আমিনা কুতুব : এক বিপ্লবী রমণীর বেহেশতি মুখ

কে ছিলেন আমিনা কুতুবঃ
মিসরের ইসলামি পুনুর্জাগরণের অন্যতম পুরধা ছিল কুতুব পরিবার। এই পরিবারের বড় ভাই সাইয়েদ কুতুব ছিলেন ইখওয়ানুল মুসলিমূনের পথিকৃতদের একজন। জামাল আব্দুল নাসেরের হাতে তিনি নির্মম ভাবে শহীদ হয়েছেন। তার আরেক ভাই মুহাম্মাদ কুতুব এখনো জীবিত, এবং লেখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দুইবোন তাদের, হামিদা কুতুব এবং আমিনা কুতুব।

আমিনা কুতুব মিসরের আসিয়ূতের মুশা নামক গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন পিতা কুতুব ইবরাহীমের সব চাইতে ছোট মেয়ে। ফলে কুতুব ইবরাহীম যখন ইন্তেকাল করেন, তার বয়স এতই কম ছিল যে, বাবার চেহারাটাও তার মনে পড়তোনা। বাবার ইন্তেকালের পর কুতুব পরিবার কায়রোতে চলে আসেন। এখানে মায়ের আদরে আর বড় দু'ভায়ের তত্বাবধানে বড় হতে থাকেন তিনি। একাডেমিক লেখা পড়া আমিনা কুতুবের তেমন একটা হয়নি, কারন স্কুলের চৌহদ্দিকে তিনি কারাগারের মত মনে করতেন। ফলে বাসায় বসেই তার পড়া লেখা চলতো। এ পরিবারের ঘরটা ছিল স্কুলের মতই। আশ-পাশের ছেলে মেয়েরা এই বাড়িতে আসত ইসলাম সম্পর্কে পড়ার জন্য। তাদের সাথে আমিনা কুতুব এক সুন্দর ইসলামি স্কুলে পড়া শুনা করতে লাগলেন। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া ইসলামি জ্ঞান, দু'ভায়ের কাছ থেকে পাওয়া সাহিত্য ও কাব্য এবং আজন্ম অধ্যাবসায় তাকে মিসরের পরিচিত কবি ও গল্পকারের আসনে ঠাঁই করে দেয়। আরবি ভাষায় তার ছিল দারুন দক্ষ
তা। কবিতা লিখতেন সাবলিল গতিতে। তবে তার ঈমান ছিল খুবই মজবুত। ফলে সাহিত্যের সাথে গতিপথ রচনা করতে যেয়ে তিনি ইসলামের পথহারা হননি কখনো। বরং ইসলামী আন্দোলনের তিনি ছিলেন একজন জাগ্রত সিপাহী।

এক অদ্ভুত বিয়েঃ
বিশ বছর বয়সে আমিনা বিয়ে করেন কামাল আল-সানানিরী নামক এক মুজাহিদকে/ কামাল ছিলেন মিসরের ইখওয়ানুল মুসলিমুনের প্রথম সারির একজন নেতা। তার জ্ঞান গরিমা, শিক্ষা দিক্ষা ও আল্লাহর উপর আস্থা ছিল ঈর্ষণীয়। ইখওয়ানের বলিষ্ঠ নেতা হওয়ার অপরাধে জামাল আব্দুল নাসেরের সামরিক সরকার ১৯৫৪ সনে তাকে ফাঁসির নির্দেশ দেয়। পরে অবশ্য সমালোচনার মুখে বা অন্যকোন চাপে নতি স্বীকার করে এই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিলেও তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করে। পাঁচ বছর কারাগারের অত্যাচার তার দেহ ক্ষত বিক্ষত করে দেয়, ফলে এক মানবিক আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার তাকে কারা হসপিটাল 'লিমান তুররা' থেকে চিকিৎসা গ্রহনের দূর্লভ সুযোগ করে দেয়। চিকিৎসা গ্রহনের সময় ঘটনা ক্রমে সাইয়েদ কুতুবের সাথে একই কেবিনে থাকার সুযোগ পান তিনি।

এই সময় একদিন আমিনা কুতুবকে কামাল দেখতে পান ভায়ের সাথে কথা বলতে। তার কথা বার্তায় ও স্বভাব চরিত্রে বিমোহিত হন কামাল। অনেক ভেবে চিনতে, ইস্তেখারা করে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে সাইয়েদের কাছে আমিনার সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। কামালের যোগ্যতা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিলনা বড়ভাই সাইয়েদের। তারপরও এই প্রস্তাব তিনি আদরের ছোট বোনের কাছে উপস্থাপন করেন এবং এ নিয়ে ইস্তেখারা করার পরামর্শ দেন। টানা কয়েক দিন ইস্তেখারা করার পর আমিনা মা, দু'ভাই ও বোন কে জানায়ে জানায়ে দেন এই অদ্ভুত বিয়েতে তার অনাপত্তির কথা। সবাই জানত যাবজ্জীবন কারাদন্ড মানে পঁচিশ বছর কারাবাস। কিন্তু ইস্তেখারায় যেহেতু ইতিবাচক ইংগিত পেয়েছেন তিনি, তাই এই কারাগারের প্রকোষ্ঠে থাকা মুজাহিদ কামালকে স্বামী হিসাবে গ্রহন করতে দ্বিধা করলেন না। বিয়ের পর অপেক্ষা করতে থাকেলেন বিশটি বছর পার কবে দেখা হবে প্রেয়সী স্বামীর সাথে। বিরহের এই সময় যদিও ছিল আমিনার জীবনে খুবই দুঃসহ দিন, কিন্তু দাওয়াতী যেন্দেগীর সাথে দ্বিগুন তৎপরতার মাধ্যমে সে ব্যাথা উপশম করার প্রয়াস পেতেন। বেদনার দগ্ধ ক্ষতে হাত বুলাতে ধীরে ধীরে আসতে শুরু হল সুরের উর্বশীরা; সেই সুরের মূর্ছনা ফুটে উঠলো তার লেখা কবিতা ও গীতিকাব্যের অন্তঃসলিল প্রবাহে। কলম ধরলেন আমিনা। লিখতে থাকলেন অনিরূদ্ধ কবিতা আর সুন্দর সুন্দর ছোট গল্প। স্বামী ও বড় ভায়ের সাথে দেখা করতে যেতেন তিনি প্রতি সপ্তাহে, আর ফিরে আসতেন বুকভাঙ্গা ব্যাথা নিয়ে। তার ঐসব ব্যাথা পংতি হয়ে বেরিয়ে জমা হতে থাকত কায়রোর নাম করা 'আদাব', 'আদীব', 'আলাম আলআরাবি ইত্যাদি পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে।

এক অনির্বচণীয় সিদ্ধান্তঃ
সামরিক জান্তা ইখওয়ানের নেতা কর্মিদের ওপর অত্যাচারের স্টীম রোলার চালানোর জন্য তাদের কে মিসরের 'ক্বানা' কারাগারে স্থানান্তর করে। কায়রো থেকে অনেক দূরে ছিল এই কারাগার। একবার আমিনা তার ননদ কে নিয়ে স্বামী কামালের সাথে দেখা করতে যান। কথা বলার ক ফাঁকে ননদ তার ভাইকে দূরের এই কারাগারে আসতে তাদের দূর্ভোগের বর্ণনা করে। কামাল শুনে খুব ব্যাথা পেলেন। আমিনাকে একান্তে কাছে নিয়ে বললেনঃ "আমিনা! অনেক দিন হয়ে যাচ্ছে, ছাড়া পাচ্ছিনা, আর কবে যে ছাড়া পাব তারও কোন ঠিক ঠিকানা নেই। আমাদের বিয়ের সময় তোমাকে বলেছিলাম, এই তো কয়টা দিন, আমরা একত্রে থাকতে পারব আর কদিন পরেই। কিন্তু এখনো বিশ বছর আমাদের দেরী করতে হবে, আমিনা! আমার মনে হয়, এত কষ্ট তোমাকে দেয়া ঠিক হবেনা। কারাগারের এই কঠিন প্রকোষ্ঠে আমার শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে হতে পারে। তাই, আমিনা, আমি বলি কি, তুমি জীবন পথে তোমার সাথে চলতে পারে এমন কাওকে স্বামী হিসাবে গ্রহন কর......... তোমার বিরহ যাতনা দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে............ তোমার সুখের কথা ভেবে আমার মনে হচ্ছে তোমার পথ তুমি বেছে নাও, আমিনা! আমিনা, স্বৈরাচার জামাল আমাদের সাথে আলোচনা করেছে, বলেছে আমরা যদি তাকে সাহায্য প্রতিশ্রুতি দেই, তবে আমাদের মুক্তি দেবে। আমাদের প্রাপ্য সম্মান বুঝিয়ে দেবে। আমিনা, আমি বলে দিয়েছি, আল্লাহ চাইলে তোমরা আমার সারা শরীর কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলতে পার, কিন্তু ওই রকম আশ্বাস আমার কাছে তোমরা পাবেনা। আমিনা, এখন ভেবে দেখ, আমি তোমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিচ্ছি......... তুমি ভেবে দেখ।"

আমিনা কথা শুরু করার সাথে সাথে কারার লৌহ কপাট বন্ধ করে দেয়া হয়। আমিনা বাড়ি ফিরে স্বামীকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে কবিতার ভাষায় এক লম্বা চিঠি লেখেন। আরবি সাহিত্যের ইতিহাসে অমন রোমান্টিক চিঠি আমি খুব কম পড়েছি। চিঠির শেষ পংক্তি টি এমনঃ

নিরন্তর পথ চেয়ে বসে আছি, শুধু তোমার জন্য
না হয় সে পথ হোক জিহাদের, লাল পথ ধরে
পায়ে পায়ে যাই চল জান্নাতের দ্বারে,
জান যায় যাক, সেই ওয়াদার খাতিরে
ভয় কি? লজ্জা কি? কিসের বা বেদনা আমার?

কারাগারে রাতদিনঃ
বড় ভাই সাইয়েদ কুতুব ছিলেন বিশ শতকের অন্যতম ইসলামি ব্যক্তিত্ব। তার খুরধার লেখনির প্রভাবে মিসরের সমাজ বিপ্লব যখন অনিবার্য হয়ে উঠতে ছিল, ঠিক তখনি তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে জামালের সামরিক সরকার।১৯৫৪ সনে তাকে অন্যান্য ইখওয়ানের নেতাদের সাথে আটক করে চালায় অত্যাচারের স্টীম রোলার। ইরাকের তদকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম আরিফের প্রচেষ্টায় জামাল আব্দুল নাসের ১৯৬৪ সনে সাইয়েদকে মুক্তি দেয়। কিন্তু মাত্র আট মাস পরে সরকার পতনে শ্রমিক আন্দোলনে ইন্ধন যোগানোর মিথ্যা অজুহাত তুলে সরকার আবারো তাকে বন্দি করে। এবারে শুধু সাইয়েদকে নয়, বন্দি করা হয় গোটা কুতুব পরিবারকে। আমিনা কুতুবকে কারাগারে অবর্ণনীয় অত্যাচার করা হয়। অবশেষে ১৯৬৬ সনের ২৯শে আগস্ট সাইয়েদ কে ফাঁসি দেয় সরকার এবং কুতুব পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মুক্তি দেয়।

মুক্ত জীবন পেলেও আমিনার মনে শান্তি ছিলনা এক রত্তিও। কারাগারের দুঃসহ জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, বড় ভাই হারানোর বেদনা ও কুতুব পরিবারের উপর সরকারের কালো থাবা, সর্বোপরি স্বামী ছাড়া নিঃসংগ জীবন তার কাছে যেন এক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এ সত্বেও একদিনের জন্যও তিনি বিশ্রুত হননি ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে সময় দিতে। সে সাথে চালায়েছেন কলম যুদ্ধ; লিখেছেন কবিতা, ইসলামি সংগীত ও ছোট গল্প।

সাইয়েদ কুতুবকে নিয়ে তার অনেক গুলো কবিতা আছে। শাহাদাতের পরের দিন লেখা তার কবিতাটি এরকমঃ

কথা বলো ভাই, বলতে যেমন আগে
আমার ব্যাথার নৈবদ্য তুমি দেখ
বেদনার নীল পান্ডুর আভা দেখ
তোমার যাওয়ার শেষ রেখাটিতে শোন
দীর্ণ কলিজার তার ছিড়ে যাওয়া সুর।
*********
*********
ঘুমাও আমার প্রিয় ভাইটি আহা
আর কেও তব পথে হবে নাকো বাঁধা
ব্যথিত, তবুও সংগ্রামে তৎপর
গুড়িয়ে দেব জালিম স্বৈরাচার

গত ১৮ই জিলহাজ্জ ১৪২৭ হি মুতাবিক ৭ই জানুয়ারি ২০০৭ রবিবারে সন্ধ্যায় চির নিদ্রায় শায়িত হলেন কুতুব পরিবারের আরেক সংগ্রামী মুখ আমিনা কুতুব।


দুদিনের সংসারঃ
দীর্ঘ বিশ বছর কারা ভোগ করে কামাল মুক্তি পায় ১৯৭৩ সনে। সেতো আর মুক্তি ছিলনা, ছিল ধুলার ধরায় স্বর্গ রচনার নির্মল প্রয়াস। আমিনা ও কামাল জুটি লাভ করে জীবনের সব চেয়ে আনন্দের ক্ষন। সংসার পাতে তারা। কিন্তু ওদের সংসার বলতে কি আর অন্যদের মত হয়? এই বিমল আনন্দের মাঝেও তাদের আসল দ্বায়িত্ব ভুলেন নি ওরা। দুইজনই তো ইসলামি আন্দোলনের সংগ্রামি মিছিলের অগ্র সেনানী। পুরোদমে তাই দাওয়াহ এর কাজ চালিয়ে যেতে থাকলেন দু'জন। আর সেই জন্যই দিতে হল চরম মূল্য।

১৯৮১ সালের এক সন্ধ্যায় স্বামী কামালকে আবারো বন্দি করে সরকার। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হলো। তিনি নাকি সোভিয়েত রাশিয়াকে ধ্বংশের ষড়যন্ত্র করছেন। এর জন্য তিনি নাকি আফগান যুদ্ধে যাচ্ছেন। ক'দিনের জন্য গড়ে ওঠা এই ছোট্ট আনন্দময় সংসার আবার নেমে এল শোকের অপছায়া। আমিনার জীবনে নেমে আসে এক দুঃসহ স্মৃতির করুনতম অধ্যায়। তিনি নিজে শুধু না, তার আশে পাশের কেও আশা করতে পারেনি, মানুষের জীবনে এমন দুঃখ আসতে পারে, বা জীবন এতটা বেদনা দায়ক হতে পারে কিংবা সোনার সংসার এভাবে পুড়তে পারে। অল্প ক'দিনের মধ্যেই সামরিক কোর্টে কামালের বিচার শুরু হয়। বিচারে কামালের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়েই সরকার তাকে ফাঁসি কাষ্টে ঝুলিয়ে শহীদ করে ফেলে। ১৯৮১ সনের ৬ই নভেম্বরের ভোর বেলা থেকে শুরু হলো আমিনা কুতুবের বৈধব্যের জীবন। তিনি হয়ে গেলেন ঘটনার আকর্ষিকতায় নির্বাক। বেদনায় নীল হয়ে গেলেন তিনি, হয়ে গেলেন স্বপ্নভাঙ্গা এক আহত কবি, জীবনের গতি যার হয়ে গেল শ্লথ, মৃত্যু কামনা ছাড়া তার সামনে থাকলো না কিছুই। ইসলামি আন্দোলনে কাজ করতে যেয়ে মানুষের জীবন এমনও হয়? সাহাবাদের ইতিহাস যেন আবারো ফিরে এল মিসরের মরুভূমিতে।

কামাল যেদিন শহীদ হন, সারা রাত আমিনা ঘুমাতে পারেননি। শোকে, ব্যাথায় বিহ্বল আমিনা সেদিন তার শহীদ স্বামীর কেছে লেখেন এক চিঠি। আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় সে চিঠিটাই আরবি সাহিত্যের এক আমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে একদিকে বেদনার ভারে নুয়ে পড়া এক মুজাহিদের আর্তচিৎকার যেমন ধ্বনিত হয়েছে, অন্যদিকে প্রত্যয়ের এমন এক সুর সেখানে আমরা শুনতে পাই যার তুলনা আমিনা কুতুব নিজেই।

তিনি লিখেছেনঃ
"এই চিঠি তোমার জন্য। হ্যাঁ, আমি তোমার কাছেই এই গভীর রাতে লিখছি...... মনে আছে আমার কথা, আমাকে ছেড়ে তুমি চলে গেছ, আর ফিরে আসনি। আমার এ লেখা তোমার কাছে এমন চিঠি যা তুমি কখনোই দেখবেনা, কখনোই তুমি তা পড়বেনা... আর কোনদিন তুমি তার উত্তরও দেবেনা। এতসব জানার পরেও আমি তোমাকে লিখছি...... আমার অশ্রুর বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পরেও আমি লিখছি।
জানি তুমি ফিরে আসার জন্য এবারে চলে যাওনি... আমার মন বলেছিল তুমি আর ফিরে আসবেনা। কিন্তু জালিমেরা আমার সাথে শেষ কথা বলার সুযোগও তোমাকে দেয়নি। আমি জানি তুমি এখন তোমার সেই ঘরের মাঝে বসে আছ, যেখানে থাকার জন্য আমাকে কত স্বপ্ন দেখাতে, আর নিজে কত সংগ্রাম করতে।
আমার চিঠি লেখা সেই জন্য। তোমাকে কি এমন সফলতার জন্য স্বাগত জানাতে হবেনা? আমি লিখছি কেন জান? অনেক কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে, অনেক বেদনা সয়ে সয়ে, আমার এই মাথাটা আবার তোমার কোলে রাখতে চাই...... আমার এই চিঠিটা অশ্রুভেজা বলে যদি না পড়তে পার, আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তোমার কাছে হেঁটে হেঁটে যাওয়ার জন্য আমাকে একা ফেলে গেছ তো, তাই একটু কানছি... এ কান্না বিরহ ব্যথায়, এ কান্না তোমাকে পাবার আশায়......"

আমি তো বলেছি আমিনা ছিলেন একজন কবি। শুধু কবি নন, মিসরের মত স্থানে ভাল কবিদের মধ্যে তিনি গন্য। তবে তার সব লেখাই ছিল ইসলামের জন্য, ইসলামকে উপজীব্য করে। ফলে নিছক সাহিত্যের জন্য যারা সাহিত্য পড়তে চান, বা লিখতে চান, তাদের জন্য তিনি কিছুই করেননি। তার একটা শোকগাঁথা খুবই জনপ্রিয় নাশিদ হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। এটির প্রথম লাইনটি হলোঃ
هل ترانا نلتقي ام انها كانت اللقيا على ارض السراب
হাল তারানা নালতাক্বী আম আন্নাহা
কানাতিল লুক্বয়া আলা আরদিস সারাবি


এই নাশিদের কয়েকটি লাইন কাব্যানুবাদ নিম্নরূপঃ হবে কি আর দেখা আমাদের কখনো নাকি শেষ দেখা এ মরিচীকার দেশে? তারপরে সবি শেষ, নীলাভ্রে হারিয়ে শুধু আছে এই মনে বেদনা নিঃশেষে? এভাবে ব্যাকুল মন কতনা কথা কয় দেখিনা তোমাকে, স্বপনে সহসা দেখে মন বেদনায় কাঁদে ফেরে একেলা একটু চাই শুনিতে সুমধুর ওই কথা। ওগো দূর প্রবাসি ক্ষমা কর শেকওয়া দেখে তব স্বপনে কি করে খাকি হায় দেখ এই হৃদয়ে কত খুন ঝরিছে নিশিথে বুক ভাঙ্গে ঘন ঘোর কুয়াশায়। একেলা এ জীবনে কি করে চলিযে বলনা, ওই সুদুরে কিভাবে হায় যাব রাত যেন নয় সে কোন ভয়াল জলধী বিপদের ঢেও গুনে আর কতদিন রব। রাত পোহাবার কোন আশা আর দেখিনা আলো সব ঢেকেছে নিশিম এক আঁধারে তবু চলেছি আমি নারী যেমনি দু'জনে চলিতাম ঘন বন বাঁদাড়ে চলিব এ পথে সদা রেখে উঁচু শীর কথা ও কাজে দেখবেনা কভু ভয় ধমনির টগবগে খুন গেয়ে গেয়ে গান তোমারি পথ খুলে দেবে দেখ সু নিশ্চয়। আবু আফরা এর ব্লগ থেকে কপি

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম