রংপুরের মিঠাপুকুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এবং মিঠাপুকুর উপজেলা ছত্রিশিবিরের সাবেক সভাপতি নাজমুল হুদা লাবলু ভাইকে ক্রসফায়ারে শহীদ করেছে পুলিশ নামধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। রোববার(০৮ মার্চ) রাত সাড়ে তিনটার দিকে মিঠাপুকুর উপজেলার বলদী পুকুরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাবলু ভাইকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে ক্রশফায়ারের বানোয়াট কাহিনী তৈরী করে।
ফেরাউনের প্রেতাত্মা ভর করেছে বাংলাদেশের উপর......!!
চোখের পানি বাঁধ মানছে না...!!
শহীদ লাবলু ভাইয়ের
সাথে কাটানো সময়ের
স্মৃতি গুলো তাড়া করে ফিরছে তার
প্রিয় সাথীদের।
ছাত্রত্ব শেষ করে সবে মাত্র শিবির
থেকে বিদায় নিলেন শ্রদ্ধেয় লাবলু
ভাই।
তখনই সংগঠনের আদরের ছোট ভাই
ঘিরে ধরলেন তাকে।সদ্য বিদায়ী বড়
ভাইয়ের কাছে তাদের বিশাল
আবদার.....!!
চঞ্চল ফুটফুটে ভাই গুলো আবদার তুলল ভাইয়া এবার বিয়ে করতে হবে..!!
সংগঠন থেকে বিদায় নিয়েছেন,বয়সও
যথেষ্ট হয়েছে,এবার বিয়ে করুন।
লাবলু ভাইয়ের হাসি মাখা জবাব--
এত গুলো মামলার আসামীকে কে বিয়ে করবেরে.....!!??
তাছাড়া হাসিনার পতনের আগ পর্যন্ত
বিয়ে করবো না!!!
লাবলু ভাইয়ের মুখে এই জবাব শুনে ছোট ভাইয়েরা হাল ছেড়ে দিল।
এর আগে লাবলু ভাইকে না পেয়ে উনার ভাইকে গ্রেফতার করেছিল
পুলিশ,তিনি নয় মাস
কারাগারে ছিলেন।
আর আজ লাবলু ভাইকে ক্রস ফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।প্রিয় ভাইয়ের মাথায় একটি, বুকে ছয়টি বুলেট ঢুকিয়ে দেয় হায়েনার লেলিয়ে দেয়া বাহিনী...!!
আজ রক্তে রঙিন প্রিয় ভাইয়ের বিয়ের স্বপ্ন।
আজ বাংলাদেশ জিতছে!
আসলে ই কি বাংলাদেশ জিতছে?
না বাংলাদেশ জিতেনি, বাংলাদেশ হেরেছে...!!
বাংলাদেশ সেই দিনই জিতবে যে দিন
ফেরাউনের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করে আমরা লাবলু ভাইয়ের রেখে যাওয়া কাজ শেষ করতে পারব।
আর সেটা আমরা করবই,করব......!!
ইনশাআল্লাহ.....!!
মানুষ যখন মারা যায়, মারা যাবার মুহূর্তে তার হৃদপিন্ডটা ক্রমশ বন্ধ হয়ে আসে। সত্তরটা তরবারী ( হাদীসের বর্ননা যা মনে আছে, প্রিসাইজড সংখ্যা সম্ভবত এইটাই) একটা জীবন্ত শরীরকে ফালি ফালি করে দেয়ার কষ্ট তখন মানুষ তার ছোট্ট দেহটাতে পায়। দুনিয়াকে ছেড়ে যাবার আগে সে খুব জোরে জোরে শ্বাস নেয়। অচেনা অসীমের দিকে যুগ যুগের চেনা পৃথিবীকে ছেড়ে চলে যাবার ভয়ানক মুহূর্তে ভয়ে তার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসে। সে খুব কষ্ট করে চারপাশের দিকে তাকায়, প্রিয়জনদের শেষবারের মত দেখার চেষ্টা করে।
গতকাল রোববার রাতে লাভলুকে পুলিশ ক্রসফায়ারে মেরে ফেলেছে। বরাবরের মতই গল্প, শুধু প্লট একটু আলাদা। তাকে রাত তিনটার সময় পুলিশ গাছ কাটতে দেখে গুলি করে, সে ও তার সংগীরা পাল্টা গুলি চালায়, ক্রসফায়ারে পড়ে শুধু লাভলু মারা যায়, বাকী আর কারো কিছু হয় নি......
লাভলুর শরীরটা পাওয়া গেছে এক পুকুরে। দুটো ব্যাপার হতে পারে। প্রথমত পুলিশ তাকে পানিতে ফেলে দিয়ে পরে গুলি করে মেরেছে কিংবা গুলি করার পরে তাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে।
একটু সিচুয়েশনটা মাথায় নিয়ে ভাবুন। তার বুকে গুলি বিঁধে আছে, শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে, তিনি জীবনের শেষ সময়ের কিছু শ্বাস নিতে চাচ্ছেন কিন্তু তাও পারছেন না। বাতাসের বদলে নাক, মুখ দিয়ে পানি ঢুকে যাচ্ছে। গ্রামের ছেলে লাভলু সাঁতার জানেন। কিন্তু সাঁতারেরও কোন উপায় নেই, শরীর কাজ করছে না। তিনি আর কয়েকটা সেকেন্ড বাঁচবেন, এই কয়েক সেকেন্ডে সাঁতরে কতদূরই বা যাবেন? তারপরেও লাভলু প্রাণপন চেষ্টা করছেন। এইসময়ে তার চোখের সামনে প্রিয়তমার করুণ অভিমান মাখা চেহারা ভেসে উঠলো। অনেক মাস ধরে সে বাড়ী যেতে পারে না বলে বউটা খুব রাগ করে আছে। চাপা স্বভাবের মেয়ে, কিছু বলতেও পারে না। ছোট বাচ্চাটার কথাও মনে পড়লো। মেয়ে তাকে বাবা, বাবা বলে ডাকলে তার প্রাণ জুড়িয়ে যায়। বৃদ্ধা মা, অশীতপর বৃদ্ধ বাবার কথাও মনে পড়লো। তাদেরকে একা, নিঃস্ব করে দিয়ে সে চলে যাচ্ছে। চোখে পানি এসে গেলো কিনা লাভলু বুঝতে পারে না। তার রক্তে লাল হয়ে ওঠা পুকুরের পানি আর চোখের নোনা পানি এক হয়ে যায়। এসবের হঠাৎ লাভলু চোখগুলোর রেটিনায় দুনিয়ার আলোর প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেলো, যুবক লাভলুর সুঠাম ভারী দেহ পুকুরের মাঝে তলিয়ে যেতে থাকলো।
এতোক্ষন পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ ভ্যানে হেলান দেয়া ওসি সাহেব রিভলভারটা কোমরের হোলস্টারে গুঁজলেন। লাভলুর ডান উরুতে প্রথম গুলিটা উনিই করেছিলেন। এইবার তিনি স্মিত হেসে, মন খারাপ করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা কনস্টেবলদের ভ্যানে উঠার অর্ডার দিলেন। তাদের সবার রাইফেলের ম্যাগজিন খালি হয়ে গেছে। তার বিশ্বস্থ এসআই এমন সময়ে তাকে একটি গোল্ডলিফ ধরিয়ে দিলো। স্টার্ট তুলে পুলিশের ভারী ভ্যান গর্জন তুলে চলতে শুরু করলো। কয়েক মিনিট ধরে চাইনিজ ৭.৬২ হাফ অটোমেটিক রাইফেলের ভারী গুলির শব্দে এলাকার সবার ঘুম ভেংগে গিয়েছিলো। কেউ বের হয়ে আসে নি। পুলিশের গাড়ির শব্দ মিলিয়ে যাবার পরেও কেউ বের হয়ে এলো না।
আমরা আজকে সোমবারে খুব বায়বীয় আবেগ নিয়ে দেশের খেলা দেখে ইংল্যান্ডের আড়াইশো বছরের শোষনের বদলা নিয়ে নিয়েছি। ওসব অখ্যাত অজ্ঞাত কোন লাভলুর মারা যাওয়া, ভেসে ওঠায় আমাদের কিছু আসে যায় না। সে তো আমাদের আপন কেউ না, ফ্যামিলির ও কেউ না।
তবে আমাদের দেশপ্রেম নিয়ে কিন্তু কোন কথা বলা যাবে না। আমরা আজকে সবকিছু বাদ দিয়ে খেলা দেখে দেশকে জিতিয়ে নিয়ে এসেছি। ওটাই আসল। আমরা সর্বাংগে পতাকা জড়িয়েছি, জার্সি পরে খেলা দেখেছি, জিতার পরে মিছিল করেছি। আমরা কিন্তু রাজনীতি করি না, খেলার সাথে রাজনীতি মিশাইও না। তবে আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি। দেশের অন্য সবকিছু তো দূরে থাকুক, এমনকি দেশের মানুষের প্রানের দামও ম্যাচ জয়ের চেয়ে বেশী না। অবশ্যই বেশী না।
আমরা কিন্তু দেশপ্রেমিক। নো ডাউট!
লিখেছেন: Emad Rahman
0 comments: