ভয়ঙ্কর ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারচক্র : শাহবাগ এর নেতৃত্বে


তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে মত প্রকাশের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে ওঠা ব্লগকে একশ্রেণীর যুবক ইসলামের বিরুদ্ধে কুত্সা রটনার ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ধর্মদ্রোহী ও নাস্তিক যুবগোষ্ঠী মহান আল্লাহ, পবিত্র গ্রন্থ কোরআন, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.), ঈদ, নামায, রোজা ও হজ সম্পর্কে জঘন্য ভাষায় বিষোদ্গার করে মুসলমানদের ইমান-আকীদায় আঘাত হানছে। তাদের কুতসিত ও অশ্লীল লেখা পড়লে যে কোনো মুসলমানের স্থির থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি বিবেকবান অমুসলিমদেরও গা শিউরে ওঠার কথা। ব্লগে ইসলামী বিধান, রীতি-নীতিকে কটাক্ষ করা হচ্ছে প্রকাশের অযোগ্য ভাষায় এবং নবী-রাসুলদের কাল্পনিক কাহিনী ও মতামত লেখা হচ্ছে অবলীলায়। ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শুক্রবার রাতে মিরপুরে খুন হওয়া শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা আহমেদ রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা।




অবশ্য রাজীবের ব্লগে ইসলামবিরোধী লেখার লিঙ্কগুলো তার মৃত্যুর পর সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন আর ইন্টারনেটে ওইসব ধৃষ্ঠতাপূর্ণ লেখা পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি প্রচেষ্টায় এরই মধ্যে তাকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য এসব লিঙ্ক খুঁজে খুঁজে মুছে (ডিলিট) দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, থাবা বাবার লেখা নিয়ে যারা সমালোচনা করেছে ফেসবুকসহ সেই লিঙ্কগুলোও এরই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, গতকাল দৈনিক ইনকিলাব ‘ইসলাম মহানবীকে (স.) অবমাননা করে ব্লগে রাজীবের কুরুচিপূর্ণ লেখা’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট ছাপলে ইনকিলাবের ওয়েবসাইটের ওই লিঙ্কটিও ব্লক করে দেয়া হয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। তবে কেউ কেউ বলেছেন, তারা অনলাইনে ইনকিলাবের ওই সংবাদটি পড়তে পেরেছেন।
রাজীবকে অজ্ঞাত ঘাতকরা শুক্রবার রাতের অন্ধকারে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার পর জবাই করে হত্যা করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজীব হত্যার মোটিভ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হতে না পারলেও খোদ প্রধানমন্ত্রী ওই খুনের দায় জামায়াত-শিবিরের ওপর চাপিয়ে তাদের রাজনীতি বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এ খুন নিয়ে শাহবাগে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাকে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ’ হিসেবে অভিহিত করে প্রতিশোধ নেয়ার শপথ নেয়া হয়েছে। শাহবাগ আন্দোলনকারীরা রাজীব খুনের জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছেন। যদিও জামায়াত আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ‘ব্লগার রাজীব হত্যার সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার তারা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
এদিকে থাবা বাবা হিসেবে ব্লগে ইসলামবিদ্বেষী লেখক রাজীবের মৃত্যুর পর ব্লগার কমিউনিটিতে চলছে তোলপাড়। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।
ইন্টারনেট থেকে রাজীবের আপত্তিকর লেখা সরিয়ে নেয়ার আগে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ব্লগার থাবা বাবা ওরফে রাজীব মুসলমানদের ধর্ম ইসলাম ও প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদকে (স.) নিয়ে অনেক কুরুচিপূর্ণ লেখা ব্লগে লিখে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। আওয়ামীপন্থী কিছু ব্লগার এরই মধ্যে ব্লগে অভিযোগ করেছেন, ব্লগার থাবা বাবা ওরফে আহমেদ রাজীব হায়দারের নিজস্ব ওয়ার্ড প্রেস ব্লগ nuranichapa.wordpress.com ভুয়া। তবে এই ব্লগটা এখন আর নেই কেন এ প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। এই সাইটে ক্লিক করলে লেখা আসছে-nuranichapa.wordpress.com is no longer available
জানা গেছে, এই থাবা বাবা হলো www.dhormockery.net নামক ব্লগের নিয়মিত লেখক। এই সাইটটিও এরই মধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। অবশ্য যে কেউ এর cache copy দেখতে পারেন google.com এ। গুগল এ গিয়ে cache:www.dhormockery.com টাইপ করে enter চাপলেই লেখা আসছে- This is Google’s cache of http://www.dhormockery.com/. It is a snapshot of the page as it appeared on 16 Feb 2013 17:40:37 GMT. The current page could have changed in the meantime. Learn more....
অর্থাত্ গতকাল ১৬ ফেব্রুয়ারিতেই এই সাইটটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যেখানে এখন আর কোনো তথ্য নেই।
দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করে আসা ব্লগাররা ‘থাবা বাবা ওরফে আহমেদ রাজীব হায়দারকে ভার্চুয়াল ব্লগে বিচরণ করতে দেখেছেন বলে লিখছেন। গতকাল প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠাতেও লেখা হয়েছে, ব্লগার থাবা বাবা ওরফে আহমেদ রাজীব হায়দার www.amarblog.com এ নিয়মিত লিখতেন। এখানে সে ৩ বছর ১৩ সপ্তাহ ধরে লিখছে যা ব্লগে তার প্রোফাইল অপশন থেকে জানা গেছে। আমার ব্লগের এই লিংক- http://www.amarblog.com/thaba/posts/150478 এ (গতকাল পর্যন্ত শোভা পাচ্ছিল) গেলেও প্রমাণ মিলবে এই ব্লগার থাবা বাবা ওরফে আহমেদ রাজীব হায়দার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কি অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন।

রাজীব ‘নুরানী চাপা’ নামের একটি ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। সেখানে ‘মোহাম্মকের (মোহাম্মদ+আহাম্মক) সফেদ লুঙ্গি, ঈদ মোবারক আর ঈদের জামাতের হিস্টরি, ঢিলা ও কুলুখ, সিজদা, হেরা গুহা, ইফতারি ও খুর্মা খেজুর, সিয়াম সাধনার ইতিবৃত্ত, লাড়াইয়া দে, মদ ও মোহাম্মক, আজল’ ইত্যাদি শিরোনামে বেশ কিছু বিতর্কিত ব্লগ লিখেছে।
ফেসবুকেও ইসলামকে কটাক্ষ করে রাজীবের কিছু মন্তব্য : সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর Ahmed Rajib Haider ফেসবুক এ জয়েন করে। তার ফেসবুক আইডি- https://www.facebook.com/rha.rajib
২০১০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে সে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে, ১০ হাজার মানুষ হত্যার প্রামাণ্য অভিযোগ মাথায় নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর হত্যাবার্ষিকীতে মুসলমানদের ধর্মীয় উত্সব পালন কতটা মানবিক?’ (সম্ভবত এদিন মুসলমানদের ঈদের দিন ছিল)।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে লিখেছে, ‘সবাই তারেক-কোকো আর হাসিনা-খালেদার বিদেশে টাকা পাচারের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় করে ফেলছে... এদিকে প্রতি বছর সবার চোখের সামনে দিয়ে কয়েক লাখ হাজী যে মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা সৌদি আরবে ঢেলে দিয়ে আসছে সেটা কেউ টু শব্দটা করে না...!!’
২০১১ সালে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে সে মুসলমানদের নিয়ে কটাক্ষ করে লিখেছে, “মুসলিমদের ‘টেররিস্ট’ আখ্যা দেয়া অন্যায়, তাদের জন্য উপযুক্ত নাম হলো ‘সিরিয়াল কিলার’!”
আবার ২৮ অক্টোবর ২০১২ তারিখে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে, আমরা ঈশ্বর নামক কারও জারজ না... আমাদের বাবা-মায়েরা নিজেদের দৈহিক মিলনের মাধ্যমে আমাদের জন্ম দিয়েছে! আমার স্রষ্টা আমার জেনেটিক বাবা-মা, আমি তাদের সৃষ্টি। আবার আমি আমার সন্তানদের স্রষ্টা...তারা আমার সৃষ্টি!!! আর এই পুরো প্রকৃয়াটিতে বাবা-মায়ের বাইরে যদি কাউকে ধন্যবাদ দিতে হয়, সে হলো ধাত্রী অথবা ডাক্তার ও নার্স!
বিভিন্ন ব্লগে নিহত ব্লগার থাবা বাবার এরকম কয়েকটি লেখা যা হুবহু পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো :
ঈদ মোবারক আর ঈদের জামাতের হিস্টরি : খাদিজার হাতে ধরা খাইয়া মোহাম্মকের টানা একমাস খানা খাইদ্য সাথে দাসী বান্দী পুরাই অফ আছিল (সিয়াম সাধনার ইতিবৃত দ্রষ্টব্য) তার জেলখানার মেয়াদ শেষ হইতে না হইতেই এক দৌড়ে বাইর হইয়া সরাসরি পাবে জমজমে চইলা গেল। এতো দিনের না খাওয়া বান্দা তাই বেসামাল আরবি টানলো হাউশ ফুরাইয়া। তার পর তার সেই চিরাচরিত কাবাঘরের সামনের চত্বরে সাথে তার ইউজুয়াল ইয়ার-দোস্তরা। মোহাম্মক তো টাল স্বপ্নে উম্মেহানীর গুহায় ডুবসাঁতার কাটতে ডাইভ দিছে, আর তার পুরা একমাস ‘মোহাম্মক-মধু’ বঞ্চিত দোস্তরা তাদের কঠিন ইমান লইয়া মধুর ভাণ্ডের ওপর ঝাপায় পড়লো। সবাই আরবি খাওয়া ছিল, তাই টাল সামলাইতে না পাইরা কেউ কেউ মোহাম্মক মনে কইরা অন্যদের মধুও খাওয়া শুরু করলো। যথারীতি সকাল বেলা মোহাম্মক ঊর্ধ্বপোঁদে মধুদ্বার চেগায়া পইড়া থাকলো জ্বালাপোড়া ঠেকাইতে, আর তার পিছে তার ইয়ার দোস্তরা। কারণ টাল হইয়া কে যে কার মধু খাইয়া ফালাইছে তার হিসেব আছিল না, তাই সবারই পশ্চাদ্দেশ ব্যথা। এই দিকে খাদিজা বিবি শিবলি থুক্কু সুবেসাদিকে তার মুবারক নামক ভৃত্যের কাছে খবর পাইলো তার পাতিনবী পতিদেব কাবা ঘরের সামনে আরবি খাইয়া ইয়ারদোস্ত লইয়া পুন্দাপুন্দি করতাছে। কোনোরকমে তুপটা গায়ে জড়ায়া মুবারকরে লইয়া দিল দৌড়। তার যা মেজাজ তখন, হাতের কাছে থান ইট পাইলে মোহাম্মকের মস্তক শরীফ আস্তা থাকার কথা না। খাদিজা দৌড়াইতাছে, সামনে মুবারক দৌড়াইতাছে আর খাদিজা চিল্লায় চিল্লায় কইতাছে ‘মুবারক ইট, মুবারক ইট’, মানে মুবারকরে ইট নিতে কইতাছে মোহাম্মকের মাথা থ্যাতলানের জইন্য। কিন্তু তখনো তো পোড়া ইট আরবে ঢোকে নাই, তাই মুবারকও ইট খুঁইজা পায় নাই। এই দিকে চিল্লাপাল্লা আর খাদিজার ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দেইখা মানুষজনও তাদের পিছে পিছে যাওয়া শুরু করলো মজমা দেখতে। কিন্তু কাহিনী তো তারা জানে না, তারা শুধু শুনছে খাদিজা চিল্লাচ্ছে ‘ইট মুবারক, ইট মুবারক’!!!
কাবা প্রাঙ্গণে গিয়া দেখে মোহাম্মক আর তার পিছে সবাই লাইন ধইরা ঊর্ধ্বপোঁদে পজিশিত। মক্কাবাসীরে মোহাম্মক আগেই বুঝায় রাখছে যে ঐটা হৈল নামাজের সিজদা (সিজদা দ্রষ্টব) তাই তারা আসল কাহিনী ধরতে না পাইরা মনে করল ইটের দিন জামাতে সিজদা দেওন লাগে আর চিল্লায় চিল্লায় ইট মুবারক কওন লাগে! সেই থেকে একমাস না খায়া থাইকা পরের দিন ঊর্ধ্বপোঁদে নামাজ পরা আর ইট মুবারক বলার রীতি শুরু হইল, আর কালক্রমে শব্দবিচ্যুতির কারণে ইট হয়ে গেল ঈদ!

ঢিলা ও কুলুখ
‘বাবা মোহাম্মক তোমাকে যুদ্ধে যাইতে হইপে।”
‘কেনু কাক্কু?’
‘যুদ্ধে না যাইলে যে আমাগের না খাইয়ে মরিতে হইপে বাবা!’
‘আচ্ছা তবে যাইব। কিন্তুক আমাকে কোথায় খাড়াইয়া যুদ্ধ করিতে হইপে? সামনে খাড়ায় নাকি পিছনে?’
‘মনে করো সামনেই খাড়াইতে হইপে’
আমারে কি উষ্ট্রী দেয়া হইপে নাকি খাড়ার ওপরে পলাইতে হইপে? উষ্ট্রী দিলে কোন কথা নাই, কিন্তু খাড়ার ওপরে পলাইতে হইলে দুইখান কথা আছে।’
‘তোমাকে খাড়ার ওপরই পলাইতে হইপে।’
‘আমি যদি পলাইয়া মক্কা চলিয়া আসিতে পারি, তাহা হইলে কুনু কতা নাই, কিন্তু কাফেররা ধরিয়া ফেলিলে দুইখান কতা আছে।’
‘মনু করো তাহারা তোমাকে ধরিয়া ফেলাইপে’
‘কাফের রমণীরা আমাকে তাহাদের গনিমতের মাল বলিয়া ব্যাবহার করিপে নাকি আমার কল্লা কাটিয়া ফেলাইপে।’
‘কল্লাই কাটিল না হয়, তুমার যা সাইজ ইউজ কেউ করিপে না’!
‘আমাকে কাটিয়া শকুন দিয়া খাওয়াইপে নাকি কব্বর দিপে!’
‘তাকে কব্বরেই পাঠাবে রে বাবা!’
‘আমার কবর কি মরূদ্যানে দেবে নাকি মরুতে? মরুতে দিলে কতা নাই, কিন্তু মরূদ্যানে দিলে দুইখান কতা আছে!’
‘দরকার হইলে মি তুমাকে মরুত্থে তুলে নিয়ে মরূদ্যানে লইয়া আসিপ!’
‘কাক্কু কব্বরে কি খাইজুর গাছ লাগাইপে নাকি বাবলা বেরেক্ষ?’
‘বাবলা বেররেক্ষ হইপে বাবা!’
‘সেই বাবলা গাছে কি জ্বালানি কাষ্ঠ হইপে নাকি কাগজ?’
‘কাগজই হইপে’
‘কি কাগজ কাক্কু? লিখিপার জইন্য বেদাতী কাগজ নাকি টিস্যু’
‘টিস্যুই না হয় হইপে!’
‘সুরত মুছিপার টিস্যু কাক্কু, নাকি এস্তেঞ্জা করিপার?’
প্রশ্নবানে জর্জরিত কাক্কু আপদুল্লা বুঝিয়াছে বাস্তে মোহাআম্মক ভাগার তাল করিতেছে, তাই ক্ষেপেছে বে, ‘এস্তেঞ্জা করিপারই হইপে তোর মতো চুরাকে কি কেউ মাথায় করিয়া রাখিপে?’
‘তাহা হইলে কাক্কু সে টিস্যু কি পুরুষে ব্যবহার করিপে নাকি নারীতে?’
‘তুই কি তছলিমা নাসরীন যে নারী পুরুষে ভেদাভেদ করিয়া দিলি?’
তরুণ মোহাম্মক তাহার প্রশ্নবাণ শেষ করিবার আগেই কাক্কু তাহাকে চাক্কু দেখাইয়া যুদ্ধে পাঠাইয়া দিলো। কেই বা এমন প্যাচাল শুনিতে চায়! মোহাম্মকের সম্যক প্রশ্ন সত্ত্বেও তাহাকে যুদ্ধে যাইতে হইলো জীবনের শেষ পর্যন্ত তাহার যুদ্ধে মরিয়া নারীকূলের ব্যবহার্য টিস্যু হইবার ভয়ে কাটিয়াছে। তাই শেষ পর্যন্ত টিস্যু, মায় জলগ্রহণ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করিয়া ঢিলাকুলুখ ও পাত্থর ব্যবহারের রীতি প্রদান করিয়া তবে শান্তি পাইলো! সেই থেকে লিকুইড এস্তেঞ্জার পরে ঢিলাকুলুখ (এক্ষেত্রে নারীকূলের কথা ভাবা হয় নাই) ও সলিড এস্তেঞ্জার পরে ৫, ৭, ৯, ১১, ১৩ ইত্যাদি সংখ্যক পাত্থর ব্যবহার মুসলমানদিগের জন্য ফরজ হইয়া গেল

সিজদা
মোহাম্মক তাহার ইয়ার দোস্ত লইয়া প্রায়শই কাবা প্রাঙ্গণে আরবি খাইয়া (মদ বিশেষ) পড়িয়া থাকিত। মোহাম্মদ যখন বেহুঁশ হইয়া পড়িয়া রহিত, তখন তাহার ইয়ার দোস্তরা এই গোল্ডেন অপরচুনিটি মিস করিবে কেন? সবার তো আর উম্মেহানী নেই।
ইয়ার-দোস্তদিগের গোল্ডেন অপরচুনিটির শিকার হইয়া সুবে-সাদিকের সময় ঘুম ভাঙ্গিলে রেকটাম-প্রদাহের ঠ্যালায় মোহাম্মকের পক্ষে চিত-কাইত হইয়া শয়ন করা বাস্তবিক অসম্ভব হইয়া দাঁড়াইতো। তাই পশ্চাদ্দেশের আরামের নিমিত্তে সে ঊর্ধ্বপোঁদে রেকটামের স্ফিংকস্টার পেশি চেগাইয়া পড়িয়া থাকিত। এমতাবস্থায় কেউ দেখিয়া ফেলিলে চাপা মারিত যে, সালাত আদায় করিতেছে আর এই ভঙ্গিটির নাম সিজদা।
সেই হইতে মুসলমানের জন্য ঊর্ধ্বপোঁদে সিজদার প্রচলন শুরু হইয়াছে!

৪.
ইফতারি ও খুর্মা খেজুর
একদা মোহাম্মক তাহার ৩০০ মিলিওন বছরের পুরান পাবলিকা মডেলের গাধায় চড়িয়া দাফতরিক কাজে মক্কার উপকণ্ঠে বনি লুবর-ই-কান গোত্রের মরূদ্যানের দিকে যাইতেছিল। তাহার মেজাজ যাহারপরনাই খারাপ। যাতায়াতের নিমিত্তে খাদিজা বিবির ইম্পোর্টেড মডেলের লিমোজিন উষ্ট্রীটিকে সে পায় নাই। খাদিজা তাহাকে পতিত্ব দান করিয়া শরীরের অধিকার দান করিলেও দাফতরিক কার্যে কেরানি অবধিও পদোন্নতি দান করে নাই। মক্কার সর্বাপেক্ষা ধনী ব্যবসায়ীর পতি নবী হইলেও তাহাকে অদ্যাবধি সশরীরে মরুভূমিতে দুম্বা চড়াইতে যাইতে হয়। পদোন্নতি ঘটিবে এমন সম্ভাবনাও সুদূর পরাহত। ইকরা পাস করিলে পদোন্নতি ঘটার কথা, জেব্রাইলের উত্তম-মধ্যম খাইয়া ইকরা পাসও করিয়াছিল, কিন্তু খাদিজার ‘ইমতিহান’এ ফেল মারিয়া থোড় বড়ি খাড়াতেই রহিয়া গিয়াছে, খদিজা বিবি তাহার পদোন্নতি আটকাইয়া দিয়াছে।
আজকের ট্রিপটিতে মোহাম্মক নিজে না গিয়া সাকরেদ আবু বকরীকে পাঠাইতে মনস্থ করিয়াছিল, কিন্তু খাদিজা তাহার হস্তে ‘কনফিডেনশিয়াল’ কণ্টকখচিত খেজুরপত্রের আঁটি ধরাইয়া সব মাটি করিয়াছে। তাহার হেরা গুহায় গিয়া নাসিকায় উষ্ট্র চর্বির তৈল ঘষিয়া দিবানিদ্রার দ্বাদশ ঘটিকা বাজাইয়া দিয়াছে। তথাপি অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাহাকে বাহির হইতে হইলো। বাহির হইবার মুখে একবার মনস্থ করিল খাদিজা বিবির ইম্পোর্টেড শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চন্দ্রাতপ আঁটা উষ্ট্রীখানিকে যাতায়াতের নিমিত্তে লইয়া যাইবে, কিন্তু তাহার কিছু বলিবার আগেই খাদিজা বিবি তাহার হস্তে বসিবার গদিবিহীন পাবলিকা গাধার রজ্জু ধরাইয়া দিল। বনি লুব-ই-কান গোত্রের মরূদ্যানে যাইতে যাইতে এসব কথা ভাবিয়া খাদিজা বিবির চতুর্দশ গুষ্টির পিণ্ডি উদ্ধার করিতেছিল সে। কনফিডেনশিয়াল না ঘেচু। উষ্ট্রের গায়ে মর্দন করিবার উত্তম তৈলের একচেটিয়া কারবার বনি লুবর-ই-কান গোত্রের। সুদূর মেসোপটেমিয়া হইতে আমদানি করা বিশেষ কাস্তারি ব্র্যান্ডের তৈল না হইলে খাদিজা বিবির ইম্পোর্টেড লিমোজিন মডেলের উষ্ট্রীর গাত্র কুটকুট করে। তাই ঐ তৈল না হইলে হয় না। কিন্তু এবারের চালানে মক্কার কেন্দ্রীয় চুঙ্গীঘরকে গোপন করিয়া বেশ কিছু মিশরীয় উষ্ট্রী আসিয়াছে। তাই মক্কার মুসক বিভাগ তাহার পিছে পড়িয়া গিয়াছে উপযুক্ত মুসক আদায়ের লক্ষ্যে। কনফিডেনশিয়াল খেজুর পত্রে বনি লুবর-ই-কান গোত্রাধিপতিকে নির্দেশ প্রদান করা আছে যে, কয় অ্যাম্ফোরা তৈল খাদিজা বিবি ক্রয় করিয়াছে তাহা যেন কুরাইশ মুসক বিভাগের অ্যাম্ফোরা গণকদিগের এনকোয়ারিতে গোপন রাখা হয়, নইলে তাহারা অ্যাম্ফোরা গুনিয়া উষ্ট্রীর মুসক হিসাব করিয়া ফেলিবে।
মোহাম্মক বনি লুবর-ই-কান গোত্রের মরূদ্যানের নিকটবর্তী হইতেই দেখিল গোত্রাধিপতির তাম্বুর সম্মুখে মুসক বিভাগের চারিখানা উষ্ট্র দণ্ডায়মান। অ্যাম্ফোরা গণকেরা মোহাম্মকের পূর্বেই আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। এই অবস্থায় গাত্র ঢাকা দেয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নাই। খাদিজার খেজুর পত্র তাহাদের হাতে পড়িলে সমূহ বিপদ। কাকা আবু তালিব বিন আবদুল মুত্তালিবও তাহাকে উদ্ধার করিয়া আনিতে পারিবে না। মোহাম্মক গাধা ঘুরাইয়া আবার মক্কাভিমুখে রওয়ানা হইলো, কিন্তু ততক্ষণে মুসক বিভাগের গণকেরা তাহাকে দেখিয়া ফেলিয়াছে। কিন্তু ততক্ষণে মোহাম্মকও বেশ দূরে চলিয়া গিয়াছে। কিন্তু তাহার পাবলিকা গণকদিগের রেসিং উষ্ট্রের সহিত পারিবে কেন? তাই মোহাম্মক গাধা ঘুরাইয়া নিকটবর্তী পাথরের স্তূপের দিকে ধাবিত হইল। সেই স্থানে পৌঁছাইয়া মোহাম্মক তাড়াতাড়ি তাহার পাবলিকা গাধাটিকে একটি বৃহত্ প্রস্তরের আড়ালে লুকাইয়া নিজে একটি গুহায় গিয়া আত্মগোপন করিল। গণক বাহিনী চলিয়া গেলে সে বাহির হইয়া মক্ষা প্রত্যাবর্তন করিবে। কিয়ত্কাল পরে গণকেরা চলিয়া গেলে মোহাম্মক ধীরে ধীরে গুহা হইতে বাহির হইয়া বোকা গর্ধবটিকে লইয়া মক্কার পথে রওয়ানা হইল। একে তো কার্য সমাধা হয় নাই, তাহার ওপর পাবলিকা গর্ধবের পৃষ্ঠে কোনোরূপ গদি নাই। তাহার পশ্চাদ্দেশে গাধার মেরুদণ্ডের ভার্টিব্রা যেন খেজুর বিচির ন্যায় বিঁধিতে লাগিল। গর্ধবের চেনা পথ, তাহাকে পরিচালিত করিবার প্রয়োজন নাই বিধায় মোহাম্মক গাধার পৃষ্ঠে তন্দ্রাচ্ছন্ন হইয়া পড়িল।
মক্কার মূল পথে উঠিবার ঠিক পূর্বে একটি ক্ষুদ্র মরূদ্যান পার হইবার সময় হঠাত্ করিয়া একটি খেজুর ঝোপের আড়াল হইতে চারিখানা উষ্ট্র আসিয়া তাহার গতি রোধ করিয়া দাঁড়াইল। মোহাম্মক চমকিয়া উঠিল, সেই অ্যাম্ফোরা গণকের দল। তাহারা মোহাম্মককে তাহার তুপ (আরবীয় আলখাল্লা) ধরিয়া নামাইয়া মরূদ্যানের অভ্যন্তরে খেজুর পত্রের তৈরি একখানি নড়বড়ে কুটিরে লইয়া গেল। তাহার পর তাহাকে ভূমিতে ভূলুণ্ঠিত করিয়া খেজুর পত্রের রজ্জু দ্বারা উত্তম রূপে গ্রন্থিত করিয়া জেরা শুরু করিল, খাদিজা বিবি কয়খানা মিশরীয় উষ্ট্রী ইম্পোর্ট করিয়াছে। মোহাম্মকও বলিবে না, অ্যাম্ফোরা গণকেরাও ছাড়িবে না। প্রহর দেড়েক কাটিয়া যাইবার পরেও তাহারাদিগের প্রধান মোহাম্মকের নিকট হইতে কোনো বাক্য উদ্ধার করিতে না পারিয়া শেষে অধস্তন একটি সাকরেদকে নির্দেশ প্রদান করিল যে বাহিরে সবচাইতে বড় যেই ফল পাইবে, তাহাই যেন সত্বর লইয়া আসে। অধস্তন গণনাকারী কিছুক্ষণের মধ্যেই এক কাঁদি হরিদ্রা রঞ্জিত বৃহত্ খেজুর লইয়া হাজির হইল। মোহাম্মকের খেজুর দেখিয়াই ক্ষুধা চাগাইয়া উঠিল। যেই সে এই কথা বলিতে যাইবে, অধিপতি বলিল, ‘তুই আবু তালিব বিন মুত্তালিবের ভাতিজা বলিয়া আজ ছাড়িয়া দিতাছি, তথাপি পরবর্তীতে যেন কোনরূপ মুসক দানে অপারগতা প্রকাশ না করিস, তাই কিঞ্চিত্ আগাম সতর্কবার্তা দিয়া ছাড়িয়া দিতাছি।’ তাহার পর চার ষণ্ডা মিলিয়া আল্লার পেয়ারা নবীকে উপুড় করিয়া তুপ তুলিয়া একটা একটা খেজুর ভড়িতে শুরু করিল। মোহাম্মক খেজুর গ্রহণের তীব্র বেদনায় আর্তনাদ করিয়া উঠিল, তাহার পর সে অনুধাবন করিল যে, সে আসলে তাহার পাবলিকার পৃষ্ঠে তন্দ্রার ঘোরে দুঃস্বপ্ন দেখিয়াছে, আর তাহার পৃষ্ঠের ভার্টিব্রা তাহার পশ্চাদ্দেশে শক্ত খেজুরের ন্যায় খোঁচা মারিয়া যাইতেছে অনবরত।
তন্দ্রা ভাঙিয়া দুঃস্বপ্ন উপলব্ধি করিবার পরপরই সে দেখিল, সে গৃহের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। তড়িঘড়ি করিয়া পাবলিকা হইতে অবতরণ করিয়া অসার পশ্চাদ্দেশে হাত বুলাইতে বুলাইতে ভাবিল, তাহার নসিবখানা নিতান্তই প্রসন্ন যে, সে আরব ভূমিতে জন্মিয়াছে। নচেত্ বাঙ্গালদেশের কাঁঠাল, দাক্ষিণাত্যের নারকেল বা নিদেনপক্ষে পারস্যের আখরোট গ্রহণ করতঃ তাহার রেকটামের দ্বাদশ ঘটিকা বাজিয়া যাইত। তাই সে আরব ভূমিতে জন্মগ্রহণের নিমিত্তে আল্লাকে শুক্রাণু থুড়ি শুক্রিয়া আদায় করিয়া মুচকি মুচকি হাসিয়া ফেলিল। ঠিক এই সময় আবু-বকরী একঝুড়ি হরিদ্রা রঞ্জিত বৃহত্ খেজুর লইয়া খাদিজা বিবির গৃহদ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইল, উপরন্তু মোহাম্মককে আল্লার কাছে শুক্রিয়া আদায় অবস্থায় আবিষ্কার করিল। মোহাম্মকের শুক্রিয়া আদায় সমাপ্ত হইলে সে জিজ্ঞাসা করিল, ‘হে রাসুলে খোদা, এই শুক্রিয়া আদায়ের নিমিত্ত সম্পর্কে কি আমি জ্ঞাত হইতে পারি?’ রাসুলে খোদা তাহার দিকে ফিরিয়া হস্তের ঝুড়িটির দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া মৃদু হাস্যে বলিল, ‘ইয়া আবু বকরী, তুমি নিশ্চয়ই আল্লার শুক্রিয়া আদায় করো, কারণ তুমি জান না আল্লা তোমাদিগের জন্য রমজানের ইফতারিতে কি তিনখানা বস্তু নেয়ামত স্বরূপ পাঠাইয়াছে।’
বকরি সুধাইলো, ‘কি সেই তিনখানা বস্তু খোদাবন্দ?’
মোহাম্মক রিপ্লাই করিল, ‘তাহার প্রথমটি হইলো খেজুর কাঁঠাল নয়, বল আলহামদুলিল্লা।’
বকরি বলিল, ‘আলহামদুলিল্লা’
‘দ্বিতীয়টি হইলো খেজুর নারিকেল নয়, বলো আলহামদুলিল্লা।’
বকরি বলিল, ‘আলহামদুলিল্লা।’
তৃতীয়টি হলো খেজুর আখরোট নয়, বলো, ‘আলহামদুলিল্লা।’
বকরি বলিল, ‘আলহামদুলিল্লা।’
এই বলিয়া মোহাম্মক আবু বকরীর নিকট হইতে খেজুরপূর্ণ ঝুড়িখানা হস্তগত করিয়া গৃহাভ্যন্তরে অন্তর্নিহিত হইলো আর বকরী আল্লা ও তার রাসুলের গুণে মুগ্ধ হইয়া এই আশ্চর্য সুসংবাদ তামাম জাহানের মুসলমানদিগের নিকট পৌঁছাইয়া দিতে বাহির হইয়া পড়িল!
৬.
সিয়াম সাধনার ইতিবৃত্ত
সে অনেক কাল আগের কথা। আরবের লোকেরা তখন আল্লাকে ভুলিয়া গিয়াছিল। ভোলে নাই কেবল একজন, মহামতি মোহাম্মক। তাহাও খোদাতালা তাহাকে জেব্রাইল প্রেরণ করিয়া উত্তম মধ্যম সহযোগে ইয়াদ করাইয়া না দিলে তাহারও আল্লার কথা ইয়াদ করিতে বেগ পাইতে হইতো। তা সেইবার জেব্রাইলের মধ্যম উত্তমরূপে খাইয়া তাহার ভয়ানকরূপে বাহিরে বালিয়াড়ির আড়ালে যাইবার বেগ চাপিয়াছিল কিনা আমাদিগের নিশ্চিত জানা নাই, তবে তাহার বৃদ্ধা পত্নী খাদিজা হইতে বর্ণিত যে, সেবার পর্বত-পাদদেশ হইতে ভেড়া লইয়া ফিরিবার পর সবরী থুক্কু পেয়ারা নবী বেশ কিছু দিবস শয্যাশায়ী ছিলেন। যাহা হউক, তাহার বেশ কিছুদিন গত হইবার পর আজিকার এই কাহিনীর আরম্ভ।
হেরা গুহায় জেব্রাইলের উত্তম মধ্যম খাইয়া মোহাম্মদের আল্লার কথা মনে পড়িয়াছিল বটে। আধুনিক বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের মাথায় ডান্ডার বাড়ি খাইয়া ইয়াদ্দাশ ফেরত আসিবার গল্প বোধ করি ১৪০০ বত্সর পূর্বের মোহাম্মকের উত্তম মধ্যম খাইবার ঘটনা হইতেই আসিয়াছে। তবে স্মৃতি ফিরাইবার ক্ষেত্রে উত্তম মধ্যম যে কীরূপ কার্যকর তাহা মোহাম্মকের ঘটনা হইতেই উত্তমরূপে প্রতীয়মান হয়। সেই স্মৃতি এমনই বলশালী হইয়া ফেরত আসিয়াছিল যে মোহাম্মক তাহার বাকি জীবন আল্লার শবরী কলা হিসাবেই কাটাইয়া দিবার নিমিত্তে নিজেকে উত্সর্গ করিয়া দিয়াছিল। তবে তাহার আল্লার দূত হইবার সমস্ত আয়োজনই এক কথায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়া যাইতে বসিয়াছিল তাহার পত্নী খাদিজার উপস্থিতিতে। খাদিজা তাহার পতি-নবীকে হস্তে রাখিবার নিমিত্তে তাহার সমস্ত কথাই বিনা বাক্যব্যয়ে মানিয়া লইয়াছিল ঠিকই, তথাপি তাহার কথায় কদাচিত্ বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছে। আর মোহাম্মক যেইরূপ প্রায়শই তাহার ব্যবসায়িক তহবিল তছরুপ করিত, তাহাতে তাহার আল্লার সাক্ষ্যও খুব একটা কার্যকরী হইতে পারিছেলিন না। অপর হস্তে খাদিজা প্রেমময় পত্নী হইলেও বিষয়বুদ্ধিতে ছিলেন খুব কড়া। পতিনবী মোহাম্মককে পরমাত্মীয় বলিয়া ক্ষমা করিবার পাত্রী খদিজা ছিলেন না। তাই প্রতিবারই সে তহবিল হোক চাই কি ভেড়ার পাল, তছরুপের দায়ে মোহাম্মককে শাস্তি পাইতে হইতো। তা সে পিঠে হালকা পাদুকা বৃষ্টি নতুবা পানাহার রহিতকরণ।
সেইরূপ একদা মোহাম্মক পত্নী খাদিজার অনুমতি ব্যতিরেকে আস্ত একপাল উট আল্লার পথে উত্সর্গ করিয়া বসিয়াছিল, যদিও তাহার কোন চাক্ষুস প্রমাণ উপস্থিত করিতে ব্যর্থ হওয়ায় খাদিজা তাহাকে শাস্তিস্বরূপ এক চদ্রকাল দিবাভাগের পানাহার রহিত করিয়া তাহাকে শাস্তি প্রদান করিয়াছিল। সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত তাহার নিকট পানাহার প্রেরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, দাসীদিগের ওপরেও মোহাম্মকের নিকট না যাইতে কড়া হুকুম জারি করিয়া দিয়াছিলেন। তাই খাবার ও দাসী উভয় হইতেই মোহাম্মক বঞ্চিত হইতেছিল। দিবাভাগ ব্যতীত পানাহার ও দাসীর সমব্যভিহারে কোন নিষেধাজ্ঞা খাদিজার নির্দেশনামায় না থাকিলেও খাদিজা মহাম্মকের কর্মকাণ্ডের প্রতি কঠিন পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছিলেন। তাহাতে মোহাম্মক বেজায় বেকায়দায় পড়িয়াছিল।। খাদ্যে তাহার সেন্সরশিপের সহিত খাদিজাকে গোপন করিয়া কচিত্-কদাচিত্ দাসী নতুবা বগ্নি উম্ম-হানীর সাহচর্য লাভের সুযোগও রহিত হইয়া বসিল।
এমতাবস্থায় শিশ্নের ক্ষুধা চাপিয়া রাখিতে পারিলেও আরবস্থলির ক্ষুধা নিবারণ ক্রমশ কঠিন হইয়া যাইতেছিল। সূর্যাস্তের পরে ও নিদ্রাপূর্বক আহার ব্যতীত অন্যরূপ আহারের অভাবে মোহাম্মক উদরে প্রস্থরবন্ধনী লইতে বাধ্য হইয়াছিল। তথাপী তাহার ক্ষুধা নিবারণে অন্যরূপ সমস্ত উপায়ও খাদিজা রহিত করিয়া রাখিয়াছিলেন। এমতাবস্থায় রাত্রি দ্বিপ্রহরে লোকচক্ষুর অন্তরালে চুপি চুপি খাদিজার হেঁসেল হইতে চৌর্যবৃত্তি ব্যতীত আর কোন গত্যন্তর ছিল না।
কিন্তু কথায় যেরূপ বলিয়া থাকে যে মোহাম্মকের বিংশ রজনী ও খাদিজার এক, সেরূপ শাস্তির বিংশত রজনী দ্বিপ্রহরে মোহাম্মক খাদিজার হস্তে রঞ্জিত হস্তে ধরা পড়িয়া গেল। তাহাতে লোক জানাজানিও কম হইলো না। ঘৃহের অভ্যন্তরে কোনরূপ মান-সম্ভ্রম কোনকালেই মোহাম্মকের ছিল না, কিন্তু মক্কা নগরীর জনগণের নিকট আল্লার একমাত্র সেবকরূপে তাহার বিশেষ পরিচিতি বজায় ছিল। তাহার ওপর মোহাম্মকের গোপন কারোবার হিসেবে একখানা অর্থের বিনিময়ে আমানত-গাহ বিশেষ খ্যাতিপ্রাপ্ত হইয়াছিল ও তাহার গুডউইল হিসাবে তাহার কপালে আলামিন খেতাবও জুটিয়া গিয়াছিল। এমতাবস্থায় চৌর্যবৃত্তির সহিত তাহার সংস্রব প্রমাণিত হইলে তাহার যত্সামান্য এক্সট্রা ইনকামও রহিত হইয়া কদাচিত্ খাদিজার আরালে ইয়ার দোস্ত লইয়া আমোদ স্ফুর্তি করিবার পথও রহিত হইয়া যাইবে। তাই তাহার আমানতগাহ এবং আলামিন উপাধি রক্ষার্থে তাহাকে সর্বসমক্ষে একখানা চাপা উপস্থিত করিতে হইলো, তাহা হইলো ঐ একচন্দ্র সময়কাল যাহাকে স্থানীয় ভাষায় রমজানুল চন্দ্র বলা হইতো আল্লাহ তাহাকে সিয়াম সাধনা করিতে নির্দেশ দিয়াছেন। আর এই সিয়াম সাধনার তরিকা হইলো রাত্রি দ্বিপ্রহরে আহার্য সাধন করিতে হইবে, তাহার পর সূর্যাস্তের পরে আবার আহার্য গ্রহণের অনুমতি মিলিবে। এই সময়ের মধ্যে কোনরূপ পানাহার ও নারীগমন নিষিদ্ধ। সেই হইতে মোহাম্মকের চৌর্যবৃত্তি ঢাকিতে প্রদত্ত চাপা অনুসরণে মোহাম্মকের বিশাল উম্মক-বাহিনী অদ্যবধি রমজানুল চন্দ্রে সেইরূপ পানাহার ও নারীগমনে বিরত থাকে এবং সূর্যাস্তের পরে ও রাত্রি দ্বিপ্রহরে খাদ্যগ্রহণে প্রবৃত্ত হয়। এই বিধানকেই আমরা পবিত্র সিয়াম সাধনা বলিয়া মানিয়া থাকি।
অন্যদিকে চৌর্যবৃত্তির শাস্তিস্বরূপ তাহার খাদ্য রহিতকরণের বিংশ দিবসের পর হতে অবশিষ্ট চন্দ্রদিবস সমূহতে খাদিজা মোহাম্মককে কক্ষে অন্তরীণ করিয়া রাখিয়াছিলেন, যা হোক অদ্যাবধি আমরা ইতিকাফ বলিয়া পালন করিয়া থাকি।
ব্লগার রাজীব ওরফে থাবা বাবার আরও অনেক পোস্ট রয়েছে যেগুলো খুবই অশ্লীল বলে ছাপা গেল না।


রাজীবের পাশাপাশি আরও যেসব ব্লগার শাহবাগের আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ইসলামবিদ্বেষী লেখালেখি চালিয়ে আসছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো ডা. ইমরান এইচ সরকার, অমি রহমান পিয়াল, আরিফ জেবতিক, নিজেকে নাস্তিক দাবিকারী আসিফ মহিউদ্দিন, কট্টর আওয়ামীপন্থী ব্লগার ইব্রাহিম খলিল (সবাক) প্রমুখ। এছাড়া ইংল্যান্ড প্রবাসী আওয়ামীপন্থী এক ব্লগার আরিফুর রহমানকে দেখা যায় নানা আপত্তিকর মন্তব্য করতে। তাদের মধ্যে আসিফ মহিউদ্দিন সামনের সারিতে থেকে শাহবাগের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আসিফ মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে নিজেকে নাস্তিক দাবি করলেও তার যত মাথাব্যথা ইসলাম ধর্ম নিয়ে। তবে কখনও কখনও সমন্বয়ের অংশ হিসেবে অন্য একটি ধর্মেরও সমালোচনা করে থাকে সে। একটি বিশেষ ধর্মের সে অনুসারী হলেও মুসলিম নাম ধারণ করে ইসলামকে বিতর্কিত করতে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে গুজব রয়েছে।
নিচে শাহবাগ আন্দোলনে সক্রিয় কয়েকজন আওয়ামীপন্থী ও নাস্তিক ব্লগারের কটাক্ষপূর্ণ এরকম কিছু মন্তব্য তুলে ধরা হলো :

কোরআনের আয়াত ও ইসলাম নিয়ে আসিফ মহিউদ্দিনের কটাক্ষ : আসিফ মহিউদ্দিন একজন স্বঘোষিত নাস্তিক। সে কমিউনিজমে বিশ্বাসী। শাহবাগে প্রথম সমাবেশে সে একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেয়। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী বুদ্ধিজীবী ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ওইদিন তাকে পিঠ চাপড়ে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন এ ধরনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য।
আসিফ মহিউদ্দিন (গত ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০০) ব্লগে একটি পোস্ট লেখে। সেখানে ইসলাম ও কোরআনকে কটাক্ষ করে তার লেখা হলো :
‘বিসমিল্লহির রহমানির রাহিম। আউজুবিল্লা হিমিনাশ শাইতানির নাস্তিকানির নাজিম।’
গত বছরের ৫ মে পবিত্র কোরআন শরিফকে মহাপবিত্র ‘আহাম্মকোপিডিয়া’ লেখার মতোও ধৃষ্টতা দেখায় এ ব্লগার। তবে পরে তীব্র প্রতিবাদের মুখে এ পোস্টটি সে তার ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলে (এর স্ক্রিন শট এখনও আছে)।
আসিফ মহিউদ্দিন তার ফেসবুক ওয়ালে মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (স.) নিয়ে লেখে, ‘মুহাম্মদ নিজেকে আইডল বা নিজেকেই ঈশ্বর না বলে একটি কল্পিত ঈশ্বরকে উপস্থাপন করেছেন। মানুষ যেন ব্যক্তিপূজায় আসক্ত না হয়, তাকেই যেন মানুষ ঈশ্বর বানিয়ে পূজা করতে শুরু না করে, সে ব্যাপারে তিনি কঠোর ছিলেন। তাই তার সমস্ত রচনাই তিনি আল্লার নামে চালিয়ে দিয়েছেন, এর রচয়িতা হিসেবে আল্লাকে সৃষ্টি করেছেন!’ আরেক লেখায় সে লিখেছে, ‘ধর্মান্ধ মুসলিমদের উত্তেজনার শেষ নেই। তাদের সকল আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে কে মুহাম্মদের ছবি আঁকলো, কে ধর্মের সমালোচনা করলো। অথচ এতে মুহাম্মদ/আল্লার কখনই কিছু যাবে আসবে না। ব্যাপারটা এমন নয় যে, মুহাম্মদের ছবি আঁকা হলে স্বর্গে মুহাম্মদ সাহেব কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে আত্মহত্যা করছেন! আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে, তার উম্মতরা ঠিকই তাকে একজন পীরে পরিণত করেছে।’ ফেসবুকে বিশ্বনবীর একটি কাল্পনিক ছবিকে দেখিয়ে সে লেখে, এই ছবিটা মুহাম্মদের উন্মাদ উম্মতদের উদ্দেশ্যে একটা জবাব হতে পারে।’
ইসলামের বিধান পর্দা বা বোরকা নিয়ে সে লিখেছে, ‘বোরখা পরাটা সমর্থন করি না, বোরখা হিজাব মূলত আরবির বর্বর সমাজের প্রতীক। একটা সমাজে অত্যধিক বোরখার প্রাদুর্ভাব থাকা মানে হচ্ছে সেই সমাজের পুরুষগুলো সব এক একটা ধর্ষক, সেই ধর্ষকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য সকল নারীকে একটা জেলখানা নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এইসব অজুহাতে নারীকে যুগ যুগ ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে, কখনও ঘরের ভেতরে, আবার কখনও বোরখা নামক চলমান জেলখানার ভেতরে।’
ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য দান নিয়েও কটাক্ষ করে সে লিখেছে, ‘ধার্মিকদের মাথায় স্বার্থচিন্তা থাকে যে, এই উপকারে সে পরকালে হুর পাবে। এমনকি তারা কোন দরিদ্র, দুস্থ, পঙ্গু মানুষকে দেখলেও বেশিরভাগ সময়ই স্বার্থপরের মতো নিজের কথাই ভাবে। আর যদি ওই পঙ্গু লোকটির কথা ভাবেও, তাতেও তাদের মাথায় থাকে স্বর্গে হুরী সঙ্গমের অশ্লীল চিন্তা।’ তার মতে, ‘জনগণের সুখ ও অর্থনৈতিক সাম্যের জন্য সর্বপ্রথম যা করতে হবে, তা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের উচ্ছেদ।’
তবে ইসলাম ধর্ম নিয়ে এমন অবমাননামূলক ও উসকানিমূলক পোস্ট দিলেও আসিফ মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।


আরিফুর রহমান (হুঙ্কারসহ নানা নামে লেখে) লেখে, ‘আমি মনে করি আল্লা বিষয়টা মুহাম্মদের একটা বুজরুকি। ছিটগ্রস্ত মুহাম্মদ তার হ্যালুসিনেশনের সময় মনে করতো জিব্রাইল আইছে, তাই আল্লার কাল্পনিক কাহিনী বানিয়ে ধর্ম তৈরি করেছে। নাম দিয়েছে ইজলাম। এই হলো আল্লা বিষয়ে আসল কাহিনী।’ হিজাব নিয়ে আরিফ লিখেছে, ‘হিজাব হলো ছৌদি নোংরামির চূড়ান্ত... কুত্তাদের কালো কাপড়ের কালচার। একে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়াটাই একটা বড় রকমের গুনাহ...!! হিজাবের বিরুদ্ধে পোস্টতো আসবই। ইসলামী পুরুষতন্ত্রের ছাগুরা।’


ইব্রাহিম খলিল (সবাক) : ইব্রাহিম খলিল নামের এক প্রতারক সবাক নামে লিখেছে, ‘মির্জা সাথীর প্রোফাইট পিকচার সুন্দর। নিজের অজান্তেই লুল ফালাইতে ইচ্ছা কর্তাছে...’
আলআওয়াম আল আনায়াম (আওয়ামী লীগ চতুষ্পদ জানোয়ারের ন্যায়)। সুরা গো.আ, আয়াত-৪২০।
ধর্ম নিয়ে সবাক লিখেছে, ‘শুয়রের বাচ্চারা বানাইছে একখান বালের ধর্ম। বৌ... (এতটা অশ্লীল শব্দ যে উল্লেখ করা সম্ভব হলো না) কিছু কথা কইছে, আর... ফালানোর পর কিছু কথা বলে। দুইটাই শালাগো ধর্তব্য হইছে। বিশ্বাস হালকা কইরা স্বার্থবন্দী কথাগুলান যাচাই কইরা আবার ধার্মিকরাই বাহির কইরলো বিরাট ক্যারফা। তারপর ধর্মের গোয়া বাইর হইছে লস্করই-তাইয়্যিবাল, বাল কায়েদা, বালকাতুল জিহাদ, সোগাবুত হাহরীর। ধর্মরেও... ধর্মের সোগা দিয়া পয়দা হওয়া বর্বরগুলানরেও... ।’
শুধু তাই নয়, শাহবাগের আন্দোলনকারীদের অনেকের ফেসবুকে ইসলামকে নিয়ে নানা কটূক্তিকর স্ট্যাটাস বেশ দেখা যাচ্ছে। ঠিক এমনি আশরাফুল ইসলাম রাতুল নামে এক আন্দোলনকারী কিছুদিন আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে, ‘সাহস থাকলে একবার শাহাবাগ আয় রাজাকারের চুদারা, তোদের মুহাম্মদ (স.) আর নিজামী বাপকে একে অন্যের পোদের ভেতর ঢুকাবো।’ (নাউজুবিল্লাহ্)
এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে রীতিমত তোলপাড় চলছে। উসকানিমূলক ও চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ এসব মন্তব্যের প্রতিবাদ ও ইসলাম ধর্মের নানা দিক নিয়ে যথাসাধ্য পোস্ট দিচ্ছেন ইসলামপন্থী ব্লগাররা। তারা নাস্তিকদের দেয়া নানা যুক্তিও খণ্ডনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে ফেসবুক ব্যবহারকারী ও ব্লগারদের এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে ইসলামপ্রিয় মুসলিমদের সতর্ক থাকার আহ্বানও জানানো হয়।

ধর্মদ্রোহী নষ্ট তরুণের প্রতিকৃতি ব্লগার রাজীব : হত্যাকাণ্ডের রাতে তানজিলা ছিল রাজীবের বাসায়


প্রচণ্ড ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে তার গার্লফ্রেন্ড তানজিলা। তিন মাস ধরে স্ত্রী বাসন্তী ওরফে অনিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না রাজীবের। স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে গার্লফ্রেন্ড তানজিলাকে নিয়েই থাকত রাজীব। তানজিলা ছাড়াও আরেক প্রেমিকা রাফির সঙ্গেও অবাধ মেলামেশার তথ্য পাওয়া গেছে রাজীবের আত্মীয় ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। ঘটনার দিন রাজীবের বাসাতেই ছিল তানজিলা। পুলিশ রাজীবের মা নার্গিস হায়দারের বাসা থেকে তানজিলাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। ওই বাসায় প্রচুর মদের বোতল ও নেশার উপকরণ পাওয়া গেছে। রাজীব হত্যা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে গতকাল পল্লবী থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
গতকাল দুপুরে সরেজমিন পল্লবীর পলাশনগর ১১ নম্বর রোডের রাজীবের মায়ের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, পল্লবী থানার দুইজন পুলিশ পাহারা দিচ্ছেন। বাসায় অন্য কোনো লোক নেই। রাজীব যে কক্ষটিতে থাকতো সেটি তালাবদ্ধ। অন্য একটি কক্ষে রয়েছে অসংখ্য মদের বোতল। কোনোটিতে মদ ভর্তি, কোনোটিতে অর্ধেক, আবার কোনোটি খালি। কর্তব্যরত পুলিশের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘পল্লবী থানা থেকে আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা কিছু বলতে পারব না, থানায় গেলেই সবকিছু জানতে পারবেন।’ বাড়ির কাছেই মাত্র ১শ’ গজের মধ্যে রেজা কিডস কেয়ার স্কুলের সামনে চায়ের দোকানের মালিক ইউনুস এবং দোকানে থাকা এলাকাবাসী জানান, ওই বাসায় রাজীব ও নোবেল নামে দুই ভাই থাকত। এরা এলাকাবাসীর সঙ্গে কখনও মেলামেশা করত না। তবে মাঝে মধ্যেই রাজীবের সঙ্গে একাধিক মেয়েকে দেখা যেত। মেয়েরা ওই বাসায়ও থেকেছে। ঘটনার দিনও রাজীবের সঙ্গে তারা মেয়ে দেখেছেন। তবে তাকে নিয়ে কোনো দোকানে চা খেতে দেখেননি বলেও জানিয়েছেন তারা।
পল্লবী থানা পুলিশ জানিয়েছে, রাজীবের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তার বাবা নাজিমউদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার প্রেক্ষিতেই ঘটনার পরপরই রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার দিকে রাজীবের খালাতো ভাই গালি এবং ভাই নোবেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েই রাজীবের গার্লফ্রেন্ড তানজিলাকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে থানার ডিউটি অফিসার আবুল হোসেন ও অন্য পুলিশ অফিসাররা জানান, তানজিলা ও রাফিকে আটকের পর ডিবি পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে। বর্তমানে তারা ডিবি পুলিশের কাছে রয়েছে। আপনারা সেখান থেকে তথ্য নিয়ে নিন’।
উচ্ছৃঙ্খলতা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির অভিযোগ : গতকাল ব্লগার রাজীবের শ্বশুরের পুরান ঢাকার আনন্দ বেকারি, পল্লবী থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, রাজীবের পলাশনগর বাসার লোক এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তার ধর্মদ্রোহী, উচ্ছৃঙ্খলতাসহ নানা অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে।
পুরান ঢাকার আবুল হাসনাত রোডের প্রসিদ্ধ আনন্দ বেকারির মালিক আবদুর রশীদ ব্লগার রাজীবের শ্বশুর। আবদুর রশীদের ছোট মেয়ে আনিকার সঙ্গে দুই বছর আগে রাজীবের বিয়ে হয়। অনিকার ডাক নাম বাসন্তী। গতকাল আনন্দ বেকারির শোরুমে বসেই দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১২টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাত্কারে রাজীবের উচ্ছৃঙ্খলতা ও ধর্মদ্রোহিতার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন আবদুর রশীদ। বিয়ের পর থেকেই ধানমন্ডি ৪ নম্বর রোডের ২১/১, বাড়ির ২/সি ফ্ল্যাটের মালিক শ্বশুর আবদুর রশীদের আপ্যার্টমেন্টে রাজিব থাকত।
আব্দুর রশীদ জানান, একটু বেশি অস্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্যই তার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া হতো। তার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ হলে তিন মাস আগে রাজীবকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর তিনি কিংবা তার মেয়ে রাজীবের খোঁজ-খবর নেননি। আবদুর রশীদ দৈনিক আমার দেশকে বলেন, ‘বিয়ের পর সব মেয়েই সুস্থ জীবন চায়। আমার মেয়েও সুস্থ জীবন চেয়েছিল। আর তা হয়নি বলেই তারা তিন মাস ধরে আলাদা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাত ১১টায় টেলিভিশনে সংবাদ দেখে তারা রাজীবের বাবাকে ফোন করে ঘটনা জানতে পারেন। পরে তিনি তার দুই ভাইকে নিয়ে পল্লবী থানায় ছুটে যান। থানায় গিয়ে দেখেন রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তারা নোবেল এবং রাজীবের খালাতো ভাই গালিবকে উপরে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ সময় তিনি পুলিশের কাছ থেকে তানজিলার নাম জানতে পেরেছেন। আবদুর রশীদ বলেন, ‘খুন হয়েছে এটা সত্য। তবে তা উদঘাটনের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সত্য ঘটনা আজ হোক কাল হোক বের হবেই। তাই আমি না জেনে সে জামায়াত ইসলামী হোক আর যেই হোক কারও ওপর দোষ চাপাতে পারব না’। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার নামী এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আনন্দ বেকারির শোরুমের দেয়ালে মসজিদের ছবি লাগানো। তিনি বলেন, রাজীব যে ধর্মদ্রোহী কাজ করত তা বিয়ের আগে তাদের জানা ছিল না।
খুনের কারণ তানজিলা : পল্লবী থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের মামলা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানায়, ব্লগার রাজীব খুনের কারণ তানজিলাসহ একাধিক প্রেমিকা। ঘটনার রাতে রাজীবের বাসায়ই তানজিলা ছিল বলে নিশ্চিত করেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, খুনের সময় তানজিলা রাজীবের বাসায় ছিল। সেদিন তানজিলার ওই বাসাতেই থাকার কথা ছিল। পল্লবী থানা পুলিশ রাজীবের খালাতো ভাই এবং আপন ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে রাজীবের বাসা থেকেই তানজিলাকে গ্রেফতার করে বলেও জানায় পুলিশ। তানজিলাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার কথায় গরমিল পাওয়া গেছে। এমনকি তানজিলার দেয়া মিরপুর পলাশনগরের ১৩ নম্বর রোডের কবরস্থানের পাশে বোনের বাসার ঠিকানার অস্তিত্বও পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। তবে তানজিলাসহ আরও অনেক মেয়ে ওই বাসায় রাতযাপন করতো বলেও জানায় পুলিশ। পুলিশের তদন্তে রাজীবের একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া, লিভ-টুগেদারের বিষয়গুলো চলে আসে। অন্যদিকে তানিজলার বাসার ঠিকানার জন্য পল্লবী থানায় গেলে ডিউটি অফিসার আবুল হোসেন জানান, তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতারের মাত্র ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই ডিবি পুলিশ নিয়ে যায়। তাই সাধারণ ডায়রি বা থানার কোনো নথিপত্রে তাদের গ্রেফতারের কাগজপত্র নেই। রাজীব হত্যা মামলার আইও মতিয়ার রহমান ফোনে দৈনিক আমার দেশকে জানান, ডিবি পুলিশ নিয়েছে, তারাই ভালো বলতে পারবে। মতিয়ার রহমান ব্যস্ত আছি বলে আর কথা বলতে চাননি।
রাজীবের বাসা ও এলাকায় ঘুরে যে চিত্র পাওয়া গেল : পলাশনগর ১১ নম্বর রোডের ৫৬/৩ নম্বর বাড়িটি রাজীবের মা নার্গিস হায়দারের নামে। একতলা এ ভবনের সামনে ও পেছনে বেশ কিছু খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে কয়েকটি বড় গাছপালাও রয়েছে। চারপাশে দেয়ালে ঘেরা বাড়িটির ভেতরটা বাইরে থেকে দেখা যায় না। ভেতরে দু’কক্ষবিশিষ্ট বাড়িটিতে ঢুকে দেখা যায় পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। সামনের এক চিলতে বারান্দায় সব জুতো পুরুষের। সার্বক্ষণিক নারীদের থাকার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তালাবদ্ধ রুমে রাজিব থাকত বলে জানায় দায়িত্বরত পুলিশ। তবে বারান্দা ও কক্ষে প্রচুর মদের বোতল দেখা গেছে। এলাকাবাসী ও চায়ের দোকানদাররা জানান, গত তিন চার বছরে অনেক মেয়েকে এ বাড়িতে আসতে দেখেছেন তারা। নাম প্রকাশ করতে চাননি এমন কয়েকজন বলেন, বউ আসবে কি করে, এখানে তো নার্গিস আক্তার কখনও থাকেন না। তবে রাজীবের বউ এখানে কখনও আসেননি সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করেন তারা। সামনের ছোট গলিতে ভাড়া বাসায় থাকা এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, বাড়ির গেটে তালাবদ্ধ রেখে তারা বাড়ির ভেতরেই থাকত। এক চা দোকানি বলেন, ‘এখানে দাঁড়িয়ে রাজীব সিগারেট খেত না। সিগারেট নিয়ে সোজা বাসায় চলে যেত’।
চার বান্ধবীকে ঘিরে এগোচ্ছে রাজীব হত্যার তদন্ত : ব্লগার আহমেদ হায়দার রাজীব শুভ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এগোচ্ছে চার ব্লগার বান্ধবীকে ঘিরে। এদের মধ্যে একজন তানজিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজীবের বাসা থেকেই। অপর বান্ধবী রাফিও রয়েছে গোয়েন্দা হেফাজতে। গোয়েন্দা সংস্থা মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তিনটি নম্বর পেয়েছে, যেগুলো রাজীবের কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। ওই নম্বরগুলো হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বন্ধ রয়েছে। পুলিশ এখন ওই নম্বরের মালিকদের খুঁজছে। তাদের ধারণা, সেসব নম্বরের কোনোটি ঘাতকদেরও হতে পারে। রাফি ও তানজিলার বিষয়ে কিছু তথ্য জানালেও অপর দু’ব্লগার বান্ধবীর বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে সম্মত হয়নি পুলিশ। তাদের বক্তব্য, তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না।
তদন্ত সূত্র জানায়, ব্লগার বান্ধবীদের মধ্যে তানজিলার প্রতিই গোয়েন্দাদের সন্দেহ বেশি। অপর বান্ধবী রাফির প্রতিও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন না রাজীবের স্ত্রী আনিকা ওরফে বাসন্তিও। একটি সূত্র বলেছে, খুনি যে-ই হোক, তারা যে এক নারীর সহায়তা নিয়েছে, সে সম্পর্কে এখন অনেকটাই নিশ্চিত। এক্ষেত্রে তাদের সন্দেহ তানজিলার দিকে। তাদের ধারণা, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে সব ঘটনা সম্পর্কে অবগত এই তানজিলা। তবে পুলিশ আহমেদ হায়দার রাজীব শুভ হত্যাকারীদের সম্পর্কে গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।
একাধিক সূত্র বলেছে, তানজিলা এবং রাফির সঙ্গে এতই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল যে, দিনে তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা ও দেখা হতো। তাদের মোবাইল কললিস্ট ও মোবাইল ট্র্যাক করেও সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তদন্ত সংস্থার দেয়া তথ্যমতে, মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে ১৩, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে রাজীবের অবস্থান সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। রাজীবের অবস্থান এবং কাদের সঙ্গে ওই দিনগুলো অবস্থান করেছে, সেসব বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধশত মোবাইল নম্বরের ভয়েস রেকর্ড সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাজীব শাহবাগে অবস্থান করেছিল। ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ছিল ধানমন্ডিতে। সন্ধ্যা ৬টায় সে ফের শাহবাগে যায় এবং রাত ৮টা পর্যন্ত অবস্থান করে। রাতে পল্লবীর বাসায় ফিরে যায়। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি সে শাহবাগে যায়নি। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাজীব খুন হয়। ১৩ তারিখ রাতে ফেরার পর ঘটনার দিন বেলা ৩টা পর্যন্ত সে পলাশনগরের বাসায় ছিল। ওই সময়টা সে কাটিয়েছে বান্ধবী তানজিলার সঙ্গে। ৩টায় বাসা থেকে বের হয়ে বাসার অদূরে বাইশটাকি এলাকায় গিয়ে ৪টায় আবার সে বাসায় ফিরে আসে। সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত সে বাসার আশপাশে পলাশনগর এলাকাতেই ঘোরাফেরা করে। বাসা থেকে বের হয়ে আবারও বাইশটাকি এলাকায় যায়। সেখানে ১৫ মিনিট অবস্থান করে সাড়ে পাঁচটায় আবারও বাসায় ফিরে আসে। এর কিছু সময় পরে আবারও বাসা থেকে বের হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর ও আশপাশের এলাকায় কিছু সময় অবস্থান করে। এরপর রাত সাড়ে আটটার পর বাসার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় তার সেই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী তানজিলা তাকে বাসার গলিতে পৌঁছে দেয়। এর মধ্যে মোবাইল ফোনে তানজিলার সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয় রাজীবের ।
রাত ৮টা ৫৮ মিনিটে রাজীব আরেক বান্ধবী রাফির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে বলতে বাসার সামনে রাস্তায় চলে আসে। রাত ৮টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত সে বান্ধবী রাফির সঙ্গে কথা বলে। সেটাই ছিল ফোনে রাজীবের শেষ কথা বলা। গোয়েন্দারা ধারণা করছে, এরপরই সে হামলার শিকার হয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাত ৮টা ৪৪ মিনিট থেকে রাজীবের বাসার সামনে তিনটি নতুন মোবাইল নম্বর যুক্ত হয় টাওয়ারের সেল নম্বরে। সেই নম্বরগুলো বেশ কিছু সময় একই স্থানে অবস্থান করে। রাত ৯টা ১৪ মিনিটের পর থেকে ওই তিনটি মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে। গোয়েন্দারা ওই মোবাইল ফোনগুলোর গ্রাহকদের খুুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। গোয়েন্দাদের ধারণা, ওইসব নম্বরের কোনোটি ঘাতকদেরও হাতে পারে। রাত ১০টায় রাজীবের মোবাইলে একটি এসএমএস পাঠায় তানজিলা। এসএমএসটি ছিল ‘দাদা বাসায় গেছ?’ ওইসময় তানজিলার অবস্থান ছিল মিরপুর-২ নম্বর এলাকায়। অথচ তার স্বীকারোক্তিতে সে বলেছে, মিরপুর ১১ নম্বরের বাসায় রাজীব তাকে পৌঁছে দিয়েছে।
তানজিলা সম্পর্কে জানা গেছে, এসএসসি পাস করে বখে যাওয়া উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির মেয়ে ছিল তানজিলা। রাজীবের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল সে ধরনের। তানজিলার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সাতমাথা এলাকায়। বাবা মারা যাওয়ার পর লেখাপড়া এগোয়নি তানজিলার। চার বছর আগে ঢাকায় এসে মিরপুর ১৩নং এলাকার একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। কিন্তু তার পেশা সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ।
জানা গেছে, নিজের থাকা খাওয়ার খরচ চালাতে অনৈতিক পথে পা বাড়ায় তানজিলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট শাহবাগ এলাকায় অস্বাভাবিকভাবে চলাফেরা শুরু করে। এর মধ্যে ফেসবুকে রাজীবের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। তাদের এ ঘনিষ্ঠতা মেনে নিতে পারেনি শোভনের স্ত্রী বাসন্তি ওরফে অনিক। এতে স্ত্রীর সঙ্গে রাজীবের দূরত্ব বাড়ে। স্বামীর সঙ্গে অন্য মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়টি মেনে নেয়নি ধনির দুলালী অনিকা। কয়েক মাস আগেও রাজীব শ্বশুরের বাসা ধানমন্ডিতে থাকত। চারিত্রিক অধঃপতনের কারণে রাজীবকে সে বাসা থেকে একরকম বের করে দিয়েছিল।
একটি সূত্র জানায়, রাফি ময়মনসিংহ ত্রিশালের কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে। তার বাবা সরকারি চাকরিজীবী। ময়মনসিংহ থাকা অবস্থায় ফেসবুকে রাজীবের সঙ্গে পরিচয় হয় রাফির। সেই সূত্র ধরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। নিয়মিত ঢাকায় এসে রাজীবের সঙ্গে দেখা করত রাফি। রাজীবও ময়মনসিংহ গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করত।
রাজীব ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ছিল তানজিলার। রাফিও ঢাকায় আসা-যাওয়ার কারণে নিত্যনতুন বন্ধুর সন্ধান পায়। এর মধ্যে শোভনের সঙ্গে তানজিলার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে রাফির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় শোভনের। শুক্রবার রাতে তানজিলা থেকে আলাদা হয়ে রাফির মান ভাঙানোর চেষ্টা করে রাজীব। রাফি কোনো সুযোগ না দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর পরপরই দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয় রাজীব। এ খুনের সঙ্গে একজন নারীর সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে সেই নারী তানজিলা না রাফি, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, খুনি যে-ই হোক, তারা তানজিলা অথবা রাফির সহায়তা নিয়ে খুন করেছে। হয় খুনিরা রাফির অভিমানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাজীবের বাসার ঠিকানা ও বাসায় ফেরার সময়সূচি জেনেছে, না হয় তানজিলার অভাবটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে খুনের কাজে তার সহায়তা নিয়েছে।
সূত্র জানায়, ঘটনার দিন রাজীবকে বাসা থেকে ডেকে নেয় তানজিলা। নানা ছলনায় সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতে বাসায় ফিরতে বাধ্য করেন। সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর রাজীবের পরিবারের সদস্যরা তার অবস্থান সম্পর্কে যেসব তথ্য দিয়েছে, তার সঙ্গে প্রযুক্তি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের অনেক গরমিল রয়েছে। তিনি দিন-রাত শাহবাগ চত্বরে থাকতেন বলে যে দাবি করা হয়েছে, তার সঙ্গেও কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছে না তদন্ত সংস্থা।

ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডে ব্যক্তিগত ও নারীঘটিত বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ : দুই ব্লগার বান্ধবী ও স্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশের জেরা


বহুল আলোচিত ব্লগার আহাম্মেদ রাজীব হায়দার শুভ হত্যা তদন্তে ব্যক্তিগত ও নারীঘটিত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরই মধ্যে তার দুই বান্ধবীসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা-বাদ করা হয়েছে। তাদের কয়েকজনকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে এবং কয়েকজনকে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। উদ্ধারকৃত আলামত ও মোবাইল ফোনের কললিস্ট এবং মোবাইল ট্রাকিং করে পুলিশ ঘাতকদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।
গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে পল্লবীর পলাশনগরে খুন হয়েছে আহাম্মেদ রাজিব হায়দার শুভ নামে ওই স্থপতি ব্লগার। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই খোদ প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ খুনের জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে আসছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজীবের বাসায় গিয়ে বলেছেন, জামায়াত শিবিরের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। এসব অপপ্রচার প্রত্যাখ্যান করে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, রাজীব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যারা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদেরকে তিনি জ্ঞানপাপী বলে দায়ী করেন।
গতকাল যেসব ব্যক্তিকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, ডিবি পুলিশ ব্রিফিংয়ে তাদের নাম প্রকাশ করেনি। জানা গেছে, রাজীবের ব্লগারবান্ধবী তানজিলা ও রাফি ওরফে রাফিয়া, রাজিবের স্ত্রী বাসন্তী, সোনার বাংলাদেশ ব্লগের পরিচালক আমিরুল মোহাইমেন, ব্লগার ওহিদুল ইসলাম, ঘাতকরা পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রত্যক্ষদর্শী দারোয়ান আলমগীরসহ বেশ কয়েকজনকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জেরা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত আলমতের ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রাজীবের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও উদ্ধার করা আলামত থেকে অপরাধিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে তদন্ত সংস্থা মনে করছে।
ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ব্লগারবান্ধবী হলেও তানজিলা ও রাফির সঙ্গে রাজীবের খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্কের কারণেও তাদের কোনো ছেলে বন্ধু ঈর্ষান্বিত হয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। পুলিশকে তানজিলা জানিয়েছে, শুক্রবার বিকালে সে রাজীবের বাসায় যায়। সেখানে কিছু সময় কাটানোর পর বেলা সাড়ে ৫টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে মিরপুর ১০ নম্বরে যায়। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তারা একসঙ্গে ছিল এবং কয়েক জায়গায় আড্ডা দেয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে মিরপুরের ১৩ নম্বরে তানজিলার বাসার সামনে তাকে পৌঁছে দেয় রাজীব। এরপর সে বাসার দিকে চলে যায়। এরপর তাদের আর যোগাযোগ হয়নি। তানজিলা আরও দাবি করেছে, ফেসবুকে তার সঙ্গে প্রথম পরিচয়। পরে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব হয়। দেশের রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতো। তারা প্রায় প্রতিদিনই দেখা করত এবং একসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে যেত।
এদিকে রাফি জানিয়েছে, তার সঙ্গে রাজীবের সর্বশেষ কথা হয়েছে রাত ৮টা ৫৮ মিনিটে। ওই সময় রাজীব নিজেই রাফিয়ার মোবাইলে কল দিয়েছে। ওই সময় রাফিয়া ময়মনসিংহের ত্রিশালে ছিল। কিন্তু ত্রিশালে সে কেন, কী কারণে গেছে এসব বিষয়ে পুলিশের কাছে মুখ খোলেনি। সে আরও জানায়, অনলাইনে আড্ডা ছাড়াও তাদের মধ্যে দুয়েক দিন পর পরই দেখা সাক্ষাত্ হতো। রাজীব ছিল তার খুব ভালো বন্ধু।
এদিকে গতকাল বিকালে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে জানান, হত্যাকাণ্ডের মোটিভ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার ব্লগ নিয়ে কেউ ক্ষুব্ধ ছিল কিনা, তার ব্যক্তিগত বিষয় ও ব্লগারবান্ধবীদের বিষয়েও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। ব্রিফিংয়ে ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আরও বলেন, মামলা ডিবিতে হস্তান্তরের পর তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তদন্তে আহম্মেদ রাজীব হায়দারের ব্লগে সংবেদনশীল বিষয়ে লেখালেখির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তিগত ও পেশাগত কারণগুলোও দেখা হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। তার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই বান্ধবীকেও জেরা করা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ এখনও খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেনি বলে পুলিশ দাবি করেছে।
এদিকে রাজীবের বাবা ডাক্তার নাজিম উদ্দিন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পল্লবী থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করেছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার আত্মীয় খুররম হায়দারের মোবাইল ফোন থেকে কল পেয়ে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে ঢাকায় আসেন। তার ছোট ছেলে নেওয়াজ মুর্তজা হায়দার নোবেলের বরাত দিয়ে তিনি এজহারে উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তার বড় ছেলে আহমেদ রাজীব হায়দার শুভ (৩২) তার বান্ধবী তানজিলাকে নিয়ে বাসা থেকে চা-খাওয়ার কথা বলে বের হন। রাত সাড়ে আটটা পৌনে ৯টার দিকে ৫৬/৩, পলাশনগরের বাসার বাউন্ডারি দেয়ালের পাশে শুভর জখমপ্রাপ্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। ওই সময় দুই মুখোশধারী যুবক বাসার পূর্বদিকের পলাশনগর গেট পেরিয়ে বাইশটেকি এলাকার দিকে পালিয়ে যায়। ওই সময় সন্ত্রাসীদের একটি ছোরা, একটি ধারাল চাকু ফেলে যেতে দেখে এলাকার দারোয়ান।
এজহারে ডাক্তার নাজিম উদ্দিন আরও উল্লেখ করেন, ‘আমার ধারণা আমার ছেলেকে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারাল অস্ত্র দ্বারা কুপিয়ে হত্যা করেছে।’ এজহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আত্মীজন-স্বজনদের কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনে বুঝে এজহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে।’
ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের পর রাজীবের হাতে থাকা একগুচ্ছ চুল, উদ্ধারকৃত ছোরা, চাপাতি, রাজীবের ব্যবহৃত ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে, যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া রাজীবের মুখের বামপাশে তিনটি, ঘাড়ে একটি ও মাথার পেছনে দুটিসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আটটি কোপের জখমের চিহ্ন ছিল। সেগুলো পেশাদার খুনিদের কাজ কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে শুভর উরু থেকে নমুনা নিয়েও সিআইডিতে দেয়া হয়েছে।
পল্লবী থানা পুলিশ ও রাজীবের আত্মীয়রা জানিয়েছে, আড়াই বছর আগে পুরান ঢাকার অনলাইন বান্ধবী বাসন্তী ওরফে অনিকাকে বিয়ে করে রাজীব। এরপর থেকে সে পলাশনগরের বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করত। কিন্তু একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা, পরকীয়ায় আসক্তি ও লিভটুগেদারসহ নানা কারণে স্ত্রীর সঙ্গে দফায় দফায় ঝগড়া হতো তার। কয়েক মাস আগেও তুমুল ঝগড়ার একপর্যায়ে রাজীবের স্ত্রী বাসন্তী বাবার বাসায় চলে যান। এরপর থেকে খালাতো ভাই ও খালার সঙ্গে তার ছোটভাই নোবেলকে নিয়ে ওই বাসায় থাকত রাজীব। গতকাল বাসন্তী ও তার পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ। সেখান থেকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
তদন্ত সংস্থা রাজীবের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি (০১৭১৩-১১৩৬২৭) জব্দ করেছে। এর কললিস্ট থেকে হত্যাকারীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এছাড়া খুন হওয়ার আগে রাজীব যে কয়েকজনের সঙ্গে বেশি কথা বলেছেন তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজীব সবচেয়ে বেশি কথা বলে তানজিনা ও রাফি নামে দুই ব্লগারবান্ধবীর সঙ্গে। তাদের কথার কিছু রেকর্ডও হাতে পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় অর্ধশত মোবাইল ফোন নম্বরের রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু নম্বর রয়েছে যারা একই সময়ে রাজীবের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন টাওয়ারের মধ্যেই ছিল। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, খুনিরা শাহবাগ থেকে শুভর পিছু নিয়েছে।
জানা গেছে, রাজীব ‘নূরানী চাপা’ নামের একটি ব্লগ লিখত। সেখানে ‘মোহাম্মকের সফেদ লুঙ্গি, ঈদ মোবারক আর ঈদের জামাতের হিস্টুরি, ঢিলা ও কুলুখ, সিজদা, হেরা গুহা, ইফতারি ও খুর্মা খেজুর, সিয়াম সাধনার ইতিবৃত্ত, লাড়ায়া দে, মদ ও মোহাম্মক, আজল’ ইত্যাদি শিরোনামে বেশ কিছু ব্লগ লিখে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।’ এসব ব্লগে ইসলাম ও মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের বিভিন্ন আহকাম নিয়ে ব্যাপক কটাক্ষ করা হয়েছিল।
মিরপুরে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট আটক : রাজধানীর মিরপুর থেকে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদুল ইসলামকে গতকাল আটক করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে ব্লগার রাজিব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে।
মিরপুর থানার এসআই শফিউল্লাহ আটকের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, শহীদুল ইসলাম নামের কোনো ব্যক্তি মিরপুর থানায় আটক নেই। যোগাযোগ করা হলে মিরপুর থানার ওসি সালাউদ্দিন আটকের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, গত শুক্রবার মিরপুর পলাশনগর এলাকায় খুন হন ব্লগার রাজীব। ওই হত্যাকাণ্ড এবং নাশকতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইসলামী ব্যাংক মিরপুরের একটি শাখার ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এর আগে রাজীব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পলাশনগর এলাকার নৈশপ্রহরী আলমগীর হোসেন, আমার ব্লগের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ আমিরুল ইসলাম মোহামেইন, নিহত রাজীবের বান্ধবী তানজিলা ও ব্লগার রাফিসহ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।
কাপাসিয়ায় রাজীবের দাফন সম্পন্ন : কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, ব্লগার আহমেদ হায়দার রাজীব শুভর চতুর্থ দফা জানাজা শেষে গতকাল সন্ধ্যায় তাকে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের চান্দারটেকে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে বাদ জোহর দুপুর আড়াইটায় কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় দফা জানাজা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন তার ধর্মীয় শিক্ষক কারী আবদুল গাফফার। শনিবার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে প্রথম এবং রাতে মিরপুরের পল্লবীতে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার আগে কাপাসিয়া পাইলট স্কুল মাঠে শোকসভায় বক্তব্য রাখেন বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন, রাজীবের মামা খুররম হায়দার, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় প্রমুখ। জানাজা শেষে কফিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজীবের লাশ উপজেলা শহরের বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বাসায় পৌঁছে। রাজীবের স্ত্রী আনিকা আক্তার লাশের সঙ্গে আসেন।
ইসলামবিদ্বেষী আরেক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন

রাজীব ওরফে থাবা বাবাতেই শেষ নয়, অনলাইনে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছাড়ানো ও নাস্তিক্যবাদ প্রসারে তৎপর আরেক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের প্রতি তার চরম বিরাগ। নিজেকে নাস্তিক পরিচয় দেয়া শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা আসিফ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মানুষের কোনো উপাস্য নেই, এমনকি আল্লাহও। হাজারো ঈশ্বরের সৃষ্টি মানুষের অমিত সৃষ্টিশীলতারই নিদর্শন।’ আসিফ অনলাইনের অন্যতম অ্যাক্টিভিস্ট। থাবা বাবার মতো ব্লগারদের সহযোগী।
এ দিকে গতকাল নয়া দিগন্তে থাবা বাবাকে নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের পর নাস্তিকদের আড্ডাখানা হিসেবে পরিচিত ধর্মকারী ডটকম ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আসিফ কেবল নিজেই নাস্তিক নন, অন্যদেরও তিনি এ বিষয়ে উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছেন। থাবা বাবার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস, যেটি ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট আপডেট করা, তাতে থাবা বাবা লিখেছেন, ‘ঈশ্বর কি আস্তিক না নাস্তিক’। এর প্রথম উত্তরদাতা হলেন আসিফ মহিউদ্দীন।
তিনি লিখেছেন, ‘অবশ্যই নাস্তিক, মানে আমাগো দলে আর কী। ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না তাকে কেউ সৃষ্টি করেছে। সে বলে সে স্বয়ম্ভু। তেমনি নাস্তিকও বিশ্বাস করে না তারে কেউ সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ ঈশ্বর একজন নাস্তিক।’
সেখানে আরেকজন লিখেছেন, ‘ঈশ্বর কি মানুষের মতো কিছু নাকি এলিয়েন টাইপ? ধর্মগ্রন্থের বর্ণনায় তো মনে হয় মানুষের মতো। মুহাম্মদ মেরাজ থেকে এসে কী বর্ণনা দিয়েছিল।’
ব্লগার থাবা বাবার পক্ষে গতকালও অনলাইনে চলছে প্রচারণা। তার সমর্থক বেশির ভাগ ব্লগার এটাকে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে থাবা বাবার ব্লগ সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। তবে এর জবাব দেয়া হয়েছে ব্লগার ডা. ইমরান এইচ সরকারের প্রজন্মতে। যাতে ডজনখানেক লিঙ্ক শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে থাবা বাবার অনৈতিক লেখাগুলো সম্পর্কে পাঠক ধারণা পেতে পারেন। তার সবচেয়ে হালকা একটি ব্লগ এখানে তুলে ধরা হলো। সামহয়্যারইন ব্লগে থাবা বাবা ব্লগটি লিখেছেন ৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে। তাতে- ‘মানবজন্ম ও একটি প্রশ্ন’ শিরোনামের ব্লগটি সরাসরি তুলে ধরা হলো
‘চারজন মানুষ, একজন একটি বিবাহিত দম্পতির সন্তান, একজন গভীর প্রেমে আবদ্ধ কিন্তু অবিবাহিত যুগলের সন্তান, একজন ধর্ষণের শিকার একটি অসহায় মেয়ের ধর্ষিত হওয়ার ফলাফল, শেষ জন একজন বেশ্যার সন্তান। এই চারজন মানুষের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আমাদের সমাজ এই চারজন মানুষের মধ্যে শেষের তিনজনকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। কেন? কারণ শেষের তিনজনের মা-বাবার মধ্যে কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক নেই।’
থাবা লিখেছেন, ‘আমাদের সাহিত্য থেকে শুরু করে সমাজ সবাই সন্তান জন্মের প্রক্রিয়াটাকে খুব সুন্দর করে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। বলা হয় দু’জন মানুষের ভালোবাসা থেকে সন্তানের জন্ম হয়। ভালোবাসা ছাড়া সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব না। এই চাদর মুড়ি দেয়া সত্যের সংজ্ঞায় ধর্ষিতা মেয়েটির সন্তান কি তাহলে মিথ্যে? অবিবাহিত একটি যুগল, যারা নিজেদের প্রচণ্ড ভালোবাসা নিয়ে একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছে, তাদের সন্তান তাহলে সত্য না কেন? শুধু বিয়ে নামের একটা সামাজিক আচারের অভাবে? আর সন্তান জন্মদানের পরে তাদের প্রেমকে অবৈধ বলারই বা যুক্তি কোথায়?’
থাবার মতে, ‘বিয়ে হলেই সেখানে খুব ভালোবাসা থাকবে তার কি কোনো ধরনের নিশ্চয়তা আছে? এখনো অগণিত বিবাহিত মেয়ে প্রতি রাতে তাদের স্বামী দ্বারা ধর্ষিত হয়। স্বামীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়েটি যখন তার ধর্ষক স্বামীর ঔরসে সন্তানের জন্ম দেয়, তখন তাকে বৈধতা দেয়ার যুক্তি কি? সেও তো একজন ধর্ষিতার সন্তান। এখনো আমাদের সমাজে বাড়ির বউদের স্ত্রী হিসেবে একটা অদৃশ্য বা অব্যক্ত ভূমিকা আছে। সেটা হলো তারা স্বামী বলে একজন পুরুষের যৌন ুধা মেটানোর একটা যন্ত্র, বিনিময়ে মেয়েটা স্বামীর কাছ থেকে খাওয়া-পরা-থাকার সুবিধা পায়। একজন প্রচলিত বেশ্যার সাথে এই মেয়েটার পার্থক্য একটাই, একজন বেশ্যাকে এক এক সময় এক একজন পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হতে হয়, আর এই মেয়েটিকে সারা জীবন একজন পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হিসেবেই কাটাতে হয়। একজন বেশ্যা যেমন আমৃত্যু তার আবদ্ধ জায়গায় শুধু দেহদান করে বন্দিজীবন কাটায়, এই মেয়েটিও তাই। তাহলে তার সন্তানের সাথে বেশ্যার সন্তানের পার্থক্য করা কেন?’
থাবা লিখেছে, ‘মসজিদের ইমাম নির্বাচন করা প্রসঙ্গে কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। অবৈধ প্রেমের ফল, বেশ্যার ছেলে, যুদ্ধশিশু ও ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়া অবাঞ্ছিত কেউ ইমাম হতে পারবে না। তাহলে বিয়ের নামে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির সন্তান কি মসজিদের ইমাম হতে পারে? ভাত-কাপড়ের বিনিময়ে যে মেয়েটি তার জীবন বিকিয়ে সারা জীবন স্বামী নামক একটা মানুষের যৌনচাহিদা মেটায় তার ছেলে কি মসজিদের ইমাম হতে পারে? আর বাবা-মায়ের প্রচণ্ড ভালোবাসা নিয়ে জন্ম হওয়া ছেলেটি, যার বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ নামক সামাজিক বন্ধনটি ছিল না, মসজিদের ইমাম হতে তার দোষটাই বা কোথায়?’
কুরআনের আয়াত ও ইসলাম নিয়ে আসিফ মহিউদ্দিনের কটা : আসিফ মহিউদ্দিন (গত ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১টা) ব্লগে একটি পোস্ট লেখেন। সেখানে ইসলাম ও কুরআনকে কটা করে তার লেখা হলো :
‘বিসমিল্লহির রহমানির রাহিম। আউজুবিল্লা হিমিনাশ শাইতানির নাস্তিকানির নাজিম।’
গত বছরের ৫ মে পবিত্র কুরআন শরিফকে মহাপবিত্র ‘আহাম্মকোপিডিয়া’ লেখার মতোও ধৃষ্টতা দেখায় এ ব্লগার। পরে তীব্র প্রতিবাদের মুখে এ পোস্টটি সে তার ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলে (এর স্ক্রিন শট এখনো আছে)।
আসিফ মহিউদ্দিন তার ফেসবুক ওয়ালে মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ সা:-কে নিয়ে লেখে, ‘মুহাম্মদ নিজেকে আইডল বা নিজেকেই ঈশ্বর না বলে একটি কল্পিত ঈশ্বরকে উপস্থাপন করেছেন। মানুষ যেন ব্যক্তিপূজায় আসক্ত না হয়, তাকেই যেন মানুষ ঈশ্বর বানিয়ে পূজা করতে শুরু না করে, সে ব্যাপারে তিনি কঠোর ছিলেন। তাই তার সমস্ত রচনাই তিনি আল্লার নামে চালিয়ে দিয়েছেন, এর রচয়িতা হিসেবে আল্লাকে সৃষ্টি করেছেন!’ আরেক লেখায় সে লিখেছে, ‘ধর্মান্ধ মুসলিমদের উত্তেজনার শেষ নেই। তাদের সকল আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে কে মুহাম্মদের ছবি আঁকলো, কে ধর্মের সমালোচনা করল। অথচ এতে মুহাম্মদ/আল্লার কখনই কিছু যাবে আসবে না। ব্যাপারটা এমন নয় যে, মুহাম্মদের ছবি আঁকা হলে স্বর্গে মুহাম্মদ সাহেব কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে আত্মহত্যা করছেন! আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে, তার উম্মতরা ঠিকই তাকে একজন পীরে পরিণত করেছে।’ ফেসবুকে বিশ্বনবীর একটি কাল্পনিক ছবিকে দেখিয়ে সে লেখে, এই ছবিটা মুহাম্মদের উন্মাদ উম্মতদের উদ্দেশ্যে একটা জবাব হতে পারে।’
ইসলামের বিধান পর্দা বা বোরকা নিয়ে সে লিখেছে, ‘বোরকা পরাটা সমর্থন করি না, বোরকা হিজাব মূলত আরবির বর্বর সমাজের প্রতীক। একটা সমাজে অত্যধিক বোরকার প্রাদুর্ভাব থাকা মানে হচ্ছে সেই সমাজের পুরুষগুলো সব এক একটা ধর্ষক, সেই ধর্ষকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য সকল নারীকে একটা জেলখানা নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এইসব অজুহাতে নারীকে যুগ যুগ ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে, কখনো ঘরের ভেতরে, আবার কখনো বোরকা নামক চলমান জেলখানার ভেতরে।’
ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য দান নিয়ে কটা করে সে লিখেছে, ‘ধার্মিকদের মাথায় স্বার্থচিন্তা থাকে যে, এই উপকারে সে পরকালে হুর পাবে। এমনকি তারা কোনো দরিদ্র, দুস্থ, পঙ্গু মানুষকে দেখলেও বেশির ভাগ সময়ই স্বার্থপরের মতো নিজের কথাই ভাবে। আর যদি ওই পঙ্গু লোকটির কথা ভাবেও, তাতেও তাদের মাথায় থাকে স্বর্গে হুরী সঙ্গমের অশ্লীল চিন্তা।’ তার মতে, ‘জনগণের সুখ ও অর্থনৈতিক সাম্যের জন্য সর্বপ্রথম যা করতে হবে, তা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের উচ্ছেদ।’
তবে ইসলাম ধর্ম নিয়ে এমন অবমাননা ও উসকানিমূলক পোস্ট দিলেও আসিফ মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

সরকার ও দেশবাসীর প্রতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর খোলা চিঠি


কপি ফ্রম (উই জাষ্ট শেয়ারিং ফ্রম নিউজপেপার্স এন্ড এফবি) : লিংক-১ | লিঙ্ক-২ | লিঙ্ক - ৩ | লিঙ্ক-৪ | লিঙ্ক-৫

ডাউনলোড : ব্যাকাপ → | | | | | | | | | (নাস্তিকরা সারা জীবন ইসলামের সকল মোরালিটিকে গালাগালি করলেও মৃত্যুর পরে তাদের ইসলামিক ওয়েতে জানাজা হয়। তাই স্বভাবতই তাদের লেখালেখিও মুছে ফেলে তাদের সাধু সাজাতে চায় দুবৃত্তরা। শাহবাগী নাস্তিকরাও একই কাজ করেছে। তাদের অপকর্মের সব চিহ্ন মুছে ফেলে বুঝানোর চেষ্টা করছে যে তাদের যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে না। আসলে তারা ইসলামের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।)

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম