৫ই মে রাতে ইসলাম প্রেমী জনতার ও হেফাজতে ইসলামের মহা সমাবেশে যৌথ বাহিনী নির্বিচারে গুলী চালায়, এতে শহীদ হন অসংখ তাওহিদী জনতা, সরকার রাতের আঁধারে অভিযান চালিয়ে নিরীহ মুসল্লী দের হত্য করেই খান্ত হয়নি রাতেই তাদের লাশ গুম করে তার প্রমান নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।এর প্রতিবাদে ৬ ই মে চিটাগাং রোডে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সেখানেও যৌথ বাহিনী নির্বিচার গুলি চালায় এতে শহীদ হন শিবির কর্মী খালিদ মাহমুদ সাইফুল্লাহ সহ ছয় জন।
পরীক্ষায় ভালো করার পরও অঝোরে কাঁদছে সাইফুল্লাহ ও সৌরভের পরিবার
ওরা
জানে না ওরা পাস করেছে। কেননা ওরা পাসের খবর জানার আগে চলে গেছে না ফেরার
দেশে। ওরা হতভাগা। সৌরভ ও সাইফুল্লাহ। আজ তাদের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
পেয়েছে। দু’জনেই পাস করেছে। তাদের সহপাঠীরা রেজাল্ট পেয়ে উল্লাস করছে,
হাসছে তাদের অভিভাবকরা। কিন্তু সৌরভ ও সাইফুল্লাহর অভিভাবকরা শুধুই
কাঁদছেন। সোমবার হেফাজতে ইসলামের ওপর পুলিশি হামলায় প্রাণ হারিয়ে তাদের
প্রাণপ্রিয় সন্তান সাইফুল্লাহ ও সৌরভ। যৌথবাহিনীর নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে
তাদের পরিবারের সব সুখ আনন্দ।
সিদ্ধিরগঞ্জের রসুলবাগ এলাকায় অবস্থিত ‘আলী আকবর মডেল স্কুল’ এর প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘খালেদ মাহমুদ সাইফুল্লাহ ছিল ছাত্র হিসেবে খুবই ভালো। ভদ্র, নম্র বিনয়ী সদালাপী সাইফুল্লাহর কোনো বাজে অভ্যাস ছিল না। পরীক্ষার পর মাঝে মধ্যে স্কুলে যেত। কিন্তু গত সোমবার দুপুরে শুনেছি পুলিশের গুলিতে সে মারা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর জেনেছি সাইফুল্লাহ ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট পেয়েছে। আজ তার খুশিতে উদ্বেলিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু সে আজ নেই। পরিবারকে শিক্ষকদের কাঁদিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।’
বৃহস্পতিবার বিকালে এসব কথা বলার সময় আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখে পানি ছেড়ে দেন এই শিক্ষক। প্রিয় ছাত্রের অকালমৃত্যুতে তার বুকে যেন পথর চাপা দিয়ে বসেছে। হেফাজতে ইসলামের লোকজনের ওপর হামলায় শহীদ হন খালেদ মাহমুদ সাইফুল্লাহ। সে সিদ্ধিরগঞ্জের রসুলবাগ রেজা মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া আবদুল জলিলের ছেলে। সাইফুল্লাহর বড় ভাই নাজমুল আলম জানান, গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় আবদুল আজিজ নামে তার আরও এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। নাজমুল বলেন, আমার ভাই সাইফুল্লাহর অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ৬ মে সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সাইফুল্লাহ বলেছিল মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। তাই বাইরে বের হচ্ছি। এর কিছু সময় পরই জানতে পেয়েছি সে গুলিতে মারা গেছে।’
বৃহস্পতিবার বিকালে সাইফুল্লাহদের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছিল তার সহপাঠীরা। কিশোর এসব সহপাঠী যখন উল্লাস করার কথা তখন তাদের মধ্যে ছিল কান্নার রোল। সাইফুল্লাহদের বাড়িতে চলছিল কান্নার রোল। সাইফুল্লাহর সহপাঠীদের দেখে তার স্বজনরাও আরও বেশি শোকাহত হয়ে পড়েন। মারজানুল ইসলাম সৌরভ শেখ মোর্তুজা আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৫৬ পেয়েছে। পূর্ব বাগমারা এলাকার এনামুল হকের ৪ ছেলের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। ফল প্রকাশের পর দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে সৌরভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তার শ্রেণী শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলছিলেন, ৫ বছর তাকে আমি পড়িয়েছি। একদিনের জন্য ক্লাস ফাঁকি দেয়নি। খুবই বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে ছিল সে। দুপুরে টিফিনের বিরতির সময় নামাজ না পড়ে টিফিন খেতে দেখিনি তাকে। তার বিনয় আর ভদ্রতা দেখে আমি নিজেই অভিভূত হতাম। এ কথাগুলো যখন বলছিলেন শোকে কাতর ওই শিক্ষকের চোখের কোণ বেয়ে তখন পানি গড়িয়ে পড়ছিল। এই স্কুলের অন্য শিক্ষকরাও একই কথা বললেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক বললেন, সৌরভকে কখনও মারামারি কিংবা ঝগড়া করতে দেখিনি। এভাবে তার চলে যাওয়াটা মেনে নেয়া যায় না। মৃতুর পর তিনি সৌরভের বাসায় গিয়ে ছিলেন লাশ দেখতে ও পরিবারকে সমবেদনা জানাতে। সৌরভের বুকের এক পাশে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল বলে তিনি জানান। সৌরভের বাবা-মা শোকে পাথর, কোনো বলতে পারেননি।
0 comments: