মিথ্যা রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে শহীদ হলেন নোয়াখালীর ওমর ফারুক |
নাম: মোঃ ওমর ফারুক চৌধুরী
দায়িত্ব: উপশাখা সভাপতি
শাখা: ৪নং ওয়ার্ড দক্ষিন
সাংগঠনিক মান: সাথী
পড়াশোনাঃ এইচ এস সি (১ম বর্ষ) মাইজদী পাবলিক কলেজ,নোয়াখালী।
আঘাতের ধরণ: ডিবি কর্তৃক মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি।
শাহদাতের তারিখ: ০৬/০৪/১৫
সোমবার সাড়ে ১১টার দিকে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ফাঁসির রায় বহাল রাখার প্রতিবাদে নোয়াখালী শহরের সিনেমাহল এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ ও সাদা পোষাকের ডিবি স্বশস্ত্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এসময় ডিবির গুলিতে শাহাদাৎ বরণ করেন মো: ওমর ফারুক(২০) ভাই। তিনি নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের নুরুল আমিনের পুত্র ও নোয়াখালীর মাইজদী পাবলিক কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
ওমর ফারুক ভাই চার নং দক্ষিন ফকিরপুরের একটি উপশাখার সভাপতি ছিলেন। মহান আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা প্রিয় ভাইয়ের শাহদাত কবুল করুন। আমিন।
শহীদ ওমর ফারুক ভাইয়ের পিতা জানাযার পূর্বে যখন বাকরুদ্ধ কণ্ঠে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন উপস্হিত সবাই হাউমাউ করে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছিলো। শহীদের মামা জানিয়েছেন, ওমর ফারুককে যখন গুলি করা হয় তখন তাঁর মুখ দিয়ে শুধু একটাই কথা ছিল- নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার....
হে প্রিয় ভাই ওমর ফারুক, যে কালেমাকে প্রকাশ্যে ঘোষণার অপরাধে (?) তোমাকে জীবন দিতে হলো, আজ তোমার সাথী ভাইয়েরা তোমার কফিন ছুঁয়ে শপথ নিলো সেই কালেমার দাওয়াত প্রতিটি যুবকের কাছে পৌছে দিয়ে তোমার হত্যার প্রতিশোধ নিবে ইনশাআল্লাহ...
নোয়াখালীতে পুলিশের গুলীতে নিহত শিবির নেতা শহীদ ওমর ফারুক চৌধুরীর জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শিবিরের সাথী ওমর ফারুক চৌধুরী শহর শাখা শিবিরের ৪নং ওয়ার্ডের উপ-শাখার সভাপতি ও মাইজদী পাবলিক কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন তিনি। ওমরের বাবা নুর আলম জেলা শহরে ছোট একটি ব্যবসা করেন।
গত সোমবার মাগরিবের পর শহীদের লাশ কাদির হানিফ ইউনিয়নের নিজ গ্রামে পৌঁছলে মরহুমের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। সেই সাথে কান্নায় গ্রামের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে নিহতের রূহের মাগফিরাত কামনা করেছেন জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আলাউদ্দিন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব হারুনুর রশিদ আজাদসহ ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল দশটায় জেলা শহরের কাদির-হানিফ ইউনিয়নের মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসা মাঠে নিহতের জানাযা শেষে তাকে নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শহীদ ওমরের জানাযাস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। নামাযের ইমামতি করেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহ-সভাপতি (নায়েবে আমীর) মাওলানা সাইয়্যেদ আহমদ।
জানাযাপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন নোয়াখালী জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা সাইয়্যেদ আহম্মদ, ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরী শাখার সভাপতি শাহ আলম, জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা বোরহান উদ্দিন, জামায়াত নেতা ও সাবেক শহর শাখা শিবির সভাপতি মাওলানা আবু তাহের, জেলা (উত্তর) সভাপতি মোঃ মায়াজ, জেলা (দক্ষিণ) সভাপতি জিয়াউল হক, নোয়াখালী শহর শিবিরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমদাদুল হক, নিহতের পিতা নূর আলমসহ জামায়াত বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনীর নির্মম গুলীতে ওমর ফারুক শাহাদাতবরণ করেছেন। তার রক্ত বৃথা যাবে না। তার রক্তের ওপর নোয়াখালীতে ইসলামের প্রাসাদ গড়ে ওঠবে ইনশাআল্লাহ। ইসলামী আন্দোলনে সে নিজেকে উৎসর্গ করেছিল। এ সময় উপস্থিত হাজারো ছাত্র-জনতা ডুকরে কাঁদতে থাকে। বক্তরা অবিলম্বে খুনি পুলিশদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কামারুজ্জামানকে হত্যার সরকারি ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর মফিজ প্লাজা এলাকায় শহর ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা ও গুলী করে। পুলিশের গুলী ওমরের পিটে, বাঁ কানে ও মাথায় লাগে। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
0 comments: