শহীদ জাফর জাহাঙ্গীর -(১৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৬)

"ইয়া আল্লাহ সেলিম জাহাঙ্গীর শহীদ হয়, সব জাহাঙ্গীর শহীদ হয়, অথচ আল্লাহ আমি জাফর জাহাঙ্গীরকে কেন তুমি শহীদ হিসেবে কবুল কর না" এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে শহীদ সেলিম জাহাঙ্গীর ভাইয়ের দাফন সম্পন্ন করে জাফর ভাই রুমে এসে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান।

জাফর ভাইয়ের পুরো নাম আবু জাফর মুঃ মনসুর। জাহাঙ্গীর ছিল তার ডাক নাম। সেলিম ভাই শাহদাত বরণ করেন ৪ জানুয়ারী। সেদিন থেকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিকের  ৪র্থ বর্ষের ছাত্র জাফর ভাই নিজেকে জাফর জাহাঙ্গীর বলে পরিচয় দিতেন।

তিনি প্রায়ই আক্ষেপ করে বলতেন "হায় শহীদ সেলিম জাহাঙ্গীরের মত জাফর জাহাঙ্গীরও যদি শহীদ হতো"। মাত্র ৪০ দিন। চল্লিশ দিন পরই মহান রাব্বুল আলামীন তার দোয়া কবুল করেছেন। ১৯৮৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী এরশাদের গুন্ডারা জাফর ভাইকে ড. শহীদুল্লাহ ছাত্রাবাসে ব্রাশ ফায়ার করে।



জাফর জাহাঙ্গীর ভাই চলে যান মহান প্রভুর মেহমানদারীতে। আমাদের শহীদেরা আমাদের প্রেরণা, আমাদের রাহবার। হে আল্লাহ তুমি তোমার প্রিয় বান্দাদের সাথে আমাদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও।

উল্লেখ্য, সেলিম জাহাঙ্গীর ভাই ১২ তম শহীদ, জাফর জাহাঙ্গীর ভাই ১৪ তম শহীদ।


ইসলামী ছাত্রশিবিরের চিরন্তন আদর্শ ও কর্মীদের আকর্ষনীয় গুণাবলীর কারনে  চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে সাধারণ ছাত্ররা দলেদলে শিবিরের পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে। শিবির পরিনত হয় সবচেয়ে মজবুত সঙ্গঠনে। উপর্যুপুরী কয়েক বছর কলেজ ছাত্রসংসদে কখনো আংশিক, কখনবা পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হতে থাকে শিবির।   শিবিরের এই জনপ্রিয়তা কিভাবে সহ্য করবে প্রতিদ্বন্দ্বী পাশবিক শক্তিগুলো ??  ৮৬ সালে  এরশাদ সরকার তার পেটয়া বাহিনী দিয়ে শুরু করে  ইন্সটিটিউট দখলের চেষ্টা, জাতীয় ছাত্রসমাজ নামে এরশাদের ছাত্রপার্টিটির হাতে তুলে দেয় অর্থ ও আগ্নেয়াস্ত্রের ভান্ডার!

১৪ ফেব্রুয়ারী ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে হোস্টেলে অবস্থান করছিলো। কিন্তু সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ছাত্রসমাজ নামধারী এরশাদের ছাত্রগুন্ডাবাহিনী শুরু করে বিনা উষ্কানীতে লেলিহান সন্ত্রাস। রাত নটার দিকে শুরু করে ব্যাপক বোমাবাজী ও গোলাগুলি।   হোস্টেলের ছাত্ররা লাইট নিভিয়ে রুমের ভেতর বসে বাঁচার চেষ্টারত ছিলো। ছাত্রসমাজের খুনিরা এক পর্যায়ে রুমেরুমে তল্লাসি শুরু করে।  বাধ্য হয়ে  ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বকারী সঙ্গঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করে।  এরশাদের গুন্ডারা এসময় ব্রাশফায়ার করলে স্টেনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় জাফর জাহাঙ্গীর ও বাকিউল্লাহ্ ভাইয়ের দেহ! তাদের রক্তের স্রোতে তিন তলার ফ্লোর ভেসে যায়, এলাকাজুড়ে নেমে আসে আতংক ও নিরবতা। টগবগে দুই তরুনের জীবন প্রদীপ  ঘটনাস্থলেই নিভে যায়! মহান আল্লার দরবারে হাজির হন শাহাদাতের মর্যাদা নিয়ে!

খুনের পরপর এরশাদের গুন্ডারা অস্ত্র উচিয়ে হোস্টেল ত্যাগ করে চলে যায়।

জালেম স্বৈরাচার সরকার দুই শহীদের লাশ কাউকে দেখার সুযোগ দেয়নি। শহীদ জাফর জাহাঙ্গীরের পরিবার চট্টগ্রামেরই পোর্ট কলোনীতে বসবাস করতো, কিন্তু শহীদের লাশ তাদের কাছে না দিতে গ্রামের বাড়ি ফেনী পাঠিয়ে দেয়া হয়  কড়া পুলিশ পাহারায়!


শহীদ জাফর জাহাঙ্গীর যন্ত্রকৌশল বিভাগের চূড়ান্ত পর্বের ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৬৩ সালের ১৯ জানুয়ারী ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার লক্ষ্মী্পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন! তার বাবার নাম আবুল বাশার। দুই ভাই, দুই বোনের মাঝে শহীদ দ্বিতীয় ছিলেন।   ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী  জাফর জাহাঙ্গীর চট্টগ্রাম  পলিটেকনিক শাখার ক্রিড়া সম্পাদক ও ক্যাম্পাস বিভাগের সহকারী পরিচালক ছিলেন!

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম