২০১৩ সালের জুলাই মাসে ক্যু করে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর মিশরের মসনদে বসেন জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি। তার সরকারের অব্যাহত নিপীড়নে বিগত দুই বছর ধরে মুসলিম ব্রাদারহুডের ইতিহাসে অন্যতম কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আসছে সংগঠনটি।
সম্প্রতি প্রধান নেতাদের প্রায় সবাইকে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়োদে কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পুরে রাখার প্রেক্ষিতে নতুন নেতৃত্বের অধীনে সংগঠনকে সাজিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে কাজ শুরু করেছে মিশরের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই দলটি।
মঙ্গলবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ব্রাদারহুডের সিনিয়র নেতা আমার দারাগ রয়টার্সকে বলেন, গণহারে সিনিয়র নেতাদেরকে মৃত্যুদণ্ড, কারাদণ্ড দেয়া এবং নির্বাসনে পাঠানোর প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত তরুণদের হাতে এখন দলের নেতৃত্ব তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময় সিসির মদদে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের হত্যার অভিযোগ এনে একটি মামলায় মঙ্গলবারই প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তাদের সাথে দণ্ডিত হয়েছেন আরো ১২ জন সিনিয়র নেতা।
মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা এবং বর্তমানে মিশরে নিষিদ্ধ ফ্রীডম এন্ড জাস্টিস পার্টির সহ-প্রতিষ্ঠাতা আমর দারাগ বলেন, আমাদের আন্দোলন ব্যক্তির উর্ধ্বে এবং নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে এটি আরো বেশি বৈপ্লবিক হয়ে উঠেছে।
‘প্রেসিডেন্ট জেলে থাকুন আর বাইরে থাকুন তিনি আমাদের প্রেসিডেন্টই। বহু সিনিয়র নেতা এখন জেলে আছেন। কিন্তু তারপরও আমরা তাদেরকে আমাদের নেতাই মনে করি।’ মুরসির বিরুদ্ধে রায়ের পরপরই রয়টার্সকে বলছিলেন ইস্তাম্বুলে নির্বাসনে থাকা দারাগ। তিনি ব্রাদারহুড সরকারের একজন মন্ত্রী ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, তবে সংগঠন চালানোর জন্য আপনাকে জেলের বাইরে থাকতে হবে যেখানে ঘটনা ঘটছে।
দারাগের এই মন্তব্য জেল এবং জেলের বাইরে থাকা ব্রাদারহুড নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলা অন্য এক সিনিয়র নেতার বক্তব্যরে সাথে পুরোপুরি মিলে যায়।
মিশরের সবচেয়ে পুরোনো এবং সবচেয়ে সফল রাজনৈতিক এই আন্দোলনের শত শত নেতাকর্মী সিসির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। এবং হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলবাস করছেন। সম্প্রতি দেশটির সরকার ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে সংগঠনটি বরাবরই শান্তিপূর্ণ হিসেবে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে।
আমর দারাগ বলছিলেন, তারুণ্য সব সময়ই ভাল। এবং এটা আমাদের জন্য সিসির ক্যু’র একটা উপকার। নতুনরা নেতৃত্বে আসায় ব্রাদারহুডের বর্তমান সার্বিক চিন্তাভাবনা আগের চেয়ে বেশি বৈপ্লবিক। কারণ, এই তরুণরা বুঝতে পারছে যে, তারা যদি তাদের দায়িত্ব পালন না করে তাহলে মিশরের অবস্থা কোথায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে।
মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ‘আরব ও পশ্চিমাদের প্রতি হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ‘সন্ত্রাস নির্মূলের’ কথা বলে সিসি ব্রাদারহুডকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলেন।
‘ক্যুর হোতারা চেয়েছিল এটিকে ব্রাদারহুড ও সেনাবাহিনী অথবা ব্রাদারহুড ও উদারপন্থীদের মধ্যকার লড়াই হিসেবে দেখাতে। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এটি গণতান্ত্রিক একটি সভ্য রাষ্ট্রের সাথে সেনাবাহিনী এবং ‘রাষ্ট্রের মধ্যে থাকা আরেক রাষ্ট্রের লড়াই’, বলছিলেন দারাগ।
তিনি বলেন, মুসলিম ব্রাদারহুডের শেকড় মিশরের সমাজের বহু গভীরে। ৮০ বছর ধরে আমরা সেখানে আছি। এটি একটি প্রতিষ্ঠান, কোনো ব্যক্তি কেন্দ্রিক প্রদর্শনী নয়। আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াবো তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’
মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির পর বিশ্বে মাত্র দুটি দেশকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছেন ব্রাদারহুড নেতারা। দেশ দুটি হচ্ছে তুরস্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের কাতার। বহু নেতাকর্মীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে তারা। এ নিয়ে কাতারকে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। ব্রাদারহুডকে আর্থিকভাবে সহায়তারও ‘অভিযোগ’ উঠেছে তুরস্ক-কাতারের বিরুদ্ধে।
এর জবাবে আমর দারাগ বলেন, ‘ব্রাদারহুড চলে আমাদের নিজেদের পকেটের টাকায়। আমরা একটি সামাজিক আন্দোলনও। সবসময় নিজেদের টাকায়ই সংগঠন চালাই। আমরা কোনো ছোটখাটো গ্রুপ নই। আমি মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের কথা বলছি।’
মঙ্গলবার মুরসির বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলার রায় দেয়া হল। দারাগের মতে, এই মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া বুঝার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এই রায়ের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরব না হলে সামনে আরো বড় ধরনের শাস্তি দিয়ে রায় আসতে পারে।
উৎসঃ আরটিএনএন
রিলেটেডঃ
0 comments: