে কোমল। এই শহীদ ভায়েরা আমাদের অনেক দায়বদ্ধতার মধ্যে ফেলেছেন। আমরা যদি শাহাদাতের তামান্না নিয়ে এই ময়দানে সাহসীকতার সাথে ভূমিকা পালন করতে পারি, তাহলে শহীদের রক্তের প্রতিটি ফোটা একদিন কথা বলবে। বাংলাদেশের ইসলামী বিপ্লবের সূচনা এই লক্ষ্মীপুর থেকে শুরু হবে। লাল সবুজের পতাকার পাশে কালেমার পতাকা একদিন উড়বেই ইনশাআল্লাহ।
0 comments: