শহীদ রাশেদুল হক রান্টু (রাজশাহী-২৬.১০.২০১৩) (১৮১ তম)


শহীদের পরিচিতিঃ
শহীদ রাশেদুল হক রান্টু রাজশাহী জেলার মতিহার থানার ডাশমারী মধ্যপাড়া গ্রামে ০৫.০১.১৯৯২ ইং তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মাতার ১ম সন্তান এবং অতি প্রিয় রান্টু সকলের সাথে সব সময় হাসি মুখে কথা বলতেন। যে কোন বিপদে তিনি সহপাঠি ও প্রতিবেশীদের পাশে এসে দাড়াতেন। ইসলামী আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ রান্টু দাওযাতী কাজে এবং সাংগঠনিক সকল কাজে সবার আগে থাকতেন। শাহদাত কালীন সময়ে তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী এবং মতিহার থানা শাখার বায়তুলমাল সম্পাদক ছিলেন।
যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেনঃ
 
আওয়ামী জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদে ও নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২৬ অক্টোবর ২০১৩ শনিবার জামায়াত সহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের সমর্থনে নারায়ে তাকবির শ্লোগানে মুখরিত বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় কাজলা গেটে পৌঁছলে পুলিশ-র‌্যাব ও সাদা পোষাকধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র শিবির কর্মীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে মুহুর্মুহ গুলিবর্ষণ করে। এই মিছিলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে রাশিদুল হক রান্টু নিজের রক্তে রাঙ্গিয়ে দেন মতিহারের সবুজ চত্বর। আহত ও মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে জরুরি ভাবে ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি করার কয়েক মিনিট পরেই তারুণ্যদীপ্ত প্রিয় সাথীদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যান, পান করেন শাহাদাতের অমিয় সুধা।
শাহাদাতের পূর্বের বিভিন্ন ঘটনা :

রাশিদুল হক রান্টু সব সময় হাসি খুশি থাকতেন এবং বলতেন এটায় দাওয়াতী চরিত্র। সহপাঠিদের প্রিয় রান্টু বন্ধুদের মাঝে দাওয়াতী কাজের জন্য সব সময় পেরেশান থাকতেন। প্রতিবেশীদের বিপদ যেন ছিল তারই বিপদ, সবার আগে ছুটে যেতেন তিনি। “আল্লাহকে যারা বেশেছে ভালো দু:খ কি আর তাদের থাকতে পারে”- এই গানটি যেন সব সময় তার মুখে লেগে থাকতো। আন্দোলনের কাজে কখনো পিছে পড়তেন না তিনি। প্রিয় সাথীদের কাছে সব সময় বলতেন আল্লাহ যেন আমাকে শহীদ হিসাবে কবুল করেন।
সামগ্রীক ঘটনার বিবরণঃ
 
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী নেতৃবৃন্দের উপর চরম আঘাত করতে থাকে। এর প্রতিবাদে সারাদেশের ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২৬ অক্টোবর ২০১৩ শনিবার বিকাল ৪ টায় কেন্দ্রঘোষিত ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কাজলা গেটে পৌঁছলে পুলিশ-র‌্যাব-সাদা পোষাকধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীরা একে-৪৭ রাইফেলের মত ভারী অস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র জনাতার উপর অতর্কিত হামলা-গুলিবর্ষণ করে। এই মিছিলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন রাশিদুল হক রান্টু। দ্রুত তাকে ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতেই শাহাদাত বরণ করেন তিনি।
২৭ অক্টোবর সকালে পোস্টমর্টেমের আশ্বাস নিয়ে পরিজনেরা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসে। এই নির্মম হত্যাকান্ডের দায়ভার র‌্যাব-পুলিশ কেউ নিতে রাজি হয় না। প্রথমে হার্টএ্যাটাকে মারা গেছে বলে চালিয়ে দিতে ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারকে চাপ দেয়। পরে নিজেদের অভ্যন্তরীন অস্ত্রের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পোর্স্ট মর্টেম করতে নির্দেশ দেয়। ডাক্তার রাজি না হলে তাকে ঘুরতে হয় ৪০ ঘণ্টা। প্রথমে রামেক অধ্যক্ষ, পরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, তারপর জেলা প্রশাসক সব শেষে পুলিশ কমিশনার। অবশেষে সঠিক প্রোটকল ছাড়াই পোস্টমর্টেম। পোস্টমর্টেম শেষ করে শহীদের লাশ নিজ বাড়ীতে পৌঁছায় বেলা ২টায়। খোঁজাপুর গোরস্তান ময়দানে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক হাজার জনতা জানাজায় শামিল হয়ে শহীদের জন্য দোয়া করেন।


শহীদের আপন জনদের কথা:
 
পিতা: “ইসলামী আন্দোলনের জন্য আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি, আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে সবর করছি।”

মাতা: “ঘাতকরা আমার কলিজার টুকরা সন্তানকে হত্যা করেছে, আমার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে, হত্যাকারীদের বিচারের ভার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! তুমি আমার রান্টুকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নাও।”
ছোট বোন: “আমার ভাইয়া ইসলামী আন্দোলনে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তারা যেন দ"ষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়”

আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী : “রাশিদুল হক রান্টু অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী ছিল, সে সব সময় আমাদের সম্মানের চোখে দেখতো এবং আমরাও তাকে খুবস্নেহ করতাম, তাকে হারিয়ে আমরা মর্মাহত”

ভিডিও





মোছেনি আজও রক্তের দাগ -মো:আফজাল হোসেন


২৬ অক্টোবর ২০১৩ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দলের হরতালের সমর্থনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা এলাকায় ছিল পথসভা কর্মসূচি। সকাল থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রচার প্রচারণা চালাই। বিকেল ৪টায় শুরু হবে মূল কর্মসূচি।

এরই প্রেক্ষিতে জোহরের নামাজ শেষ করে সকলে সামান্য কিছু খাওয়া দাওয়া শেষ করে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আমরা ধরমপুর মতিহার থানার আমজাদের মোড়ে এসে জড় হই। বেলা ৩টায় গোটা মোড় জনশক্তিতে ভরে যায়। চারিদিকে শুধু নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার, একদফা একদাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি, এই মুহূর্তে দরকার কেয়ারটেকার সরকার ইত্যাদি শ্লোগানে মুখরিত। চারদিক থেকে মিছিল আসছে।
শুনলাম, ছাত্রশিবির ডাঁশমারী অঞ্চল থেকে একটা বিশাল মিছিলের বহর আসছে। অপেক্ষা করতে থাকলাম, মিছিলকে অভিনন্দন জানানোর জন্য।

কিছুক্ষণ পর মিছিলটি আমজাদের মোড়ে এসে পৌঁছে। আমি ঠিক সামনে থেকে খেয়াল করলাম রাশেদুল ইসলাম রান্টুকে। সে মিছিলের সামনে ডান পাশে ব্যানারের এক প্রান্ত ধরে খুব আবেগতাড়িতকণ্ঠে জোরে জোরে শ্লোগান দিচ্ছিলো। রান্টু ছিল সুঠাম দেহের অধিকারী এবং সেদিন তাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছিল। পরনে একটি ট্রাউজার, গায়ে আকাশি ও সাদা রঙের টানা টানা দাগওয়ালা গেঞ্জি। মিছিলটি যখন আমাদের সাথে এসে যুক্ত হয়, তখন আমরা প্রায় ২০০০ জনশক্তি নিয়ে আমজাদের মোড় থেকে কেডি ক্লাবের দিকে মিছিল নিয়ে এগোতে থাকি। সবার কণ্ঠে প্রতিবাদের শ্লোগান। মিছিল যখন কাজলা পানির ট্যাংকি বিশ্বরোডের কাছে পৌঁছায় তখন ঠিক বিকেল ৪টা বাজে।
প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের হামলা


শাহাদাতের ঘটনা

শহীদের পরিচিতিঃ
শহীদ রাশিদুল হক রান্টু রাজশাহী জেলার মতিহার থানার ডাশমারী মধ্যপাড়া গ্রামে ০৫.০১.১৯৯২ ইং তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মাতার ১ম সন্তান এবং অতি প্রিয় রান্টু সকলের সাথে সব সময় হাসি মুখে কথা বলতেন। যে কোন বিপদে তিনি সহপাঠি ও প্রতিবেশীদের পাশে এসে দাড়াতেন। ইসলামী আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ রান্টু দাওযাতী কাজে এবং সাংগঠনিক সকল কাজে সবার আগে থাকতেন। শাহদাত কালীন সময়ে তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী এবং মতিহার থানা শাখার বায়তুলমাল সম্পাদক ছিলেন।
যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেনঃ
আওয়ামী জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদে ও নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২৬ অক্টোবর ২০১৩ শনিবার জামায়াত সহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের সমর্থনে নারায়ে তাকবির শ্লোগানে মুখরিত বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় কাজলা গেটে পৌঁছলে পুলিশ-র‌্যাব ও সাদা পোষাকধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র শিবির কর্মীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে মুহুর্মুহ গুলিবর্ষণ করে। এই মিছিলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে রাশিদুল হক রান্টু নিজের রক্তে রাঙ্গিয়ে দেন মতিহারের সবুজ চত্বর। আহত ও মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে জরুরি ভাবে ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি করার কয়েক মিনিট পরেই তারুণ্যদীপ্ত প্রিয় সাথীদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যান, পান করেন শাহাদাতের অমিয় সুধা।
শাহাদাতের পূর্বের বিভিন্ন ঘটনা :
রাশিদুল হক রান্টু সব সময় হাসি খুশি থাকতেন এবং বলতেন এটায় দাওয়াতী চরিত্র। সহপাঠিদের প্রিয় রান্টু বন্ধুদের মাঝে দাওয়াতী কাজের জন্য সব সময় পেরেশান থাকতেন। প্রতিবেশীদের বিপদ যেন ছিল তারই বিপদ, সবার আগে ছুটে যেতেন তিনি। “আল্লাহকে যারা বেশেছে ভালো দু:খ কি আর তাদের থাকতে পারে”- এই গানটি যেন সব সময় তার মুখে লেগে থাকতো। আন্দোলনের কাজে কখনো পিছে পড়তেন না তিনি। প্রিয় সাথীদের কাছে সব সময় বলতেন আল্লাহ যেন আমাকে শহীদ হিসাবে কবুল করেন।
সামগ্রীক ঘটনার বিবরণঃ
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী নেতৃবৃন্দের উপর চরম আঘাত করতে থাকে। এর প্রতিবাদে সারাদেশের ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২৬ অক্টোবর ২০১৩ শনিবার বিকাল ৪ টায় কেন্দ্রঘোষিত ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কাজলা গেটে পৌঁছলে পুলিশ-র‌্যাব-সাদা পোষাকধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীরা একে-৪৭ রাইফেলের মত ভারী অস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র জনাতার উপর অতর্কিত হামলা-গুলিবর্ষণ করে। এই মিছিলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন রাশিদুল হক রান্টু। দ্রুত তাকে ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতেই শাহাদাত বরণ করেন তিনি।
২৭ অক্টোবর সকালে পোস্টমর্টেমের আশ্বাস নিয়ে পরিজনেরা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসে। এই নির্মম হত্যাকান্ডের দায়ভার র‌্যাব-পুলিশ কেউ নিতে রাজি হয় না। প্রথমে হার্টএ্যাটাকে মারা গেছে বলে চালিয়ে দিতে ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারকে চাপ দেয়। পরে নিজেদের অভ্যন্তরীন অস্ত্রের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পোর্স্ট মর্টেম করতে নির্দেশ দেয়। ডাক্তার রাজি না হলে তাকে ঘুরতে হয় ৪০ ঘণ্টা। প্রথমে রামেক অধ্যক্ষ, পরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, তারপর জেলা প্রশাসক সব শেষে পুলিশ কমিশনার। অবশেষে সঠিক প্রোটকল ছাড়াই পোস্টমর্টেম। পোস্টমর্টেম শেষ করে শহীদের লাশ নিজ বাড়ীতে পৌঁছায় বেলা ২টায়। খোঁজাপুর গোরস্তান ময়দানে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক হাজার জনতা জানাজায় শামিল হয়ে শহীদের জন্য দোয়া করেন।

শহীদের আপন জনদের কথা:
পিতা: “ইসলামী আন্দোলনের জন্য আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি, আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে সবর করছি।”
মাতা: “ঘাতকরা আমার কলিজার টুকরা সন্তানকে হত্যা করেছে, আমার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে, হত্যাকারীদের বিচারের ভার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! তুমি আমার রান্টুকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নাও।”
ছোট বোন: “আমার ভাইয়া ইসলামী আন্দোলনে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তারা যেন দ"ষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়”
আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী : “রাশিদুল হক রান্টু অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী ছিল, সে সব সময় আমাদের সম্মানের চোখে দেখতো এবং আমরাও তাকে খুবস্নেহ করতাম, তাকে হারিয়ে আমরা মর্মাহত”
- See more at: http://www.shibir.org.bd/article/shaheeddetail/220/1#sthash.buMDkkza.dpuf

হঠাৎ করে দেখি রোডের ডান দিক থেকে অর্থাৎ বিনোদপুরের দিক থেকে র‌্যাবের অনেক গাড়ি আসছে। গাড়িগুলো আসতে দেখে আমি জনশক্তিদের আটকিয়ে রাখলাম। রাস্তায় উঠতে দিলাম না। আমি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে গাড়িগুলোকে সাইড দিচ্ছিলাম। একে একে ৬টা গাড়ি আমাদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। যেতে যেতে হঠাৎ করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই র‌্যাবের গাড়িগুলোর দরজা খুলেই এলোপাতাড়ি লাঠি পেটা শুরু করে। কী ব্যাপার? আমাদের এ কর্মসূচিতে তো প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে তারপরও কেন এই লাঠিপেটা? কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। অনুমতি থাকায় এখানে ছোট-বড় আবালবৃদ্ধ সবাই এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। হামলার প্রেক্ষিতে সেখানে হাজার হাজার জনশক্তি সবাই এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। র‌্যাবের পাশাপাশি দেখা যায় অনেক সাদা পোশাকে আওয়ামী সন্ত্রাসী যাদের সবার হাতে একে-৪৭সহ ভারী ভারী অস্ত্র। তারা যৌথভাবে আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। চারিদিক মুহুর্মুহু গুলির শব্দ!

আমি সকল জনশক্তিকে নিয়ে কেডি ক্লাবের দিকে সরে যেতে লাগলাম। এরই ভেতরে দেখি অনেকে আমার সামনে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। আমি বারবার জনশক্তিকে পিছু হটতে বলেছিলাম। কারণ র‌্যাব ও সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে একে-৪৭সহ অত্যাধুনিক অস্ত্র, সেই অস্ত্রের সাথে আমরা কিছুতেই মোকাবেলা করতে পারবো না।

এরপর আমি বেশ কিছু জনশক্তিকে সাথে নিয়ে কাজলার কেডি ক্লাবের পূর্ব দিক দিয়ে আমজাদের মোড়ের দিকে যাওয়া শুরু করলাম। যাওয়ার কিছু সময় পর ডাঁশমারীর তৎকালীন সভাপতি আলম আমাকে ক্রন্দনরত কণ্ঠে ফোন দিয়ে বললেন, “ভাই রান্টু গুলিবিদ্ধ হয়েছে।” এই কথা শুনে আমার বুকের ভেতরে হৃদপিণ্ডটা কেঁপে উঠল। আমি বললাম কোথায়? তিনি বললেন, রেডিও সেন্টারের ভেতরে বরই বাগানে। আমি বললাম, তাকে উদ্ধার করে আমজাদের মোড় দিয়ে নিয়ে আসতে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো রাবার বুলেট লেগেছে। এরপর আমি দ্রুত রাস্তায় উঠলাম। এর কিছুক্ষণ পর যখন রান্টুকে রিকশায় করে আমার কাছে নিয়ে এলো তখন আমি দেখলাম, তার বুকের ওপর বাম পাশে ফুসফুস বরাবর পেটের একটু ওপরে সামান্য ফুটো। আমার ডান হাতের আঙুলটা তার বুকের সেই গুলিবিদ্ধ ফুটো স্থান দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম।

তখন সে খুব আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল এবং তার মুখের ডান দিক থেকে সাদা সাদা ফেনা বের হচ্ছিল। এবার দেখি আমার আঙুল তার সেই গুলিবিদ্ধ স্থান দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। আমি আর আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। মনে মনে ভাবলাম, হে আল্লাহ, তুমি পিতার একমাত্র সন্তানকে তোমার দ্বীনের জন্য কবুল করলে। কারণ তার যে স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়েছে তাতে করে আল্লাহর রহমত ছাড়া তার বাঁচা কোনোভাবে সম্ভব নয়। আমার দুই চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো। এরপর আমি তাকে দুই হাত দিয়ে আমার বুকে টেনে নিলাম। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মোটরসাইকেল তুলে দিলাম তাকে হসপিটালে নেয়ার জন্য। কিন্তু সে আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছিলো যেন সে আমাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে। সে যে আর বাঁচবে না, আল্লাহ যে তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করবেন হয়তো সেটাই বারবার আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল। তার নিস্তেজ দেহটা আমার বুকের সাথে যেন লেগে গেছে। তার মাথাটা আমার কাঁধে ঝুলে আছে।

আমি ও তাজমিনুর তারই মামাতো ভাই দুইজন মিলে তাকে মোটরসাইকেলের পেছনে তুলে দিলাম এবং পেছনে একজনকে তাকে ধরে রাখার জন্য দিলাম। তার পা দুটো মোটরসাইকেলের দুই পাশে ঝুলতে থাকে আর পেছন থেকে তাকে একজন চেপে ধরে মেডিক্যালে নিয়ে যায়। তাকে আমার বুক থেকে নামানোর পর দেখি আমার গেঞ্জিটা রক্তে ভিজে গেছে। রান্টুকে হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়ে আমরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিলাম।

এদিকে আসরের নামাজের সময় প্রায় শেষ হয়ে আসছিলো। এমন সময় ফোন এলো আমার মোবাইলে, “ভাই রান্টু আর বেঁচে নেই”। আমি ফোন পেয়ে কাউকে কিছু বললাম না। এই মুহূর্তে তাদের কথাটা বললে তারা সবাই ভেঙে পড়বে। আমি কাউকে সান্ত্বনা দিতে পারবো না। কিন্তু কেন যেন আমার চোখের পানিকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। বারবার মনে পড়ছিল শহীদ শাহাদাতের বাসায় ঈদের দিনে রান্টুর সেই কান্নার দৃশ্য। শহীদ শাহাদাতের মা যখন শাহাদাতের মৃত্যুর কথা বর্ণনা করছিলেন তখন রান্টুর অনেক জোরে জোরে কান্নার শব্দ শুনে আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম। কিছুতেই তার কান্না থামছিল না। এর কিছুদিন পরই এই ঘটনা! আমার দু’চোখ দিয়ে পানি ঝরা দেখে জনশক্তিদের আর বুঝতে কষ্ট হলো না যে শহীদ রাশিদুল হক রান্টু আর বেঁচে নেই।

কিছুক্ষণ পর মাগরিবের নামাজ শেষ করে তৎকালীন রাবির সভাপতি আশরাফুল আলম ইমন ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি শহীদের পরিবারে গিয়ে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পর ইমন ভাই এলে- তিনি, আমি ও বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীলসহ শহীদ রাশেদুল ইসলাম রান্টুর বাসায় রওনা হলাম। কিন্তু বারবার আমার আবেগজড়িতকণ্ঠে কান্না বের হয়ে আসছিল। কিভাবে সান্ত্বনা দেবো শহীদের মা, বাবা ও ভাই হারানো বোন দুটোকে? কী নিয়ে দাঁড়াবো তাদের সামনে? এই ভেবে আমার দু’চোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝরতে থাকে। অবশেষে আবেগভরা হৃদয় নিয়ে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সেখানে তৈরি হলো এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। চারিদিকে শুধু কান্নার রোল, শহীদের পিতা-মাতাকে কিছুতেই সান্ত্বনা দিতে পারলাম না। সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। আমাদের কান্না দেখে সেখানে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যায় এবং তারাও কান্নাকাটি শুরু করে।

শহীদ রাশেদুল ইসলাম রান্টু ছিলেন শিবিরের ১৮১তম শহীদ। তিনি ছিলেন এলাকার সবার কাছে প্রিয় একজন ব্যক্তি। যেমন ছিলেন চরিত্রবান, তেমনি ছিলেন সাহসী। শিবিরের প্রতিটা কর্মসূচিতে তাকে সব সময় সামনে দেখা যেত। এমনকি অঞ্চলের প্রতিটা প্রোগ্রামে আমি তাকে উপস্থিত দেখতে পেতাম। তিনি পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই পিতা-মাতার খেদমত করতেন। প্রতিটা কাজে তার পিতা-মাতাকে সহযোগিতা করতেন। তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী, সংগঠনিক কাজের পাশাপাশি তিনি নিজে পরিশ্রম করে প্রতি ঈদে তার বোনদের ও পিতা-মাতাকে পোশাক কিনে দিতেন। তিনি সমাজের প্রতিটা মানুষের কাছে ছিলেন খুবই প্রিয়। কারো উপকার করার জন্য তিনি সর্বদা ব্যাকুল থাকতেন। তিনি সুযোগ পেলে নিজের পরিবারের পাশাপাশি এলাকার গরিব-দুঃখীদের সাহায্য ও সহযোগিতা করতেন।

এভাবেই আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিলেন শহীদ রাশেদুল ইসলাম রান্টু। যেভাবে বিদায় নিয়েছিলেন শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী, শহীদ হাফিজুর রহমান শাহীন, শহীদ শাহাদাতসহ অসংখ্য আল্লাহর পথের সৈনিক। আর কোনো দিন ফিরে আসবেন না তারা আমাদের মাঝে। শহীদ রান্টুর পিতা আজ নানা রোগে আক্রান্ত। কে নেবে তার দেখাশোনা করার দায় দায়িত্ব? বৃদ্ধ বয়সে পিতা-মাতার একমাত্র আশ্রয়স্থাল হয় তার সন্তান। কিন্তু তাঁর একমাত্র সন্তান আজ চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে। আজও শহীদ রাশেদুল ইসলাম রান্টুর সাথীরা ভুলতে পারেন না, সংগঠনের প্রতিটা কাজে আজও তাকে স্মরণ করেন প্রতিটা মুহূর্তে। শহীদ রাশেদুল ইসলাম রান্টুর রক্তে  ভেজা সেই গেঞ্জিটা আজও আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। যখনই সেই গেঞ্জিটা আমার চোখে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যায় সেই দিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনা। হাজারো রান্টুর জীবন কেড়ে নিলেও মহান আল্লাহ তার দ্বীনকে এই জমিনে প্রতিষ্ঠিত করবেনই ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ যেন শহীদ রাশেদুল ইসলাম রান্টুকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন। আমিন।

লেখক : মো:আফজাল হোসেন সাবেক ক্রিড়া সম্পাদক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়




২.
বাবা আমিনুল হক টুকু এবং মা রাশেদা বেগমের তিন ছেলে মেয়ের মধ্যকার একমাত্র ছেলে রাশিদুল হক। বড় সন্তান হিসেবে আব্বা মায়ের যেমন আদরের ধন তেমনি ছোট দুই বোনেরও ছিল চোখের মণি। মান অভিমান থেকে শুরু করে সকল আবদার ছিল ভাইয়ের কাছে। চাচা-চাচী ফুফুসহ পাড়া প্রতিবেশী ও আতœীয় স্বজনের কাছেও সে ছিলো অতীব আপনজন। নিজগ্রামের ডাঁশমারী স্কুল এবং বিনোদপুরের ইসলামিয়া কলেজের সকল শিক কর্মকর্তা কর্মচারী এবং ছাত্রছাত্রীর প্রিয় মুখ ছিলো সে। শুধু প্রিয় হতে পারেনি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কাছে। তাইতো রাজপথের মিছিলেই তাকে বিলিয়ে দিতে হলো বুকের তাজা খুন।

ঘটনাটি ঘটে গত ২৬ অক্টোবর ২০১৩ রোজ শনিবার। ঐদিন বিকেল ৪.৩০ ঘটিকায় কেন্দ্রঘোষিত ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের সমর্থনে বিােভ সমাবেশ ছিলো। সেই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কাজলা গেটে পৌঁছার আগেই পুলিশ-র‌্যাব-সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সন্ত্রাসীদের ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে সে। জরুরিভাবে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার কয়েক মিনিট পরেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার শরীরে একে-৪৭ রাইফেলের ২টি গুলি এবং সর্টগানের ৯টি গুলির চিহ্ন থেকে তখনও রক্ত ঝরছিলো।

সন্ধ্যা থেকে থেকে শহীদের সাথী এবং স্বজনদের আহাজারী আর কান্নার সুরে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হলেও র‌্যাব ও পুলিশের সাজানো নাটকের মহড়া এগিয়ে যেতে থাকে। সন্ধ্যা ৭.৩০ ঘটিকায় লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। পথিমধ্যে পুলিশ লাশবাহী গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারকেও মারধর করে।

সারা রাতের নাটক শেষে পরদিন সকালে পোস্টমর্টেমের আশ্বাস নিয়ে পরিজনেরা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসে। সকাল থেকে শুরু হয় নতুন নাটক। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দায়ভার র‌্যাব-পুলিশ কেউ নিতে রাজি নয়। হার্টএ্যাটাকে মারা গেছে বলে চালিয়ে দিতে ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারকে চাপ দেয় কর্তৃপ। দেহে গুলির দগদগে চিহ্ন সত্ত্বেও এমন রিপোর্ট দেয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক ভাবেননি ডাক্তার। তাই আরেক নাটক সাজানোর চেষ্টা চলে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ অস্ত্রের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পোর্স্ট মর্টেম করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। ডাক্তার রাজি না হওয়ায় তার লাশ নিয়ে নাটক চলে ৪০ ঘণ্টা ধরে। অবশেষে সঠিক প্রোটকল ছাড়াই পোস্টমর্টেম শেষ করে শহীদের লাশ নিজ বাড়িতে পৌঁছায় বেলা ২টায়। অবশেষে বাদ আসর খোঁজাপুর গোরস্থান ময়দানে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ১৫ হাজার মানুষের ঢলে জনসমুদ্রে পরিণত হয় জানাজাস্থল। মহানগর আমীর জননেতা আতাউর রহমানের ইমামতিতে হাজার হাজার মানুষ জানাজায় শামিল হয়ে চোখের পানি ফেলে দোয়া করেন শহীদের জন্য। গণমানুষের ঢল দেখে বারবার মনে হচ্ছিল, শহীদের রক্তের সিঁড়ি বেয়েই ইসলামের বিজয় সূচিত হবে ইনশাআল্লাহ।
-ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ


শহীদ রাশিদুল হক রান্টুর বাবার কথা

বাবার সাথে ছোটবেলা থেকেই মসজিদে যাওয়ার অভ্যাস ছিলো রান্টুর। ক্লাস ফাইভ থেকেই নিয়মিত রোজা রাখতো। আমি কখনো অসুস্থ্য থাকলে খেতে না পারলে সেও খেত না। বাবার হাত নিজে ধুয়ে দিত, তারপর একসাথে খেত। মায়ের সাথে খুব মধুর সম্পর্ক ছিলো তার। মা অসুস্থ্য হলে বাড়ির সমস্ত কাজ নিজেই করতো। কোন কাজ দিলে তা সবসময় দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতো। কখনো জিদ হঠকারী আচরণ করতো না। ঈদে ভালো পোশাক দিতে না পারলে কখনো রাগ করতো না সে। বোনদের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি। আন্দোলনের সব কথা বোনদের সাথে শেয়ার করতো।

খাবার নিয়ে কোন বাছ বিচার ছিলো না। বাড়িতে সাধারণ খাবার হলেও কোন দিন রাগ করেনি। আমার পায়ে ইনফেকশন জনিত ঘা হয়েছিলো- পরে তা অপারেশন করা লাগে। সেই সময় রাশেদ বাবার সমস্ত সেবা করে। নিজ হাতে ঔষধ খাওয়ানো, গোসল করানো সব কাজ সেই করতো।

তার ২২ বছরের জীবনে প্রতিবেশীদের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ কখনো আমার কানে আসেনি। সবসময় সংগঠন নিয়ে পেরেশানি থাকতো। একদিন তার গায়ে প্রচন্ড জ্বর, তবুও উপশাখা সভাপতি সাথী বৈঠক ডাকলে সে হাসতে হাসতে প্রোগ্রামে যায়।

সংসার চালাতে একটা টেইলার্সে দর্জির কাজ নেয় সে। একদিকে কাজ অন্যদিকে সংগঠন তার উপর অভাবের সংসার। তবুও হাসিমুখে কাজ চালিয়ে যেত সবদিকে, অবহেলা ছিলো না।

খেলাধুলায় বেশ ভালো পারদর্শিতা ছিল রান্টুর। পর পর আন্তঃওয়ার্ড ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। তাছাড়া ফুটবল ও ক্রিকেটেও ভালো খেলতো।

শহীদ হবার দিন দুপুর ২টায় সূরা বাকারা ১৫৩-১৫৭ আয়াতের উপর কুরআন ক্লাস পরিচালনা করে রান্টু। শহীদি তামান্না বুকে নিতে সকলকে আহবান জানায় রান্টু। যে সুধা সে নিজেই পান করে নজির সৃষ্টি করে গেল।

সেদিন দুপুরের খাবার রান্না করতে দেরি হলে মাকে বলে তাড়াতাড়ি খেতে দাও। তার মা নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। মা তাকে মিছিলে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিলে মাকে বলে জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। সাধারণ মৃত্যুর চেয়ে শহীদি মৃত্যু অনেক উত্তম।

দ্বীনের পথে আমার সন্তান জীবন দিয়েছে এতে আমার কোনই দু:খ নেই। দুনিয়ার বুকে এই খুনের বিচার না হলেও আখিরাতে হবে এই বিশ্বাস নিয়ে আজো প্রহর গুণছি। শহীদের পিতা হিসেবে আমি গর্বিত। আমার বিশ্বাস আমার ছেলেকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম