রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য বা জামায়াত নেতা আল্ল্লামা সাঈদীর মূল পরিচয় নয়। জন্মভূমি বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে তাঁর পরিচয় তিনি পবিত্র কুরআনের খাদেম বা মুফাসসীরে কুরআন।
২০০৬ এর ৭ই অগাস্ট, লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা পত্রিকার ৪৭ পৃষ্ঠায় আল্ল্লামা সাঈদী সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাতে লেখা হয়েছে, 'পৃথিবীর প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষ বাংলাভাষায় কথা বলে। বাংলাভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে যিনি গত ৪০ বছর ধরে বিরতিহীনভাবে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছানোর কাজ করে যাচ্ছেন তিনি হচ্ছেন আমাদের কালের একজন বড় মাপের কুরআনের পন্ডিত আল্ল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
শুধু বাংলাভাষা বা বাংলাদেশের কথাই বা বলি কেনো, আমাদের ইতিহাসে খুব কম মানব সন্তানই সুদীর্ঘ ৪ দশক ধরে এই অবিস্মরণীয় জনপ্রিয়তার শীর্ষদেশে অবস্থান করার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছেন। এদিক থেকৈ গোটা বিশ্ব পরিমন্ডলে আল্ল্লামা সাঈদী একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। মাঠে ময়দানে, পত্র পত্রিকায়, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে, রেডিও টেলিভিশনে এক সুদীর্ঘকাল ধরে সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কুরআনের তাফসীর পেশ করার ক্ষেত্রেও আল্ল্লামা সাঈদীর বিকল্প কোনো ব্যক্তি আজকের মুসলিম বিশ্বে আছে কিনা সন্দেহ।' লন্ডনের সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত এ লেখাটি আরো দীর্ঘ।
আল্ল্লামা সাঈদীর পবিত্র কুরআনের খেদমতের সাক্ষী ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের সবুজ শ্যামল এই বাংলাদেশ। তিনি চট্টগ্রামস্থ প্যারেড ময়দানে প্রতি বছর দীর্ঘ পাঁচদিন ব্যাপী তাফসীর করছেন ২৯ বছর যাবৎ। সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রসা মাঠে ৩১ বছর, ঢাকায় ৩৩ বছর। রাজশাহীতে ৩০ বছর, খুলনাতে ৩০ বছর। এ ছাড়াও বাংলাদেশের এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে তিনি মাহফিল করেননি।
নিজ জন্মভূমি পিরোজপুরে যখন তিনি প্রবেশ করেন এখান কার হিন্দু-মুসলিম নর-নারী জাতিধর্ম- দলমত নির্বিশেষে তাঁর কাছ থেকে নসিহত শোনার জন্য, তাঁর কাছ থেকে দোয়া নেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষামান থাকেন। আল্লামা সাঈদীর এ আকাশ চুম্বী জনপ্রিয়তায় দিশেহারা তাঁর আদর্শিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তাই তাঁকে জনগণ থেকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী নানাবিধ অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে।
আল্লাহ তা'য়ালার অপরিসীম মেহেরবানীতে ষড়যন্ত্রকারীদের সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ। তার চাক্ষুষ প্রমাণ; যেখানেই আল্লামা সাঈদীর মাহফিল সেখানেই বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো জনতার ঢল, দেশে কি বিদেশে, এ দৃশ্য সমগ্র বিশ্বময়।
বিগত অক্টোবর ২০০৮ সালে দুবাইয়ের ন্যাশনাল ঈদ গ্রাউণ্ডে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হোলি কোরআন এ্যাওয়ার্ড কমিটি কর্তৃক আয়োজিত আল্লামা সাঈদীর বিশাল মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই মাহফিলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আরব আমিরাতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শায়খ মোহাম্মাদ বিন রাশেদ আল মাকতুম। মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এটি ছিলো উল্লেখযোগ্য গণজমায়েত। উপস্থিত অর্ধলক্ষাধিক দর্শক- শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিলো 'পবিত্র কোরআনের বিজ্ঞানময় মু'জিজা'। দুবাই সরকার তাঁর দুই ঘন্টার উক্ত বক্তব্য সিডি, ভিসিডি করে বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। অনুরূপ মাহফিল হলো সাউদী আরবের রাজধানী রিয়াদে। জেদ্দা, তায়েফ, দাম্মাম এবং পবিত্র মক্কা- মদীনায়।
একই ধরনের মাহফিল হলো গ্রীসের রাজধানী এথেন্স নগরীর আলেকজান্দ্রা ষ্টেডিয়ামে, ইটালীর রাজধানী রোমে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে, স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে, পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে, জার্মানীর রাজধানী ফ্রাঙ্কফুটে, জাপানের রাজধানী টোকিওতে, কোরিয়ার রাজধানী সিউলে, অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়, মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে, থাইল্যাণ্ডের রাজধানী ব্যাংককে, সিঙ্গাপুরে, ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং কুুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবগুলো দেশে।
আল্লামা সাঈদীর মাহফিলে অগণিত জনতার উপস্থিতির দৃশ্য সেসব দেশের টিভি চ্যানেলগুলোয় সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে। একই ধরনের মাহফিল হয়েছিলো আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সামনে ৪২ নং সড়কে (এমলর্রহ ্রণডমভঢর্ ্ররণর্ণ) এবং আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনসহ উক্ত দেশের ২২টি অঙ্গরাজ্যে। ইউরোপের ইংল্যাণ্ডের রাজধানী লণ্ডনসহ গ্রেটবৃটেনের প্রায় সবগুলো শহরে তিনি বিগত ত্রিশ বছর ধরে মাহফিল করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১১টি দেশে তিনি সফর করেছেন। এভাবে দক্ষিণ গোলার্ধের অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণ ইউনিভার্সিটিতে, উত্তর গোলার্ধের কানাডার টরেন্টো ও মন্ট্রিয়েল ইউনিভার্সিটিসহ পৃথিবীর পাঁচটি মহাদেশের অন্তত অর্ধশত দেশে তিনি মাহফিল করেছেন। ১৯৯১ সনে আমেরিকার পেনসিলভিনিয়া ইউনিভার্সিটি অডিটোরিয়ামে ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে মাওলানা সাঈদীকে 'আল্লামা' খেতাব প্রদান করা হয়।
'৮০ এবং ৯০ এর দশকে সাউদী বাদশাহ ফাহাদ বিন আব্দুল আযীয আল্লামা সাঈদীকে রাজকীয় মেহমান হিসেবে দুইবার হজ্জ করিয়েছেন। ১৯৯১ সনে ইরাক- কুয়েত যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে মক্কা শরীফে একটি মিমাংসা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্বের চারশত স্কলারদের দাওয়াত দেয়া হয়; সাউদী বাদশাহ উক্ত বৈঠকেও আল্লামা সাঈদীকে রাষ্ট্রীয় মেহমান হিসেবে উপস্থিত রেখেছিলেন।
দেশে-বিদেশে ইসলামের পক্ষে সকল শ্রেণীর মানুষের অভূতপূর্ব এ গণজোয়ার দেখার পর থেকেই আল্লামা সাঈদীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ইর্ষান্বিত হয়ে দেশী-বিদেশী মিডিয়াগুলোকে ব্যবহার করে তাঁর বিরুদ্ধে কাল্পনিক অভিযোগের ঝড় তোলে।
তাঁর বৈজ্ঞানিক যুক্তিভিত্তিক, তথ্য নির্ভর আকর্ষণীয় আলোচনায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর মাহফিলে পঙ্গপালের মতো ছুটে আসে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, জাতি-ধর্ম দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী ও পেশার অগণিত মানুষ। আল্লামা সাঈদীর মাহফিলে শুধু মুসলমানগণই অংশ গ্রহণ করে না, অসংখ্য অমুসলিম নারী পুরুষ তাঁর মাহফিলে অংশ গ্রহণ করে ইসলাম কবুল করেন। দেশে-বিদেশে এ পর্যন্ত সহস্রাধিক অমুসলিম আল্লামা সাঈদীর হাতে ইসলাম কবুল করেছেন।
ইসলামী জীবনাদর্শ যাদের পছন্দ নয় বরং অসহ্য, তারাই দেশে-বিদেশে পরিচিত সমাদৃত ও শ্রদ্ধেয় আল্লামা সাঈদীকে জনবিচ্ছিন্ন করার হীন উদ্দেশ্যে তাঁকে রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী ও সবশেষে যুদ্ধাপরাধী বানানোর লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বহুমুখী ষড়যন্ত্রের নীল নকশা অনুযায়ী প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এসব জঘন্য ষড়যন্ত্র মাকড়সার জালের মতো ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে ইন্শাআল্লাহ। দেশ প্রেমিক শন্তিকামী দ্বীন দরদী অসংখ্য মুসলিম নরনারী মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে বিনয়াবনতভাবে একাগ্রচিত্তে সে দোয়াই করছে।
আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, আমত্মর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ধর্ম প্রচারক, পবিত্র কোরআনের তাফসীরকারক বিপুল ভোটে দুই-দুই বার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আজ মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় আসামী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! যে লোকটি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন ১৯৭৪ সালে এবং ১৯৭১ সালে শামিত্ম কমিটি, রাজাকার আলবদর বাহিনী - কোনটার সাথেই যার কোন সংশিস্নষ্ঠতা ছিল না, সেই লোকটিকে আজ গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিকান্ড ও লুন্ঠনের মত জঘন্য অপরাধের অভিযোগে চরম শাসিত্ম মৃত্যুদন্ড দেয়ার পায়তারা ও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কেন এই ষড়যন্ত্র? কেন আওয়ামীলীগ সরকার ও বিভিন্ন মিডিয়া মাওলানা সাঈদীকে ফাঁসি দেয়ার জন্য ইতিহাসের নজিরবিহীন মিথ্যাচার চালাচ্ছে?
মাওলানা সাঈদীকে ওদের কেন এত ভয়?
মাওলানা সাঈদীকে ভয় করার কারণ হচ্ছে তার আকাশ চুম্বি জনপ্রিয়তা ও যাদুকরী বক্তৃতা প্রদানের যোগ্যতা। তাঁর তাফসীর ও ওয়াজ মাহফিলে হাজার হাজার লোক সমবেত হয় এবং তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে। এ পর্যমত্ম দেশ ও বিদেশে ১,০০০ এর বেশি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান তাঁর ওয়াজ শুনে মুসলমান হয়েছে, এদের মধ্যে নিউইয়র্কের এটর্নি অব ল যোসেফ গ্রোয়ে অন্যতম এবং হাজার হাজার মানুষ হৃদয়ের প্রশামিত্ম ও সঠিক পথের দিশা পেয়েছেন। তাঁর তাফসীর ও ওয়াজের সিডি, ডিভিডি, ভিডিও সহ অডিও ক্যাসেট সমগ্র পৃথিবীতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের হোটেল-রেঁসেত্মারা, দূরপালস্নার বাস ও ছোট চায়ের দোকানেও তাঁর ক্যাসেট বাজানো হয় এবং মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মত তা শোনে।
তিনি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের অর্ধশত দেশে আমন্ত্রিত হয়েছেন। অক্সফোর্ড, ক্যামব্রীজ, ওকলাহামা, ইউস্টন, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া সহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ইসলামিক মিশন অব বৃটেন এর নিমন্ত্রণে বার্মিংহাম গ্রেট হলে আমত্মর্জাতিক সীরাত মাহফিলে ৯০ মিনিট বক্তৃতা রাখেন। এ ছাড়াও দুবাইতে তিনি দুবাইয়ের শাসক ও প্রধানমন্ত্রী রাশেদ আল মাখতুমের আমন্ত্রণে দুবাই ঈদগাহ্ ময়দানে কুরআনের তাফসীর পেশ করেছেন। দী আরবের বিভিন্ন স্থানেও তিনি তাফসীর পেশ করেছেন বহুবার। তিনি যখন যে দেশে গিয়েছেন সেখানে মিডিয়া হয়েছে তৎপর। আমেরিকা সফরের সময় ভয়েস অব আমেরিকা এবং বৃটেন সফরকালে বিবিসি বাংলা তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে এবং প্রচার করে।
১৯৮৬ সালে তিনি ইসলামিক সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা এর দাওয়াতে আমেরিকার ১২টি অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে বক্তব্য পেশ করেন। একই বছর মাওলানা সাঈদী অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও বৃটেন সফর করে বিভিন্ন মাহফিলে কুরআনের তাফসীর পেশ করেন। ১৯৯০ সলে মাওলানা সাঈদী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংকিং সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৯১ সালে ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ চলকালীন সময়ে মক্কা শরীফে একটি মীমাংসা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় মেহমান হিসেবে মাওলানা সাঈদী উক্ত মীমাংসা বৈঠকে উপস্থিত হয়ে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। এই বছরই ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা তাঁকে ‘আলস্নামা’ উপাধিতে ভূষিত করে।
১৯৯৩ সালে মাওলানা সাঈদী সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রধানমন্ত্রী ও দুবাই শাসকের আমন্ত্রণে দুবাই সফর করেন।
প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ‘‘দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হলি কুরআন এওয়ার্ড’’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রোতার সামনে তিনি বক্তৃতা করেন যা দুবাই টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে।
ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইসলামী প্রতিষ্ঠান হলো লন্ডন মুসলিম সেন্টার (এল এম সি)। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ বিশাল মসজিদ ও কমপেস্নক্সের অর্থ সংগ্রহে তিনি প্রত্যক্ষ অবদান রাখেন। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম শায়েখ আব্দুর রহমান আস-সুদাইসির সাথে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও সেখানে আমন্ত্রিত হন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং মাওলানা সাঈদী
স্বাধীনতা যুদ্ধে মাওলানা সাঈদীর সামান্যতম নেতিবাচক ভূমিকাও ছিল না। যুদ্ধ চলাকালে পাকিসত্মানের পক্ষে যে সব দল তৈরী হয়েছিল, যেমন রাজাকার, আলবদর, আল-শামস, শামিত্ম কমিটি এ সবের কোন কিছুতেই তিনি জড়িত ছিলেন না। পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধারা এ সবের স্বাক্ষী। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাত্র দুই মাস সাত দিন পর ১৯৭২ সালের ২২ ফেব্রম্নয়ারী মাওলানা সাঈদী তাঁর নিজের জেলা পিরোজপুর শহরে সীরাত মাহফিলে ওয়াজ করেন। এরপর থেকে সমগ্র দেশব্যাপী ও বিদেশে একটির পর একটি মাহফিলে আমন্ত্রিত হতে থাকেন।
১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর সহযোগি হিসেবে তিনি যদি নিজ এলাকায় অত্যাচার করে থাকেন তাহলে সে এলাকারই জনগণ বিজয় দিবসের মাত্র ২ মাস সাত দিন পরে প্রধান অতিথি হিসেবে সীরাত মাহফিলে তাঁকে কিভাবে নিমন্ত্রণ করেছিল? এ অল্প দিনের ব্যবধানে লোকজন তাঁর অত্যাচারের কথা ভুলে গেল? একজন অত্যাচারী রাজাকারের মুখ থেকে এলাকার লোকজন কুরআন হাদীসের কথা শুনল? এ প্রশ্নগুলো প্রতিটি বিবেকমান মানুষকে নাড়া দেয়।
মাওলানা সাঈদী সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দীন আহমদ বলেন, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সাঈদী স্বাধীনতা বিরোধী, রাজাকার, আলবদর, আল শামস, শামিত্ম কমিটির সদস্য বা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। এ সবের তালিকায় কোথাও তার নাম নেই।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ম সেক্টরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম তালুকদার বলেন, আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, মাওলানা সাঈদীর বিরম্নদ্ধে দায়েরকৃত মামলা দুটির তত্ত্ব-উপাত্ত ও স্বাক্ষী সবই মিথ্যার উপরে প্রতিষ্ঠিত। কারণ, আমরা নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পিরোজপুরে হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগহণ করি ও পিরোজপুরকে শত্রম্নমুক্ত করি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৯ মাসই মাওলানা সাঈদী পাড়েরহাট বন্দরে আমাদের চোখের সামনেই ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতা বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী কোন ভূমিকা থাকলে তা আমাদের আগে বা আমাদের চেয়ে বেশী অন্য কারো জানার কথা নয়। তিনি স্বাধীনতা বিরোধী, রাজাকার, আলবদর, আল শামস, শামিত্ম কমিটির সদস্য বা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেই তাঁকে যুদ্ধাপরাধী বলা হয়েছে।
পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য, যুদ্ধকালীন কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী নূরম্নজ্জামান বাবুল বলেন, ‘৭১ সালে আমি সুন্দরবনে মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা করেছি। আমরাই পিরোজপুর শত্রম্নমুক্ত করেছি। ‘৭১ সালে পাড়েরহাট-জিয়ানগরের সব রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধীদের ধরে নিয়ে সুন্দরবনে হত্যা করা হয়।
মাওলানা সাঈদী যদি রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী হতেন তাহলে তার জীবিত থাকার কথা নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেটা আমারও দাবী। কিন্তু একজন নিরীহ, নিরাপরাধ আলেমকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।
এ ছাড়া পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী শেখ বাদশা, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বাহাদুর, মুক্তিযোদ্ধা গৌতম রায় চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক মুনান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বাতেন, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ খসরম্নল আলম খসরম্ন, মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট শেখ আব্দুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার রেজাউল আলম সানু, মুক্তিযোদ্ধা বেলায়েত হোসেন, র. আ. সালাম তালুকদার সহ প্রায় ৪৬ জনেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধা তাদের মমত্মব্যে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে মাওলানা সাঈদীর সামান্যতমও বিতর্কিত ভূমিকা ছিল না।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং কিছু কথা
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে মাওলানা সাঈদীর বিরম্নদ্ধে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষ একটি অভিযোগ প্রত্যাহার করে। মাওলানা সাঈদীর বিরম্নদ্ধে আনীত ১৯টি অভিযোগের একটি অভিযোগও প্রমাণের ন্যূনতম সাক্ষ্য প্রমাণ প্রসিকিউশন জোগাড় করতে পারেনি।
মাওলানা সাঈদীর বিরম্নদ্ধে যে সব অভিযোগে বিচার হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেঃ
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুর জেলার পাড়েরহাট বন্দর এলাকায় রাজাকার ও শামিত্ম কমিটি গঠনে নেতৃত্ব প্রদান।
পাড়েরহাট ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়, আওয়ামীলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনকে হত্যা, নির্যাতনে নেতৃত্ব প্রদান এবং এ সবে অংশগ্রহণ।
পাকিসত্মান আর্মি, রাজাকার এবং শামিত্ম কমিটির লোকজন নিয়ে পাড়েরহাট বাজারে হিন্দু সম্প্রদায়, আওয়ামীলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনের বাড়ীঘরে অগ্নি সংযোগ দোকানপাট লুটপাটে নেতৃত্বদান এবং সরাসরি অংশগ্রহণের অভিযোগ।
ভানু সাহা সহ বিভিন্ন মেয়েকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের উদ্দেশ্যে গ্রামের অনেক নারীদের পাকিসত্মান সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে তুলে দেয়ার অভিযোগ, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে নিজে জড়িত থাকাসহ এ সবে নেতৃত্ব প্রদান, পরিচালনা এবং পাকিসত্মান আর্মিকে এ সব অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করার অভিযোগ।
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাঈফ মিজানুর রহমানকে প্রকাশ্য আটকের ঘোষণা দিয়ে হাসপাতালের পিছন হতে মন্নাফের সহায়তায় গ্রেফতার করে আর্মিদের জিপে চড়ে বলেশ্বর নদীর ঘাটে যেয়ে সেখানে এসডিও ভারপ্রাপ্ত আব্দুর রাজ্জাক ও এসডিপিও ফয়জুর রহনাম আহমেদকে গুলি করে হত্যা করা ।
সাক্ষীদের অবস্থা ও বক্তব্য:
পিরোজপুরের তৎকালীন এসডিপিও ফয়জুর রহমান হত্যার সবচেযে বড় সাক্ষী এবং বিচারাপ্রার্থী হতে পারতেন তার স্ত্রী আয়শা ফায়েজ, পুত্র বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমদ, ড. জাফর ইকবাল, কন্যা সুফিয়া হায়দার ও জামাতা এডভোকেট আলী হায়দার খান। কিন্তু তারা কেউই সাক্ষী দিতে আসেননি। কারণ এই হত্যাকান্ডের সাথে মাওলানা সাঈদীর ন্যূনতম কোন সম্পর্ক আছে বলে তাদের জানা নেই।
ফয়জুর রহমানের স্ত্রী আয়েশা ফয়েজ তার স্বামী হত্যার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে আসামীদের নাম উলেস্নখ করে মামলা করেছিলেন। সে মামলায় আসামীদের তালিকায় সাঈদী সাহেবের নাম নেই। সেই মামলার নথি উপস্থাপন করা হয়নি। তিনি একটি বই লিখছেন ‘জীবন যেমন’ এই বইয়েও সাঈদী সাহেবের নাম নেই।
ড.জাফর ইকবাল বলেছেন, তিনি নিশ্চিত নন যে তার পিতার হত্যার সাথে মাওলনা সাঈদী সাহেব জড়িত। এ জন্য তিনি সাক্যষ্য দিতে আসেননি। তিনি পুলিশের কাছে বাসত্মবে কোন জবানবন্দিও দেননি।
ভাগিরথীকে হত্যার সাথে মাওলানা সাঈদীকে তারা জড়িয়েছে সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে। রাষ্ট্রপক্ষ ভাগিরথির ছেলে গনেশ সাহাকে হাজির করা সম্ভব নয় বলে আদালতে তথ্য দিয়ে তার পক্ষে লিখিত একটি বক্তব্যকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করিয়ে নেয়।
অথচ এই গনেশ সাহা ই মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে পরিষ্কার বললেন, তার মাকে সেনাবাহিনীর লোকেরা জিপে করে টেনে-হেঁচড়ে হত্যা করেছিল। এর সাথে সাঈদী সাহেবের সম্পর্ক নেই। তিনি তদমত্ম কর্মকর্তার কাছে কোন জবানবন্দি দেননি।
সেফ হাউস কেলেঙ্কারী
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের সময় চরম বিতর্কিত বিষয় ছিল ১৫ জন সাক্ষীর জবান বন্দি সাÿ্য হিসেবে গ্রহণের আদেশ। ট্রাইবুনালের এ আদেশের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি হিসেবে যে সব কারণ উলেস্নখ করেছিল তার মধ্যে ছিল মাওলানা সাঈদীর পক্ষের অস্ত্রধারীদের হুমকির কারণে কেউ কেউ আত্মগোপন করেছেন, কেউ নিখোঁজ, তিনজন গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে। এছাড়া একজনের স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে এবং বয়স ও অসুস্থতার কারণে মৃত্যুর ঝুকি রয়েছে। কিন্তু আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের (ঢাকায় যেখানে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের এনে রাখা হত) সংশিস্নষ্ট কাগজপত্র ট্রাইবুনালে দাখিল করেন।
সেইফ হাউজের ডকুমেন্টে কোন সাক্ষী কত তারিখে এসেছে, কত তারিখে কোথায় গিয়েছে, কোন ওয়াক্তে কি খেয়েছে তার বিশদ বিবরণ এতে রয়েছে। সেইফ হাউজের টেলিফোন বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর কালাচাঁন অন্য একটি মামলায় হাজিরা দিতে কোর্টে যান কয়টায় এবং কয়টায় ফেরেন তাও সেইফ হাউজের ডায়েরীতে আছে। এত বিশাল ডকুমেন্ট কারো পক্ষেই তৈরী করা সম্ভব নয়। একজন সাক্ষীকে তারা সেইফ হাউজে ৪৭ দিন পর্যমত্ম রেখে ট্রেনিং দিয়েছে। তারপরেও মিথ্যা বলাতে পারেনি বিধায় তিনি চলে গেলেন।
এসব সত্যেও প্রসিকিউশন এই ডকুমেন্ট অস্বীকার করে ১৫ জন অনুপস্থিত সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করে। আসলে এ সব সাক্ষী সরকারের শিখিয়ে দেয়া কথা বলতে রাজি হননি বিধায় তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে অপহৃত হন সুখরঞ্জন বালী যিনি রাষ্ট্র পক্ষের সাক্ষী ছিলেন। তিনি এসেছিলেন সত্য কথা বলতে কিন্তু কোর্টে উপস্থিত হবার পথেই সরকারী বাহিনী তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় । যার আজও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর ইতিহসে সাক্ষী অপহরনের এমন ঘটনা নজির বিহীন বলে মমত্মব্য করেন অনেক আইনজীবি ও দেশ বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাসমূহ।
আসলে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, ইসলামী আদর্শ ও ভাবধারা প্রচার ও সংরক্ষণে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপোষহীনতা, দৃঢ়তা এবং জনপ্রিয়তাই তাঁর জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশ ও জাতির এই ক্রামিত্মলগ্নে সাম্রাজ্যবাদের তাবেদার, দূর্নীতিবাজ ও জাতীয় সম্পদ লুন্ঠনকারী হাসিনা সরকারের এই নিষ্ঠুর রাজনৈতিক প্রতিশোধের বিরুদ্খেধে রূখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। আশা করি সত্যের জয় হবে।
0 comments: