;
আমি আপনাদের সামনে এমন একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা পেশ করছি যার ভিতরে আমি সংক্ষিপ্তরূপে শরীয়তের এমন সব বিধান লিপিবদ্ধ করেছি, যেগুলো জানা একজন শিক্ষিত ব্যক্তির জন্য একান্ত আবশ্যক। এর ভিতরে এমনি কতিপয় জাহিল লোকের শরীয়ত-পরিপন্থী উদ্ভট দাবীর থলিও খুলে দিয়েছি যাতে পরিস্কাররূপে বোঝা যাবে যে এই দাবীগুলোর নেই কোন যুক্তি, নেই কোন দলীল প্রমান। আমি আশা করি এ পুস্তিকা সেইসব বিপরীত ধ্যান ধারনা ও মতবাদ সংশোধন ও সংস্কার করে দিতে সক্ষম হবে, যা কতিপয় দর্শন-বিজ্ঞানে পারদর্শী ও শিক্ষিত লোকের মানসিকতায় সৃষ্টি হয়েছে। আর আমি এ আশাও পোষণ করছি যে, আমাদের শ্রদ্ধেও 'উলামাএ ইসলাম' ইসলামী খিদমতের বর্তমান কর্মপদ্ধতিটিকে পরিবর্তন করে আধুনিক কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করতে কুন্ঠিত হবেন না। - লেখক -১৯৫০ সালে মিশরের জালেম বাদশাহ ফারূক ইখওয়ানকে নিষিদ্ধ করে এবং নেতাকর্মীদের গণহারে কারারুদ্ধ করে এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে। ইখওয়ান আদালতের স্মরণাপন্ন হয়। মানসুরা প্রদেশের বিচারক তখন আব্দুল কাদের আওদাহ! তার কোর্টে মামলা দায়ের হলে তিনি শুনানির সময়ে ইখওয়ানের আদ্যপন্ত ইতিহাস এবং তার দ্বীনি ও রাজনৈতিক কর্মধারা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তিনি বাদশা ফারূকের বিরুদ্ধে ইখওয়ানের পক্ষে রায় ঘোষনা করতে বাধ্য হন সমস্ত পর্যবেক্ষন ও স্টাডী এবং স্বাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে। সরকার উচ্চ আদালতে আপীল করলে ঘটে যায় অবিস্মরনীয় ঘটনা। আব্দুল কাদের আওদাহ বিচারকের সরকারী পদ থেকে ইস্তফা দি্য়ে ইখওয়ানের পক্ষে উকিল হিসেবে কাজ শুরু করে দেন এবং উচ্চ আদালতের মামলায়ও ইখওয়ানকে বিজয়ী করে আনেন। এরপরেই আল্লাহ তাকে ইখওয়ানুল মুসলেমিন ইসলামী আন্দোলনের নিয়মিত কর্মী হিসেবে কবুল করে নেন।
৪৮ থেকে ৫০ এর মাঝে ইখওয়ান সুয়েজ খাল থেকে বৃটিশ তাড়ানো আন্দোলন এবং ফিলিস্তিনে ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনে সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কুরবানী প্রদর্শন করে । কিন্তু মুনাফেক জামাল নাসের সরকার ফের বৃটিশের সাথে সুয়েজ খাল নিয়ে সন্ধিচুক্তি করলে ইখওয়ানের নেতৃতে সমগ্র মিশরবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । এসময়েই জামাল নাসের ইখওয়ানকে উতখাত করার পরিকল্পনা হাতে নেয় , বিচারের নামে প্রহসন করে সামরিক ট্রাইব্যুনালে নিজ খেয়ালখুশিমত অগণিত নেতা ও কর্মীকে ফাসির মঞ্চে হত্যা করে। এ ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলন্ত নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্ততম ছিলেন এই পুস্তকের লেখক আব্দুল কাদের আওদাহ। তিনি মুসলিম সমাজের জন্য বিরাট অবদান রেখে গেছেন, তার লিখিত 'আত তাশরীউল জানাই ফীল ইসলাম'- (ইসলামে ফৌজদারী আইন) বইটি বিশ্ববিখ্যাত- যার প্রথম খন্ড ৮০০ পৃষ্ঠা সম্বলিত। ২য় খন্ডও অনুরূপ। ইউরোপের প্রায় সব ভাষায় এটি অনুদিত হয়েছে। তিনি ১৯৫৪ সালে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেছেন
ইখওয়ান ও নাসেরের বিবাদ যখন চরম পর্যায়ে উপনীত, তখন নাসের সরকার ইখওয়ানকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ণ করার সিদ্ধান্ত নিলো, আব্দুল কাদের আওদাহও তখন বন্দী হন জালেমের কারাগারে। জেলের অভ্যন্তরে থাকাকালে ইখওয়ানের অন্যান্য নেতাকর্মীর উপর যেমন পাশবিক জুলুম নির্যাতন চালানো হয়েছে , এই সাবেক বিচারপতি আব্দুল কাদের আওদাহও তা থেকে রেহাই পাননি।
সামরিক আদালতের সামনে তিনি এরূপ জবানবন্দী দেন, মিশরে শহর ঊড়িয়ে দেবার এবং মিশর সরকারকে উতখাত করার নিমিত্তে ডিনামাইট -গোলাবারুদ- স্টেনগান ও বন্দুক সংগ্রহ করে গোপনভাবে রাখার যে কথা বলা হয়েছে তার সবকিছু কর্নেল নাসের কতৃক ইখওয়ানকে দেয়া হয়েছিলো। ইখওয়ান এগুলো সুয়েজ খালকে ইয়াহুদিদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য আমানত হিসেবে নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছিলো। এ ব্যাপারে কর্নেল নাসের খুব ভালোভাবেই অবগত।
এরপর তাকে ফাসির হুকুম শোনানো হয় প্রহসনের ট্রাইব্যুনাল থেকে, তিনি তখন হযরত খোবায়েব রাঃ এর সেই বানীই ঘোষণা করেন, আমি কেন মরতেছি এবং কোথায় মরতেছি সে চিন্তা আমার নাই, আমি যে মুমিন্ রূপে মৃত্যুবরণ করতে পারতেছি সে জন্যই আমি আনন্দিত।
0 comments: