অধ্যায় ০৬ : মাতাপিতার অধিকার আদায় করা ও না করার পরিণাম

ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মাতা-পিতার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার আদেশের অনুগত হয়ে সকাল বেলায় উপনীত হয়, সে যেন তার জন্য জান্নাতের দুটি দরজা খোলা অবস্থায় ভোর করল। যদি তাঁদের একজন বেঁচে থাকে। (যার সে অনুগত থাকে) তবে সে জান্নাতের একখানা দরজা খোলা অবস্থায় ভোর করল। আর যে ব্যক্তি মাতা-পিতার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার আদেশের
--------------------------------------------------------------------------------------------
১. সহীহ মুসলিম, বির ওয়াস সিলা, অনু : মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেয়, ৪ খ, পৃ. ১৯৭৬, নং ২৫৫০
--------------------------------------------------------------------------------------------

নাফরমান হিসেবে সকাল বেলায় উপনীত হয়, তার জন্য জাহান্নামের দুখানা দরজা খোলা অবস্থায় সে সকাল করল। যদি সে একজনের ব্যাপারে অবাধ্য থাকে, তবে তার জন্য জাহান্নামের একটি দরজা খোলা অবস্থায় সে সকাল করল। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, যদি তাঁরা উভয়ে পুত্রের প্রতি যুলুম করে? তিনি বললেন, যদিও তাঁরা পুত্রের প্রতি যুলুম করে, যদিও তাঁরা পুত্রের প্রতি যুলুম করে, যদিও তাঁরা পুত্রের প্রতি যুলুম করে।১

আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মাতা-পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং মাতা-পিতার অসুন্তুষ্টির মধ্যে অসন্তুষ্টি হিনিত রয়েছে।২

আবূ উমামা (রা) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি এসে বলল আমার একজন স্ত্রী আছে, আমার মা আমাকে আদেশ করেন, তাকে তালাক দিতে। তখন আবুদ দারদা (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মাতা-পিতা হচ্ছেন জান্নাতের শ্রেষ্ঠ দরজা। তুমি ইচ্ছা করলে দরজাটিকে রক্ষা করতে পার। ইচ্ছা করলে দরজাটি নষ্টও করতে পার।৪

মাকবুল দুআ :
হযরত আবূ হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির দুআ কবুল হয় এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। এক মাযলুমের দুআ, দুই মুসাফিরের দুআ, তিন সন্তানের বেলায় মাতা-পিতার দুআ।৫
--------------------------------------------------------------------------------------------
১. মিশকাতুল মাসাবীহ, আদব, বির ওয়াস সিলা, নং ৪৭২৬ ; আল আদাবুল মুফরাদ, অনু ; ৪ মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার, নং ৭, নাদরাতুন নাঈম, ১০ খ. পৃ, ৫০১৬
২. তিরমিযী, বির ওয়াস সিলা, অনু; মাতা-পিতার সন্তুষ্টি, ২.খ, পৃ. ১. আল আদাবুল মুফরাদ পৃ. ৬, নং ২ আল মুস্তাদরাক, ৪ খ, পৃ. ৪৫২
৩. ইবনু মাজাহ, আদব, অনু মাতা-পিতার সাতে সদ্ব্যবহার
৪. তিরমিযী, প্রাগুক্ত, ইবনু মাজাহ, প্রাগুক্ত; আল মুস্তাদরাক প্রাগুক্ত;
৫. তিরমিযী, আবোয়াবুলবির অনু, ৭, মাতা-পিতার দুআ, নং ১৯৭০; আরো দ্র; আবূ দাউদ ইবন মাজাহ, আল ইহসান, ১ খ, পৃ. ৩২৬
--------------------------------------------------------------------------------------------

ব্যাখ্যা : মাতা-পিতার সন্তুষ্টি ও তাঁদের মমতাপূর্ণ অন্তরের দুআ সন্তানের জন্য সবচাইতে সৌভাগ্যের বিষয়। পক্ষান্তরে সন্তানের জীবনের সবচাইতে বড় দুর্ভাগ্য হলো, সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার দু:খ ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ের বদদুআ। মাতা-পিতার অধিকার আদায়, তাঁদের সেবা-যত্ন ও সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তাঁদের দুআ নেয়া এবং তাঁদের মনে কষ্ট দেয়া ও তাঁদের বদদুআ থেকে বেঁচে থাকা সন্তানের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।অ তাঁলা দুআ বা বদদুআ যাই করেন, সন্তানের বেলায় তা নি:সন্দেহে কবুল হয়।

মাতা-পিতার নাফরমানীর শাস্তি দুনিয়া থেকেই শুরু হয় :

হযরত আবূ হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সব গুনাহ আল্লাহ তাআলা যতটা ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। তবে মাতা-পিতার নাফরমানীর গুনাহ (ক্ষমা করেন না) বরং এর শাস্তি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মৃত্যুর পূর্বে পার্থিব জীবনে দেয়া হবে।১

মায়ের সাথে নাফরমানী

হযরত মুগীরা ইবন শুবা (রা) বর্ণিত, নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর মায়ের নাফরমানী, কন্যা শিশুকে জীবিত কবর দেয়া, কৃপণতা করা ও ভিক্ষা বৃত্তির হারাম করে দিয়েছেন। আর বৃথা তর্ক-বিতর্ক, অধিক জিজ্ঞাসা ও সম্পদ নষ্ট করাকে তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন।২

ব্যাখ্যা : সন্তানের জন্য মায়েরা যে সীমাহীন কষ্ট করে থাকেন, তার এক মুহূর্তের বদলা সন্তান সারা জীবনেও দিতে পারবে না। মায়েদের মন অত্যন্ত নরম। সামান্য কথাতেই অন্তরে আঘাত লেগে যেতে পারে, তাঁদের মন আহত হয়ে যেতে পারে। মায়ের সন্তুষ্টির প্রতিদান হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ। আর মায়ের সাথে কথা-বার্তা ও আচার-আচরণে আত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, যেন মায়ের মনে সামান্যতম কষ্টও না লাগে। মায়ের মনে কষ্ট দেয়া, তাঁর নাফরমানী করা ও অবাধ্য হওয়া নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত রাখতে হবে।
--------------------------------------------------------------------------------------------
১. আল মুস্তাদরাক, বির ওয়াস সিলা, ৪ খ, পৃ. ১৫৬; মিশকাতুল মাসাবীহ, অধ্যায়, বির, হাদীস নং ৪৭২৮, (বায়হাকী বরাত)
২. সহীহ আল বুখারী, আদব, অনু : ৬, মাতা-পিতার নাফরমানী করা কবীরা গুনাহ, হাদীস নং ৫৯৭৫ ফাতহ, সহীহ মুসলিম, অধ্যায় আকদিয়া, অনু : ৫, নং ১৭১৫,
--------------------------------------------------------------------------------------------
মায়ের অধিকার আদায়, তাঁর সেবা-যত্ন ও সন্তুষ্টির জন্য জীবন উজাড় করে দেয়া সন্তানের অপরিহার্য কর্তব্য।

মাতা-পিতার নাফরমান সন্তানকে বন্দুরূপে গ্রহণ না করা:

হযরত উমার ইবন আবদুল আযীয (রা) ইবন মিহররানকে বলেছেন, তুমি কখনো রাজা-বাদশষাহদের দরবারে যাবে না। যদিও তুমি তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ করো এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করো। কোন বেগানা নারীর সাথে কখনো নির্জন অবস্থান করবে না, যদিও তা কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য হয়। আর মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তানের সাথে কখনো বন্ধুত্ব করবে না। কেননা সে তো নিজের মাতা-পিতারই অবাধ্য, তোমাকে কিভাবে সে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে? (কখনো তা করতে পারে না)।১
ব্যাখ্যা :মাতা-পিতাই সন্তানের জন্মদাতা ও সবচাইতে বড় আপনজন। সন্তানকে তাঁরা নিজেদের চাইতে বেশী ভালোবাসেন। হৃদয় নিংড়ানো আদর স্নেহে তাদেরকে প্রতিপালন করেন, নিজেরা না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান নিজেরা না পরে সন্তানকে পরান। নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েও তাঁরা সন্তানের সুখ-শান্তি কামনা করেন । সন্তানের একটু কিছু হলে তাঁদের মনের শান্তি ও স্বস্তি দূর হয়ে যায়, চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায়, দুশ্চিন্তাই তারা অস্থির, বিচলিত ও বিমূঢ় হয়ে পড়েন। সন্তানের ব্যাপারে মাতা-পিতার ক্ষুদ্র মনের আবেগ ও ভার বহন করার ক্ষমতা বিশাল পৃথিবীরও নেই। মাতা-পিতার এমন অবদানকে ভুলে গিয়ে যে সব সন্তান তাঁদের অবাধ্য হয়ে যায়, এরূপ অবাধ্য ও নিষ্ঠুর প্রাণ পৃথিবীতে আর কাউকে কি বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে পারে? কখনো নয়। যদি কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখা যায়, তবে সেটা হবে নিছক অভিনয় ও ধোকা । সুতরাং, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব করবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ অমোঘ বাণী কতই না বাস্তব।

মাতা-পিতার নাফরমানী জান্নাতের পথে বাধা

হযরত আমর ইবন মুররা আল জুহানী (রা) বলেন, এক ব্যক্তি নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ এক, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল। আমি পাঁচ ওয়াকত নামায আদায় করি, নিজের সম্পদে যাকাত
------------------------------------------------------------------------------------------------
১. নাদরাতুন নাঈম, ১০ খ, পৃ. ৫০১৬
------------------------------------------------------------------------------------------------

দেই, রমাযানের রোযা রাখি। তার একথা শুনে নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এসব কাজের উপর অটল থেকে মৃত্যু বরণ করল, সে কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের সাথে এমনিভাবে অবস্থান করবে (একথা বলে তিনি হাতের পাশা-পাশি দুটি আঙ্গুল উঠিয়ে দেখালেন)। তবে শর্ত হলো, সে যেন মাতা-পিতার নাফরমান ও অবাধ্য না হয়।১

ব্যাখ্যা : মাতা-পিতার নাফরমান ও অবাধ্য না হওয়া জান্নাতে যাওয়ার জন্য শর্ত। সুতরাং ঈমান ও আমলে সালেহ থাকা সত্ত্বেও মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান জান্নাতে যেতে পারবে না।

মাতা-পিতার নাফরমানদের ইবাদাত আল্লাহ কবুল করেন না

হযরত আবূ উমামা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির ইবাদত বন্দেগী ও দান সদাকা কোনটাই কবুল করেন না। তারা হচ্ছে :

১. মাতা-পিতার নাফরমান,
২. দান করে খোঁটাদানকারী, ও
৩. তকদীর অস্বীকতারকারী।২

পরিবার থেকে বহিষ্কার করলেও মাতা-পিতার নাফরমানী করা যাবে না

হযরত মুআয ইবন জাবাল (রা) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দশটি আদেশ প্রদান কর এন। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় এবং আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। কখনো মাতা-পিতার নাফরমানী করো না, যদিও তাঁরা তোমাকে নিজের সম্পদ ও পরিবার-পরিজন থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।৩

মাতা-পিতার নাফরমানীর বদলা
হযরত আসমাই (রা) বলেন, জনৈক আরব বেদুঈন আমার নিকট বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি মাতা-পিতার নাফরমান ও তাঁদের অনুগত সন্তানের অনুসন্ধানে নিজ গ্রাম থেকে বের হয়ে বহু গ্রাম অতিক্রম করি। অবেশেষে এক বৃদ্ধের কাছে এসে পৌঁছি। তার গলায় দড়ি বাঁধা। সে দ্বিপ্রহরের প্রচন্ড গরমে একটি বালতি দ্বারা পানি উঠানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে, যে বালতি দ্বারা পানি উঠানো উটের
------------------------------------------------------------------------------------------------
১. আত-তারগীব, ওয়াত তারহীব, ৩ খ, পৃ. ৩২৯; আরো দ্র. আহমদ, তাবারানী, ইবন খুযাইমা ও ইবন হিব্বান
২. আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ৩ খ, পৃ. ৩২৭
৩. আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ৩ খ, পৃ. ৩২৯
------------------------------------------------------------------------------------------------
পক্ষেও অসম্ভব। বৃদ্ধের পিছনে রয়েছে পাকানো দড়ির চাবুক হাতে এক যুবক। সে তাকে উক্ত চাবুক দ্বারা প্রহার করেছে। চাবুকের আঘাতে বৃদ্ধের পিঠ ফেটে যাচ্ছে। আমি যুবককে বললাম, সাবধান! আল্লাহকে ভয় করো। এ দুর্বল বৃদ্ধকে প্রহার করা থেকে বিরত হও। বৃদ্ধ লোকটি রশি দ্বারা পানি উঠানোর যে কঠিন কাজে নিয়োজিত, তা কি তার জন্য যথেষ্ট নয়? তা সত্বেও তাকে প্রহার করছো? যুবকটি বললো, এতদসত্ত্বে সে তো আমার পিতা। আমি বললাম, আল্লাহ তাআলা তোমরা অকল্যাণ করুন। যুবকটি বললো, থামুন! সে তার পিতার সাথে এরূপ আচরণ করতো। আর তার পিতাও তার দাদার সাথে এ ধরনের আচরণ করতো। তখন আমি বললাম, এই হলো, মাতা-পিতার সবচাইতে বড় নাফরমান ব্যক্তি।১

হযরত আসমাঈ (রা) বলেন, জনৈক আরব আমাকে বলেন, আবদুল মালেক ইবন মারওয়ানের শাসনামলে মুনাযিল নামে এক লোক ছিল।তার ছিল একজন বৃদ্ধ পিতা। তার উপাধী ছিল ফারআন। যুবক ছেলেটি তার অবাধ্য ছিল। কবিতার ছন্দাকরে বৃদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, আমার ও মুনাযিলের মাঝে আত্মীয়তা আমাকে এমন প্রতিদান দিয়েছে যেমন ঋণ দাতা ঋণ গ্রহিতাকে ঋণ পরিশোধের জন্য তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। কিছুকাল পর মুনাযিলের সন্তান জুলাইহ মুনাযিলের অবাধ্য হয়ে যায়, সে জুলাইহ কর্তৃক বিপদগ্রস্থ হয়ে বলে, আমার মাল-সম্পদের ব্যাপারে জুলাইহ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, আর সে আমার অবাধ্য হয়, যখন আমার মেরুদন্ডের হাড় বেকিয়ে ধনুকের মতো হয়ে গেছে। এ অবস্তা দেখে গভর্নর জুলাইহকে প্রহার করতে উদ্যত হলে সে বলে, আমার ব্যাপার তাড়াহুড়া করবেন না। এই হচ্ছে ফারআন পুত্র মুনাযিল যার সম্পর্কে তার পিতা আক্ষেপ করে বলেছিলো, আমার ও মুনাযিলের মাঝে আত্মীয়তা এমন প্রতিদান দিয়েছে যেমন ঋণ দাতা ঋণ গ্রহিতাকে ঋণ পরিশোধ করার জন্য তাড়িয়ে বেড়ায়। এ কথা শুনে গভর্নর বলেন, ওহে! তুমি তোমার মাতা-পিতার নাফরমানী করেছো, এখন সন্তান কর্তৃক নাফরমানীর স্বীকার হয়েছো।২

উবাইদ ইবন জুরাইজ থেক বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, মূসা (আ) এর ওপর আল্লাহ তাআলা যা নাযিল করেছেন তাতে মাতা-পিতার নাফরমানীর ব্যাপারে কি বলেছেন? জবাবে তিনি বলেন, পিতা সন্তানকে কোন আদেশ করলে সে যদি তা পালন না করে, সেটাই হলো পিতার নাফরমানী। আর পিতা সন্তানের
পক্ষ থেকে কোন বিষয়ের সম্মুখীন হয়ে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ করলে সেটা হবে পুরোপুরি নাফরামানী ও অবাধ্যতা।১

মাতা-পিতাকে নাফরমানীর অপকারিতা :

- মাতা-পিতা আল্লাহর বড় নিয়ামত। নাফরমান সন্তান আল্লাহর নিয়ামতের অস্বীকার করে। ফলে সে মাতা-পিতার অণুগ্রহকে ও অস্বীকার করে।
- মাতা-পিতার সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টি। তাঁদের অসন্তুষ্টি আল্লাহর অসুন্তুষ্টি। মাতা-পিতার নাফরমান সন্তান আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকে দূর হয়ে যায়।
- মাতা-পিতার নাফরমানী করা কবীরা গুনাহ। নাফরমান সন্তান কিয়ামতের দিন অবাধারিতভাবে শাস্তি ভোগ করবে।
- মাতা-পিতার নাফরমানী সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। যে ব্যক্তি মাতা-পিতার সাথে অসাদাচারণ করে তার সন্তান, তার প্রতিবেশী ও তার সমাজের লোকেরা ও তার সাথে অসদাচারণ করবে।
- মাতা-পিতার নাফরমানীর কারণে সমাজ থেকে শক্তি ও নিরাপত্তা দূরীভূত হয়।
- নাফরমান সন্তান, মাতা-পিতার নাফরমানীর প্রতিফল দুনিয়াতেও পাবে।
- মাতা-পিতার নাফরমানীর কারণে চেহারার লাবন্যতা ও নূর দূরীভূত হয়।
- নাফরমান সন্তান কিয়ামতের দিন আল্লাহর রহমাতের দৃষ্টি থেক বঞ্চিত হবে।২

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম